গৌতম তালুকদার – সূচিপত্র [Bengali Story]
মুখোশের আড়ালে – গৌতম তালুকদার [Natun Bangla Galpo 2023]
প্রকৃতির কোনো মুখোশ হয় না একমাত্র মনুষ্য প্রাণী বাদে আর কোনো জীব জন্তু প্রাণী মুখোশ আছে বা ছিলো বলে অন্তত্ব জানা নেই। মানুষ ছারা কারো মুখোশের সাহায্য নিতে হয় না। আমরাতো মুখোশ ব্যবহার করি নিজেদের কার্য্য সিদ্ধি করতে যা কিনা নিজের মুখ-চরিত্র মুখোশের আড়ালে ঢেকে নিজেকে সৎ সত্যবান নিরপরাধী ভদ্রবেশী মানুষের দাবী নিয়ে।
আসলে মানুষের জন্যে মুখোশ এক বড় অদৃশ্য হাতিয়ার যা মানুষকে পশুতে পরিণীত করে আর সেই পশুর লোভ লালসা অন্য কোনো মানুষেরা বুঝতে পারে না বলেই মুখোশ ধারীর দ্বারা বার বার ক্ষতিগ্ৰস্থ হয় আবার বুঝতে পারলেও প্রাণ ভয়ে চুপচাপ থেকে তাকে মেনে নিতে বাধ্য হয় ।তবে হ্যাঁ মানুষ মুখোশ ব্যবহার করে সেটা সকল মানুষের চোখের সামনে রঙ্গ মঞ্চে অভিনয়ের জন্যে। সেই আসল চরিত্রটির আঁকার বোঝাতে সেটাও এক ধরনের জীবিকা।বেঁচে থাকার জন্য অর্থের প্রয়োজন হয় সে সঙ্গে সমাজে নিজেকে একজন অভিনেতা শিল্পী হিসেবে স্বীকৃতি পেতে সে মুখোশ আমরা স্বচোখে দেখতে পাই দেখি।
কিন্তু অদৃশ্য মুখোশ যেটা আমরা দেখতে পাই না আসল চেহারার পেছেনে চরিত্র গঠনে লুকিয়ে থাকে তাকে আমরা বলি শয়তানের মুখোশ যা কিনা মনুষ্যত্বের মধ্যে লুকিয়ে নিজের কাজটি করে যায়। মানুষকেও জীবিকার জন্যে মুখোশ ব্যবহার করতে হয়। ধোঁকা দিতে হয়, সে ধোঁকা মানুষকে নয় নিজের প্রাণ বাঁচাতে কোনো নর খাদক প্রাণীদের থেকে নিজেকে রক্ষা করতে। সুন্দর বনে মানুষ মুখোশ পরে মধু সংগ্ৰহে যায় কারণ একটাই বাঘের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার হাতিয়ার সে মুখোশ অবশ্য তার মুখে লাগায় না,লাগানো হয় মাধার পেছনে কারণ মধু সংগ্ৰহ করার সময় মানুষটি তো বুঝতে পারে না যে তার জন্যে জঙ্গলের মধ্যে লুকে থাকা বাঘ যেকোনো মুহূর্তে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে।
তাই শিকারি মানুষ পেছন দিকে শিকারি মুখোশ লাগিয়ে নিজেকে আত্মরক্ষা করতে চেষ্টা করে। সে চেষ্টায় কখনো ফিরে আসতে পারে আবার নাও আসতে পারে। কিন্তু মনুষ্যত্বের আড়ালে যে মুখোশ তার হাতে কেউ নিস্তার পায় না।
সবুজের সাথে – গৌতম তালুকদার [Natun Bangla Galpo 2023]
সবুজের সাথে মিশে যেতে চায় বকুল।কিন্তু পেরে ওঠে না সেই ভোর পাঁচ টায় ঘুম থেকে উঠেই ওকে ছুটতে হয় শ্যাম কাকার বাড়িতে কাকিমাকে সকাল আটটার মধ্যে কাকার জন্যে রান্না করে দিতে হয়।ও দেরি করে গেলে তো চলবে না।সকাল সাতটার মধ্যে ওকে বাসন মেজে,ঘর ঝাড় দিয়ে মুছে বাসি জামা কাপড় ধুয়ে দিতে হয়। তা না হলে কাকিমা চিৎকার করে বাড়ি মাথায় করে তুলবে।হয়তো রেগে বলেই দেবে কাল থেকে ওকে আর কাজে আসতে হবে না। না না সেটা কোনো মতেই হতে দেবে না বকুল।ওর যতোই কষ্ট হোক। মাস শেষে হলে যে টাকাটা পায় সেটা বন্ধ হয়ে গেলে তো মায়ের ওষুধ কেনা হবেনা।হবে না চাল ডাল নুন তেল কেনা। শ্যাম কাকার বাড়ি তে মা কাজ করে প্রায়ই পাঁচ বছর।গত ছয় মাস থেকে মা বিছানায়। কে দেখবে ওদের কে খাওয়াবে মার ওষুধ কেনার পয়সা কোথায় পাবে? একমাত্র মা ছাড়া ওর তো আর আপনজন বলতে কেউ নেই। জন্মে বাবাকে এক নজর আজও দেখেতে পেলো না। মায়ের মুখে বাবার অনেক গল্প শুনেছে। মা বলে ও জন্মাবার কয়েক ঘন্টা আগে বাবা মায়ের সাথে শেষ দেখা করে তারপর থেকে বাবা আজও নিখোঁজ। মা এর আপন বলতে কেউ নেই একমাত্র ও ছাড়া। মা বলে দেখিস একদিন না একদিন তোর বাবা ঠিক ফিরে আসবেই তোর টানে। মানুষটা বড় ভালো।
বাড়ি ফিরে আবার দুপুরের রান্না করে মাকে খাইয়ে ওষুধ পত্র দিয়ে ছুটতে হয় শ্যাম কাকার বাড়িতে। ফিরতে প্রায় রাত নয়টা।
কখন আর সময় পাবে যে একটু মাঠে ঘাটে পুকুর পারে, ঘুরে বেড়াবে। কেন জানি চারিধারের সবুজেরা হাত ছানি দিয়ে ডাকে ওকে।
মনে হয় ফুলেরা যেন ওকে ইশারায় বলে ওদের বাগানে ঢুকে ওদেরকে আদর করতে।পুকুর নদী গাছ পাখি সবাই কেন জানি ওদিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে ওকে দাঁড়াতে বলে কিন্তু না ও দাঁড়াতে পারে না।চলতে গেলে ওর পায়ে যেন লতা পাতারা জড়িয়ে ধরে ও ওদের সরিয়ে সোজা চলে যেতে বাধ্য হয় তবু এত কিছুর পর দুপুরে যখন ঘন্টা খানেক সময় পায় তখন না বিশ্রাম নিয়ে ওদের উঠনে লাগানো কয়েকটা ফুল গাছ, কয়েকটা পাতাবাহারি গাছ বাবার হাতে লাগিয়ে রাখা ডালিম গাছ টার যত্ন নেয়।
ডালিম গাছটা জড়িয়ে ধরে বাবার দুঃখ ভুলতে চেষ্টা করে মনে হয় বাবা যেন ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে আমি ঠিক ফিরে আসবো না আসা পর্যন্ত তোর মাকে দেখে রাখবি। সেই আশাতে বুক বেঁধে বকুল নিজের মনে মনে হারিয়ে যায় সবুজে ঘেরা মাঠ ঘাট পুকুর পারে কখনো কখনো ওর হাসি বাতাসে উড়ে ধানের শীষ ডগায় দোলা লাগিয়ে দেয় ,পুকুরের মাছ গুলো যেন ওকে দেখা মাত্রই লাফিয়ে ওঠে জলের উপর আর ও সে সব দৃশ্য উপভোগ করে ডালিম গাছ টাকে জড়িয়ে ধরে।
ভাবনা যখন – গৌতম তালুকদার [Natun Bangla Galpo 2023]
মন্দিরা খুব সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠে। বাড়ির উঠোন ঝাড় দিয়ে বাসন মেজে এক কাপ রং-চা গিলে পরি কি মরি ছুটতে থাকে। ছটা তেতাল্লিশের ট্রেনটা ধরতেই হবে তালদি থেকে। হাতে মাত্র দশ মিনিট সময় এখনো বেশ কিছুটা পথ যেতে হবে।ট্রেনটা ধরতে পারবে তো! এদিক সেদিক ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে কোনো ভ্যান আসে কিনা।না কোন কিছুর দেখা পাচ্ছে না।বলরামটাও আসছে না। রাগ হয় মন্দিরার। অন্য দিন ভ্যান নিয়ে ওকে তুলে নিতে সময়ে’র আগেই দাঁড়িয়ে থাকে। মনে মনে গাল দেয়ে পোড়া মুখোটা’র হলোটা কি আজ । আবার ভাবে- তবে কি ওর জন্যে অপেক্ষা না করে চলে গেছে! ছুটতে ছুটতে ভাবে গত কাল অতোটা বলা বোধ হয় ঠিক হয় নি ! হয়তো সে কারণে’ই……! কিন্তু তেমন ছেলে তো ও নয় এর আগেও কতোবা’র কতো কথা বলেছে, মুখ ঝামটা দিলেও হাসি মুখে উড়িয়ে দিয়েছে সব কথা। ওকে ঠিক সময় মতো ইষ্টেসনে পৌঁছে দেবার জন্যে ভ্যান নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকেছে তেঁতুল তলায়। অন্য যাত্রিদে’র তাড়া থাকলে সাফ বলে দিয়েছে হেঁটে চলে যেতে, ভাড়া নষ্ট করেছে তবু ওকে না নিয়ে কোনো দিন যায়নি অথচ আজ এমন কি হলো ….!
চোখের সামনে হঠাৎ ভ্যান নিয়ে দাঁড়ায় বলরাম তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে মন্দিরা।পাশ কাটিয়ে দ্রুত পা চালায়। দেখেও যেন না দেখার ভান। বলরাম ভ্যান ঘুরিয়ে নিয়ে জোরে চালিয়ে ওর সামনে এসে দাঁড়ায় চেপে ধরে মন্দিরা’র হাত।
— একটু দেরী হয়ে গেলো রে আজ, হেঁটে গেলে ট্রেন ধরতে পারবি না।
— তাতে তোর কি? পথ ছাড়। না পারি না পারবো। যেখানে ছিলি সেখানে’ই যা, আমি যাবো না ।
বলরাম জোড়ে চেপে ধরে মন্দিরা’র হাত
— আর কখনো দেরী হবে না। আয় উঠে বস কেন দেরি হলো না জেনে’ই রাগ করছি’স কেন?
— আমার জেনে দরকার নেই ছাড় পথ ছাড় ।
— উঠে বোস, ঠান্ডা মাথায় কাজে যা রাগ করিস না। ফেরা’র পথে তোকে সব বলবো।
মন্দিরা ভ্যানে উঠে বসতে বসতে বলে
— থাক আমার শুনে কাজ নেই।পিরিত দেখা অন্যখানে, আমি কি কিছু বুঝি না।
— কি যে সব বলিস পিরিত আর করতে পারলাম কোথায়,এখনো কারো মন-ই পেলাম না। তবে…!
বলরাম একটু থামে তারপর বলে-
— আজ কিন্তু নীল শাড়ি আর লাল ব্লাউজে তোকে খুব সুন্দর লাগছে। নীল শাড়িতে তোকে মানায় বেশ। কেন পরিস না বলতো এ শাড়িটা ?
মন্দিরা বলরামে’র প্রশংসায় মনে মনে খুশী হয়ে লজ্জায় লাল হয় তবু মুখে বলে-
— তোর তো আমার সব সাজ দেখে’ই ভালো লাগে এসব বলে আমায়,ভোলাতে হবে না বুঝলি লাভ হবে না কোনো, তাড়া তাড়ি চালা
— লাভ লোকসানে’র হিসেব আবার কবে আমায় করতে দেখলি ? তোকে সুন্দর লাগছে তাই….!
— থাক হয়েছে, তোদে’র মতো ছেলেদের আমার জানা আছে।
— তাই বুঝি। তা শহরে কাজে গিয়ে কটা ছেলের পাল্লায় পড়েছিস ?
— দেখ বাজে কথা বলিস না ,ভালো হবে না।
ট্রেন প্রায় ইষ্টেশনে ঢোকা’র মুখে,বলরাম আরো জোরে ভ্যান চালিয়ে প্লাটফর্মে’র মুখে এসে দাঁড় করায় ভ্যান। মন্দিরা লাফিয়ে নেমে ছুটে যায়। দু’জন প্যাসেঞ্জার এসে দাঁড়ায়। বলরাম ওদের নিয়ে ভ্যান ঘুড়িয়ে চেঁচিয়ে বলে-
— সাবধানে যা আমি তোর ফেরা’র সময় থাকবো।
ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে,অমনি প্লাটফর্ম থেকে লোক জনের চিৎকার ধর ধর গেলোরে গেলো ধর ধর। কিছু লোক ছুটে গিয়ে ভীড় করে দাঁড়ায়। ছুটে আসে জিয়ারপি, ভীড় জমতে থাকে প্লাটফর্মে। প্রায় ঘন্টা খানেক পরে ফের প্যাসেঞ্জার নিয়ে ইষ্টেশনে আসে বলরাম।একটু জিরিয়ে নিতে একটা চায়ে’র দোকানে বসে। প্লাটফর্মে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে তখনো আলোচনা চলছে,
— আরে দাদা এসব তো নিত্য কারে’র ঘটনা দিন দিন যে ভাবে যাত্রী’র সংখ্যা বেড়ে’ই চলছে।ট্রেন যতই বারাক না কেন? ছয়টা তেতাল্লিশে’র গাড়ি, যে পরিমাণে ভীড় হয় প্রতিদিন তাতে দু’চারটে পড়ার কথাই।মানুষের সময়, ধৈর্য্য, কোনোটাই নেই বুঝলেন একটা ট্রেন পরে গেলে কি হয়?
— মেয়েটি বাঁচবে বলে মনে হয় না।মাথা ফেটে…..
— আরে না না মাথা ফেটেছে ঠিক তাই বলে তেমন কিছুই হবে না। এ যাত্রায় বেঁচে যাবে।
কথাগুলো বলরামে’র কানে যেতে’ই ওর বুকটা ছ্যাৎ করে ওঠে এই ভেবে, যেভাবে ছুটে গেলো মন্দিরা!ওর কিছু হলো নাতো !ও ঠিক আছে কি! বলরাম জানতে চায় মেয়েটি মানে ?
একজন একটু বিরক্ত হয়ে উত্তর দেয়-
— মেয়েটি মানে,একটি মেয়ে ট্রেনে উঠতে গিয়ে সে পড়ে গেছে ,মাথা ফেটেছে।
— না মানে আমার একজন পরিচিত ঐ ট্রেনটাতে গেলো তো তাই …
— আপনি দেখেছেন দাদা ময়েটিকে ?
— হ্যাঁ আমরাইতো মেয়েটিকে ক্যানিং হাসপাতালে পাঠাবার ব্যবস্থা করলাম। কাজের মেয়ে শহরে বাবুদে’র বাড়িতে কাজ করে বলে মনে হলো। বলরামে’র বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে।
তবে কি…..! তাড়াতাড়ি মোবাইলটা বের করে ফোন করে। না ফোন লাগছে না। আবার করে না গলেছে না। আবার করে …!
— দাদা মেয়েটি কেমন দেখতে কি ছিলো পরনে ?
লোকটি একটু ভেবে বললো-
— শাড়ি! নীল রং-এর শাড়ি লাল ব্লাউজ কাঁধে ব্যাগ ছিলো। কেন তোমার কেউ হয় নাকি ?
— না মানে।
আর এক মুহূর্ত দেরি করে না বলরাম, ভ্যান নিয়ে ছোটে, ক্যানিং হাসপাতালে’র দিকে । আধঘন্টা ভ্যান চালিয়ে পৌঁছে যায় হাসপাতালে। খোঁজ করে পায় না।এমারজেন্সিতে তেমন কেউ এখনো আসেনি জানতে পেরে আবার মোবাইল করে না এবারও লাইন লাগছে না। দু’তিন বার কল করে একই কথা এই মুহূর্তে সংযোগ দেওয়া যাচ্ছে না,কিছু সময় পরে আবার চেষ্টা করুন। কি করবে বলরাম বুঝে উঠতে পারছে না। কি ভাবে খোঁজ নেবে তবে কি হাসপাতালে না এসে, দেরি না করে ছুটতে থাকে তালদির দিকে।
অসুস্থ ইন্দু বালা বিছানায় শুয়ে হরি নাম করছে। বাড়ির উঠনে ভ্যানটা রেখে ঘরে ঢোকে বলরাম ওকে দেখে ইন্দু বালা উঠে বসে বিছানায়। জিজ্ঞাসা করে –
— তুমি তো এদিকে আসো’ই না বাবা, তা আজ কি মনে করে এতো সাত সকালে ?
— না মানে।তুমি কেমন আছো মাসি ?
— আর আমি,চোখ বুঝতে পারলে’ই বাঁচি, তার আগে মেয়েটা’র একটা ব্যবস্থা করতে পারলে….
— মন্দিরা ফোন করেনি কাজে যাবার পর ?
— কেন রে বাপ ? কি হয়েছে, ফোন করবে কেন ?
— না মানে ঠিক মতো পৌঁছালো কি না তাই বলছি, তুমি তো চিন্তায় থাকো ।
— সে চিন্তা কি ওদের আছে। বললেই বলবে আমি কি বাচ্চা খুকি, ঠিক মতো পৌঁছাতে পারবো না। সাত সকালে বেড়িয়ে যায় আর ফেরে সন্ধ্যায়। সারাদিন বাবুদের বাচ্চাটাকে দেখা শোনা করে। বাচ্চা সামলানো তো মুখে’র কথা নয়। একটা দিনছুটি পায় না মেয়েটা।
— এ কাজ আর ওকে বেশী দিন করতে হবে না।
— না করে উপায় কি বল,মেয়েটার মাইনের টাকায় কোনো রকমে খেয়ে পড়ে বেঁচে আছি।
— কেন তোমার সাথে আজ দেখা হয়নি ?
— হ্যাঁ, হয়েছিলো তবে…..!
— তবে কি’রে কি হয়েছে? বলো আমায়।কিছু যেন লুকিও না বাবা।
— না না কিছু হয়নি এমনি বললাম । মন্দিরার মা যেন অস্থির হয়ে ওঠে-
— তুমি নিশ্চয়ই কিছু লুকোচ্ছ, আমায় বলো বাবা তা না হলে এ এই সাত সকালে তুমি…..…..!
— কিছু হয়নি । এদিকে ভাড়া নিয়ে এসে ছিলাম তাই তোমায় দেখেতে এলাম।
— ঘরে ঢোকে রাজু। বলরাম জিজ্ঞাসা করে-
— কিরে রাজু আজ কাজে যাস নি ?
— না এবেলা যাবো না।শালা মালিকটা বড় হারামি কাজ করিয়ে টাকা দিতে চায় না। তা তুমি কি মনে করে ?
— এমনি রে এদিকে ভাড়া নিয়ে এসেছি তাই।
— তোমার যে চাকরী টা হবার কথা ছিলো…..?
— থাক এসব কথা এখন, পরে সব বলবো। চল তোর সাথে কথা আছে। আসি মাসি।
— হ্যাঁরে, বাবা বলরাম কিছু হয়নি তো ? আমায় বলো বাবা কিছু লুকিও না।
— না মাসি কিছুই হয়নি,তুমি নিজের যত্ন নিও।
— কি ব্যাপার বলরাম দা ,কি হয়েছে ?
— আরে কিছু না। মন্দিরার ফোন করেছিলো কিনা একথা মাসিকে জিজ্ঞাসা করতেই মাসি টেনশন করছে। চল চল দেরী হয়ে যাচ্ছে আমার।
ওরা দু’জন ঘর থেকে বেড়িয়ে যেতে’ই ইন্দুবালা দু’হাত কপালে ঠেকিয়ে বলে-
ভগবান তুমি দেখো,মেয়েটা’র যেন কোনো বিপদ না হয়। ঐতো আমার এক মাত্র ভরসা।ও আছে বলেই তো আমরা দু’মুঠো খেয়ে বেঁচে আছি তা না হলে…..ছেলেটা তো মানুষ হলো না। সবটাই আমার কপাল। ঠাকুর তুমি দেখো মেয়েটাকে । কথাগুলো মনে মনে বলে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস
ছেড়ে ভাবে এমন সময় বলরাম তো কখনো আসে না হঠাৎ করে এসে মেয়েটা’র কথা বললো কেন ! আমার কাছে কিছু লুকোচ্ছে,! বালিশে’র পাশে রাখা মোবালই নিয়ে ফোন করে লাইন লাগছে না। ইন্দুবালা অস্থির হয়ে ওঠে – তাহলে মেয়ের কিছু হলো ফোন বন্ধ কেন! ফোন তো বন্ধ থাকে না ! বলরাম সব জানে তাই- ছেলেকে ডেকে নিয়ে গেলো হায় ভগবান এখন কি হবে আমার মেয়েটা ভালো আছে তো! আমি কি করবো কি ভাবে খোঁজ করবো এখন! ভাবতে ভাবতে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠেন। মায়ের মন তো একটু কিছুর আভাস পেলে বা সন্ধে হলেই সন্তানে’র জন্যে ব্যাকুল হয়ে ওঠে মনের ভেতরটায় কু ডাকতে শুরু করে অস্থির হয়ে ওঠে সঠিক খবর না পাওয়া পর্যন্ত। বলরাম রাজুকে সমস্ত কথা খুলে বলে, রাজু ওকে ফোন করতে বললে ফোন করে কিন্তু ফোনে’র সুইচ অফ। বলরাম রাজুকে বলে-
— ফোনে’র ভরসায় থাকা যাবে না এখন একটা ট্রেন আছে ডাউনে তুই চলে যা, যাদে’র বাড়িতে কাজ করে সেখানে খবর নে। তোর তো ফোন নেই ওদের ফোন থেকে আমায় ফোন করে জানাবি,সেই বুঝে আমিও চলে যাবো। মাসিকে এখুনি কিছু জানানো যাবে না। রাজু’র হাতে একশো টাকা দিয়ে ট্রেনে তুলে দেয়।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল কোনো খবর আসছে না কি করবে ভেবে উঠতে পারছে না বলরাম। সত্যি কি মন্দিরা’র কিছু হলো কোনো দিন তো ফোন বন্ধ থাকে না।এর আগে অনেকবারতো কথা বলেছে। কিছুই যদি জানতে না পারে ও তাহলে কি ভাবে কি করবে। ইন্দুবালা ঘরে বসে কান্না কাটি করছে আর ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করেই চলছে।কার কাছে বলবে খোঁজ নিতে,ছেলেটা ও বেরিয়ে গেলো বলরামে’র সাথে সেও তো ফিরে আসছে না। উঠে বসে বিছানায়।নেমে পাশের ঘরে যায় দেখে মন্দিরার ফোন চার্জে দেওয়া সুইচ অফ। হায় রে মেয়েটা ফোন নিতে ভুলে গেছে। না ফেরা পর্যন্ত ফোন করা যাবে না।ওদের নাম্বার টাও দিয়ে রাখে নি। ফোনে’র সুইচ অন করে, একটু ভেবে এগিয়ে যায় রাজু’র খোঁজ করতে।
বলরামে’র কিছুই ভালো লাগছে না। দুপুরে বাড়িতে খেতে না গিয়ে ইষ্টেশনের পাশে ভ্যান লাগিয়ে বসে থাকে। মনে মনে ভাবে- চাকরিটা হয়ে গেলেই আর দেরী করবে না ইন্দুমাসিকে বলবে ওদের বিয়ের কথা মন্দিরাকে আর শহরে কাজে যেতে হবে না। চাকরিটা তো প্রায় এক বছর হতে চললো ঝুলে আছে প্যানেলে নাম উঠে। ওতো সবসময় খোঁজ নিয়ে’ই চলছে জানতে পেরেছে আগামী মাসে’ই হয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে যদিও এটা একটা সামান্যে চাকরী তবু তো ওয়েষ্ট বেঙ্গল গভর্মেন্টে আন্ডার টেকিন সংস্থা,তা হোক এটাই আজ পায় ক’জন বর্তমানে চাকরি পাওয়া তো….। এতদূর লেখা পড়া করেও কোনো ভাল চাকরি আজও জোটাতে পারেনি এত দিনে, এর চাইতে আর ভালো কিছু ওর কপালে নেই। প্রাইভেট সংস্থায় কাজ করে দেখছে কোথাও ছয় মাসের বেশী টিকতে পারেনি,বিরক্ত হয়ে শেষে ভ্যান চালাতে শুরু করে। স্বাধীন কাজ।ঠিক মতো খাটলে মাসে ছয় সাত হাজার তো হয়ে যায়। কোনো কাজই ছোট নয়, অবশ্য মন্দিরা কোনো দিন এ নিয়ে কোনো কথা বলেনি। আরো উৎসাহ দেয়। এক মাত্র মা আর সামান্য একটু মাথা গোজার যায়গা ছাড়া তো আর কিছুই নেই ওর, তাতে কি আস্তে আস্তে সব করে নেবে,মন্দিরা এসে মায়ের দেখা শোনার করবে মায়ের তো বয়স হয়েছে। কিন্তু সেই কখন গেছে রাজু এখনো একটা ফোন করলো না।কি যে করে ছেলেটা……! দুঃচিন্তায় রাজু’র উপর রাগ হয়। এখন পর্যন্ত একটা খবর জানতে পারছে না। মন্দিরার যদি কোনো বিপদ হয়ে থাকে তাহলে তো, আবার ভাবে ওর ফোন টা যদি হাড়িয়ে যায় বা ট্রেনে উঠার সময় পড়ে যায় ভেঙ্গে যায় তাহলে ও কি করে জানাবে ! আমার নাম্বার কি ওর মুখস্থ আছে, না নেই।কি জানি থাকতেও পারে এইসব সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে দুপুর গড়িয়ে যায়।
আপ লাইনে ট্রেন ঢুকলেই বলরামে’র বুকটা দরাস দরাস করে ওঠে, এই বুঝি মন্দিরা এলো কি দেখবে ও, মন্দিরা ঠিক আছে তো ! এভাবে আরো কিছুক্ষণ বসে থাকে মোবালইটা বেজে উঠতেই বুকটা ধর ফর করে ওঠে। দেখে নতুন নাম্বার, তাড়াতাড়ি ফোনটা রিসিভ করে। দমে যায় বলরাম, মনে মনে রাগে বিরক্ত হয়ে উত্তর দেয় –
— এখন যেতে পারবো না অন্যে গাড়ি দেখুন।না না যতো টাকা’ই দেন না কেন যেতে পারবো না বলেই কল কেটে দেয়। এই ভেবে কষ্ট পায়-
— আচ্ছা মন্দিরা কি পারতো না একটি বার ফোন করতে, ওকি তাহলে এতোটুকু আমার কথা ভাবে না।সারা দিনে খবর নেই, আবার ফোনে’র সুইচ অফ করে রেখেছে। আবার ভাবে না না এসব ও কি ভাবছে সত্যিই যদি তেমন ঘটনা ঘটে বা ওর মোবালইটা হারিয়ে যায় তাহলে ফোন করবেই বা কি ভাবে! কিন্তু ক্যানিং হাসপাতালে মন্দিরা নামে’র তো কেউ যায় নি।তাহলে যে মেয়টি ট্রেন থেকে পড়ে গেলো কে বা কারা মেয়েটিকে নিয়ে কোথায় গেলো। সে তো মন্দিরা নাও হতে পারে! তাই যেন হয়, কিন্তু এভাবে কি নিশ্চিন্ত হওয়া যায়। মন্দিরা’র সাথে তো সারা দিনে একবার কখনো দুবার কথা হয়। অথচ আজ……!
আর ভাবতে পারছে না বলরাম। ডাউনে ট্রেন ঢুকতেই এগিয়ে যায় প্লাটফর্মের কাছে। হ্যাঁ, ঐ তো রাজু নামছে ট্রেন থেকে। ভালো করে এদিক সেদিক দেখে, মন্দিরাকে দেখতে না পেয়ে চুপসে যায়। হঠাৎ দেখে ভীড় ঠেলে মন্দিরা এগিয়ে আসছে । ও যেন বিশ্বাস করতে পারছে না নিজের চোখকে, ভুল দেখছে নাতো।না ঐতো মন্দিরা। প্রতিদিন যেমন দেখে। বুকের উপর থেকে একটা বড় পাথর যেন নেমে যায়, হাফ ছেরে বাঁচে। মন্দিরা’র ঠোঁটে’র কোনে মুচকি হাসি কিছুই বুঝি হয়নি। বলরাম ওর মাজায় বাঁধা গামছাটা খুলে মুখ মুছে ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় ভ্যানের দিকে।
গৌতম তালুকদার | Goutam Talukder
Bengali Poetry 2023 | মহা রফিক শেখ | কবিতাগুচ্ছ ২০২৩
Bengali Poetry 2023 | বিকাশ চন্দ | কবিতাগুচ্ছ ২০২৩
Bengali Poetry 2023 | মোঃ ওয়াসিউর রহমান | কবিতাগুচ্ছ ২০২৩
Bengali Poetry 2023 | সুমিতা চৌধুরী | কবিতাগুচ্ছ ২০২৩
Shabdoweep Founder | Shabdodweep Magazine | Shabdodweep Web Magazine | Shabdodweep Writer | Shabdodweep Poetry | Natun Bangla Galpo 2023 | Natun Bangla Galpo 2023 book | Natun Bangla Galpo 2023 pdf book | Writer – Natun Bangla Galpo 2023 | Top Writer – Natun Bangla Galpo 2023 | Top poet – Natun Bangla Galpo 2023 | Poet list – Natun Bangla Galpo 2023 | Top poetry – Natun Bangla Galpo 2023 | Best seller – Natun Bangla Galpo 2023 | Full pdf book – Natun Bangla Galpo 2023 | Free download pdf – Natun Bangla Galpo 2023 | Audio book – Natun Bangla Galpo 2023 | Video book – Bangla Kabita 2023 | Video poetry – Bangla Kabita 2023 | Audio poetry – Natun Bangla Galpo | New Poetry book | Shabdodweep poetry book | Shabdodweep International Web Magazine | International Bengali poetry | Bengali Poetry publisher | Shabdodweep Publisher | Shabdodweep Publisher 2023 | Shabdodweep Video Publisher | Shabdodweep Audio Book | Shabdodweep Video Book | Shabdodweep Mp3 poetry | Audio Poetry mp3 | Audio Poetry wmv | Video poetry mp4 | Natun Bangla Galpo 2023 video series | Natun Bangla Galpo 2023 – web series | Natun Bangla Galpo 2023 – Latest version | Natun Bangla Galpo 2023 pdf book | web video – Natun Bangla Galpo 2023 | web reader – Natun Bangla Galpo 2023 | pdf reader – Natun Bangla Galpo 2023 | pdf publisher – Natun Bangla Galpo 2023 | Best web series – Natun Bangla Galpo 2023 | new pdf book – Natun Bangla Galpo 2023 | New story book – Natun Bangla Galpo 2023