Matritva | মাতৃত্ব | পুনম মায়মুনী | New Bengali Story 2023

Sharing Is Caring:
Matritva

মাতৃত্ব – পুনম মায়মুনী [Matritva]

তখনো আকাশের শেষ তারাটি জেগেছিল। চাঁদ আর পৃথিবীর বিদায় লগ্ন। চাঁদের সেই দীপ্ত হাসি ম্লান হতে চলেছে। উত্তরের হিম শীতল হাওয়া একটু একটু বইতে শুরু করেছে। হালকা ধোঁয়া ধোঁয়া আবরণে ঢাকা প্রকৃতিটা। চারিদিক নিস্তব্ধ। পাখিরাও যেন গভীর ঘুমে অচেতন।

শুধু উমার দু’চোখে ঘুম নেই। প্রায়ই উমা এভাবে নিশি রাতে চাঁদের সাথে, নিল জোছনার সাথে মনের কথাগুলো ব্যক্ত করে কাটিয়ে দেয়। কখনোবা ঘুমন্ত দু’বছরের মেয়ে বিন্দুর পাশে শুয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ে।

বিছানায় সারা রাত ছটফট করে একসময় উঠে পড়ে উমা। জানালার পর্দাটা সরিয়ে দাঁড়ায়। লাইট পোষ্টের বাতিগুলো তখনো জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। রাস্তার এক কোণায় দু’টো কুকুর গা ঘেঁষাঘেঁষি করে শুয়ে ,একটু পর পর মুখ তুলে ঘেউঘেউ করে খেঁকিয়ে উঠছে।

একটা গাড়ির হর্ণের শব্দে উমার মুখটা ঘুরাতেই , গাড়ির দু’পাশের আলোটা উমার দু’চোখে নিক্ষেপ করে, ঠিক যেন শকুনির চোখের মতো রাশেদের নিষ্ঠুর ঐ দু’টো চোখ!

দারোয়ান গটগট করে বড় গেটটা খুলে দেয়। ব্রিফকেস হাতে রাশেদ গাড়ি থেকে নেমে ড্রাইভার সাবেরকে উদ্দেশ্য করে বলল,

তুমি আজই দেশে চলে যাও। কাজের লোক ছাড়া তোমার বেগম সাহেবের খুব কষ্ট হচ্ছে!” বলেই উপরে উঠে আসে।

উমা তখনো দাঁড়িয়ে। ভোরের স্নিগ্ধ আলোয় স্পটই বুঝা যাচ্ছে উমার অবয়ব।

রাশেদ উমার পিছনে এসে দাঁড়ায়,

আজও এভাবে দাঁড়িয়ে আছ ? কতদিন বলেছি আমার জন্য অপেক্ষা করোনা, কাজ ফেলে তো আর আসতে পারি না।

উমা রাশেদের দিকে মুখ ফিরিয়েও তাকালো না, তেমনি ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। রাশেদ এবার দু’হাত দিয়ে উমার গাল দু’টো আলতো করে নিজের দিকে ফেরালো,

কি, কথা বলবে না? একি! তোমার চোখে জল।

উমা আর স্থির থাকতে পারলো না, গ্রিলে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে। কান্নার শব্দে বিন্দুর ঘুম ভেঙ্গে যায়।

রাশেদ মেয়েকে কোলে তুলে নিতে গেলে, হঠাত-ই উমা রাশেদকে এক ঝাপটায় সরিয়ে দেয়,

খবরদার তুমি আমার মেয়েকে ছুঁবে না।

খানিকটা রেগে গিয়ে রাশেদ বলল,

বিন্দু আমারও মেয়ে।

ও কথা বলতে লজ্জা করে না ? ঐটুকু একটা দুধের বাচ্চা সারাদিন বাবা বাবা বলে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ে, মেয়ের জন্য এতটুকুও সময় নেই তোমার?

ওর জন্য তো তুমিই আছ। ব্যবসার কাজে আমাকে কত জায়গায় যেতে হয়, এসব আমি কার জন্য করছি? গাড়ি বাড়ি ব্যাংক ব্যাল্যান্স সব তো তোমাদের জন্য আর কী চাও।

উমার যেন ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায়,

এসব কিচ্ছু চাই না আমার। আর কত ব্যবসার ওজুহাত দেখাবে। রোজ রোজ মিটিং ,কনফারেন্সের নাম করে বন্ধুবান্ধব নিয়ে পার্টি করে মাঝ রাতে ঘরে ফিরবে । মেয়েদের কী পেয়েছ হাতের পুতুল, না? বিয়ে করে কিনে নিয়েছ যা খুশি তাই করবে আর আমরা মুখ বুজে সব সহ্য করবো!

তাচ্ছিল্য স্বরে রাশেদ,

Of course ! আমার সংসারে থাকতে হলে সহ্য করতেই হবে তোমাকে বলে গট গট করে নিজের রুমে চলে যায় ।

রাশেদের বরাবরই এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে উমাকে আহত করে। ক্লান্ত দেহটা নিয়ে উমা ঘুমন্ত বিন্দুর পাশে শুয়ে ভাবতে থাকে রাশেদের এই প্রাচুর্য আর অহংকারের কথা । চারিদেয়ালের মাঝে এই ঐশ্বর্যপূর্ণ আসবাবপত্রগুলো প্রতি মুহূর্ত যেন তাঁর গলা চেপে ধরে ,বিষধর সাপের মত ফণা তুলে ছোবল মারে । অসহনীয় কষ্টে উমার বুকের ভিতর হাহাকার করে কাঁদে। এমন বিলাসিতার জীবন তো সে চায় নি? চেয়েছিল একটু শান্তি, একটু নির্মল ভালোবাসা। যে ভালোবাসা শুধুই উমার একার, একান্ত নিজের। এটাই যে উমার প্রাচুর্য। কেমন করে রাশেদকে বুঝাবে অর্থের বিনিময়ে ভালোবাসার সম্পত্তি কেনা যায় না, পৃথিবী সমান ঐশ্বর্যও স্বামীর ভালোবাসার কাছে অতি নগণ্য, মূল্যহীন।

উমার মনে পড়ে, এই অর্থ আর ভালোবাসা নিয়ে তুমুল ঝগড়া হয়েছিল শানুর সাথে। শানুর যুক্তিতে উমা চরমভাবে পরাজিত হয়েছিল।পরাজয় বরণ করে রাশেদের হাত ধরে প্রবেশ করেছিল এই অন্দরমহলে কিন্তু এই মহল যে একটা বিষাক্তপুরী। বিষের জ্বালায় দগ্ধ হয়ে আজ সে ক্ষতবিক্ষত। যদি শানু এসে একবার স্বচক্ষে দেখে যেত? বীরদর্পে সে বলতো, তোমার কথা তুমি ফিরিয়ে নাও শানু, ”অর্থেই মানুষ সুখী হয়, ভালোবাসায় নয়”। তোমার এ ধারণা একেবারেই ভুল, তুমি হেরে গেছ শানু। আমায় আর বুঝাতে পারবেনা তোমার ঐ মিথ্যে যুক্তিতর্ক দিয়ে।তুমিও আজ আমার সুরে সুর মিলিয়ে বলবে, হ্যাঁ উমা আমি সেদিন ভুল বুঝেছিলাম তোমায় ভুল বুঝিয়েছি্লাম।

দু’হাতে বুক চেপে ধরে উমা, যদি একটু প্রান খুলে কাঁদতে পারতাম! বুকের শীতল জলগুলোও যেন রাশেদ শুষে নিয়েছে।

বিন্দু ঘুমের ঘোরে নড়েচড়ে ছোট্ট তুলতুলে হাতটা উমার হাতের উপর রাখে । মেয়ের স্পর্শে স্নেহ, মমতায় উমা্র বুকের ভিতরটা কী এক শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়। আলতো করে ঠোঁটের কাছে নিয়ে চুমু খায়, মাগো, তুই কেন এত মায়া নিয়ে এসেছিস আমার কোলে, কেন এত মোহ তোর চোখেমুখে যেন আমার সমস্ত সুখ বিসর্জন দিয়েছি তোর এই ছোট্ট বুকে। বিন্দু তখন ছোট ছোট নিঃশ্বাস ফেলে গভীর ঘুমে অচেতন।

দু’দিনের ছুটি কাটিয়ে সাবের কমলাকে নিয়ে ঢাকার পথে রওনা হয়। কমলার বুকটা কেমন ধুক ধুক করতে থাকে, এই প্রথম তাঁর ঢাকায় আসা। বুকের ভিতর খোকনের স্মৃতিগুলো তোলপাড় করে যেন আছড়ে পড়ছে! সাবের ট্রেনের জানালায় একমনে বসে দেখছিল, সারি সারি গাছগুলো কেমন করে পিছনদিকে দৌড়ে যাচ্ছে।

নিরবতা ভেঙ্গে কমলা মৃদুস্বরে বলে,

মামা, আমার জানি কিমুন ডর লাগতাসে! আমি কি শহরের কাম করতে পারমু?

সাবের নিঃশব্দ হেসে বলে,

আরে পারবি পারবি; বিবিসাহেব খুব ভালা মানুষ ঠাণ্ডা মেজাজের।

কমলা মাথা নাড়ায়,

‘হ’, ট্যাকা থাকলে মেজাজ অমুন ঠাণ্ডাই থাহে।

ছোট একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে সাবেরও উত্তর দিল,

তুই ঠিকই কইছস, আমগো ট্যাকা নাই তাই মেজাজটাও থাহে সবসময় চড়া। কাউরে ভালাবাসতেও জানিনা!

লম্বা একটা হুইসেল দিয়ে ট্টেনটা কমলাপুর ষ্টেশনে এসে থামে।

ওদের পৌঁছাতে প্রায় সকাল দশটা বেজে যায়। কমলা তাঁর পুটলিটা বগলের তলায় নিয়ে সাবেরের পিছনে পিছনে গেটের ভিতর ঢুকে। কমলা চারিদিকে অবাক হয়ে দেখতে থাকে। তখনো তাঁর বুকের ভিতর ধুক ধুক করেই যাচ্ছে। সাবের কমলাকে নিয়ে সোজা দোতালায় উঠে আসে ।

উমা কমলাকে দেখে হাসিমুখে বলল,

ও, তুমিই কমলা?

কমলা ঘোমটাটা আরও একটু এঁটে বিনয়ের সাথে একটা সালাম ঠুকে উমার আরও কাছে এসে দাঁড়ায়।

উমা বলল,

অনেক দূর থেকে কষ্ট করে এসেছ, ফ্রেস হয়ে একটু রেস্ট নাওগে…। আজ কোন কাজ করতে হবে না তোমার। তারপর বাবুর্চিকে ডেকে বলল,

কমলাকে সার্ভেন্ট রুমটা দেখিয়ে দাও তো । আর ওর ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ এগুলোর দিকে খেয়াল রেখ।

উমা চলে যায় নিজের রুমে। কমলা উমার কথাগুলোর আগামাথা কিছুই বুঝলোনা। শুধু এইটুকুই বুঝলো আজ কোন কাজ করতে হবে না তাঁকে। তবে উমার সাবলিলভাবে কথা বলার ভঙ্গি দেখে কমলার অনেকটা ভয় কেটে যায়।

রোজকার অভ্যাসের মত খুব ভোরে কমলার ঘুম ভেঙ্গে যায়। গ্রামের বাড়ির সেই পাখির কলরব মানুষের হৈ হুল্লোড় কিছুই নেই এই শহরে। নিরব নিঃশব্দ চারিদিক। গুটি গুটি পায়ে কমলা সামনের বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। চারপাশে কত বড় বড় দালান কোঠা। ছাদে বারান্দায় কত বাহারি গাছ ফুল লতায় পাতায় ভরা। এই প্রথম তাঁর শহর দেখা আবার রাজধানী। মামার মুখে শুনেছিল রাজধানীতে সব বড়লোকের কাড়বার। কত টাকা খরচ করে তাঁরা ফুলের বাগান করে নিচে ফোয়ারায় বৃষ্টির মত পানি ছিটায়। আর তারা শুধু একপেট ভাদের জন্য কত জায়গায় ঘুরে বেড়ায়! কমলা একমনে চারপাশের বাড়ির মানুষদের সুখ নিয়ে নাড়াচাড়া করতে থাকে।

বিন্দুকে দেখভার করার জন্যই মূলত কমলাকে রাখা। অল্পদিনের মধ্যেই বিন্দু কমলার খুব ভক্ত হয়ে যায়। কমলার ছেলে খোকন ঠিক বিন্দুর বয়সী, তাই বিন্দুর মাঝে যেন কমলা তাঁর খোকনকেই খুঁজে পায়। উমা প্রয়োজন ছাড়া কমলার সাথে খুব একটা বেশি কথা বলে না। তবুও উমার কথা ,আচার-আচরণের স্নিগ্ধতা কমলাকে মুগ্ধ করে। কিন্তু মাঝে মাঝেই উমার বিষণ্ণতা আর উদাস ছল ছল চোখে আকাশের দিকে চেয়ে থাকা মুখখানা দেখে উমাকে ঠিক মেলাতে পারে না । কিসের যেন একটা অভাব ঠেকে কমলার কাছে।

আজ ছুটির দিন। উমা ময়লা কাপড়গুলো লন্ড্রিতে দেওয়ার জন্য রাশেদের ঘরে ঢুকে। রাশেদ তখন অঘোরে ঘুমোচ্ছে। ভোরের হালকা সূর্য রোশনিতে রাশেদের মুখখানা আরো অপূর্ব লাগছে! নিঃসন্দেহে শানুর চেয়ে রাশেদ অনেক বেশি সুদর্শন। কিন্তু শানুর ছিল আকাশের মত বিশাল একটা সুন্দর মন আর হৃদয় উজাড় করা ভালোবাসা। যে ভালোবাসায় আছে সম্মান আর নির্ভরতা।আর রাশেদের আছে বিশ্রী কুৎসিত পাষণ্ড একটা মন। সেখানে কেউ কোনদিন শান্তি পাবেনা। তবুও এই রাশেদদের বাহ্যিক রূপ আর অর্থের কাছে বার বার হেরে যায় শানুদের মত সাধারণ চরিত্রবান লোকেরা। উমার ভিতর থেকে একটা উষ্ণ নিঃশ্বাস বেরিয়ে আসে। রাশেদের ছড়ানো ছিটানো কাপড়গুলো উঠাতেই সাদা শার্টের উপর লিপিস্টিকের ছোপ ছোপ দাগ দেখে উমা শিউরে উঠে! তৎক্ষণাৎ পাশে রাখা রাশেদের ব্রীফকেসের ডালাটা খুলে। কিছু কাগজপত্রের মাঝে একটা লেডিস পার্স উমার নজরে আসে। তাড়াতাড়ি ভিতরটা দেখে নেয়, কিছু অরনামেন্টস আর লেডিস ঘড়ি পড়ে আছে। উমার আর বুঝতে বাকি রইলো না, প্রায় রাতে কেন রাশেদ দেরী করে বাড়ি ফেরে। রাশেদের অনেক কীর্তিকর্মের কথা জানে উমা। কিন্তু আজ রাশেদ যে একটা চরিত্রহীন নারী লিপ্সা এটা তাঁর জানা ছিল না। উমা যেন কিছুতেই মানতে পারছেনা। ঘৃনায় ক্ষোভে উমার সারা শরীর কাঁপতে থাকে। শক্ত করে চেপে ধরে পার্সটা। হঠাৎ রাশেদের ঘুম ভেঙ্গে যায়।

উমা আর স্থির থাকতে পারলোনা, পার্সটা রাশেদের মুখের সামনে ধরে ক্ষিপ্ত কণ্ঠে বলল,

এটা কী? এই কী তোমার কাজ, তোমার ব্যবসা?

রাশেদ স্বাভাবিকভাবে উঠে বালিশটা কোলের উপর নিয়ে আয়েশ করে বসে একটা সিগারেট ধরায়। উমার প্রশ্নের কোন আমলই দিল না।

উমার রাগ দ্বিগুণ বেড়ে যায়, পার্সটা ছুঁড়ে ফেলে দেয় মাটিতে,

ছিঃ! তুমি এতোটা নীচ অসভ্য অমানুষ! তোমার মত একটা চরিত্রহীনকে স্বামী হিসেবে ভাবতে আমার ঘেন্না করছে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।

ফুটবলের মত বালিশটা ছুঁড়ে দিয়ে রাশেদ তেড়ে আসে উমার দিকে,

Shut up , Enough 2 Enough Don’t exceed your limits !

বাহ, স্বচক্ষে দেখার পরও বোবা হয়ে থাকবো সেটাই আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছ? উমাও উত্তপ্ত হয়ে জবাব দেয়।

Un culture , Un social মেয়ে কোথাকার! সমাজে স্ট্যাটাস বজায় রাখতে হলে সামান্য এমন কিছু হয়েই থাকে।যখন জেনেই গেছ সুতরাং এখন থেকে এগুলো মানিয়ে নেওয়াটাই তোমার জন্য মঙ্গল।

তুমি স্ট্যাটাস বলছ কাকে, ঐ নগ্ন প্রেমকে? যার শিকারে স্ত্রীর চোখকে ধূলো দিয়ে, লেলিয়ে দিচ্ছ তোমাদের ব্যাক্তিত্বকে চরিত্রকে তোমাদের স্বত্বাকে পিষে হত্যা করছ। আর ঐ নোংরা সমাজকে মেনে নিতে বলছো আমাকে? সেই সমাজের মুখে আমি থুথু দেই!

ব্যবসার কী বুঝ তুমি? টাকা রোজগার করতে —

কথাটা কেড়ে নিয়ে উমা তীব্র কণ্ঠে বলল,

চাইনা ঐ দুর্গন্ধযুক্ত পাপের টাকায় তোমার সংসার করতে!

একটা বিদ্রুপের হাসি হাসে রাশেদ,

অস্বীকার করতে পারবে, তোমার সুখের জন্য শানুর বদলে কেন আমাকে জামাই হিসেবে বেছে নিয়েছিল তোমার বাবা-মা? শুধু এই টাকার জন্য।

অন্যায় করেছে চরম ভুল করেছে। তাঁদের সেই ভুলের মাশুল দিতে গিয়ে আজ আমার বুকে গড়ে উঠেছে এক বিশাল যন্ত্রণার পাহাড়! তোমার এই রাজপ্রাসাদের প্রতিটি কোণায় কোণায় আর অঢেল টাকায় কত গন্ধ শুঁকেছি কিন্তু কই ? সুখ নামের ঐ দু’টি শব্দ আজও তো খুঁজে পেলাম না!

উমা নিজেকে সংবরণ করে, তোমার কাছে সুখ নেই শাহেদ, মিথ্যার আশ্রয়ে কেন আমায় বেঁধে রেখেছ? তোমার কোন অধিকার নেই আমার জীবনকে উপহাস করার অপমান করার। বিশ্বাস কর এই কঠিন দেওয়ালের মাঝে আমি আর জিন্দা লাশ হয়ে থাকতে পারবোনা!

উমা ঘুমন্ত বিন্দুকে কোলে তুলে নেয়। তারপর রাশেদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আকুতির স্বরে বলে,

এবার আমায় রেহাই দাও প্লিজ! চিরদিনের মত আমি তোমায় মুক্তি দিয়ে গেলাম ,বলে সামনের দিকে পা বাড়ায় উমা।

রাশেদ দরাজ গলায় বলে উঠে,

দাড়াও, স্বইচ্ছায় যেতে চাও, যাও। তোমায় আমি বাঁধা দিব না তবে বিন্দুকে নিতে পারবেনা ওকে রেখে যাও।

বিন্দু আমার মেয়ে, ও আমার কাছে থাকবে।

সেটাতো আদালত বলবে, বিন্দু কার কাছে থাকবে? সেদিন নিয়ে যেও।

রাশেদের এমন কঠিন উচ্চারণে, উমা থমকে দাঁড়ায়। উমা খুব ভালো করেই জানে রাশেদের টাকার কাছে সে কখনোই জয়ী হতে পারবেনা।

উমা ধীরে ধীরে বিন্দুকে বিছানায় শুইয়ে দেয়।

রাশেদের ঠোঁটে যেন একটা বিজয়ের বক্র হাসি।

উমা অবসন্ন দেহে বালিশে মুখ গুঁজে নিঃশব্দে কাঁদতে থাকে।

বাইরে দাঁড়িয়ে কমলা সবই শুনতে পায় । এতদিন দালানের সুখ নিয়ে সে, যে রচনা করে গেছে তা ঝড়ের বেগের মত নিমিষেই একটানে সব মুছে দিল।

কমলা একমনে বসে চুলের বিনুনি গাঁথছিল। এমনসময় সাবের এসে হাজির। পিছনে উমাও দাঁড়িয়ে। কমলা তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ায়।

সাবের বলল,

কমলা, তোর খোকন খুব অসুস্থ । তোর স্বামী আইজ-ই তোরে দেশের বাড়ি নিয়া যাইতে কইলো।

উত্তেজিত হয়ে কমলা বলে উঠে,

না,না বিবিসাহেব আমি যামু না আমি আর ঐ পিশাচের ঘর করুম না! কতবার আমারে মাইরা ধইরা খেদাইয়া দিসে আর কোলের পোলাডারে কাইরা নিসে, বলে আঁচলে মুখ ঢেকে হুহু করে কাঁদতে থাকে।

উমা কমলার খুব কাছে এসে দাঁড়ায়। একটা হাত কমলার কাঁধে রেখে মায়ার স্বরে বলল,

আমি সব শুনেছি তবুও বলছি তুমি ফিরে যাও কমলা। অতিরিক্ত টাকায় কেউ হয়ে যায় অমানুষ আর অল্প টাকায় হয় কেউ অমানুষ! ওদের হিংস্র আচরণের জন্য খোকনকে তাঁর মায়ের আদর সোহাগ থেকে কেন বঞ্চিত করবে, খোকন তো কোন দোষ করেনি? ,ওকে ঠকানোর কোন অধিকার তোমার নেই।

ভেজা চোখে ফ্যাল ফ্যাল করে উমার মুখের দিকে তাকায় কমলা।

তাঁর সারা শরীরে স্নেহের একটা শিহরণ জেগে উঠে , “খোকন যেন তাঁর অপেক্ষায় মা মা করে হাতছানি দিয়ে ডাকছে!”

অবশেষে, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ জেনেও পুটলিটা বগলের তলায় নিয়ে কমলা সাবেরের পিছন পিছন পা বাড়ায়।

কমলাকে শেষ দেখা পর্যন্ত উমা সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে আর মনে মনে ভাবতে থাকে,

‘নারীরা বারবার মাতৃত্বের কাছে কেন হেরে যায়’? 

পুনম মায়মুনী | Punom Mynoni

Shesh Belay | শেষবেলায় | মনসুর আলি | Best 2023

New Bengali Novel 2023 | খুঁজে ফিরি বিশল্যকরণী (পর্ব ৯) | উপন্যাস

New Bengali Story 2023 | আশার আলো | সুভাষ নারায়ন বসু

New Bengali Article 2023 | সংবাদ মাধ্যমের নিরপেক্ষতা

Matritva Clinic | Matritva dristi | Matritva Foundation | matritva vandana yojana | matritva yojana | matritva vandana yojana in hindi | matritva patanjali | matritva avkash | matritva vandana yojana form pdf | matritva clinic | matritva class 12 exercise | matritva avkash form pdf | matritva vandana yojana form | indira gandhi matritva poshan yojana | indira gandhi matritva sahyog yojana | pradhan mantri matritva vandana yojana | pradhan mantri surakshit matritva abhiyan | kaushalya matritva yojana | pm matritva vandana yojana | pm surakshit matritva abhiyan | indira gandhi matritva yojana | surakshit matritva aashwasan | pradhanmantri matritva yojana | Shabdodweep Founder | Shabdodweep Web Magazine | Shabdodweep Story | Shabdodweep Writer

Leave a Comment