Main Theme of the Shadow Lines | ছায়া | Shawkat Noor

Sharing Is Caring:

ছায়া – শওকত নূর [Main Theme of the Shadow Lines]

এক

কড়ইগাছটি বেশ। এর মতো দ্বিতীয়টি জীবনে দেখা হয়নি। যে একতলা বাংলোতে আমার বাস, এটি তার পশ্চিম পাশ দিয়ে উঁচিয়ে আছে বাংলোর চাল থেকে অন্তত হাত পঁচিশেক ওপর নাগাদ। চমৎকার সুবৃহৎ ছাতার মতো বিস্তৃত হয়েছে বাংলোর দক্ষিণ অর্থাৎ সদর তথা বাড়ির বার আঙিনা বরাবর। গাছের পাতার ফাঁক নয় যেন ছাতার ছোটবড় অসংখ্য ছিদ্র গলিয়ে শীত গ্রীষ্ম বারো মাস, দিবা রাত্র, আলো-অন্ধকার, ছায়া-আবছায়া, কুয়াশা, বৃষ্টি-ফোঁটা-বিন্দু-ছাট প্রভৃতি নেমে আসে নিচের সাদা খরখরে মাটিতে। সময় ভেদে বিচিত্র অনুভূতি টেনে আনে তারা।

এ মাটি তথা বাংলোর বার আঙিনা আয়তাকার। আয়তের পুব প্রান্তটি মুল বাড়ির পশ্চিম সীমা সংলগ্ন, পশ্চিম প্রান্তটি গিয়ে ঠেকেছে উত্তর দক্ষিণগামী পাকা সড়কে। সড়কের পুব পাশ দিয়ে সোজা দক্ষিণ বরাবর বিস্তৃত হয়েছে শহর উপকন্ঠের যত পাকা বাড়িঘর। পশ্চিমে বিস্তৃত ধু ধু ফসলের মাঠ সেদিকের এবং দক্ষিণের দিগন্তে গিয়ে ঠেক খেয়েছে। সড়কের উত্তর মাথাটি মিশেছে মুল মফস্বল শহরের চান্দিশায়।

যে বাংলোর কথা বলা হচ্ছে, আমি সেটির মালিক কিংবা উত্তরাধিকারী কেউ নই। এর বার-পশ্চিম এক তৃতীয়াংশের ভাড়াটে মাত্র। পেশায় আমি একজন ছাত্র, কলেজ ছাত্র। যে মফস্বল শহরকে প্রাসঙ্গিক করা হচ্ছে, সেটিরই এক বেসরকারি কলেজে বি. এস-সি ক্লাসে অধ্যয়নরত। আমি আকারে বেটে, গায়ের রঙ ধবধবে ফর্সা, মুখমণ্ডল লম্বা, নাক মোটা, চোখ বড়, মাথার চুল অর্ধ-লাল ও কোঁকড়া, কোনও কারণে দাড়িগোঁফ খুবই নগণ্য। আমার স্বাস্থ্য মাঝারি মাত্রার, পেট খানিকটা বাঁকা। নামটা এ পর্যায়ে বলে নেয়া ভালো। আমার নাম হচ্ছে সারাফ উল সারাফী।

আমার একটি বাইসাইকেল আছে, যেটি চালনায় আমি বেশ দক্ষ এবং শহর তথা কলেজে সেটি নিয়েই চলাচল করি। গোটা দুই টিউশনি আছে আমার শহরের অপর প্রান্তে। সেখানে যাতায়াতেও কাজে লাগাই এ সরল যানটিকে। পেশায় ছাত্র হলেও চেহারায় পরিপক্ব ভাব জেঁকে বসায় আমাকে আর ছেলে বা ছেলেটি অভিহিততে ফেলা চলে না, বরং ‘লোক’ শব্দটি আমার চরিত্রের সাথে বেশ মানিয়ে যায়। তবে লোক হিসেবে এ পরিসরে আমার কোনও গুরুত্ব বা তাৎপর্য নেই। আবালবৃদ্ধবনিতা কেউ ভ্রুক্ষেপে আনে না কোনও ব্যাপারে কখনো, যদিও এখানে তিন বছরের অধিবাস।

আমি পড়ুয়া ছাত্র, বইয়ের পোকা, মুখস্থ বিদ্যায় পারদর্শী, শব্দ করে পড়ি। পাঠ্যবইয়ের বাইরেও বেশ বই আছে আমার সংগ্রহে। অধিকাংশই সাহিত্যের; কিছু আছে সাধারণ জ্ঞান, দর্শন, বিজ্ঞানের। বাংলো ও এর চারপাশের আবহকে আমি নিয়মিত বেশ উপভোগে আনি। রৌদ্রোজ্জ্বল কিংবা বৃষ্টি বাদলার দিন, সান্ধ্যরাগ, জোছনারাত, কুয়াশাচ্ছন্ন শীতরাত, দোয়েলের শিস, সময়সময় ঝাঁক শালিকের কোলাহল আমাকে ভীষণ বিমোহিত করে। সে বিমোহিতকরণে কড়ইগাছটি যেন অপূর্ব এক প্রভাবক। কখনো কখনো আমি বাংলো থেকে বেরিয়ে সামনের সড়ক ধরে শহর-বিপরীতে দীর্ঘক্ষণ হাঁটি।

ক্বচিৎ যান চলাচলের এ সড়কে পা চালিয়ে ফসলের মাঠ ছাড়িয়ে সুদূর নীল ধূসর দিগন্তে দৃষ্টি ধরে আমি চলে যাই দূরে, বহুদূরে। প্রায় দিনই কোন না কোন ছাত্রী-দল প্রাইভেটে কিংবা অন্য কোনও কাজে পাশ দিয়েই হেঁটে যায়- পুরুষ তথা বিপরীত লিঙ্গের বয়স-কাছাকাছি ব্যক্তি হিসেবে আমার ন্যূনতম মূল্যায়ন ফুটে ওঠে না। যেন পথপাশের আগাছা কিংবা পরিত্যক্ত টেলিফোন থাম্বা। এ থেকে কোনও হৃদপ্রজ্জ্বলন আমাকে ন্যূনতম কখনো স্পর্শ করে না। আমি আমার মতো চলিফিরি।

বাংলো, প্রাকৃতিক নানা উদ্দীপক ঘেরা দিবারাত্র, পড়াশোনা, রান্না-খাওয়া, কলেজে-টিউশনিতে যাওয়া আসা, সড়ক ধরে দূরে হেঁটে চলা – এসব নিয়ে থাকি বেশ। আমার উল্লেখযোগ্য কোন বন্ধুবান্ধব নেই, কেউ আসেও না এখানে। মাসের শুরুতে ভাড়া আদায় তথা কিঞ্চিৎ খোঁজখবর উপলক্ষে কখনো প্রৌঢ় বাড়িওয়ালা অথবা তার যুবক ছেলে এসে দরজায় দাঁড়িয়ে টাকা গোনার ফাঁকে দু’ চার কথা বলেন- এই আমার সামাজিক যোগ-জাল। অবশ্য কলেজে আমার গুটিকতক সহপাঠী আছে, যাদের সাথে সংক্ষিপ্ত সময়ের চলাচল শহরেই সীমাবদ্ধ থাকে। ক্যাম্পাস ও বাইরে হাঁটা-চলা, বড়জোর একত্রে ক্যান্টিনে বসে এক কাপ চা-সিঙ্গারা খাওয়া, এই যা। বাংলোতে পড়াশোনা, খাওয়া ঘুম, বিশ্রামের পর সময়সময় হাঁপ ধরে এলে বাংলো থেকে বেরিয়ে পড়াটা অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। বেরিয়ে পড়ি। ওই দু’জনকে আমি কক্ষটিতে নিয়মিত আড্ডায় লক্ষ্য করি। তাদের কথোপকথন উচ্চস্বর না হলেও আমার কক্ষ থেকে প্রায় অধিকাংশ কথাবার্তাই শ্রবণযোগ্য হয়।

শহর উপকণ্ঠের কৃষি মাঠগুলোকে আজকাল বাণিজ্যিক চাষাবাদ-কাজে লাগানোর বহুল প্রবণতা লক্ষণীয়। সড়ক পাশের যে অবারিত মাঠটির কথা উল্লিখিত হলো, সেটিও তার ব্যতিক্রম নয়। যতদূর দৃষ্টি পৌঁছানো চলে, মাঠে নানা জাতের শাকসবজি চোখে পড়ে – লালশাক, ডাঁটাশাক, ঢেঁড়স, পুঁই, ধুঁদুল ঝিঙে, শীতকালের যাবতীয় শীত-সবজি প্রভৃতি। একমাত্র ব্যতিক্রমের মধ্যে চোখে পড়ে দূরের ভুট্টা খেত। মাঝেমধ্যে আমি সড়ক থেকে নেমে মাঠের আল ধরে হাঁটি। বিশুদ্ধ হাওয়া সেবনের সাথে নানারঙ শাক সবজিতে নজর বুলিয়ে যাই। স্থির-ছুটন্ত খেঁকশিয়াল- খরগোশ, উড়ন্ত – উড়ে বসা পাখির ঝাঁকে বিমুগ্ধ হই।

এ ধরনের হাঁটায় আমি সড়ক থেকে তেমন একটা দূরত্বে নিজেকে টেনে নিই না। সড়কের বড়জোর একশ হাত সমান্তরালে মাঠ মধ্যগামী উত্তর দক্ষিণ আলে দক্ষিণ বরাবর হাঁটি। সুদূরে দক্ষিণ পশ্চিম কোনা, দক্ষিণ ও দক্ষিণ পুব কোনার দিগন্তে ছায়া ছায়া গাঁয়ের ওপর আকাশ নেমে থাকে। ভোরে হাঁটার ফাঁকে প্রায় দিনই এক লোক তথা শেষ বয়সী যুবককে আমি সড়কের ঢালে মাথা ঝুঁকে গুল্ম জাতীয় গাছগাছালি টেনে তুলতে দেখি। প্রথম দিকে খেয়াল করা হত না কী গুল্ম সে তোলে। একদিন ভালো মত দৃষ্টি ধরে দেখলাম, সে যে গুল্মগুলো টেনে তোলে সেগুলো আর কিছু নয়, কচি শিমুলের চারা। কৈশোরে এ ধরনের চারাগাছ আমি কাউকে কাউকে তুলতে দেখেছি এবং পৌরুষে তাদের ঔষধি গুন সম্পর্কে জেনেছি।

চারা টেনে তোলা পড়ন্ত যুবকের নাম তাসফিফুল তাসাফ। উল্লেখ অনিবার্য যে সে আমার বাড়ির মালিকের উল্লিখিত যুবক পুত্র আহরার জাভীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। বাংলোর তিন প্রকোষ্ঠের পশ্চিমটিতে আমি ব্যাচেলর ভাড়া থাকি, মুল বাড়ি সংলগ্ন পুবেরটিতে দারোয়ান থাকে, আর মধ্যবর্তীটি ব্যবহৃত হয় আহরার জাভীর বন্ধু বা অতিথি আপ্যায়ন তথা আড্ডার কাজে। দুজনকে আমি কক্ষটিতে নিয়মিত আড্ডায় লক্ষ্য করি। তাদের কথোপকথন উচ্চস্বর না হলেও আমার কক্ষ থেকে প্রায় অধিকাংশ কথাবার্তাই শ্রবণযোগ্য হয়।

ইদানীংকালে তাদের আড্ডার তথা কথোপকথনের বিষয়বস্তু হচ্ছে যৌন দুর্বলতা ও বিয়েতে উদ্যোগী হতে ভয়ভীতি। দুজন সকাল বিকাল ঘটা করে আখের গুড় যোগে শিমুল মুল খায়, যৌন দুর্বলতা সংক্রান্ত বইয়ের পৃষ্ঠা ঘাটে, চাপাস্বরে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট পাঠ করে এবং থেকে থেকে উচ্চস্বরে একযোগে হেসে ওঠে। আগন্তুক তাসফিফুল তাসাফ হাসি থামিয়ে প্রায়শ বলে, ওইপাশের ভাড়াইট্টায় শুনতাছে না তো?

আরেন না, ভোদাই বলদা।

নৌ প্রবলেম, হাঃ হাঃ হাঃ!

আর শুনলেই বা কী? ভাড়াইট্টা না, কথা লিক আউট করলে টু লেট লাগাইয়া খ্যাদাইয়া দিমু।

হাঃ হাঃ হাঃ!

হাঃ হাঃ হাঃ!

মাঝেমধ্যে হাসি থেমে গেলে তাদের কথোপকথন শব্দ-দুর্বোধ্য ফিসফিসানিতে নেমে আসে। অনুমান করি হয়তো তারা শ্রবণ-অযোগ্য কিছু বলাবলি করে, অথবা কোনও অশ্লীল ছবিটবি দেখে। কিছুক্ষণ ফিসফিসানির পর আবারও উচ্চশব্দ হাসি ওঠে। একদিন এমনই এক পর্যায়ে হাসি থামার পর আহরার জাভী চাপা কণ্ঠে বলে, এত ভয়ডরের কারণ নাই, তুই এক কাজ কর।

কী কাজরে? তাসফিফুল তাসাফ হেয়ালি সুরে বলে।

তুই একটা প্রেম কর। সরাসরি বিয়ার দরকার নাই। রিস্কে না যাওয়াই ভালো, বুঝলি কি না?

প্রেম করব?

হ্যাঁ, সমস্যা কী?

কিন্তু কার সাথে করব প্রেম? মেয়ে পাব কই?

মেয়ে আছে।

কে?

ওই যে ছায়া, আই. এস-সি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্রী, ধরতে পারলি?

হুম, ছায়া! ছায়া! ছা-য়া!

হ্যাঁ, ছায়া, এখান দিয়াই তো যাতায়াত করে। যেমন নাম, তেমন গায়ের কালার। কিন্তু চেহারাটা আছে জোছ! চিনছিস তো ঠিকঠাকমত?

হ্যাঁ, না চেনার কিছু নাই। কথাও ঠিক – চেহারাটা জোছ। নাক মুখ চোখ, বডি ফিগার হ্যাব্বি! কিন্তু–
শুধু গায়ের রঙটাই ওরে মাইরা দিছে। ওইটা যদি শুধু ছায়া ছায়া না হইত, কে ঠেকাইত ওরে বিশ্ব সুন্দরী হইতে? তাতে সমস্যা নাই, মানুষের রূপ কয়দিন থাকব? মনটাই তো আসল।

তা ঠিক।

মাইয়াটা কিন্তু লক্ষ্মী হইব, পয়লা পয়লা তর যদি ইয়া — নাও — হয়, সমস্যা নাই। মাইয়া থাকব।

তাইলে তুই- ই কর অরে বিয়া। ঘটক লাগাইয়া দেই। তাসফিফুল তাসাফ বলে।

সর্বনাশ, আমার বাপজানরে তো চিনিস। মহামস্ত ঘাউড়া লোক। ঘটক দিয়া তো দূরের কথা, যদি অন্য ভাবেও করি, কোনদিন মাইনা নিব না। বন্ধুবান্ধব ডাইকা দেওয়ালে মাথা ঠুইকা বলব, আমি এই বাড়ির মুখে দোয়াতের কালি মাখাইয়া দিছি। না ভাই, তুই – ই কর ওরে বিয়া।

নারে ভাই, বাপের উপরে আমার দাদামিয়া হইল বড় মাতবর। সে যতদিন বাঁইচা আছে, ততদিন আর সম্ভব না। তর বাপের চাইতে এক কাঠি কম না। সে কী বলবে জানিস?

কী বলবে?

বলবে আমি বাড়িত চির অমাবস্যা লাগাইয়া দিছি। আমি আঁন্ধারি সুন্দরীর কবজে মজছি।

আইচ্ছা, তর দাদামিয়ার বয়স কত?

এই ধর আটাত্তর টাটাত্তর হইব।

হুম- শালা কবে মরব কেডা জানে? মরার পরে কর-বি, কিন্তু মানুষ তো একশ বছরেরও বেশি বাঁচে। সেই নাগাদ তর যৌবন মইরা বাতরে উঠব। হাঃ হাঃ হাঃ!

হাঃ হাঃ হাঃ!
হাঃ হাঃ হাঃ!

আলোচ্য ছায়াকে আমি বেশ চিনি। তবে ওপাশের পথ ধরে যাতায়াতকালে যতটা চিনেছি, তারচে’ ঢের বেশি চিনেছি কলেজ ক্যাম্পাসে। বেশ চঞ্চল সদাহাস্য এক মেয়ে। ক্যাম্পাস জুড়ে ফড়িং এর মতো ঘুরে বেড়ায়। প্রায়শ কলেজ-ক্যান্টিনে বসে সঙ্গীসাথীদের নিয়ে আড্ডা দেয়। বসা অবস্থাতেই অদূরে দাঁড়িয়ে তাকে লক্ষ্য করেছি, যেহেতু সে আমার বাংলো বাইরের সড়ক ধরে নিয়মিত যাতায়াত করে। আর ওদিকে অনতিদূরের এক বাড়ির দরজা পথে বেরিয়ে আসে ও বার থেকে ভেতরে অদৃশ্য হয়। দুই বন্ধু তাদের আড্ডায় তার বর্ণনায় যা কিছু উল্লেখ করে, করেছে, তার প্রসঙ্গে সেসবের পুরোটাই ঠিক।

দুই

ছায়ার সাথে কী করে আলাপ পরিচয়-ঘনিষ্টতা হলো, তা মনে করার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টায় আমি কেবলই ঘেমে-নেয়ে উঠি। শুধু দেখি ধবধবে জোছনার নিশুতি রাত, মাঠ শেষের দিগন্তে হালকা সাদা কুয়াশার আস্তরণ, সবুজ ঘাসের মাঠ-আল, দূরে কাছে সর্বত্র বিচিত্র সবজি- শীতকাল- অদ্ভুত শীতার্ত হাওয়া; বিস্ফারিত দৃষ্টি ছুঁড়ে, সুদৃশ্য ধবল মুক্তো দাঁতে অপার্থিব গোছের হাসি ঝরিয়ে মাঠ জুড়ে ছুটতে থাকে ছায়া; ইশারায় কাছে ডাকে, ধরতে গেলেই হোঁচট খেয়ে উবু হয়ে পড়ি। তখনই অদ্ভুত উচ্চশব্দে হেসে ওঠে ছায়া- আমি ধড়মড় ঘুম থেকে জাগি। ওপাশ থেকে দারোয়ানের হাই তোলার শব্দ ভেসে আসে। মাথার ওপরে ও আশপাশে রাতজাগা পাখির ডানার ফসফস আওয়াজ, শিশিরের টুপটাপ, আর দূরের মাঠ থেকে ভেসে আসে খেঁকশিয়ালের খেঁকখেঁক। কাছেই কোথাও দল- কুকুরের তুমুল ভৌ ভুক!

সদ্য ঘুম জাগা দুচোখ বুজে ঢি’ দিলেই যেন পাশের কক্ষে শুনতে পাই ফিসফিসানি, চাপা হাসি, আর ছায়াকে নিয়ে ওই দু বন্ধুর অনুমিত তাদের অভিভাবক তাচ্ছিল্য-কথা। কী কারণে মন ভারি হয়ে ওঠে। ভাবি, আজকাল কেন এমন হচ্ছে। এ এক অবাস্তব কল্প-স্বপ্ন-জগত। এর বেড়াজাল ডিঙিয়ে আমি আদৌ কি কোনও বাস্তব দিন অথবা রাতে ছায়ার মুখোমুখি বা নিবিড় সান্নিধ্যে যেতে সক্ষম হব? হ্যাঁ, কিংবা না, কিছুই জানি না আমি। ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ি।

তখন শীতের মাঝামাঝি। শীত মাঝারি। উত্তরী হাওয়ায় দিনরাত মাথার ওপরকার কড়ইগাছে ছড়ছড় শব্দ খেলে যায়, যদিও গাছটির পাতা ঝরে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। ক্রমাগত স্বাস্থ্যহানি কী কারণ আমাকেও যেন অর্ধমানবে পরিণত করেছে। ঋতু পরিক্রমায় দিন ও রাতের চেহারাও পুরোপুরি বদলে গেছে। সকাল, দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যা ও রাতের ভিন্ন ভিন্ন রূপ দৃষ্টিতে গাঁথে। সামনের সড়কে মানুষের চলাচল ভঙ্গিমায়, পরিচ্ছদে ভিন্নতা লক্ষ্য করি। নিজের ধবধবে সাদা চামড়ার মলিনতা নজরে আটকায়। ভেবেছিলাম, গতানুগতিক যেমনটি হয়, তাতে ছায়াকে বুঝি এখন দেখলে গাঢ় ছায়া দেখব। কিন্তু অনেক দিন পরের হঠাৎ দেখায় লক্ষ্য করা গেল ও যা ছিল তারচে’ খানিকটা উৎকর্ষিত হয়েছে। গায়েও উঠেছে রঙ জাঁকালো শীত পোশাক।

শীতের দেড় মাসে পাশের কক্ষে কোন আড্ডা জমেনি। বাড়িওয়ালার ছেলে আহরার জাভী কী কাজে যেন ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। সকালে মোটর-সাইকেলযোগে বেরিয়ে যায়, প্রায় দিনই ফেরে সন্ধ্যায়। এদিকে ভোরবেলার শীতালস্য আমাকে নিত্য পেয়ে বসে। একদিন পর পর আলস্য ভেঙে উঠে সেইসব স্থানে হাঁটি। তবে পড়ন্ত যুবক তাসফিফুল তাসাফকে কখনোই আর চোখে পড়ে না। বাংলোর আড্ডা ঘরটির দরজায় দিনভর তালা ঝোলে। সকালে অনিয়মিত হলেও শেষ বেলায় আমি নিয়মিত সেই মাঠচারী।

এক রোদ-হাস্য বিকালে হাঁটা শেষে সড়কের ঢাল বেয়ে ওপরে উঠতে কী ভেবে আমি স্থান কালটিকে সেই ঘুমঘোর স্বপ্ন স্থান কাল গণ্য করে বসি। আমার সামন দিয়েই তখন হেঁটে বাসায় ফিরছিল ছায়া। গতানুগতিক ধারায় তাকে দেখে আমার মাথা নোয়ানো স্বাভাবিক সম্ভাব্য হলেও কী সম্মোহনে আমি সেই স্বপ্নলোকের মতো তার দিকে প্রেমাতুর দৃষ্টি ছুঁড়ে বসি। তাচ্ছিল্যকর প্রত্যাখ্যান অভিব্যক্তিতে প্রতারিত হই। অসম্মানসূচক ভেংচি কেটে, মুখ ঘুরিয়ে সদম্ভ হেঁটে নিজ বাড়ির প্রবেশ পথ বরাবর অদৃশ্য হয়ে যায় ছায়া ।

বেশ কিছুদিন পেরিয়ে গেছে, আমি সকালবিকাল কোন সময়েই বাংলোর বাইরে পা রাখিনি। বাংলোতেই বইয়ের পৃষ্ঠায় মাথা ঝুঁকে সময়গুলো পার করি। এক বিকালে বাইরের সড়কে আকস্মিক চিৎকার চেঁচামেচি শুনে হন্তদন্ত বাংলোর বাইরে বেরিয়ে আসি। দৃশ্যপটের বিশদ বর্ণনায় না গিয়ে সংক্ষেপে বলি- সড়কে এইমাত্র একটা খুন হয়েছে। হৈ-হুল্লোড় থেকে নিশ্চিত হওয়া গেল, খুন হওয়া ব্যক্তি গল্পালোচ্য তাসফিফুল তাসাফ। এও জানা গেল, ছায়ার ছোট ভাই কলেজ ছাত্র ছড়োয়ারুল চিশতি ছড়ু বন্ধুবান্ধব নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তার বুকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে সদলবলে পালিয়েছে।

থানায় মামলা হওয়ায় গোটা এলাকাটি এখন আতঙ্কের স্থানে পরিণত হয়েছে। সকাল বিকাল এবং কি রাতেও পুলিশ আনাগোনা করে। খুনি ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা নিরুদ্দেশ। কী কারণে এ খুন তা নিয়ে বাঁকাচোরা পথে নিবিড় কানাঘুষা থাকলেও থাকতে পারে, কিন্তু বাইরে কাউকে এ নিয়ে টু শব্দটি করতে শোনা যায় না। বাড়ির মালিকের ছেলে আহরার জাভিও পরদিন সন্ধ্যা থেকে নিরুদ্দেশ। কারণ, তার অনুপস্থিতিতে সেদিন দুপুরে পুলিশ তার বাংলোর কক্ষটিতে হানা দিয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের প্রশ্নেই হয়তো পুলিশের তাকে প্রয়োজন। এদিকে বাড়ির মালিক সকাল বিকাল আমার কক্ষে এসে ভালো মত বুঝিয়ে যান পুলিশ আহরার জাভীর বিষয়ে আমাকে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করলে আমি যেন বলি সে দেশে নেই, বিদেশে চলে গেছে। আমি তার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকাই আর নির্বাক থাকি ; ভেতরে মিথ্যে বলার প্রস্তুতি যুদ্ধে হেরে আস্তে মাথা নোয়াই।

তিন

জায়গাটিতে অহরহ মোটরসাইকেল ভোঁ ভোঁ করে। আসামীদের একজনও ধরা না পড়ায় পুলিশের আনাগোনা নজিরবিহীন। যখনই তারা আহরার জাভীর খোঁজে আসে, খোলা দরজা পথে আমার দিকে কটমটিয়ে তাকায়। এখন পর্যন্ত আমাকে উল্লেখযোগ্য কিছু জিজ্ঞাসাবাদ না করলেও আমি অহনির্শ আতঙ্কে থাকি। এদিকে চূড়ান্ত পরীক্ষা আসতে আর দু’ সপ্তাহ বাকি। এ মুহূর্তে এ বাসা ছেড়ে কোথায় আশ্রয় নেব? ভয়েডরে দিনরাত বইয়ের পৃষ্ঠায় ডুবে থাকি। পড়ার ঘোরে থেকে থেকে দৈবকণ্ঠ যেন শুনি : আচ্ছা ব্রাদার, বলুন তো সত্যি করে, আহরার জাভী কোথায় আছে। না লুকিয়ে ঝটপট বলে ফেলুন। সব জানেন আপনি। বলুন সোজাসাপটা!

আমি কিছু জানি না। আমি এক ভাড়াটে মাত্র। দয়া করে আমাকে এসব বিষয় থেকে আতঙ্কমুক্ত রাখুন। আমার নির্বিঘ্ন পড়াশোনা করা প্রয়োজন। – নিজে নিজে অস্ফুট এসব বলি।

আমি স্পষ্টত টের পাচ্ছি, খুনের কারণটি পুরোপুরি রহস্যাবৃত। পুলিশ কোন কিছুই হয়তো আন্দাজে আনতে সক্ষম হচ্ছে না। খুব সম্ভবত আক্রমণকারী দলের মধ্যে খুনি নিজেই একমাত্র ব্যক্তি যে খুনের কারণটি জানে, তার সাঙ্গপাঙ্গরা নয়। আর ছায়া? সে কি কিছু জানে? নানা সন্দেহ মনে দানা বাঁধে, কিন্তু বাহ্যিক কোনও আলামত কখনো দৃশ্যমান না হওয়ায় কৃত সন্দেহ থেকে দূরে সরে আসি। ভাবি, আমার এত সাতপাঁচ ভেবে কাজ কী? পুলিশের কাজ পুলিশ করছে, করবে। চূড়ান্ত পরীক্ষাটি শেষ হয়ে গেলে এখান থেকে চলে যাব, ভুলেও আর এ মুখো হব না, ব্যস।

এক সন্ধ্যায় ঠিক এরূপ ভাবনার ফাঁকে ওপাশে আকস্মিক মোটরসাইকেলের শব্দ পেলাম। শব্দটি দ্রুত এদিকে অগ্রসর হয়ে সড়ক থেকে নেমে বাংলোর বাইরে এসে থেমে যায়। অল্পক্ষণের মধ্যে পুলিশ এসে বিনা ওয়ারেন্টে আমাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। তাদের নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে আমাকে নাকি প্রয়োজন।

থানা হাজতে রাত দশটা নাগাদ আমাকে আহরার জাভী ও তাসফিফুল তাসাফ সম্পর্কে নানাবিধ প্রশ্ন করা হয়। তাদের বিষয়ে আমি যতদূর যা জানি তা-ই বলি, সত্যের বাইরে এক বর্ণ নয়। আমাকে কোনও অত্যাচার না করা হলেও বিষয়বস্তু ঘিরে পরদিন সকালে পুনর্বার জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে মর্মে আটকে রাখা হয়। পরম দুঃখের সাথে লক্ষ্য করি, যে বাড়িটিতে টানা তিন বছর ধরে ভাড়া থাকছি, সবকিছু দেখে শুনেও তাদের কেউ আমার ন্যূনতম খোঁজখবরটি নিতে এল না। ভাবছিলাম, এরই মর্মার্থ বুঝি ‘চাচা আপন জান বাঁচা’। ভীষণ দুর্ভাবনায়, মনোকষ্টে ছটফট করে সম্ভবত ভোররাতের দিকে ঘুমিয়েছিলাম।

ঘুম থেকে যখন আমাকে ডেকে তোলা হয়, তখন সকাল দশটার ওপরে। আমাকে থানা হাজত থেকে ছেড়ে দেয়ার ফাঁকে কাগজপত্র উপস্থাপনপূর্বক বলা হলো, বাদী বিবাদী উভয় পক্ষের লোক এসে আপনাকে ছাড়াবার ব্যবস্থা করে গেছেন। ভিকটিম এর বাবার সাথে খুনির বোন এসেছিল, আবছায়া না কী নাম- কাগজে লেখা আছে সব, দেখুন। বেশ, মুক্ত হলেন, যান, বিশিষ্ট সরল ভদ্রলোক আপনি, বিশিষ্ট —।

আবছায়ার সাথে ইয়া, মনো, ডুয়াল, নাকি ট্রায়াল, কে জানে? আবছায়া নাম! একটা ওয়ার্ড কেউ জানে না! শয়তানগুলো সব লাপাত্তা! ক’দিন, হু? ধরতে পারলে —।

এ অংশটুকু অদূরে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করলেন পুলিশ কর্মকর্তা। তারপর গলা উঁচিয়ে বললেন, যান, যান, এ জায়গাটা ভালো না। দ্রুত কেটে পড়ুন এ চৌহদ্দি থেকে। দ্য সুনার, দ্য বেটার, আন্ডারস্ট্যান্ড?

জি, ধন্যবাদ।

বি এস-সি পরীক্ষার ফল বেরোবার দু’ মাসের মাথায় আমার ছোটখাটো একটা চাকরি হলে আমি ওই বাড়িটিতে সৌজন্য সাক্ষাৎ, আবার বলা যেতে পারে, কৌতূহল নিবারণে যাই, যদিও এ জীবনে ও মুখো না হবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ছিল। সেই পড়ন্ত বিকেল। ক’ মাস পর এসে গৃহকর্তাকে এক ভিন্নরূপে আবিষ্কার করি। তিনি এখন বেশ সদাশয়, সদালাপী। আমার সেই ভাড়া থাকা কক্ষটির তালা খুলে দেয়ার ফাঁকে বললেন, এ ভাড়া হয় নাই আর। ওই খুন খারাবির ফল। জায়গাটাকে মানুষ এখনও ভয় করে। সব আসামি ধরা পড়ে নাই,বুঝলেন? বললাম, তা জাভী ভাই কোথায়?

ওতো দেশে নাই। সপ্তাহ কয় আগে স্পেন চইলা গেছে। হাবাগোবা অতি নিরীহ ছেলে আমার। কোন দোষ ত্রুটি নাই। জীবনে একটা মাছি পর্যন্ত মারে নাই। খামাখা পুলিশ বিরক্ত করতে আসত।

তো আমি এবার আসি। অনেক দিন থেকে গেছি এখানে। ভাবলাম একটু দেখা করে আসি। চলি তাহলে।

না না, এইটা কী বলেন? তিনটা বছর এই রুমে থাকছেন, রুমটা ভাড়া হয় না। জাভীও বিদেশে। একরাত থাইকা না হয় যান। খুব জরুরি থাকলে রাত্রের খাবারটা অন্তত খাইয়া যান। বসেন আরাম কইরা। আসতেছি আবার।

এরই মধ্যে সন্ধ্যার আযান চলে গেছে। ভদ্রলোক বাইরে বেরিয়ে যেতেই বিদ্যুৎ চলে গেল। বসে রইলাম অন্ধকারে। মাথা নিচু নানা কথা ভাবছি। মিনিট দশেক পর বাংলোর চৌকাঠে শব্দ হলে চমকে মাথা উঁচাই। যে আগন্তুকের পদশব্দে মুখ তুলেছি, সে চৌকাঠেই স্থির।আবছা অন্ধকারে বোঝা গেল তার মুখমণ্ডল বিষণ্ন। সে অস্ফুট বলল, চলে এলাম। চিনেছেন তো?

জি।

ভালো আছেন?

জি।

ভয় পাবেন না, এক্ষুণি চলে যাচ্ছি। এক খুনির বোন আমি। ও ধরা পড়েছে।

জি।

আমি এসব বলতে আসিনি।

জি।

যে কথাটা বলব, তা আজকের নতুন কথা নয়, অনেক দিনের। ভেবেছিলাম, সারা জীবন হয়তো মনে মনেই বয়ে বেড়াতে হবে। কোনদিন আপনার সাথে দেখাও হবে না, বলাও হবে না।

জি বলুন।

ওইদিন আপনাকে তাচ্ছিল্য করাটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। আমি ক্ষমাপ্রার্থী, চলি।

ছায়া চোখের নিমিষে চৌকাঠ থেকে নেমে হনহন করে চলে গেল। বাইরে তখনও জেঁকে আছে লোডশেডিং ও কড়ইগাছের সৃষ্ট সম্মিলিত প্রগাঢ় ছায়া।

শওকত নূর | Shawkat Noor

New Bengali Story | বুড়ো দাদুর মন্দির | শুভাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়

Bengali Story 2023 | কর্ণফূলী | গল্পগুচ্ছ ২০২৩

Dwiragaman | দ্বিরাগমন | পুনম মায়মুনী | 2023

Suryamukhi | সূর্যমুখী | শওকত নূর | Best 2023

Read Online Bangla Golpo | New Main Theme of the Shadow Lines | Top Best Story Blogs | Best Story Blogs in pdf | Sabuj Basinda | High Challenger | Main Theme of the Shadow Lines 2023 | Shabdodweep Main Theme of the Shadow Lines | Shabdodweep Writer | Best Story Blogs in India | World’s Main Theme of the Shadow Lines | New Bengali Web Story in Online | Online Interesting Bangla Golpo | Full Read Online Bangla Golpo | Main Theme of the Shadow Lines Blogs | Best Story Blogs in Bengali | Main Theme of the Shadow Lines in English | Live Bengali Story pdf | Main Theme of the Shadow Lines online | New Live Bengali Story | Main Theme of the Shadow Lines – Episode | Golpo Dot Com Series | Main Theme of the Shadow LinesVideo | Horror Main Theme of the Shadow Lines | Main Theme of the Shadow Lines Audio | New Bengali Web Story Video | Main Theme of the Shadow Lines Netflix | Full Bangla Galpo Read | Main Theme of the Shadow Lines Download | Shabdodweep Competition | Main Theme of the Shadow Lines Competition | Bengali Writer | Bengali Writer 2023 | Trend New Bengali Web Story | Recent New Bengali Web Story | Top Live Bengali Story | Popular New Bengali Web Story | Best Read Online Bengali Story | Read Online Bengali Story 2023 | Shabdodweep Bengali Famous Story | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Golpo Dot Com Download | Main Theme of the Shadow Lines – audio | Horror Adult Story | Read Online Bengali Story Collection | Main Theme of the Shadow Lines – video | Main Theme of the Shadow Lines APK | New Bengali Web Story Download | Live Main Theme of the Shadow Lines mp3 | Full Live Main Theme of the Shadow Lines | Bengali Famous Story 2023 | Shabdodweep Bengali Famous Story | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Live Bengali Story – audio | Top Read Online Bangla Golpo | Bengali Famous Story – video | Bengali Famous Story mp3 | Full Bengali Famous Story | Bengali Literature | Shabdodweep Magazine | Shabdodweep Web Magazine | Live Bengali Story Writer | Shabdodweep Writer | Main Theme of the Shadow Lines pdf | Main Theme of the Shadow Lines Ebook

Leave a Comment