Living next to tiger | বাঘের পাশে বাস করা | 2023

Sharing Is Caring:
BENGALI STORY

বাঘের পাশে বাস করা | Living next to tiger – শিবপ্রসাদ পুরকায়স্থ [Bengali Story]

— ও বারিনদা, কোতায় এয়েচো?

— জমি দেখতে এসেছি। তুমিই তো দাদার নাম বারবার করো। এইতো সেই দাদা।

একটু কাছে এসে, একনজরে দেখে। তোমরা শহরের মানুষ। আর চেনার উপায় আচে। ভায়ের সাতে দেকা হলে বলি, বড়ভাই কেমন আচে। এলে, এদিকে এনো। বলি সোবাই ভালো আচো?

— হ্যাঁ,তা মোটামুটি আছি। আসলে শিবেন চিনতে পারেনি। সেই কবে ফোরে পড়ার সময় দেখেছে। এখন সেই চেনাটুকু স্মৃতিতে ফিকে হয়ে আছে। সৌজন্যের প্রয়োজনে শারীরিক ভাষায় একটা কিছু মিলিয়ে সম্পর্ক ধরে কথা চালিয়ে যাওয়া।

কথা হচ্ছিল নদীবাঁধে। ঢালাই করা রাস্তা। নদীর খোল পিটে আবাস যোজনায় পাওয়া ইটের তৈরি ঘর। পাশে বুনো কাঠের নড়বড়ে হেলে পড়া ঘরটি এখনো আছে। ওটাই এখন বৈঠকখানা। প্রাকৃতিক ক্ষয়ক্ষতি দেখাতে ধরে রাখা। সরকারি অনুদানের আশায়।

রাস্তা লাগোয়া ভাঙাচোরা বৈঠকে দুভাই গিয়ে বসে। নানা রকম কথা চলে। ইতিমধ্যে চা পানের কথা উঠলো। শিবেন না বলার পাত্র নয়। বারোটা বাজে তো কী হয়েছে। ভাই নাক কুঁচকে না বলল।
— আঁমাদের বাড়িতে খেলে বুজি জাত যাবে? মমিন গাজি বলেই ফেলল।

দাদা যদিও ভায়ের কথায় সায় দিয়েছিল। জাতের কথা শুনে শুধু চা কেন, টা’তেও আপত্তি নেই হাসতে হাসতে জানিয়ে দিল।

বাড়ির ভেতর থেকে গৃহকর্ত্রী ক্ষীণ গলায় জানালো চা নেই। বিস্কুট আনতে হবে।
শিবেন বলল, না না আর তা হলে আনতে হবেনা। ভাত খাবার বেলা হয়ে গেছে। গাড়িতে যেতে জোর দুমিনিট। বরং বসো দুটো গল্প করি। অনেক দিন পরে দেখা।

— না না তুমি থামো তো। এখুনি আনতিচি।এই তো পাশের বাড়িতে দোকান।
এই সুযোগে চারদিকে নজর বুলিয়ে নিল। বিশেষ করে নদীর বাঁধ বরাবর খোলপিটে ঘরবাড়ি বেঁধে বসবাস করছে। ঘরের পুবদিকে প্রবাহিত ঠাকুরান নদী। সেই নদীর জেগে ওঠা চরে ঘনবন, উত্তর থেকে দক্ষিণে।

Living next to tiger

এই শান্ত বনে দু’দুটো বাঘ ঘাপটি মরে আছে। দুটো কি একটি এমনটি লোকমুখে ছড়িয়ে পড়েছে। তারা যে আছে তার প্রমাণ মিলেছে নানা ভাবে। কোথাও পায়ের ছাপ। বুনো শোরের হাড়গোড়। মোহিষ শিকার করতে গিয়ে বিপত্তি ঘটে। লোক জানাজানি হয়। জখম মোষটি জঙ্গল থেকে বেরিয়ে পড়ে প্রাণ বাঁচাতে।
এই লোকালয় ঘেঁষা শান্ত জঙ্গলে বাঘ ঢুকেছে। প্রথম বুঝতে পারে যারা প্রতিদিন জীবিকার টানে বনে আসে। মাছ,কাঁকড়া, জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করা গরিব লোকেদে রুজি রোজগার। । মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে ভয়ংকর দুঃসংবাদ। যা আড্ডির জঙ্গল লাগোয়া গ্রামবাসীর পক্ষে জীবন মরণ সমস্যা।


শিবেন এখানে না থাকলেও এই দ্বীপের ভৌগোলিক অবস্থানের বিশেষ পরিবর্তন হয়নি বুঝতে অসুবিধা হয় না। রাস্তাঘাটের উন্নতি হয়েছে যেমন। জীবন জীবিকা অনেকাংশে বদলে গেছে। তবে একটা শ্রেণি জল জঙ্গলের সঙ্গে ছেদ ঘটায়নি হয়তো বাধ্য হয়ে এখনো থেকে গেছে। যেমন মমিনরা এখনো জলে জঙ্গলে পড়ে আছে।

ইতিমধ্যে চা নিয়ে এসেছে মমিনভাই। চায়ে চুমুক দিয়ে জানতে চাইল, তোমার এইযে নায়লন জালের এপার ছেলেপিলে নিয়ে বাস করছ ভয় করে না?

— ভয়ের কী আচে। বাঘ কুমিরের সঙ্গে লড়াই করে তো বেঁচে আচি। কী একটা বাঘ ঘরের পাশে ঘোরাফেরা করতেচে তা কি হয়েচে। বরভাই এই নিয়ে আর ভাবিনা। তবে হ্যাঁ সাবদান থাকতে হয়। যে কোনো মুহুত্তে বিপদ ঝেঁইপে পড়তে পারে। যম থেকে বাঁচা যায়, বাগের থেকে নয়।

— সরকারি লোকজন তো নদীঘাটে নোঙর ফেলেছে। বড় লঞ্চ তো দেখলুম।
সে তো আমরাও কদিন থেকে দেখে আসচি। আমাদের বাঁচাতে এসেচে বলে তো মনে হয় না। কী ভাবে বাগ মানুষ শিকার করে, মজা দেখতে এয়চে।

— কেন এমন কথা বলছ?

— কেন বলবুনি, তুমি আমার বুইজে বলো। বাগ ধরতে এয়চে না সরকারি লোকেরা নদীতে বেড়াতে এয়েচে। ওরা তো নঞ্চের ওপর থেকে নামেনে বলতে গেলে। যেন পিকনিক করচে। শুনতে পাচ্চি কোতায় নাকি খাঁচা পাতা আচে। ভেতরে আস্ত ছাগল বাঁদা। ছাগল আচে নাকি নিজেরা খেয়ে ফেলেচে কে জানে বাবা। কতো দেখলুম।

— না না এটা ঠিক বলছ না। সবকিছুই তো একটা সময় লাগে। বাঘেরা নানাভাবে প্রশিক্ষিত হচ্ছে। দৈনন্দিন শিকারের অভিজ্ঞতা থেকে। বাঘেরা বিপদ ভেবে কেন খাঁচায় ঢুকবে যাবে।

— তা যা বলেচ। তবে আমার কী মনে হয় জানো। আমাদের জেগে ওঠা চড়ায় কোন গাছপালা ছিলনা। নতুন গাছ পোঁতার জন্য এই ঘনবন গজিয়ে উঠেছে। বন না থাকলে তো বাগ আসতো না। বন ছিলো দূরে। আসপাশের গ্রামের গরিব লোক দুটো পয়সার লোভে গাছ কাটাতে কাটাতে প্রায় ফাঁকা গেচিল মানচি। অনেক দূর পয্যন্ত দেখা যেতো। ভালোই ছিলো বলতে গেলে। সরকার থেকে গাছ বসিয়ে এই বিপদ ডেকে আনলো।

— তুমি বলছ এই বনসৃজন সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত।

— তাই নাতো কি?

— তা ঠিক বলেছ। জঙ্গল গড়ে না উঠলে আরো ঘরবাড়ি নদীর জেগে ওঠা চরে গড়ে উঠতো।

— আমি তো তাই বলচি। যে ভাবে মানুষ বাড়চে।

— যাক ওসব কথা। আচ্ছা, ষাঁড়া-ষাঁড়ির কোটালের সময় জল নদীবাঁধের কানায় কানায় উঠে আসে কি? আগের খারাপ অবস্থার কথা তো আমরা সবাই জানি। প্রতি বন্যায় ভেসে যেতো।

— আসে মানে। তখন যদি সামান্য ঝোড়ো বাতাস বয়তো পানি উপছে পড়বে। বাঁধে দাঁড়ানো যাবেনা। ভেঙে পয্যন্ত যেতে পারে।

— এইযে তোমার বাড়ি নদীর খোলপিঠে গড়ে উঠেছে।ঢেউয়ের উত্তালে তোমাদের জীবন যাত্রা দুর্বিসহ হয়ে ওঠে না?

— তবে জুয়ার বাড়লে কাছাকাছি আসে বটে, প্রবল ঢেউ খুব একটা কাবু করতে পারেনা। ঘন জঙ্গল গড়ে ওঠার জন্য। ঢেউ ভেঙে দেয়।

— তা হলে স্বীকার করছ তো মমিনদা। মাটির ক্ষয় রোধ করা। ঢেউয়ের গতি ভেঙে নদীবাঁধ বাঁচানো জন্য বনসৃজনের দরকার আছে। তুমি কি বলো?

— তা কিন্তু ঠিক।

— না, কিন্তুর কিছুই নেই। এবার বাঘ কেন লোকালয়ের মধ্যে ঢুকে পড়েছে, তার প্রকৃত কারণ খুঁজছে হবে। গ্রামে যদি খাদ্যের সংকট হয়। সারাবছর দিনখাটা মানুষের কাজ না থাকে। মানুষ না খেয়ে ভিটে কামড়ে পড়ে থাকবে। তাইতো শহরাঞ্চলে কাজের খোঁজে পাড়ি জমায়। বাঘের ক্ষেত্রেই তেমন ঘটেছে।

— কিচু বুজতে পারিনি। বাগ কি খাটতে যাবে।

— দেখো মমিনদা, জঙ্গল সম্পর্কে তোমরাই বেশি করে বোঝার কথা। আমরা তো খবরের কাগজে,পত্র পত্রিকায় পড়ে এসব জেনেছি। চোরাই কাঠ ব্যাবসায়ীরা লোভের বশে বনজঙ্গল কেটে দিনকে দিন ফাঁকা করে দিচ্ছে। হোটেল ব্যাবসায়ীরা জঙ্গল কেটে ইন্দ্রপুরী বানাচ্ছে। ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য। ফলে বাঘের বিচরণ ক্ষেত্র ছোট হয়ে যাচ্ছে। আগেই তো আমরা বন সাফ করে লোকালয় গড়েছি। এখনো থামতে চাইছি না। একুশ শতকে এসেও।

বাঘের খাদ্য হরিণ। হরিণের পাশ রাজ্য সরকার থেকে দেয়না। চোরাই ভাবে হরিণে মাংস শহরে গ্রামে ঢোকে। অনেকটা ঘুষের মতো নিঃশব্দ ব্যাবসা চলে আসছে। চায়ের দোকান হরিণ মাংসে গুনাগুন নিয়ে কথা ওঠে। কেউ চোখে দেখিনা। সেই সৌভাগ্য আমার হয়নি বলবনা। বন ছোট হচ্ছে, হরিণ কমে যাচ্ছে। মাংসাসি বাঘ কি ঘাস খেতে বাঁচবে? লোকালয়ে ঢুকে, তাড়া খেয়ে, খেঁজুর গাছে তালগাছে প্রাণ ভয়ে উঠে বাঁচতে চেষ্টা করবে নাতো কি। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মৃত্যু বরণ করবে। জালের ওপাশে তোমাদের আশপাশের দৃষ্টির আড়ালে যে অদৃশ্য বাঘটি ঘোরাফেরা করছে। মূল্য সুন্দরবন থেকে তো এসেছে। নদীতে ভেসে। খাদ্যের সন্ধানে!

— তা মন্দ বলুনি।

— এবার তা হলে যাই, অনেক কথা হলো। দেখি বৈকেলে আসতে পারি কি না। ভয়ংকর সুন্দর ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার’টি খাঁচা বন্দি হলে কেমন অবস্থা হয়। এমন দুর্লভ দৃশ্য দেখার লোভ ছাড়ি কি করে। মমিনভাই আসি তা হলে?

— থেকে গেলে হ’তো। ওবলা আবার আসবে যখন কষ্ট করে গেলে কি নয়।

— হ্যাঁ হ্যাঁ থাকি আর কি। তোমরা তো বাঘের সাথে একপ্রকার এক সাথে বাস করছ। সখ্যতা গড়ে উঠেছে। দেখা হলে নিশ্চিত বলে বসবে। দু’ভাইকে ছাড়লে কেন। আমাদেরও দুটো দুঃখের কথা বলে হালকা হতুম। কাউকেই ওনাদের মতো এতো সুন্দর করে বুঝিয়ে বলতে শুনিনি। থাকলে আমাদের ভালো লাগত।

— শিবেনদা কী যে বলো না। এমন হয় নাকি।

— তা হয়তো হয় না। ভাবতে তো পারি।

— শুনিচি তুমি নাকি লেখালেখিতেই নাম করেছ। এখোন তাই মনে হয়।

– তুমিই তো বললে। ছাগল বাঘধরা খাঁচায় দিয়েছে,এই নিয়ে তোমার সন্দেহ। বাঘ আমাদের দেখলে কি ছেড়ে দেবে?

উভয়ের কথোপকথনের মধ্যে বাস্তবের সুন্দর মুহূর্ত ধরা রইল। বৈকালিক সাক্ষাৎ আর উভয়ের মধ্যে হয়নি। বাঘ নিয়ে অধিক কৌতূহল সাহস দেখানো আদৌ নিরাপদ নয়। বরদানগর গ্রাম থেকে পুবে মুসলমান পাড়া। নদীর পাড়ে যারা বাস করছে এই পাড়া থেকে উঠে যাওয়া মানুষজন। আড্ডাির জঙ্গলে ওদেরই রাজ চলছে।

সন্ধ্যা পার হতেই ভীষণ চেঁচামেচি ভেসে আসছে। বাঘটি কি ধরা পড়ল। না কি লোকালয়ের দিকে ঢুকে পড়েছে। বাইরে বের হওয়া কিছুতেই নিরাপদ নয়। কোথায় ঘাপটি মেরে আছে। আচ্ছা মমিনভাইদের কোনো বিপদ হয়নি তো। এইতো সামান্য জালের এপার-ওপার যেম মানুষের দূরত্ব। বুঝিনে এর কী নিশ্চয়তা আছে। যাই হোক সকালে দেখা যাবে। সেই অপেক্ষায় রইলাম।

শিবপ্রসাদ পুরকায়স্থ | Shibaprasad Purakayastha

Bengali Story 2023 | ভবতোষ মাস্টার | গল্পগুচ্ছ ২০২৩

New Bengali Story | দরজা | শুভাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়

New Bengali Story | গল্পগুচ্ছ | বিপাশা চক্রবর্তী

Bengali Story 2023 | রূপান্তরের পথে | ডরাইয়া মরে

Living next to tiger | Living next to tiger pdf | Living next to tiger story | Living next to tiger story book | Living next to tiger movie | Living next to tiger movie clip | Living next to tiger viral video | Living next to tiger video share | Living next to tiger cinematic video | Shabdodweep Web Magazine | Shabdodweep | Shabdodweep Writer | Shabdoweep Founder

Leave a Comment