Kobita Dot Com – Prabir Kumar Chowdhury
অপেক্ষায় – প্রবীর কুমার চৌধুরী
নরম বুকের ক্লিভেজ থেকে এখনও উঠে আসে প্রেম, প্রেম গন্ধ
যদিও নরম আলো নিভে গিয়ে মহাবোধি হেসে ওঠে সে আঙিনায়
মঞ্চের ছেদোকথায় সম্মিলনের বারান্দা আজ নিরুত্তাপ নিঃসঙ্গ
একফালি চাঁদে ম্রিয়মাণ অন্ত্যজ জ্যোৎস্নাই অবশিষ্ট।
মাঝে, মাঝেই স্মৃতির ফাঁকফোকর গলে উঠে আসে আবছা চলচ্চিত্র
বড় তীব্র আলোর রোশনাই ছড়ায় রাজনীতির চালচিত্র
কলঘরের জলপ্রপাতে বড় অবলম্বনহীন অসহায় বার্ধক্যে –
আয়ুর শেষ প্রান্তে আজ শুধু অবলম্বন অন্ধকার অবশিষ্ট।
“মেঘে ঢাকা তারায়” অপস্রিয়মাণ আলোর বহ্নি –
দুহাতে খামচায় অনাস্বাদিত স্বপনের ঘুমন্ত নিষ্প্রভ দৃষ্টি
জীবনের ক্যানভাসে অবশিষ্ট রঙের বিচ্ছুরণ
আরও কিছুদিন হয়তো মনের বিবর্ণ আকাশ রাঙাবে –
খেলাভাঙার শেষ বাঁশি বাজার মৌন অপেক্ষায়।
অধরা কুশিলব – প্রবীর কুমার চৌধুরী
ভেজা ভেজা খবরের কাগজে
কথা পাল্টায় না কলবরে, নানান গুঞ্জনে –
মুছে যায় বিশ্বাস, চোরা স্রোতে
সায়াহ্নে পানসির দাঁড় টানতে, টানতে ক্লান্ত।
অনেক হাত নাড়তে নাড়তে বাত-বেদনায় পঙ্গু
আস্ত মেটেরিয়া-মেডিকা প্রায়ই মুখস্থ
এতো যে নিয়ম বেঁধে পিল খাওয়ালো সকাল -সন্ধ্যে
শেষে রোগটাই ক্রনিক হলো – সমে -অসমে গবেষণায়।
সুখ পাখি খুঁজি, তারই সন্ধানে এতো খান্ডবদাহন
জীবনভর ভয়ে আচ্ছন্ন, বিধ্বংসী সুনামির দুঃস্বপ্ন
বাসরে দেখি পূর্ণিমার চাঁদে আগুন লেগেছে
মৃত্যু এসে সোহাগের দরজায় বারে, বারে কড়া নাড়ে।
গোধূলির চোখে খিদে কী করে পড়াবে কাজল
নিরুত্তাপ চুম্বন সারা অসার অঙ্গে জ্বালা ধরায়
শুনেছি সূর্য উঠেছে কিন্তু বাদল মেঘের অতলে
সততার বাণী চাপা পড়ে আছে একমাত্র বইয়ের ভিতর।
সেই কবে চতুর্দিকে খড়ির গণ্ডি টেনে দিয়েছিল লক্ষণ
আজও বন্দী সীতারা মুক্তির ডানা ঝাপটায় নিরুপায়
রাবণ চিতায় তবুও বংশ বিস্তার চলেছে সমানে
ভিখারির বেশে নিযুতও রাবণ – অধরা ধরা – ছোঁয়ায়।
বরফ গলেছে – প্রবীর কুমার চৌধুরী
এগিয়ে যেতেই সামনে ধস নামে মুহুর্মুহু
সহ্যশক্তির অন্তরে গভীর ফাটল –
তবুও এগিয়ে যাওয়ার দুর্বার বাসনা।
শূন্যস্থান ছিল বসনে, তার কিছুটা শাসন
কালো নির্মোক নয় সে দৃষ্টি লুকায় আতান্তরে
প্রাঙ্গণে নির্বাক দাঁড়ায় এসে – অসম শক্তির পরীক্ষা।
পাশ কাটিয়ে চলে যেতেই পায়ে কাঁটা বেঁধে
“দেখি ফুর্তির প্রাণ গড়ের মাঠ” গান চলে গহওর জান
কেউ, কেউ এখনও লোভের হাত ধরে পাক মারে।
ঘুম ভেঙে জেগে উঠলো শতরঞ্চি
পরনে শত সহস্র মিথ্যার তাপ্পি
জংধরা অক্ষরে এখনও বিপ্লব আনবে….।
এবার বোধহয় প্রতিক্ষা লয়ে ভিড় বাড়বে
এলিয়ে পড়েছে কুকথার বাড় বাড়ন্ত
আর্তনাদের ডানায় অজান্তেই বরফের পাহাড় গলেছে।
নিঃসঙ্গ বৃত্ত – প্রবীর কুমার চৌধুরী
সম্প্রতি পেরিয়ে এসেছি অনেকখানি পথ
এখনও বাকি দুর্লঙ্ঘ, অনতিক্রম্য হতাশার পাহাড়,
কান পেতে শুনি পরস্পর বিরোধী- সমাধানের কণ্ঠস্বর।
দম্ভের সুরায় মাতাল ভুবন,অনিবার্য পতন দুচোখে বিস্ময় ।
আমার লণ্ঠন থেকে ঝড়ে পড়ে মৃদু মৃদু আলো…
দুঃসহ জ্বালায় অন্ধকার শত্রু-পার হয় মনপথ।
অন্ধকার গর্ভগৃহের বন্ধ দুয়ার আর-
মাথার উপর বয়ে চলা সমস্ত অন্যায্য প্রাপ্তি,
ঘুম ভেঙে ক্রোধান্বিত পবিত্র আলোর শিখায়।
পা রেখেছি পরমে,ঢেঁকি ঘরে কবিতায় শ্লোগান,
উত্তাপহীন অক্ষরে অক্ষরে সত্যের অনুসন্ধান।
তুমি কি দার্শনিক, বিজ্ঞানসাধক, অথবা ধর্মজিজ্ঞাসু ?
সংস্কারকের প্রশ্নের আঘাতে আঘাতে- মনুষ্যচেতনাকে জাগিয়ে তোল।
রণক্লান্ত যোদ্ধাদের দীর্ঘ সারিতে কবিও দাঁড়িয়ে-
বিস্ময়াপন্ন, অন্যমনস্ক, নিঃসঙ্গ, চির-অরচিত।
নদীতে একটি শবদেহ ভেসে যায়,
এখন নাম, গোত্র, ধর্মহীন। ঘোর ঘোলাজলে লজ্জায় আনত,পরম শান্তিতে-
নিশ্চিন্ত, মগ্নসুখ, স্রোতজ্ঞানহীন শুধুই বৈতরণী পাড়। এস আর একবার স্বর্গের সিঁড়ি বানাই।
দূরাগত – প্রবীর কুমার চৌধুরী
চোখ মেলে শুষে নেয় কলিজার রস
মেতেছে নেশায় রসকলির হয়েছে বশ
দেওয়াল বেয়ে নামছে সমানে লোভ
বুকে নাই আত্মা খালি আছে রোষ।
মুক্তগদ্য ছড়াই এতো চেতনার আকাশে
দেহের আকর্ষণে উড়ে যায় মত্ত সখা -সে
মুখোমুখি তুমি কবি – কি অক্ষর সাজাও
বিষাক্ত অক্ষরে অন্য মধুকরে রণতূর্য বাজাও।
চায়ের কাপে লুকিয়েছে অতীতের বিপ্লব
উলঙ্গ নর্তকীর দেহ সৌরভে খোঁজে গৌরব
পশ্চিমের মেঘে স্বপ্ন দেখে সোনাভরা সুখ
পোয়াতির গর্ভব্যথা বোঝে না অবোধ আহম্মুখ।
আবাহন – প্রবীর কুমার চৌধুরী
স্তম্ভিত, মূক, দুঃসময়
পক্ষপাতকাল
আশাহীন, হতাশা, ভয়
নরকের সকাল।
নীড়ভাঙা পাখির অশ্রু
ভরিয়েছে নীলাম্বর
কে চেয়েছে কুম্ভীরাশ্রু
কে তুমি পয়গম্বর?
পাহাড় ভাঙবেই বভ্রুবাহন
আমি যে শুনেছি তার আবাহন?
দাবাখেলা – প্রবীর কুমার চৌধুরী
সারারাত ঢেকেছে নিবিড় অন্ধকারে
প্রদোষকালেও ফেরেনি দেওয়া কথা
দোহাই তোমাদের রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখলেই লোভ দেখিও না।
আমি যে কোন বিত্তের জানা হয়নিকো কোনদিন
উচ্চবিত্তের দরজা বন্ধ, মধ্যবিত্তের সীমাহীন চাহিদা
বিত্তহীন নিম্নের দেহে বিঁধেছে শলাকা।
আমি তো বিত্তের গন্ডি পেরিয়ে ঈদ, নববর্ষ, দুর্গাপুজোর
আনন্দবিহীন, চেতনাতে শুধুই বাঁচার রসদের অন্বেষণে
পাগলের মতো বয়ে বেড়াই বিশ্বগ্রাসী অপ্রতুল খিদে।
দোহাই তোমাদের অধিকারের গল্প শুনিয়ে ছোট হইও না
দোহাই,পাওনার হিসাব সামনে রেখে স্বপ্ন দেখিয় না
বুঝেছি আমরা দুপক্ষের রাজা -মন্ত্রীর বোরে হয়ে দাবাখেলা।
মনকথা – প্রবীর কুমার চৌধুরী
“বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর”
জন্ম হয়ই তো মৃত্যুর জন্যে তাই তাকে গ্রহণ করতে হবে সহজ ভাবেই। ভেবে দেখেছো কী – মৃত্যুই পরম শান্তি (মরণরে তুহু মম শ্যাম সমান )।
কিন্তু ভুলে যাই, বিস্মৃতির আড়ালে ভাবি আমি অমর।
তুমি কী জানো কিংবা মানো –
কত কাজের দায়িত্ব থাকে কাঁধে এবং সেগুলো সমাধানের করার জন্যেই প্রাণীর জন্ম। আমার দৃঢ বিশ্বাস এটা আমার কর্মক্ষেত্র, কর্ম করতেই এখানে আসা। কর্মান্তে ফিরে যেতে হবে, এক মুহূর্ত বিলম্বের অবসর নেই।
আমি এখানে ধর্মের আলোচনা করতে বসিনি। যাঁর, যাঁর ধর্ম তাঁর, তাঁর কাছে। সেটা নিষ্ঠার সাথে মানলেই হলো। ধর্মচারণের ফলে যেন কোন অশান্তি বা রক্তক্ষয় বা কারুর মনকষ্ট উৎপাদন না হয়। কারণ কোন ধর্মই এসব মেনে নেয় না।
যা বলছিলাম – বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় মানুষ জন্মায় তারপর কর্ম ভুলে সুখ ভোগেই ব্যস্ত থাকে। মাত্রাতিরিক্ত সুখ ভোগের জন্যে পাপ করতেও দ্বিধা করেন না। আত্মসুখে পরের ক্ষতি করে, বিত্তের লোভের
পরের সর্বস্ব লুন্ঠন করে। দেহের বিকৃত জ্বালা মেটাবার জন্যে কত নারীর সতীত্ব নাশ করে। কত নিরীহ মানুষের প্রাণের বিনাশ ঘটে।
“সেই ট্রেডিশন আজও চলছে” অনাদিকাল থেকে ধরণীর কত নর -নারী মা, মাটি, মানুষ ছেড়ে মদ, মাংস আর মাৎসর্যকেই আঁকড়ে ধরে। যুগে, যুগে শুধু এর রকম-রং পাল্টায়।
তারপর একসময় যখন বিদায়ের ঘন্টা বেজে ওঠে। আসন্ন বিদায় বেলায় অচেতন মনে চেতনা ফেরে। হায়, হায় করে ওঠে মন। অনুশোচনায় কেঁদে ওঠে। চমকে ওঠে শপদের শুকনো, বাসি মালাখানি হাতে নিয়ে। ভাবে কী করতে এসে একি করলাম? বড় যে ভুল হয়ে গেল। যা করতে এসেছিলাম তার তো কিছুই করা হলো না। ভালোবাসতে পারিনি, কারুর হিতসাধন করিনি, বিপদে উদ্ধার না করে আরও বিপদে ঠেলে দিয়েছি। ভোগ সর্বস্ব অসার নিরর্থক জীবন কাটিয়ে গেলাম।
দেহখাঁচা ছেড়ে প্রাণপাখি উড়ে গেল দিগন্তে। চারিকাঁধে উঠে অবহেলায়, অনাড়ম্বরে চলছে প্রাণহীন দেহখানি
দাহকার্যে। পিছনে কেউ দিচ্ছে গাল। কেউ দেয় অভিসম্পদ। সহানুভূতিহীনতায় সে বড় কলঙ্কময় প্রস্থান।
সকল ধর্মের একটিই শেষ কথা – কর্ম করতে এসেছো কর্ম করে যাও। ভালোবেসে কাছে নিও অভাজনেরে।
দুমুঠো অন্ন তুলে দিও ক্ষুধার্থের মুখে। তোমার অতিরিক্ত অর্থের কিঞ্চিৎ দান করো নিঃস্ব, গরিবকে। অসময়ে দুর্বলের পাশে থেকো।
ভুলেও কাউকে শোষণ করোনা। নিরহংকারী ও নিঃস্বার্থ হও, লোভকে জয় করো।
ফলের আশা করো না। সময় তার ফল দেবে।
মহৎপ্রাণের মানুষরা বলে গেছেন – এ পৃথিবীর সব কিছুই মায়ার খেলা। মায়ার ছলনায় ভুলো না। একটা বুড়ি ছুঁয়ে থেকো তোমায় কেউ স্পর্শ করতে পারবে না।
আসলে পৃথিবীটা একটি বিরাট রঙ্গমঞ্চ। আর সেই রঙ্গমঞ্চের আমরা সবাই একেকজন অভিনেতা। অসার পরথেকেই সমানে অভিনয় করেই চলেছি। যে ভালো অভিনয় করতে পারছে না সে গালাগাল ও ভৎসনা শুনতে শুনতে মঞ্চ থেকে নেমে যাচ্ছে। আর যে কজন
ভালো অভিনয় করছেন এরা সমানেই প্রশংসা ও করতালি কুড়াতে, কুড়াতে আনন্দ সহকারে ঘরে ফিরছে।
“যত মত তত মত”। যেকোনো একটা পথ ধরেই চল।
তাহলে পথের বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না।
বারোমাস্যা – প্রবীর কুমার চৌধুরী
চেয়ে দেখা ছাড়া আর গতি নেই
আগাপাশতলা সব ছেঁড়া অধ্যায়েই-
উই করেছে সর্বস্তরে প্রবল গ্রাস
ভরা চৈত্রে দুন্দুভি বাজায় সর্বনাশ।
হরকরা চিঠি খোঁজে হাত ঝোলায়
স্মৃতির বড় ব্যথায় হাত বোলায়
রানার ছোটে না রাতে ঘন্টা বাজে না
এখন চিঠি লিখে ডাকে ফেলাতো মানা।
ব্যথার প্রকাশ নেই হজমটাই নিয়ম
ক্যাটারিং সর্বেসর্বা ইজ্জতদার স্বয়ম
স্মৃতির কলাপাতা আর মাটির গ্লাস
আত্মীয়তার পরিবেশন কবেই মাইনাস।
রবি যদিও আছেন সকলের উপরে
যার যা খুশি করছে ভেতরে,ভেতরে
সুর, লয়, ছন্দ, মাত্রা এযুগে আধুনিক
বলার কেউ নেই মাথায় মহান করণিক।
“উচিৎ কথা বলতে মানা” এই -চোপ
“বেশি বার বেরো না” দাগবে কিন্তু তোপ
“জাতে মাতাল তালে ঠিক” বড়ই ধুরন্ধর
যেমন করেই হোক না কেন ভুঁড়িটা নধর।
দুর্বার পরকীয়া – প্রবীর কুমার চৌধুরী
একাকীত্ব ভুলতেই তো এতো পথ পরিক্রমা
ঘুমের অন্তরালে আমার গোপন আধকপালে –
অন্যমনস্কতায় প্রাপ্ত কিছুটা শান্তি
তার গবাক্ষে অদৃশ্য তোমার দুষ্টু, মিষ্টি হাসি।
যখনই পাহাড় ডিঙিয়ে, শত্রু মাড়িয়ে
কবিতায় শব্দমালা গাঁথতে, গাঁথতে তোমার অদৃশ্য গলায় পড়াতে যাই –
সহসাই অসূয়া সেতু ভেঙে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
স্তব্ধতা খান, খান করে অমৃত সন্ধ্যা
আমার জীবনের উপন্যাস সেইখানেই শেষ হয়।
নিশীথ প্রহর নতুন ধারাবাহিক শুরু করে
আমার দীর্ঘ অপেক্ষারা নতুন অজানা পথের কুয়াশায় আলো খোঁজে।
জীবের মধ্যে দুটো শ্রেণী – নারী ও পুরুষ
একই সাথে বিরাজমান, একই ঘর, দোর, প্রতিটি ভোর
তবুও বহু ব্যবধান, যোজন, যোজন। ক্ষীয়মাণ অস্তরাগে প্রেম কেবলই অস্তমান।
মধুর যে গোধূলির নির্জনে চারিহাত,
সেই হাতে কলঙ্ক মাখে নতুনত্বের স্বাদ।
যে পথে একদিন স্বপ্ন মেখে, মেখে
মন পিয়াসের ছটফটানি – পাকপাখালীর ডানা মেলা ভেসে চলা
চুম্বনে ঐশ্বরিক অনুভূতি, বাঁচায় নক্ষত্র উজ্জ্বলতা
সেই কাঙ্ক্ষিত চুম্বনে সহসাই বিষ-দংশ, অন্তরমহলে বিরহ জ্বালা।
খণ্ডিত প্রেম ভেসে চলে এক শরীর থেকে অন্য শরীরে
উষ্ণতা খোঁজে প্রেম,মৃত প্রেম শবাধারে বিবিক্ষু।
আকিঞ্চন, দূরাহত প্রেম দুর্বার পরকীয়া।
অরক্ষণীয় – প্রবীর কুমার চৌধুরী
আদুর গায়ে রং মেখে, মেখে –
রেখে যাই একেকটি দীর্ণ উপন্যাস।
একান্ত নিভৃতে মনে হয় নিজেকে প্রজাপতি,
যৌবন নিস্তরঙ্গ, কারুকার্যহীন ডানাভাঙ্গা।
মনে,মনে সম্পর্ক গড়ে ওঠে ব্যাঙের ছাতার মতো-
সহসাই যবনিকা টানে … তৃষ্ণার মায়াকাব্য।
বিবর অবলম্বনে, প্রীতি চায় নিরম্বু উপবাস,
কেউ কি জানতো ভঙ্গিমার হবে অবসান?
মনের অলিগলি ছুঁয়ে, ছুঁয়ে ক্লান্তির প্রাত্যহিক বারমাস্যা।
বড় প্রেমপ্রীতির প্রাদুর্ভাব আজকাল,
হারিয়েছে ছাড়পত্র, ফুরিয়ে গেল উত্তরণের স্বপ্ন,
ও মুখের যত সুধা – সন্দেশ আজ অকলমে নিঃসৃত।
অরক্ষণীয় চুম্বনের পথ খুঁজতেই থেমে যায় উচ্ছ্বাস,
বিন্যাসহীন শরীর ঊর্বর ঠোঁট খোঁজে ক্লান্ত অবসরে,
নিশীথের হাওয়ায় বিবর্ণ মন অতৃপ্তির ব্যর্থতায়।
দুচোখ ভরে শুধু দেখি সন্ধ্যা নেমে আসে ধীরে, ধীরে,
কদমগাছের মাথায় যৌবনের গোধূলি জমা থরে, থরে।
পাখপাখালি শেষ বিকেলের ডানায়, ডানায়,
সূর্যের সাত রঙ খেলে করে,
আমায় মন আঙিনা স্মৃতিরা বিষন্নতায় ভরে।
হারায়ে খুঁজি – প্রবীর কুমার চৌধুরী
মনের গহনে লুক্কায়িত সব
যে কথা যায়না ভোলা
হারিয়েছি সেই কলরব
হৃদাঙ্গনে আছে ছবিতোলা।
সুখে-দুখে তাও ছিল হাসি
অভাবেও ছিল আনন্দ
আজ আছে তবু পরবাসী
সুখগুলো বিচ্ছিন্ন, নিরানন্দ।
পালিপার্বণ আজ অনাড়ম্বর
শূন্য রথতলা চেয়ে দেখা
ভাঙারথেও ছিল আত্মম্বর
” জয় জগন্নাথই” ছিল প্রিয় সখা।
সারি, সারি দোকান, গরম তেলে-
শুধুই পাঁপর ভাজার গন্ধ
আধুনিকরা উদাসীন, অবহেলে
নিরাসক্ততায় যেন সে সব বন্ধ।
মেলা বসে না, রথতলাই নেই
বাজে না আর তালপাতার ভেঁপু আলতা,
সিঁদুর,সযত্নে সিন্দুকে
এয়োতিরা খুলে রাখে দেখি বপু।
কেষ্টনগরের পুতুলহীন তট
মেলাপ্রাঙ্গণে গড়ে উঠেছে বহুতল
সন্ধ্যায় সেথা বোতল খুলে নটঘট
ভাগাভাগিতে ছড়ায় হলাহল ।
সেখানে আমার রথের দড়ি সদাই
নির্মল আনন্দের টানেই চলতো
ঝাপসা দেখি আজ চড়াই, উৎরাই।
চলার পথে দেখি রথ নেইতো।
এসো ঈগলডানায় ভেসে এসো – প্রবীর কুমার চৌধুরী
এসো ঈগলডানায় ভেসে এসো
এ অন্ধকারে চোখের মুক্ত আলোর ঝরুক কিরণ
মাটিতে ছড়ানো যত কবিতার উর্ণ-কঙ্কাল সরিয়ে
মনোরম শব্দ দিয়ে আস্তানা গড়ে তুলি
যেখানে পরমানন্দে বসবে আগামীর কবিতার আসর
তারপর নিভৃতে, অন্তরালে সৃষ্টি হোক কবিতার নব অভিধান।
এসো ঈগলডানায় ভেসে এসো
মনের সতরঞ্চি বিছিয়ে আকীর্ণ করি প্রিয়তম অক্ষর
দ্বিধা-দ্বন্দ্বহীন, কামনা, বাসনাহীন নির্ভার,নির্লোভ ছন্দ
শৈশব থেকে আদ্যন্ত উৎক্ষিপ্ত যত ভরিয়েছি দীর্ঘশ্বাসে
আকাশ, বাতাস কাঁপিয়ে করেছি প্রতিকারের সহস্র প্রশ্ন –
নিরুত্তর, অবহেলায় ভরেছে দুঃখ আর ভিজিয়েছে আঁখি পল্লব।
তাদের মুখরেখায় দেখেছি প্রেমহীন,নিষ্ঠুরতার আবেক্ষন বর্ণচ্ছটা,
সোহাগহীন-চাটুকারিতা, সান্ত্বনার মুখোশে চুষেছে বুকের রক্ত
শোষণ, তোষণের খোলা ময়দানে এক ঘৃণ্যখেলার কারিকুড়ি
শান্ত, নীল প্রেমদীপ্ত সময় আলো- আঁধারে বারংবার হয়েছে ধর্ষিত।
এসে ঈগলডানায় ভেসে এসো
নতুন করে প্রেমের পোশাক পরে ডুবে যাই বন জ্যোৎস্নায়
দুহাতের শৃঙ্খল ছিঁড়ে পবিত্র মাটিতে শপদে নত হই
তারপর না হয় তোমাকে বুকে নিয়েই ভাসবো –
অজানা প্রহেলিকায়, যদি ফিরে পাই হারানো স্বপ্ন
সেইক্ষণে শুধু তোমার বুকের আঙ্গিয়ায় আমার শয্যা পেতো
একদিন জানি আমি বন্ধ ঘড়ি ঘুরবেই নতুন সময়ের আবর্তে।
আজ একবার অন্তত এসো ঈগলডানায় ভেসে
শেষবারের মত ল্যাম্পের নিচে ফেলে রাখা চিঠি খুলে দেখি-
হয়তো হঠাৎ আলোয় জমাট বাঁধা ভুলের বরফ গলবে
ক্লান্তির দেহে প্রেমের বসন্ত শান্তির কুটির গড়বে
নতুন প্রভাতের সূর্য ফাঁকা সিঁথির ফাঁকে সিঁদুরে ঢালবে
আজন্মশত্রু চেতনা প্রত্যুষে আবার সোহাগের নাও বাইবে
জানি গো প্রিয়া একদিন ফের তোমার মন-অঙ্গন প্রেমের জোয়ারে ভাসবে।
অগণিত সবুজপত্রে উচ্চারিত হোক অমোঘ সত্য
ত্রাসের পাহাড় কেটেই শুরু হোক নবজীবনের চলার পথ।
নতজানু মাথারা সাহসে ভর করে উঠুক আকাশে
আমি তো মৃত্যুর কোলে মাথা রেখে চিৎকারে বলবো-
এ পৃথিবী আমাদের,আমরাই আগামীতে গড়বো
পরাজয় মেনে অকালে যাঁরা চলে গেলেন, সেই মৃত্যুর দায়ও বইবো।
বাঁচবো সংঘাতে – প্রবীর কুমার চৌধুরী
যদি জানতে চাও আমি কি চাই
তবে বলি ভেঙে-চুরে গড়তে চাই
দম বন্ধ করা দেওয়ালের সারি
গায়ের উপর অসহ্য সব বাড়ি
সর্বস্তরে হাহাকারে বিদীর্ণ আকাশ
দূষণের অহংকারে দূষিত বাতাস।
যদি ভয় পাও কাঁপে যদি পা-দু’খানি
দূরে থাকুক নান্দিমুখ, যত আত্মগ্লানি –
জীবনধর্মী শ্লোকে, থেকো প্রতিবাদে অবিচল
আর কতদিন নীরবতা, অন্যায়ে স্থবির নিশ্চল ?
জিনের কারিকুড়িতেও অদৃশ্যে আঙ্গুলি হেলন
লাভ – ক্ষতির পরীক্ষায় অবাঞ্ছিত মিলন
প্রতিশ্রুতির বিশ্বাসে সহস্র মিথ্যার প্রতিফলন
মনের পরমাণু বিস্ফোরণ আজ সত্যের স্খলন
এতো ভাড়ারের মজুদ মাল ছিনবো এ দুইহাতে
কালোবাজারে লাগাবো আগুন বাঁচবো সংঘাতে।
একই কক্ষপথে – প্রবীর কুমার চৌধুরী
একি সুখী গৃহকোণ
নিজেকে নিয়েই অতলে, অন্তহীন
যত কিছু আত্মকেন্দ্রিকতায় স্বাগত
সদাই অন্তদন্দ্বে নিমজ্জিত দীর্ঘশ্বাস।
প্রাণের মায়াবেষ্টিত গোষ্ঠীতে কাঙ্ক্ষিত স্বর্গ নাগালহীন
“সিং ভেঙে পরের যাত্রাভঙ্গে” একান্ত নিরুপায়
পরম মিত্রতার আড়ালে অসম্ভব ঘৃণ্য দৃষ্টি
সেখানে স্বার্থের জড়াজড়ি, সুন্দরের স্থান অসঙ্কুলান।
অসুর বনাম দেবতার চাপা মানসিক লড়াই
অভ্যন্তরে অসম্ভব গোপন জ্বলন্ত আগুন
প্রবল পরাক্রম অপ্রকাশিত ,
তবুও মুখোশ এঁটে ঘুরছে প্রতিদ্বন্দ্বী।
আজ কিংবা কাল অবশ্যভাম্বি ঘোরযুদ্ধ
দিন গুনছে ভীত, শঙ্কিত দুর্বল সময়
এতেও কি দিতে হবে নিষ্ফল আত্মদান – দুর্বল, নিঃসহায়ে
ইতিহাস কি লিখবে, হাড়িকাঠে মরেছে কিছু হতর্ভাগ্য সন্তান?
ফের যে “যাবে লঙ্কায় সেই হবে মহীরাবন”
এই তো সেই অনিবার্য চক্রাকার বৃত্ত আবদ্ধ
উদ্ধার নেই, মুক্তি নেই, চিরন্তর দুর্নিবার
অপরিবর্তনীয়, অলঙ্ঘনীয় হাহাকার।
বিপ্লব হয়ে ফিরে আসবো – প্রবীর কুমার চৌধুরী
স্বাধীনতা তোমাকে হাজার সেলাম।
তোমার পতাকায় আড়ালে ঢাকা পড়েছে কত মৃতদেহ
এতদিন যাদের কপালের ঘাম আর রক্তে জমি হয়েছিল উর্বর –
চাষ হয়েছিল তাদের গতর নিঙড়ে, রক্ত চুইয়ে । অথচ –
তাদেরই নেই সে ফসলের অধিকার। তাদের কালো চামড়ায় লেখা ভুখার ইতিহাস।
স্বাধীনতা তোমায় হাজার সেলাম
ওই নিম্ন বংশোদ্ভূত – দলিতের তোমার কলে জল খাওয়া অপরাধ
ভালোবাসার অধিকার নেই তোমার রক্তে উদ্গতকে
নেই কোন প্রবেশাধিকার তোমার পথে দীপ্ত পদক্ষেপে চলার কিংবা উপবেশনের
অথচ ওদের শক্তিতেই তুমি শক্তিধর,শোষণ করেই বিত্তশালী, তোমার অঢেল টাকার পাহাড় ।
স্বাধীনতা তোমায় হাজার সেলাম।
ওই যে দলিত কন্যা তোমার বিধানে ভোগের সামগ্রী
তোমার সেবাদাসী, অসময়ে যৌন ক্ষুধার খাদ্য –
প্রয়োজনে বলাৎকার, যোনিতে লৌহ শলাকা কিংবা
সারা গায়ে ক্ষমতার কলঙ্ক নিপীড়ন। প্রয়োজনবোধে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপে মৃত্যু
স্বাধীনতা তোমায় হাজার সেলাম।
কফি ক্ষেতে যে হাজার শ্রমিক কফি চাষ করে
নিজেকে পুড়িয়ে, পুড়িয়ে নিজ বর্ণের রঙে পরিণত করে কফি,
সাদা চামড়া উল্লসিত, দম্ভের হাসি
সে কফিতে নেই সেই নিগ্রোর অধিকার।
পুড়ছে মানুষের মূল্যবোধ, বিবেক, মনুষ্যত্ব, পুড়ছে অধিকারবোধ
হে স্বাধীনতা তোমায় হাজার সেলাম।
চেয়ে দেখো এখনো বেঁচে আছে –
মায়কোভস্কি হিকমত নেরুদা আরাগঁ এলুয়ার
জ্বলজ্বলে চোখে দীর্ঘ প্রত্যাশায় চেয়ে আছে –
চে গুয়েভারা, নেলসন ম্যান্ডেলা আর সুভাষের আদর্শ বুকে রেখে –
তোমাদের কবিতাকে আমরা হেরে যেতে দিইনি।
কবিতা কখনো মরে না, নিরস্ত্র হলেও অসীম শক্তি
কবিতা নির্ভীক, কবিতাই মহাবিল্পবী, কবিতা স্বাধীন
বন্দুক মানে না, কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে মৃত্যুর পরোয়া করে না
বুটের ঠোক্করে হাসে, বরফের ট্রেতে শুয়ে শব্দ চয়ন করে
মাথার খুলিতে পিস্তল ঠেকালে প্রশ্ন তোলে – মৃত্যু কি ?
মৃত্যুঞ্জয়ী কবিতার আমরাই একেকটি দামাল সন্তান ।
দাবিংশ শতকের তাবৎ বিশ্বের কবিরা
লোরকার মতো বীর বিক্রমে প্রস্তুত থাকুন
হত্যা করুক, ধর্ষণ করুক, স্বাসরোধে লাশ করুক
তবুও সত্যের পথে কখনও থমকে যাবনা ।
আমাদের কলমই তো একেকটি স্টেনগান,মেশিনগান
স্বাধীনতা হস্তগতে মৃত্যুভয়ে আমরা কখনোই ভীত নই।
আমি তো জানি কবির মৃত্যু নেই,অমরত্বের সন্তান
মাটিতে মাটিতে, সবুজে সবুজে,শতাব্দীতে শতাব্দীতে
আমি নতুন বিপ্লবের গান হয়ে,কবিতা হয়ে –
যুগে,যুগে বিপ্লবী হয়ে তোমাকে পাওয়ার জন্যে ফিরে আসবই হে স্বাধীনতা।
এখন প্রাত্যহিক জীবন – প্রবীর কুমার চৌধুরী
তুই আছিস বলেই তো এত ভালোবাসা আছে,বাঁচার ইচ্ছা আছে।
তুই আছিস বলেই তো সাজাই ঘর,তোকে ঘিরেই আমার আপন-পর।
নিত্য ভোরের রবি -দুচোখের ক্যানভাসে ছড়ায়
নানা রঙের ছবি,
এসব নিয়েই তো আমি আজও জয়-পরাজয়ের কবি।
কে বলে তুই নেই,চোখ মেললেই সবখানেতেই স্মৃতি থরে-থরে,তাতেই সুখবোধ,
জানলা খুলে চোখ মেলে চাই – ,দেখি তোর কাঁকন ভরা নিরেট রোদ।
আজও ঘর দুয়ারে সাজিয়ে রাখি তোর ভাগেরটা,
তোর পুজোর কাপড়,আলতা-সিঁদুর, সাক্ষী আলমারিটা।
ঝুলঝাড়ি ভুল মুখ ঝামটা, আরশিতে অবয়ব তোর-
তোর ছবিটা বুকে করেই আসে নতুন ভোর।
দিনের শুরু ছুটতে থাকি, বকতে থাকি,দেখি সবখানেতেই তুই –
বাজার পথে ফিরতি চোখে দুঃসহ বিস্মৃত হই।
প্রখর রোদ, দারুণ বহ্নি, তারপর গোধূলির ছোঁয়া লাগে
মনে পড়ে মিলন বাসরের ফুলেল প্রেম,অতীত হঠাৎ জাগে।
আজও তোর সেতারে হাত ছোঁয়ালেই তুই যেন রেগে উঠিস,
মানিস না মানিস, আমার ইচ্ছে ডানায় ভর করে তুই থাকিস।
এখন সাজিয়ে রাখিস নতুন ঘর ? তোর নতুন সংসার?
তার বুকে ঝাঁপিয়ে পরিস যা তোর চিরকেলে অলংকার?
আমার জীবন খাতায়, ছেঁড়া পাতায় চিরকালের দারিদ্রের ঈশ্বর।
আমার কেটেছে বেলা, তোর অবহেলা,মন্দ্রাকান্তা কবিতায়,
এখন ছুটির ঈশ্বর এক ছুটিতেই সাজান ভিন্ন স্বাদের মাত্রায়।
আমার সকল পাওয়ার পরশ মেখে থাকিস জীবন সারল্যে,
আজ বাঁধন ছিঁড়ে,অন্য সুরে- গান ধরেছি জনঅরণ্যে?
তোর পরান বীণায় সুর ভেসে যাক, মুছুক অতীত মলিনতা –
এই চাওয়াটুকু পূর্ণ হোক-আমার এইতো দেখার ব্যগ্রতা।
জানি তুই আছিস বলেই প্রেম কথা বলে, পাখিরা গান গায়,
দৃষ্টি ডানা মেলে নীল-নীলিমায়,
জ্যোৎস্না দেয় আলো, মধুরাতের হাতছানি মায়ায়, মায়ায়।
তোর পরশখানি বুকে রেখেই ভুলে আছি অতৃপ্তির যন্ত্রণা-
তোর যাওয়া-আসার পথে পথেই আমার পুনঃ ফেরার কল্পনা।
সব কিছুই সরে যায়, মুছে যায়,বুঝেছি আপনার কিছুই নাইরে,
জীবনের খেলাঘরে, কত কথা মনে পরে, পাষাণ চাপাই অন্তরে।
দ্বিধাম্লান – প্রবীর কুমার চৌধুরী
আয় তোর আঁচলে মুখ লুকাই
লজ্জায় মুখ হয়েছে কালো
আয়নায় দাগ লেগেছে তবুও ভালো
আয়নার ঘষা কাঁচে – মুখ দেখছে সবাই ।
হঠাৎ অক্ষর বড় নিষ্প্রদীপ, সাহিত্যটাই জোলো
রাম নাম কেবলম, শ্রীহরিই ভরসা কি বলো ?
চকবন্দি জীবন – প্রবীর কুমার চৌধুরী
এক অসহ্য চকবন্দি জীবন
যেন রায়ামপ্যাডে চাবুক হাতে ঘোড়সওয়ার –
দুচোখের অবিচল আস্ফালন।
এক অসহ্য চকবন্দি জীবন
প্রেম-সহানুভূতিহীন অনুশাসন
সাবধানতার ঘোষণা পত্র ধরায় হাতে।
এক অসহ্য চকবন্দি জীবন
যে দিকে তাকাই জ্বলন্ত-
অঙ্গারসম বৈষর্মের উৎপীড়ন।
একবার যদি এ চক্রব্যূহ ভেদ করতে পারতাম
একবার যদি ঐ চক্রবর্তী উপাধি ছিঁড়ে
মাটিতে নামিয়ে চরক-সংহিতায় ধৌত করতাম ….
চন্দ্রশালিকার যত অহংকার –
চশমখোর মনোবৃত্তি, চাঁদমারিতে দিতেম বিসর্জন
যত চাটুকারের চার্জশিট চামুণ্ডায় দিতেম অঞ্জলি।
এক অসহ্য চকবন্দি জীবন
ভয়ে জড়োসড়ো, বাকবন্দি চুপচাপ
মুখবুজে কাজ করি খিদেয় বাঁচবো আমরণ।
এক অসহ্য চকবন্দি জীবন
বুকে বারুদ বয়ে অসহায় পথ চলা
একবার যদি বিস্ফোরিত হয়ে লঙ্কাকাণ্ড বাঁধাতে পারতাম….।
ক্ষমাহীন ইতিহাসের পাতা – প্রবীর কুমার চৌধুরী
হতাশ মননের অঙ্গনে
নিরুত্তাপ, নির্বীর্য অবস্থান-
রাতভোর নিস্তব্ধ, সীমাহীন অনুশোচনায়
এখন ভাবছি দুপায়ের কি সত্যই মানুষ?
চাটুকার ফেরিওয়ালা ঘুরছে সায়াহ্নে –
মুখে মুখোশ এঁটে পবিত্র দেহের পরিক্রমায় –
অবিবেচক, সতীত্ব পোড়ায় গোপনে,
মনুষ্যত্ব বেচে খায় – নির্ভুল বিচার শোনায় ইতিহাসের পাতা।
প্রার্থনা – প্রবীর কুমার চৌধুরী
দাও হে দাও ফিরায়ে দাও
হে অনাদি – আদি কাল
হৃদিভরে যতনে , আপনারে-
প্রতিদানে না করি ফলাফল।
দাও হে দাও মনে প্রেম দাও
জগতের যেন ঘুচাই দীর্ণবেশ,
লোলুপহীনতা ও পরাকাষ্ঠা ত্যাগী
নতুনে জাগি যেন যামিনীর শেষ।
দাও হে দাও প্রাণে নব উল্লাস
বিলাতে দাও চেতনা শুদ্ধ চিত্ত
হবো অহিংস,হবো দানিশ্রেষ্ঠ
এ চিত্ত না করে কামনা অহম,বিত্ত।
দাও হে দাও দু চোখে মোর আলো
সেই হতে জ্বালিব দীপ যত নিভু,নিভু।
দুবাহু বাড়ায়ে অনাথে ধরিবো জড়ায়ে
বিদায় বেলা প্রতিদান চাহিব না কভু।
দাও হে দাও আরো কণ্ঠে সুর দাও
মেতে থাকি যেন প্রেমকথা শ্রবণে
বাতায়নে তুমি শুধু রোহিবে দাঁড়ায়ে
তৃষ্ণা মিটিবে মোর ও দুটি নয়নে, নয়নে।
সংক্রমণ – প্রবীর কুমার চৌধুরী
শূন্যতার গভীরে আজও স্থির, নতজানু
মর্মস্থলে পাষাণ সংরক্ষণ যাতনা অশেষ
প্রার্থনা রয়ে যায় দিগন্ত ব্যাপী
মিহি সুতোয় বোনা কল্পনা নিঃশেষ।
দেহে ভরছে যে রক্ত, সৃষ্টির লালসায়
অনার্য দাম্ভিক খোলা তলোয়ারে বাতাস কাটে
এখনও তুমি প্রান্তিক, ডেকে বলো জনান্তিকে
অন্ধকারের হাহাকার আশ্লেষে বিকায় হাটে।
নিশ্চুপ করজোড়ে লুটায়ে ভূতলে
কাঙ্ক্ষিত যা – গিলে খায় ক্ষুধার্ত মরুভূমি
তোমার স্বর্গোদ্যানে মেনকার শরীর বেয়ে
অগ্নিকন্যা মুখোশ খোলে যত নকল স্বামী।
বিপন্নতায় ঝড় তুলেও রসাস্বাদনে পরিতৃপ্তি
রম্ভার অশ্রুসিক্ত চোখেও অসহায় রমণীয় রমিত
নিথর দেখি অক্ষরমালায় বৃথাই কালক্ষেপ
বিলাসী সমাজ ঠোঁটের পরে ঠোঁটেই সংক্রমিত।
ঘুম – প্রবীর কুমার চৌধুরী
যদি বলতেই হয় চারণকবি বলো
জ্ঞানমূর্খ, বুঝি সব, প্রকাশে জিভ আড়ষ্ট
বুকেতে বারুদ জমছে অহর্নিশ –
বিমূঢ়তার অচেতনে হতদরিদ্র।
সব সাজানো আছে পরিপাটি ,হিসাবের
অপেক্ষায় ঘর-গৃহস্থালি,রন্ধনশালায় অগ্নিসংযোগ বাকি।
ঘুমের নেশায় খাটের বগলে অবসন্ন দিবানিশি।
সময়ের রমণে সর্বস্বান্ত, ধৈর্যের বীর্য গড়ায় মাটিতে
জানি না উর্বর হবে কিনা কোন গর্ভের গলিতে
জানি না কোন অনাসক্তি-র আঘাতে সচেতনা ফিরবে ?
ইচ্ছা আছে এবার ঘুম ভাঙানির গান গাইবো
অবসন্ন দেহের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছি ক্রোধের আগুন
ঘুমহীন চোখের প্রবল দাহ্যে ঘটাবো বিস্ফারণ।
চারণের দলে যাঁরা লুকিয়ে কাঁদে জীবনের গান বুকে
তাঁদের মাঝে দাঁড়িয়েই ঘুম ভাঙানির সুর তুলবো
ভূপৃষ্ঠের মরুভূমি অন্তত একবার সবুজে ভরে যাক।
এসো সচেতনে গড়ে তুলি দুর্ভেদ্য নির্ভারের দুর্গ
একবার অন্তত দুহাতে পাথর ভেঙে রাস্তা গড়ি
আগামীর যারা যাত্রী মসৃণ পথে না হয় একটু হাঁটুক
তারপর মৃত্যুর কোলে নিশ্চিন্তে ঘুমাবো।
চলার পথে দেখি রথ নেইতো।
প্রবীর কুমার চৌধুরী | Prabir Kumar Chowdhury
History of Bengali Poetry | কবিতা কি ও কেন এবং তার ইতিহাস
Tebhaga Movement | বাংলায় “তেভাগা আন্দোলন” এবং সলিল চৌধুরীর গণসঙ্গী
Teachers day in honor of teachers | শিক্ষকদের সম্মানে শিক্ষক দিবস
Bengali Article 2023 | সুভাষচন্দ্রের আত্মজীবনীঃ বিভিন্ন মনীষী প্রসঙ্গ
Bangla Kobita Abritti Songs | Mixed Kobita Bengali Kobita | Sound of bangla kobita lyrics | Sound of bangla kobita in english | Sound of bangla kobita mp3 download | bluetooth bandopadhyay kobita | bratati bandyopadhyay kobita lyrics | bratati bandopadhyay kobita mp3 download | Bangla Kobita Abritti | Best Bangla kobita MP3 Songs | Kobor Bangla Kobita.mp3 | Hits of Bratati Bandopadhyay | Bangla kobita music | Bangla Audio Book | Esho Abritti Kori | Bengali Recitation | Kobita Lyrics Poetry In Bengali | Shabdodweep Web Magazine | High Challenger | Shabdodweep Founder | Sabuj Basinda | Bengali Poetry | Bangla kobita | Kobita Dot Com 2024 | Poetry Collection | Book Fair 2024 | bengali poetry | bengali poetry books
Kobita Dot Com pdf | Bengali Poem Lines for Caption | bangla kobita | poetry collection books | poetry collections for beginners | poetry collection online | poetry collection in urdu | Kobita Dot Com Ebook | poetry collection clothing | new poetry | new poetry 2023 | new poetry in hindi | new poetry in english | new poetry books | new poetry sad | new poems | new poems in english | new poems in hindi | Bengali Poem Lines for Caption in pdf | new poems in urdu | bangla poets | indian poetry | indian poetry in english | indian poetry in urdu | indian poems | indian poems about life | indian poems about love | indian poems about death | Best Bengali Poetry Folder | Best Bengali Poetry Folder 2023
story writing competition india | story competition | poetry competition | poetry competitions australia 2023 | poetry competitions uk | poetry competitions for students | poetry competitions ireland | Bengali Poem Lines for Caption crossword | writing competition | writing competition malaysia | Bengali Poem Lines for Caption in mp3 | writing competition hong kong | writing competition game | Best Bengali Poetry Folder pdf | Trending Kobita Dot Com | Kobita Dot Com – video | Shabdodweep Writer | bee poem | poem about self love | story poem | poetry angel | narrative poetry examples | poetry reading near me | prose poetry examples | elegy poem | poetry reading | poetry websites | protest poetry | prayer poem | emotional poetry | spoken word poetry | poem about god | percy shelley poems | jane hirshfield
spiritual poems | graveyard poets | chapbook | poems about life | poems to read | English Literature | Kobita Dot Com examples | poems about life and love | elizabeth bishop poems | poems about women | sister poems that make you cry | famous quotes from literature and poetry | mothers day poems from daughter | poem about community | Kobita Dot Com Ranking | positive Best Bangla Kobita Collection | Bengali Poem Lines for Caption about life struggles | toni morrison poems | good bones poem | google poem | funny poems for adults | inspirational poems about life | friendship poem in english | paul laurence dunbar poems | freedom poem | sad poetry about life | freedom poem | sad poetry about life
Natun Bangla Kabita 2023 | Kobita Bangla Lyrics 2023 book | New Kobita Dot Com | Writer – Kobita Dot Com | Top Writer – Natun Bangla Kabita 2023 | Top poet – Natun Bangla Kabita 2023 | Poet list – Kobita Bangla Lyrics 2023 | Archive – Kobita Dot Com | Bangla Full Kobita | Online Full Kobita Bangla 2023 | Full Bangla Kobita PDF | New Bangla Kabita Collection | Shabdodweep Online Poetry Story | Poetry Video Collection | Audio Poetry Collection | Bangla Kobitar Collection in mp3 | Bangla Kobitar collection in pdf | Indian Bengali poetry store | Bangla Kobita Archive | All best bengali poetry | Indian Kobita Dot Com | Best Poems of Modern Bengali Poets | Best Collection of Bengali Poetry in pdf | Bengali Poetry Libray in pdf
Autograph of Bengali Poetry | India’s Best Bengali Writer | Shabdodweep Full Bengali Poetry Book | Bengali Poetry Book in Google Bookstore | Google Bengali Poetry Book | Shabdodweep World Web Magazine | Shabdodweep International Magazine | Top Poems of Modern Bengali Poets | Bangla Kobita in Live | Live Kobita Dot Com | Bengali Poetry Recitation Studio | Sabuj Basinda Studio for Bengali Poetry | Bangla Kobita Sankalan 2023 | Shabdodweep Kabita Sankalan | New Bengali Poetry Memory | History of Bengali Poetry | History of Bangla Kobita | Documentary film of Bengali Poetry | Youtube Poetry Video | Best Bangla Kobitar Live Video
Live Video Shabdodweep | Bengali to English Poetry | English to Bengali Poetry | Bengali Literature | Full Bengali Life of Poetry | Bangla Kobita Ghar | Online Kabita Archive Library | New Bengali Poetry House | Full Bengali Poetry Collections PDF | Library of Bangla Kobita | Bengali Poetry and Story | Bengali Poetry Writing Competition | World Record of Bengali Poetry Writing | Peaceful Poetry | Online High Trend Bangla Kobita Selection | High Trend Bangla Kobita translation in english | High Trend Bangla Kobita | High Trend Bangla Kobita for instagram | romantic bengali poem lines | bengali short poem lyrics