Jagannath Biography and Literature – Avijit Pal
জগন্নাথবৃত্তান্ত ও জগন্নাথ-সাহিত্য – অভিজিৎ পাল
জগন্নাথ হিন্দু সম্প্রদায়ের পৌরাণিক দেবতা। জগন্নাথের প্রধান মন্দির ওড়িশার পুরীতে অবস্থিত। জগন্নাথ ওড়িশার রাষ্ট্রদেবতার মর্যাদায় অধিষ্ঠিত রয়েছেন। জগন্নাথের ধর্ম-সংযুক্ত উৎস ও বিবর্তনগুলি আপাত পরস্পর বিরোধী ও সম্পর্কযুক্ত একাধিক মতবাদে পরিপূর্ণ। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো — ১) প্রাক্ বৈদিক তথা লৌকিক মতবাদ, ২) বৈদিক মতবাদ, ৩) পৌরাণিক মতবাদ, ৪) তান্ত্রিক মতবাদ, ৫) বৌদ্ধ মতবাদ, ৬) জৈন মতবাদ। বর্তমান সময়ে জগন্নাথ বহুমতের সমন্বয়মূর্তিতে পূজিত হন।
তিনি বৈদান্তিকের নিরাকার নির্গুণ ব্রহ্ম প্রণবতনুধর, যোগীদের পরমহংসতত্ত্ব, বৈষ্ণবের শ্রীপতি নারায়ণ, শৈবের মহাদেব ভৈরব, শাক্তের আদ্যাশক্তি মহামায়া, সৌরের সূর্য-নারায়ণ, গাণপত্যের বিনায়ক গণেশ, বৌদ্ধের গৌতম বুদ্ধ ও জৈনের সিদ্ধান্তমূর্তি সাক্ষাৎ মহাবীর, শিখের কলিকলুষহারী গুরুতত্ত্ব। তিনিই আবার শবরজাতির পূজিত সাক্ষাৎ নীলমাধব, অনার্যের আরাধ্য লৌকিক দেবতা কিট্টুং। পুরীর জগন্নাথদেবের ওপর ভারতীয় সম্প্রদায় নিজেদের দাবি ছেড়ে দিতে নারাজ। জগন্নাথের এই প্রসারিত রূপের সমর্থন রয়েছে তাঁর পূজাস্তোত্রেও:
যং দারুব্রহ্মা মূর্তিং প্রণবতনুধরং সর্ববেদান্ত সারং
ভক্তানাং কল্পবৃক্ষ ভবজলতরণী সর্বতখানুখম।
যোগীনাং হংসতত্ত্বং হরিহর নমিত শ্রীপতি বৈষ্ণবানাং
শৈবানাং ভৈরবাস্যাং পশুপতি পরমং শাক্ততত্ত্বে শবিতং চ।
বৌদ্ধানাং বৌদ্ধসাক্ষাৎ রূপ ভয়তি বরো জৈন সিদ্ধান্তমূর্তিঃ
তাং দেবো পাতু নিত্যং কলি কলুষহরং নীলশিলাধিনাথঃ।।
ভারতের অধিকাংশ ধর্মসম্প্রদায়ই জগন্নাথ ও জগন্নাথ-সংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তাদের ধর্মের ঈশ্বরচেতনার সঙ্গে ওড়িশার জগন্নাথচেতনার আত্তীকরণ ঘটিয়েছে। সারা ভারতময় এই আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠার ফলে জগন্নাথকে ঘিরে পৌরাণিক কাহিনী ছাড়াও অজস্র কিংবদন্তি কালে কালে তৈরি হয়েছে। জগন্নাথ ও জগন্নাথ-সংস্কৃতির এই প্রবাহে বৈচিত্র্যের অভাব নেই।
জগন্নাথ ও জগন্নাথ-সংস্কৃতির বিস্তৃত পরিসরের একটি অনন্য অঙ্গ জগন্নাথ-সাহিত্য। সমগ্র ভারতে জগন্নাথ-সাহিত্যের প্রধান কেন্দ্র ওড়িশা। ওড়িশার জনজাতিই প্রাচীন সময় থেকে জগন্নাথ-সাহিত্যের জন্ম দিয়েছে। ওড়িয়ারাই তৈরি করেছেন ‘জগন্নাথ-সাহিত্য’ বা Jagannatha Literature শব্দবন্ধটি। জগন্নাথ-সাহিত্যে জগন্নাথই প্রধান ও অদ্বিতীয় উপজীব্য বিষয় রূপে উপস্থিত থাকেন। জগন্নাথ-সাহিত্যের আধার মূলত জগন্নাথবাদ বা Jagannathism। জগন্নাথ-সাহিত্যে জগন্নাথের প্রতি একনিষ্ঠ সমর্থন থাকলেও অন্যমত, আদর্শ ও ধর্মচেতনার প্রতি বিদ্বেষী মনোভাব থাকে না। একৈকপি দেববাদের প্রতিষ্ঠা করার তাগিদ জগন্নাথ-সাহিত্যে দেখা যায়। এই কারণে ঐক্যশাস্ত্র হিসেবে জগন্নাথ-সাহিত্যের গুরুত্ব সমান প্রাসঙ্গিক হয়ে রয়েছে এই দেশে।
সংস্কৃত স্কন্দপুরাণের বিষ্ণুখণ্ডের পুরুষোত্তমমাহাত্ম্যম্ সর্বভারতীয় জগন্নাথ-সাহিত্যের আদিতম নিদর্শন। পৌরাণিক পরিসরে বৈদিক মহাবিষ্ণুর সঙ্গে জগন্নাথকে এক ও অভিন্ন করে তোলা হয়েছে স্কন্দপুরাণে। ওড়িয়া সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করা হয় জগন্নাথই আদিদেব। জগন্নাথের থেকে রামচন্দ্র, কৃষ্ণ প্রভৃতি মহৎ সত্তার আবির্ভাব ঘটেছে। জগন্নাথ দশাবতারের মূল অবতারী পুরুষ। জগন্নাথ সম্পর্কে এই ধারণাটি ভারতের আর কোনো প্রদেশে নেই। এমনকি জগন্নাথ-সংস্কৃতির দ্বিতীয় বৃহত্তম পীঠস্থান বঙ্গদেশেও এই ধারণা দেখা যায় না।
বঙ্গদেশে জগন্নাথ কৃষ্ণ বা বিষ্ণুর একটি রূপ মাত্র। জগন্নাথকে কেন্দ্র করে ওড়িশায় গড়ে উঠেছে জগন্নাথ-ধর্ম ও জগন্নাথ-সংস্কৃতি। এই দুই-এর সূত্রে ওড়িশায় গড়ে উঠেছে জগন্নাথ-সাহিত্যের সমৃদ্ধ পরিসর। ওড়িয়া জগন্নাথ-সাহিত্যের সেই আঁচ এসে লেগেছিল মধ্যযুগের বঙ্গেও। মধ্যযুগের সপ্তদশ শতাব্দীতে কবি গদাধর দাস প্রথম জগন্নাথ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ কাব্য রচনা করেছিলেন ‘জগৎমঙ্গল’ নামে। গদাধর দাসের পরে জগন্নাথকথাকে অবলম্বন করে সপ্তদশ শতাব্দী থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যে একাধিক জগন্নাথ বিষয়ক নাতিদীর্ঘ কাব্য ও বন্দনাগান রচিত হয়েছিল। এই ধারার সাহিত্যের মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো—‘জগন্নাথবিজয়’, ‘জগন্নাথচরিত্র’ ও ‘জগন্নাথমাহাত্ম্য’।
গদাধর দাসের পরেই চন্দ্রচূড় আদিত্য ও দ্বিজ মুকুন্দ বাংলার জগন্নাথ-সাহিত্যে সমৃদ্ধি দিয়েছিলেন। অষ্টাদশ শতাব্দীতে প্রথম দ্বিজ মুকুন্দ জগন্নাথ-সাহিত্যে খ্যাতি পেয়েছিলেন। জগন্নাথের মাহাত্ম্যবাহী পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে অষ্টাদশ শতাব্দীর কবি বিশ্বম্ভর দাস, দ্বিজ মধুকণ্ঠ, অকিঞ্চন দাস, জয়শঙ্কর দাস, দেবী দাস, মুকুন্দ রথীন্দ্র, রতিদেব, কংসারি, কৃষ্ণ দাস, দ্বিজদাস, দ্বিজ মধুকান্ত, দ্বিজ জয়ানন্দ, সুবুদ্ধি দাস প্রমুখ বাংলা জগন্নাথ-সাহিত্যের ধারাটি সমৃদ্ধ করে তুলেছিলেন। এই সময়ে কবি দ্বিজ রঘুনাথ, দয়ারাম দাস, দ্বিজ রাম, কৃত্তিবাস ও হরগোবিন্দ জগন্নাথ বন্দনার একাধিক পদ রচনা করেছিলেন। এই কালপর্বের অধিকাংশ জগন্নাথ-সাহিত্যে মৌলিকতার অভাব ছিল।
প্রায় গতানুগতিক পদ্ধতিতে মূলত স্কন্দপুরাণের বিষ্ণুখণ্ডের অন্তর্গত পুরুষোত্তমমাহাত্ম্যম্ অংশের অনুবাদের মধ্যেই অধিকাংশ কবি সীমাবদ্ধ থাকতে চেয়েছিলেন। এছাড়া অনেকেই জগন্নাথের নাতিদীর্ঘ বন্দনাগানে সীমাবদ্ধ ছিলেন। আবার এই ধারাতেই সম্পূর্ণ মৌলিক ও অভিনব দৃষ্টি নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন কবি বিশ্বম্ভর দাস। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে তাঁর ‘জগন্নাথমঙ্গল’ই বাঙালির জগন্নাথপ্রীতির প্রধান সহায়ক হয়ে উঠেছিল। অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে বিংশ শতাব্দীর প্রথম দুই দশক পর্যন্ত বাংলা জগন্নাথ-সাহিত্যের ধারার বিশ্বম্ভর দাসের কাব্যের একাধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বিশ্বম্ভর দাসের কাব্যের এই দীর্ঘ যাত্রাপথে বিশ্বম্ভর দাসের ‘জগন্নাথমঙ্গল’-এর পূর্ববর্তী, সমসাময়িক ও অব্যবহিত পরবর্তী জগন্নাথ-সাহিত্য অচিরেই জনপ্রিয়তার অভাবে দুর্লভ হয়ে উঠেছিল।
বর্তমানে সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীর অধিকাংশ জগন্নাথ-সাহিত্যই লুপ্ত হয়ে গেছে। শুধুমাত্র কবির নাম ও কাব্যের নাম নথিবদ্ধ রয়েছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে। অবশ্য এই ধারায় ঊনবিংশ শতাব্দীর একমাত্র জগন্নাথকথার কবি রাধামাধব ঘোষের ‘বৃহৎ জগন্নাথলীলা সারাবলী’ কাব্য বিংশ শতাব্দীতে মুদ্রিত রূপ পাওয়ার পরে পাঠকের প্রীতি লাভ করেছিল।
বিংশ শতাব্দীই বাংলার জগন্নাথ-সাহিত্যের সমৃদ্ধির সময়পর্ব। বিশ্বম্ভর দাসের ‘জগন্নাথমঙ্গল’-এর মুদ্রিত রূপ দিয়ে তৎকালীন কলকাতার হিন্দু প্রেস ঊনবিংশ শতাব্দীতে যথেষ্ট লাভবান হয়েছিল। হিন্দু প্রেস ‘জগন্নাথমঙ্গল’ ছাপা বন্ধ করলে অচিরেই এই কাব্যের স্বত্ব অর্জন করেছিল গুপ্ত প্রেশ [যৎ]। গুপ্ত প্রেশের প্রচেষ্টায় ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে ‘জগন্নাথমঙ্গল’ নবকলেবর লাভ করেছিল। এরপরে বিশ্বম্ভর দাসের জনপ্রিয়তা আরও বৃদ্ধি পেলে বাংলার জগন্নাথ-সাহিত্যে জোয়ার তৈরি হয়েছিল।
বাংলা গদ্যে যোগেন্দ্রনাথ রায়, হৃদয়চন্দ্র লাহা, নগেন্দ্রনাথ মিত্র, রামসহায় অবষি, গোপালচন্দ্র আচার্য চৌধুরী, গুরুদাস সরকার, চুনীলাল বসু, সুন্দরানন্দ বিদ্যাবিনোদ, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, স্বামী শ্রীল প্রভুপাদ, সুশীল মুখোপাধ্যায়, কিশোর রায় গোস্বামী, বিনয়কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়, ভক্তি পুরুষোত্তম স্বামী, দুলেন্দ্র ভৌমিক, অসিতকৃষ্ণ ব্রহ্মচারী, পীতবাস রাউত রায়, অসিতবরণ চক্রবর্তী, শেখ মকবুল ইসলাম, সুমন গুপ্ত, অনিতা বসু প্রমুখ বাংলা জগন্নাথ-সাহিত্যের ধারাবাহিকতা সচল রেখেছেন। শুধু গদ্যেই নয় নাট্যধারায় জ্যোতিষ্চন্দ্র বিশ্বাস ও তমালকৃষ্ণ গোস্বামী জগন্নাথ-কথার রূপদান করেছেন। ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে সাগর ফিল্ম এক্সচেঞ্জ নিবেদন করেছে ‘শ্রীজগন্নাথ’ সিনেমা। এছাড়াও বঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা লৌকিক পালা ও গানে বাঙালির জগন্নাথচেতনার স্রোত উন্মুক্ত হয়েছে। বাংলা জগন্নাথ-সাহিত্যের এই প্রবাহ আজও বহমান।
অভিজিৎ পাল | Avijit Pal
Mangal Kabya Katha | Best Bengali Puran Katha
Lord Jagannath and Chaitanya Mahaprabhu | Best Article
Secrets of Lord Jagannath | Shabdodweep Best Article
God Vishwakarma History | Shabdodweep Best Article
Jagannath biography and literature wikipedia | jagannath temple | story of lord jagannath pdf | lord jagannath is which god | lord jagannath mother name | puri jagannath temple idols story | 1000 names of lord jagannath | lord jagannath father mother name | Article – Jagannath Biography and Literature | Lord Jagannatha | story of lord jagannath pdf | lord jagannath is which god | jagannath story | puri jagannath temple idols story | lord jagannath mother name | jagannath puri 3 god name | jagannath god name
Jagannath biography and literature in pdf | Video – Jagannath biography and literature | Jagannath Sahitya | Jagannath Biography | Jagannath sahitya wikipedia | Jagannath biography and literature Ebook | Trending article – Jagannath biography and literature | Lord Jagannath | Song of Lord Jagannath Prayer | Prayer of Jagannath | Arati song of Jagannath | Archive – Jagannath biography and literature
What is Jagannath Sanskruti | What is the real story of Jagannath? | Who is the wife of Jagannath? | Whose avatar is Jagannath? | Who are three gods in Jagannath? | Which books are related to Jagannath Puri? | What is the story behind Jagannath? | What is the Speciality of Jagannath? | What is the philosophy of Lord Jagannath?