Interesting Bangla Kobita – Anindya Paul
ক্রন্দসী – অনিন্দ্য পাল
মাটিতে নেমে এসেছে আকাশটা
ফিসফিস শব্দে বলছে আত্মারা
তীক্ষ্ণ নীলের পিছনে মিশেছে
প্রবাল-কালো সমুদ্র।
অন্য এক প্রবাহ ছায়াগ্রহে
চোরাস্রোত
অশান্ত নিশাচর গিলে নিচ্ছে
ডিজিটাল আলো
কখন কোথায় অন্ধকারের গাঢ় শরীরে
দ্রব হচ্ছে অভুক্ত মন
সমুদ্র পাত্রে সে সব শৈল্পিক তরল।
আকাশের চোঁয়ানো নীলের পিছনে
জমে থাকা স্তূপ খিদে
কিছুই চায় না ওরা তবু ওদের চোষকে
নির্জলা নিরক্ত মাটি।
মৃতদের আত্মা অথবা আত্মার মৃতদেহ
শুকনো রক্তে সবারই অঙ্কুরিত হয় জন্ম
জীবনের কোলাহল ধুয়ে নামে নার্সিসাস
আকাশ উপগত হয় মাটির বীজতলা ফ্রেমে…
প্রপাত – অনিন্দ্য পাল
ঝুলন্ত একফালি সাঁকো
নিচে অতলান্ত বিক্ষুব্ধ তরঙ্গ
প্রতি ঢেউয়ে অনন্ত খিদে
শুকনো মাটির মত নিঃশেষ তৃষ্ণা
জ্বলন্ত চিতার মত মন নিয়ে বসে আছে
সময় নদীর পাড়ে
আশা আকাঙ্ক্ষা পরমাণুর মত ভঙ্গুর হয়ে
কয়েক ফোঁটা নেমে আসে অবাধ
মৃত্যুর পিছু পিছু
কবে কখন খানিকটা উচ্ছিষ্ট ভালোবাসা
মিশেছিল উদ্বেল বুকে
এখন তার টগবগে ফুটে ওঠার পালা
যদিও,
তন্বী জ্যোৎস্না সান্ত্বনা দেয়
কপালে ছুঁয়ে দেয় একাদশীর চাঁদ
তবু পড়ে যাই
ঝুলন্ত সেতুর নির্মম ক্লিভেজ থেকে
পড়ে যাই
চিরন্তন সুখ ঝলসানো অমৃত-গহ্বরে।
ঘর – অনিন্দ্য পাল
এক অন্যরকম দখলদারি
দেওয়ালের রুক্ষ বুকের শাসানি
ঠাস বুননের কংক্রিট চাদর জড়িয়ে
জীবনক্ষয়
একলা এবং কয়েকজন…
আকাশের টালি ঢেকেছে তবু
নির্মোকের জন্ম হয় বীজহীন জরায়ুতে
সেখানে সুখ ঝাঁপিয়ে নামে
কড়িকাঠে দোলা খায় প্রিয়তম নাভি
বৃন্ত উৎসুক হয়ে
চেয়ে থাকে খিদেতুর কৃষ্ণগহ্বরের চোখে
সহোদর সহোদরা
কচিপাতা ফুল ফল এবং অপ্রকাশিত
শাখা-প্রশাখা
সবাই জমাট বেঁধে পড়ে থাকে নির্মিয়মান
ঠিকানার বস্তিগহ্বরে …
বাবুই পাখির বাসা – অনিন্দ্য পাল
ছোট্ট সে পাখি ঘর বাঁধে খড়কুটো সম্বল
স্নেহ আর প্রেম দিয়ে বাঁধে- পরপর গিঁট
দিন মজুরের মত শ্রম দিয়ে – গেঁথে তোলে
টুপটাপ ঝরা সুখ ভরা শান্তির নীড়
হিংসে হয় বড় ওই পাখিটারে রাজসুখ আছে
লেগে মুখে পিছুটান নেই দলাদলি নেই
বেঁচে আছে ভালোবাসা ভরা বুকে
আমাদেরও বাসা আছে ঘর আছে ছোট বড়
আরও কত আছে গন্ধ জৌলুস
তবু যেন সব নিস্পৃহ যেন সব জড়সড়
হয়ত কোথাও আনাচে কানাচে সুখ লেগে আছে
এক ফোঁটা
আঁচড়ে কামড়ে ক্ষতবিক্ষত সবাই খুঁজছি সেটা
কেউ পায় কেউ ভাবে আছে তার কাছে
আর বাকি যারা নখ-দাঁত দিয়ে বিক্ষত দেহে বাঁচে
বাসা যার নেই তার সুখ ছক কষে
মুখোশটা খুলে যার সুখ আছে তার চোখে তাণ্ডব নাচে
বাবুইয়ের বাসা
ছোট্ট কুঠুরি সুখ ভরা আছে তাতে
আমাদের বাসা
অতি উত্তম খাসা
ডুব দেয় চোরাবালি মাখা রাতে।
স্মৃতিতে – অনিন্দ্য পাল
সেই সন্ধ্যা
আজও মনের কোথাও উঁকি দেয়
জানালা দরজা খুলে দেখি
দিব্যি শুকনো পাতার উপর মচমচিয়ে
হেঁটে যাচ্ছে বিকেলের শেষ আলো
তারপর
তুমি এলে
আর এল সুতো ছেঁড়ার মুহূর্ত
এক পলকে নিভে গেল সব আকাশ-প্রদীপ
তুমি এলে
আর এল সেই বাঁধভাঙা যন্ত্রণা
পাঁজরে মিষ্টি আগুন জ্বেলে দিলে
নিরলস অপেক্ষায় রেখে চলে গেলে অন্ধকারের
চিলেকোঠায়
তুমি এসেছিলে
সেই সন্ধ্যা এসেছিল
আর এখন রোজ আসে মাপজোক করে
একমুঠো পাথরের মত স্মৃতি …
পোষাক – অনিন্দ্য পাল
পুড়ে যাওয়া বস্তির ছাই ঝেড়ে ফেলার চেয়েও সহজ
পোষাক খুলে ফেলা
খুনের পর শান্ত নিথর শবদেহের পরিচয় এড়িয়ে যাওয়ার চেয়েও সহজ নিজেকে নগ্ন করা
অথবা এক কথায়, সত্যি যতটুকু আমি, তার গায়ে কোন স্টিকার চাই না এতটুকু…
পোষাক থেকে তুলে নিই যদি আড়ালের আত্মাকে
তবে পড়ে থাকে খানিকটা সুন্দর সত্য আর প্রকৃতি
প্রকৃতির গন্ধে মাতাল হতে পারি যাপনবেলায় তাই
পোষাক খুলে ফেলি লজ্জাহীন সরীসৃপের মত
গভীর গ্রন্থিতে লুকিয়ে আছে দশ লক্ষ বছর পুরানো অপমানের ক্ষত,
পোষাক খুলে ফেলা রাত সাঁতরে দিনে ফেরার মত…
একুশেই আশা – অনিন্দ্য পাল
বাঙালি,
মনে পড়ে বাহান্নর সেই দুপুর ২১ শে ফেব্রুয়ারি
নিয়েছিল প্রাণ চার তাজা জান শাসকের তরবারি
বাতাস আর জল, মৃত্যু সম্বল কেঁদেছিল মা-মাটি
জীবন দিয়ে আগলেছিল ওরা ভাষার বসতবাটি।
বরকত রফিক জব্বার সালাম- তরতাজা গেল চলে
ভাষা আর মা উভয় সমান, প্রাণ দিয়ে গেল বলে
বাংলা আমার স্বপ্নের রং, সুখ দুঃখের বাঁধা সুর
রক্তের ফোঁটা শুষেছিল মাটি নাজিমুদ্দিন অসুর
মরণ পেরিয়ে লড়েছিল ওরা গুলির আঘাত ভুলে
সারা পৃথিবী তাই আজও গায় জয়গান প্রাণ খুলে।
বাংলা আমার মায়ের ওম্, হৃদয়ের ভালোবাসা
এ ভাষায় সুখ ভরে থাকে বুক প্রেম আছে শুধু ঠাসা
বাঁচাতে ভাষা, একুশ’ই আশা এস ধরি হাতে হাত
একদিন নয়, জীবন-মরণে মুছি সব সংঘাত
বিদ্বানজন, হোক সাধারণ সবাই বাঙালি জাতি
ওপার- এপার, এস পারাপার বাংলার প্রেমে মাতি।
কাঁদছে কেউ – অনিন্দ্য পাল
কেউ একজন কাঁদছে
শুনতে পাচ্ছ ?
কেউ একজন কাঁদছে…
রাতের পৃথিবী জেগে আছে ইনসোমনিয়া
রুগীর মত
কান পেতে শুনছে অক্ষিগোলক
কেউ একজন কাঁদছে…
শহুরে ঈগল একচোখে চাঁদ দেখে
অন্যচোখে খোঁজে মৃত্যু–
এঁকে দিয়ে গেছে সেইসব হৃদয়
অন্যমনস্কতায় শুনে ফেলে
কে যেন কাঁদছে,
কেউ একজন কাঁদছে…
চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে
সৈকত অবসর ভেঙে নগ্ন দেহে ডুব দেয় চোখসরোবরে
স্বপ্ন বন্ধ্যা হয় সময়ের গাঁটছড়া বাঁধা হলে,
পৃথিবীর চিঠি বয়ে নিয়ে যায় আদিম ইথার
অসংখ্য কান্না ভূমিষ্ঠ হয় গান্ধারীর কলসী থেকে
শতাব্দী পেরিয়ে চৌকাঠে পা রাখে সদ্যজাত
ফোটন
প্রপিতামহ সূর্য থমকে দাঁড়ায় অবসরে
দহন-শরীর ভিজে ওঠে স্যাঁতসেঁতে উষ্ণতায়
কেউ কাঁদছে
কাঁদছে কেউ
কেউ একজন কাঁদছে, মহাশূন্যের গভীরে।
বাইরের দিকে তাকিয়ে – অনিন্দ্য পাল
কালো কাচের ভিতর থেকে দেখলে সুন্দর লাগে
বাইরেটা,
যেখানে আমি নেই
অথচ কতগুলো কল্পনা ঠোঁটপালিশ মেখে করতলে
ঢেকেছে রোদ্দুর
আমিও রোদ্দুর ভালোবাসি না
এমনকি ছায়াও ভালো লাগে না আমার
কারণ, ছায়া কারো না কারো গর্ভজাত হয়ে থাকে
কালো কাচের ভিতর থেকে অন্ধকার দেখতে
ভালো লাগে আমার
অন্ধকার লুকোচুরি খেলতে পারে না
আর আমি লুকিয়ে পড়ি ওরই অসহায় ক্লিভেজে
তারপর খুঁটিয়ে দেখে নিতে থাকি
সমস্ত মসৃণ আর ঢালু ইচ্ছাবাগান এবং
পরবর্তী তুষার যুগের আগে অব্দি নিয়োগ করি নিজেকে প্রশ্নাতীত মালির পদে…
কুয়োতলার ছলাৎ – অনিন্দ্য পাল
জলের বালতি নেমে গেলে ভেসে উঠত
মনে হত যেন ভেঙেচুরে যাচ্ছে প্রত্নহৃদয়
আশ্চর্য এক আলো চোখ নাচিয়ে নেমে যেত
আবার ওই জলগহ্বরে
জলের সঙ্গে কানাকানি করে বুঝতাম
কোথাও একটা মিল আছে আমাদের
স্রোত আর মোহনা দুটোই দেখিনি কখনও
কোনোদিন নামিনি কোনও পর্বতের বুক ছুঁয়ে
শুধু কানের গুহায় ছলাৎ এঁকে দিয়েছে
অচেনা অজানা কোনও জন্মশত্রু
আর প্রতি সূর্যোদয় আমাদের মনে করায়
কপিকল যাদের দেবতা
সেই শহরের সবচেয়ে বড় মন্দির আমার
কুয়োতলা…
রাতের মায়া – অনিন্দ্য পাল
রাস্তা বেঁকেছে যেখানে
শুয়ে আছে আধভাঙা বাতিল ধনুক
নত হয়ে আছে নুয়ে পড়া পাথুরে কাঁধ
পিছল ঘামের কান্না, যে শুনবে শুনুক।
দূর পশ্চিমে কোথাও
সদর খুলে দেয় বিষণ্ণ সন্ধ্যার সুন্দরী
এবার প্রবাহ আসবে নেমে
চল, আমরা জীবনের পথ ধরি।
নিকষ সুতোর ঠাস বুননের কালো
এত মায়া এত সৃষ্টি কোথায় পেল
কোথায় খুঁজতে হবে তাকে বাঁচার বিশ্বকর্মা
রাস্তার মোড়ে উৎসব ঘনিয়ে এল।
ধনী এবং গরীব – অনিন্দ্য পাল
ধনী পেট বেশী খেলে বেড়ে যায় মেদ
পাকস্থলী উথলে ওঠে ভিয়েনের দুধের মত
প্রেসক্রিপশনে ফুটে ওঠে সুগার, কোলেস্টেরল
অবাধ্য রক্তচাপ ভুলে যায় বিভাজন বিভেদ
গরীবের খিদে পেট মুঠিও আলগা থাকে
ভরে না ইচ্ছেথলি উপাদেয় খাবার দানায়
মহান নিয়ম সব ভেঙেচুরে পড়ে গরীবের ঘরে
অস্তিত্ব ক্রমশঃ ঝাঁপ দেয় নিজের ভিতরে
সেখানে শুধু বিসর্জন শেষে তুলে ফেলে দেওয়া
বাখারি কঙ্কাল,
ঈশ্বরও নেই মানুষও নেই
জীবনের পাটাতনে ওরা শুধু বিনি সুতোর মায়াজাল।
এখন মধ্যরাত, তুমি এলে – অনিন্দ্য পাল
এমন সুন্দর দেখতে চাই না এই অর্ধেক জীবনে
তবু তুমি এলে।
মৎস্যকন্যারা চলে গেছে এই পৃথিবী থেকে অন্য কোন পরা-জগতের দিকে,
তুমি কি ঠাঁই পাওনি ফিরতি দৈবরথে?
এত আগুন আমি রাখতে পারি না পাঁজরকুটিরে
বুকের ভিতর লুকিয়ে রেখেছ যে মাতাল স্বপ্ন
দেখার মত নষ্টঘুম আর নেই রাত এখন শেষ প্রহরে,
তবু আত্মার ঘর থেকে পাঠিয়েছি লোভ আর খিদে
যদি দাও তুমি দিতে পার হেমলক গরল অথবা বিদায়ের আগে ছুঁয়ে যেও স্বর্গীয় ঠোঁট দিয়ে আমার দহনশৃঙ্গ,
তারপর না হয় আমি তলিয়ে যাব ক্ষীরোদ সাগরে
তোমার অমৃতরস নেব গণ্ডূষে পান করে…
সন্ন্যাসীর মত – অনিন্দ্য পাল
সন্ন্যাসী তুমি চলে যাও
এই নিরর্থক আত্মহত্যার দেশ থেকে
চলে যাও এই রোদ্দুরের ঢোক গিলে অন্ধকারের
মাটি লেপা জমিজিরেত থেকে…
সন্ন্যাসী, তোমার জন্য এখনো জমানো আছে
পাঁচ সহস্র বছর পুরানো উইঢিপি
এবং সততার বড়ি,
তুমি চলে যাও সেই মেঘহীন আকাশ-দরবারে
ময়ূরের নীল চোখ চেয়ে আছে তোমার দিকেই
মুষ্টি ভরে নিয়ে যেও সেই ইন্দ্রসভায়
ধাতুময় আশ্বাস দানা …
অতঃপর,
তোমার কৌপীনখানি রেখে যেও
সময়ের যাদুঘরে।
অঙ্গীকার – অনিন্দ্য পাল
ঘরের মধ্যে ঘর নেই আমার নেই শীতলপাটি বিছানোর নিকানো চিলতেখানেক পৃথিবী
ঘরের বাইরে কোন ঘর নেই আমার নেই গোপন
পুকুর বা ডুবজল ঠিকানা
যতদিন অন্ধকার তার ঠোঁটের রঙ এঁকে দেবে
আমার পিপাসায়
যতদিন সৌর-শ্রমিকেরা ডেকে দিয়ে যাবে
সবুজ উষ্ণতায়
যতদিন লোনাজল লবণকে বঞ্চনা করে চোখ
ধুয়ে দিয়ে যাবে সত্য-সাহসে
ততদিন,
ততদিন আমি এই চুম্বনচিহ্ন বয়ে নিয়ে হেঁটে যাবো
শেষ নিঃশ্বাসের দিকে …
মুখোশ – অনিন্দ্য পাল
মুখোশ ঘুরে বেড়াচ্ছে চারদিকে
রাস্তা, ঘাট, বাজার-দোকান এবং বাড়ির উঠোন
কিংবা ব্যালকনিতে,
মুখোশ হেঁটে চলে যাচ্ছে সামনে দিয়ে
একের পর এক রাস্তার এপাশ থেকে ওপাশ
মুখ বদল হচ্ছে ত্রিমাত্রিক
ফাঁপা টায়ার-টিউবের মত অক্ষদণ্ডে বনবন
মুখোশের শাসনে ভয় গণতান্ত্রিক…
সমুদ্রের কপালে ঘাম, ভেজা শরীর
মুঘল বর্শার মত ঢেউ চিরে দেয় বালির গর্ভাশয়
একে একে সমস্ত ক্ষত থেকে গজিয়ে ওঠে ষড়যন্ত্র
এবং প্রকৃতির খেয়াল
দেহগত লবণ মিশে যায় ঢেকে রাখা সূত্রসমূহে
ভালোবাসা আদর জমা হয় পৃথিবীর রোমকূপে
সবুজ হয়ে ওঠে মা এর দেহপট,
মুখোশ জমে থাকা পাতাল-গহ্বরে গনগনে দহন
চুল্লী নিভে গেলেও–
ঐশ্বরিক আলো ছড়িয়ে পড়ে অশরীরী আলপথে…
শবের স্নান এবং – অনিন্দ্য পাল
গঙ্গার জলে ভেসে চলে যাবো হয়ত
সেই সব মৃতদেহের ভাই বা বন্ধু হয়ে
যাদের শরীরে রক্ত নেই এই এতটুকু
যা কিছু আছে, যা কিছু ছিল সেসব
সময়ের নির্বিচারে লেখা রঙ্গ-তামাশা
যদি বেঁচে থাকি এই মৃত্যুতে মিশে
এই শব দেহের বাঁধ পেরিয়ে যাই যদি
তবুও কি সে ‘বাঁচা’ হবে? জীবনের!
এত নেই! আর এত আছে! হিসেবে
মিলছে না! হে ঈশ্বর! এখনও বধির?
এ চিতার ধোঁয়া কি অনন্ত! এই মেঘ
এই বৃষ্টিতে তবে মিশে আছে সেই সব
বায়বীয় শব আর হাহাকার চিৎকার
আর মিশে আছে শতাব্দীর অভিশাপ
মিশে আছে মুনাফা আর ক্ষমতার পাপ
তবুও আমাদের আনন্দ যাপন আর
নিজের ছবির সামনে নতজানু প্রেম
বন্ধ দরজার বাইরে এবং ভিতরে
ক্রমবৃদ্ধমান …
পৌরাণিকী – অনিন্দ্য পাল
ধূসর পুঁথিপটে এ কোন শব্দ-ছলনা ?
পাহাড় নেই, নদী নেই, নেই মাটির গন্ধ !
এ রাজত্বে রাম স্বয়ং সিংহাসনে
কৌশল্যাপতি বনবাসে যান আজীবন
অসংখ্য সীতা মিছিলে নামে
পিছু ধাওয়া করে রামের মুখোশে
দশানন রাবণ
সমস্ত গোপন উঠে এসে থিতু হয়েছে
রামের পাদুকায়
মাটির ফাটল বেয়ে আকাল ছুঁয়েছে
নাটক, অভিনয়
তবু পৃথিবীর জঠরে স্থান অকুলান
এবং রাবণের নেই কোন লুকানো মৃত্যুবাণ
ইন্দ্রজিৎ ও অবোধ্য চিরকাল
মেঘের আড়ালে সব জবাব সওয়াল
কালরাত্রির জমানো দুই বরে
কৈকেয়ীরা চায় নিত্য নিয়ম করে
বিভীষণ জন্মাক প্রতি সংসারে
এ রাজপাটে বিষ-রক্তে রজঃস্বলা
আমাদের ভাবীকাল …
নিষিদ্ধের প্রতি – অনিন্দ্য পাল
চলো নির্জন হয়ে যাই
বেগুনী বাতাস তোমাকে মুষ্টি ভরে
পৌঁছে দেবে আমার ভার্চুয়াল টিউলিপ বনে
চলো ডুব দিই সময়ের নৈশব্দে
অনন্ত কুয়োর জলে আমরা দুটো ইন ইয়ং
এক জীবনের জন্য ভুলে যেতে পারি সব প্রতিজ্ঞা
শুধু তোমার মুখে মেখো না রং-চং,
এ বসন্তে তুমি ছুঁয়ে গেছ কাটা ডাল
জানি আবার আসবে ঘুরে শীতকাল
ততদিন যদি ঠাঁই নিই ক্লিভেজে
দেবে কি শান্তি, হবে ঠাঁইনাড়া ইহকাল?
তোমার জন্ম গোলাপ ছেঁচা রসে
সুগন্ধ তোমার আলুথালু গোপন কেশে
আমি পথ ভুল করে তোমার বাগান বাড়ি
সব অন্ধকার রাত্রিতে এসে মেশে …
চলো নির্জন দুজন হয়ে হাঁটি
বৃত্তের আগে আমি তুমি পিছনে তুমি
না থাকে না থাক সামাজিক জীবনভূমি
আমি মিশে যাব, খুলে রেখো সৃষ্টিদুয়ার জমি।
ছায়াপথ অনেক দূরে নয় – অনিন্দ্য পাল
আলোর রং বাদামি হয়ে গেলে আমরা নিজেদের চারদিকে পাক খাই
অন্ধকার এক বুক তুলোর নরম নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে আমরা ধীরে ধীরে নেমে যাই রহস্য সমুদ্রে
একে একে বদল হয় প্রতিবেশীর এবং আখাম্বা ল্যাম্পপোস্টে যোগ হয় নতুন সাশ্রয়
তারপরও যদি আকাশের আলো না পৌঁছায় ঘরে, তবে বলা হবে নক্ষত্র মৃত্যুর কারণ রাতের বারো ঘন্টা
তাও যদি হারিয়ে ফেল ঠিকানা ভুলে যাও শিকড়ের মাটি
ইতিহাসের চশমাটা খুলে দেখো, অন্ধকার তোমার জাতভাই আর ছায়াপথও খুব বেশি দূরে নয় …
“হৃদয়” এর কথা – অনিন্দ্য পাল
অনেক শব্দ পুরোনো ছাতার মত, ডাঁই স্তূপের মধ্যেও বেঁচে থাকে ভাঙা শিক উঁচিয়ে
যেমন মনে হয় “হৃদয়”, লিখতে চাই যতবার
কবিতার ঈশ্বর ছেঁটে ফেলে বুড়ো আঙুলের নখে
যতবার ভাবি “হৃদয়” এর ঘোমটা খুলে দেখবো
অ্যানালগ না ডিজিট্যাল
গেরুয়া, সবুজ, হলুদ কমলা না লাল!
ততবার–
বিদ্যুৎ এর বাকি পড়া বিলের শাস্তি দিতে
গভীর ব্ল্যাকআউট
তবে কি অগ্রজ বা প্রপিতামহের মত লিখবো না
“হৃদয়ের কথা?”
লিখবো না লবণাম্বু কষ্টের কথা
লিখবো না ধারালো চোখে শরীর থেকে
চেঁছে তুলে নেওয়া হাতছাড়া প্রেমের রূপকথা!
তবে কি আর কোন কবিতায় লিখবো না
“হৃদয়” এর কথা?
তবে বলে দাও হৃদয় অবলিক হতে পারে কোন শব্দ
অথবা নাই যদি হয় কোন তীব্র উচ্চারণ
উপড়ে ফেলি তবে ‘সোনার কাঠি, রুপোর কাঠি’
পাঁজরের কৌটো থেকে
ভরে দিই তারপর সেই শূন্যস্থানে
শব্দপ্লাস্টিক
রতিসুখও এখন মেলে বাজার থেকে কেনা
প্লাস্টিক উপচারে
“হৃদয়” লিখবো না তবে
ওসব বালাই রেখে লাভ নেই
বিকল্প খুঁজে নিতে হবে তুখোড় প্যাকেজিংয়ে
কবিতার কশেরুকায় দু-ফোঁটা ‘বিখ্যাত’ আঠা
নিশ্চয়ই সেঁটে দেবে বিকল্প লাব-ডাব …
দুঃখ অথবা মানুষ – অনিন্দ্য পাল
দুঃখেরও শরীর আছে
আর শরীর থাকলেই মন থাকবে
মৃত বা জীবিত
দুঃখ একা শুয়ে আছে
আকাশের ঝুরি ধরে ঝুলে আছে
অন্ধকারের দেবতা
ঘরপোড়া জোনাকি বয়ে আনছে আলো
আশ্চর্য উর্বরতায় পুঁতে দিচ্ছে
ভালোবাসার বীজ
দুঃখেরও খিদে পায়
শরীর, মন, খিদে নিয়ে দুঃখ মানুষ হয়ে ওঠে
অথবা মানুষগুলোই লার্ভা থেকে বেড়ে ওঠে
পূর্ণবয়স্ক দুঃখে।
“আমি”-র জন্য আমি – অনিন্দ্য পাল
আমার জন্য বৃষ্টি হয়ে নেমে আসবো আমি মেঘলা খোলস ছেড়ে
আমার জন্য শুষে নেব সমস্ত অপাপবিদ্ধ জল কুলীন গণ্ডূষে
নিজের তেষ্টা হয়ে ফেটে ফুটে উঠবো গভীর গ্রীষ্মমুখে
আমার জন্যই জন্মাবো আমি হয়ে আত্মরতি সুখে,
সর্বজনীন জীবন বিলিয়ে দিয়ে একলা হয়ে যাবো আমি-র গোপন ঘরে
আমার শ্বদন্তে উপড়ে নিয়ে চোখ নৈবেদ্য দেবো আমার পদতলে
তারপর নীল ধ্বংসের আলোয় স্বহস্তে জ্বেলে দেব নিজের চিতার কাঠ
আমার শেষ চুম্বন এঁকে দিয়ে “আমি”-র শবে শেষ যাপন মুছে দেব মহাকালের মোহনাতে …
তেনাদের ইচ্ছা – অনিন্দ্য পাল
আমার জানা ছিল, আমি অনেক কিছুই জানি না
আমার জানা ছিল না, আমার ভিতরে আছে অনেক আমি এবং তাদের সন্তান সন্ততিরা! জানলেই বা করতাম কী? সব বাবা মা ই তাদের সন্তানদের প্রচণ্ড ভালোবাসে, আমিও।
আমার জানা ছিলো না, ভালোবাসা সব সময় উপরের দিকে ওঠে। অথচ আমার মাথাও তোমাদের মত সব সময় ঘাড়ের উপরেই আছে, এবং আমিও আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আমার সঙ্গে দেখা করে বলি, ” এখনও
ভালো আছি “। আসলে অভ্যাস করি, যদি কোনোদিন দেখা হয় আত্মার সঙ্গে, যাতে চিনে নিতে পারি এক দেখায়। সত্যি কথা বলতে কি, আমার এটাও জানা ছিল না, যে আসলে উপর – নীচ বলতে কিছুই নেই তেমন, সবটাই তেনাদের ইচ্ছা!
রেল – অনিন্দ্য পাল
ইস্পাত ছোঁয় না ইস্পাতের বুক
ইতিহাস ছড়িয়ে আছে টুকরো গ্রানাইটে
সময় হোঁচট খায় প্রোথিত কংক্রিটে
রতিমগ্ন গড়িয়ে চলা উতল ধাতব সুখ।
সমান্তরাল বেড়ে চলা, অশেষ উন্মুখ
গন্তব্য অসীম নয় ফুরাবেই রেল-রুটে
সব শেষে দীর্ঘশ্বাস পরস্পর ছোটে
ইস্পাত নিঃশব্দে কাঁদে, চিরন্তন মূক।
সত্যি যদি জল থাকে ইচ্ছা থাকে মাটি
মৃত্যুবীজও জীবন বোনে শিলার কঠিনে
লালন করে পালন করে বিয়োগান্ত প্রেম
প্লাটফর্ম শেষ করেও দিগন্ত ছুঁয়ে হাঁটি
আরও দূর আরও দূর কোথাও নির্জনে
ইস্পাত প্রাণ পাবে মহাকালের হারেম।
অনিন্দ্য পাল | Anindya Paul
New 18+ Bangla Galpo | বৈশালী পাড়ার প্রতিমারা | Saswata Bose
Bangla Famous Kobita 2023 | কবিতাগুচ্ছ | Talal Uddin
Bangla Caption Kobita 2023 | কবিতাগুচ্ছ | Arati Sen
Kolkata to Kashmir Trip | আবেগের নাম কাশ্মীর | 2023
Bangla Kobita Abritti Songs | Mixed Kobita Bengali Kobita | Sound of bangla kobita lyrics | Sound of bangla kobita in english | Sound of bangla kobita mp3 download | bluetooth bandopadhyay kobita | bratati bandyopadhyay kobita lyrics | bratati bandopadhyay kobita mp3 download | Bangla Kobita Abritti | Best Bangla kobita MP3 Songs | Kobor Bangla Kobita.mp3 | Hits of Bratati Bandopadhyay | Bangla kobita music | Bangla Audio Book | Esho Abritti Kori | Bengali Recitation | Kobita Lyrics Poetry In Bengali | Shabdodweep Web Magazine | High Challenger | Shabdodweep Founder | Sabuj Basinda | Bengali Poetry | Bangla kobita | Interesting Bangla Kobita 2024 | Poetry Collection | Book Fair 2024 | bengali poetry | bengali poetry books
Interesting Bangla Kobita pdf | Bengali Poem Lines for Caption | bangla kobita | poetry collection books | poetry collections for beginners | poetry collection online | poetry collection in urdu | Interesting Bangla Kobita Ebook | poetry collection clothing | new poetry | new poetry 2023 | new poetry in hindi | new poetry in english | new poetry books | new poetry sad | new poems | new poems in english | new poems in hindi | Bengali Poem Lines for Caption in pdf | new poems in urdu | bangla poets | indian poetry | indian poetry in english | indian poetry in urdu | indian poems | indian poems about life | indian poems about love | indian poems about death | Best Bengali Poetry Folder | Best Bengali Poetry Folder 2023
story writing competition india | story competition | poetry competition | poetry competitions australia 2023 | poetry competitions uk | poetry competitions for students | poetry competitions ireland | Bengali Poem Lines for Caption crossword | writing competition | writing competition malaysia | Bengali Poem Lines for Caption in mp3 | writing competition hong kong | writing competition game | Best Bengali Poetry Folder pdf | Trending Interesting Bangla Kobita | Interesting Bangla Kobita – video | Shabdodweep Writer | bee poem | poem about self love | story poem | poetry angel | narrative poetry examples | poetry reading near me | prose poetry examples | elegy poem | poetry reading | poetry websites | protest poetry | prayer poem | emotional poetry | spoken word poetry | poem about god | percy shelley poems | jane hirshfield
spiritual poems | graveyard poets | chapbook | poems about life | poems to read | English Literature | Interesting Bangla Kobita examples | poems about life and love | elizabeth bishop poems | poems about women | sister poems that make you cry | famous quotes from literature and poetry | mothers day poems from daughter | poem about community | Interesting Bangla Kobita Ranking | positive Best Bangla Kobita Collection | Bengali Poem Lines for Caption about life struggles | toni morrison poems | good bones poem | google poem | funny poems for adults | inspirational poems about life | friendship poem in english | paul laurence dunbar poems | freedom poem | sad poetry about life | freedom poem | sad poetry about life
Natun Bangla Kabita 2023 | Kobita Bangla Lyrics 2023 book | New Interesting Bangla Kobita | Writer – Interesting Bangla Kobita | Top Writer – Natun Bangla Kabita 2023 | Top poet – Natun Bangla Kabita 2023 | Poet list – Kobita Bangla Lyrics 2023 | Archive – Interesting Bangla Kobita | Bangla Full Kobita | Online Full Kobita Bangla 2023 | Full Bangla Kobita PDF | New Bangla Kabita Collection | Shabdodweep Online Poetry Story | Poetry Video Collection | Audio Poetry Collection | Bangla Kobitar Collection in mp3 | Bangla Kobitar collection in pdf | Indian Bengali poetry store | Bangla Kobita Archive | All best bengali poetry | Indian Interesting Bangla Kobita | Best Poems of Modern Bengali Poets | Best Collection of Bengali Poetry in pdf | Bengali Poetry Libray in pdf
Autograph of Bengali Poetry | India’s Best Bengali Writer | Shabdodweep Full Bengali Poetry Book | Bengali Poetry Book in Google Bookstore | Google Bengali Poetry Book | Shabdodweep World Web Magazine | Shabdodweep International Magazine | Top Poems of Modern Bengali Poets | Bangla Kobita in Live | Live Interesting Bangla Kobita | Bengali Poetry Recitation Studio | Sabuj Basinda Studio for Bengali Poetry | Bangla Kobita Sankalan 2023 | Shabdodweep Kabita Sankalan | New Bengali Poetry Memory | History of Bengali Poetry | History of Bangla Kobita | Documentary film of Bengali Poetry | Youtube Poetry Video | Best Bangla Kobitar Live Video
Live Video Shabdodweep | Bengali to English Poetry | English to Bengali Poetry | Bengali Literature | Full Bengali Life of Poetry | Bangla Kobita Ghar | Online Kabita Archive Library | New Bengali Poetry House | Full Bengali Poetry Collections PDF | Library of Bangla Kobita | Bengali Poetry and Story | Bengali Poetry Writing Competition | World Record of Bengali Poetry Writing | Peaceful Poetry | Online High Trend Bangla Kobita Selection | High Trend Bangla Kobita translation in english | High Trend Bangla Kobita | High Trend Bangla Kobita for instagram | romantic bengali poem lines | bengali short poem lyrics