শিবপ্রসাদ পুরকায়স্থ – সূচিপত্র [Bengali Travel Story]
গ্যাংটক ভ্রমণ : আনন্দে ও বিড়ম্বনায় – শিবপ্রসাদ পুরকায়স্থ [Gangtok Travel Attraction]
কাঁটামাছে যেমন বাড়তি স্বাদ থাকে। তেমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে, পাহাড়ের গা ঘেঁষা পথের প্রতি বাঁকে বাঁকে বিপদের ইঙ্গিত উপেক্ষা করে এগিয়ে যেতে হয়। তা না হলে সবকিছুই কল্পনায় থেকে যায়। এবার বলি এতো কিছুর ভূমিকার প্রয়োজন কেন হলো বা কীসের জন্য এই গৌরচন্দ্রিকা। আসলে আমরা সস্ত্রীক বেড়াতে গিয়েছিলাম। অনেক ভ্রমণপিপাসুর অভিজ্ঞতায়, এমন পাহাড়ে ভ্রমণে যাওয়া তাদের কাছে নস্যি। আমরা আমাদের প্রথম পাহাড় ভ্রমণ এতটা হালকা করে ভাবতে পারিনি। পরে কী হয়েছিল আর বোঝতে হবেনা। এখন সেই ভূমিকায় থেকে গেলাম,কোথায় চলেছি বলে ফেলি। ভ্রমণের মূল কেন্দ্রবিন্দু গ্যাংটক থেকে বাবা পাহাড়। সিকিমের রাজধানী গ্যাংটক। ওখান থেকে দার্জিলিং ঘুরে বাড়িতে ফেরা। ওই সময় ওখানকার রাজনৈতিক হিংসাক্তক অস্থিরতার জন্য দার্জিলিং ভ্রমণ সূচি থেকে বাদ পড়ে। তার পরিবর্তে নমো নমো করে জলদা পড়ার জঙ্গল ঘুরিয়ে আনার কথা দিয়ে বাস ছাড়েন।
মাধবপুর থেকে নির্দিষ্ট সময়ের বেশ কিছু পরে বাসটি ছেড়েছিল। বাসের চালক ভীষণ সাবধানী। ভিড় ভাট্টায় গা বাঁচিয়ে, ভ্রমণার্থীদের ধৈর্যচ্যুতিতে ভ্রুক্ষেপ করেননি। যেখানে দুপুর দুটোর সময় পৌঁছানোর কথা সন্ধ্যা সাতটায় পৌঁছালো। শিলিগুড়িতে বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রমের ঘেরার মধ্যে। এই বাস তিন-চারদিন আমাদের জন্য অপেক্ষায় থাকবে। যে কদিন না গ্যাংটক থেকে ফিরছি। অসুবিধায় পড়েছি আমরা। দুটোর সময় যে দুটি ছোট বাস আমাদের প্রত্যেকের জন্য নির্দিষ্ট ছিলো। তারা বলছে আমাদের সময় পার হয়ে গেছে, ভাড়া দাও চলে যাই। পরিচারক মণ্ডলীর কাছে উভয় সংকট। দুপুর থেকে কারো পেটে ভাত নেই। রাঁধুনিরা সঙ্গে আছে সময় পেলে দুটো ডাল ভাত খাইয়ে গাড়িতে তুলতে পারে। কিন্তু, দুপুর থেকে অপেক্ষমাণ ভিনদেশী দুই চালক সহ সঙ্গীরা অতশত বুঝবে না। পথে দেরি হয়েছে এখন তো এসেছি। আমার লোকজন গাড়িতে উঠছে। গাড়ি ছেড়ে দাও, বাড়তি ভাড়ার কথা উঠছে কেন? অগত্যা আমরা গাড়িতে উঠলাম। গাড়ি সমতল ছেড়ে ক্রমশ পাহাড়ি পথে আপন গতিতে চলতে শুর করল।
মিনিট পনেরো পথের দুদিকে ঘরের সারি দেখতে পেলাম । হালকা বৃষ্টির আচ পেতে অসুবিধা হল না। হঠাৎ গাড়ি থেকে গেল। সামনে বিভিন্ন গাড়ি পিঁপড়ের মতো সার বেঁধে দাঁড়িয়ে পড়েছে। জানতে পারলাম লোকজনের মুখে মুখে পাহাড়ের কোথাও ধস নেমেছে। কখন রাস্তা পরিষ্কার হয়ে আবার গাড়ি চলবে কেউ সঠিক করে বলতে পারছে না। হয়তো এক দেড় ঘন্টার মাধ্যমে সমস্যা মিটতে পারে, তা না হলে রাত কাবার। চালকের জিজ্ঞেস করে কিছুই বুঝতে পারছি না। তারা বাংলা ভাষা বোঝে না, তাদের মুখে হিন্দির টান আমরাও বুঝি না। তাদের নির্দিষ্ট মাতৃভাষা আছে, তাদের মধ্যে কথাবার্তায় কোনো অসুবিধা নেই। খান পিনা ঠিক ফাঁক ফোকর বুঝ চালিয়ে নিচ্ছে। পাহাড়ের মানুষেরা এসবে অভ্যস্ত। যখন যানজট ছাড়বে যাবে। অসুবিধা আমাদের মতো যাত্রীদের। সামনে যা দেখতে পাচ্ছি। সরলবর্গীয় গাছের মধ্যে থেকে ঘনঘোর অন্ধকারের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। সম্ভবত মেঘের প্রাদুর্ভাব। পরে জানতে পারলাম ওটাই পাহাড়। ওই ভিতর দিয়ে আঁকাবাঁকা সংকীর্ণ পথ দিয়ে আমাদের বাস যাবে। এই কথা শুনে আমাদের মধ্যে থেকে আটজনের মতো বাস থেকে নেমে গেল। ঘুটঘুটে অন্ধকার বিপদ সংকুল পথে তারা পা বাড়াবে না। বুঝতে দেরি হয়নি, ওরা নাকি দেখে ফেলেছিল। চালকদের সুরাযোগের আমোদ পর্বটি। তৎক্ষণাৎ আমাদের অনেকেই ভেবেছিলাম। পাহাড়ে বেড়াতে আসাটাই তো বিপদ। গলা যখন ঢুকিয়ে দিয়েছি যূপকাষ্ঠে,কপালে যা হওয়া হবে।
পাহাড়ে চলা গড়ির গতি নির্দিষ্ট থাকে। আমাদের গাড়ি সিকিমের আঁকাবাঁকা পথে এগিয়ে চললো। শুরুর পথ এতটা বাঁকা ও সরু এবং পাশে গভীর খাড়াই খাদ ভীষণ ভাবে ভাবিয়ে তুলল। রাতে পাড়ি না দিলেই ভালো হতো। এসব আমাদের মনের কথা। মন আর চোখ একই দিকে বইছে না। দুপাশে লক্ষ্য করলাম, পথের দুপাশে অসংখ্য আলোক বর্তিকা আমাদের চলার পথ নির্দেশিকার কাজ করছে। ক্ষণিকের জন্য মুগ্ধ না হয়ে পারছিলাম না। এই আলোগুলো আমাদের মনে এগিয়ে যাওয়ার ভরসা যোগালো। এই আলোগুলোর রহস্য এমন কিছু নয় গাড়ির আলো পড়লে জ্বলছে মনে হয়। দীর্ঘ পাহাড়ি পথে মাঝে নামার পরে লক্ষ্য করলাম। যেতে যেতে বুঝলাম দুএকটি ছাড়া পথে আর কোনো গাড়ি নেই। আমাদের চালক সুকৌশলে অনেক মালবাহী শকট পেরিয়ে এসেছে। এতে শঙ্কিত হওয়ার তেমন কিছু ছিলনা কারণ প্রথমের তুলনায় প্রশস্ত পথ। হালকা বৃষ্টিতে পথ ভিজে। ঝুলন্ত গাছের পাতা থেকে জল ঝরছে। হঠাৎ এক জায়গা থেকে গাড়ি যাওয়ার সময় ভয় ও আনন্দ দুটোই অনুভব করলাম। পাশে খাদ চোখ বুজিয়ে নিতে পারতাম। কিন্তু উলটো দিকের পাহাড় লাগোয়া আবাসিক ঘরগুলোতে টিমটিমে আলোতে মনে হচ্ছিল, তারা ভরা যে ভাবে আকাশ দেখি তারই প্রতিচ্ছবি। সত্যি দুচোখ ভরে দেখার মতো দৃশ্য। যা জীবনে প্রথম দেখলাম।
একসময় রাত সাড়ে তিনটার সময় গ্যাংটকে পৌঁছলাম। যেখানে বাস দাঁড়াল সামনে সিনেমা হল। আমাদের মালপত্র নিয়ে বিরাট বিল্ডিং-এর সামনে দাঁড়ালাম। আমাদের আরো একটি বাস আদা ঘণ্টা আগেই পৌঁছে গিয়েছে। স্বাভাবিক কারণে ভাবতে পারি। তারা হোটেলে বিশ্রাম নিচ্ছে এটিই নিশ্চিত। আমাদের গাড়ি বিলম্বে ছাড়ার কারণ ওই যে আটজন জীবনের ঝুঁকি নিতে চাননি। শিলিগুড়িতে থেকে যাবে না আমাদের বাসে আসবেন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বিলম্বের কারণে। আমাদের বাসের চালকগোষ্ঠির একজন ফোন কলে জানতে চাইলেন ওই বাসটি কোথায়। যেখানেই থাক সিনেমা হলের কাছে চলে আসতে বলল। আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি। প্রথম আমরা বুঝতেই পারিনি দাঁড়িয়ে থাকা জায়গাটি সিনেমা হল। আর ভালো করে দেখে বোঝার কথাও নয়। পেটে ভাত নেই কোথায় তুলবি তোল বাবা। অন্তত চোখের পাতা দুটো এক করি।
দুটি মিনি বাসের সহযাত্রীরা একত্রিত হলে পরিচালকদের থেকে নির্দেশ এলো। সামনের পাথুরে পোটে ভেঙে ওপরে ওঠার। ওঠা শুরু করে আর শেষ হয়না। উঠছি তো উঠছি। দেখতে দেখতে গেলাম, দুই ধারে নানা বিদেশি নামের সাটার ফেলা দোকান। পেছনে দশ বারো তলার মতো উপরে উঠে এসেছি। আরো উঠতে হবে। মনে হলো রাবণের অসম্পূর্ণ স্বর্গে যাওয়ার সিঁড়ি। যখন শেষ ধাপে পৌঁছলাম এবং একটু ঘুরে তাকালাম ওরে বাব্বা এতো স্বর্গোদ্যান। আলোক মালায় ঝলমল করছে। বড়ো বড়ো টবে বাহারি গাছ সাজিয়ে রাখা। দৃষ্টিনন্দন অট্টালিকা সারি। মুহূর্তের মধ্যে যেন সবরকম কষ্ট ভুলিয়ে দিল। ভেবেছিলাম এরই মধ্যে কোথাও ঠাঁই হবে। এমন বদ্ধমূল ধারণা মনের মধ্যে জাঁকিয়ে বসে ছিলো। এমন সময় কানে এলো পাশের সরু পথ দিয়ে উপরে এগিয়ে যাওয়া নির্দেশ। অপরিচ্ছন্ন সংকীর্ণ খাড়াই পথ। শ্যাওলা তো আছেই কিছু গাছগাছালি চোখে পড়ল। বৃষ্টি হয়েছিল পথ ভিজে আছে।আমারা হাতেপায়ে বেয় আরো চারতলা উপরে উঠে এসেছি। এখন দাঁড়িয়ে আছি একটি আড়াই ফুল চওড়া অলিন্দে। কোনো গেট খোলার লক্ষণ নেই। ফোনে কথোপকথন শুনছি। এতো রাতে ঘর দেওয়া যাবেনা। সকালে যা কথাবার্তা হবে। আমাদের কর্মকর্তারা জানালেন, আমরা তো ফোনে জানিয়ে রেখেছিলাম, নানা কারণে আমাদের পৌছাতে বিলম্ব হবে। এতগুলো লোক নিয়ে ভীষণ বিপদে পড়েছি। গেট খুলুন আমাদের সঙ্গে কথা বলুন।
অধৈর্য হয়ে পেছন থেকে কাউকে উচ্চ গলায় বলতে শোনা গেল, আমাদের নে কি ফাজলামি করা হচ্ছে, আমরা মানুষ নয় নাকি? হঠাৎ হাট করে গেট খুলে গেল। ফর্সা ছিপছিপে একটি ছেলে হুড়মুড়িয়ে আমাদের জটলা ভেতর থেকে বাইরে যেতে গিয়ে প্রায় মাটি ছুঁয়ে পড়ল। আবার সেই ভাবেই উঠে অদৃশ্য হয়ে গেল। ভাবলাম চিৎকার চেঁচামেচিতে ওরা কি আতঙ্কিত। ওই ছেলেটাই কি প্রশাসনিক সাহায্য নিতে ছুটল। সে হলে তো ফোনে কাজ মিটে যেতো। তবে কি স্থানীয় ঠ্যাঙাড়ে বাহিনীর দ্বারস্থ হতে চাইছে। এখনকার নিয়ম কানুন কিছুই জানা নেই। ভাবলাম এই আড়াই ফুট জালঘেরা বারান্দায় দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় জালিয়ান ওয়ালাবাগের শিকার না হই, বাইরে দাঁড়ানো অনেক নিরাপদ। আবার বাইরে মানে কয়েক তলা পাহাড়ের ধাপ মাড়িয়ে সেই স্বর্গোদ্যানে গিয়ে দাঁড়ানো। আর সত্যি সত্যি যদি ওই ভিনদেশী ছেলেটা ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী আনে প্রথম শহীদ তো আমরাই হবো। তার চেয়ে যেখানে আছি সেখানেই থাকি।
সাতপাঁচ ভাবছি। সেই ছেলেটার আর দেখতে পেলাম না, তবে ফর্সা গোলগাল চেহারায় এক ভদ্রলোক আমাদের সামনের ঘরটি খুলে দিলেন। আমাদের দায়িত্বশীল কর্তাব্যক্তিরা ভিতরে বসতে বললেন। আশ্বাস দিলেন, খাওয়ার কিছু একটা ব্যবস্থা এখুনি করছি। ভিতরে গিয়ে দেখলাম ছোট বোর্ডে লেখা ‘রিশেপসান রুম’। ভদ্রলোক রেজিষ্টার বুকে কিছু নথিভুক্ত করতে চাইছিলেন। আমাদের অশোকদা বললেন, আগে ঘরগুলো দেখিয়ে দিন পরে যা লেখার লিখবেন। কেউ পালিয়ে যাচ্ছি না। দুদিন তো থাকছি। সামান্য কিছু না লিখলে নয় লিখে নিলেন। সবার হাতে চাবি তুলে দিতে থাকলেন। আমরা ফোর বেডের ঘর নিলাম। কারণ আমরা সস্ত্রীক এবং মেজ মামা ও মামাতোভাই। এক রুমে থাকলাম।
আমাদের ঘরের চাবির নম্বর একশ-তিন। ঘর খুঁজে পেলাম কিছুতেই দোর খুলতে পারলাম না। বার দুই ওপর নিচ করলাম সন্তর্পণে। শেষে আনাড়ি ভাবে টানাহেঁচড়া করেও একই ফল পেলাম। আমাদের সবাই তখন যে যার ঘরে ঢুকে পড়েছে। অফিসে গিয়ে অভিযোগ জানালাম। ভদ্রলোক বললেন ও যাচ্ছে চলে যান। ও মানে সেই প্রথম সাক্ষাতের ছেলেটি। ওর মুখে ভাষা কিছু বুঝলাম না। শারীরিক ভাষায় ধরা পড়ল, চাবি খোলা কোনই ব্যাপারই নয়। এক্ষুণি খুলে দিচ্ছি। আমাদের হাত থেকে চাবি নিয়ে তালায় ঢুকিয়ে জোরে জোরে চাপ দিতে লাগল। চাবি বেঁকে গেল তবু তালা খুলল না। ছেলেটি হালকা হাসিতে হাত নেড়ে, আমরা যেদিন থেকে এসেছি তার বিপরীতে দ্রুত চলে গেল। এটাই বুঝিয়ে গেল চিন্তার কি আছে একটু দাঁড়ান খুলে দিচ্ছি। ছেলেটি শিবলিঙ্গ হাতে করে ফিরছে। আমাদের খুব পরিচিত বস্তু। গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে চেনে। শিলের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কে বাঁধা “নোড়া”। নোড়া দিয়ে দু’তিন ঘা মারতে কাজ হলো। আমরা তালা মুক্ত ঘরে বাস করতে আপাতত আপত্তি নেই, সেই পথে ঠান্ডা যুক্ত কষ্টের শেষ নেই। হাড় কাঁপানো বাতাস মানিয়ে নিতে পারবেন না। সমাধান হয়ে ছিলো তা অনেক পরে। ভেতরে খাটের সঙ্গে লেপ ছিল। বাথরুমে বরফের মতো ঠান্ডা জল। যতটুকু না ছুঁইলে নয় সেইটুকুই। আমাদের নিজেদের আনা শুকনো খাবার তাই খেয়ে রাতের কয়েক ঘণ্টা কাটানো। আমাদের শীতঘুমের মধ্যে ভেসে উঠলো ফেলে যাওয়া গ্রামবাংলায় এই সময়ে দাবদাহ বইছে। মানুষ গরমে অস্থির হয়ে পড়েছে। মঙ্গলময়ীর কৃপায়,মঙ্গলবার সকাল ছটায় মধ্যে প্রতিটি ঘরে চা বিস্কিট ও টিফিন পৌঁছে গেছে। মামাতো ভাই শঙ্কর দিয়ে যাওয়া খাবার কিছুতেই খেলনা। কর্মকর্তাদের ব্যবস্থাপনায় অসঙ্গতিতে ক্ষুব্ধ। যে কদিন থাকবে বাইরে থেকে কিনে খাবে দৃঢ়প্রতিজ্ঞা। যদিও শেষ পর্যন্ত প্রতিজ্ঞা ধরে রাখতে পারেনি। একমাত্র মামাই আমাদের সঙ্গে বাধ্য হয়েই খেল মনে হয়। আমরা বেড়াতে এসেছি এটাই মাথায় রেখেছি। খাওয়া যাই হোক দেখার উপভোগ করাটাই মূল বিষয়।
অতো সকালে সবাই হোটেলে। আমি ও শঙ্কর নেমে এসেছি রাতের সেই স্বর্গোদ্যানে। নজর এড়ায়নি একটা ‘ক্লিনিক মারুতি ভ্যান’ গড়গড় করে কোথায় থেকে উঠে এসেছে এতটা উপরে। চমকে যাওয়ার মতো। সিঁড়ি দিয়ে তো আসেনি উঠল কী করে। তবে রাবণের সিঁড়ি আসেনি একদম নিশ্চিত। কোন পথ দিয়ে এতটা উপরে আসতে পারে আমাদের কাছে অজানা। অজানার উৎস জানার চেষ্টায় দুজনে হাঁটা শুরু করলাম উঁচুনিচু আঁকাবাঁকা পথ ধরে। আমরা পায়ে পায়ে ক্রমশ উপরে উঠছি। পিছলে পড়ার উপক্রম। প্রায় চার তলার মতো উপরে গিয়ে থামলাম। এরপর এগিয়ে গেলে আবার নামতে হবে ঢালুতে। ওখানে গিয়ে দেখলাম আরো একটি পথ উপরের দিকে গেছে। ভৌগোলিক পরিস্থিতি বুঝতে চেষ্টা করলাম। ধাপে ধাপে সারিবদ্ধ আবাসিক ঘরগুলো ক্রমশ উপরে নির্মিত হয়েছে। প্রতিটি বাড়ির সমনে দিয়ে পাথুরে পথ এঁকেবেঁকে উপরে নিচে যেন সাপ-লুডো খেলা করছে। আমরা তলা থেকে মনে করেছিলাম মাথার উপরের ঘরগুলো বিপদজনক ভাবে তৈরি হয়েছে। আবার উপরে গিয়ে দেখি নানা এগুলো নয় আরো উপরের ঘরগুলো সম্ভবত ভীষণ বিপদগ্রস্ত অবস্থায়। আপাতদৃষ্টিতে এমন মনে হবে। এইভাবে চলে আসছে কয়েক পুরুষ। পাহাড়ি সৌন্দর্য উপভোগের কারণে ভ্রমণ পিপাসুদের দৈনন্দিন আগমন। নজর কাড়া প্রাসাদগুলো আসলে আবাসিক হোটেল। কখনো মাঝে মাঝে চোখে পড়বে পুরোনো কাঠের তৈরি বাড়ি। কারুকার্য মণ্ডিত। আমাদের সামনে তেমন পুরোনো আমলের কাঠের বাড়ি দেখতে পেলাম। এই বাড়ির মালিকেরা বাস করে। প্রাচুর্যের স্রোতে এই বাড়িগুলো প্রমোটারের কাছে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। উপরে না উঠলে অনেক কিছুই অজানা থাকত। আমরা দাঁড়িয়ে ছিলাম রাজপথের এক ঝুল বারান্দার মতো এক জায়গায়। তলায় পথ বেশ চওড়া। কোন দিকে গেছে জানিনা। কিছু ঠিকে শ্রমিক মোটা দড়ির পাঁচে পঁচিশটা করে ইট সাজিয়ে,দড়ির একটা অংশ মাথায় রেখে, ধীরে ধীরে পাশের সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাচ্ছে। আমরা দেখছি উপর থেকে, আঁকাবাঁকা পথে, ছোট ছোট সাঁকো পেরিয়ে ছোট হতে হতে বিন্দুতে মিলিয়ে যাচ্ছে। যেখানে এখনো প্রশস্ত পথ গড়ে ওঠেনি। জীবন সংগ্রামে লড়াই করা ওই দূরের মানুষগুলো খুব সাধারণ ভাবে ওখানে থাকে। আধুনিক স্বাচ্ছন্দ্য থেকে এখানেও ওরা বঞ্চিত। আর এই ইটগুলো যেখানে যাচ্ছে, তাদের মধ্যে যারা স্বাচ্ছন্দ্যের মুখ দেখা কিছু সাধারণ মানুষজন।
এখন আমরা হোটেলে যাওয়ার জন্য পিছু ফিরতে হলো। বাঁকের এক কোণে দোকান দেখলাম। কয়েকটি ভাষায় কয়েকখানা পত্রিকা সাজানো। আমি দেখলাম আমার প্রিয় হকার ভাই প্রতি সকালে যে পত্রিকাটি আমার বাড়িতে রোজ দিয়ে আসে সেটি পেয়ে আনন্দ পেলাম। কিন্তু গোঁ ধরেছে মামাতো ভাই। তার যুক্তি বিদেশে এসে বাংলা ভাষার সংবাদ পত্র কেনা উচিৎ হয়নি। এখন লোক কী ভাববে। কি জানি বাবা, পড়াটা বড়ো কথা নয়। ইংরেজি পত্রিকা হাতে থাকলে রাজভবন থেকে লোক পাঠিয়ে ডেকে নিয়ে যাতো বিশেষ অতিথি করে। ইংরেজি সংবাদপত্র কিনে অন্তত আউড়ে কিছুই বুঝতাম না তা কিন্তু নয়। অসুবিধা হতো আমাদের অন্য সঙ্গীদের নিয়ে। সবাই তো এখনো গোঁ ধরে বসে আছে দার্জিলিং ভ্রমণ সূচিতে আছে কেন নিয়ে যাবেনা। এখনো ওখানে রাজনৈতিক হিংসাক্তক গণ্ডগোল চলছে কাগজে তার খবর সমানে দিচ্ছে।
দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পরে, বৈকালে কেনাকাটার জন্য বেরিয়ে পড়ল সবাই। আমাদের কেনার ছিলনা দেখার কৌতূহল ছিল প্রবল। মামাতো ভাই খোঁজ নিয়েছে এখনকার সবজি বাজার দেখার মতো। কয়েক তলা বিল্ডিং এথরে বিথরে সাজানো। রেডিমেড জামা কাপড়ের দোকান আছে। আমরা চা খেতে বেরিয়েছিলাম মামা, মামাতো ভাই, আমি ও আমার গিন্নি। আমরা হাঁ করে দেখছিলাম। কোথাও গ্রিল দিয়ে ঘেরা নেই। বাঁধা দোকানগুলো সাটার বসানো। আমরা যে পথ দিয়ে হেঁটে চলেছি ঠিক মাথার উপরে মোটা সরু লোহার পাইপের জাল বিস্তার করা হয়েছে। সবচেয়ে সরু পাইপ প্রতিটি দোকানের এসে শেষ হয়েছে। আমরা নিজেদের মধ্যে নানারূপ মন্তব্য সরিয়ে রাখলাম। ওখানকার দোকানীদের থেকে জানতে পারলাম, ওই পাইপের মধ্যে দিয়ে এই বিরাট বিল্ডিং-এর প্রাণ প্রবাহিত হয়। অর্থাৎ অগ্নি নির্বাহকের জন্য জল সরবরাহ পাইপ এবং উপরে জল সঞ্চয় করা আছে। মেইন পাইপ জলাধারের সঙ্গে যুক্ত। এমন সুরক্ষিত ব্যবস্থা আমি এই প্রথম দেখলাম। বেশ ভালো লাগল।
রাতে খাওয়া শেষের পরে কর্মকর্তারা জানিয়ে দিলেন। সকলে সাড়ে ছটার সময় এখনকার গাড়িতে ছেঙ্গুলেক ও বাবাপাহাড় দেখতে যাওয়া হবে। আমরা চা টিফিন খেয়ে বেরিয়ে পড়ব। আমরা সেই মতো গাড়ি স্ট্যান্ডে আগু পিছু করে পৌঁছে গেলাম। বহু গাড়ির মধ্যে আমাদের জন্য নির্দিষ্ট গাড়ি কোনগুলো বুঝতেই পারলাম না। দুটো গাড়িতে দুবার বসলাম আবার কার কথায় যেন নেমেও এলাম। দিশাহীনভাবে ঘুরতে গিয়ে চোখে পড়ল, আমার স্ত্রী ও মামাতো ভাই একটি মারুতি ভ্যানে বসে আছে। আর জায়গা নেই। ভালোই হলো গিন্নি একলা থাকলে চিন্তা হতো। বিদেশ বিভূঁই বলে কথা। আমি ও মেজমামা একটি গড়ির পেছন উঠলাম। গাড়ি ছেড়ে দিল। গাড়ি গড়াল দিনের আলোয়, পাহাড়ি পথে। তবে এতো খাড়াই ঢালে গাড়ি ওঠা নামা করছে, পাশে খাদ রাতে হলে বুঝতেই পারতাম না। অতটা ভয়ের ছিলনা। ক্রমে লোকালয় ছাড়িয়ে পাহাড়ের গা বেয়ে বিপদজনক সীমানা পেরিয়ে গাড়ি চলেছে তার আপনার গতিতে দুলকি চালে।
আমাদের গাড়িতে এক সুখী পরিবারটি ছিলো। পরে হাবভাবে বুঝলাম ওরা দম্পতি নয়। পুরুষি আগেই এসেছিল। তাই স্বেচ্ছায় গাইডের কাজটি নিরলস ভাবে করে যাচ্ছেন। আমরা যে তাদেরই সহযাত্রী তা তাদের ভাবার কথা নয়। মনে হলো ভদ্রলোক হাতে ধরে ওই ভদ্রমহিলাকে দেখাচ্ছেন বলে, পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখতে বা বুঝতে পারছেন। আমরা বাড়তি যারা একই গাড়িতে আছি কিছুই দেখতে বা বুঝতে পারছি না। ঈর্ষার কিছুই নেই। ওই ভদ্রলোকের একক সিদ্ধান্তে ও অসামাজিক আচরণের সম্বিৎ ফিরেছিল আমাদের। আমাদের কী হয়েছিল পরে বলছি। এইটুকু বলে রাখি, এরা হলো শিলিগুড়িতে থেকে যাওয়ার গোঁ ধরেছিল। থাক এসব কথা যে যেভাবে আনন্দ উপভোগ করে করুক। গাড়ি পাহাড়ের গা কেটে তৈরি আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে ছেঙ্গুলেকে পৌঁছল। গাড়িতে নামতে দেখি বেশ শীত শীত করছে। এরই মধ্যে হালকা তুষার বৃষ্টি হয়েছে। অবাক দৃষ্টি নিয়ে এদিক ওদিক দেখছি। ভ্রমনার্থীর অনেকে ওখানকার স্থানীয় পোষাকে চামরি গরুর পিঠে চড়ে মজা করছে ছবি তুলছে। অত উঁচু পাহাড়ের উপরে বিশাল জলাধারকে ছেঙ্গুলেক বলে। সারা লেকের জলে বৃষ্টির ফোঁটায় বুটিক বসানো কাপড়ের মতো দেখাচ্ছে। কোনো কারণে ওই সময় প্যাটেল ভেলা ছিলনা। লেকটির উপরই ভাগে প্রশস্ত করার কাজ চলছিল। এখনে কিছুক্ষণের জন্য গাড়ি থামিয়ে উপভোগ করে আবার উপরের দিকে উঠতে চাইবে বাবাপাহাড়ের ডেরায় যেতে।
একনজরে দেখতে পেলাম, একজন কলার ফেনি ও পাউরুটি পলিপ্যাকে ঝুলিয়ে বেশ গল্প করতে করতে এদিকে আসছে। আমাদের অন্য সঙ্গীদের হাতে ওইরূপ খাদ্যবস্তু দেখছি। ভেবেছি কিনেই আনছে। সুদৃশ্য দোকান ঘর থেকে। পরে বুঝলাম ওটি ঘর নয় বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের প্রার্থনা গৃহ। প্রসাদ সরূপ এমনিতেই দান করছে ভ্রমণার্থীদের। আমার না জানার কথা। সবার কথা শুনে কৌতূহলী হয়ে গেলাম। আমাদের কপালে বিশেষ করে আমার কপালে ছিটেফোঁটা অবশিষ্ট ছিলনা। তবে অনেকে অনেক কিছু ফাউ পাওয়ার কপাল নিয়ে জন্মেছে, এই অধম নয়। সামান্য ওই খাদ্যবস্তু নাইবা হলো। যেহেতু ওটি প্রসাদ, তাই অসামান্য বলতেই হবে। এবার মনে পড়ল, আমার গিন্নিদের গাড়ি তো এখনো পৌঁছালো না। তবে কি অনেকটা পেছনে আছে। আমাদের গাড়ি আগে ছেড়েছিল তাই বলা। হঠাৎ হঠাৎ পাহাড়ে ধস নামে। পাহাড়ের এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। এমন যেন না হয়।
ওইযে অযাচিত নাগর তার সঙ্গীদের বুঝিয়েছেন গাড়ি চালকের সুপরামর্শের কথা। এক গ্লাসে কথাবার্তা জমিয়ে ফেলা পথের বন্ধু। আবহাওয়া ভালো নয় এখন থেকেই ফিরে যাওয়া নিরাপদের। ওপরে এমন কিছু দেখার নেই। আমার মতামত জানতে চাওয়া হলো। বললাম, ‘বাবার মন্দির’ যাবো বলে বেরিয়েছি। ওখান থেকেই ফিরব, যা হয় হবে। বাধ্য হয়ে গাড়ি গড়িয়ে চলল সামনের পথ ধরে আরো উপরের দিকে। বেশ অনেকটা যাওয়ার পরে খাড়াই পাহাড়ের পাশে আমাদের গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ল। খাড়াইয়ে আগে অনেকটা ঢাল হয়ে উপরের দিকে গেছে। হঠাৎ ধোঁয়াশায় ভরে যায়। পরে শিলাবৃষ্টি পড়তে থাকে। এমনটা সবসময় হয়না। অপ্রত্যাশিত পাওনা। গাড়ি থেকে নেমে ছেলে মানুষের মতো ছোঁড়াছুড়ি করলাম। আবার গাড়িতে উঠলাম, বাবা পাহাড়ের দিকে গাড়ি চলল। গাড়ির মধ্যে সবাই একবাক্যে স্বীকার করল ছেঙ্গুলেক থেকে ফিরে গেলে পাহাড়ের দেশে শিলাবৃষ্টির অপূর্ব নান্দনিক চোখে হারাতাম।
পাহাড়ের শীর্ষদেশে বাবামন্দিরের অনতিদূরে গাড়ি পার্কিং করল। আমরা বেরিয় পড়লাম। বাইরে বৃষ্টি পড়েছে, বেশ ঠান্ডা লাগছে। কাছে ছাতা ছিল মাথায় দিয়ে বেরির পড়লাম বাবা সাহেব দর্শনে। বিরাট লাইন। দাঁড়িয়ে আছি। আর পেছনে দেখছি ওদের গাড়ি কত দূরে বা কি অবস্থায় আছে। বলতে গেলে অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছি। যেমন তেমন সাতপাকে বাঁধা অগ্নিসাক্ষী করা বউ। হঠাৎ দেখি এক মহিলা আমার হাত থেকে ছাতা কেড়ে নিয়ে চলে যাচ্ছে। পরে বুঝলাম আমার অর্ধাঙ্গিনী। আমাদের আগেই নেমেছে। আমারা যখন ছেঙ্গুলেকে নেমে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তখন পেরিয়ে এসেছে। আমাদের ডেকে ছিলো বুঝতে পারিনি, ভেবেছি পেছনে আছে। মিলিটারি ফোর্স দর্শণার্থীদর কন্ট্রোল করছিল। দীর্ঘক্ষণের পরে যখন মন্দিরটির সামনে পৌছুলাম দেখলাম বাঁধান ছবি। যেটি দেখার জন্য অধীর আগ্রহে এই পাহাড় চুড়ায় আসা। সবার কৌতূহলের বা আকাঙ্ক্ষিত “বাবা সাহেব”। ইনি একজন মিলিটারি ম্যান ছিলেন। কী অবিশ্বাস্য কারণে তাঁর এতো জন পরিচিতি সে ইতিহাস পরে জেনেছি। যা অতি বিশ্বাসের ফল।
বাবা পাহাড় থেকে এক সঙ্গে আমাদের চারখানা গাড়ি ছাড়ল। নিরাপদে ছেঙ্গুলেক পেরিয়ে গেলাম। গ্যাংটক পৌছানোর আনেক আগেই ধসের কবলে পড়লাম। গাড়ি পিপড়ের সারের মতো দাঁড়িয়ে গেল। অনেকেই নেমে বাইরে দাঁড়ালাম। ইতিমধ্যে হয়ে যাওয়া শীলাবৃষ্টি গালিচার মতো বিছানো আছে। প্রথমের মত আর মন ভালো নেই কেউ বরফ নিয়ে খেলবে। কখন পথ পরিস্কার হবে এই চিন্তায় সবাই বিভোর। তবে আমাদের সামনে ধসে পড়েনি। কোথায় পড়েছে, কত দ্রুত কাজ হচ্ছে জানিনা। একসময় আটকে থাকা গড়ি চলতে শুরু করেছে। একে একে আমাদের গড়ি পাহাড় সংলগ্ন লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। লোকালয় বলতে ঘিঞ্জি ঘরবাড়িতে ভরা। ওইটুকু পেরিয়ে গেলে শৈলসহরে ঢুকে পড়া। প্রশস্ত পথে আমাদের গাড়ি এলো পাশে থেকে তিনখানা গাড়ি পেরিয়ে গেল। আমাদের গাড়িটি সামান্য ঘুরে একটি কংক্রিটের সেটে এসে ড্রাইভার বলল, এখানে সবার নামতে হবে। আমি লক্ষ্য করলাম এটা নতুন জায়গা। এখন থেকে আমাদের গাড়িতে তোলা হয়নি। সামনে যারা বসে ছিল তাদের ভাবের ভাবিকে নিয়ে ব্যস্ত। ষণ্ডামার্কা লোকটির সঙ্গে আমাদের সেভাবে পরিচয় গড়ে ওঠেনি তিনিও রাখতে চাননি। আমাদের কথা না ভেবে প্রিয়সঙ্গীদের নিয়ে রাস্তার রানিং বাস ধরে হুস করে বেরিয়ে গেল। আমরা কিছু বলার সুযোগ পেলাম না। আমি আর মামা পড়ে রইলাম অজানা জায়গার, আলো আঁধারিতে।
পরে ফোনে পথ নির্দেশ জেনে নিলাম। আরো এক ভোগান্তি শুরু হলো চলতি গাড়িতে ওঠা নিয়ে। ওখানে নির্দিষ্ট সংখ্যাক প্যাসেঞ্জার নেবে। কোনো গাড়ি দুজনের নেবে না। কে আগে যাবে, কেউ কাউকে ছাড়তে পারছি না। এক বাঙালি ভদ্রলোক আমাদের অবস্থা বুঝলেন। তিনিও কাছাকাছি কোনো হোটেলে উঠেছেন। তিনি এর আগেও এসেছেন। আমাদের সমস্যা মেটালেন। একটা কথা মনে রাখতে হবে। একান্ত পরিচিত সঙ্গী ছাড়া ভ্রমণের আনন্দ মাটি হয়ে যেতে পারে। সব মানুষ তো দায়িত্বশীল হয় না। আর যারা নারীসঙ্গ পেতে বেশি আগ্রহী, পুরুষ বন্ধুর কথা ভাববেই কেন। যাইহোক ভালোয় মন্দে গ্যাংটক ভ্রমণ খুব ভালোই উপভোগ করেছিলাম। যা কখনো ভোলার নয়।
শিবপ্রসাদ পুরকায়স্থ | Shibaprasad Purakayastha
Natun Bangla Kabita 2023 | আযাদ কামাল | Top New Poetry
Natun Bangla Kabita 2023 | অঞ্জলি দেনন্দী, মম | Top New Poetry
100 questions and answers about Ramakrishna Mission | রামকৃষ্ণ মিশন সম্পর্কে প্রশ্ন ও উত্তর
Nishim Prantare | নিঃসীম প্রান্তরে | শওকত নূর | 2023
Gangtok Travel Attraction | Gangtok Travel Attraction guide book | Sabuj Basinda | High Challenger | Best Gangtok Travel Attraction | Top Gangtok Travel Attraction | Trending article – Gangtok Travel Attraction | Gangtok Travel Attraction Photo | Gangtok Travel Attraction in pdf | Online Gangtok Travel Attraction | Bengali Travel Story | Story Gangtok Travel Attraction | Gangtok Travel Attraction story in pdf