Death March | Mrityu Michil | মৃত্যু মিছিল | Bangla Galpo 2023

Sharing Is Caring:

মৃত্যু মিছিল – প্রবীর কুমার চৌধুরী [Death March | Mrityu Michil]

দুহাজার একুশ এক অভিশপ্ত শতাব্দী। এ যেন বিশ্বত্রাস। ঘরবন্দি জীবন । চারিদিকের সৃষ্টির ধ্বংস লীলা চলছে।পথেঘাটে লাশ পরে আছে। দাহ বা করব দেওয়ার মানুষ নেই, গাদা করে সৎকার চলছে, দূরে দাঁড়িয়ে শোকার্ত প্রিয়জনরা ।মুখ দেখার অধিকার নেই, শেষ বারের মতো স্পর্শ করার উপায় টুকু নেই। এতই ভয়ানক সংক্রমিত রোগ। অসুস্থ বয়স্ক মানুষরা হাসপাতালে যাচ্ছেন রোগ নিরাময়ের তাগিদে প্রায়জন আর ফিরছেন না, ফিরছে কয়েকদিন বাদে মৃত্যুসংবাদ । অকালে চলে যাচ্ছেন পৃথিবী ত্যাগ করে। এমনি ভাবে চলে যাচ্ছেন দেশ বরেণ্য, প্রাত স্মরণীয়, স্মরণীয়া।

সমগ্র বিশ্বজুড়েই আজ মৃত্যু মিছিল চলছে ,সৌজন্যে করোনা ভাইরাস। মানুষের সাথে মানুষের সংস্পর্শে ,মানুষের নিঃশ্বাসে, একত্রিত হলেই গোষ্ঠী আক্রান্ত হচ্ছে। ভীত,সন্ত্রস্ত মানুষ প্রাণভয়ে একদেশ থেকে অন্যদেশে পালাচ্ছে দলে দলে। পথেই প্রাণ হারাচ্ছে শিশু, যুবক, বৃদ্ধ, বৃদ্ধা। আজ মৃত্যুর কাছে মানুষ বড় অসহায়।। ফলে লাগাতার লক ডাউন। লক ডাউনে পৃথিবীটি প্রায় সব উন্নত দেশের রুজি, রোজগার বন্ধ হয়ে উন্নয়ন প্রায় স্তব্ধ। আমদানি, রফতানি জরুরি অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। অফিস, কলকারখানা বন্ধ। কিছু, কিছু সাপ্তাহিক ভিত্তিতে চলছে।উৎপাদন ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। হাজার হাজার মানুষ কর্ম হারিয়ে বেকার হয়ে ঘরে বসে আছেন। ফলে রোজগার বন্ধ। ঘরে, ঘরে প্রায়ই দিন অরন্ধন উৎসব চলছে। সমাজ মাধ্যমে ও বিভিন্ন নিউজ চ্যানেলে ঘটনার প্রবাহধারা অনুধাবনে শিউরে উঠতে হয়। সরকারি সাহায্য, বিভিন্ন সেবা প্রতিষ্ঠান ও সমাজের মানুষের আর্থিক সাহায্যের তহবিলে সমাজের নিম্ন বর্গের মানুষের গ্রাসাচ্ছাদন অনেক ক্ষেত্রে। ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা লাটে উঠে গেছে।

তারমধ্যেও কিছু মানুষ বিশেষজ্ঞের উপদেশগুলো অবজ্ঞা করে বেপরোয়া, উদ্ধত । নিয়ম, কানুনের তোয়াক্কা বা ধার ধারে না । আপন মর্জিমাফিক, গা জোয়ারি মনোভাবে মৃত্যুভয়কে উপেক্ষা করেই তাদের প্রাত্যহিক বাজার করার ধুম লেগেছে। বাজারের বিক্রেতারাও সমান তালে পাল্লা দিয়ে মুখ, নাক মাক্সহীন । তারা নিজেদের সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের ব্যাপারেও উদাসীন। বাড়ীর বয়স্ক মানুষদের বিষয়ে একবারও চিন্তা করেন না। কিছু মানুষের যেন রসনার প্রবল বিক্রম লেগেছে। তাই প্রত্যেক দিন বাজারে যাওয়া চাইই-চাই।

এইসব বিষয় নিয়েই ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলছিলাম আমরা ক’বন্ধু। সৌম্য ডাক্তার ওর মতামত আজকে সাধারণ মানুষের বিষয়ে প্রয়োজন। বিভিন্ন চ্যানেলে, সংবাদ মাধ্যমে স্পিচ দিয়ে দিতে ও ক্লান্ত ওর বলছে ও হতাশ । কেউ মানছে না,কেউ শুনছে না। বিকাশ এডমিনিষ্ট্রেশনে মানুষ বলছে না এভাবে হবে না পশ্চিমের দেশের মতো আমাদের প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে। নাহলে এ বিপর্যয় থেকে আমাদের মুক্তি নেই। কিন্তু মোটামুটি আমরা সবাই অনাগত দিনের জন্যে আমরা ভীষণভাবেই চিন্তিত।
বিশেষজ্ঞদের যা মতামত তাতে এ অতিমারী থেকে সহজে নিস্তার পাওয়ার আশু সম্ভাবনা তো নেইই উপরন্তু আরও ভয়ংকর, জটিল রূপ ধারণ করার সম্ভাবনাই বেশি। একটার পর একটা এর ধারাবাহিকতা চলবে। কিছু ভ্যাকসিন সরকার থেকে দেওয়া শুরু হয়েছে মানুষ পড়ি কি মরি করে ছুটছে হাসপাতালে আর যাঁদের একটু ক্ষমতা আছে তাঁরা অতিরিক্ত দাম দিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে ভ্যাকসিন নিচ্ছেন ও মরণ রোগ থেকে নিস্তার পাওয়ার আশায়।

আমাদের আলোচনা যখন গভীরে প্রবেশ করেছে এমন সময়ে সদরে কড়া নাড়ার আওয়াজ পেলাম। একটু পরেই সুনন্দা আঁচলে হাত মুছতে মুছতে এসে বলল – মনোজ এসেছে কি বিশেষ দরকার আছে। আমি বাইরের ঘরে বসতে বললাম কিন্তু বাড়িতে ঢুকতে চাইলো না । তোমাকে ডেকে দিতে বললো বাইরেই কথা বলবে।

Death March

আমি হেসে বললাম কি দিন আসলো বলতো, মানুষ, মানুষের ঘরে ভয়ে ঢুকছে না। আজ কেউ সাহস করে কাউকে বাড়িতেও ডাকেও না। পাছে রোগ তার সাথে সাথে ঘরে ঢুকে পরে … কি ভয়ানক দিন এলো। এ মানুষ পরিত্যক্ত জীবন আরও কতদিন চলবে কে জানে। জানিনা কার ভাগ্যে কি আছে।। একে একে কত প্রিয় মানুষ অকালে ইহলোক ছেড়ে চলে গেলেন এখনও কত জনের যাওয়া বাকি কে জানে। বুক থেকে আমার একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।

ভালো করে মুখে দুটো মাস্ক বেঁধে বাইরে আসতেই মনোজ কাছে এসে বলল – শেখরদা কাল রাতে খবর পেয়ে আজ সকালেই কয়েকজনকে নিয়ে পূর্ব পাড়ার জেলে-বস্তিতে গেছিলাম দাদা। ওখানকার মানুষগুলো আজ দুদিন না খেয়ে আছে । রোগাক্রান্ত মানুষকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার লোক নেই, শ্বাসকষ্টে অক্সিজেন নেই, ওষুধ নেই, খাদ্য নেই।ছোট,ছোট বাচ্চাগুলোর মুখের দিকে তাকানো যায়না ওরাও উপোষী । শিশুগুলো পেটের জ্বালায় কেঁদে কেঁদে মুখ দিয়ে গেজলা বেরোচ্ছে। বাবারা কেউ মাছ ধরে, কেউ রিক্সা চলায়, কেউ কেউ মিস্ত্রি ও জোগাড়ে। কেউ, কেউ অন্য রাজ্যে রুজি-রোজগারে। ট্রেন বন্ধ তাই এই দুর্দিনে দেশের ফিরতে পারছে না। আজ একমাস কারুর কোন কাজ নেই। যে বৌগুলো লোকের বাড়ি, বাড়ি কাজ করতো সেখানেও ঢোকা বন্ধ করোনার জন্যে । সামান্য সম্বল টুকু নিঃশেষ হতে আজ ওরা অনাগত ভবিষ্যতের চিন্তায় মুখ ও বধির।

শেখর দা এই মুহূর্তে প্রায় দুইশো লোকের সপ্তাহ খানেকের খাওয়ার ব্যবস্থা করতেই হবে । সামনের রান্নাঘরের জানালায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সুনন্দা দেখলাম রান্নার ফাঁকে ফাঁকে আমাদের কথাগুলো মন দিয়ে শুনছে। মনোজ আবার বলতে শুরু করলো আমি আশা করছি সবার কাছ থেকে এই বিপদের দিনের কথা বলে কয়ে হাজার পঞ্চাশেক টাকা তুলবো তুমি দাদা যেমন করে পারো হাজার দশেক দাও।মানুষগুলোকে বাঁচাতেই হবে । তারপর দেখছি সরকারি রিলিফ কতটা জোগাড় করতে পারি। লোকাল কাউন্সিলারের সাথে কথা বলেছি । সকালবেলা দুধ সাপ্লাইয়ারের হাত ,পা ধরে বাচ্চাগুলোর জন্যে কুড়ি লিটার দুধ ও বড়গুলোর জন্যে কাউন্সিলরকে ধরে এক বস্তা আটা ও গুড় দিয়ে এসেছি। আপাতত ওই খেয়েই বাঁচুক। পরে সব জোগাড় করে গিয়ে দুপুরের রান্নার ব্যবস্থা করবো।
আপাতত একটা সেন্ট্রালি কিচেন খুলতে হবে। পাড়ার বেশ কিছু সমাজসেবী মনোভাবের ইয়ং ছেলেকে ডেকেছি বাড়ির বারণ সত্ত্বেও তারা আসবে বলেছে।

মনোজ আমাদের এলাকার একজন সমাজসেবী যুবক। মানুষের আপদ, বিপদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্যেই যেন ওর জন্ম। লোকাল পার্টির একটিভ মেম্বার। পার্টির নেতার সুনজরে আছে এমন এধরণের কাজে ওকে সাহায্যও করেন। এদিকে ওর খারখানাও বন্ধ । সংসারের সব দায়িত্ব বউয়ের ঘাড়ে চাপিয়ে ও সমাজ সেবা করে বেড়াচ্ছে। ভাগ্যিস ওর বউ সরকারি চাকুরে। মনোজের দর্শনে রং নয় মানুষই আসল তাই সকল শ্রেণীর জন্যে ঝাঁপিয়ে পড়। মানুষের জন্যে করে এত যে তৃপ্তি ও শান্তি পাওয়া যায় তা ওকে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না।

বড় মুখ করে মানুষের জন্যে চেয়েছে নাও করতে পারছি না আমার বর্তমানে এমন কোন সংস্থানও নেই যে হ্যাঁ বলবো। সসংকোচে বললাম আমার কাছে ছয় হাজার টাকা আছে আর কিছু জোগাড় করে কাল তোমায় দশ হাজার দেবো ভাই। আমিও আগেও বিভিন্ন সমাজ উন্নয়ন কাজে মনোজকে টাকা দিয়েছি জানি সেই বিশ্বাসও আশা নিয়েই আমার কাছে দৌড়ে এসেছে। কিন্তু কিভাবে বোঝাবো আমিও ব্যক্তিগতভাবেও কিছু সামাজিক কাজ করি এবং তা আমার সারা বছরের সঞ্চিত টাকা থেকেই। মাসের প্রথমেই সল্ট লেকের একটি অনাথ প্রতিবন্ধী আশ্রমে পঞ্চান্নজনকে নৈশভোজ করলাম তারপর নিজের সাহিত্য প্রতিষ্ঠানে নববর্ষ সংখ্যার বই উদ্বোধন অনুষ্ঠান করলাম। এর পর আর কোথা থেকে আসবে? মাথায় একরাশ চিন্তা নিয়ে ঘরে আসলাম ।

আশা করেছিলাম বন্ধুদের কাছে বলে কিছু হবে ওরাও কিছু, কিছু দিলেই ডেফিনিট চা হাজর হয়ে যাবে কিন্তু ওদের থেকে সারা পেলাম না শুধু ভবিষ্যতের জন্যে কিছু করার সম্মতি ছাড়া। রাত্রে ঠিকমতো ঘুম হলো না । কথা দিয়েও কথা না রাখতে না পারার লজ্জায় সারারাত বিছানায় এপাশ ওপাশ করেই কাটালাম।। সুনন্দা সারাদিনের পরিশ্রমে গভীর ঘুমে। জানতেও পারলো না নিদ্রাহীন রাত জেগে। পরদিন মনোজ আসতে খুব কুন্ঠিতভাবে ওর হাতে ছয়হাজার টাকা এগিয়ে দিয়ে বলতে যাচ্ছি দুঃখিত ভাই পুরো দশ দিতে পারলাম না কিন্তু তার আগেই সুনন্দা ঘরে ঢুকে বললো এই নাও বাকি চারহাজার টাকা। আমাদের বাজারের থেকে ঐ মানুষগুলোর বেঁচে থাকার বেশি দরকার। আমি অবাক বিস্ময়ে, ভাষাহীন মুখে আমার অর্ধাঙ্গিনীর দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম। সেইমুহূর্তে সুনন্দা যেন অন্নপূর্ণার সাক্ষাৎ প্রতিমূর্তি।

প্রবীর কুমার চৌধুরী | Prabir Kumar Chowdhury

Top New Bengali Poetry 2022 | বৃন্দাবন ঘোষ | কবিতাগুচ্ছ

New Bengali Poetry 2023 | ডাঃ মাধাই মিদ্যা | কবিতাগুচ্ছ

Top Bengali Poetry 2022 | কবিতাগুচ্ছ | কল্যাণ সুন্দর হালদার

New Bengali Poetry 2023 | কবিতাগুচ্ছ | বিকাশ চন্দ

মৃত্যু মিছিল | মিছিল শব্দের অর্থ | আলোর মিছিল | মিছিল অর্থ | মিছিল কবিতা | মিছিল কোন ভাষার শব্দ | মিছিল নিয়ে উক্তি | শোভাযাত্রা সমার্থক শব্দ | শব্দের মিছিল | মুখোশের মিছিল | বিক্ষোভ মিছিল | মিছিল এর কবিতা | ঝটিকা মিছিল | মৃত্যুর মিছিল | মৃত্যু – উইকিপিডিয়া | মৃত্যুর পরের এক ঘন্টা | মৃত্যু সংক্রান্ত সাম্প্রতিক খবর | মৃত্যু অনিবার্য | মানুষের মৃত্যু কেন হয় | মৃত্যু শ্রদ্ধাঞ্জলি | মৃত্যু সার্টিফিকেট | মৃত্যু কিভাবে হয় | মৃত্যু নিয়ে | মৃত্যু কবিতা | মৃত্যু শংসাপত্র | শব্দদ্বীপের লেখক | শব্দদ্বীপ | সেরা বাংলা গল্প | গল্প ও গল্পকার | সেরা সাহিত্যিক | সেরা গল্পকার ২০২২ | বাংলা বিশ্ব গল্প | বাংলা গল্প ২০২২ | বাংলা ম্যাগাজিন | ম্যাগাজিন পত্রিকা | শব্দদ্বীপ ম্যাগাজিন

Death March | Death March revolution | Death March 2023 | Death March history | Short film – Death March | Death March Real story | Death March bangla galpo | Death March movie download | Death March pdf story | Death March full story | viral video – Death March | youtube video – Death March | Shabdoweep Founder | Shabdodweep Magazine | Shabdodweep Web Magazine | Shabdodweep Writer | Shabdodweep Story | Shabdodweep Bangla Galpo

Leave a Comment