Briddhashram Story | বৃদ্ধাশ্রম – বিপাশা চক্রবর্তী | 2023

Sharing Is Caring:
Briddhashram Story

বৃদ্ধাশ্রম – বিপাশা চক্রবর্তী [Briddhashram Story]

যে মা দশমাস দশদিন ধরে গর্ভে লালন পালন করে অনেক যন্ত্রণা সহ্য করার পর সন্তানের জন্ম দেয়। অনেক কষ্টে নিজে না খেয়ে সন্তানকে খাওয়ায় পড়ায় বড়ো করে তোলে। নিজের গয়না বেচে উচ্চ শিক্ষিত করে। আশা রাখে বড়ো হয়ে ছেলেরা তার যত্ন নেবে। তার কোনোদিনও কোনো কষ্ট থাকবে না। স্বামীর কাছ থেকে সুখ সে না পেলেও ছেলে বড়ো হয়ে নিশ্চয়ই তাকে সুখী করবে নিশ্চয়ই তার যত্ন নেবে। আদরে আব্দারে মা বলে কাছে আসবে। মায়ের আঁচলে মুখ মুছবে। বিছানা ছেড়ে আগেই মা বলে ডেকে উঠবে। মায়ের শরীর খারাপ হলে ছেলের মন চঞ্চল হয়ে উঠবে। অস্থির হয়ে উঠবে ডাক্তার দেখানোর জন্য। বারবার জানতে চাইবে মা তুমি কেমন আছো। সন্তানকে নিয়ে মায়েদের মনে কতরকমের স্বপ্ন যে ভেসে বেড়ায় তা একমাত্র মায়েরাই বুঝতে পারে। একজন মেয়ে যখন মা হয় তখন তার মাতৃত্বের স্বাদ যে অম‍ৃত সমান হয় তা উপলব্ধি করতে পারে। কিন্তু মায়ের এতো সুন্দর ভাবনায় জল ঢালা হয় যখন মা তার মনের মধ্যে সুপ্ত চাহিদাগুলো মেটাতে পারে না বা মিটে না তখন মায়েরা ভীষণ অসহায় হয়ে পড়ে এবং মনের মধ্যে ভাঙন সৃষ্টি হয়। সন্তানের সুখ আর তার পাওয়া হয় না।

বিয়ের আগে ছেলেরা মায়ের আঁচল ধরে থাকলেও বিয়ের পর স্ত্রী হয়ে যায় তাদের কাছে ভীষণ আপন। রক্ত মিলনের নেশা এমন নেশা অর্থাৎ স্ত্রীসঙ্গ এমন সঙ্গ যা পাওয়ার লোভে ছেলেরা মায়ের থেকেও বেশি আপন করে নেয় স্ত্রীকে। তাই স্ত্রী যা বলবে তা শুনতে তারা বাধ‍্য। নাহলে ঘরের বধূ অশান্তি করবে অপমান করবে ঘর ছেড়ে চলে যাবে। বধূ নির্যাতনের ভয়ে নানারকম কেশের ভয় দেখাবে আর এই ভয়ে ভীত হয়ে ছেলেরা অনেক সময় Confused হয়ে যায়। কি করবে না করবে ভেবে পায় না। তখন সামান্য শান্তি পাওয়ার আশায় বাবা মায়ের সাথে অশান্তি করে।আলাদা থেকে বউকে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করে। তারপর যখন পিতা মাতার মধ্যে কেউ সংসারজীবনের মায়া কাটিয়ে পরমাত্মায় লীন হয়ে যায় তখন যিনি বেঁচে থাকেন তাঁর জীবনে নেমে আসে বিরাট ঝড়। সেই ঝড়ের দাপট সহ্য করতে না পেরে প্রাণ বায়ু বেরিয়ে আসতে চায় । চায় বেঁচে থাকার মতো উষ্ণ ভালোবাসা। নাতি নাতনিদের মন মাতানো আদর। চায়ের কাপে চুমুক লাগিয়ে তাদের সাথে গল্প করা। ঠাকুমারঝুলির গল্প বলে তাদের মনের মতো হয়ে ওঠার ইচ্ছা জাগে বারবার। বারবার কান শুনতে চায় আধো আধো গলায় দাদু ঠাম্মির ডাক। কিন্তু হায় ডিজিটাল যুগ। এ যুগে কেউ গল্প শুনতেও চায় না আর গল্প বলতেও চায় না। চায় শুধু একাকী থাকতে। আর তা যদি না পায় তাহলেই অশান্তি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। আর তখন যদি অশান্তি দেখে বিশেষ করে যখন ছেলের বউ মায়ের বিরুদ্ধে এটা সেটা যোগান দেয়। মা এই কাজ করে না সেই কাজ করে না আমাকে সব কাজ করতে হয়। একসাথে থেকে এতো কিছু করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এই নানা কারণবশত যখন প্রচণ্ড অশান্তি চলে তখন বেশিরভাগ ছেলেরা নিজ স্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে ওঠে ও অশান্তির মধ‍্যে দিনযাপন করে। আবার অনেক ছেলে অশান্তির ভয়ে এবং মাকে বধূ নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ইচ্ছে না থাকলেও বৃদ্ধাশ্রমে রেখে দিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয়।আর সেইরকমই একটি ঘটনা আমি তুলে ধরছি আমার এই গল্পের চরিত্রে। দুই ভাই নয়ন আর চয়নের মা স্বামী হারানোর পর রোজ দুবেলা চোখের জলে বুক ভাসায়। তার সুখের সংসারে সবাই ভীষণ আনন্দেই থাকত। স্বামীর রোজগারের যেটুকু Income ছিল সেইটুকু টাকা থেকে তার জমানো টাকা স্ত্রীর নামে রেখে দিলেও তার চোখের জলের মূল্য কেউ দেয় না। তার নিজ হাতে তৈরি সংসার ছেড়ে যেতে রাজি না হলেও ছেলেরা জোর করে টানতে টানতে নিয়ে যায় বৃদ্ধাশ্রমে। বুঝিয়ে দেবে সন্তান মানুষ করলেও সেই সন্তান মানুষ না হয়ে অমানুষ তৈরি হয়েছে। সে কামের মোহে আসক্ত হয়ে মাতৃত্বকে ভুলে গেছে। যেই মায়ের আঁচল ধরে খোকা ঘুরত ঘুমাতো যার আঁচলে মুখ না মুছলে মুখ মোছা হতো না সেই মা আজ বেশিরভাগ ঘরেই অবহেলিত নির্যাতিত। আবার জননীকে ধরে মারতেও তাদের লজ্জা করেনা। তাহলে কি জন্ম দেওয়াটা পাপ? সন্তানের কাছ থেকে আঘাত পাওয়া হলো জীবনের সবচেয়ে বড়ো আঘাত পাওয়া। বর্তমান সমাজে এই ব‍্যবহারটাই করে থাকে ছেলে মেয়েরা। যদি বৃদ্ধা মা বা বৃদ্ধ বাবা কথা না শোনে তাদের মারতেও সন্তানদের হাত কাঁপে না। সে শিক্ষিত সন্তানই হোক বা অশিক্ষিত সন্তানই হোক। বয়স হলে বাবা মা তখন সংসারের বোঝা হয়ে ওঠে। কিন্তু তারা কোনোদিনই ভাবে না আমরা আজ যে ব‍্যবহার করছি সেই ব‍্যবহার একদিন আমিও আমার সন্তানের কাছ থেকে ফেরত পাবো। কারণ সময় চক্রাকারে ঘুরে চলেছে অনবরত। স্বর্গ- মর্ত -পাতাল আমাদের জীবনে বর্তমান। আমরা যেমন কর্ম করব তেমন ফল ভোগ করব। আর এটাই বাস্তব।

নয়নের মা কিছুদিন হলো বিধবা হয়েছেন। তাঁর মানসিকতাও খুবই খারাপ। তবুও ছেলে বউমার সাথে আনন্দে দিন যাপন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর কপালে সেই সুখ সহ্য হলো না। নয়নের স্ত্রী অতিরিক্ত শিক্ষিত হলেও আচরণে শিক্ষার মানকে কাজে লাগাতে পারেনি। কোনো না কোনো ব‍্যাপারে সামান্য কথা কাটাকাটি হলেও সেই কথাটাকে বিরাট আকার দিয়ে যখন তখন শাশুড়িমাকে অপমান করে ও নয়নের কাছে এমন ভান করে যে সেও তার মাকে যা ইচ্ছে তাই বলে। আর মা চোখের জলে বুক ভাসায়। তবুও কষ্ট করে সংসারেই সে থাকতে চায়। স্বামীর ভিটে ছেড়ে সে কোথাও যেতে চায় না।

রোজ অশান্তি বেড়েই চলে। ছোটো ছেলে চয়ন একটি অকর্মণ্যের ঢেকি। সে যেমন রাগী তেমন বদমেজাজি। কিছু কথা কাটাকাটি হলেই তার কথার আগেই হাত উঠে যায়। সে নিজের রাগকে সামলে রাখতে পারে না। ঘরে এইরকম অশান্তি দেখে বাধ‍্য হয়ে ছেলেরা সিদ্ধান্ত নিল মায়ের জন্য যদি প্রতিনিয়ত অশান্তি হতে থাকে তাহলে ঘরে থাকা দায় তাই মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে দিয়ে আসাই ভালো। ছোটো ছেলেও তাতে সম্মতি দিল।
মায়ের কাছে দুই ভাই গিয়ে প্রস্তাব নিবেদন করে বলল – মা তুমিও ভালো থাকবে আর আমরাও ভালো থাকবো তাই চলো!

— মানে? কোথায় যাবো আমি? কি বলছিস তোরা? আমি বুঝতে পারছি না। আমি কি তোদের কাছে বড়ো বোঝা হয়ে গেছি নাকি রে? বল না কোথায় দিতে যাবি আমায়? বড়ো ছেলে কথা বলতে না পেরে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলল। ছেলেকে কাঁদতে দেখে মায়ের চোখে জল এল। নিজের আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে বলল কি হয়েছে বল না বাবা আমায়। আমি কি অপরাধ করেছি। কি হয়েছে? কোথায় নিয়ে যাবি আমায়? হ্যাঁরে, চয়ন তুই অন্তত বল কোথায় নিয়ে যেতে চাইছিস আমায়? চয়নের মনে মায়া মমতা বলে এসব কিছু নেই বা নিষ্ঠুর প্রকৃতির তাই সে অনায়াসেই বলে দিতে পারল – মা তোমাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে দিয়ে আসতে চাই। তাতে তুমিও ভালো থাকবে আর আমরাও অশান্তির হাত থেকে রক্ষা পাবো।

BENGALI STORY

— কি? বিস্ময়ে হতবাক হয়ে মা দুই ছেলের দিকে তাকিয়ে অঝোর নয়নে কাঁদতে শুরু করলেন আর বলতে লাগলেন আমি কি অসহায় অভাগিনী এক মা যার দুই সন্তান থাকা স্বত্বেও সে নিঃস্ব। হায় ভগবান। এটাই কি আমার কপালে লেখা ছিল?
ছোটো ছেলে বলল – মা ব‍্যাগ গুছিয়ে নিয়েছি চলো এবার।
— না না না আমি যাবো না।আমি কিছুতেই যাবো না। আমায় নিয়ে যাস না। এই বাড়ি আমার বাড়ি। অনেক কষ্ট করে তোদের বাবা আর আমি দুজনে মিলে তৈরি করেছি। তিলে তিলে তোদের বড়ো করে তুলেছি। অনেক কষ্ট করে তোদের লেখাপড়া শিখিয়ে শিক্ষিত করে তুলেছি। তোদের চাকরি ও প্রতিষ্ঠা গড়ে তুলে তোদের পছন্দ সই মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়েছি। কল্পনাতেও বুঝতে পারিনি সেটাই আমার অপরাধ হয়ে দাঁড়াবে। শিক্ষিত ফ‍্যামেলি যে অশিক্ষিত ফ‍্যামেলির মতো আচরণ করবে এটাও কল্পনার অতীত। তবুও যখন তোদের শান্তির জন্য আমাকে বিসর্জন দিতে চাইছিস আমি আর তাতে বাধা দেবো না। কষ্ট হচ্ছে ভীষণ এই ঘর ছেড়ে যেতে। এই ঘরেইতো আমার সব স্মৃতি জড়িয়ে আছে। আচ্ছা সোনারা তোরাতো দেখেছিস আমি কীভাবে তোর দাদু ঠাম্মীর সেবা করেছি। তাদের কখনও অবহেলা করিনি। জানতাম যেমন কর্ম করব তেমন ফল পাবো কিন্তু তাতো হলো না। সব বিপরীত হয়ে গেল। তবুও সন্তানের সুখের জন্য মায়েরা সব দুঃখ অনায়াসেই সইতে পারে। আমিও না হয় তাই সইব। চল আমায় স্বর্গের দুয়ারে পৌঁছে দিয়ে আসবি চল। আমি এই নরকে এক মুহূর্ত থাকতে চাই না। হ্যাঁরে যেখানে নিজের মায়ের এতো অবমাননা করিস সেখানে দেবী মূর্তির আরাধনা করিস কীভাবে অত টাকা ব‍্যয় করে?

নয়ন বলে উঠল – চুপ করো মা চুপ করো। আর কষ্ট দিয়ে একথাগুলো বলো না। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে আমি আর ভাই তোমার অপদার্থ সন্তান। আমাদের ক্ষমা করো মা।

— নারে, তোদের দোষ নয় আমার ভাগ্যের দোষ। চল চল চল আমি আর এখানে এতো অপমানের মাঝে এক মুহূর্ত থাকতে চাই না। আর আজ থেকে তোরা আমায় কেউ মা বলে ডাকবি না। আর কোনোদিনও আমার মুখোমুখি হবি না। আমি আর তোদের মুখ দেখতে চাই না।

কাঁদতে কাঁদতে ঘরের মায়া ত‍্যাগ করে চলে যাবার জন্য অস্থির হয়ে উঠে মা। কিন্তু পুরানো স্মৃতি তার পা জড়িয়ে ধরে। আটকে ধরে রাখে তার মনকে। বেরোতে গিয়েও বেরোতে পারছে না। তখন ছোটো ছেলে একপ্রকার জোর করেই তার মাকে টানতে টানতে বাড়ির বাইরে বার করে নিয়ে আসে এবং ঘরের দরজা বন্ধ করে গাড়ি ডাকার ব‍্যবস্থা করে। বৃদ্ধামা অভিমানে যে কথাগুলো বলেছিলেন কয়েক মুহূর্তের জন্য সেই কথাগুলো ভুলে যান তিনি। বারবার ছেলেদের পায়ে পড়তে থাকে তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য কিন্তু ছেলেরা রাজি হয় না। ছোটো ছেলে মায়ের জেদ সহ্য করতে না পেরে দুমদাম করে মাকে মারতে থাকে। তখন মায়ের প্রতি এমন আচরণ সহ্য করতে না পেরে বড়ো ভাই ছোটো ভাইকে মারতে থাকে। বৃদ্ধাশ্রমের ম‍্যানেজার খুব দয়ালু মনের মানুষ। তিনি দুই ভাইয়ের কাণ্ডকারখানা দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। ছোটো ছেলেকে চড় থাপ্পড় দিয়ে আশ্রম থেকে বার করে দেন এবং বড়ো ছেলেকে বুঝিয়ে দেন তাদের মায়ের প্রতি তাদের আর কোনো সম্পর্ক থাকবে না। তারা যেন কোনোদিনও আর না আসে এই আশ্রমে। তাদের বুঝিয়ে দেন যে তারা অমানুষ। তাই মাকে মারার অপরাধে তাদের মায়ের প্রতি কোনো অধিকার আর থাকবে না।

তারপর নির্যাতিত বৃদ্ধামাকে বুকের মাঝে তুলে নিয়ে বললেন – মা, কেঁদো নাগো দেখো আমিও তোমার আর একটা ছেলে। নাইবা জন্ম দিলে আমায়। ভালোবাসাতো দিতে পারবে কি বলো পারবে না? বৃদ্ধামা চোখের জল মুছে দুই হাতে তার গাল দুটো চেপে ধরে। আর সন্তান স্নেহে আদরমাখা গলায় বলে ওঠেন। আমি স্বর্গ সুখ পেয়েছিরে সোনা। আজ থেকে পুরোনো স্মৃতি ভুলে নতুনভাবে বাঁচতে শিখব আমি। বাঁচতে শিখব।।

বিপাশা চক্রবর্তী | Bipasha Chakraborty

Apratyashita | New Bengali Story 2023 | অপ্রত্যাশিত

Inspector | ইন্সপেক্টর | New Bengali Story 2023

Foodie Jagannath | ভোজনরসিক জগন্নাথ | New Article 2023

New Bengali Story 2023 | গল্পগুচ্ছ | সুজিত চট্টোপাধ্যায়

Briddhashram Story | Briddhashram Story 2023 | Briddhashram Story – Song download | Briddhashram Story – Movie download | Briddhashram Story download pdf | New journal – Briddhashram Story | New article – Briddhashram Story | Trending article – Briddhashram Story | 2023 Trend article – Briddhashram Story | Pdf article – Briddhashram Story | New pdf – Briddhashram Story | Best writer – Briddhashram Story | Best seller – Briddhashram Story | Bengali pdf – Briddhashram Story | Bengali 2023 – Briddhashram Story | Shabdoweep Founder | Shabdodweep | Shabdodweep Web Magazine | Shabdodweep Writer

Leave a Comment