মনসুর আলি – সূচিপত্র [Bengali Story]
মাতৃত্বের কান্না – মনসুর আলি [Best Bangla Golpo Read]
নীরজ শিশুমঙ্গল হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে। তার বউয়ের বাচ্চা হবে। দু’দিন আগে ভর্তি করিয়েছে। এখানে বিকেল চারটে থেকে পাঁচটা অবধি ভিজিটিং আওয়ার। এই সময় রোগীর বাড়ির লোকেরা গিয়ে রোগীর সাথে দেখা করতে পারে। তবে একজন একজন করে। একসাথে দু’জন যাওয়া যাবে না। এখন নীরজের শ্বশুর ভিতরে আছেন। নীরজের বউ তুলি আছে তিনতলায়। ওই তলাতেই লেবার রুম। ব্যথা এখন তুলির অল্প অল্প হচ্ছে। আসছে যাচ্ছে এমন। প্রসব বেদনা ওঠেনি। নীরজ হাসপাতালের মেন গেটের সামনে একা চুপ করে দাঁড়িয়ে সামানের রাস্তা দিয়ে গাড়িঘোড়ার যাতায়াত দেখছে। বালিগঞ্জ মানে কলকাতা। সবাই দক্ষিণ কলকাতা বলেই জানে। গেটের ডানদিকে একটা লোক কিছু পেয়ারা আর শশা নিয়ে বসেছে। বিক্রি-বাটা ভালোই হচ্ছে। চওড়া রাস্তার ওপারে একটা ফলের দোকানও রয়েছে। আপেল, মোসাম্বি, কমলালেবু এইসব সাজানো রয়েছে ঝুড়িতে। নীরজ বউকে ফোন করল। পেশেন্টের কাছে মোবাইল রাখা নিষেধ এখানে। এখন যেহেতু ওর শ্বশুর ভিতরে আছেন তাই শ্বশুরের মোবাইলে ফোন করল নীরজ।
শ্বশুর অমল রায় ফোন ধরলে নীরজ বলল, ‘তুলিকে দিন বাবা।’
তুলি ফোন নিলে নীরজ বলল, ‘পেয়ারা শসা খাবে? এখানে বিক্রি হচ্ছে।’
তুলি বলল, ‘না। এখন ওসব খাব না।’
‘আপেল কমলালেবু-টেবু?’
‘না থাক। মশলামুড়ি-টুড়ি যদি থাকে দেখো।’
‘আর কী?’
‘পাঁচ টাকা দামের ক্রিম বিস্কুটের প্যাকেট পেলে একটা নাও।’
‘চিঁড়ে নেব? ভাজা চিঁড়ে?’
‘তা নেবে নাও।’
এসব কিনে দিয়ে আসার পর নীরজ আবার সেই গেটের সামনে এসে দাঁড়াল। প্যান্টের পকেট থেকে খৈনির কৌটোটা বার করল। একটু খৈনি করতে হবে। শ্বশুরমশাই ওদিকটায় আছেন। এসে পড়লে আর বানানো যাবে না। নীরজের বয়স আটত্রিশ। একটি মেয়ে আছে ছ’বছরের। এটি দ্বিতীয় ইস্যু। সে নেশা-ভাং খুব একটা করে না। নেশার মধ্যে শুধু ওই খৈনিটুকু। শ্বশুর বয়োজ্যেষ্ঠ লোক। তার সামনে তামাক ডলা ঠিক হবে না। তাই হাতের তালুতে একটু তামাক ফেলে খসখস করে ডলন দিতে লাগল তাড়াতাড়ি।
নীরজ একজন শিক্ষক। একটি সরকারি হাই স্কুলে ইতিহাস পড়ায়। পার্মানেন্ট টিচার। ফলে সংসারে সুখ আছে। মেয়ে একটা ভালো প্রাইভেট স্কুলে পড়ে। এখন ক্লাস ওয়ান। পড়াশোনায় ভালো। ফার্স্ট হয়ে এসেছে এ অবধি। তুলি গ্র্যাজুয়েট। আর নীরজ এমএ বিএড। যাইহোক, সুখের সংসার। তবুও ঝগড়াঝাঁটি যে হয় না তুলির সাথে তা নয়। সংসার যত সুখের হোক, সামান্য সামান্য বিষয়ে একটু-আধটু মনোমালিন্য ঝগড়াঝাঁটি সে তো সবারই থেকে থাকে। আট বছর পার করল নীরজ আর তুলি বিয়ের পর থেকে। শিখার জন্মের পর ছ’বছরের মাথায় আর-একটা সন্তান তারা নিল। একটু বাদেই হাসপাতাল থেকে একটা ফোন ঢুকল নীরজের ফোনে, ‘তুলি চ্যাটার্জির বাড়ির লোক বলছেন?’
নীরজ উদ্বিগ্ন গলায় বলল, ‘হ্যাঁ বলুন।’
‘তুলি চ্যাটার্জিকে লেবার রুমে শিফট করা হয়েছে। আপনারা আসবেন।’
‘হ্যাঁ আমরা তো হাসপাতালেই আছি।’
‘ঠিক আছে। থাকুন। যেকোনো সময় ডেলিভারি হতে পারে।’
‘আচ্ছা’ বলে ফোন রাখার পর নীরজ শ্বশুরমশাইকে ফোন করে জানাল যে, হাসপাতাল থেকে ফোন করেছিল। তুলিকে লেবার রুমে নিয়ে গেছে ওরা।

অমলবাবুও বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন। বাচ্চা প্রসব করতে গিয়ে অনেকসময় অনেক বিপদ ঘটে যায়। পেশেন্টের জীবনহানিও হয়ে যায়। তবে তার সংখ্যা খুবই সামান্য। তবুও চিন্তা একটা হয়ই। যদিও শিশুমঙ্গল নামকরা জায়গা। এখানে অনেক যত্নের সাথে প্রসূতির চিকিৎসা করা হয়। এখন যা চলছে তাতে এই হাসপাতালটা অনেক ভালো। যা চলছে বলতে, প্রায় জায়গায় সিজার করার একটা প্রবণতা রয়েছে। এখানে কিন্তু ডাক্তারেরা নর্মাল ডেলিভারি করানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকেন আর অপেক্ষাও করেন। সিজার করলে হয়ত প্রসব কষ্ট তুলনামূলক কম হয়, কিন্তু বাচ্চার মায়ের শরীর সারাজীবনের জন্য দুর্বল হয়ে যায়। ভারিভুরি কাজ করতে পারে না মা। নীরজ আজ থেকে ন’বছর আগে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পেয়েছিল। গরিব বাবা আর মা অনেক কষ্ট করে ওকে লেখাপড়া শিখিয়েছিলেন। বাবা এই দু’বছর হচ্ছে চলে গেছেন। মা এখনো আছেন। সুস্থই আছেন। তবে বয়সের ছাপ শরীরে এসে গেছে। মায়ের বয়স ষাট ছুঁতে চলল। নীরজ আর তুলির প্রথম সন্তান মেয়ে। তাই স্বভাবতই এবার ওরা একটা ছেলের আশা করে আছে। ঈশ্বর যদি মুখ তুলে তাকান একটু।
নীরজ হাসপাতালের গেটের সামনে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে এখনো। পনেরো মিনিট পার হয়ে গেল। কোনও খবর আসছে না। হঠাৎ একজন বেঁটেখাটো মোটাসোটা মহিলা স্কুটিতে চেপে সাঁ করে মেইন গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকে গেলেন। তারপর সুড়সুড় করে দ্রুত গতিতে একটা চারচাকা গাড়ি গেট দিয়ে ঢুকল। তার পেছনে আর-একজন বেঁটেখাটো মোটাসোটা বারমুডা প্যান্ট পরা লোক স্কুটি চেপে গেট দিয়ে ঢুকছেন আর সেই চারচাকা গাড়টার পিছন দিয়ে চিৎকার করছেন, ‘বাঙ্গুর নিয়ে চলো! বাঙ্গুর নিয়ে চলো!’ নীরজ কী ব্যাপার প্রথমটায় কিছু বুঝল না। দাঁড়িয়ে দেখতে থাকল। পিছনে আর-একটা গাড়ি সবে হাসপাতালে ঢুকবে বলে গেটের দিকে এগোচ্ছে। তখন স্কুটিতে আসা ওই লোকটি গাড়ির ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘প্লিজ দাদা প্লিজ।’ বলে গাড়িটাকে পিছু হটতে ইশারা করলেন হাত দিয়ে। গাড়িটা আস্তে আস্তে পিছনে সরে গেল। এবার আগের গাড়িটা মানে যেটাকে বাঙ্গুর হাসপাতালে নিয়ে যাবেন এই লোকটি আর সামনে চলে যাওয়া স্কুটির মহিলাটি, সেই গাড়িটি পিছিয়ে আসতে লাগল। ড্রাইভার বাঙ্গুর হাসপাতালের দিক জানতে চাইল এই পুরুষটির কাছে। সেসময় গাড়িটা নীরজের একদম পাশে চলে এসেছিল। নীরজ ঘাড় একটু বেঁকিয়ে ভিতরে তাকাল।
দেখল এক মাঝবয়েসী মহিলা গাড়ির পিছনের সিটে হেলান দিয়ে বসে আকুল কান্না কাঁদছেন। পাশে এক তরুণী হাল্কা করে হাত দিয়ে তাকে ধরে আছে। নীরজের আর বুঝতে বাকি রইল না। প্রেগন্যান্সির ব্যাপার। মহিলাটি একেবারে বাচ্চাদের মতো কেঁদে চলেছেন আর পেটে হাত বুলিয়ে চলেছেন। তার মাথাটা একবার এপাশ আর একবার ওপাশ শুধু এই করেই চলেছেন। সাথে সাথে নীরজের মনে ছবি ভেসে উঠল, তুলি হয়ত এখন এরকম কান্না করছে। হয়ত পা দুটো দু’দিকে বাঁধা আছে। অসহ্য যন্ত্রণা হয়ে চলেছে তার পেটে আর সমস্ত শরীরে। সে যন্ত্রণা যে ভোগ করে কেবল সে জানে কেমন তার তীব্রতা। ডাক্তারেরা হয়ত উদ্বিগ্ন মুখে চেষ্টা করে চলেছেন নর্মাল ডেলিভারি করানোর জন্য। কিন্তু হচ্ছে না হয়ত। মৃত্যুসম কষ্ট হয়ত এই মুহূর্তে তুলি ভোগ করে চলেছে। মুহূর্তেই তার মনে হয়, এ বাচ্চাটা না নিলেই হত। একটা তো ছিলই। হোক না সে মেয়ে। কেন যে নিল? এখন তুলির কত কষ্ট! অনেকসময় প্রসবের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে অনেক মা নার্ভ ফেল করে ফেলেন। ফলে সেই মায়ের মৃত্যুও ঘটে যায়। তুলি যদি মারা যায়! কী হবে! নীরজ আর ভাবতে পারছে না। শুধু ওর দু’চোখ বেয়ে জল আসতে বাকি। ওর এখন কেবল নিজেকেই অপরাধী মনে হচ্ছে। পুরুষ মানুষ তো শুধু জন্ম দিয়েই মুক্ত। আসল কষ্ট তো মহিলারাই ভোগ করে। সে বইতে পড়েছে, একসাথে শরীরের কুড়িটা হাড় ভেঙে গেলে যে কষ্ট হয়, প্রসবের কষ্ট তার থেকেও বেশি। নীরজ আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। মাথাটা ঝিমঝিম করছে। মুখের খৈনিটা বার করে ফেলে দেয় সে। তারপর পাশে যে বাসস্টপ আছে সেখানের লোহার বেঞ্চির ওপর গিয়ে ধপ করে বসে পড়ে। তারপর নিজেকে একটু সামলে নেয়। বুক ফেটে যাচ্ছে তার। তুলির মতো মেয়ে হয় না। নীরজ মনে করে তুলি তার থেকে ভালো মানুষ। ওর জুড়ি মেলা ভার। কত মনোযোগ আর ভালোবাসা দিয়ে সংসারের সব কাজকর্ম করে। বাকি যেটুকু সময় পায় মেয়েটার লেখাপড়ার পিছনে ব্যয় করে। এই যে শিখা প্রতি ক্লাসে ফার্স্ট হয়ে হয়ে আসছে, সে তো তুলিরই কৃতিত্ব। নীরজ কতটুকুই বা দেখে তাকে। স্কুল থেকে ফিরে বিছানায় গড়িয়ে পড়ে। বিশ্রাম করে। সারা সন্ধেটা তুলিই তো তাকে পড়ায়।
আজ সেই তুলির জীবনমরণ দশা। তুলি চলে গেলে কী হবে? ওই যে এই সংসারটাকে নিজে হাতে ধরে রেখেছিল। নীরজ কি একা ওর ছেলেমেয়েকে মানুষ করতে পারবে? না, তা সম্ভব নয়। ওর চাকরি আছে। আর দ্বিতীয় বিয়ে ও করবে না। তুলিকে কথা দিয়েছে। তুলি বলেছিল, ‘আমি যদি নার্সিংহোম থেকে আর ফিরে না আসি, তুমি তাহলে আর-একটা বিয়ে করে নেবে, তাই না?’ নীরজ বলেছিল, ‘আমার মায়ের দিব্যি, আমি আর বিয়ের পথে এগোব না। তবে তুমি যেন ভালোয় ভালোয় ফিরে আসো। এটাই ঈশ্বরের কাছে একান্তভাবে কামনা করি। আমি ছিলাম পথে ঘুরে বেড়ানো বাউণ্ডুলে। তুমিই আমার সংসারটাকে গুছিয়েছ। তোমাকে আমি হারাতে চাই না।’ কিন্তু যদি অঘটন ঘটে যায়! এতক্ষণে সেই গাড়িটা চলে গেছে। নীরজ আর একটু তামাক হাতে নেবে বলে খৈনির কৌটোটা বার করল। হঠাৎ নীরজ শুনতে পেল মাইকে ঘোষণা হল — নর্মাল পেশেন্ট তুলি চ্যাটার্জির বাড়ির লোক অনুসন্ধান অফিসে এসে যোগাযোগ করুন। নীরজ বুঝল তুলির ডেলিভারি হয়ে গেছে। অমলবাবু ততক্ষণে চলে এসেছেন। নীরজ গিয়ে দেখল ওর একটা ছেলে হয়েছে৷ আর তুলিও ভালো আছে। নীরজ তুলির দিকে তাকাতেই তুলি হাসল। মাতৃত্বের কান্নার পর এখন যে হাসির মুহূর্ত এসেছে। নীরজও মুচকি হাসল। অপরাহ্ন আকাশের ম্রিয়মাণ সূর্যটাও যেন একটু হেসে উঠল।
মনসুর আলি | Mansur Ali Gazi
Do not let the towel sink | গামছাটা ডুবতে দিও না | Bangla Galpo 2023
Love and nature | প্রেম ও প্রকৃতি | Bengali Article 2023
Shree Jagannath Bijay Kabya | ‘শ্রীজগন্নাথবিজয়’ কাব্য প্রসঙ্গে | 2023
Anabasarakalina besha of Jagannath | অনবসরকালীন বেশ | অভিজিৎ পাল
Best Bangla Golpo Read | New Best Bangla Golpo Read | New Bengali Story Diary Blogs | Best Bangla Golpo Read in pdf | Sabuj Basinda | High Challenger | Best New Bengali Web Story 2023 | Shabdodweep Read Online Bengali Story | Shabdodweep Writer | New Bengali Story Diary in India | World’s Bengali Story Diary Blogs | New Bengali Web Story in Online | Online Bengali Story Diary | Full Read Online Bangla Golpo | New Bengali Web Story Blogs | Best Bangla Golpo Read in Bengali | Live Best Bangla Golpo Read in English | Live Bengali Story pdf | Full Bangla Golpo Read Online | New Bengali Story Diary | Bengali Story Diary – Episode | Golpo Dot Com Series | Horror Adult Story Video | Horror Live Bengali Story | Best Bangla Golpo Read Online Audio | Best Bangla Golpo Read Video | Best Bangla Golpo Read Netflix | Full Bangla Galpo Read | Bengali Story Diary Download | Shabdodweep Competition | Bangla Golpo Read Online Competition | Bengali Writer | Bengali Writer 2023 | Trend Bengali Story Diary | Recent Bengali Story Diary | Top Best Bangla Golpo Read | Popular New Bengali Web Story | Best Read Online Bengali Story | Bangla Golpo Read Online 2023 | Shabdodweep Bangla Golpo Read Online | New Bangla Golpo Read Online | Bengali Story Diary in pdf | Golpo Dot Com Download | Best Bangla Golpo Read – audio | Horror Adult Story | Read Bengali Story Diary 2023 | Live Bengali Story Diary – video | New Best Bangla Golpo Read APK | New Bengali Web Story Download | Live Bengali Story mp3 | Full Live Bengali Story | Bengali Famous Story 2023 | Shabdodweep Best Bangla Golpo Read | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Live Best Bangla Golpo Read – audio | Top New Modern Bangla Golpo | Bengali Famous Story – video | Best Bangla Golpo Read mp3 | Full Bangla Golpo Read Online | Bengali Literature | Shabdodweep Magazine | Shabdodweep Web Magazine | Live Bangla Golpo Read Online | Shabdodweep Writer