Best Bengali Story Store | Shabdodweep Story Session

Sharing Is Caring:

কোসাইন থার্টি ডিগ্রি – মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ্

বিনুর ফোনটাকে যারপরনাই বিরক্তিকর লাগলো।প্রায়শ এমনটি ঘটে। তারপরও কানের ভেতরের করিডোরে ঢুকে পড়েছে তো পড়েছেই। লম্বু মিজান আরেকটু গভীরে গিয়ে অবিরাম খোঁচাতে থাকে — তোমার ঘ্যান ঘ্যান,প্যান প্যান আমার একদম ভাল্লাগে না। সাথে পাল্লা দিয়ে গেল যেন দখিনা বাতাস। অদ্ভুত রকম কবিতা কবিতা ম্যুড বিনুর, ফুরোতেই চায় না। মিজানের শেখানো সাইন থার্টি ডিগ্রি আর কোসাইন থার্টির মান কেন মুখস্থ থাকলো না, এটার জবাবের চাইতে পারস্পরিক দেখাদেখির প্রায়োরিটি বেশি বলে মনে হলো।

দীর্ঘ এগারো বছর চার মাসের অখণ্ড হিসেবে এই উত্তর বিনুর সাথে মিলাতে না পারার অনুভূতি ছিল উপভোগ্য। সময়, দুঃসময়ে ছন্দের কারুকাজ বুকে আর গভীর নিঃশ্বাস একাট্টা হয়ে গেছে। গণিতের বিভীষিকা সামনে, মোকাবেলা হয়েছে। ত্রিকোণমিতির সাইন-কোসাইন জটিলতাও এক সময় কেটেছে। সকালের মোড়ে নগরের অফিসগামীদের রচিত লাগাতার জ্যাম, দুপুরের মাথায় হাই ভোল্টেজ সূর্যের অবিরাম অগ্নিদৃষ্টি উপেক্ষা করে বাসের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে অভিজ্ঞতা সঞ্চয়টা দীর্ঘদিনের চারকোল পোড়ানোর শহরে। বিনুর লাস্ট সেমিস্টারের লাস্ট কোর্স নিয়ে প্রফেসর আব্দুল বাতেনের অতিরিক্ত আর সেই পুরনো কথন– আমিতো আছি।তোমার এভরিথিং আমার দায়িত্ব। সুতরাং নো টেনশন।

বিনুর মাকে রেখে বাবার লোকান্তর অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল। কেউ চায় না পৃথিবীর সুন্দর আয়োজন ছেড়ে চলে যেতে অলক্ষ্যে, ওপারের অদেখা জায়গায়। কিন্তু কারণে,অকারণে জীবনচক্র থেমে যায়। শরীর থেমে যায়। শৈরিক, ধামনিক গতিবেগে স্থবিরতা। নিউরনে স্থবিরতা। পৃথিবীর অমোঘ নিয়ম মেনে নিতেই হবে। প্রফেসর আব্দুল বাতেন দেখভাল করবেন। বন্ধুর মেয়ের জন্যই করা। দায়িত্ব নিয়ে কাজ করা। বিনুর বাসায় করে যতটা, তারচে বেশি করে প্রচার। এটি অশোভন লাগে বলেই বিনু মাঝে মাঝে বাতেন সাহেবকে বাসায় আসতে মানা করে। বিপত্নীক বাতেন সাহেব গোঁ ধরেছেন, বিয়ে একবারই হয়েছিল সুরমার সাথে। সুরমার এক্স-এর সাথে এতটা ঘনিষ্ঠ যে, তার পরিমাপের যন্ত্রটা আগেই আবিষ্কার কেন যে করে গ্যালেন না আবিষ্কারকগণ, বোধগম্য নয়। বাসরের পরদিন সুরমা তিন দিনের জন্য সেই যে বাপের বাড়ি গেল। আর তাকে আনাই গেলো না। ঘুড্ডির সুতো একদম কেটে পালিয়েছে।

মিজানের প্রায় ছয় ফুট উচ্চতার শরীর নিয়ে টিন-এজ মেয়েগুলোর এক সময় ব্যাপক চর্চা ছিল। স্কুলের বারান্দা পেরিয়ে এখন কলেজ মুখর করে রাখে। কিন্তু বিনুর স্বল্প এবং পাতলা গড়নটুকুতে মিজান মজেছে। বিনুও মিজানের নাক, কান, চোখ, কন্ঠ মুখস্থ। রাত জেগে এসাইনমেন্ট তৈরি, বুধু মামার হালিম, শান্ত মামার লেবু-দারুচিনি-জিরা চা, ফুটপাতে পথকবি নিয়াজের স্বল্পপুঁজির বইয়ের এলোমেলো দোকান, শাহানুরের কুড়ানো ফুলের মালা, বৈশাখী মেলার সুখ, শ্রাবণের বৃষ্টি যাপন, পূর্ণিমায় অবগাহন, ঘোড়া গাড়ির চার চাক্কায় রাজপথে ছন্দগ্রহণ — সর্বত্র বিনুর নির্ভার আনন্দের অবাধ আয়োজন। মিজান অত্যন্ত নিপুণ পরিচর্যা দিয়ে ভালবাসার বৈতরণীর হাল ধরে রেখেছে। সেই মিজান তার নিজের বাবা-মাকে ম্যানেজ করতেই পারেনি। কথার সূত্র তুলে ধরতে পারেনি। বিনুর বাবাহীন জীবন, মায়ের ধৈর্যের সংসারে অপরিসীম কষ্টের ভাগ নিতেও পারছে না বিনু। মিজানকে তাই বারবার তাগাদা দিচ্ছে সে। কিন্তু মিজান এক পর্যায়ে জুম্মন স্ন্যাকস বারের টেবিলে থাপ্পড় মেরে সেই যে বেরিয়ে এসেছে, পরে জানা গেলো সে দুবাই চলে গেছে। তারপর থেকে একে একে মোবাইল, ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার ক্রমেই তলিয়ে যাচ্ছিল বিস্মৃতির অন্তরালে। বিগত দিনের আপোষহীন প্রতিশ্রুতির ফর্দগুলো এখন ব্যঙ্গ করে চলেছে নিয়মিত।

কিছুদিন পরে আবারও। যেন আরেক মিজান। দেশে এসেছে। বারি প্লাজার সামনে দেখা। একটা গাড়ি থামল বিনুর পাশে। ভেতরে মহিলার গায়ে পোশাক, আর অলংকারের তুফান। চোখ দুটোই কেবল দেখা সম্ভব ছিল। মহিলা-ই নিজে নেকাব সরিয়ে বলল, আসো বইন। কই যাইবা! গাড়িতে উঠো। একটা পিচ্চি জানালার ভেতরের দিক থেকে ঠোঁট চেপে জানালার কাচ চাটছিল। ওদিকে তাকিয়ে হাসলো বিনু। ড্রাইভারের সিটে মিজান; বলল, কোথায় যাচ্ছো, বিনু? শুনলাম, রেজাল্ট ভালো হয়েছে! সুন্দরী বৌ, দামী করোলা, নাদুসনুদুস বাচ্চা —ভালোই তো?
— হ্যাঁ, বলতে পারো। ভালো থাকলেই ভালো। আমি একটু কলেজে যাব। বাসায় এসো একদিন তোমার মিসেসকে নিয়ে। রিকশা ডেকে উঠে গ্যাল বিনু।

এবার বিনুর অন্য আরেক ঝড়, ঝুঁকি আর চ্যালেঞ্জ। একটু সাহস করেই সেনাবাহিনীর লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ে সে। বাতেন সাহেব তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ব্রিগেডিয়ার আলমের মাধ্যমে বিনুকে সেনাবাহিনীতে চাকুরির জন্য বিশেষ সাপোর্ট দেয়াতে একটু তাড়াতাড়িই হলো। মিজানকে সুখবরটা জানাতে পারেনি বিনু। প্রয়োজন হয়তো ছিলো না। একদিকে কলেজ জীবন পেরোয়নি। নতুন নতুন আশা-আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী এগিয়ে যাওয়ার নির্দিষ্ট ছক। আরেকদিকে চাকরি, মায়ের সাথে সংসার। শেষ পর্যন্ত চাকরিটাই সত্য হয়ে দাঁড়ালো। অফিসার তাকে পড়াশোনা চালিয়ে যাবার কথাও বললেন।

তিন মাস পর বুকে ব্যথা, আর জ্বর নিয়ে সলিমুল্লা মেডিকেলে ভর্তি হতেই হলো বিনুকে। রিপোর্টে বিনুর ব্রেস্ট টিউমার, ইনফেকটেড হতে চলেছে। বিজ্ঞ ডাক্তাররা বোর্ডে সিদ্ধান্ত দিলেন ব্রেস্ট অপসারণের। বাতেন সাহেব তার ব্রিগেডিয়ার বন্ধুর সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বললেন, যদি অপারেশন ছাড়াই এটার ট্রিটমেন্ট করা সম্ভব হয়। ওর তো বিয়েই হয়নি। জেনেশুনে এটা কোনো পাত্র মেনে নেবে না। এরকম সংস্কৃতির চল দেশে কম। কিন্তু দ্বিতীয় কোনো পথ খোলা নেই। ব্রেস্ট অপারেশন হলো। আশপাশের যারা আর্মি বিনুর জন্য ঘটকের দ্বারস্থ ছিলো, সবাই ফিরে যেতে শুরু করল। চাকুরিটাও ছেড়ে দিতে হলো তাকে।

বাতেন সাহেব এতকাল বিনুকে আগলে রেখেছিলেন, এক পর্যায়ে সিদ্ধান্তও জানিয়েছেন, বিনুকে নিয়ে এবার একটা কিছু ভাবছেন। বিনুর মা খুশি হয়ে এটাতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। কিন্তু বিনুর বিশ্বাস, মিজান ফিরে আসবেই। আর নিজের শরীরে এমন একটা অস্বাভাবিক, অস্বস্তিকর পরিণতিতে বাতেন সাহেবকে জড়ানোটাকে যৌক্তিক মনে হলো না। চাকরিতে বাতেন সাহেবের সহযোগিতাকে বাইপাস করারও মানে নেই। আবার পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই একটা লোকের সাথে সংসারের আসন্নবর্তী জটিলতাগুলো যেন ধেয়ে চারদিকে থেকেই আসতে শুরু করেছে। মা-ও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। মেয়েদের মেনে নেয়ার চিরাচরিত রীতিতে আটকে যাবার জালটাকে অস্বীকার করা গেলো না বলেই বাতেন সাহেবের সংসারের চাবি হাতে নিতে হলো।

বিনু বাসর রাতে শর্ত দিলো — আপনার আমার সংসার হবে ঠিকই। সম্পর্ক থাকবে আংকেল আর ভাস্তির।

রীতিমতো খুবই জঘন্য একটা ধাক্কা খেলেন। এর কোনো মানে হয়? এটা আবার ক্যামন শর্ত! বাতেন সাহেব অপ্রস্তুত হলেন, এরকম একটা শর্তে বিনু আসবে কল্পনাই করা যাচ্ছে না। আপনার জন্য আমি সবই করব, কিন্তু অই একটা কাজের বিষয়ে আমি ক্ষমা চাই। আপনার কোনো অনুদান আমি গর্ভে নিতে পারব না। বাতেন সাহেবের সমস্ত শরীরে ঠাণ্ডা পৌষ মাসের একটা বাতাস ঝাপটা মারে। ইন্দ্রিয়গুলোতে সুনসান নীরব হেমন্তরাতের মাঠ। বুকের ভেতর ঢিপঢিপ আর শোনা যাচ্ছে না। বলে কী মেয়েটা! অধুনালুপ্ত নদীর খননের সাথে সাথেই বর্ষা-বন্দনা চলছে। ঘোলাটে জলের চিকন ধারায় নতুন নতুন গল্প যেন অকপটে তৈরি হচ্ছে। সারাদিনের ক্লান্তিতে বিছানায় ঢলে পড়া দুটি অসমবয়সী মানুষ, ভালো করে ম্যাচ খেলার উদ্দামতা হারিয়ে ফেলেছে। অনেক কষ্ট নিয়ে বাতেন সাহেব পাশ ফিরেন। শুয়ে শুয়ে পোষা কুকুর চপলের কথাই খেয়াল হলো বাতেন সাহেবের।
আজকের চপল অনেকটাই নিশ্চুপ। বিনু এটাও জানিয়েছে, সে কুকুর একদমই পছন্দ করে না। একটু বেশিই বেশি ভয় পায়।

দিন যায়। রাত আসে। ফেরে না বসন্ত। ডাকে না কোকিল। নীরবতার মতো শান্তি কোথাও নেই। কিন্তু ইদানীং তাদের নীরবতা অর্থহীন এবং বিষময়। রিমাল রেখে গেছে ধ্বংসের চিহ্ন। বাতাসে জলবাস্পের গাঢ়তা। রেখে গেছে আষাঢ়-শ্রাবণ। রাতটা ঝড়োবৃষ্টির মাতলামিতে মেতেছে। বাইরে শোঁ-শোঁ গোঙ্গানির মতো আওয়াজ। অপেক্ষাকৃত দুর্বল বৃক্ষের ওপরই ঝড়ের খবরদারি চলছে। মশারির বাইরে ডেঙ্গুর এডিসরা র‍্যাকি করছে। সুযোগ পেলেই ক্যাপ্টেন মস্কুইটোর হুকুম তামিল করবে। বারান্দায় চপল গুটিসুটি মেরে বাইরের বজ্রপাত, বিজলি উপভোগ করছে হয়তো। জানালার কাঁচ বেয়ে জলের পেছনে জল নীচের দিকে চোয়াচ্ছে। প্রচণ্ডতার সাথে বাজ পড়লো কোথাও। বিনু আবেদ সাহেবকে একটু বেশি জাপটে ধরলো। আবেগের নিম্নগামী সুখটা বয়সের দেয়ালকে ভেঙ্গে দিচ্ছে। জমাটজলের তোড়ে ধ্বস নামছে পাহাড়ে। জলবৃষ্টি উপেক্ষা করে ওপাড়ার তাইজুদ্দি চাঁঈ হাতে বিলের দিকে দৌড়ুচ্ছে হয়তো । বিনুর বুক জানালা ভেদ করে আসা বিজলির আলোতে ঝলকে ওঠে। অপারেশনের পর বিনুর বুকে অপারেশন পরবর্তী একটা ভীতিকর ছবির জন্য প্রস্তুত ছিলেন না বাতেন সাহেব। চোখ মেলে দেখতেও চেষ্টা করলেন। শিহরিত হলেন কিছুটা।

মোবাইল বেজে উঠল মনে হয়। বিনু উঠে গিয়ে রিসিভ করে— ওপাশের অশরীরী কন্ঠ!
— হ্যালো,আমি। মিজান।
— গেইটটা একটু খুলবে? — প্লিজ?
— কোন মিজান?
— বিনু, আমাকে চিনতে পারছো না?
— না, তো!

লাইনটা কেটে গ্যালো। ব্যাক করতে চাইল বিনু। মোবাইলটা ভেতর থেকে জানিয়ে দিল, ব্যালেন্স নেই। বাতেন সাহেব উঠে গেছেন জানালার ধারে।
— বিনুও। চলে আসলেন কেন? বিনু, ইলেক্ট্রিসিটি আর আসবে বলে মনে হয় না, কিন্তু চা খেতে মন চাইছে।

বাজ পড়লো আবার। বিনুকে জাপটে ধরে রেখেছেন বাতেন সাহেব।
— আপনার শরীরের তাপ লাগছে, জ্বর নাকি? গায়ে ঠাণ্ডা বাতাসে আরো সমস্যা বাড়বে। চলেন, মাথাটা ম্যাসেজ করে দেই। ইলেক্ট্রিসিটি আসুক, চা করে দেবো।
— নাহ, থাক।

মোবাইলটা আবারও বেজে উঠল। এবার রিসিভ করলেন বাতেন সাহেব। ওপাশের বক্তব্য বিনুকে বুঝার সুযোগ না দিয়েই ছুটলেন বাতেন সাহেব।
— আবার এই বৃষ্টিতে কোথায় ছুটলেন ছাতা ছাড়াই—
বাতেন সাহেব জোর করেই বেরিয়ে গ্যালেন। বিনুকে অজানা আশংকা চেপে ধরছে। মোবাইলে লাস্ট রিসিভড নাম্বারটা মিজানের! শরীরে কয়েক টন অস্থিরতা চেপে বসতে শুরু করেছে।

রাতটা কেটে গেল। ভোর দোয়েলের শব্দে জাগলো নতুন সকাল। সারাদিন গেলো। ইলেক্ট্রিসিটির দম ফেরেনি। মোবাইল চার্জ ফুরিয়ে ডেড হয়ে পড়ে আছে। ছাদের গাজী ট্যাংক খালি। অতএব নাওয়া খাওয়া বন্ধ। ফ্রিজে আঁশটে গন্ধের কিছু ভাজি, আর পাউরুটিতে দুপুর গড়ালো। বেলা তিনটায় বাতেন সাহেব বাসায় ঢুকলেন। বিনু কাঁদছে। ওর চোখ দুটো ছল ছল করছিল। দেখে নাকি চমৎকার লাগছিল বাতেন সাহেবের! লাগবেই তো— কই গ্যালেন, কিছুই তো বলে গ্যালেন না! আমিওতো একজন মানুষ!
— বলব। চলো, আগে ঘরে যাই।

গতরাতে মিজান ফোন করেছিল। ওর বৌয়ের সিজার হবে।
— রক্ত লাগবে। ও-নেগেটিভ।
— লাগুক, তাতে আপনার কী? আর যাবেন, বলে যাবেন না? আমার কি কষ্ট হয় না!
— আরে আমার রক্ত ও-নেগেটিভ ছিল। তাই ভাবলাম— ওর যদি উপকার হয়। বিকেলে তোমাকে নিয়ে যাব। ওদের ফুটফুটে একটা মেয়ে হয়েছে। আগেরটা নাকি ছেলে। ভালোই হলো।

নীরবে উঠে গেল বিনু। পেছনে বাতেন সাহেব।
— কী, খুশি তো?
— আহ, ছাড়েন, বিরক্তিকর!

ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করেও পারবে না বিনু, হে হে হে। একদম অন্যরকম আটকে ফেলা বিনু, সহসা বৈশাখী আকাশের মতো চঞ্চল হয়ে উঠেছে। অভূতপূর্ব খেলার বাঁশি বাজলো যেন। ইলেক্ট্রিসিটি চলে আসায় খেলাটা আরও জমবে মনে হয়। গাজী ট্যাংক আবারও ভরে উঠবে। অন্যরকম বর্ষণে ক্লান্ত হবে সবাই।

অপ্রত্যাশিত – মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ

সমুদ্র স্যারের স্পণ্ডিলাইটিসের ঝামেলাটা বাড়লো। আবারো হাসপাতালের কেবিনে। সঙ্গে মাতৃহারা ছেলেটা–বিজয়। মায়ের চেহারাটা বুঝে ওঠার আগেই বিজয় তার মাকে শেষবারের মতো দেখে নিয়েছিল। তারপর থেকে ছেলের দিকে তাকিয়ে নতুন বিয়েটা করতেই হলো।

দ্বিতীয় মা তানিশা মাস দুয়েক না যেতেই বিদায়। দ্বাদশবর্ষী বিজয়ের পেছনে সময় নষ্ট করতে পারবেনা সে।তাছাড়া বিজয়ের বয়স নতুন মায়ের চাইতে মাত্র পাঁচ বছর বেশি।বলতে গেলে দুজনেই শিশু।দুটো মানুষের মধ্যে শিশুসুলভ আচরণ সমুদ্র স্যার সহ্য করতে পারছেন না। এবারের জটিলতার সাথে যুক্ত হলো হার্টের ব্লক। ডা. মিশকাতের কাছে গিয়ে ভালোই হলো। না হলে বোঝাই যেত না ব্লকের বিষয়ে। তানিশা’র অমতে বাবা -মা, আত্মীয়রা এধরনের সম্পর্কের হোতা।বিশেষ করে সমুদ্র স্যারের দোস্ত জাকির ইঞ্জিনিয়ার, তানিশার মামা। সমুদ্র স্যারের প্রাসাদোপম বাড়ি।
একটা না। চারটা। সরকারি ব্যাঙ্কে মোটা অঙ্কের ব্যালেন্স।দুটো ফিশফিড কোম্পানির এজেন্ট। তানিশা শিশু হলেও, বিষয়টি নিয়ে ভাবে।এ-ই সমুদ্র স্যারের স্কুলেরই ছাত্রী সে।কীভাবে সম্ভব। তারপর বিজয়ের সাথে স্কুলে আপু-ভাইয়া সম্পর্ক। এখন মা-ছেলে, সম্পর্কের একটা টানা-হেঁচড়া। তারপরও সমুদ্র স্যারের হাতেপায়ে পড়া অনুরোধটুকু রক্ষা করতে পারেনি তানিশা।

জীবনের হিসেব -নিকেশ করতে গিয়ে কখনো কখনো অনেকেই ছাড় দেয়। কিন্তু আবেগ সবসময় কাজে আসেনা। বাস্তবতার গর্তে পড়ে। চরম হোঁচট খেয়ে সম্বিত ফেরে। তানিশাও একদিন ব্যাগ গুছিয়ে নিয়েছে।

বাসায় সুতরাং কেউ নেই। সমুদ্র স্যারের বাসায়ই একটা রুমে প্রাইভেটের পাঁচজনের একটা ব্যাচ পড়ান টিটু স্যার।বাইরে আজকাল বাসা ভাড়া করে নেয়ার কাজটা পানির মতো বিষয় নয়। আজকে বেলা ন’টায় ছাত্রদের আসার কথা বলে দিয়েছেন টিটু স্যার। সমুদ্র স্যারের সাথে ফোনে জেনে নিলেন,হাসপাতাল থেকে ফিরতে উনার ক’দিন দেরি হতে পারে।বাসার চাবিটা স্কুলের ক্লার্ক আহাম্মদ সায়েবের কাছে। ওনার বাসায় রিকশায় করে গেলেও পনের মিনিট। ইতিমধ্যে ছাত্ররা কেউ কেউ এসেছে। ওদেরকে ফিরিয়ে দিলে কাজটা সুবিধাজনক মনে হবে না।

রিকশা চাপলেন।দুটো জ্যাম পেরোতে হলো। আহাম্মদ সাবের বাসায় গেটে চাবিটার জন্য কলিং বেল টিপতে টিপতে ঘাম ছুটে গেছে। আজকে আবার ছুটির দিন।আরামসে ঘুমাচ্ছে হয়তোবা। কলিং বেল টিপে সময় নষ্ট করার মানে নেই। হালকা কাঠামোর নিম্ন মধ্যবিত্ত ক্লার্কের গেটে বাংলা সিস্টেমের টোকা,থাপ্পড় অনবরত দেয়া ছাড়া উপায় ছিলোনা।এত সব ঝামেলা,যেন সবগুলো পরামর্শ করে আজকেই জ্যাম সৃষ্টির উদ্দেশ্য হাসিলে এসেছে। ছেলেগুলোকে আসতে মানা করে দিলেই হতো।কী আর করা — সমস্যা আছে বলেই তো সমস্যা।

একটা চার-পাঁচ বছরের শিশু গেটের বাইরে বেরিয়ে এসেছে।ঘুম জড়ানো মুখমণ্ডল। হাই তুলছে।গলার আওয়াজেও ঘুমের আমেজ।বেরিয়েই পেন্টের জিপার খুলে বসে গেলো ড্রেনের পাশে। ওভাবেই জিগ্যেস করলো — ইশকুলের চাবি নিতে আসছেন?হেড স্যার ফোনে কইছিলো আপ্নেরে চাবিটা দিতে। আব্বু আম্মু সারারাত মোবাইল টিপাটিপি করে এখন ঘুমায়।এত সকালে চাবি দিয়া কী করবেন? একটা কিছু হলে পরে কত কিছু এক্সিডেন্ট হতে পারে– আম্মু বলেছে,যেহেতু সমুদ্র স্যার বাসায় নাই। — কাজ সেরে ছেলেটা নিজের নাম বললো, আমি রাইয়ান ইবনে আহম্মদ ঝুটন। নেন, এই যে চাবি।

ছিঃ,বাইরে এভাবে হিস্যু করছো কেন?বাসায় টয়লেট নেই?
আছে। হিহিহিহি। বেশি ধরেছিল।

রাগও হচ্ছে। সময়ও যাচ্ছে। নাহ,ঝামেলাই মনে হচ্ছে। ছেলেটাকে কিচ্ছু শেখায় নি গার্জিয়ান। চাবিটা হাতে দিয়েই রাইয়ান ছেলেটা চলে গেলো দোতলায়। রিকশাওয়ালাকে বলা হয়েছিল পাঁচ মিনিটের মধ্যে হয়ে যাবে। কিন্তু পিচ্চিটার বকর বকরে দশ মিনিট খেয়ে দিলো।

সমুদ্র স্যারের বাসার সামনে নেমে বিস্মিত হলেও কিচ্ছু করার ছিল না। ছেলেগুলো চলে গেছে।
নাহ,আজকের সিডিউল বাদ দিলেই পারতেন।
এরকম ইনডিসিশান মাঝেমধ্যে ভীষণ বাগড়া দেয়। গেটের বাইরেই দাঁড়িয়ে ব্যাপারটা ঘুরপাক খাচ্ছে।একজন মাঝবয়েসী নারী। প্লাস্টিকের ব্যাগে অনেকগুলো প্লাস্টিকের বোতলভর্তি দুধ।

স্যার বাসায় নাই?
না –তো।উনি হাসপাতালে ভর্তি।
এহন দুধ কী করমু কন?
কিন্তু, উনি তো হাসপাতালে।
স্যারের একটু ফোন দেন।আমার ফোনে ব্যালেন্স নাই।
বাসায়ও তো কেউ নাই।আজকে না হয় বাজারে বিক্রি করে ফেলো—

বেশ বিরক্ত হলো মহিলা। সে এই বেলা বাজারে যেতে পারবেনা।গেলেও অবেলা করে কোনো কাস্টমারকেও পাবে না।এটাও টিটু স্যার ভালো করে জানেন। অগত্যা ফোন আবারো সমুদ্র স্যারকে। স্যার শুনে ফ্রেশ একটা হাসি পাঠালেন মুঠোফোনে।দুধ রেখে বাসায় ফ্রিজে ডীপে রেখে দিতে বললেন।না হলে একটা পাত্রে রেখে ডায়নিং টেবিলে রেখে দিতে বললেন।

বোতল রেখে মহিলা চলে গেল। টিটু স্যার বোতলটা নিয়ে বাসায় ঢুকে ফ্রিজ খুললেন।বিদ্যুৎ নেই। টেবিলেও কোনো পাত্রটাত্র নেই। একটা প্লাস্টিকের জগ মিললো।ওটা ধুতে হবে। বেসিকের ট্যাপ ছেড়ে দিয়েছেন।সঙ্গে সঙ্গে ল্যুজ ট্যাপটা খুলে পানির ঝটকানিতে টিটু স্যার ভেজা বেড়ালের মতোই চুপসে গেছেন। মনে মনে নিজেকেই গালি দিলেন। টিটু স্যারের বৌ সকালেই বলেছিলেন আজকের প্রাইভেটটা বাদ দিতে যেহেতু ছুটির দিন,একটু রেস্ট নিতে।বরং সেটাই ভালো ছিলো। ট্যাপটাকে অনেকক্ষণ চাপাচাপি করেও সমাধান হচ্ছিল না।এক হাতে দুধ ভর্তি বোতল,আরেক হাতে পানির ট্যাপ।ভীষণ বিরক্তিকর। বোতলটা রেখে আরো বেশ কবার ট্রাই করার পরে একটু কন্ট্রোল হলো। বাসা থেকে বেরোবার পরপরই সমুদ্র স্যারের ছেলেটা। কেবলমাত্র হাসপাতাল থেকে ফিরেছে। টিটু স্যারের ভেজা বেড়ালের হাবভাব দেখে বিজয় হাসিটা চেপে রাখতে চেষ্টা করেও পারলো না।

কিন্তু কেন জানি স্যার তার চিরাচরিত রণমুর্তি দেখালেন না। চাবিটা দিয়ে রিকশা ডাকেন। পথিমধ্যে ক্লার্ক আহাম্মদ সায়েব টিটু স্যারের এমন ভেজা জবজব দশা দেখে,এর কারণ জানতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানালেন। উনাকেও বলতে হলো সপ্রসঙ্গ। আহাম্মদ সায়েব সমুদ্র স্যারের দ্বিতীয় বিয়ে, স্ত্রী তানিশার চলে যাওয়া, তানিশার মামার লোভী চরিত্র নিয়ে কথা পারার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু টিটু স্যার ওসব শোনার প্রয়োজন বোধ করলেন না। বাসায় নিজের স্ত্রীর সামনে তারচেয়েও বেশী ইন্টারভিউয়ের মুখোমুখি হতে হবে।বিশেষ করে ভেজা জবজব পরিস্থিতির সূচনা,বিষয়ের প্রসঙ্গ উল্লেখ পূর্বক ব্যাখ্যা। তারপর যথারীতি ভেজা জামাকাপড় নিয়ে একটা লম্বাচওড়া বক্তৃতা শেষে কনক্লুশান টানবেন টিটু স্যারের অভিমানী বৌ।

মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ | Md Shohidullah

New Bengali Poetry 2023 | কবিতাগুচ্ছ | মোহিত ব্যাপারী

নির্যাতিতা রহিমারা | Bengali Article 2023

পতিতাবৃত্তি ও চন্দননগর | Bengali Article 2023

Andaman Cellular Jail | আন্দামানের কুখ্যাত সেলুলার জেল | 2023

Anandabazar Bengali Short Story | Bengali Short Story | Pratilipi Horror Stories in Bengali | Lifestyle Web Stories in Bangla | Trending online bangla golpo pdf free download | Short bengali story | Bengali story pdf | pratilipi bengali story | Short Stories for Children | English Stories for Kids | Moral Stories for Kids | story in english | story hindi | story book | story for kids | short story | story for girls | short story in english | short story for kids | Bengali Story Store pdf | Bangla golpo pdf | Bangla golpo story | bangla romantic golpo | choto golpo bangla | bengali story | Sunday suspense golpo | sunday suspense mp3 download | suspense story in hindi | suspense story in english 200 words | Bengali Story Store in english | Trending online bangla golpo pdf download

suspense story in english 300 words | Suspense story examples | suspense story in english 100 words | suspense story writing | very short suspense stories for students | Bengali Story Store | Top Bangla Golpo Online Reading | New Read Online Bengali Story | Top Best Story Blogs | Best Story Blogs in pdf | Sabuj Basinda | High Challenger | Famous Bangla Golpo Online Reading | Shabdodweep Read Online Bengali Story | Shabdodweep Writer | Bangla Golpo Online Reading pdf | Famous Story – Trending Bengali Story Store | Pdf Bengali Story Store | Bengali Story Store App | Full Bengali Story Store Reading | Bangla Golpo Online Reading Blogs | Trending online bangla golpo pdf

Best Story Blogs in Bengali | Live Bengali Story in English | Bangla Golpo Online Reading Ebook | Full Bangla Galpo online | Bengali Story Store 2024 | New Bengali Story Store – Episode | Golpo Dot Com Series | Bengali Story Store Video | Story – Bengali Story Store | New Bengali Web Story Audio | New Bengali Web Story Video | Bengali Story Store Netflix | Audio Story – Bengali Story Store | Video Story – Bengali Story Store | Shabdodweep Competition | Story Writing Competition | Bengali Writer | Bengali Writer 2024 | Trending Bangla Golpo Online Reading | Top Bengali Story Store | Bengali Story Store Web Story | Best Read Online Bengali Story | Read Online Bengali Story 2024 | Trending online bangla golpo book pdf

Shabdodweep Bangla Golpo Online Reading | New Bengali Story Store | Bengali Famous Story in pdf | Modern Online Bangla Galpo Download | Bangla Golpo Online Reading mp3 | Horror Adult Story | Read Online Bengali Story Collection | Modern Online Bangla Galpo mp4 | Modern Online Bangla Galpo Library | New Bengali Web Story Download | Full Live Bengali Story | Bengali Famous Story 2023 | Shabdodweep Bengali Famous Story | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Bengali Famous Story – video | Bengali Famous Story mp3 | Full Bengali Famous Story | Bengali Literature | Shabdodweep Magazine | Shabdodweep Web Magazine | Live Bengali Story Writer | Shabdodweep Writer | Trending online bangla golpo free download

Leave a Comment