শম্পা ঘোষ – সূচিপত্র [Bengali Story]
ইচ্ছাপূরণ [Bengali Story]
নীলাদ্রি যার ডাকনাম নীলু। পড়ে সাউথ পয়েন্টের ক্লাস এইটে। বাড়িতে বাবা মা ও ঠাম্মার সাথে সে থাকে। নীলুর বাবা ও মা দুজনেই আই টি সেক্টরের খুব উঁচু পদে কাজ করে। সারাদিনে বেশিরভাগ সময়টাই তাদের বাড়ির বাইরে কাজের জন্য থাকতে হয়। ফলে তাদের নীলুকে দেবার মতো সময়ই হয় না। নীলু স্কুল থেকে ফিরেই সোজা আগে ঠাম্মার সাথে দেখা করে খোঁজ খবর নিয়ে তারপর ওর পড়াশুনার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। রাতে যখন ও পড়া শেষ করে খেয়েদেয়ে ঠাম্মার কাছে আসে তখন ঠাম্মা ঘুমিয়ে পড়ে। টাকা পয়সার অভাব নেই তাই প্রয়োজনের অতিরিক্ত চারজন লোক ওদের বাড়িতে কাজ করে। রীনা’দি রান্নার কাজ করে রাতের বেলায় চলে যায়। টুনি মাসি ওদের বাড়িতেই থাকে আর ঘরের সকল কাজকর্ম দেখাশোনা করে। গোলাপী মাসি সকালে বিকালে এসে বাসনপত্র মেজে দিয়ে চলে যায়। হরি’দা বাড়ির বাজারহাট থেকে শুরু করে বাড়ির ব্যাঙ্কের কাজকর্ম। বিলপত্র জমা দেওয়া বাগান দেখাশোনা এমনকি ঠাম্মা অসুস্থ হলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া সব কাজই করে। নীলুর আর তার ঠাম্মার সাথে বাড়ির এই প্রতিটি লোকের সম্পর্ক খুব ভালো। নীলু এদের প্রত্যেককে ভীষণ ভালোবাসে কারণ ওর জীবনে এদের ভূমিকা বিশাল। নীলু ওর মাকে খুব কম পায় তাই ওর ভালোবাসার সব খাবার ও খেতে চায় রীনা দির কাছে। টুনি মাসি ওকে স্কুল যাওয়ার আগে তৈরি হতে যেমন সাহায্য করে তেমন স্কুল থেকে ফিরলেও মায়ের মতো স্নেহ দিয়ে পাশে বসিয়ে খাওয়া দাওয়ার তদারকি করে। হরি’দা ওকে ওর স্কুল বাসে উঠিয়ে দিয়ে আসা আর নিয়ে আসার কাজ করে দায়িত্ব সহকারে। নীলুর ভীষণ ইচ্ছা করে একেকদিন স্কুল না গিয়ে বাড়িতে থেকে ঠাম্মার সাথে সময় কাটাতে। কিন্তু ওর মা কিংবা বাবা কেউই ওর এই মনের ইচ্ছার আজ পর্যন্ত দাম দেয়নি। ওদের নীলুর জন্যই সময় নেই তো ঠাম্মার সাথে ও চিন্তাই করতে পারে না কারণ ও ছোট থেকেই দেখে এসেছে ওর মা নিজেকে খুব আধুনিক ভাবে আর চাকরি করে বলেই ঠাম্মাকে কেমন হেয় চোখে দেখে। আসলে ওর ঠাম্মা তো খুব একটা লেখা পড়া জানে না তাই গাঁইয়া ভাবে। কিন্তু নীলুর তা মনে হয় না। ওর ঠাম্মার সাথে কথা বলতে বিশেষ করে তার কাছে গল্প শুনতে খুবই ভালো লাগে। এতো সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলে ওর ঠাম্মা যে ও মাঝে মাঝে জড়িয়ে ধরে ভীষণ আদর করে। ঠিক তখন নীলু খেয়াল করে দেখেছে ওর ঠাম্মার চোখে জল চলে আসে। জিজ্ঞেস করলে বলে চোখে কিছু পড়েছে। কিন্তু নীলু বোঝে এটা আনন্দে আর দুঃখেই আসে। নীলু এটাও খেয়াল করে দেখেছে ওর বাবাও খুব কমই ঠাম্মার খোঁজ খবর করে। নীলু তো এখন বড়ো হচ্ছে ও বুঝতে শিখেছে ওর ঠাম্মার মনে অনেক দুঃখ ও অভিমান জমে আছে। নীলু ওদের বাড়ির কাজের দিদি ও মাসিদের থেকে জেনেছে সারাদিনে ওর ঠাম্মা নাকি একটা খাতায় কীসব লেখেটেখে। যদিও ওর চোখে কোনোদিন পড়েনি। ঠাম্মাকে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করেও উত্তর মেলেনি। ওর সময় ও তেমন ভাবে পায়নি যে ওই লেখার খাতা খুঁজে বেড়াবে। তবে এবারের এই বড়দিনের দশদিনের স্কুলের ছুটিতে ও এই কাজটা মনে করে করবে এই প্রতিজ্ঞা নিজের কাছেই করেছে। তবে এইবারই প্রথম হলো যে ওর বাবা মা অফিস ট্যুরে ওকে সাথে নিয়ে যেতে চেয়েছে কিন্তু নীলুই এড়িয়ে গ্যাছে ওর প্রজেক্টের চাপের অজুহাত দিয়ে।
স্কুল ছুটির আজ প্রথম দিন থেকেই তাই নীলু ওর ঠাম্মার লুকানো খাতা খোঁজার দায়িত্বে নেমে পড়েছে। ওর প্রথম লক্ষ্য ওদের ছাদের ঘর যেখানে রাজ্যের হাবিজাবি জিনিসপত্র থাকে সেখানে। না মোটামুটি সবই দেখেছে কিন্তু সেখানে নেই। খানিকক্ষণ চুপ করে ভাবতে থাকলো কোথায় থাকতে পারে এরপরই ওর মনে হলো এই বাড়িতে তো একমাত্র ঠাম্মাই পুজো অর্চনা করে তাহলে ঠাকুরঘরেই থাকতে পারে। হ্যাঁ, সেটা মনে হতেই গেল সেখানে খুঁজতে আর পেয়েও গেল অবশেষে কয়েকটা খাতা। ওমা কী সুন্দর হাতের লেখা ঠাম্মার কিন্তু ওতো বাংলা ঝরঝরে করে পড়তে পারে না, বেধে বেধে যা কয়েকটা লাইন পড়তে পারলো তাতে মনে হলো কবিতা হতে পারে আবার কোনোটা মনে হচ্ছে গল্প হলেও হতে পারে। এই বিষয়ে ও হরি’দার উপর ভরসা করতে পারে বলে মনে করল। সময় করে হরি’দাকে দেখিয়ে নিয়ে ও নিশ্চিত হলো ওর ভাবনাই ঠিক। খাতগুলো ওখান থেকে সরালে ঠাম্মার কাছে ধরা পড়ে যেতে পারে তাই হরি’দাকে দিয়ে পাঠিয়ে জেরক্স করে নিজের কাছেই রেখে দিল। ওদের ক্লাসেই পরে দ্বীপের বাবার বড়ো প্রকাশনার ব্যবসা। একদিন সময় বের করে ওই জেরক্স কপিগুলো নিয়ে সরাসরি তার কাছে দেখা করে তাকে ওইগুলো পড়তে দিয়ে আসলো আর অনুরোধ করলো যে এগুলো যাতে ও ছাপাতে পারে। প্রথমে তো দ্বীপের বাবা উড়িয়েই দিচ্ছিল কিন্তু কী মনে করে রেখে দিল।
দিন সাতেক পরে একদিন সকালে দ্বীপের বাবা নিজেই ফোন করে উচ্ছ্বসিত হয়ে নীলুকে জানালো অপূর্ব সব লেখা এবং উনি এটা এবারের বইমেলায় একটা কবিতার সংকলন ও আরেকটা গল্পের সংকলন করে বার করতে চান আর সাথে এই বই দুটোর জন্য উনি আপাতত কিছু টাকাও দিতে চান পরবর্তীতে বই বিক্রি হলে আরো দেবেন বলে কথা দেন। নীলু খুব খুব খুশি হয় এই খবর শুনে কিন্তু যতক্ষণ না বইটা বের হবে তার আগে পর্যন্ত এই খবর টা যে শুধুমাত্র ওর মনে মনেই থাকবে এটাও ভেবে নেয়। আরো একটা কাজ ওকে করতে হবে ঠাম্মাকে বইমেলায় নিয়ে যাওয়া।
আজ সেই দিন। নীলু অনেক কষ্টে রাজি করিয়ে ঠাম্মাকে নিয়ে বইমেলার ২৪ নম্বর গীতা প্রকাশনীর স্টলে গিয়েছে আর সাথে সাথেই দ্বীপের বাবা এসে নীলুর ঠাম্মার পায়ে প্রণাম করে ওনার হাতে ধরিয়ে দিয়েছে বই দুটো। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বেশ কয়েকজন নামী ব্যক্তির উপস্থিতি তে ওই বইয়ের উদ্বোধন করতে বাধ্য হয় নীলুর ঠাম্মা। তখনও পর্যন্ত সব তার কাছে কেমন যেন ধোঁয়াশার মতো মনে হয়। সবাই যখন হাততালি দিয়ে বইয়ের লেখিকা হিসেবে তার নাম উল্লেখ করে তখন তার দুচোখ বেয়ে জল পড়তে থাকে। দুহাত দিয়ে প্রাণপণে নীলুকে আঁকড়ে ধরে ওকে আদর করতে থাকে। ঠাম্মার দেখাদেখি নীলুর ও জলে ভরে আসে চোখ। আজকে যে ওদের দুজনেরই মনের সুপ্ত ইচ্ছেপূরণ হলো। নীলু তার ঠাম্মাকে সকলের কাছে লেখিকা হিসেবে তুলে ধরতে পারে নিজেকে তার বংশধর হিসেবে গর্ব অনুভব করলো। নীলু চেয়েছিল তার ঠাম্মা যেন ঘরে যথাযথ মানসম্মান পান। এখন তো আর শুধু ঘর না তাকে বাইরের জগত ও সেই জায়গা দেবে এটা ভেবেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে ঠাম্মাকে কোলে তুলে নিল সকলের মাঝে। মাঠের চারপাশ করতালিতে মুখরিত হয়ে উঠলো।।
রান্নার সাতকাহন [Bengali Story]
পিয়ার ভীষণ কান্না পাচ্ছে আর সেই সাথে খুব অভিমান ও হচ্ছে ওর মা বাবার উপর । সত্যি কী ও ওদের বোঝা হয়ে গ্যাছে যে এতো তাড়াতাড়ি ওর বিয়ে ঠিক করে দিল । ও তো আরও পড়াশুনা করতে চেয়েছিল । ওর ইচ্ছা ছিল নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে বাবা মায়ের অবলম্বন হতে যেহেতু ওই ওদের একমাত্র সন্তান । কিন্তু না তা তো হলো না । বাবা মায়ের ইচ্ছের কাছে ওর কোনো কিছুই ধোপে টিকলো না । বাধ্য মেয়ের মত বুকে একরাশ অভিমান নিয়ে শেষ পর্যন্ত বিয়েটা হয়েই গেল চন্দনের সাথে । বাবার অফিসের এক কলিগের দাদার ছেলে । পাত্র ব্যাঙ্গালোরে থাকে , সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার । বাবা যতদূর সম্ভব খোঁজ নিয়ে দেখেছে ছেলে এবং ছেলের পরিবার যথেষ্ট ভালো । যেহেতু পরিবারে একই ছেলে তাই ওরা বৌমাকে মেয়ে হিসেবেই দেখতে চান । ছেলের বাবা মা পিয়া কে দেখতে এসে শুধু একটাই কথা জিজ্ঞেস করেছিল যে সে রান্না একটু আধটু জানে নাকি কারণ তাদের ছেলে নাকি খেতে ভালোবাসে । পিয়া সত্যি কথাটাই বলতে চেয়েছিল কিন্তু মা এসে বড়াই করে প্রশংসা করে যে সে মোটামুটি সব রান্নাই ভালোই পারে আর তাই তাদের ছেলের কোনো অসুবিধা হবে না । বিয়েটা যাতে ভেস্তে না যায় মা তো এটা ভেবেই বলেছে কিন্তু এটা ভাবেনি এর ফল কী হতে পারে । পিয়াকে দেখে যাওয়ার দিন পনেরোর মধ্যেই বিয়ের দিন ঠিক হয়ে ভালোয় ভালোয় বিয়েটা হয়ে গেল । অভিমানের বোঝাকে গলতে না দিয়েই পা রাখলো একটা সম্পূর্ণ নতুন পরিবারে নতুন লোকেদের মাঝে । অনেক সমাদরেই পিয়াকে গ্রহণ করলো পিয়ার শ্বশুর ও শাশুড়ি । বিয়ে ও বৌভাতের পর্ব মিটে যেতেই পিয়ার আশঙ্কা হতে লাগলো এই বুঝি ওকে রান্নাঘরে যেতে হয় আর ওর সব মিথ্যা ধরা পড়ে যায় । পিয়ার ভাগ্য টা খুবই ভালো শাশুড়ি ওকে ছেলে চন্দনের সাথে কাজের ওখানে পাঠাবে বলে যে কয়দিন এখানে আছে তাতে রান্নাঘরে যেতে বারণ করে দিয়েছে । ওনার বক্তব্য সেই তো ওখানে গিয়ে ওকে চন্দনকে নিয়ে একলাই রান্না করে খেতে হবে তাই এই কয়দিন উনিই সব করবেন । পিয়াকে যেতেই হবে না রান্নাঘরের দিকে। উফ আপাতত বেঁচে যাওয়া পিয়াকে নিয়ে দিন-কয়েক পরে চন্দন চললো কাজের জায়গায় । পৌঁছানোর পরে দিন দুয়েক চললো তাদের নতুন সংসার গোছানোর জন্য জিনিসপত্র কেনাকাটা করা আর সেটা কোয়ার্টারে প্রথম অপটু হাতে গোছানোর কাজ । এই দুদিন তো বাইরের খাবার খেয়েই কেটে গেল । পিয়ার ভয় করতে লাগলো যে সবই যখন গোছগাছ করা হয়ে গ্যাছে তখন নিশ্চয়ই এবার রান্না শুরু করতেই হবে তাহলেই তো ওর সব জারিজুরি বেরিয়ে আসবে । কী হবে ভাবতেই ওর ভিতরটা কেমন হতে লাগলো ।
ইউটিউব দেখে মোটামুটি সোজা কয়েকটা রান্নার কীভাবে কী করতে হবে তা দেখে রেখে প্রথম দিন দুগ্গা দুগ্গা বলে ঢুকে পড়ল রান্নাঘরে। ভাত ডাল আর ডিমের কারী হলো পিয়ার প্রথমদিনের রান্নার মেনু । চন্দন খেতে বসলে অনভ্যস্ত হাতে ওকে খাবার বেড়ে দিল পিয়া । ভাতটা একটু বেশিই গলে গ্যাছে । ডালে নুনুটা খুবই কম আর ডিমের কারী তে যেমন নুন তেমনি ঝাল । চন্দন বুঝলো পিয়া কোনোদিনই এর আগে রান্না করে নি । আর এটাও বুঝলো ডিমের কারী খেলে নিশ্চিতরূপে পিয়া অসুস্থ হবে । তাই জেনেবুঝেই একটু অভিনয় করেই ডিমের কারীর বাটিটা টেবিল থেকে উল্টে দিল । পিয়ার খুব আফসোস ও কষ্ট হোলো নিজের প্রথম রান্না ও একটু চেখে দেখতে পেল না । চন্দন কোনরকমে খেয়ে পিয়ার রান্নার খুব প্রশংসা করে অফিস চলে গেল । পিয়ার কী মনে হওয়ায় ও বাটির গায়ে লেগে থাকা একটু ঝোল মুখে দিয়ে দেখে চিৎকার করে বসে পড়লো । ততক্ষনে বুঝে ফেলেছে কেন ডিমের বাটিটাই উল্টে গেছিল । ওর চোখ ভর্তি হয়ে গেল জলে । মানুষ টা তো খারাপ নয় এই কদিনে যা বুঝেছে । মনে মনে পণ করলো ওকে রান্না শিখতেই হবে আর ভালো রান্না করে চন্দনকে খাওয়াতে হবে ।
বাকি খাবারটা দুপুরে খেতে বসার আগেই অনলাইনে একজন বয় এসে ওকে খাবার দিয়ে গেল । পিয়া বুঝলো চন্দন এই ব্যবস্থা করেছে। শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় পিয়ার অন্তর ভরে গেল। রাতে অফিস ফেরত এসে চন্দনই রাতের রান্না করলো। খেতে বসে পিয়ার চোখে জল দেখে উঠে এসে পিয়ার কাঁধে ভরসার হাতটা রেখে চন্দন বলে উঠলো যে পিয়ার মন চাইলে পিয়া আরো পড়াশুনা করতে পারে এবং চাইলে ও ভবিষ্যতে চাকরী ও করতে পারে। আর রইলো রান্নার কথা সেটা দুজনে মিলে ঠিক করে নেবে ও পিয়া নিশ্চয়ই একদিন ভালোই রান্না শিখে নেবে । পিয়ার মন ভরে গেল এই আশ্বাসে । ও নিশ্চিন্তে চন্দনের বুকে মাথা রাখল । এতদিনে ওর বাবা মায়ের উপর জমে থাকা অভিমান গলে জল হয়ে কান্নার মধ্য দিয়েই বেরিয়ে গেল। না, অনেকদিন হয়ে গ্যাছে এবার ওর বাবা ও মায়ের খবর নিয়ে স্বীকার করে নিতে হবে যে তারা ওর ভালোর জন্যই ভেবেছি । বুকের ভারটা কমে গিয়ে এবার ভালো করে ঘুমটা আসবে এটা ভেবেই পিয়ার মন আনন্দে নেচে উঠলো ।।
প্রবেশ [Bengali Story]
এটাই পিন্টুর লাস্ট ট্রিপ ছিল। এই ট্রিপটা শেষে এবার ও বাড়ি ফিরবে। আজ সারাদিন ও ভালোই ট্রিপ খেটেছে। প্রায় দশটা আর অন্য দিনের তুলনায় রোজগার ও ভালোই হয়েছে। আজ ভাবছে বাড়িতে কিছু ভালোমন্দ খাবার দাবার নিয়ে যাবে। বাড়ির লোকগুলো খুব খুশি হবে। রোজ রোজ তো এইরকম সুযোগ আসে না। অসুস্থ বাবা, মা ছোট ছোট আরও দুই ভাইবোন নিয়ে পিন্টুর সংসার। বাবা অসুস্থ হবার পর থেকেই ওকে এই সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। গাড়ি চালানোর একটা ঝোঁক পিন্টুর প্রথম থেকেই ছিল। তাই সংসারের হাল ধরতে গিয়ে প্রথমে অন্যের গাড়ি চালিয়েছে কিন্তু ধীরে ধীরে পরিশ্রম করে খেটে পরিবার সামলে ও নিজের একটা অটো কিনেছে। একটা সামান্য কম হলেও নিজেদের থাকার জন্য জায়গা কিনেছে। দুই ভাই-বোন স্কুলে ও কলেজে পড়ছে। একার হাতে ওকেই সব দায়িত্ব নিয়ে করতে হচ্ছে। বাবাকেও ভালো ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছে। এতকিছু একা হাতে সামলে ওর পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না বাড়ির লোকের জন্য ভালো খাবার দাবার নিয়ে আসার। তাই আজ হঠাৎ পাওয়া এই সুযোগটা ও হাতছাড়া করতে চাইলো না। বাড়িতে আজ বিরিয়ানি, মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে ঢুকতেই সেকি আনন্দ ভাইবোন আর সকলের। মায়ের তো চোখে জল ই চলে আসলো। পিন্টুকে বুকের মাঝে জড়িয়ে তিনি তার কপালের জন্য ভগবানের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল। পিন্টু মায়ের কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে দৌড়ে গেল গাড়িটাকে ঠিক করে তুলে দিয়ে আস্তে। ঠিক করে রাখতে গিয়ে হঠাৎ চোখ পড়ল সিটের নীচে একটা পুটুলীর মতো ব্যাগের দিকে। ব্যাগটা ঘরে নিয়ে দোনামনা করে খুলে অবাক হয়ে গেল। ওতে বেশ কতগুলো গয়না আর টাকা রয়েছে আর কতগুলো জমির কাগজপত্র।
দেখে মনে হচ্ছে জমির দলিল। কোনো ফোন নম্বর তো পাওয়া গেল না। মা বাবার সাথে আলোচনা ঠিক করলো পুলিশের কাছে যাবে না। সেখানে আবার কিসের থেকে কি টেনে বের করবে তার থেকে বরং জমির দলিলে থাকা ঠিকানার সন্ধান করে সরাসরি উপস্থিত হয়ে তাদের হাতে জিনিসগুলো দিয়ে আসবে। পিন্টু ওর কিছু পরিচিত লোকের মাধ্যমে জায়গাটার লোকেশন বের করে পরদিন একটু belay রওনা দিল। ওদের বাড়ি থেকে প্রায় ঘন্টা তিনেকের পথ সেই কোথায় ওর বাড়ি চুঁচুড়া আর ও যাচ্ছে বনগাঁ লাইনের মসলন্দপুর। নেমে পিন্টুকে একে তাকে জিজ্ঞেস করতে করতে টোটোয় করে পৌছাতে হল। যে বাড়ির সামনে ও গিয়ে দাঁড়ালো দেখলো সেটা একটা বিয়ে বাড়ি। খোঁজ করে ওই লোকের সামনে হাজির হল ও। ভদ্রলোক তো যেন আকাশের চাঁদ পেয়েছেন কারণ এই জিনিসগুলো তার মেয়ের বিয়ের জন্য জোগাড় করে তিনি ফিরছিলেন। বাড়ির দলিল নিজেরই ভাইয়ের কাছে বন্দক দিয়ে এগুলো নিয়ে ছিলেন। কিন্তু তাড়াহুড়োর মাথায় ওগুলো গাড়িতেই ফেলে রেখে আসেন। সবকিছু ঠিক করে দেখে নিয়ে তিনি পিন্টুর হাত ধরে অনুনয় করেন যে পিন্টুর এই উপকার জীবনেও ভোলার নয়। বিয়েতে থেকে মেয়েটার একটু মঙ্গল কামনা করতে বলেন। অনুরোধ ফেলতে না পেরে থেকে গেল বিয়ে বাড়িতে। রাতে বরযাত্রী সহ বরের প্রবেশ হলো ঠিকই কিন্তু বরপক্ষের হঠাৎ করে আরো কিছু দাবী দাওয়া আসতেই পুরো বিয়ে বাড়ির চিত্রটাই বদলে গেল। বরপক্ষের এই অন্যায্য দাবি মেটাতে অক্ষম কন্যার বাবা হাতে পায়ে ধরেও বরকে বিয়ের পিঁড়িতে বসাতে রাজি করাতে পারলো না। পাত্রপক্ষ উঠিয়ে নিয়ে চলে গেল পাত্রকে। বিয়ে বাড়ির সকল আনন্দ এক লহমায় বিষাদে পরিণত হলো। কান্নাকাটি পড়ে গেল বিয়ে বাড়ি জুড়ে পাত্রী লগ্নভ্রষ্ট হবে বলে। পিন্টুর মনটা এদের কষ্টে ভারী হয়ে গেল। মেয়ের বাবার কাছে গিয়ে নিজের সম্পর্কে সবকিছু জানিয়ে মেয়েটিকে বিয়ে করতে চাইল। যে ছেলে অটোয় কুড়িয়ে পাওয়া জিনিস ফেরত দিতে আসতে পারে সেই ছেলে আর যাইহোক অটো চালায় বলে খারাপ হতেই পারেনা। ভদ্রলোক তো ভীষণ খুশির সাথে সকলের সাথে কথা বলে শেষপর্যন্ত পিন্টুর সাথেই মেয়ের বিয়েটা দিলেন। এমন সৎ জামাই পেয়ে বাড়ির সকলেই ভীষণ খুশি হলো। পিন্টু বাড়িতে ফোন করে জানালো যে কোন পরিস্থিতি তে পড়ে তবেই ওকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে আর আশাকরি ওর এই কাজকে তারা সমর্থন করবে। সব শুনে বুঝে পিন্টুর বাবা মা দুজনেই দারুণ খুশি কারণ পিন্টুর এই কাজ ওদেরকে গর্বিত করেছে। পিন্টুর মতো ছেলে যে ওদের কপালে জুটে ছিল তার জন্য তারা বারংবার ঈশ্বর কে ধন্যবাদ জানালো। পিন্টুর মন থেকে একটা পাষাণ যেন নেমে গেল। এবার নিশ্চিন্তে সে নতুন বউ কে নিয়ে আগামীকাল তার ঘরে ও নতুন জীবনে প্রবেশ করবে।
শম্পা ঘোষ | Shampa Ghosh
Bengali Poetry 2023 | মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ | কবিতাগুচ্ছ ২০২৩
Bengali Poetry 2023 | শিবপ্রসাদ পুরকায়স্থ | কবিতাগুচ্ছ ২০২৩
Bengali Poetry 2023 | প্রতিম ঘোষ | কবিতাগুচ্ছ ২০২৩
Bengali Poetry 2023 | যুবক অনার্য | কবিতাগুচ্ছ ২০২৩
আমের সাতকাহন | রান্নার সাতকাহন | ভাতের মাড়ের সাতকাহন | মার্কিনী রান্নাঘরে বাঙালি মশলা | স্যান্ডউইচ এর সাতকাহন | শাকআলুর সাতকাহন | ইলিশের সাতকাহন | লাউ শাকের সাতকাহন | ডিমের সাতকাহন | সাতকরার সাতকাহন | মামলাবাজির সাতকাহন | প্রবেশ | শব্দদ্বীপের লেখক | শব্দদ্বীপ | সেরা বাংলা গল্প | গল্প ও গল্পকার | সেরা সাহিত্যিক | সেরা গল্পকার ২০২২ | বাংলা বিশ্ব গল্প | বাংলা গল্প ২০২২ | বাংলা ম্যাগাজিন | ম্যাগাজিন পত্রিকা | শব্দদ্বীপ ম্যাগাজিন | প্রবেশ শব্দের অর্থ | প্রবেশ পত্র | প্রবেশ নিষেধ | প্রবেশ অর্থ | প্রবেশ করা প্রতিশব্দ | প্রবেশ বিপরীত শব্দ | প্রবেশিকা শব্দের অর্থ কি
bengali story | bengali story books for child pdf | bengali story books for adults | bengali story books | bengali story books for child | bengali story books pdf | bengali story for kids | bengali story reading | short bengali story pdf | short bengali story analysis | short bengali story characteristics | short bengali story competition | short bengali story definition | short bengali story english | short bengali story for kids | short bengali story generator | short bengali story ideas | short bengali story length | long bengali story short | long bengali story short meaning | long bengali story | long bengali story instagram | bengali story writing competition | bengali story writing competition topics | bengali story writing competition for students | story writing competition malayalam | bengali story writing competition india | bengali story competition | poetry competition | bengali story australia 2022 | bengali story competitions uk | bengali story competitions for students | bengali story competitions ireland | bengali story crossword | writing competition bengali story | writing competition malaysia | writing competition london | writing competition hong kong | writing competition game | writing competition essay | bengali story competition australia | writing competition prizes | writing competition for students | writing competition 2022 | writing competitions nz | writing competitions ireland | writing competitions in africa 2022 | writing competitions for high school students | bengali story for teens | writing competitions australia 2022 | bengali story competitions 2023 | writing competitions uk | bengali article writing | bangla news article | bangla article rewriter | article writing | bengali story writing ai | bengali story writing app | bengali story writing book | bengali story writing bot | bengali story writing description | bengali story writing example | article writing examples for students | bengali story writing for class 8 | bengali story for class 9 | bengali story writing format | bengali story writing gcse | bengali story writing generator | article writing global warming | bengali story writing igcse | article writing in english | article writing jobs | article writing jobs for students | article writing jobs work from home | bengali story writing lesson plan | bengali story writing on child labour | bengali story writing on global warming | bengali story writing pdf | bengali story writing practice | bengali story writing topics | trending topics for article writing 2022 | what is bengali story writing | bengali story trends 2022 | content writing topics 2022 | Bangla Prabandha | Probondho | Definite Article | Article Writer | Shabdodweep bengali story | Long Article | Bangla kobita | Kabitaguccha 2022 | Galpoguccha | Galpo | Bangla Galpo | Bengali Story | Bengali Article | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | Shabdodweep Founder
ইচ্ছেপূরণ পড়েছি। খুব ভালো লেগেছে। আমার ঠাকুমাকে খুব বেশিদিন পাইনি। তাই আরও টান অনুভব করেছি।