New Bengali Story | দরজা | শুভাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়

Sharing Is Caring:

শুভাঞ্জন চট্টোপাধ্যায় – সূচিপত্র [Bengali Story]

দরজা [Bengali Story]

সম্ভবত বিরাশির মাঝামাঝি। বাড়িতে একটা চার পায়া ওলা কাঠের টেলিভিশন নিয়ে এলেন আমার বাবা। টিভির নাম ক্রাউন ক্যাসল। আকারে বেশ পেল্লায়। সামনে দুটো নকশা করা কাঠের সাটার বা দরজা। সে দরজা খুললেই নীল সমুদ্রের মতো কাঁচ।

বাবার বন্ধু অমিয় কাকার কথায়, ‘বুঝলি সন্তোষ, মাঝে মাঝে ঐ কাঁচটার দিকে তাকালে মনে হয় বুঝি পৃথিবীর আর একটা দরজা। যেদিন স্কাইটনে গেলাম, এই মডেল ওদের স্টকে মাত্র দুটো ছিল। দেখেই পছন্দ হয়ে গেল। ছবির কোয়ালিটি কেমন রে?’
‘ভেরি সুদিং..কালারটাও আমার ভারি পছন্দ হয়েছে..’

বাবা টিভি কেনার মাস খানেক আগে অমিয় কাকাদের ঘরে টিভি আসে। ক্রাউন কর্টিনা। ভেতরটা রয়্যাল ব্লু কালারের। ছবি তো নয়, দৃশ্যগুলো যেন কাঁচের মতো ভেসে ভেসে যায়…
স্কাইটনে অর্ডার করেও ঠিক ঐ মডেলের টিভি ওরা বাবাকে শেষমেশ আর এনে দিতে পারেনি। কর্টিনার পরিবর্তে এল একই কোম্পানীর আর একটা মডেল। ক্যাসল।
প্রাথমিক ভাবে টিভিটাকে ঘিরে বাবার ব্যক্তিগত পছন্দ, অপছন্দের একটা ফারাক থেকে থাকলেও দিন কয়েকের মধ্যে অমিয় কাকার টিভিটার মতোই ক্রাউন ক্যাসলও যেন আমাদের পরিবারেরই একজন হয়ে উঠলো।

আমাদের একান্নবর্তী পরিবারে টিভিটা ছিল ঠাকুমার ঘরেই রাখা। নিতান্ত অপরিচিত না হলে এসোজন বসোজন এলে সবার আগে ঐ ঘরেই বসানো হত। আমার দাদু ছিলেন ভীষণরকম গল্পপ্রিয় মানুষ। চেনা পরিচিত যে বা যারা যখনই আসতো তারা আগে দাদু, ঠাকুমার সঙ্গে দেখা না করে, গল্প না করে অন্য কারো ঘরে গিয়ে বসবে, এটা আমরা যেমন ভাবতে পারতাম না, তারাও হয়তো পারতো না মনে মনে। টিভিটার ক্ষেত্রেও একথা বোধহয় সমান সত্যি।

ঠাকুমার ঘরের মেঝেতে বড়রা, ছোটরা মিলে গোল হয়ে বসে ভেসে চলা চলমান দৃশ্য গুলোর দিকে নতুন কিছু দেখার মতো করে অবাক হয়ে চেয়ে থাকতাম…নীল কাঁচে যখন ছবিগুলো ফুটে উঠতো..মনে হতো সত্যিই বুঝি ঢেউ এর তালে তালে একটা অন্য তরঙ্গায়িত পৃথিবীর দরজার সামনে কে যেন আমায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সাকুল্যে দুটো কি তিনটে চ্যানেল। খটখট করে টিভির নব্ ঘোরানো মাত্রই ক্যানভাসটা যেন সত্যি সত্যিই আর সাদা কালো থাকতো না। ছবির পৃথিবীর রূপগুলো কিরকম যেন লহমায় পালটে যেত রংবেরঙের রূপ নিয়ে। ঠাকুমার ঘরের জানলার পেছনের পাঁচিলে প্রায় দিনই মেলা বসে যেত। টিভি দেখার মেলা। পাঁচিলের ওপারটাতে নিরানব্বই বছরের লিজ প্রাপ্ত জমিতে ছিল যুগ যুগ ধরে কাটিয়ে দেওয়া অবাঙালী লোকের বসতি। নতুন কিছু দেখবে বলে ওরাও যেন সন্ধ্যা হলেই মুখিয়ে থাকতো আমাদের টিভির দিকে। ওদের ভেতর কেউ কেউ পাঁচিল টপকে এসে ঠাকুমার ঘরের জানলার গরাদ ধরে দাঁড়িয়ে পড়তো। জেঠুমনির কথায়,’ ওপারের মানুষ দল বেঁধে এপারে এলে আমরা কোথায় যাবো বল দিকিনি?’

পাশের বাড়ি গুলো থেকে এ ও সে আনাচেকানাচে দিয়ে মুখ বাড়ায়… যদি ছবিটুকু চোখে পরে। কেউ বা আগ্রহ বশত নিজে থেকেই দেখতে এল।

‘আমি ঘর থেকেই দেখতে পেয়েছি, ভ্যানরিক্সা করে আপনাদের বাড়িতে টেলিভিশন ঢুকছে…আমারো একটা কেনার ইচ্ছে, জানেন…দেখি..কত পড়লো দাদা?’

‘চার হাজার দুশো..’

‘টিভিটা কিন্তু জব্বর হয়েছে আপনার..!’

‘বলছেন?’

‘ একদম…তার থেকেও বড় কথা, একটা ভীষণ দরকারী জিনিস কিনে এনেছেন…টিভি আনতে তো ছুটেওছিলাম মাস কয়েক আগে…বাড়িতে এই নিয়ে সেকি অশান্তি…এ জিনিস আনা মানে নাকি পয়সা ধ্বংস…কূপমণ্ডূক হয়ে থাকলে আর এর মর্ম বুঝবে কি করে…তবে এবার একটা অ্যাটেম নেবোই…আপনি উৎসাহটাকে আরো বাড়িয়ে দিলেন দাদা…’

‘ যতদিন না সেটা হচ্ছে, আমার বাড়িতেই চলে আসবেন..কি আছে…’

বাবার কথার রাস্তা ছাড়িয়ে আরো খানিকটা এগিয়ে ঠাকুরদা বলেন, ‘আচ্ছা চক্রবর্তী, প্রতিবেশী বলে কি নিজের লোক হওয়া যায় না? তাহলে অত হেজিটেশন কেন? তুমি রোজ আমার এখানে চলে আসবে৷ ইচ্ছে হলেই চলে আসবে। একসাথে সবাই মিলে টিভিও দেখবো, গল্পও করবো…’

যে সময়টার কথা বলছি, পাড়ায় তখন সম্ভবত আমাদের বাড়িতেই প্রথম টেলিভিশন। যে সময়ের কথা বলছি, সে সময় মানুষে মানুষে সখ্যতা ছিল। পাশের বাড়িতে টেলিভিশন আনলে তার আলো এসে পড়তো প্রতিবেশীর ঘরেও। মানুষ মানুষের জন্য তার নিজের বাড়ির দরজা চোখের সামনে বন্ধ করে দিতে পারতো না। তাই বোধহয় চক্রবর্তী কাকুর মতোই ওপাশের বাড়ির কাকিমা যেদিন সংকোচের সাথে এসে বললেন,’ একটু এলাম, টিভি দেখতে…কি করবো ঘরে সময় কাটছিল না..’

কাকিমার সেই ইতস্তত সুর, মা জেঠিমারা মিলে তাকে সাদরে ডেকে নেওয়া, পাঁচিলের ওপারের মানুষ গুলোর জন্য খুলে রাখা জানলা, ঠাকুরদার পাশে বসে বাটিতে করে এনে দেওয়া চালভাজা খেতে খেতে টিভির পর্দায় চক্রবর্তী কাকুর সেই আবিষ্ট চোখদুটো…টিভির দৌলতে পাড়াঘর যেন কোন অজান্তেই দাদু, ঠাকমার ছোট্ট চৌহদ্দিটুকুকে ঘিরে একটা পারিবারিক বন্ধনের সুর রচনা করে দিয়ে গেল…সেই পরিবার… যেখানে কাছের জন, দূরের জন, আত্মীয় অনাত্মীয় বলে কেউ নেই…আছে কেবল নিরন্তর আসা যাওয়া আর একসাথে মিলে আনন্দকে ভাগ করে নেওয়ার মজা। যে জীবন আজ শুধুই অস্পষ্ট ছায়া ফেলে চলে যায় নীল সমুদ্রের মতো কোনো এক কাঁচের গায়ে।

বাবার কথায়,’ সাতাত্তরে কসমস ক্লাবের হয়ে পেলের ফুটবল খেলা দেখতে গিয়েছিলাম আমার বন্ধু সঞ্জীবের বাড়ি। তার মাত্র বছর কয়েক আগে টেলিভিশনের আমদানি হয়েছে। এক বিরাট মহল্লা জুড়ে তখন সঞ্জীবের বাড়িতেই বোধহয় একমাত্র টিভি এসেছে। সে এক পেল্লায় জিনিস। টেলিভিস্টার। গ্যালারীতে যেমন ভীড় জমে যায়, সঞ্জীবের ঘরেও তখন লোকের হাট বসে গেছে। এ, ও, সে, পাড়া প্রতিবেশী, বন্ধু বান্ধব…মজাই আলাদা…! কিন্তু যেদিন অমিয়র বাড়িতে গিয়ে ক্রাউন কর্টিনা দেখে এলাম আমার সে চোখে লেগে থাকা টেলিভিস্টারের স্বপ্ন যেন অচিরেই কর্টিনার নীল কাঁচে এসে মিশে গেল..!’
আমার বহু ছোটোবেলাকার ভুলে যাওয়া, বিস্মৃতপ্রায় ছবি কিংবা ঘটনাক্রমের মাঝে ক্রাউন ক্যাসল যেন একটা জড়িয়ে থাকা আবেগ…সময় বদলায়, জিনিসের রূপ বদলে যায়, মানুষের রুচি পালটে যায়, বাজারের একসময়কার নামকরা কোম্পানি সময়ের চাহিদা মেটাতে না পেরে অলক্ষ্যে কর্পূরের মতো মুছে যায়…তবু কেন এই আবেগ, কিসেরই বা আবেগ…তা হয়তো আজ আর আমি সুনির্দিষ্ট রূপে বলে বোঝাতে পারবো না…বহু স্মৃতি শিশুমনের পরিসর থেকে স্বাভাবিক নিয়মে হারিয়ে গিয়েছে…তারই মাঝে অল্পবিস্তর, বিক্ষিপ্ত ভাবে যে সাদা কালো ছবিগুলো ধরা আছে…সেগুলো কেন যে আজও উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো বেঁচে আছে, হারিয়ে যায় নি..এটাই আশ্চর্যের! হয়তো এগুলোই আবেগ। সব তো আর মুছে যায় না। জীবনের টুকরো টুকরো আলো হয়ে কোথাও না কোথাও ঠিক রয়ে যায়… প্রকারান্তরে সেগুলোই হয়তো বেঁচে থাকার রসদ।

তখন আমাদের বাড়িতে টিভি চলে এসেছে। সল্টলেকে মায়ের এক মেশোমশাইয়ের বাড়িতে গেছি বেড়াতে। গল্প করতে করতে সামনে সুসজ্জিত ক্যাবিনেটে রাখা টিভিটার দিকে চোখ চলে গেল বাবার। ক্রাউন সেঞ্চুরা।

‘মডেল টা তো ভারী সুন্দর! কবে কিনলেন?’
জিজ্ঞেস করলেন বাবা।

সি ই এস সি র তখনকার দিনের লেবার অফিসার,দু’দুটো অ্যাম্বাস্যাডার গাড়ির মালিক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী মুখ থেকে পাইপটা সরিয়ে খানিকটা গর্বের হাসি হেসে বললেন, ‘ ওয়ান মান্থ। আমার খুব পছন্দের মডেল এটা। ডিমান্ডও বেশি। আমাদের পাশের বাড়ির প্রতিবেশী স্যান্নাল বাবু আমি টিভি কেনার পরেরদিন দোকানে গিয়েছিলেন। অনেক খুঁজেও সেঞ্চুরা পান নি। নিয়ে নাও এরকম একটা। এটা হয়তো নাও পেতে পারো। তবে মার্কেটে এই ক্রাউন কোম্পানিটা বুঝলে, যথেষ্ট সাড়া ফেলে দিয়েছে…ছবির কোয়ালিটি আর মডেলগুলা সত্যিই দেখার মতো …তার মধ্যে এটাই আমার ফার্স্ট চয়েস ছিল..’

‘ভেরী রিসেন্ট একটা টিভি কিনলাম। ক্রাউন ক্যাসল।’

‘তাই নাকি? বেশ ভালো। সেঞ্চুরা না পেলে হয়তো ক্যাসলই কিনতাম আমি..’

কথা বলতে বলতে এগিয়ে গিয়ে সাটার দুটো খুব যত্ন সহকারে সরিয়ে টিভিটা চালিয়ে দিলেন ভদ্রলোক। একটা সিনেমা হচ্ছিল… ‘ শুন বরনারী। ‘দূরদর্শন কেন্দ্র কলকাতা থেকে সম্প্রচারিত চব্বিশে জুলাইয়ের স্মৃতির উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠিত উত্তম কুমার রেক্টোস্প্রেকটিভ…আজ তার দ্বিতীয় দিন।

স্বচ্ছ নীল পর্দায় চোখ রেখে পাইপের ধোঁয়া উড়িয়ে মেশোমশাই বললেন,’ দেখতে দেখতে দুটো বছর কেটে গেল..উত্তম নেই। ঠিক এই সিনেমাটাই তোমার মাসিমাকে নিয়ে প্যারাডাইসে দেখতে গিয়েছিলাম…ইন দ্য ইয়ার অব মিড সিক্সটি…সেদিন আর এই দিন…বিরাট ভ্যাকুয়াম…আরো কত কিছু দেবার ছিল লোকটার…কত কোয়ালিটির ছবি…কালকে চব্বিশ জুলাইয়ে এক সাক্ষাৎকারে সত্যজিৎ কী বলেছে শুনেছো? টিভি দেখেছো নিশ্চয়ই?’

‘ঐ সাতটার খবরে তো? বিলক্ষণ। ব্যারিটোন ভয়েসের সেই কন্ঠ..’উত্তমের মতো অভিনেতা আর হবে না..” ভোলা যায় কখনো? ‘

‘ অ্যাবসলিউটলি।’

‘কাগজের ছাপানো খবর আর টিভির জলজ্যান্ত ছবি…দুইয়ে অনেক তফাত মেশোমশাই…আপনি হেমন্ত মুখোপাধ্যায় কী বলেছে শুনেছেন?’

‘উত্তমের অনুপস্থিতি বুকের একটা দিক খালি করে দিল..’

‘ইয়েস। মনে হলো এ আবেগ যেন আমার মতো আরো লক্ষ লক্ষ মানুষের…বাঙালি জাতির…’

‘একেবারে ঠিক বলেছো…অফিস থেকে ফিরে ইভিনিংয়ে টিভি খুলেই দূরদর্শনে হেমন্তর গলায় উত্তম অভিনীত পুরোনো দিনের ছায়াছবির ঐ গানগুলো…যেন কতদিন, কতকাল পর নতুন করে শুনলাম…কালকের অনুষ্ঠান জুড়ে শুধু একটা আবেগই কাজ করছিল বারবার..বাঙালীর আবেগ..’

‘তবে আমার কি মনে হয় জানেন মেশোমশাই…বাঙালির এই আবেগ কিংবা শূণ্যতায় শুধু উত্তম নয়, ছবি বিশ্বাস কেও বাদ রাখলে চলবে না। সিনেমাটা চোখের সামনে দেখছি আর ভাবছি কি অসাধারণ অভিনয়…! চৌষট্টি সালে জলসাঘর দেখেছি দিদির বাড়ি মেদিনীপুরে গিয়ে বসুন্ধরা সিনেমা হলে। ঊনষাট সালে ছবিটা রিলিজ করলো। সে অভিনয় এখনো চোখে ভাসে। বাষট্টিতে ছবি বিশ্বাস মারা গেলেন। ঐ বছরই সুধীর মুখার্জির পরিচালনায় দাদাঠাকুর রিলিজ করলো। প্রি ইউনিভার্সিটিতে পড়ি তখন। এক বন্ধুর পাল্লায় পড়ে গেলাম দাদাঠাকুর দেখতে …তখন তো এত মানুষের ভীড় ছিল না…কিন্তু আবেগ ছিল অন্তহীন…ছবি বিশ্বাসের কন্ঠ নিঃসৃত দাদাঠাকুরের সেই শেষ সংলাপ…” সাধারণ মানুষ যখন কাঁদে, ভগবান তখন হাসেন…নিজের দুঃখে মানুষ যখন কাঁদে, ভগবান তখন নির্বিকার হয়ে বসে থাকেন… বিদূষক যখন কাঁদে, তখন অলক্ষ্যে কাঁদেন স্বয়ং ভগবান..”

অসাধারণ, অনবদ্য…মনে পড়ে, একবার শীতকালে পাড়ার ক্লাবের মাঠে প্যান্ডেল খাটিয়ে সিনেমা শো হয়েছিল…বাড়িতে তখন আমাদের বায়োস্কোপ দেখা তো দূরের কথা, ধারেকাছে যাওয়া কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ…কাবুলিওয়ালা সিনেমাটা হবে শুনে বাবা দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলেন…পাঠশালায় পড়ে আসা গল্পের চরিত্র গুলো এতটাই জীবন্ত হয়ে ফুটে উঠেছিল চোখের সামনে…সেই মিনি খুকি, সেই রহমত, ছোট্ট মেয়েটির বড় হয়ে ওঠা, খাইবার গিরিপথ ধরে এগিয়ে চলা পিতার বিরাট বিরহী বুকজুড়ে আট বছর বাদে নিজের মেয়েকে কাছে পাবার আকুল প্রতীক্ষা…দেখতে দেখতে কেঁদে ফেলেছিলাম…সেই প্রথম আমার ছবি বিশ্বাসকে দেখা…পাঠশালার বইয়ের সেই রহমতকে এখনো যেন আমি খুঁজে বেড়াই এই মানুষটির মাঝে….

আজকের এই ‘শুন বরনারী’ ছবির হাত ধরে পুরোনো দিনগুলো কেন জানি না বড্ড কাছে চলে আসছে…গতকাল দেখলাম “অগ্নিসংস্কার “…উত্তমের একেবারে প্রথম দিককার সিনেমা…’

‘ আগামীকাল কি যেন..?’

ওপর থেকে মা আর মাসিমা কখন যেন আমাদের মাঝে চলে আসেন। উত্তরটা মাসিমাই দিলেন..’ সপ্তপদী।’

মায়ের কৌতূহলী জিজ্ঞাসা…’ আগে কখনো সিনেমাটা দেখেছো না কি?’

‘না রে। কটা সিনেমাই বা দেখেছি…বিয়ে হয়ে যৌথ পরিবারে এসে উঠলাম…এক ঘর মানুষের সামনে সোয়ামিকে নিয়ে ড্যাং ড্যাং করে সিনেমা দেখতে যাবো…সমাজ তাকিয়ে দেখবে…এই লজ্জাতেই দিন কেটেছে…সে অনেক বিধিনিষেধের কাল…পরবর্তী সময়ে তোর মেশোমশাই চাকরি সূত্রে কলকাতায় চলে এল…ঘর করলো, বাড়ি করলো…এখানে আসার পর ওঁর উৎসাহে ঐ যা যেকটা সিনেমা দেখেছি…অফিস কাছারী, ব্যস্ততার মাঝে সময় সুযোগ পাওয়াটাও একটা বড় ব্যাপার….তা হ্যাঁরে, আমাদের জামাই বাবাজী দেখতে টেখতে নিয়ে যায়?’

‘ তাহলেই হয়েছে! ও বাড়িতে ব্যাটা ছেলেরা ওসবে নেই…. বাইরে বেরোনো, সিনেমা দেখা..সব ঐ জায়েরা মিলে…আমার মেজো জা আবার উত্তম সুচিত্রার খুব ভক্ত…ঠিক তোমার মতো…সপ্তপদী ছবিটার কথা শুনে মনে পড়লো, একবার অনেকদিন আগে আমাদের শ্রী দুর্গা হলে সিনেমাটা এসেছিল…মেজো জা আর আমি মিলে ম্যাটিনি শো তে যাবো বলে প্ল্যান করছি…তোমার নাতির হঠাৎ এমন জ্বর হলো…তখন ও কোলের…’

‘ আমারো তাই…দেখবো দেখবো করেও আর দেখা হয়ে ওঠে নি…তখন তোর মেশোমশাই অফিসের কাজে সপ্তাহ দুয়েকের জন্য মুম্বাইয়ে গেছে…বাঙুর অ্যাভিনিউয়ের ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতাম আমরা…দুপুরবেলা বসে বসে তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়ের লেখা “সপ্তপদী ” পড়ে শেষ করেছি…কৃষ্ণেন্দু, রীণা ব্রাউন…চরিত্র গুলো যেন শয়নে স্বপনে ভেসে বেড়াচ্ছিল…ঠিক সেভাবেই ভেসে চলে গেল আমার সে সিনেমার সপ্তপদী…কতদিনের অদেখা তাহলে ভাব…!’

‘আমারও তাই..। ‘

‘ প্যারাডাইসে সিনেমা দেখতে গিয়ে কি হয়েছিল জানিস না? সিটের ভেতর ছারপোকার কামড়..শেষকালে কিনা জায়গাই চেঞ্জ করতে হল…’

কথার অনুষঙ্গে এদিক ওদিক থেকে হাসির রোল ওঠে…
‘ তবে সবকিছু নিয়েই তো স্মৃতি, তাই না বল? ঐ মুহূর্তটুকু এসেছিল বলেই না ” শুন বরনারী ” ছবিটাকে ভুলতে পারি না আজও…সেদিন দেখেছি সুপ্রিয়ার মতো কাজল পরা অল্প বয়সের চোখ দিয়ে,আজ দেখছি মাঝসমুদ্রে এসে…নিজের চোখ দিয়ে…’

হারিয়ে যাওয়া সময় যেন নীরবে,অজান্তে ফিরে আসে মাসিমার দু চোখের পাতায়…
একটু একটু করে পৃথিবীটা কখন যে টিভির পর্দায় ডুবে যায় বুঝতেও পারি না। মেশোমশাইয়ের সল্ট লেকের সাজানো গোছানো ঘরখানা আস্তে আস্তে একটা ছোটোখাটো সিনেমা হলে পরিণত হয়, ঠিক আমাদের বাড়িতেও কালকে টিভিতে সিনেমা চলাকালীন এমনটা হয়েছিল… সেই বিভোরতার ছবিই যেন নতুন করে দেখলাম আজ আবার।

সিনেমা একসময় শেষ হয়, তবু টিভির আলোচনা সুর হারায় না। গান আসে চলচিত্রের হাত ধরে। সিনেমার গান, আধুনিক গান, রবীন্দ্র সংগীত…
বাবা বলেন, ‘ কতযুগ পরে আবার শুনলাম সেদিনকে টিভিতে দেবব্রত বিশ্বাসের গান..! ঐ চারটে গানের মধ্যে লাস্ট দুটো গান..এখনো মনে আছে নৈহাটির রাধা সিনেমা হলে অনুষ্ঠিত সঙ্গীতানুষ্ঠানে বসে দেবব্রত গেয়েছিল….প্রথম গাইলো ” তুমি ডাক দিয়েছো কোন সকালে কেউ তা জানে না…”
তার ঠিক পরেই শুরু করলো ” যেদিন সকল মুকুল গেল ঝরে আমায় ডাকলে কেন গো… “
টিকিট কেটে একেবারে সামনের চেয়ারে জায়গা পেয়েছিলাম…বিশ বছর আগের লাইভ অনুষ্ঠানে যে গান শুনে এসেছি…সে একরকম, আর এই সেদিন নতুন করে যখন শুনলাম… বয়সকালের আবেগ যেন কথা বলছিল গানের মধ্যে… সত্যিই বুঝি, সকল মুকুল গেল ঝরে… সম্ভবত গানটা জর্জ দা মারা যাবার কিছু আগে গাওয়া…ঐ উণআশি কি আশির শুরুর দিকে..চেহারায় তেমনই ইঙ্গিত…”

‘ সময়ের অভাবে আমি জর্জ দার গানগুলো আর শুনতে পাইনি…তবে কিছুদিন আগে দূরদর্শনে সুচিত্রা মিত্রের লাইভ টেলিকাস্ট হচ্ছিল…ভাগ্যিস ছুটি ছিল, তাই টিভিটা খুলেছিলাম…রেকর্ড প্লেয়ারে যতই গান বাজুক, এরকম লাইভ প্রোগ্রাম দেখার সুযোগ কিন্তু আলেকালে তেমন একটা আসে না…গোটা পাঁচেক গান গাইলো বুঝলে…মার্ভেলাস…বিশেষ করে ঐ গানটা..” লক্ষী যখন আসবে তখন কোথায় তারে দিবি রে ঠাঁই…দ্যাখ রে চেয়ে আপন মনে পদ্মটি নাই…”

আজ অবধি আমার সংগ্রহে থাকা কোনো রেকর্ডেই খুঁজে পাই নি…হাতড়ে বেরিয়েছি অনেক…কেউ এনে দিতে পারে নি…শেষমেশ দূরদর্শনের লাইভ অনুষ্ঠানে গানটা পেয়ে যাবো আশাই করি নি…’
বড়দের কথোপকথনের মাঝে জড়িয়ে থাকা শব্দের অন্তর্জাল ভেদ করে সিনেমা কিংবা গানের রসাস্বাদন করবার মতো বয়স তখনো আমার হয় নি। শুধু চলন্ত রেলকামরার বাইরের দৃশ্যাবলীর মতো নীল সমুদ্রের বুকে ভেসে চলা ছবিগুলো একমুঠো ভালোলাগা হয়ে স্রোতের মতো মনে এসে ভীড় করতো….হয়তো বা সেটা বয়সজনিত ভালোলাগা, অচেনা, অদেখার প্রতি ভালোলাগা, কিংবা আনন্দঘন মুহূর্তময়তার প্রতি ভালোলাগা…জানি না কি তার সংজ্ঞা…আদৌ কোনো সংজ্ঞা হয় কিনা…কারণ ভালোলাগা, তা সে যেমনই হোক, নেহাৎই ক্ষণিকের…সময়ে তার রূপ বদলায়, তার রঙ বদলায়, তার স্পর্শও বদলে যায়…শুধু বদলায় না কিছু ছবি, কিছু মুহূর্ত, ধোঁয়া হয়ে উড়ে চলা কিছু এলোমেলো না বোঝা কথার স্রোত…সে অন্তঃসলিলা নদী আজও বয়ে চলে আমার মনোরাজ্যে…মিশে যায় কোন্ অলক্ষ্যে কাঠের ছোট্ট দরজার ওপারে হাজারো নীল স্রোতের ভীড়ে…কে বলে তাকে সাদা কালো পৃথিবী?

প্রায় অনেক বছর পরেকার কথা। মা, জেঠিমাদের সঙ্গে ভাটপাড়ায় গিয়েছি বাবার মামাতো ভাই চন্দন কাকুদের বাড়ি বেড়াতে। দুপুরবেলা। গুটিগুটি পায়ে সিঁড়ি ভেঙে দোতলায় গেলাম চন্দন কাকুর ঘরের দিকে, এক বিশেষ জিনিসের আকর্ষণে। রেলিং বেয়ে উঠে শেষ সিঁড়িতে এসে হঠাৎ মনে হলো সেভেনে পড়া আমি কি এখনো ঠিক সেরকম বাচ্চাটিই আছি? তাই যদি হবে তাহলে চন্দন কাকুর ঘরে ঢোকার মুখে দরজার দুদিকে দুটো পাথরের তৈরি গদা হাতে বীর হনুমান( বাবার মুখে শুনেছি,ঐ হনুমানদুটোর বয়স আর ভাটপাড়ার এ বাড়ির বয়স নাকি একই, বাংলায় তখন নবাবি যুগ, পলাশীর যুদ্ধের আমল, সে সব ইতিহাস প্রায় সবই মুছে গিয়েছে আজ, নবাবী আমলের ভেঙে পড়া ছোটো ছোটো লাল ইট, পাথরের ধ্বংসস্তূপের ওপর পুনর্নির্মিত বাড়ি বর্তমানে নবরূপে, নবকাঠামোয় বিরাজমান, সেদিনের থাকার মধ্যে রয়ে গিয়েছে শুধু বাড়ির গোয়ালঘরের পাশে শ্যাওলা ধরা, পাথরের একটা ইঁদারা, আর চন্দনকাকুর দরজার দুপাশের ছফুট উচ্চতার হনুমান দুটো, যা আমার কাছে শৈশব থেকে দেখে আসা রামায়নের রূপকল্পনায় সজ্জিত এক অজানা কৌতুহল, যখনই এ বাড়িতে বেড়াতে আসতাম আগে সিঁড়ি বেয়ে উঠে চন্দন কাকুর দোতলার দরজার সামনে এসে দাঁড়াতাম আর মোহিত হয়ে তাকিয়ে থাকতাম মূর্তিদুটোর দিকে, কি জানি কেন… ) বছর কয়েক আগেও দেখে মনে হতো গদাদুটো কতই না উঁচুতে! খুব জোড়ে লাফ না দিলে নাগাল পাওয়া বেজায় মুশকিল! আর আজ, কে যেন আড়াল থেকে বলছে আমায়, চেষ্টা করলেই ধরতে পারবি…পায়ের সামনের চেটোদুটো একটু তুলে হাতদুটো একটু বাড়ালেই…এই তো ছুঁতে পারছি! এই তো কেমন নাগালের ভেতর চলে এসেছে…!

আচ্ছা, চন্দন কাকু তবে কেন একটু আগে নীচের ঘরে বসে বললেন, ‘ আমাদের বুবাই সেই ছোট্টটিই রয়ে গেল…’

আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম কাকুকে…’ ও কাকু সেই হনুমানদুটো আছে?’

‘ হ্যাঁ আছে৷ দেখবি?’

‘ হ্যাঁ দেখবো।’

‘ আমাদের বুবাই সেই ছোট্টটিই….।’

দরজার চৌকাঠে আমায় দাঁড়াতে দেখে ভেতর থেকে চন্দন কাকুর গলা ভেসে আসে…’ কে বুবাই সোনা?’
চলে যাচ্ছিলাম। আওয়াজ শুনে দাঁড়িয়ে পড়লাম।

‘ হ্যাঁ কাকু।’

‘ আয়। বীর হনুমান দেখা হয়েছে? দাঁড়া, ওদেরকে ধরে একটা ব্যাগে ভরে দেবো…বাড়ি নিয়ে যাবি…হা হা…’

কিছু বলতে যাচ্ছিলাম, বলা হলো না। কাকুর ঘরের খাটের উল্টোদিকে টিভিটার দিকে তাকাতে চোখদুটো আটকে গেল…
কি সুন্দর টিভিটা! ঝলমলে রঙবেরঙের সব ছবি…আসছে, যাচ্ছে, ভেসে বেড়াচ্ছে…
কাকুর হাতে একটা ছোটো যন্ত্র। তাতে কত সুইচ! খাটে আধশোয়া হয়ে বসে দূর থেকে একটা করে সুইচ যেই না টিপছেন কাকু, অমনি ছবিগুলো বদলে বদলে যাচ্ছে…কি অদ্ভুত!

‘ এটা কী টিভি কাকু?’

‘ সনোডাইন। বিদেশ থেকে এসেছে। ভালো লাগছে? ‘

‘ খুব ভালো। ‘

‘ এই নাটকটা দ্যাখ বুবাই, ভূতের নাটক, প্রতি সপ্তাহে এইদিনে একটা করে ভূতুড়ে, অলৌকিক গল্প নিয়ে নাটক হয় টিভিতে…আয় আমার পাশে এসে বোস…’

আজকের নাটক বিভূতি ভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের লেখা একটি গল্প, ‘ পেয়ালা।’ গ্রামের মেলা থেকে কিনে আনা একটি কলাই করা কাপ, যাকে ফেলে দিলেও চুপিচুপি ঠিক ফিরে আসে, পরিবারের মাঝে অমঙ্গলের কারণ হয়ে….!

আমি মোহিত হয়ে তাকিয়ে রইলাম শুধু। টিভির মাঝে ডুবে গেলাম, নাকি গল্পের মাঝে…নিজেও জানি না! এ গল্প আমি প্রথম পড়ি বইমেলায় বাবার কিনে দেওয়া কিশোর রচনা সমগ্র থেকে। কিছুদিন আগে রবিবারের এক বিকেলে ঠাকুমার ঘরে বসে এ নাটকটাই প্রথম দেখেছিলাম টিভিতে। নাটক দেখতে দেখতে বাবা জেঠুমনিকে বলছিলেন…”কত জীবন্ত অভিনয় করছে তরুণ কুমার, দেখেছিস দাদা?”
“সত্য ব্যানার্জীও সেরা…তরুণ আর সত্য, দুইয়ের অনবদ্য জুটি…”

“ওদিকে হারাধন ব্যানার্জী…অভিনয়ের মাপকাঠিতে কাকে ছেড়ে কাকে বাদ রাখবি…”
আমার কাছে ঐ নামগুলো যতটা অচেনা, ঠিক ততটাই অচেনা ” অভিনয়ের মাপকাঠি ” শব্দটা। আমি শুধু ভেসে বেড়াচ্ছিলাম ছবির সাথে, দৃশ্যের সাথে, আর বইয়ের পৃষ্ঠা থেকে বহুদূরে একরাশ অকথিত রহস্যময়তাকে সঙ্গী করে….

সেদিনের সেই মন ছোঁয়া অনুভূতিটুকুই আজ যেন কাঁচের দরজার ওপারে নীল সমুদ্রের গায়ে আকাশের রামধনুর মতো কোনো এক দক্ষ শিল্পীর নিখুঁত তুলির স্পর্শে আমার কল্পণাশ্রিত পৃথিবীটাকে বহুদূরে অন্য এক অজানা, অচেনা দিগন্তরেখায় ভাসমান ছবি হয়ে এক আশ্চর্য স্বপ্নময়তার মাঝে দাঁড় করিয়ে দিয়ে গেল!

‘ পেয়ালা’ নাটকের সেদিন যে মানুষ গুলোকে সাদা কালো দেখেছিলাম, আজও তারাই অভিনয় করছে…অভিনয়ের সাথে সাথে পালটে যাচ্ছে মানুষগুলোর রঙ…পালটে যাচ্ছে আরো কত কি… পালটে যাচ্ছে আমার চোখ দুটো…

নাটক দেখা শেষ হলে আমার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে চন্দন কাকু জিজ্ঞেস করলেন,’ কেমন দেখলি রে বুবাই? ‘

‘ খুব ভালো। আগেও একদিন দেখেছিলাম নাটকটা…’

‘ বাবাকে বল এরকম একটা টিভি কিনে আনতে…’

কি করে যে কাকু আমার মনের কথাটা পড়তে পারলো ঠিক বুঝতে পারলাম না।
অন্যমনস্ক মনে ধীর পায়ে ঘরের দরজার বাইরে বেরিয়ে চৌকাঠের সামনে পা দুটো থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো আমার। গদাধারী বীর হনুমান দুটো মনে হলো যেন সেই আগের মতোই আমারই দিকে তাকিয়ে আছে…ছুঁয়ে দেখার যে স্বপ্ন টুকু আজ আমার নাগাল বৃত্তের মধ্যে চলে এসেছে তার দিকে দ্বিতীয় বার আর না তাকিয়ে এক অন্য দরজার মুখোমুখি এসে দাঁড়ালাম…যে দরজার পর্দার আড়ালে তখনো ভেসে ভেসে বেড়াচ্ছিল কত কি রঙচঙে ছবি…
এরকম একটা টিভি যদি আমাদের বাড়িতে থাকতো?

এটা যে সময়ের কথা , তখন রঙীন ছবি আজকের মতো এত সহজলভ্য ছিল না। একাকিত্বের সংসারে আঁকড়ে ধরার মতো একমাত্র মানুষ হয়ে দাঁড়ায়নি।

আজ এত বছর পর দরজার ওপারের প্রতিটি অলিগলি, আনাচে কানাচে যখন প্রায় হাতের মুঠোয়… তখন কেন জানি না বারবার মনে হচ্ছে, জীবনে দূর্লভ বলে যদি সত্যিই কিছু থেকে থাকে তবে সেটা বহুদূরে পড়ে থাকা দরজার এপার …যে ক্ষুদ্র পরিসরে কাছের মানুষ, দূরের মানুষ, আত্মীয়, অনাত্মীয় বলে কেউ নেই… আছে শুধু নিরন্তর আসা যাওয়া…আনন্দকে ভাগ করে নেওয়ার মজা…আর এক কৌতুহলী পৃথিবী।।

শুভাঞ্জন চট্টোপাধ্যায় | Subhanjan Chatterjee

Bengali Story 2023 | পরিচারিকা পাপিয়া | প্রবোধ কুমার মৃধা

Bengali Story 2022 | নকুল পাগলা | প্রবোধ কুমার মৃধা

Bengali Story 2022 | বন্ধুর বিয়েতে গিয়ে | প্রবোধ কুমার মৃধা

Bengali Story | কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা | গল্পগুচ্ছ | 2022

Bengali Story 2022 | জয়ন্ত কুমার সরকার | গল্পগুচ্ছ ২০২২

দরজা | বুড়ো দাদুর মন্দির | বুড়ো দাদু গো | পাগলা বাবার মন্দির বৃন্দাবন | বারদি বাবার মন্দির | মন্দির শব্দের অর্থ কি | হিন্দু মন্দির | স্বর্ণ মন্দির | মন্দির স্থাপত্য | রাম মন্দির | শিব মন্দির | উড়িষ্যার মন্দির | ভারতের প্রাচীন মন্দির | ভারতে মন্দিরের সংখ্যা কত | ঢাকার মন্দির | কান্তজীউ মন্দির | সোনাবাড়িয়া মঠ মন্দির | ধীরধাম মন্দির | কোপেশ্বরা মন্দির | মন্দির স্থাপত্য | জগন্নাথ মন্দির | কসবা কালী মন্দির | পঞ্চরত্ন মন্দির | শ্রী পদ্মনাভস্বামী মন্দির | দরজা – উইকিপিডিয়া | কাঠের দরজার নকশা | মার্জিত দরজা ডিজাইন | সম্পূর্ণরূপে চকচকে দরজা | স্টিলের দরজা | ঘরের দরজার ছবি | দরজা ডিজাইন | সেগুন কাঠের দরজা | দরজার পাল্লা | দরজার নকশা | ঘরের দরজার ডিজাইন | সামনের দরজার ডিজাইন | আট কুঠুরি নয় দরজা | শব্দদ্বীপের লেখক | শব্দদ্বীপ | সেরা বাংলা গল্প | গল্প ও গল্পকার | সেরা সাহিত্যিক | সেরা গল্পকার ২০২২ | বাংলা বিশ্ব গল্প | বাংলা গল্প ২০২২ | বাংলা ম্যাগাজিন | ম্যাগাজিন পত্রিকা | শব্দদ্বীপ ম্যাগাজিন

bengali story | short bengali story analysis | short bengali story characteristics | short bengali story competition | short bengali story definition | short bengali story english | bengali story competitions for students | bengali story competitions ireland | writing competitions ireland | bengali story writing practice | bengali story writing topics | trending topics for article writing 2022 | what is bengali story writing | bengali story trends 2022 | content writing topics 2022 | Bangla Prabandha | Probondho | Definite Article | Article Writer | Shabdodweep bengali story | Galpoguccha | Galpo | Bangla Galpo | Bengali Story | Bengali Article | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | Shabdodweep Founder | Bengali Story New Book | 2022 bengali story book | 2023 bengali story pdf | online bengali story book pdf | physical bengali story pdf | hardcover bengali story pdf book | audio bengali story 2023 | new audio bengali story | collection of bengali story audio | bengali story audio collection | latest bengali story audio book | latest collection of bengali story | library of bengali story

Leave a Comment