মনসুর আলি – সূচিপত্র [Bengali Story]
লোকের কথা [Bengali Story]
শীতকাল। রিজু আজ টেবিল-চেয়ার ছেড়ে বিছানায় বই নিয়ে বসেছে। রাত আটটা। ঘড়িতে টিক টিক শব্দ শোনা যাচ্ছে। ঠান্ডাটা একটু বেশিই পড়েছে। জানুয়ারির মাঝামাঝি। এসময় ঠান্ডা তো পড়বেই। মাকে বলে রেখেছে রিজু এককাপ কফি বানিয়ে দিতে। মা রান্নাঘরে আছেন। কফিটা খেয়ে পড়া আরম্ভ করবে। পড়তে তার ভালো লাগছে না। না। এর জন্য ঠান্ডাই শুধু দায়ী নয়। অন্য কারণ আছে। গুঢ় কারণ।
রিজু ছেলেটা অন্তর্মুখী ধরনের। বড্ড লোকের কথা নিয়ে মাথা ঘামায়। লোকে কী বলল এই ভেবে তার দিনের অর্ধেক সময় কেটে যায়। এমনকি লোকে কী বলবে এই ভেবে সে অনেক কাজ থেকে বিরত থেকেছে। সেগুলো প্রয়োজনীয় কাজ ছিল। ফলে তার নিজের ক্ষেত্রে বঞ্চনা এসেছে।
এই তো ক’দিন আগে পাড়ায় একটা নুডল কোম্পানি ক্যাম্প বসিয়েছিল। পাড়ার সব ছেলেদের তারা বিনা পয়সায় নুডল খাওয়াল। আর সাথে একটা করে কড়ির প্লেট উপহার দিল। কী সুন্দর সুন্দর সব প্লেট। রিজু বাড়িতে ছিল। রবিবার। ফলে স্কুল যাবার ব্যাপার ছিল না। ওর মা কত করে বললেন, ‘যা নুডল খেতে পাবি।’ ছেলে কেন যাবে? বলে, ‘আমার লজ্জা করে।’ এটা কোনো কথা হল! বারো বছরের কিশোর। সে যদি বলে বাড়ি থেকে বেরতে আমার লজ্জা করে, কম রাগ ধরে? রণিতা রাগ চেপে গেছিলেন। কিছু বলেননি।
রিজুর বাবার কত স্বপ্ন, ছেলেটাকে জীবনে অনেক বড় করবেন। আর সেই ছেলে যদি এমন মেয়েদের চেয়ে অধম হয় তাহলে তাকে দিয়ে কী হবে? মাঝে মাঝে অমলেন্দুবাবু ধৈর্যহারা হয়ে যান। ভাবেন, ধুর! যা পারে করুক। লেখাপড়া শিখে যদি গাধা হয়ে থাকে থাক। এত ভীতু হলে এ-যুগে কিছু হবে? এখন ছেলেদের কথা দূরে থাক, মেয়েরা কত সাহসী। শিক্ষিত হচ্ছে। কত জায়গায় যাচ্ছে। চাকরি-বাকরি বাড়ি-গাড়ি করছে। আর এ ছেলে হয়ে দেখো…হুঁঃ! আর ভালো লাগে না তাঁর। কত মেলায়, কত অনুষ্ঠানে, কত জায়গায় নিয়ে গিয়েছেন। তবুও ছেলের লোকলজ্জা কাটে না।
রিজু পড়ে ক্লাস সিক্সে। নিজে একটু লাজুক আর মুখচোরা মতো। লোকের কথা নিয়ে একধরনের ভয় তার মনের মধ্যে রয়ে গেছে। ওর বাবা অমলেন্দু অনেক বুঝিয়েছেন। কাজ হয়নি। একবার তো সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। সাইকিয়াট্রিস্ট কাউন্সেলিং করেছিলেন। তাতেও কিছু হয়নি। এখন ওর বাবা হাল ছেড়ে দিয়েছেন। হাল ছেড়ে দিয়েছেন স্ত্রীর কথায়। রিজুর মা রণিতা কড়া মনের মেয়ে। তিনি বলেছেন, ‘ওকে বাস্তব জগতে একা ছেড়ে দাও। ঠকে ঠকে ও নিজেই সব শিখে যাবে।’ আজ থেকে রিজু একা স্কুলে যাবে। সাথে মা যাবে না। ওর স্কুল হরিনারায়ণ হাই স্কুল বাড়ি থেকে পনেরো মিনিটের হাঁটা পথ। রিজু ভাত খেয়ে ব্যাগ পিঠে চাপিয়ে স্কুল চলল। প্রথমে একা যেতে রাজি হচ্ছিল না। ওর মা অনেক অভয় দিলেন। শেষে রাজি হল। কিছুটা পথ যেতেই এক বৃদ্ধ বললেন, ‘এই রিজু তোর বাপ কি ভিখিরি হয়ে গেল? এই স্যান্ডেল পরে স্কুলে যাচ্ছিস। একজোড়া কালো শ্যু কিনে দিতে পারল না?’ বাড়ি ফিরে সে মাকে কথাটা জানাল। মা বললেন, ‘কাল শ্যু পরে যাবি।’
পরদিন ইউনিফর্ম আর ঝকঝকে একজোড়া শ্যু পরে রিজু স্কুলে চলল। সেই বৃদ্ধ তাঁর বাড়ির বাইরে একই জায়গায় বসে ছিলেন। রিজুকে দেখে বললেন, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ। এইবার ঠিক বড়লোকের ছেলে বলে মনে হচ্ছে। খুব সুন্দর লাগছে রিজু দাদুভাই তোমাকে।’ স্কুলে গিয়ে অঙ্ক ভুল করায় সৌমেন স্যারের কাছে রিজু খুব বকুনি খেল। স্যার বললেন, ‘গাধা কোথাকার! তোর দ্বারা কিচ্ছু হবে না।’ বাড়ি ফিরে রিজু মাকে স্যারের কথা জানাল। ওর মা বললেন, ‘সন্ধেয় আমার কাছে কালকের অঙ্কগুলো সব করে নিবি।’ সন্ধেয় আগামীকাল স্যার যে অঙ্কগুলো দেবেন সব প্র্যাকটিস করে নিল রিজু। পরদিন সৌমেন স্যার ক্লাসে পাঁচটা শতকরা অঙ্ক কষতে দিলেন। রিজু সবার আগে কষে নিয়ে স্যারের কাছে গেল। স্যার দেখে বললেন, ‘দারুণ দারুণ। কাল তোকে গাধা বলেছিলাম। তুই গাধা নোস। তুই ঘোড়া। ভালো করে লেখাপড়া কর। অনেকদূর যাবি।’
বাড়ির মেজোকাকা অরুণ রিজুকে রাতদিন ভীতু ছেলে বলে অবজ্ঞা করতেন। দু’দিন পর একটা ঘটনা ঘটল। রিজু আর বিজন স্কুল থেকে একসাথে ফিরছিল। রাস্তার শামুকভাঙা লেগে বিজনের পা কেটে গেল। রক্তক্ষরণ বন্ধ হচ্ছে না। রিজু পথের পাশে পড়ে থাকা একটা কাপড় কুড়িয়ে নিয়ে কাটা জায়গায় বেঁধে দিল। তারপর তাকে নিয়ে হাসপাতালে গেল। এমারজেন্সি চেম্বারে চিকিৎসা হল। বিজন এখন ভালো আছে। মেজোকাকা অরুণ শুনে রিজুকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘রিজু আমি তোকে ভীতু হিসেবে জানতাম। তুই ভীতু নোস। তুই সাহসী আর বুদ্ধিমান।’ আজ রাতে রিজু বাবা আর মায়ের সাথে ডিনারে বসেছে। বাবা বললেন, ‘কাল তাড়াতাড়ি বেরতে হবে আমাকে। বাজার থেকে মাংসটা অত সকালে কী করে আনব বুঝতে পারছি না।’
রিজু বলল, ‘আমি এনে দেব বাবা।’
বাবা বললেন, ‘ভয় করে না একা বাজারে যাবি?’
রিজু হেসে বলল, ‘একদমই না। আমি এখন আর লোকের কথায় কান দিই না।’
বাবা বললেন, ‘তোর এ ভয় কাটল কী করে?’
সিক্সের ছাত্র রিজু বলল, ‘বাবা আমি মিস্ট্রি ধরে ফেলেছি। লোকে যখন যেমন দেখে তখন তেমন বলে। বলতে তো খরচ হয় না। ছেঁড়া পোশাকে দেখলে ভিখারি বলবে। ভালো পোশাকে দেখলে ধনী বলবে। পড়া না পারলে গাধা বলবে। পারলে বুদ্ধিমান বলবে। ভয় করলে ভীতু বলবে। সাহস দেখালে সাহসী বলবে। সবটা আমার ওপর নির্ভর করছে। এখন থেকে আমি ঠিক করেছি, আমার যেটা ঠিক মনে হবে আমি সেটা করব। তাতে কে কী বলল কান দেব না।’
রণিতা রিজুর বাবাকে বললেন, ‘কীগো, আমি কী বলেছিলাম? বলিনি পথ চলতে চলতে ও সব শিখে যাবে?’
অমলেন্দুবাবু মুচকি হাসলেন। পাতের ঝোলটা ভাতের সাথে মেশাতে লাগলেন আর ভাবলেন, যাইহোক ছেলেটা যোগ্য হয়ে উঠছে তাহলে…
মনসুর আলি | Mansur Ali Gazi
Top Bengali Story 2022 | আমাদের একাল-সেকাল | গল্প ২০২২
Bengali Story 2022 | জয়ন্ত কুমার সরকার | গল্পগুচ্ছ ২০২২
Bengali Story | কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা | গল্পগুচ্ছ | 2022
Bengali Story 2023 | সন্ধ্যে নামার আগে | গল্প ২০২৩
bengali story | short bengali story analysis | short bengali story characteristics | short bengali story competition | short bengali story definition | Best Bengali Story | Top Bengali Story | World Bengali Story | International Bengali Story | short bengali story english | writing competitions ireland | bengali story writing practice | bengali story writing topics | trending topics for article writing 2022 | bengali story trends 2022 | content writing topics 2022 | Bangla Prabandha | Probondho | Definite Article | Article Writer | Shabdodweep bengali story | Galpoguccha | Galpo | Bangla Galpo | Bengali Story | Bengali Article | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | Shabdodweep Founder