Best Bengali Story Generator | Shabdodweep Galper Diary

Sharing Is Caring:

বিন্দু মাসি – কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা

স্টেশনে প্রবেশের পিচ রাস্তার একপাশে জলনিকাশি পথ। সব সময় ময়লা জলে ভরে থাকে। ওই জলপথের উপর বাঁশের মাচার ঢাকনি। তার উপর বসে বিন্দু মাসি। বাজারের সবাই ওই নামে ডাকে । সেখানে রাখে এক বালতি জল, একটা গামলা,ক্ষয়ে যাওয়া ছোট একটা কাঠের মুগুর। একটা শসা কাটা ছুরি, একটা ডিস, বসার জন্য একটুকরো চট চৌকো করে কাটা। পাশে আছে পলিথিন প্যাকেটে ভরা উনুনের ছাই। গোটা পাঁচ ছয় পুরনো বাজারের থলে আর মূল জিনিস হোল একটা ধারালো বটি। মাছ কাটার। তার বাম পাশে একটা ছোট্ট চায়ের দোকান । মাঝ বয়সী একজন চা দোকানি। মাসির সামনে রাস্তার ওপারে দুই জোয়ান ছোকরা বড়ো বটিতে বসে সামনে পলিথিন কাগজে রাখা মাছ বিক্রি করছে। তার কিছুটা দূরে একজন কম বয়সী বধূ মাছ বিক্রি নয় বিন্দু মাসির মত মাছ কাটার জন্য বসে। মাছ সবজি ফল ফুল নিয়ে রাস্তার দুপাশে পসরা সাজিয়ে বিক্রি, গম গম করে সকালের বাজার।

একদল বটি নিয়ে বসে, তারা মাছ বিক্রি করে কেটে দেয়। আর এক দল মাছ ব্যাপারী ছোট ও মাঝারি জ্যান্ত মাছ জলপাত্রে রেখে জল চাপড়ায়, যতক্ষণ জ্যান্ত রাখা যায় মাছ। তারা মাছ বিক্রি করে শুধু ,কেটে দেয় না। খদ্দের মুশকিলে পড়ে যায় । সেই সব খদ্দের মাছ কাটতে বিন্দু মাসিদের কাছে যায়। কেউ কাটাচ্ছে পুঁটি মাছ, কেউ বা ট্যাংরা,ছোট বাটা, ছোট পোনা, মাগুর, তেলাপিয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। মাছ কাটা সহজ কাজ নয়, দেবমাল্য বাবু জানে। মাছ যেমন পছন্দ করতে বাজারে অনেক দোকানে পরখ করতে হয়, মাছ কাটুনি ও পছন্দসই হওয়া দরকার। সবাই পারদর্শী নয়।বিধবা বিন্দু মাসি বেশ অভিজ্ঞ মাছ কাটাতে।

একান্নবর্তী পরিবারে অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছিল। শাশুড়ি দেখাশোনা করতে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল ধান চাল ঝাড়তে আর বটি দিয়ে সব ধরনের মাছ কাটতে পারে কী না। জানতো কিছু কিছু, তাই বিয়ে যাতে না ভাঙে বলে দিয়েছিল, – হ্যাঁ । সেই হ্যাঁ কে বাস্তবে পরিণত করতে কম কসরত করতে হয়নি! শাশুড়ি বিন্দুকে স্নেহ করতো, হাতে ধরে অনেক কিছুই শিখিয়ে ছিল। আজকের এই কাজ করতে এসে তার শাশুড়ির কথা খুব মনে পড়ে। দেবমাল্য বাবুর আজ অফিসের তাড়া নেই ।ছোট ছোট পাঁচশো গ্রাম বাটা মাছ কিনে বিন্দুমাসির বটির সামনে দাঁড়িয়ে প্যাকেট টা ধরাল । বিন্দু মাসি বলে, – বাবু তোমার আগে এই আরও তিনটে প্যাকেট আছে। দেবমাল্য বাবু বলেন, – ঠিক আছে, অসুবিধা নেই। তখন মাগুর মাছ কাটছে মাসি। এক মুখ দাড়ি ওয়ালা ভদ্রলোক দেখছে ,তার মাছগুলো কীভাবে কাটা হচ্ছে এবং মাঝে মাঝে দাগা কত বড়ো হবে ,সেই পরামর্শ দিচ্ছে। খণ্ড মাগুর মাছের মাথা গুলো তখনও নড়ছে। মাছের মালিকের মুখে হাসির রেখা, একেবারে পুকুরের জীবন্ত মাগুর মাছ, আজকাল সহজে পাওয়া বড়ো দায়। ‘ কত দাগা হোল একটু গুণে দাও, বিন্দু মাসি মনে মনে গুনতে গুনতে পলিথিন প্যাকেটে ভরছে। পরের প্যাকেট । এবার প্রায় দুশো গ্রাম করে তিনটে মৃগেল মাছের ছানা। মাসি শসা ছাড়ানো ছুরিতে আঁশ ছাড়াতে মাছের গায়ে ছাই দিচ্ছে। যার মাছ তিনি বলছেন, – কেমন মাছ মাসি! নিবিষ্ট একাগ্রতায় ছুরি চালাতে চালাতে বলে, – দেখছ না, কেমন চক চক করছে, ফরমালিন দেওয়া মাছ। যার মাছ তার মুখটা কেমন বিকৃত হয়ে গেল। দেবমাল্য বাবু তো অবাক! অজ গ্রাম থেকে শহরতলিতে আসা একজন নিরীহ বিধবা মহিলা, কী ভাবে প্রাত্যহিক জীবনের খুঁত গুলো ধরে ফেলছে। আমরা তো ব্যস্ত সময়ের ঝুঁটি ধরে শুধু দৌড়ে চলেছি। কোনো দিন লেজ উল্টে দেখি না কিছুই। এবার তার মাছের পালা, হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন দেবমাল্য। এতো গুলো মাছ দশ টাকাতে হয় বাবু! মাসি প্রশ্ন ছোঁড়ে । ঠিক আছে, পাঁচ টাকা বেশি দিচ্ছি। ভালো করে কেটে দাও। এই মাছ গুলো কাটতে কাঠের মুগুরের সাহায্য লাগে না। এসবের লেজ, বুক পাখনা, পিঠ পাখনা হালকা, বটির ধারালো অংশে কাটা যায়। একটু বড় মাছ অথবা তেলাপিয়া ইত্যাদি মাছের ক্ষেত্রে ও মুড়ো দুই ভাগ করতে মুগুরের প্রয়োজন। বটির নিচের দিকের অংশে এই কাজটি করতে হয়।

রাস্তার ওপারের মাছ কাটুনি যখন ফাঁকা বসে থাকে, বিন্দু বাসিনীর কাছে লাইন পড়ে যায়। বিন্দুবাসিনী হোল এ বাজারের এক বিশেষজ্ঞ কাটুনি। কোন মাছ কিভাবে কাটতে হয়, মাছের গা টিপে বলতে পারে টাটকা না পচা, ওষুধ দেওয়া না ফ্রেশ, পুকুরের না সার দেওয়া জলের, দুদিনের না পাঁচদিনের বরফ দেওয়া, হাই ব্রিড না দেশী ইত্যাদি। মাছের কী দেখে চিনবেন সেটি টাটকা না বাসি। যারা এখানে মাছ কাটতে আসে, শিখে যায় অনেক কিছু। আসে পাশের মাছ ব্যাপারী তার কাছে জব্দ, জানে এই মাসির কাছে খাপ খোলা যাবে না। দেবমাল্যর গৃহিণী বড় মাছ তেমন পছন্দ করে না, সেইখানে ঝামেলা। অথচ বটি পেতে কোনদিন একটা মাছ কাটার অভ্যেস নেই। গোটা মাছ এনে কতদিন দেব-মাল্য নিজেই আনাড়ি হাতে মাছ কেটেছে। তারপর ওই বিন্দু মাসিকে সে আবিষ্কার করেছে। দেব-মাল্য এখন মাছ চেনা, মাছ কাটা, কোন মাছ কিভাবে রাঁধতে হয়, বিন্দু মাসির কাছে শেখে। মাসি মাঝে মাঝে বলে, – বাবু তোমার গিন্নি কী পাটরাণী! সামান্য মৌরলা মাছ কাটতে জানে না ! দেব-মাল্য চুপ করে থাকে। এসব প্রশ্নের কোন উত্তর নেই, গৃহের শান্তি বিঘ্নিত হবে। মাছের প্যাকেটের লাইন কমে এলে সে মাসির কাছে যায়, সেই ফাঁকে অন্য বাজার করে নেয়। সংসারের অনেক গল্প হয় দুজনের মধ্যে। এই যে নালার ওপর বাঁশের চালাতে মাসির মাছ কাটার জায়গা, আসলে এইখানে তার স্বামী সবজি বিক্রি করতো। গ্রাম থেকে স্বামী স্ত্রী একান্নবর্তী পরিবার ছেড়ে চলে এসে একটা ঘর ভাড়া নেয়। স্থানীয় নেতাদের ধরে বাজারের এক চিলতে জায়গায় সবজি নিয়ে বসত। কষ্টের সংসারে দুই কন্যার জন্ম হোল। কোন প্রকারে এক চিলতে জায়গা কিনতে গেল প্রায় দশ বছর। সোমত্ত দুই মেয়ে বিয়ে দেওয়ার আগে স্বামী চলে গেল পরপারে । যাওয়ার আগে একটা নিজস্ব চালা ঘর বেঁধে গিয়েছিল তাই রক্ষে।

মেয়েদের বিয়ে দিল নিজের পরিশ্রম আর বুদ্ধিতে। এখন তার একলার সংসার। মেয়ে জামাইরা আসে, খুব কম। তাদের তো সব ব্যস্ততার মধ্যে কাটে । অবশ্য খোঁজ রাখে মোবাইল ফোনের দৌলতে । সকালে প্রাত্যহিক কাজকর্ম সারতে সেই ভোর ভোর উঠতে হয়। তারপর পরিপাটি করে একটা আটপৌরে পরিচ্ছন্ন কাপড় পরে, মাথার চুল যথাসম্ভব গুছিয়ে বেঁধে মাছ কাটার সরঞ্জাম নিয়ে বাজারে এসে বসা। রবিবার বিন্দু মাসির ব্যস্ততম দিন, খরিদ্দার বড্ড জ্বালাতন করে। এর আগের রবিবার কাজের সময় বাম হাতের অনামিকা রক্তাক্ত হয়। তাই এখন সেখানে কাপড়ের টুকরো দিয়ে বাঁধা। অসুবিধা হচ্ছেও দেব-মাল্য বাজারের অন্য প্রান্তে যাওয়ার আগে দেখে গেছে , বিন্দু মাসির কাছে বেশ ভিড়। অন্ধ্রের বড় মাছ খেয়ে খেয়ে অনেকে এখন দেশী অর্থাৎ বঙ্গের মাছের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে। তাই খাল, বিল ও পুকুরের মাছ বাজারে এলে অল্প ক্ষণের মধ্যে বিক্রি হয়ে যায়। বাড়ি থেকে আজ বায়না হয়েছে সিঙ্গি মাছের। দেব-মাল্য ঘুরতে ঘুরতে এক মহিলার মাছ পাত্রে আবিষ্কার করলো ছোট ছোট কিছু সিঙ্গি । অন্য কোন খরিদ্দার আসার আগে কিনে নেয়। অন্য বাজার সম্পূর্ণ করার পর, বিন্দু মাসি ।তখনও একজনের শোল মাছ কাটার পালা চলছে। জ্যান্ত শোল কাটা সহজ নয়। নিপুণ হাতের কাজ। ওদিকে হাত ফসকে নাকি এক পিস নালার জলে। যার মাছ তার তো মাথা গরম। ‘পই পই করে বললাম, মাথায় মুগুর টা মারো। তা আর মারলো কই! তিনশো টাকা কেজি, বুঝলে মাসি!’ – মাছের মালিক বলে যায়। মাসি নির্বিকার, দ্রুত কাজ শেষ করে।

অবশেষে দেবমাল্য বাবুর সিঙ্গি মাছের পালা । তিনি ভাবছেন, এবার বোধ হয় জটিল পরিস্থিতি । মাসি কিভাবে এই মাছের কাঁটার ঘা এড়িয়ে কাটবেন! কোন প্রতিক্রিয়া নেই। মাছ গুলো তার পাত্রে রাখলো কালো পলিথিনের প্যাকেট থেকে। একটা থলে থেকে বের করলো একটা ছোট শিশি। শিশি থেকে পরিমাণ মত লবণ বের করে মাছগুলোর গায়ে ছড়িয়ে দিল। অচিরেই মাছগুলো ছটফট করে নিস্তেজ। এবার ধীরে ধীরে বিন্দু মাসি তার কাজ করতে লাগলো। পয়সা দেবার সময় দেব-মাল্য জিজ্ঞেস করে, – একলার সংসার সামলাও কী করে! আর ঘর গিয়ে এরপর কী কাজ! তার বটি মুগুর ইত্যাদি গোছাতে গোছাতে বলে, – ঘর যেয়ে রান্নাবান্না। দুপুরে খাওয়ার পর ঠোঙা বানানোর কাজ। তারপর বিকেল হলে দোকানে দোকানে ঠোঙা দিয়ে আসা। কাজের শেষ নেই বাপু। ‘তোমার এই মাছ কাটার কাজে কত হয় রোজ’। ‘ওই দেড়শো দুশো টাকা হয়, সবদিন তাও হয় না।’ বেলা হচ্ছে, দেব-মাল্য মাসিকে বলে দ্রুত পা চালায়। ভাদ্র মাসের রোদ্দুর বেশ কড়া।

চারদিন অফিসের কাজে দেব-মাল্য বাইরে ছিল। এ কদিন সংসার সামলেছে নন্দিনী একা । তার ছেলেকে সামলাতে দেবমাল্যর শাশুড়িকে আসতে হয়েছে। দেব-মাল্য বেশ গুছিয়ে বাজার করতে পারে। তার অনুপস্থিতি, বেশ বেকায়দায় ফেলে নন্দিনীর। সেদিন বেশ রাত্রি হোল অফিসের কাজ সেরে বাড়ি ফিরতে। ক্লান্ত শরীরে অল্প কিছু খেয়ে ঘুমুতে যায় দেব-মাল্য। সকাল হলেই নন্দিনীর কণ্ঠস্বর ভেসে আসে, – রান্নার সবকিছু বাড়ন্ত , একটু তাড়াতাড়ি বাজার যেতে হবে। দেব-মাল্য জানে, সেইমত সে তৈরি হচ্ছিল। শুধু চায়ের কাপটা দ্রুত শেষ করে বেরিয়ে পড়লো । পথে সামনের গলির ভুবন বাবুর সঙ্গে দেখা। সৌজন্য আলাপ সেরে হন হন করে বাজারে ঢুকে গেল। মিনিট দশেক লাগে বাসা থেকে বাজার। কিন্তু বাজার আজ সেভাবে জমেনি তো! কী হোল!

মাছের বাজারের দিকটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। রোজ আগে বিন্দু মাসির উপস্থিতি দেখে দেব-মাল্য বাবু মূল বাজারে ঢোকে। আজকেও তাই । কিন্তু আজ কী দেখছেন তিনি। বিন্দু মাসির জায়গায় চারটে ইট দিয়ে তৈরি একটা মঞ্চে প্রয়াত ‘বিন্দুবাসিনী দেবী’র একটা ছবি, তাতে বাসি ফুলের মালা। নির্বাক হয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে পড়লেন দেব-মাল্য বাবু। পরিচিত আত্মীয় বন্ধু অনেকের মৃত্যু দেখেছেন, কিন্তু আজ কেন যে তাঁকে নাড়িয়ে দিয়ে গেল এক অপরিচিত অনাত্মীয় নিরীহ দর্শন বিধবা মহিলার মৃত্যু! মনে হোল অনেক কালের পরিচিত, গভীর সম্পর্কের এক মানুষকে তিনি হারালেন। মাছ ছাড়া অন্য সব কিছু প্রয়োজনীয় বাজার করে একটু দেরীতে বাসায় ফিরলেন দেব-মাল্য। নন্দিনী বাজারের থলে গুলো ধরে সব গুলোতে চোখ বুলিয়ে বলে উঠলো, – কী গো তোমার মাছের থলে ফাঁকা কেন! খুব শান্ত ভাবে দেবমাল্য উত্তর দিল, – বিন্দু মাসি মারা গেছেন, আমাদের তিন দিন নিরামিষ। নন্দিনী দেবমাল্যর মুখের দিকে চেয়ে দেখে, তার চোখ দুটো জলে ভেজা !

সন্দেহের কাঁটা – কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা

অনেক অনুসন্ধান ও কথা চালাচালি করে কাজের মেয়েটাকে পেয়েছিল নবকান্ত ।গৃহপরিচারিকা নিয়ে এখন খুব সমস্যা,বলতে গেলে সব পরিবারে, বিশেষত শহর ও শহরতলীতে। আবার পেলেও যে খুব স্বস্তি নিয়ে থাকবেন, সেটি কিন্তু হবে না । নবকান্ত মণ্ডলের এখন অবসরকালীন জীবন। গৃহিণী বলে খিটখিটে মিনসে, ছেলে বলে ব্যাক ডেটেড, বৌমা মুখ ফুটে কিছু না বললেও নবকান্ত বোঝে যে ,বৌমার চোখে সে একজন ‘বুড়ো ভাম’।

জীবনের শেষ কিস্তি চলছে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে মন্ডলবাবুর। অবসরের দিনেই সে বুঝতে পেরেছিল, চলতি গাড়িটা হঠাৎ ব্রেক কষে বসে গেল। সকাল হলেই সেই ব্যস্ততা আর নেই। কিছু পুরোনো অভ্যেস প্রথম প্রথম কিঞ্চিৎ বজায় থাকে। সেই সকালে উঠে প্রথমেই দাড়ি শেভ করা। একটু গরম জল হলে ভালো নাকি শেভ করা যায়, নবকান্তর ধারণা। এই সব ধারণা হয়েছে অফিস কলিগ দের কাছ থেকে। আবার একটা ব্লেড ভেঙে নিয়ে দুটো করে, কম দামী রেজরে ভরে দাড়ি কাটা শিখিয়েছিল অফিসের অরূপদা। এবং সেই অভ্যেসটা আজও বর্তমান। মা বলত বৃহস্পতিবার দাড়ি কাটতে নেই। প্রথম প্রথম মার কথা শুনলেও সেই কথা রাখা সম্ভব হয়নি। তাই রোজ সকালে দাড়ি শেভ করার সময় মার মুখটা মনে পড়ে, আর মনে মনে বলে, – মা গো তোমার কথা রাখতে পারলাম না। আসলে সকালে এই কাজটি না করলে কেমন যেন রোগী রোগী লাগে তার।

বৌমা নতুন মানুষ এই সংসারে, তাই শ্বশুর বাড়ির যাপন চিত্র বুঝতে একটু সময় লাগবে, সেটাই স্বাভাবিক। ছেলে সকালে কাজে বেরিয়ে গেলে ঘরের ব্যস্ততা কমে, তখন নবকান্তের কোন রুটিন থাকে না। নতুন কাজের পরিচারিকা সনকা, সকালে বাসন পরিষ্কার করার পর দ্বিতীয় বারের জন্য আসে ঘরের মেঝে মুছতে।প্রথমে ঝাড়ু দেওয়া, তারপর মোছার পালা। গৃহিণী প্রথম প্রথম মেঝে মোছার কলা কৌশল শিখিয়ে দিলেও তার নিজস্ব স্টাইলে সে এই কাজ করার দিকে ঝোঁক দেয়। এভাবেই বেশ কিছুদিন পরে একটা ছকের মধ্যে কাজকর্ম ধারাবাহিক হয়ে যায়। গৃহিণী, বৌমা আর মামনি অর্থাৎ পরিচারিকা এই ত্রিভুজ একটা স্থিতি পায়, অন্তত নবকান্তের মনে হল।

প্রথম মাস শেষ হওয়ার পর সনকা বায়না ধরে, – কাকিমা, এই টাকায় এত কাজ সম্ভব নয় । কত বাসন, দু তলা মিলিয়ে ঘরও গোটা ছয় ।তাছাড়া সিঁড়ি, রান্নাঘর আছে। যুক্তি আছে, কিন্তু কাজের আগে তো দেখে নিয়েছ বাবা। নব কান্ত মনে মনে ভাবে, তবে এই ব্যাপারে সে নাক গলাতে চায় না, কারণ গিন্নি আর বৌমা মিলে মাসের পারিশ্রমিক নির্ধারণ হয়েছে। যে যার যুক্তি দেখালেও শেষমেশ ঠিক হল অন্তত তিন মাসের আগে পারিশ্রমিক বৃদ্ধি হবে না। মনমরা হলেও সনকা তা মেনে নিতে বাধ্য হল। এভাবেই চলছিল, যদিও নবকান্তের মনে হল সনকা মোটেই খুশি নয়। আসলে পেটের দায়ে, ছেলেমেয়েদের মুখ চেয়ে ওরা কাজ করতে বাধ্য। কাজ না পেলে সংসার তো চলে না। নবকান্ত ইতিমধ্যে সনকার সংসার চিত্র জেনে নিয়েছে। তিন ছেলেমেয়ে শাশুড়ি আর স্বামী নিয়ে তাদের গরীবের সংসার, সমস্তটাই গতর নির্ভর। বর্তমানের লক্ষ্মীর ভান্ডার তার কপালে জোটেনি, ওই সংক্রান্ত সার্টিফিকেট বা অন্য কাগজপত্র সংগ্রহ করতে না পারার জন্য।

কিছুদিন বাবুদের ধরে, দুয়ারে সরকার এ লাইন দিয়ে শেষমেশ গোল্লা। মাঝে পড়ে অনেকদিন কাজ কামাই। স্বামী তার চির রোগা, ট্রেনের বাদাম ভাজা ব্যাপারী। দুই মেয়ে এক ছেলের পড়াশুনো, টিউশন মাস্টার, রোগ নাড়া ইত্যাদি। এই বাজারে পাঁচ পাঁচটা পেট, চলে কী করে!
তবুতো গ্রাম থেকে যাতায়াত, ঘরভাড়া বেঁচে যায়। নবকান্ত ভাবে, আর ভাবে । সে মাসান্তে পেনশন পায়, ছেলের আয় নেহাত কম নয়।কিন্তু মাঝে মাঝে মনে হয় , কোথাও যেন কিসের অভাব অভাব। অথচ সেই অর্থে ওই সব মানুষগুলোর তো অনন্ত অভাব ! দিব্যি চলছে তাদের অভাবী জীবন ! হয়তো ওদের আকাশ চুম্বী চাহিদা নেই, নেই চাকচিক্যময় জীবনের হাতছানি। এক শ্রেণি টাকার চাকায় মসৃণ জীবনে অভ্যস্ত। তাদের গরীব ,নিম্নবিত্ত মানুষের জীবন নিয়ে ভাবনার অবকাশ কোথায়। এই সব সাত পাঁচ মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল। অথচ ওই ভাবনা পর্যন্ত গড়িয়ে আর এগোচ্ছে না।

‘সকালের বাজারের থলেটা সেই আমার রয়ে গেল, হাতবদল হল না,’ – নবকান্তের আক্ষেপ! ছেলের কাছে কোন পয়সা সে চায় না, ছেলের যা মন চায় তাই কেনে মাঝে মাঝে। বাজার শেষে উদ্বৃত্ত টাকা সে নিজের কাছে রেখে দেয় তার পড়ার টেবিলে। টাকা যার দরকার হয়, তার কাছে চেয়ে নেয়। আবার গৃহিণীর কাছে বেশ কিছু টাকা রেখে দেয়, কারণ বেহিসেবী খরচ যাতে না হয়। গৃহিণীর মতে নব কান্ত হল একজন অসঞ্চয়ী মানুষ, খরচের কোন লাগাম থাকে না। তবে নবকান্ত জানে, সে কী। তার আয়ের টাকা কোনদিন মনে হয় নি তার ‘ নিজের ‘ টাকা। মনে পড়ে তাদের অভাবের সংসারের কথা, মনে পড়ে বাবা মা দাদারা কী পরিশ্রম না করতো দু বেলা খাবার যোগাড়ের জন্য। আজও তার একটা পয়সা খরচ করতে গায়ে লাগে।

এ হেন নবকান্ত একদিন বাজার থেকে ফিরে তিনটে পাঁচশো টাকার নোট রেখে দেয় তার নিত্য দিনলিপি লেখা ডায়েরির মধ্যে। ডায়েরির পাতার ভাঁজে রাখলেও তার কিন্তু মনে হল সে রেখেছে ডায়েরির তলায়। আজকাল এরকম হচ্ছে তার। সুগারের ওষুধ না খেলেও মনে হচ্ছে খেয়েছে, আবার উল্টোটা ও হচ্ছে। জানা নাম হঠাৎ ভুলে যাচ্ছে, তিনদিন পরে কোন এক প্রসঙ্গে আবার মনে পড়ে যাচ্ছে হঠাৎ। বন্ধুরা বলছে ,এরকম তাদেরও নাকি হচ্ছে। একটু স্বস্তি পায় সে কথা শুনে। বিশেষ করে পুরনো সহপাঠী আর অফিস সহকর্মীদের নাম ভুলে যাচ্ছে। তাই বলে টাকা কোথায় রেখে দিল, সেটা যে ভুলে যাবে নবকান্ত বিশ্বাস করতে পারছে না ।

আসলে সে মুশকিলে পড়েছে ,ডায়েরির তলায় রাখা টাকাটা আর খুঁজে পাচ্ছে না। এই ভুলভুলাইয়া নিয়ে সে বড় বেকায়দায় পরে গেল। সে যেন স্পষ্ট দেখা পাচ্ছে, ডায়েরির তলায় রাখার মুহূর্তটি। অথচ রেখেছিল পাতার ভাঁজে।এই মুহূর্তের ভুল থেকে জন্ম নিল এক সন্দেহের কাঁটা । জলজ্যান্ত তিনটে নোট পাঁচশো টাকার, ডানা মেলে উড়ে যেতে পারে না। কে নিল তার সেই অমূল্য ধন ! গিন্নি যা নেয়, বলে নিয়ে থাকে। বৌমার নেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না । সম্ভ্রান্ত বাড়ির মেয়ে, স্বামীর কাছে বললেই পেয়ে যায় সব কিছু। ওই সামান্য টাকা নিয়ে ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ সে করবে না। আবার ভাবে কত টাকা কোথায় গেল, কত জন হাজার হাজার টাকা নিয়ে দিল না, তাতে তো তার কিছুই হয়নি, মা বাবার আশীর্বাদে। তাহলে আজকে এই টাকার জন্য সে এত চিন্তা করে কেন !

পরিচারিকা সোনামনি তার টেবিলের নিচে ঝাড়ু দিয়ে ধুলো ময়লা পরিষ্কার করে, টেবিল থেকে পড়ে গেলে তো সেই পাবে। হয়তো পেয়ে আর দিল না। গরীব লোক, দেড় হাজার টাকার অনেক মূল্য। আস্তে আস্তে নবকান্তের সন্দেহের তির যাচ্ছে মামনির দিকে। টাকাটা পড়ে গেল কী টেবিলের নিচে! না ডায়েরির তলা থেকে সে বের করে নিল, টেবিল পরিষ্কার করার সময়! তার চেতন আর অবচেতন মনে সন্দেহের পেন্ডুলাম ঝুলছে । মুখে কিছু না বললেও সে পরিচারিকা মামনি, তার কাজ কর্ম নিবিষ্ট মনে দেখে, কোথায় কী লুকিয়ে নিচ্ছে কী না খেয়াল করে। কিন্তু তার একদিনও মনে হল না ডায়েরির পাতাগুলো উল্টে দেখি।

সন্দেহের কাঁটা তার মনকে বারে বারে খোঁচা দেয়। মনটাকে হালকা করতে একদিন গিন্নিকে কথায় কথায় ঘটনার কথা বলে ফেলে। গিন্নি তো হতবাক, সব শুনে। ‘বাইরের লোক বলতে ওই মামনি, আর তো কেউ আসে না, এলেও তোমার টেবিলের ধারে কাছে কেউ ঘেঁষে না। শুধু ওই মামনি টেবিল মাঝে মাঝে পালকের ঝাড়ন দিয়ে পরিষ্কার করে, তলার মেঝে ঝাট দেয় আর মোছে।’ – গিন্নী বলে। তারও সন্দেহ মামনিকে ঘিরে। ঘটনাটা দু কান থেকে তিন কান হল, অর্থাৎ শাশুড়ি বৌমাকে শোনাল। এবং তা চার কান হতে বাকি রইল না। বাড়ির সব সদস্য এখন সন্দেহের চোখে দেখে মামনিকে। সপ্তাহ খানেক পরে মামনিরও মনে হল বাবুদের কী হোল। তেমন কথা বলে না তার সঙ্গে, কেমন যেন এড়িয়ে চলছে। ‘তা যাকগে বাপ, আমার কাজ নিয়ে কথা, কে কথা বললো আর কে বললো না, এসবের মধ্যে না থাকা ভাল।’ – মামনি মনে মনে ভাবে আর যন্ত্রবৎ হাত চলে।

সেদিন রাতে বৌমা বর কে বলে, – ‘দেখো আমাদের তো গয়না পাতি কিছু আছে, আর মামনির স্বভাবটা বুঝতে পারছো! কোনদিন কোন বিপদ না ঘটায়। খবরের কাগজে প্রায়ই তো দেখি কাজের মেয়েদের চুরি চামারি। ‘চন্দ্রকান্ত বলে, – ‘এখন একমাত্র উপায় মামনিকে কাজ থেকে ছাড়িয়ে দেওয়া।’ এই প্রস্তাবটা উভয়ে মায়ের কাছে রাখবে, ঠিক হল সেই রাত্রে। পরের দিন মায়ের কাছে এই প্রস্তাব রাখা হল, পরিস্থিতি বিবেচনা করে। মা সব শুনলো এবং বলল, – ‘কিন্তু কাজের জন্য অন্য একজন না পেলে ছাড়ি কী করে, আর অন্য জন যে এই স্বভাবের হবে না তার তো কোন ঠিক নেই।’ এখন উভয় সংকটে পড়া গেল।

মামনি নিজের কাজ করে যায়, কে কী ভাবলো, কথা বললো কি না এসব চিন্তা করে না। এরই মধ্যে একদিন নব বাবুর টেবিল পরিষ্কার করতে গিয়ে টেবিলে রাখা মোবাইল হঠাৎ নিচে পড়ে সামনের গ্লাস চৌচির। অনেকদিনের পুরনো মোবাইল, ইতিমধ্যে একটা সূক্ষ্ম চিড় ধরেছিল। তা সে যাই হোক এভাবে নষ্ট হতে নবকান্তের মাথা গরম হয়ে গেল। স্ত্রীকে ডেকে বলে দিল, – মামনিকে আজই ছাড়িয়ে দাও, ওর কী পাওনা পয়সা কড়ি সব মিটিয়ে দাও। গিন্নী তক্কে তক্কে ছিল, তলে তলে অন্য কাজের মেয়ের সন্ধান করলেও সুবিধে হয়নি। তবে সুযোগটা এসে গেল, এই চোর মেয়েটাকে বিদেয় করার। মামনির একটা গুণ ছিল, সে মুখোমুখি কারুর সঙ্গে বিবাদ করতো না, সহ্য করে নিতে পারতো। পরের দিন থেকে সে আসবে না বলেই গেল। মনে মনে ভাবলো, সত্যি তো, সে কত বড় ক্ষতি করে দিল কাকুর!

মাসের শেষ হতে তখনও পাঁচদিন বাকি। নতুন মাসে নতুন পরিচারিকার খোঁজ খবর নিতে হবে। এই কদিন নিজেরা চালিয়ে নিতে পারলে ভালো। সেই রকম সিদ্ধান্ত হল। দিন দুই পর নিজের টেবিলটা কাপড়ের টুকরো দিয়ে পরিষ্কার করে ডায়েরি খুলে বসলো নব বাবু। দিনের শুরু কেমন হল, কী কাজ করতে হবে এই সব লিখে নিয়ে চা ও খবরের কাগজ নিয়ে বসে রোজ । আজকে ডায়েরির পাতা খুলে নির্দিষ্ট তারিখের পাতাতে যেতে গিয়ে নব বাবুর চোখ আটকে গেল। তিনটে পাঁচশো টাকার নোট ডায়েরির ঠিক মাঝখানে বসে হি হি করে যেন হাসছে। বলছে তারা, – মামনি আমাদের গায়ে হাত দেয়নি, আপনি এমন জায়গায় লুকিয়ে রেখেছেন তার বাপের সাধ্যি নেই আমাদের খুঁজে পায়।

নবকান্তর আত্মগরিমা ভূলুণ্ঠিত। নিজেকে ধিক্কার দিতে দিতে সে ভাবলো, কী এক জঘন্য কাজ করলো। একটা নিরীহ কাজের মেয়েকে মিথ্যে সন্দেহ করা তার মোটেই উচিত হয়নি। এখন তার মনে পড়ে গেল, টাকাগুলো সে ডায়েরির মধ্যে রেখেছিল যাতে মামনি দেখতে না পায়। তার মনে যে এতো পাপ, কোনদিন আবিষ্কার করতে পারেনি। একটা সামান্য ঘটনায় কাজের মেয়ে বুঝিয়ে দিল, কত পঙ্কিল তার মানসিকতা ! মামনির চলে যাওয়ার সময় তার করুণ মুখটা যেন নবকান্তকে আজ বলছে, – আমরা গরীব হতে পারি, কিন্তু চোর নই কাকু! স্ত্রী, ছেলে, ছেলের বউ আসল ঘটনা শুনে চুপ রইলো। সবার এখন একটাই ভাবনা, কিভাবে অন্য এক পরিচারিকা পাওয়া যায়।

এ যেন এক আকাল। কাজের মেয়ে খুঁজে পাওয়াই যায় না। রোজ দুপুরের পর নবকান্ত ঢাকুরিয়া স্টেশনে গিয়ে খোঁজ করে । এই সময় ওরা ফিরতি ট্রেনে করে বাড়ি ফেরে। যদি কোন নতুন একজনের নিযুক্ত করা যায়, এই আশায়। একদিন যায়, দু দিন যায়, তৃতীয় দিনে ট্রেন আসার আগে ভিড়ের মধ্যে প্ল্যাটফর্মে কে একজন মহিলা ডাকে, – ‘কাকু, কাকু, ও কাকু আপনাকে বলছি । ‘নবকান্ত বুঝতে পারলো, তাকেই ডাকছে। সে মুখ ফেরাতেই সামনে এসে যে দাঁড়ালো, তার নাম মামনি। বাবু নবকান্ত তার মুখের দিকে তাকিয়ে হতবাক। ‘আপনি কেমন আছেন কাকু, কাকিমা, দাদা বৌদি সব ভালো আছে তো ! এই রোদ্দুরের বেলা কোথায় যাচ্ছেন? সে কী উত্তর দেবে ! মাথা ঝাঁকিয়ে বললো, – ‘ভালো আছি। এই এদিকে একটু দরকার ছিল তাই এলাম। তুমি ভালো আছ? এখন ক বাড়ি কাজ কর?’

না কাকু আর কারোর বাড়িতে কাজ করিনা।একটা ব্যাগ কারখানাতে কাজ নিয়েছি, বাবুদের বাড়ি চোর বলে বড্ড সন্দেহ করে! কথাটা নব কান্তের বুকে যেন ধারালো তীরের ফলার মত বিঁধে গেল। হঠাৎ তার মনে হল, বিশিষ্ট (?) মানুষেরা চুরি করে রাজপ্রাসাদ বানাচ্ছে, তাদের ধরতে পারিনা। অথচ গরীব খেটে খাওয়া মানুষদের চোর বলে সন্দেহ করি । আমাদের লজ্জার পুকুরে ডুবে মরা উচিত। এমন সময় ডাউন ট্রেন এসে গেলে, মামনির দল হইচই করে ট্রেনের কামরায় ঢুকে পড়লো।

কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা | Krishna Kishore Middya

New Bengali Story 2023 | ভালো লাগে | শওকত নূর

New Bengali Story 2023 | খোঁজ | কুহেলী দাশগুপ্ত

Bengali Story | কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা | গল্পগুচ্ছ | 2022

Bengali Story 2022 | জয়ন্ত কুমার সরকার | গল্পগুচ্ছ ২০২২

Anandabazar Bengali Short Story | Bengali Short Story | Pratilipi Horror Stories in Bengali | Lifestyle Web Stories in Bangla | Trending online bangla golpo pdf free download | Short bengali story | Bengali story pdf | pratilipi bengali story | Short Stories for Children | English Stories for Kids | Moral Stories for Kids | story in english | story hindi | story book | story for kids | short story | story for girls | short story in english | short story for kids | Bengali Story Generator pdf | Bangla golpo pdf | Bangla golpo story | bangla romantic golpo | choto golpo bangla | bengali story | Sunday suspense golpo | sunday suspense mp3 download | suspense story in hindi | suspense story in english 200 words | Bengali Story Generator in english | Trending online bangla golpo pdf download

suspense story in english 300 words | Suspense story examples | suspense story in english 100 words | suspense story writing | very short suspense stories for students | Bengali Story Generator | Top Bangla Golpo Online Reading | New Read Online Bengali Story | Top Best Story Blogs | Best Story Blogs in pdf | Sabuj Basinda | High Challenger | Famous Bangla Golpo Online Reading | Shabdodweep Read Online Bengali Story | Shabdodweep Writer | Bangla Golpo Online Reading pdf | Famous Story – Trending Bengali Story Generator | Pdf Bengali Story Generator | Bengali Story Generator App | Full Bengali Story Generator Reading | Bangla Golpo Online Reading Blogs | Trending online bangla golpo pdf

Best Story Blogs in Bengali | Live Bengali Story in English | Bangla Golpo Online Reading Ebook | Full Bangla Galpo online | Bengali Story Generator 2024 | New Bengali Story Generator – Episode | Golpo Dot Com Series | Bengali Story Generator Video | Story – Bengali Story Generator | New Bengali Web Story Audio | New Bengali Web Story Video | Bengali Story Generator Netflix | Audio Story – Bengali Story Generator | Video Story – Bengali Story Generator | Shabdodweep Competition | Story Writing Competition | Bengali Writer | Bengali Writer 2024 | Trending Bangla Golpo Online Reading | Top Bengali Story Generator | Bengali Story Generator Web Story | Best Read Online Bengali Story | Read Online Bengali Story 2024 | Trending online bangla golpo book pdf

Shabdodweep Bangla Golpo Online Reading | New Bengali Story Generator | Bengali Famous Story in pdf | Modern Online Bangla Galpo Download | Bangla Golpo Online Reading mp3 | Horror Adult Story | Read Online Bengali Story Collection | Modern Online Bangla Galpo mp4 | Modern Online Bangla Galpo Library | New Bengali Web Story Download | Full Live Bengali Story | Bengali Famous Story 2023 | Shabdodweep Bengali Famous Story | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Bengali Famous Story – video | Bengali Famous Story mp3 | Full Bengali Famous Story | Bengali Literature | Shabdodweep Magazine | Shabdodweep Web Magazine | Live Bengali Story Writer | Shabdodweep Writer | Trending online bangla golpo free download

Leave a Comment