Bangla Golper Diary | Best Bengali Story

Sharing Is Caring:

সমতা – পুনম মায়মুনী

অপুরা নতুন বাসায় উঠেছে। আগে ছিল মগবাজার, এখন এসেছে আজিমপুরে। মা প্রায়ই বাবাকে বলতো, ‘এ বাড়িটা পাল্টাও, নিচতলায় আমার একদম ভালো লাগে না! কেমন দম বন্ধ হয়ে আসে।’, উত্তরে বাবা বলতো, — হুম, দেখছি, অফিসের লোক লাগিয়েছি ভাল একটা বাসা দেখার জন্য।
— বাদ দাও তোমার অফিসের লোক! গত দু’মাস ধরে একই কথা শুনছি, আজও একটা বাসার হদিস তাঁরা খুঁজে পেলো না? রেগে গিয়ে মা বাবাকে বলেছিল।

তারপর মা খবরেরকাগজে বাড়ি ভাড়া দেখে কোথায় যেন ফোন করলো আর সেদিন বিকেলেই অপুকে নিয়ে এ বাড়িটা দেখতে আসে। বাড়িটা দেখেই মা’য়ের খুব পছন্দ হয়ে গেলো, ‘বাহ্ কি সুন্দর খোলামেলা! তাই না রে অপু? আবার কাছেই নিউমার্কেট, ইচ্ছেমত কেনাকাটাও করতে পারবো। তবে পিছনদিকটা একটু বস্তির মতো, তাতে অসুবিধে নেই জানালাটা বন্ধ করে রাখলেই হবে।’
তারপর বাবাকে এসে বলল, ‘আমি বাড়ি ফাইনাল করে এসেছি’। ব্যাস, কয়েকদিন পরই এ বাড়িতে চলে আসা। কিন্তু বাড়ি ছেড়ে চলে আসার দিন অপুর মনটা খুব খারাপ ছিল! ওখানে ওর কত খেলার সঙ্গী সাথীরা ? রুবেল, পাপড়ি, ইমু, রুমা, সুমন আরও কতজন। ইস্! ওদের ছেড়ে কেমন করে থাকবে সে?

মা বলেছে, ‘এখানেও তোমার অনেক বন্ধু হয়ে যাবে, তখন ওদের জন্য আর একটুও মন খারাপ হবে না।’
‘আম্মু’টা যেন কেমন? শুধু একা একাই থাকতে বেশি পছন্দ করে। কারোর জন্য কাঁদতে গেলে বলবে, অতো মায়া দেখাতে হবে না, হাতেমতাই সাজার দরকার নাই এই বয়স থেকেই।’
অপুর খুব ফাঁকা ফাঁকা লাগছে এই নতুন বাড়িটায়। অপুর ঘরের জানালটা খুললেই নজরে আসে, নিচে ছোট্ট একটা টিনের বাড়ি। বাড়ির সামনাটা অপুর ঘর বরাবর, ভিতরের সবকিছুই প্রায় দেখা যায়। অবসর সময়ে, রোজ ঐ বাড়ির মানুষদের কাণ্ডকারখানা দেখে অপু।
তাঁর বয়সী একটা ছেলে আছে নাম বাবলু। ওদের মা প্রায়ই উচ্চস্বরে ঐ নামে ডাকে, ‘ও বাবলু মনুরে লইয়া খেল্, আমি রান্দন চড়াই।’

মনু বাবলুর ছোটবোন এক বছরের হবে। বাবলুর আরও একটা ছোট ভাই আছে নাম টুটুল। টুটুল প্রায়ই মনুর খাবার কেড়ে নেয়, তখন বাবলু চিৎকার করে মাকে নালিশ করে,’ও মা… দেহ টুটুল মনুর খাওন কাইরা লইয়া যায়?’
অপু তখন জেনে নেয় ওর নাম টুটুল।
রোজ বিকেলে ওদের বাবা টিং টিং করে বাজিয়ে, একটা সাইকেলে চেপে বাড়ি এসে, সাইকেলটা উঠোনের বাঁশের খুঁটিতে হেলান দিয়ে রাখে। তারপর সাইকেলের পিছনের প্যাডেল থেকে একটা ছালার ব্যাগ নামিয়ে ঘরের ভিতর নিয়ে যায়। বেশ ভারী মনে হয় ব্যাগটা!
অপুর মনে প্রশ্ন জাগে, ‘ঐ ব্যাগে করে রোজ বাবলুর বাবা কী নিয়ে আসে?’

বাবলুর বাবা উঠোনে পা রাখতেই সব ভাইবোনেরা বাবাকে ঘিরে রাখে, ‘বাবাটাও কি ভালো! সবাইকে একটা একটা করে আদর দিয়ে দেয়।’
অপু ঠোঁটটা বাঁকিয়ে নিজের অজান্তেই বলে উঠে, ‘আমার বাবা যে কখন আসে আমি জানিই না!’
সন্ধ্যার পর যখন অপু পড়তে বসে ঠিক তখনি বাবলুর কণ্ঠস্বর ভেসে আসে, ‘দুই একে দুই, দুই দেগুণে চাইর…।’
অপু জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। বারান্দায় মাদুর বিছিয়ে বাবলুকে তাঁর বাবা পড়াচ্ছে।
অপুর খুব ভালো লাগে, ‘কি সুন্দর বাবলুর বাবা ওকে পড়ায়! আর আমার বাবা একদিনও ওমন করে পড়ায় না! কী একটা স্যার রেখেছে, শুধু আমাকে বকে বকে পড়ায়! আবার স্যারকে বাবা বলে দিয়েছে, অপুকে আপনার হাতে তুলে দিলাম ; প্রয়োজনে শাসন করবেন।’
এমন সময় রহিমার মা এসে অপুর টেবিলে এক গ্লাস দুধ রেখে যায়, ‘ অপু বাইয়া দুধটা খাইয়া লইয়েন?’

কিছুক্ষণ পর বাবলুর পড়া শুনতে না পেরে, অপু জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। ঘরের মেঝেতে বাবলুরা সবাই রাতের খাবার খেতে বসেছে। বাবলুর মা ভাত মাখিয়ে বাবলু আর টুটুল দুই ভাইয়ের মুখে তুলে দেয় আবার নিজেও খায়।
অপু একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, ‘ওরা কী মজা করে একসাথে খায়! মা’টাও খুব ভাল আদর করে ওদের মুখে তুলে খাইয়ে দেয়। আম্মু কখনোই অমন করে আমায় খাওয়ায় না! শুধু বুয়াকে বলে বাবুকে ঠিকঠাক মতো খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিও?’
বুয়ার হাতে খেতে একদম ভালো লাগে না অপুর।
রাতের খাবারের জন্য রহিমার মা অপুর ঘরে ঢুকে,
— একি বাইয়া, আফনে এহনও দুধটা খান নাই? আম্মায় হুনলে রাগ অইবো তো?

জানালার কাছ থেকে সরে আসে অপু,
— ‘আমার একদম খেতে ইচ্ছে করছে না বুয়া? তুমিই খেয়ে ফেলো? রহিমার মা অমনি ঢকঢক করে দুধটুকু খেয়ে নেয়। অপুর দুধ প্রায়-ই রহিমার মায়ের পেটেই যায়।
খাবার টেবিলে বসে অপু রহিমার মাকে বলে,
— আচ্ছা বুয়া আব্বু, আম্মু আমার সাথে খায় না কেন?
— হেরা কি এত হকালে খাইবো?
— আমার সাথে খেলে কী হয়?
— হেরা তো বড় মানুষ, ছোডরা আগে খায়?
— তাহলে বাবলুও তো ছোট, ওদের বাবা, মা যে একসাথে খায়? রহিমার মা চোখ বড় বড় করে তাকায়,
— বাবলু? বাবলু আবার কেডা বাইয়া?
— ঐ যে আমাদের পিছনে থাকে?
— ও বুজ্জি! ঐ টিনের ছোড বাসার মাইনষেরা?
অপু হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায়।

— হেরা অইলো গরীব মানুষ! হেগো লগে আফনাগো তুলনা অয়?
বিছানায় শুয়ে অপুর মাথায় যেন খেলতে থাকে ধনী আর গরীবের পার্থক্যের বিশ্লেষণ।
স্কুল থেকে ফিরে অপু জানালার পাশে এসে দাঁড়ায়। বাবলু উঠোনে বসে মাটি দিয়ে কী যেন করছে। অপু জোরে জোরে ডাকে,-
— বাবলু? এই বাবলু. ..

বাবলু এদিক ওদিক তাকিয়ে আবার কাজে মনোযোগ দেয়। অপু আবারো ডাকে, ‘
— বাবলু, বাবলু? এই বাবলু…
এবার বাবলু উপরের দিকে তাকায়, তারপর অপুর দিকে অবাক চোখে হা করে তাকিয়ে থাকে!
— তুমি মাটি দিয়ে কী খেলছ?
উত্তর না দিয়ে, বাবলু তেমন অপলক দৃষ্টিতেই চেয়ে থাকে!
— কী বল্লে না যে, কী খেলছ?
বাবলু একদৌড়ে ঘরের ভিতর চলে যায়। অপুর খুব রাগ হয়,’ছেলেটা আমার সাথে কথাই বল্ল না!’
একটু পরই বাবলু আর তাঁর মা এসে উঠোনে দাঁড়িয়ে, অপুর দিকে তাকায়। বাবলুর মাকে দেখে অপু কিছুটা ভয়ে জানালা থেকে সরে দাঁড়ায়। আজ একুশে ফেব্রুয়ারি ছুটির দিন, অপু সকালে জানালা খুলেই দেখে, বাবলুদের ছোট্ট উঠোনে মাটি দিয়ে তৈরি একটা শহীদমিনার বানানো আবার ফুল দিয়েও সাজানো। অপুর খুব ভালো লাগে দেখে, ‘ইস্, আমিও যদি ওমন একটা শহীদমিনার বানাতাম?’ পাশে বাবলুকে দেখেই অপু আবার ডাকলো, — এই বাবলু…
বাবলু উপরের দিকে তাকাতেই, অপু জিগ্যেস করলো,
— তুমি এটা বানিয়েছ?
এবার বাবলু মাথা নাড়ায়, “হ”।

— বাহ্ খুব সুন্দর হয়েছে!
বাবলুর উত্তর শুনে অপু খুশিতে আবারো জিগ্যেস করে,
— তুমি কোন স্কুলে পড় বাবলু?
সহজ সরলভাবে বাবলু উত্তর দেয়,
— পেরাইমারি ইসকুলে।
— কোন ক্লাসে?
— কেলাস ফাইবে পড়ি।
অপু আনন্দিত হয়ে বলল, — আমিও তো ফাইভে পড়ি! তাহলে তুমি আমার বন্ধু হবে? আমরা একসাথে খেলবো।
বাবলুও খুশি হয়ে বলল, — আইচ্ছা, খুব হইমু!
এরপর থেকে ওদের মধ্যে জানালা দিয়েই কথোপকথন শুরু হয়। ধীরে ধীরে অপু আর বাবলুর বন্ধুত্বটাও বেশ গড়ে উঠে। একদিন বাবলু অপুকে তাঁদের বাসায় আসতে বলে, ‘মা তুমারে আমগো বাড়ি আইতে কইসে, মায়ে পিডা বানাইসে।’

অপু ঠোঁটটা বাকিয়ে বলল, কিন্তু আম্মু যে আমায় কোথাও একা যেতে দেয় না।
— তয় আমি তুমারে নিতে আহি?
অপু খুশি হয়ে বলল,
— আচ্ছা, আস।
বাবলু একদৌড়ে অপুদের বাসার সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে এসে, দরজায় ঠকঠক করে। অপুর মা দরজা খুলে বাবলুকে দেখেই বলল, — কী রে ? কী চাস?
বাবলু ড্যাব, ড্যাব করে তাকিয়ে বলল, — কিস্সু না।

— তো এসছিস কেন?
— অপুরে আমগো বাড়ি নিতে, মায়ে যাইতে কইসে।
শুনে অপুর মা তো অবাক! সাথে সাথেই ছেলেকে ডাকে,
— ‘তুমি ওকে চিনো অপু?’
অপু স্বাভাবিকভাবেই বলল, — হ্যাঁ, আম্মু ওর নাম বাবলু। ওরা আমাদের বাসার পিছনেই থাকে।
অপুর মা ভ্রুটা কুঁচকে, –ও বুজেছি, ঐ যে টিনের বস্তির মতো বাড়িটা? তারপর বাবলুকে উদ্দেশ্য করে বলল, — তোর বাবা কি করে, রিক্সাা চালায়?
— না, বাবায় কাড মিস্তিরির কাম করে।
— ও, অপু এখন আমার সাথে বেড়াতে যাবে। তুই চলে যা?
বাবলু ধীরে ধীরে নিচে নামতে থাকে। অপুর মা আবারো ডাকে, — এই শোন্?
বাবলু ফিরে তাকায়।
— তুই আর কোনদিন এখানে আসবি না, বুঝলি? মনে থাকে যেন।’ ‘আইচ্ছা’, বাবলু মাথা নাড়ায়।

দরজা বন্ধ করে দিয়ে, মা অপুকে খুব করে শাসিয়ে দেয়; ‘ফের যদি শুনেছি তুমি ঐ ছেলেটার সাথে কথা বলেছ!’
অপুর বাবা সব ঘটনা শুনে বলল, ‘খবরদার অপু, কখনো বাবলুর সাথে বাইরে বের হবে না আর ওদের নোংরা খাবারও খাবে না।’
বাবলুর জন্য অপুর মনটা খুব খারাপ লাগছে! খাবার টেবিলে বসে রহিমার মাকে অপু জিগ্যেস করে, — আচ্ছা বুয়া, বাবলুদের বাসায় গেলে কী হয়?
বিষণ্ণ মুখে রহিমার মা বলে, ‘হেরা যে গরীব মানুষ! গরীবগো বাসায় বড়লোকগো যাওন লাগে না বাইয়া?’
— ওরা কি তাহলে নোংরা খাবার খায়?

ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে রহিমার মা বলল্, — হ, গরীবগো সব খাওনইতো নোংরা! তুমরা খাইলে পেটে অসুখ করবো!’
অপু আবার ধনী গরীবের হিসাব মেলাতে থাকে।
আজ শুক্রবার ছুটির দিনে অপুর বাবা মা দু’জনেই নিউমার্কেটে গেছে । এই ফাঁকে অপু বাবলুকে ডাকে, — এই বাবলু, আমার সাথে খেলবে আসো?
— না, আমার ডর করে! তুমার মা যদি আবার খেদাইয়া দেয়?
— না, আজ তোমাকে কেউ তাড়াবে না! আব্বু আম্মু বাসায় নেই।

বাবলু ভয়ে ভয়ে উপরে উঠে আসে। অপু সোজা বাবলুকে নিজের ঘরে নিয়ে আসে। বাবলু চারিদিকে বড় বড় চোখ করে তাকায়, ‘ এত বড় ঘরে তুমি একলা থাহ? রাইতে তুমার ডর করে না?’
অপু তাঁর সব খেলনা বের করে বাবলুকে দেখায়, ‘এগুলো সব আব্বু বিদেশ থেকে এনেছে।’ বাবলু অবাক হয়ে বলে, ‘এত্তগুলান খেলনা? কি সোন্দর সোন্দর খেলনা গো!’
তারপর দু’জনে মিলে খেলতে থাকে। কিছুক্ষণ পর অপুর মা, বাবা ফিরে আসে। অপুর মা সরাসরি অপুর ঘরে ঢুকে। বাবলুকে দেখেই অগ্নিমূর্তি হয়ে একেবারে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে, ‘ছেলের এত্তবড় সাহস!’
চিৎকার করে রহিমার মাকে ডাকতে থাকে। হন্তদন্ত হয়ে রহিমার মা এসে দাঁড়ায়, — কী হইসে আম্মা?

— আবার জিগ্যেস করছো, কী হয়েছে? এই ছোরাটা এখানে ঢুকলো কী করে?
রহিমার মা দু’হাত কচলাতে কচলাতে,
— অপু বাইয়া ঐ জানালা দিয়া বাবলুরে ডাইকা আনসে, ওর লগে বলে খেলবো?
অপুর মা ছেলের প্রতি আরও রেগে যায়! সাথে সাথে অপুর গালে কষে একটা চড় বসিয়ে দেয়,’
— অসভ্য, বেয়াদব ছেলে! যাকে তাকে ঘরে এনে তোলা শিখেছ খুব, তাই না?
তারপর বাবলুর কান ধরে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে যায়,
— তোকে না সেদিন ভালো করে বলে দিলাম, কোনদিনও এখানে আসবি না? চুরি করার মতলব তাইনা? এরপর যদি আসতে দেখি সোজা পুলিশে দিব তোকে?
বাবলু নীরবে চোখ মুছতে মুছতে সিঁড়ি দিয়ে নেমে যায়। এরপর থেকে অপুর জানালাটা সবসময় বন্ধ থাকে। অপুকে এক নজর দেখার আশায়, বাবলু রোজ সকাল, বিকাল জানালার দিকে চেয়ে থাকে।

একদিন বাবলু স্কুল থেকে ফিরে উঠোনে মাত্র পা দিয়েছে, ওমনি অপুর কণ্ঠ শুনতে পেলো, — এই বাবলু…
বাবলু উপরে তাকায়। অপুকে দেখে খুশিতে একদৌড়ে জানালার ধারে এসে দাঁড়ায়, ‘
— এদ্দিন জানালা খুলো নাই ক্যান অপু?
— মা খুলতে বারণ করেছে তাই!
— ও, আমার লগে কতা কইবা, হেইলিগা?
অপুও নির্দ্বিধায় উত্তর দিল,
— হ্যাঁ, সেজন্য। এখন আম্মুরা বেড়াতে গেছে, তাই জানালাটা খুলেছি তোমার সাথে কথা বলার জন্য।-
— তুমারে নিল না বেড়াইতে?
— না, আমার গায়ে জ্বর, তাই নেয় নি। তারপর একটু চাপা গলায় অপু বাবলুকে বলল,’
— এই বাবলু, সেদিন তোমার খুব ব্যথা লেগেছিল তাই না?
মাথাটা ঝাঁকিয়ে বাবলু বলল, — ইকটুও না!
— তাহলে তোমার চোখ দিয়ে যে টপটপ করে পানি পড়ছিল ? অপু একটু অবাক হয়ে বলল।
— তুমারে যে তুমার মায়ে জোরে থাপর দিসিল, হেইলিগা আমি কানছিলাম।
তারপর ঠোঁটটা উল্টিয়ে বাবলু আবারো বলল, — রোজ ইসকুলের সারেরা আমগো কানে ধইরা কতো টানে… আমরাতো গরীব মানুষ, আমগো অব্বাস হইয়া গেসে!

বাবার গাড়ির হর্ণের শব্দ শুনে অপু তাড়াতাড়ি জানালাটা বন্ধ করে দেয়। বেশ কয়েকদিনই হলো, অপুর জানালাটা একদমই খুলছে না। বাবলুর মনে পড়ে গেলো, অপু বলেছিল ওর জ্বর হয়েছে। বাবলুর মনটা বিষণ্ণ হয়ে যায়, অপুকে এক নজর দেখার জন্য মনটা ছটফট করতে থাকে!
একদিন বাবলু স্কুল থেকে ফেরার পথে, অপুদের বাসা থেকে অপুর মাকে গাড়িতে করে বের হয়ে যেতে দেখে। বাবলু আর দেরি না করে, দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে আসে। অপুদের দরজায় টোকা দিতেই দেখে, মস্ত বড় একটা তালা ঝুলছে। বাবলুর মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায়! অসহায়ের মত কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর ধীরে ধীরে নেমে, বাসায় এসে অপুর বন্ধ জানালার দিকে আরেকবার তাকিয়ে থাকে,’ মায়ে ঠিকই কইসিল? বড়লোকগো লগে গরীবগো বন্দু ট্যাহে না! জলে আর তেলে কুনুশুমুই মিশ খায় না!’
এদিকে অপুর মনটাও খুব খারাপ! কতদিন হয়ে গেল, বাবলুর সাথে তাঁর কথা হয় না। কিন্তু কী করবে? তাঁর গায়ে যে অনেক জ্বর! যখনতখন মাথায় পানি ঢালতে হয়। বাবা, মা কেউ না কেউ সারাক্ষণ তাঁর পাশে বসে থাকে।
অপুর জ্বরটা কিছুতেই নামছে না। অপু তাঁর মাকে প্রায়সময়ই কাঁদতে দেখে জিগ্যেস করে, — আম্মু তুমি কাঁদো কেন? আমি যদি মরে যাই সেই ভয়ে?

মা অপুর ঠোঁট চেপে ধরে — ছিঃ, ওকথা বলতে হয় না বাবা!
অপু আবার জিজ্ঞেস করে — বড়লোকেরা মরে গেলে কোথায় রেখে আসে আম্মু?
ছেলেকে জড়িয়ে ধরে, –ও কথা কেন বলছ সোনা!
অপু মায়ের হাতটা ধরে,– প্লিজ আম্মু বলো না?
কান্না জড়িত কন্ঠে, মা উত্তর দেয়, — মাটির নিচে বাবা!
উদগ্রীব হয়ে অপু বলল, — আর গরীব লোকদের?
— ওদেরও তাই!
— কেন?
— আল্লাহর কাছে যে সবাই সমান বাবা!

আগ্রহ সহকারে এবার অপু বলল, — আর মাটির উপরেও কি সবাই সমান?
অপুর মাথায় একটা হাত বুলিয়ে মা বলল, — হ্যাঁ, বাবা মাটির উপরেও সবাই সমান!
অপু ততক্ষণাৎ যেন ধনী-গরীবের বিশ্লেষণটা খুঁজে পেল, — তাহলে তো আমি আর বাবলুও আল্লাহর কাছে সমান? মরে গেলে দু’জনে ঐ মাটির নিচেই তো যাব। তাহলে বাবলুরা গরীব বলে ওর সাথে আমায় খেলতে দাও না কেন আম্মু?
সন্তানের মুখে এই চিরসত্য কথাগুলো শুনে অপুর মায়ের যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেল! বিছানা থেকে উঠে জানালাটা খুলে। বাবলু তখন তাঁর মাটি দিয়ে বানানো ছোট্ট শহীদমিনারটি ফুল দিয়ে সাজাতে ব্যস্ত। অপুর মা বাবলুকে ডাকে, — এই বাবলু…।
বাবলু উপরের দিকে তাকায়। জানালায় দাঁড়ানো অপুর মাকে দেখে বাবলু ভয়ে, আতঙ্কে উঠে দাঁড়ায়! তারপর নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকে যেন সে স্বপ্ন দেখছে?

অপুর মা আঁচলে চোখ মুছে একটা হাত উঠিয়ে আবারো ডাকে, — বাবলু অপুর অসুখ, তুমি দেখতে আসবে না?
বাবলু যেন প্রাণ ফিরে পায়, — অহন আহি?
অপুর মা মাথা নাড়ায়, — এসো।
বাবলু একদৌড়ে অপুদের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে আসে। অপুর মা বাবলুর একটা হাত ধরে অপুর ঘরে নিয়ে যায়। বাবলুকে দেখেই অপু খুশিতে উঠে বসে। বাবলুও খুশিতে অপুর পাশে গিয়ে দাঁড়ায়,
— এই লও, তুমার যে অসুখ, হেইলিগা আমি ফুল আনসি।
ফুলগুলো হাতে নিয়ে অপু বলল,
— আবার কালও আসবে তো বাবলু?
বাবলু কোন কথা না বলে অপুর মায়ের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকে।

অপুর মা বাবলুর গালটা আলতো করে টিপে বলল, — হ্যাঁ, এখন থেকে রোজ বাবলু তোমার সাথে খেলতে আসবে।
অপু খুশিতে বাবলুর হাত দু’টো চেপে ধরে চিৎকার করে বলে উঠে, — হুর-রে, হুর-রে…!
অপুর আনন্দ দেখে, বাবলু আর অপুর মা দু’জনেই হাসতে থাকে।

রত্নগর্ভা মা – পুনম মায়মুনী

এখন কার্তিক মাস। বইছে হেমন্তের বাতাস। চারিদিকে হিম হিম কুয়াশা যেন শীতের আভাষ। দিনটাও ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছে। দিনের সাথে পাল্লা দিয়ে কিছুতেই যেন পেরে উঠা যায় না। কখন যে বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসে। তাই কয়েকদিন ধরেই খুব ব্যস্ততার মধ্যে সময় কাটাচ্ছেন সামাদ সাহেব ও তাঁর স্ত্রী শাহেরাবানু। এখন শুধু বাকী দরজাজানালাগুলো রঙ করানোর।

প্রায় আট দশ বছর পর ছেলেমেয়েরা, বাবা মায়ের সাথে ঈদ করতে আসছে বলে কথা! তারমধ্যে এবারের ঈদটা পড়েছে হেমন্তকালে, একেবারে পিঠাপুলির মাসে । ঘর-বাড়ি সামলিয়ে আবার পিঠারও আয়োজন করতে হবে তাঁকে। শাহেরাবানু ভাবে কতো বছর ধরে সে ছেলেমেয়েদের নিজ হাতে রান্না করে খাওয়ায় না! সন্তানদের পছন্দের খাবার রান্না করে মুখে তুলে দেওয়াই যে মায়ের কতো আনন্দ ! আর নাতি-নাতনিদের তো জন্ম ও বেড়ে উঠা দেশ বিদেশে ,ওরা কি আর কখনো গ্রামবাংলার পিঠাপুলির স্বাদ পেয়েছে? ছোট্ট একটা মফস্বল শহরে সামাদ সাহেব ও শাহেরাবানুর বাস। তাঁদের বড় খোকা সিফাত নিউইয়র্কে থাকে একজন নাম করা বৈজ্ঞানিক। ছোট খোকা শাহেদ, মা-বাবার চিকিৎসা করবে বলেই মেডিকেলে ভর্তি হয় এখন সে মস্ত বড় ডাক্তার, একনামে সবাই তাকে চিনে। বারিধারায় নিজের বিশাল ক্লিনিক। আর বড়মেয়ে রূপা কানাডা প্রবাসী। একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ। ছোটমেয়ে শিলা মায়ের নাড়িছেঁড়া ধন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করে; পাশাপাশি লেখিকাও। যার যার কর্মস্থলে সবার ব্যস্ততার কারণে বাবা মায়ের সাথে দেখা করার সময় হয় না তাঁদের ঠিকই, তবে ফোন করে খোঁজখবর নেওয়া আর প্রতি মাসে টাকা পাঠাতে ভুলে না কোনো সন্তানেরা। পাড়া প্রতিবেশী সবাই তাঁদের সন্তানদের খুব প্রশংসা করে বলে, “আপনারা খুব ভাগ্যবান ও গর্বিত পিতামাতা।দূরে থেকেও কতো খোঁজখবর রাখে আপনার সন্তানেরা।”

যদিও শাহেরাবানুর টাকার প্রয়োজন হয়না। স্বামীর পেনশনের টাকা আর ফসলের টাকায় দিব্যি খুব ভালোভাবেই চলে যায় দু’জনার । শাহেরাবানু প্রায়শই ফোনে ছেলেমেয়েদেরকে বলে সে কথা , “টাকা পাঠাইতে হইবো না বাবা, প্রয়োজন পড়লে তোমাদের আমি বলবো।“ কিন্তু ছেলেমেয়েরা মায়ের কথায় কানই দেয়নি কখনো। “ব্যাংকে রেখে দাও মা, কখন কী বিপদ আসে বলা তো যায় না?” প্রতিবেশীদের কথা শুনে একটা কষ্টের নিঃশ্বাস ফেলে শাহেরাবানু। মনে মনে ভাবে মায়ের চাহিদা, আনন্দ, সুখ কোথায় সন্তানেরা যদি বুঝতো! এবার সোহানির মা মুখ ফসকে বলেই ফেলে,
— পেত্যেকবারই তো হুনি, আফনের পোলামাইয়ারা আইবো, কতো ঈদ গেলো, আইলো কই?

শাহেরাবানু বড় গলায় উত্তর দেয়,
— না গো… এইবার ঠিকই আসবো দেইখো? বড়খোকা আর রূপা টিকিট কাইটা ফালাইসে । ওদের সাথে ছোটখোকা আর শিলাও আসবো ঈদ করতে।

ঈদের আর বেশী দেরী নেই, মাত্র আর কয়দিন বাকি। সন্তানদেরও আসার সময় ঘনিয়ে এলো। রোজকার মতো ভোরবেলায় শাহেরাবানু নামাজ শেষে ,উঠোনের চারিদিকে লাগানো নানান ধরনের ফুলের গাছগুলোর তদারকি করে । আজ সারা উঠোন জুড়ে ছড়িয়ে আছে মনোমুগ্ধকর শিশির ভেজা শিউলি ফুল, দূর্বাঘাসে চকচকে শিশির বিন্দু যেন মুক্তোর ছটা! আসন্ন শীতের হিমেল হাওয়ায় ভেসে আসা গন্ধরাজ, কামেনী ও বিভিন্ন ফুলের মৌ মৌ মিষ্টি সুবাসে মনটা আরও ফুরফুরে করে তুলে শাহেরাবানুর। সকাল সকাল স্বামীর হাতে একটা লম্বা লিস্ট ধরিয়ে দিয়ে কড়া গলায় বলে,
— এই লিস্ট থেকে একটা সদাইও যেন বাদ না যায়। কতো বছর পর আমাদের মানিকরা আসছে বাড়িতে। বড়খোকার ভারি পছন্দ কইমাছ ভাঁজা । বাজারের সবচেয়ে বড়বড় জ্যান্ত কই আনতে ভুইলেন না যেন?

ছোটখোকার কাতলামাছের মুড়ো । সেই একবার মেহমানের পাতে মুড়োটা দিয়েছিলাম বলে, খোকার সে কী গোস্যা! বলে নিজের মনেই খিলখিল করে হেসে উঠে শাহেরাবানু। বাজারের ব্যাগটা স্বামীর হাতে দিয়ে আবারো বলল,
— আর রূপার? সে কি পছন্দ নারকেল দুধে হাসের ডিম ভুনা । যেদিন রান্না হতো সেদিন যেন রান্নাঘরই ছাড়তো না মেয়েটা। হ্যাঁগো., আপনার মনে আছে, শিলা যখন তখন বায়না ধরতো, পিঠা খাবে? বারোমাসই ওর জন্য আমার পিঠা বানাতে হতো।

সামাদ সাহেব একটা পানের খিলি মুখে এঁটে একগাল হেসে বলল,
—তা আর মনে নেই আমার ? সন্তানদের ভালো-মন্দ, আনন্দগুলো সব কিছুই যে খুব মনে পড়ে গো !

স্মৃতিচারণ করতে করতে শাহেরাবানুর মুখমণ্ডল আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে উঠে। সারাদিনের খাটা খাটুনির পর, রাতে শাহেরাবানু তাঁর ক্লান্ত দেহটা বিছানায় এলিয়ে দেয়। তবুও তাঁর এ পরিশ্রমগুলো যেন বুকের ভিতর এক প্রশান্তির বন্যা বয়ে যায়। কখন দেখবে তাঁর বুকের ধন সন্তানদের সেই সোনামুখ! স্মৃতির জাল বুনতে বুনতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে শাহেরাবানু । অপেক্ষার পালা শেষ করে, খুব ভোরে বড়খোকার ফোন এলো,
— মা এইমাত্র আমরা এয়ারপোর্টে নামলাম।

শাহেরাবানুর চোখে আনন্দাশ্রু,
— আলহামদুলিল্লাহ বাবা ! খুব সাবধানে আল্লাহর নাম নিয়া রওয়ানা দিস্ খোকা?

— মা, তোমার বৌমার খুব ইচ্ছা এবার ওর বাবার বাড়িতেই ঈদটা করবে, বাচ্চাদেরও তাই ইচ্ছা । প্লিজ মা, রাগ করো না! আমি সবসময় তোমার আর বাবার সাথে ফোনে যোগাযোগ করবো।

শাহেরাবানুর মাথাটা আচমকা যেন একটা ঘোরপাক খেয়ে গেল। নিজেকে সামলিয়ে একটু নিচু স্বরে বলল,
— ও আচ্ছা, যা ভালো মনে করিস্ তোরা ! তোদের ইচ্ছাই যে আমার ইচ্ছা খোকা । বৌ বাচ্চাদের নিয়ে আনন্দে ঈদ করিস ;দোয়া করি বাবা।

বড়খোকার জন্য আজ সারাটা দিন বিষণ্ণ মনেই কাটলো শাহেরাবানুর। রাতে বড় মেয়ে রূপা ফোন করে জানায়,
— মা, আমি শ্বশুরবাড়িতে উঠেছি। কাল সবাই কক্সবাজার যাচ্ছি। এবারের ঈদটা সবাই সমুদ্রসৈকতেই কাটাবে ভাবছে । বাচ্চাদের আনন্দটা আর মাটি করতে পারলাম না। প্লিজ তুমি মন খারাপ করো না মা? ঈদের পরদিনই আমরা আবার রওয়ানা দিব।

মা একটু চাপা গলায়,
— তবে তাই হবে মা! তোমাদের আনন্দই যে আমার আনন্দ। ঈদটা খুব আনন্দে কাটুক তোমাদের সবার ।

তারপর শাহেরাবানু নিজেই ছোটখোকাকে ফোন করে কিন্তু সুইচ অফ্ দেখে ছোটোমেয়ে শিলার কাছে ফোন করে জানতে পারে, তাঁর ছোট খোকারা সবাই সুইজারল্যান্ড বেড়াতে গিয়েছে । হাসপাতালের কাজে ছোট খোকা এতো ব্যস্ত থাকে তাই এই ছুটিতে একটু রিলেক্সে কাটাবে বলে ঈদটা ওখানেই করবে। আর শিলা জানায় সে একা এসে আর কী করবে? তাছাড়া একটা কনফারেন্স নিয়ে সে খুব ব্যস্ত আছে। ক্লান্ত দেহে একটা ছোট নিঃশ্বাস ফেলে শাহেরা বানু বলল,
— আচ্ছা মা, তোমরা তোমাদের কাজে সাফল্য অর্জন করো এই দোয়া করি । আমাদের জন্য চিন্তা করো না ।

ফোনটা কেটে দিয়ে বারান্দায় কিছুক্ষণ একাকী নীরবে বসে থাকে শাহেরাবানু। নিমিষেই মনটা হারিয়ে যায় অতীত স্মৃতির আগলে। তাঁর মায়ের মুখটা খুব মনে পড়ে যায় ! স্বামীর চাকুরীর সূত্রে বিভিন্ন জায়গায় থাকার কারণে, শত ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বাবার গ্রামের বাড়িতে তেমন যাওয়া হতো না ঠিকই তবে প্রতি বছর ‘নবান্ন উৎসবে’ বাবার বাড়িতে নাইওরি যেতে কখনোই ভুল হতো না। আর মেয়েকে দেখার জন্য মায়ের সেকি ব্যাকুল হয়ে অপেক্ষা করা! সন্তানদের সান্নিধ্যই যে একটি মায়ের পরম সুখ! জামাই আদরে মা তাঁর সারাদিন রান্নাবান্না, পিঠা পায়েস বানানো নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। ছেলেমেয়েরা সব হৈ হুল্লোড় করে বিভিন্ন গ্রাম্য মেলায় নাগরদোলা, লাঠিখেলা,বাইয়োস্কোপ ইত্যাদি দেখে আনন্দ করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেছে। একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে শাহেরাবানু মনে মনে আউরায় আগের সেই সোনালী দিনগুলো কোথায় হারিয়ে গেলো! যান্ত্রিক জীবনের ছোঁয়ায় বাঙালী আজ যেন তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে । সম্পর্কের বাঁধনগুলোও ধীরেধীরে ক্ষয়ে যাচ্ছে। একটা উষ্ণ দমকা হাওয়া যেন শাহেরাবানুর বুকের ভিতরটা একদম দলে মুচড়ে সব উলটপালট করে দিয়ে গেল। অতীতের জীবনগুলো আজ বড় বেশী প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে। স্মৃতিগুলো একে একে সারা মনজুড়ে কেবল আছড়ে পড়ছে । শরীরের রক্ত বিন্দু বিন্দু অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মত সারা দেহে যেন ছেটাছিটি করছে। এক নীলাভ যন্ত্রণা, বারবার মূর্ছা যাচ্ছে পাঁজরের এক কোণায়। ঘুণ পোকারা পাঁজরের চারপাশ ঘিরে ফেলেছে। নিজেকে যেন আজ বড্ড অসহায় লাগছে! দিনশেষে জীবন খাতার পাতাগুলো খুব কাটাছেঁড়া করতে ইচ্ছে করছে আজ শাহেরাবানুর।

ঈদ শেষে সন্তানেরা তাঁদের নানারকম ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে, মা-বাবাকে ঢাকায় আনার সিদ্ধান্ত নেয়। আর মাকে জানায়। মায়ের জন্য আছে একটা বড়ো সারপ্রাইজ! সব হিসাব-নিকাশ, মান-অভিমান তোয়াক্কা করে অধীর আগ্রহে একবার সন্তানদের চাঁদমুখ দেখার আশায় ঢাকায় ছুটে আসে সামাদ সাহেব ও শাহেরাবানু। সন্তানেরা মাকে আনন্দে জড়িয়ে ধরে, এবার মা দিবস উপলক্ষে তাঁদের মা “রত্নগর্ভা মা অ্যাওয়ার্ড” পেয়েছে। তাই আগামীকাল সাংবাদিকরা মায়ের সাক্ষাৎকার নিতে আসবে ।
— তোমায় নিয়ে আমাদের খুব গর্ব মা!

শাহেরাবানু রত্নগর্ভা মায়ের অর্থ কী? খুঁজতে থাকে, তবে এতোটুকুন অনুধাবন করতে পারছে মায়েদের মধ্যে সে একজন দামী “মা”! যথাসময়য়ে সাংবাদিকরা শাহেরাবানুকে ঘিরে একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকে সন্তানদের সাফল্যের পিছনে তাঁর পরিশ্রম ও অবদানের কথা..। সব শেষে প্রশ্ন করে,
— আপনার সন্তানেরা এ দেশ ও জাতির সম্পদ। সারা পৃথিবীতে তাঁদের দ্যুতি ছড়িয়েছে। রত্নগর্ভা মা অ্যাওয়ার্ডে আপনার অনুভূতি কী? আপনি কি গর্বিত? আপনি কি সন্তানদের নিয়ে তুষ্ট?

শূন্য চোখে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকায় শাহেরাবানু।
— কিছু বলুন, প্লিজ?

শাহেরাবানুর দৃষ্টির এক ঝলক সন্তানদের হাস্যোজ্জ্বল মুখের উপর গিয়ে ছিটকে পড়ে… আর তখনই তাঁর মায়ের অপেক্ষারত সেই লাস্যময়ী মুখখানা ভেসে উঠে! চোখদুটো ক্রমশ ঝাপসা হয়ে উঠে শাহেরাবানুর। তারপর কিছু বলার জন্য ঠোঁট দু’টো কাঁপতে থাকে…

পুনম মায়মুনী | Punom Mymoni

History of Bengali Poetry | কবিতা কি ও কেন এবং তার ইতিহাস

স্বামী বিবেকানন্দের যোগ ভাবনা | Top Best 4 Yoga by Swami Vivekananda

Porokia Prem Ekaal Sekaal | পরকীয়া প্রেম (একাল সেকাল) | 2023

Is it possible to remove tattoo | ট্যাটু রিমুভ কি সম্ভব? | 2023

Short bengali story | Bengali story pdf | pratilipi bengali story | Short Stories for Children | English Stories for Kids | Moral Stories for Kids | story in english | story hindi | story book | story for kids | short story | story for girls | short story in english | short story for kids | bangla golpo pdf | Bangla golpo pdf | Bangla golpo story | bangla romantic golpo | choto golpo bangla | bengali story | Sunday suspense golpo | sunday suspense mp3 download | suspense story in hindi | suspense story in english 200 words | Suspense story in english | suspense story in english 300 words | Suspense story examples | suspense story in english 100 words | suspense story writing | very short suspense stories for students | Bangla Golper Diary | Top Bangla Golpo Online Reading | New Read Online Bengali Story | Top Best Story Blogs | Best Story Blogs in pdf | Sabuj Basinda | High Challenger | Famous Bangla Golpo Online Reading | Shabdodweep Read Online Bengali Story | Shabdodweep Writer | Bangla Golpo Online Reading pdf | Famous Bangla Golper Diary | Pdf Bangla Golper Diary | Bangla Golper Diary App | Full Bangla Golpo Online Reading | Bangla Golpo Online Reading Blogs | Best Story Blogs in Bengali | Live Bengali Story in English |Bangla Golpo Online Reading Ebook | Full Bangla Galpo online | Bangla Golper Diary 2024 | New Bengali Web Story – Episode | Golpo Dot Com Series | Bangla Golper Diary Video | Story – Bangla Golper Diary | New Bengali Web Story Audio | New Bengali Web Story Video | Bangla Golper Diary Netflix | Audio Story – Bangla Golper Diary | Video Story – Bangla Golper Diary | Shabdodweep Competition | Story Writing Competition | Bengali Writer | Bengali Writer 2023 | Trending Bangla Golper Diary Reading | Recent story Bangla Golper Diary | Top Story Bangla Golper Diary | Popular New Bengali Web Story | Best Read Bangla Golper Diary | Read Online Bengali Story 2023 | Shabdodweep Bangla Golpo Online Reading | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Modern Bangla Golper Diary Download | Bangla Golpo Online Reading mp3 | Horror Adult Story | Read Online Bengali Story Collection | Modern Online Bangla Galpo mp4 | Modern Online Bangla Galpo Library | New Bengali Web Story Download | Full Live Bengali Story | Bengali Famous Story 2023 | Shabdodweep Bengali Famous Story | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Live Bengali Story – audio | Bengali Famous Story – video | Bengali Famous Story mp3 | Full Bengali Famous Story | Bengali Literature | Shabdodweep Magazine | Shabdodweep Web Magazine | Live Bengali Story Writer | Shabdodweep Writer | Story Collection – Modern Online Bangla Galpo | Bangla Golper Diary Print | Bangla Golper Diary Store | Bangla Golper Diary in English | Bangla Golper Diary in Amazon

Leave a Comment