New Bengali Story 2023 | রত্নগর্ভা মা | গল্প

পুনম মায়মুনী – সূচিপত্র [Bengali Story]
রত্নগর্ভা মা – পুনম মায়মুনী [Bengali Story]
এখন কার্তিক মাস। বইছে হেমন্তের বাতাস। চারিদিকে হিম হিম কুয়াশা যেন শীতের আভাষ। দিনটাও ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছে। দিনের সাথে পাল্লা দিয়ে কিছুতেই যেন পেরে উঠা যায় না। কখন যে বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসে। তাই কয়েকদিন ধরেই খুব ব্যস্ততার মধ্যে সময় কাটাচ্ছেন সামাদ সাহেব ও তাঁর স্ত্রী শাহেরাবানু। এখন শুধু বাকী দরজাজানালাগুলো রঙ করানোর।
প্রায় আট দশ বছর পর ছেলেমেয়েরা, বাবা মায়ের সাথে ঈদ করতে আসছে বলে কথা! তারমধ্যে এবারের ঈদটা পড়েছে হেমন্তকালে, একেবারে পিঠাপুলির মাসে । ঘর-বাড়ি সামলিয়ে আবার পিঠারও আয়োজন করতে হবে তাঁকে। শাহেরাবানু ভাবে কতো বছর ধরে সে ছেলেমেয়েদের নিজ হাতে রান্না করে খাওয়ায় না! সন্তানদের পছন্দের খাবার রান্না করে মুখে তুলে দেওয়াই যে মায়ের কতো আনন্দ ! আর নাতি-নাতনিদের তো জন্ম ও বেড়ে উঠা দেশ বিদেশে ,ওরা কি আর কখনো গ্রামবাংলার পিঠাপুলির স্বাদ পেয়েছে? ছোট্ট একটা মফস্বল শহরে সামাদ সাহেব ও শাহেরাবানুর বাস। তাঁদের বড় খোকা সিফাত নিউইয়র্কে থাকে একজন নাম করা বৈজ্ঞানিক। ছোট খোকা শাহেদ, মা-বাবার চিকিৎসা করবে বলেই মেডিকেলে ভর্তি হয় এখন সে মস্ত বড় ডাক্তার, একনামে সবাই তাকে চিনে। বারিধারায় নিজের বিশাল ক্লিনিক। আর বড়মেয়ে রূপা কানাডা প্রবাসী। একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ। ছোটমেয়ে শিলা মায়ের নাড়িছেঁড়া ধন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করে; পাশাপাশি লেখিকাও। যার যার কর্মস্থলে সবার ব্যস্ততার কারণে বাবা মায়ের সাথে দেখা করার সময় হয় না তাঁদের ঠিকই, তবে ফোন করে খোঁজখবর নেওয়া আর প্রতি মাসে টাকা পাঠাতে ভুলে না কোনো সন্তানেরা। পাড়া প্রতিবেশী সবাই তাঁদের সন্তানদের খুব প্রশংসা করে বলে, “আপনারা খুব ভাগ্যবান ও গর্বিত পিতামাতা।দূরে থেকেও কতো খোঁজখবর রাখে আপনার সন্তানেরা।”
যদিও শাহেরাবানুর টাকার প্রয়োজন হয়না। স্বামীর পেনশনের টাকা আর ফসলের টাকায় দিব্যি খুব ভালোভাবেই চলে যায় দু’জনার । শাহেরাবানু প্রায়শই ফোনে ছেলেমেয়েদেরকে বলে সে কথা , “টাকা পাঠাইতে হইবো না বাবা, প্রয়োজন পড়লে তোমাদের আমি বলবো।“ কিন্তু ছেলেমেয়েরা মায়ের কথায় কানই দেয়নি কখনো। “ব্যাংকে রেখে দাও মা, কখন কী বিপদ আসে বলা তো যায় না?” প্রতিবেশীদের কথা শুনে একটা কষ্টের নিঃশ্বাস ফেলে শাহেরাবানু। মনে মনে ভাবে মায়ের চাহিদা, আনন্দ, সুখ কোথায় সন্তানেরা যদি বুঝতো! এবার সোহানির মা মুখ ফসকে বলেই ফেলে,
— পেত্যেকবারই তো হুনি, আফনের পোলামাইয়ারা আইবো, কতো ঈদ গেলো, আইলো কই?
শাহেরাবানু বড় গলায় উত্তর দেয়,
— না গো… এইবার ঠিকই আসবো দেইখো? বড়খোকা আর রূপা টিকিট কাইটা ফালাইসে । ওদের সাথে ছোটখোকা আর শিলাও আসবো ঈদ করতে।
ঈদের আর বেশী দেরী নেই, মাত্র আর কয়দিন বাকি। সন্তানদেরও আসার সময় ঘনিয়ে এলো। রোজকার মতো ভোরবেলায় শাহেরাবানু নামাজ শেষে ,উঠোনের চারিদিকে লাগানো নানান ধরনের ফুলের গাছগুলোর তদারকি করে । আজ সারা উঠোন জুড়ে ছড়িয়ে আছে মনোমুগ্ধকর শিশির ভেজা শিউলি ফুল, দূর্বাঘাসে চকচকে শিশির বিন্দু যেন মুক্তোর ছটা! আসন্ন শীতের হিমেল হাওয়ায় ভেসে আসা গন্ধরাজ, কামেনী ও বিভিন্ন ফুলের মৌ মৌ মিষ্টি সুবাসে মনটা আরও ফুরফুরে করে তুলে শাহেরাবানুর। সকাল সকাল স্বামীর হাতে একটা লম্বা লিস্ট ধরিয়ে দিয়ে কড়া গলায় বলে,
— এই লিস্ট থেকে একটা সদাইও যেন বাদ না যায়। কতো বছর পর আমাদের মানিকরা আসছে বাড়িতে। বড়খোকার ভারি পছন্দ কইমাছ ভাঁজা । বাজারের সবচেয়ে বড়বড় জ্যান্ত কই আনতে ভুইলেন না যেন?
ছোটখোকার কাতলামাছের মুড়ো । সেই একবার মেহমানের পাতে মুড়োটা দিয়েছিলাম বলে, খোকার সে কী গোস্যা! বলে নিজের মনেই খিলখিল করে হেসে উঠে শাহেরাবানু। বাজারের ব্যাগটা স্বামীর হাতে দিয়ে আবারো বলল,
—আর রূপার? সে কি পছন্দ নারকেল দুধে হাসের ডিম ভুনা । যেদিন রান্না হতো সেদিন যেন রান্নাঘরই ছাড়তো না মেয়েটা। হ্যাঁগো., আপনার মনে আছে, শিলা যখন তখন বায়না ধরতো, পিঠা খাবে? বারোমাসই ওর জন্য আমার পিঠা বানাতে হতো।
সামাদ সাহেব একটা পানের খিলি মুখে এঁটে একগাল হেসে বলল,
—তা আর মনে নেই আমার ? সন্তানদের ভালো-মন্দ, আনন্দগুলো সব কিছুই যে খুব মনে পড়ে গো !
স্মৃতিচারণ করতে করতে শাহেরাবানুর মুখমণ্ডল আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে উঠে। সারাদিনের খাটা খাটুনির পর, রাতে শাহেরাবানু তাঁর ক্লান্ত দেহটা বিছানায় এলিয়ে দেয়। তবুও তাঁর এ পরিশ্রমগুলো যেন বুকের ভিতর এক প্রশান্তির বন্যা বয়ে যায়। কখন দেখবে তাঁর বুকের ধন সন্তানদের সেই সোনামুখ! স্মৃতির জাল বুনতে বুনতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে শাহেরাবানু । অপেক্ষার পালা শেষ করে, খুব ভোরে বড়খোকার ফোন এলো,
— মা এইমাত্র আমরা এয়ারপোর্টে নামলাম।
শাহেরাবানুর চোখে আনন্দাশ্রু,
— আলহামদুলিল্লাহ বাবা ! খুব সাবধানে আল্লাহর নাম নিয়া রওয়ানা দিস্ খোকা?
— মা, তোমার বৌমার খুব ইচ্ছা এবার ওর বাবার বাড়িতেই ঈদটা করবে, বাচ্চাদেরও তাই ইচ্ছা । প্লিজ মা, রাগ করো না! আমি সবসময় তোমার আর বাবার সাথে ফোনে যোগাযোগ করবো।
শাহেরাবানুর মাথাটা আচমকা যেন একটা ঘোরপাক খেয়ে গেল। নিজেকে সামলিয়ে একটু নিচু স্বরে বলল,
— ও আচ্ছা, যা ভালো মনে করিস্ তোরা ! তোদের ইচ্ছাই যে আমার ইচ্ছা খোকা । বৌ বাচ্চাদের নিয়ে আনন্দে ঈদ করিস ;দোয়া করি বাবা।
বড়খোকার জন্য আজ সারাটা দিন বিষণ্ণ মনেই কাটলো শাহেরাবানুর। রাতে বড় মেয়ে রূপা ফোন করে জানায়,
— মা, আমি শ্বশুরবাড়িতে উঠেছি। কাল সবাই কক্সবাজার যাচ্ছি। এবারের ঈদটা সবাই সমুদ্রসৈকতেই কাটাবে ভাবছে । বাচ্চাদের আনন্দটা আর মাটি করতে পারলাম না। প্লিজ তুমি মন খারাপ করো না মা? ঈদের পরদিনই আমরা আবার রওয়ানা দিব।
মা একটু চাপা গলায়,
— তবে তাই হবে মা! তোমাদের আনন্দই যে আমার আনন্দ। ঈদটা খুব আনন্দে কাটুক তোমাদের সবার ।
তারপর শাহেরাবানু নিজেই ছোটখোকাকে ফোন করে কিন্তু সুইচ অফ্ দেখে ছোটোমেয়ে শিলার কাছে ফোন করে জানতে পারে, তাঁর ছোট খোকারা সবাই সুইজারল্যান্ড বেড়াতে গিয়েছে । হাসপাতালের কাজে ছোট খোকা এতো ব্যস্ত থাকে তাই এই ছুটিতে একটু রিলেক্সে কাটাবে বলে ঈদটা ওখানেই করবে। আর শিলা জানায় সে একা এসে আর কী করবে? তাছাড়া একটা কনফারেন্স নিয়ে সে খুব ব্যস্ত আছে। ক্লান্ত দেহে একটা ছোট নিঃশ্বাস ফেলে শাহেরা বানু বলল,
— আচ্ছা মা, তোমরা তোমাদের কাজে সাফল্য অর্জন করো এই দোয়া করি । আমাদের জন্য চিন্তা করো না ।
ফোনটা কেটে দিয়ে বারান্দায় কিছুক্ষণ একাকী নীরবে বসে থাকে শাহেরাবানু। নিমিষেই মনটা হারিয়ে যায় অতীত স্মৃতির আগলে। তাঁর মায়ের মুখটা খুব মনে পড়ে যায় ! স্বামীর চাকুরীর সূত্রে বিভিন্ন জায়গায় থাকার কারণে, শত ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বাবার গ্রামের বাড়িতে তেমন যাওয়া হতো না ঠিকই তবে প্রতি বছর ‘নবান্ন উৎসবে’ বাবার বাড়িতে নাইওরি যেতে কখনোই ভুল হতো না। আর মেয়েকে দেখার জন্য মায়ের সেকি ব্যাকুল হয়ে অপেক্ষা করা! সন্তানদের সান্নিধ্যই যে একটি মায়ের পরম সুখ! জামাই আদরে মা তাঁর সারাদিন রান্নাবান্না, পিঠা পায়েস বানানো নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। ছেলেমেয়েরা সব হৈ হুল্লোড় করে বিভিন্ন গ্রাম্য মেলায় নাগরদোলা, লাঠিখেলা,বাইয়োস্কোপ ইত্যাদি দেখে আনন্দ করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেছে। একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে শাহেরাবানু মনে মনে আউরায় আগের সেই সোনালী দিনগুলো কোথায় হারিয়ে গেলো! যান্ত্রিক জীবনের ছোঁয়ায় বাঙালী আজ যেন তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে । সম্পর্কের বাঁধনগুলোও ধীরেধীরে ক্ষয়ে যাচ্ছে। একটা উষ্ণ দমকা হাওয়া যেন শাহেরাবানুর বুকের ভিতরটা একদম দলে মুচড়ে সব উলটপালট করে দিয়ে গেল। অতীতের জীবনগুলো আজ বড় বেশী প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে। স্মৃতিগুলো একে একে সারা মনজুড়ে কেবল আছড়ে পড়ছে । শরীরের রক্ত বিন্দু বিন্দু অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মত সারা দেহে যেন ছেটাছিটি করছে। এক নীলাভ যন্ত্রণা, বারবার মূর্ছা যাচ্ছে পাঁজরের এক কোণায়। ঘুণ পোকারা পাঁজরের চারপাশ ঘিরে ফেলেছে। নিজেকে যেন আজ বড্ড অসহায় লাগছে! দিনশেষে জীবন খাতার পাতাগুলো খুব কাটাছেঁড়া করতে ইচ্ছে করছে আজ শাহেরাবানুর।
ঈদ শেষে সন্তানেরা তাঁদের নানারকম ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে, মা-বাবাকে ঢাকায় আনার সিদ্ধান্ত নেয়। আর মাকে জানায়। মায়ের জন্য আছে একটা বড়ো সারপ্রাইজ! সব হিসাব-নিকাশ, মান-অভিমান তোয়াক্কা করে অধীর আগ্রহে একবার সন্তানদের চাঁদমুখ দেখার আশায় ঢাকায় ছুটে আসে সামাদ সাহেব ও শাহেরাবানু। সন্তানেরা মাকে আনন্দে জড়িয়ে ধরে, এবার মা দিবস উপলক্ষে তাঁদের মা “রত্নগর্ভা মা অ্যাওয়ার্ড” পেয়েছে। তাই আগামীকাল সাংবাদিকরা মায়ের সাক্ষাৎকার নিতে আসবে ।
— তোমায় নিয়ে আমাদের খুব গর্ব মা!
শাহেরাবানু রত্নগর্ভা মায়ের অর্থ কী? খুঁজতে থাকে, তবে এতোটুকুন অনুধাবন করতে পারছে মায়েদের মধ্যে সে একজন দামী “মা”! যথাসময়য়ে সাংবাদিকরা শাহেরাবানুকে ঘিরে একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকে সন্তানদের সাফল্যের পিছনে তাঁর পরিশ্রম ও অবদানের কথা..। সব শেষে প্রশ্ন করে,
— আপনার সন্তানেরা এ দেশ ও জাতির সম্পদ। সারা পৃথিবীতে তাঁদের দ্যুতি ছড়িয়েছে। রত্নগর্ভা মা অ্যাওয়ার্ডে আপনার অনুভূতি কী? আপনি কি গর্বিত? আপনি কি সন্তানদের নিয়ে তুষ্ট?
শূন্য চোখে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকায় শাহেরাবানু।
— কিছু বলুন, প্লিজ?
শাহেরাবানুর দৃষ্টির এক ঝলক সন্তানদের হাস্যোজ্জ্বল মুখের উপর গিয়ে ছিটকে পড়ে… আর তখনই তাঁর মায়ের অপেক্ষারত সেই লাস্যময়ী মুখখানা ভেসে উঠে! চোখদুটো ক্রমশ ঝাপসা হয়ে উঠে শাহেরাবানুর। তারপর কিছু বলার জন্য ঠোঁট দু’টো কাঁপতে থাকে…
পুনম মায়মুনী | Punom Mymoni
History of Bengali Poetry | কবিতা কি ও কেন এবং তার ইতিহাস
স্বামী বিবেকানন্দের যোগ ভাবনা | Top Best 4 Yoga by Swami Vivekananda
Porokia Prem Ekaal Sekaal | পরকীয়া প্রেম (একাল সেকাল) | 2023
Is it possible to remove tattoo | ট্যাটু রিমুভ কি সম্ভব? | 2023
bengali story new | indian poems about death | bengali story | bengali story books for child pdf | bengali story books for adults | bengali story books | bengali story books for child | bengali story books pdf | bengali story for kids | bengali story reading | short story | short story analysis | short story characteristics | short story competition | short bengali story definition | short story english | short story for kids | short bengali story generator | bengali story 2023 | short story ideas | short story length | long story short | long story short meaning | long bengali story | long story | long story instagram | story writing competition | story writing competition topics | story writing competition for students | story writing competition malayalam | story writing competition india | story competition | poetry competition | poetry competitions australia 2022 | poetry competitions uk | poetry competitions for students | poetry competitions ireland | poetry competition crossword | writing competition | writing competition malaysia | writing competition london | bengali story writing | bengali story dictation | writing competitions nz | writing competitions ireland | writing competitions in africa 2022 | writing competitions for high school students | writing competitions for teens | writing competitions australia 2022 | writing competitions 2022 | writing competitions uk | bengali article writing | bangla news article | bengali story news| article writing on global warming | article writing pdf | article writing practice | article writing topics | trending topics for article writing 2022 | what is article writing | content writing trends 2022 | content writing topics 2022 | Bangla Prabandha | Probondho | Definite Article | Article Writer | Short Article | Long Article | Bangla kobita | Kabitaguccha 2022 | Galpoguccha | Galpo | Bangla Galpo | Bengali Story | Bengali Article | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | Shabdodweep Founder