মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ – সূচিপত্র [Bengali Story]
স্বর্ণলতা – মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ [Bengali Story]
হারাধনের আজ অপারেশন।ছেলেদের কেউ বেঁচে নেই। নানান সমস্যায় ওরা পৃথিবী ছেড়েছ। একটাই মেয়ে, নবীনা। হারাধনের অবলম্বন। ভার্সিটি লাইফ শেষ।এখানে ওখানে টুকটাক ইন্টারভিউ চলছে।বেশ কবার বিভিন্ন ক্যাটাগরি পাত্রপক্ষ দেখে গেছে। বাড়িতে গিয়ে পাত্ররা ডিটেইলস জানাবে। জানায়নি। এখন সব কিছু ললাটের লিখন বলে মেনে নিতে হচ্ছে। হারাধনের হাঁড়ির খবর সবাই জানে। তাই পাত্ররা দলবল নিয়ে আসে।ভুঁড়ি ভোজন করে। তারপর পানের থালায় হাজার টাকা সালামী রেখে সেই যে যায়। মাস্টার্স, সুন্দরী, পাঁচ ফুট চার উচ্চতা, স্বাস্থ্য ভালো হওয়া স্বত্বেও পাত্রদের অরুচি। ডিমান্ড নিয়েই ঘাপলা। বাবাকে ডাক্তার দেখানো, পরীক্ষা করানো, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ভাড়া করা — সব কাজ নবীনাকে একাই সামলাতে হচ্ছে। স্ত্রী নিজেও চিররোগী। কবিরাজ, তাবিজ, তুম্বা, আরক, শরবতের ওপর তার আস্থা। হারাধনের চেষ্টার ত্রুটি ছিলো না। এপথে তার অনেক টাকার শ্রাদ্ধ হয়েছে। আজকে নিরুপায়।
ডাক্তার সিগনাল দিলেন, ভেতরে লিভার ফেইলিউর হতে দেরি নাই। ইনফেকটেড হতে চলেছে। সকালেই খালিপেট থাকতে হবে। ন’টার পরে থেকে মুখে খাবার খেতে বারণ করে গেছে নার্স। এগারোটার দিকে বয় এসে বললো, আপনারা বাইরে যান। রোগীর শেইভ হবে। হারাধন টয়লেটে ঢুকে গেঞ্জি খুলে দিলো। বয় একটা বলপেনে সুপার ম্যাক্স ব্লেড কীভাবে যেন আটকে দিয়ে রেজারের কাজটা সুন্দর করে ফিনিশিং দিলো। তারপর বললো, নেন দাদা, আপনার কাজ শেষ। এইবার একশ টাকা লন।
— একশ টাকা! আরে মিয়া, এটুক কাজে একশ টাকা। এটা তো আমিই পারতাম।
— দ্যাহেন, কাজ করছি। ট্যাকা লন। আরে এইসব তো —– ল ফালানির টাকা।
— কী আর করা, এসেই যখন পড়া, খেলামই যখন ধরা — একশ টাকা তো আজকাল পানি-ভাত।
অবশ্য হারাধনের বেলা এটি প্রযোজ্য। অনেকের কাছে এ-ই টাকা, টাকাই না।
দেয়ালে টানানো ইস্তিরি বিহীন পাঞ্জাবির পকেট হাতড়াচ্ছে হারাধন। বয় কিছুক্ষণ আগেইতো ঢুকলো। সে একশ টাকা নিয়ে গেল। মাথার ওপর ফ্যানের দুটো ব্লেড ঘুরছে। সভ্যতার চরম বাস্তবতা, একটা ব্লেড কেউ যত্ন করে নিজের বাড়িতে নিয়ে গেছে হয়তো। একটা ব্লেড দিয়ে কী এমন লাভ? যার যা বুঝ। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এ-ই সমস্যা ঝুলিয়ে নিয়েই কাজ চালাচ্ছে। মোটা দাগে রোগী জবাই করে টাকা নিচ্ছে। আবার শেভ করানোর টাকাও আলাদা নিচ্ছে।
স্যালাইন পুশ করার জন্য কয়েকজন দেবতার চেহারা নিয়ে আবির্ভূত হলেন। ওনারা টিসটুস, কসমস, শব্দ করে একের পরে এক ইনজেকশন পুশ করছেন। স্যালাইন সেট রেডি করলেন। রোগীর ফাইলে খচাখচ লিখে রাখা ডাক্তারি বিধি নিষেধ অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করে চললেন। এরই মধ্যে কয়েকজন আয়া ঝগড়াঝাঁটি করতে করতে এ-ই রুমে এসেছে। বেডের নীচে ডিশ,ফ্লোরের যাবতীয় ময়লা সরাচ্ছে, নাক ছিটকাচ্ছে।কাজ শেষে ‘মামা’ সম্বোধন করে বকশিস চাইছে। এদেরকেও হাসিমুখ টিকিয়ে রেখেই বকশিস প্রথা চালু আছে। এ-ই কাজের জন্য বেতন, বোনাস পেলেও রোগীর জীবন-মরণ সন্ধিক্ষণে এদের কঠোর অবস্থান এখন সর্বজনগৃহীত। স্বাভাবিক নিয়ম।আসলে অনিয়মের চর্চা করতে করতে অনিয়মই এক সময় নিয়ম বলে জয়যুক্ত হয়। আরো তিনজন মহিলাকে এনাসথেশিয়া বিশেষজ্ঞ এসে ক্লোরোফরম দিয়ে গেছে। আগের একজন মহিলা রোগীদের একজন চলে গেছে নাচতে নাচতে। কারণ তার হাই-প্রেসার। ডাক্তার বললেন, নাচতে নাচতে চলে গেলে লাভ নেই। খুব শীঘ্র আবারও আসবেন। গলব্লাডারে পাথরকে জিইয়ে রেখে নিজেরই ক্ষতি। ওটা চুপচাপ আপনার ভেতরে বড় হবে। আরো বড় ক্ষতির কারণ হবে। টু-ডে অর টুমরো, ওটাকে টেনে হিঁচড়ে বের করতেই হবে।
সন্ধ্যার পর হারাধনের অপারেশন হবে। পাশে দাঁড়ানো তার মেয়েটা। চিররোগী বৌটা আসার চেষ্টা করেছিল। মেয়ে মানা করেছে। কারণ হার্ট উইক মা, যিনি মাছ, মুরগী খান না মোটেই। ওগুলো কাটার পর রক্ত দেখে শিউরে ওঠেন। কাজেই হাসপাতালে নতুনভাবে কোনো সমস্যা তৈরি হোক এটার সুযোগই দেয়া যাবে না। ও.টিতে ঢুকিয়ে দেয়া হোলো হারাধনের নটনড়নচড়ন শরীর। বাইরে মেয়েটা চুপচাপ।মনটা খারাপ।এ-ই সক্ষম বাবাটা যে পরিমাণে সাপোর্ট দিয়ে গেছে, তার হিসেব করা যাবেনা।স্কুলের মাস্টারি, টিউশনি, সামাজিকতা সবকিছুই এতদিন বাবাকে ষাট বছরেও যুবক বানিয়ে রেখেছিল। এখন অপারেশন পরবর্তী ঝক্কিও কম না। কতসব উটকো ঝামেলা এসে ভীড় করবে। ভেতরেই একটা ঔষধের দোকান। ওটার পাশে কিছু চেয়ার। ওখানে বসে ব্যাগের ভেতর থেকে জলটা বের করে। এক প্যাকেট লেক্সাস চিবিয়ে জল ঢালে মুখে। পাশের একজন মহিলাকে দেখা গেলো বকবকানিতে — সে নাকি এণ্ডোসকপি করতে ভয় পায় না। একটু গর্বান্ধ হয়ে টানটান উত্তেজনা নিয়ে এণ্ডোসকপি করতে ঢুকেছে। আর বের হবার সময় সে কী — বীভৎস রকমের অবস্থা! — চোখ দুটো যেন ট্যারা হয়ে গেছে। মুখ দিয়ে লালা বের হচ্ছে। তা গড়িয়ে পড়ছে চিবুক বরাবর। আরো কয়েক ঢোগ জল খেতেই বাইরে কোথাও একটা সম্মিলিত চিৎকার। সমবেত আর্তনাদ বলা যায়।সেই সাথে ফায়ার সার্ভিস, এম্বুলেন্সের যৌথ সাইরেন, আর মানুষের আতঙ্কিত দৌড় শুরু হলো। এক নিমিষেই জনারণ্য। নবীনা সব কিছু রেখে এক দৌড়ে চিৎকারগুলোকে টার্গেট করে। অস্থিতিশীল নিজের মনটাকে বেঁধে রাখতে পারে না। মুহূর্তেই মানুষের চিৎকার, আগুনের দাপাদাপি, যুদ্ধের সাইরেনের মতো বেল বাজিয়ে আসছে এম্বুলেন্স। এই–এই– সরো– দেখি একটু সাইড। ইমার্জেন্সিতে দৌড়ুচ্ছে সবাই। বার্ণ ইউনিটের বেড,কেবিন, বারান্দায় সংকুলান হচ্ছে না।অন্য আরেক হাসপাতালের সন্ধানে বেরিয়ে যাচ্ছে এম্বুলেন্স। ভয়াবহ পোড়া গন্ধ, বীভৎস রকমের অবস্থা, নির্মমতার স্বাক্ষরিত এক একটা পাঠ যেন হাজির হচ্ছে। অপেক্ষাকৃত দুর্বল হার্টের লোকজন চোখ ঢেকে ঘটনাস্থল এড়িয়ে চলছে। রক্তের ডোনারদের ভীড়, স্বেচ্ছাসেবকদের ভীড়, সামরিক, বেসামরিক বাহিনীর ভীড়। কেবল ভীড় নয়, মানবজট। এটা নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক ব্যর্থ।
সে-মুহূর্তে চারপাশের বিভেদের দেয়াল আজকে ভেঙে গেছে। সরে গেছে জাত, পাত, রঙ কিংবা ব্যক্তিগত বিষয়গুলো। এক একটা দুর্ঘটনায় মানুষের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করে। মানবিকতার আবেদন দ্রুতই বাড়ে।উদারনৈতিক মনোভাব বাড়ে। অবশ্য কৌতূহলী জনতা, উৎসুক জনতা বলে একটা কথা থেকেই যায় — এরা নিরাপদ দূরত্বে থেকে তামাশা দেখে, ঘটনাস্থলে আগুন না নিভিয়ে তাকে ঘিরে ভিডিও তৈরি করে। সেলফি তুলতে ব্যস্ত। কেউ কেউ হরিলুটের জন্য ওঁৎ পেতে থাকে। আগুনের লেলিহান শিখার সামনে আর্ত নরনারীর কান্নার অসহায় দৃশ্য আগুনকে নির্বাপিত করেনা।সহস্র মানবের কান্নার রোনাজারি,পোড়া ধোঁয়া আকাশ পর্যন্ত পৌঁছালেও আগুন তার পোড়াবার লেলিহান লালসা থেকে নিবৃত হয় না। জায়গাটা জমজমাট ছিল। কয়েকটা কেমিক্যালস এবং ঔষধের কারখানাও ছিল।আগুনের আজকে তীব্র ক্ষুধা। বস্তি, মানুষ, দোকান, মালামাল পুড়িয়ে আগুন আজ তৃপ্ত। লাগার কারণ যাই হোক আজকের উত্তপ্ততর শিখার সামনে বিশ-পঁচিশ ইউনিট ফায়ার সার্ভিসের সামর্থ্য বড্ড অসহায়। চেষ্টা করা মানুষগুলো কেবলই সাহায্য চেয়ে চিৎকার করছিল। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছিলো। নবীনা এদিক ওদিক বিকল্পের সব দরোজা বন্ধ দেখেও হতাশ ছিলো না। নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী নেমে পড়লো। হতাশ জনতার কতটা জনবান্ধব, সেটাই নিরপেক্ষভাবে বলা সম্ভব নয়। কারণ এদের ভীড় ঠেলে এম্বুলেন্সগুলো আগুনের মূল জায়গার কাছে যেতে পারছে না। পানির কোনো উৎস মিলছে না।
একটু আহতদের উঠে বসতে, বসা রোগীকে ধরাধরি করে স্ট্রেচারে শোয়ানো, ঔষধ গুলো এনে দেয়ার কাজগুলো করতে পেরেছে। স্কুল লাইফে এরকম কাজ স্কাউটিংএ করেছে অনেক। হঠাৎ মনে হলো, বাবাকে অপারেশন থিয়েটারে রেখে এসেছে। মাথাটাকে সে-মুহূর্তে সামাল দেয়া যাচ্ছে না। অবসন্নতা ঘিরে ধরেছে। বাবার অসহায় মুখটা চোখের সামনে ভালো। পুনরায় ফিরে চললো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। ওকে দেখে কেউ কেউ কটু মন্তব্য করছিল —
— তামাশা দেখতে গেছিলো আরকি। নিজের বাপকে কেউ ও.টিতে রেখে ভাগে?…. আরো অনেক তেঁতো কথা।
আয়া জানালো — দিদি আপনের রোগী কেবিনে বেডে নিয়া গেছে অনেকক্ষণ হৈলো। দৌড়ে কেবিনে ঢুকলো নবীনা। বাবা চুপচাপ চোখ বুজে শুয়ে। অপরাধীর মতো নবীনা বাবার পাশে দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করলো, স্যালাইন চলছে। ওনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই বাবা চোখ বুজেই জিগ্যেস করলেন — কীভাবে আগুন লাগলো? অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলো, তাই না?
— হ্যাঁ, বাবা। কিন্তু তোমাকে এ-ই সংবাদ কে দিলো বাবা?
— এই তো ডাক্তার, নার্স ওনারা। অবশ্য মিনিট পাঁচেকের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়লাম। চোখ মেলে দেখলাম আমি বেডে।
আবেগে নবীনার চোখ ভিজে যাচ্ছে — বাবা!তোমাকে এ-ই কঠিন অবস্থায় রেখে আমার চলে যাওয়াটা ঠিক হয়নি। আমি ক্ষমা চাইছি বাবা !আর কক্ষনো এমন ভুল হবে না।
আরে, ধূরর্। তুই তো মানবিকতার খাতিরে সবাইকে সাহায্য করতে গিয়েছিলি। এমনটি সবাই পারে? সার্জন সাহেব তোর অনেক প্রশংসা করলেন। আর তোর অনুপস্থিতিতে সবাই আমাকে বেশ সহযোগিতা করলো। এনাসথেশিয়ার আগে সার্জনের সাথে অনেক কথা হলো। তিনি তার অপারেশন চার্জ নেবেন না বললেন। আরো বললেন, এমন মেয়ের বাবা হিসেবে আমারও জীবন সার্থক। উনার ছেলের বৌ হিসেবে তোকে সিলেক্ট করেছেন। আমি হ্যাঁ, না কিছু বলিনি। তোর মতামত কী?
— বাবা! তুমি ঘুমাও তো। বেশি কথা বলা ঠিক হবে না।
অন্যান্য রাতগুলোর মতোই আজকের রাত প্রকৃতির নিয়মে জারি হলো। জানালা গলিয়ে ঝিঁঝিঁর শব্দ আসছে। সারাদিনের ক্লান্তিতে শরীর নেতিয়ে পড়ছিল। সারাদিন আগুনপোড়া মানুষের জন্য একটু শ্রম, রাতে বাবার সাকসেসফুল অপারেশনের পর বেডে আসার খবরটি, আর সার্জনের মুখে নবীনার শুভ পরিণয়ের আগ্রহের খবরটা ক্লান্তিকর রাতকে ফুরফুরে মেজাজে পরিণত করছে। মোবাইলে ইউটিউবে সার্চ দিচ্ছে। কোন গানটা শুনবে?—- ধূররও, মাথাটা সারাদিনে একদম গেছে।
মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ | Md Shohidullah
Travel Story 2022 | আমার বেড়ানো | পণ্ডিচেরী | মহাবলীপূরম | তিরুপতিধাম | কন্যাকুমারী
Is it possible to remove tattoo | ট্যাটু রিমুভ কি সম্ভব? | 2023
Top Bengali Article 2022 | বসন্ত উৎসব | প্রবন্ধ ২০২২
Top Bengali Poetry | কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা | কবিতাগুচ্ছ | 2023
bengali story writing competition india | bengali story competition | poetry competition | bengali story australia 2022 | bengali story competitions uk | bengali story competitions for students | bengali story competitions ireland | bengali story crossword | writing competition bengali story | writing competition malaysia | writing competition london | writing competition hong kong | writing competition game | writing competition essay | bengali story competition australia | writing competition prizes | writing competition for students | writing competition 2022 | writing competitions nz | writing competitions ireland | writing competitions in africa 2022 | writing competitions for high school students | bengali story for teens | writing competitions australia 2022 | bengali story competitions 2023 | writing competitions uk | bengali article writing | bangla news article | bangla article rewriter | article writing | bengali story writing ai | bengali story writing app | bengali story writing book | bengali story writing bot | bengali story writing description | bengali story writing example | article writing examples for students | bengali story writing for class 8 | bengali story for class 9 | bengali story writing format | bengali story writing gcse | bengali story writing generator | article writing global warming | bengali story writing igcse | article writing in english | article writing jobs | article writing jobs for students | article writing jobs work from home | bengali story writing lesson plan | bengali story writing on child labour | bengali story writing on global warming | bengali story writing pdf | bengali story writing practice | bengali story writing topics | trending topics for article writing 2022 | what is bengali story writing | bengali story trends 2022 | content writing topics 2022 | Bangla Prabandha | Probondho | Definite Article | Article Writer | Shabdodweep bengali story | Long Article | Bangla kobita | Kabitaguccha 2022 | Galpoguccha | Galpo | Bangla Galpo | Bengali Story | Bengali Article | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | Shabdodweep Founder