কুহেলী দাশগুপ্ত – সূচিপত্র [Bengali Story]
কর্ণফূলী [Bengali Story]
অনেককাল আগে দেশ ছেড়ে থাকা তিতাস অনুভবে খোঁজে একটা নদী। যে নদী ভাঙা গড়ার হিসেব বুকে নিয়ে বয়ে চলে। কোথাও স্তরে স্তরে দুঃখের পলি জমে চর জেগে ওঠে। সে চর কোন রাতে জ্যোৎস্নার আলো মেখে ভুলে থাকে সুখ দুঃখের হিসেব। সে জানে তার চলমান জীবনে থেমে থাকার অবকাশ নেই। কত জীবনের ওঠা পড়ার সাক্ষী হয়ে সে বছর অতিক্রান্ত করে চলেছে! এমন নদীর অববাহিকার জীবন, জনপদে বেড়ে ওঠা কিশোরী তিতাস হৃদয়ে কান পেতে শোনে ঢেউয়ের শব্দ । ছলাৎ,ছল, ছলাৎ, ছল। দাঁড় টেনে মাঝি নৌকো ভাসায় নদীর বুকে। আঞ্চলিক ভাষায় কথোপকথন কানে বাজে।
— ও বা, যাইবানা?
— কনডে? কদ্দূর যাইবাক?
— এই এখকানা ঘুইরতাম । ঢাগে ফাশে কোনমিক্কা। কত লইবা?
— একশ টেঁয়া লাইবো।
— বেশি কওর অবা। সত্তর টেঁয়া হয়বো না?
— চলতক।
নৌকো ভেসে যায় কর্ণফূলীর বুকে। যেতে যেতে দেখা যায় দূরের আকাশ নদীর বুকে নেমে আদরে, আলিঙ্গনে একাকার হয়। মালবাহী নৌকো ভেসে যায় কোন দূরে পাল তুলে। কোথাও দূরে জাহাজের নোঙর। কর্ণফূলী নেমে আসে তিতাসের স্বপ্নের পথ বেয়ে। কত শাঁখা সিঁদুরের জলাঞ্জলি দেখেছে এ নদী। তারপর সে ডুব। যে ডুব সেরে ওঠা কপালখানি চিরকালের রঙ ধুয়ে বিবর্ণ হয়। অদৃশ্য চিতার আগুন ধিকি ধিকি জ্বলে। পোড়া কপাল, বন্ধন ছেড়ে থাকার জ্বালা বয়ে চলে। আর নদী! সবটা ধুয়ে ,মুছে একাকার করে চলতে চলতে দূরে কোথাও হারিয়ে যায়। স্রোতের পর স্রোত আসে। পালাবদল হয়। ওর নামটা নিয়ে জনশ্রুতি তিতাস শুনেছিল শৈশবে। নাইতে আসা কোন পল্লী বধূর কানের দুল হারিয়ে যায়। কোন অতলে লুকিয়ে রাখে নদী! খুঁজে না পেয়ে অঝোরে কান্না বধূর। বাড়িতে ফিরে শাশুড়ি ননদিনীর গঞ্জনা সইতে হয়। তাই বুঝি নদীর নাম কর্ণফুলী! একথার সত্যতার কোন প্রমাণ নেই। লুসাই পাহাড় তার জন্মদাত্রী। চট্টগ্রামের একটা গান মনে আছে তিতাসের।
“ছোড, ছোড ঢেউ তুলি পানিত,
লুসাই পাহাড় উড়তন নামিয়ারে যার গই কর্ণফূলী।”
কতকাল সে এ নদীর জল ছুঁয়ে দেখেনি। নদীর ওপর কালুর ঘাট ব্রীজ দিয়ে যাতায়াত করার সময় কখন যেন শুনেছিল শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনের সেই গানটা–
“ও আমার মন কান্দে, ও আমার প্রাণ কান্দে,
ও ওও বন্ধুর লাগিয়া আমার চোখ কান্দে রে,
বন্ধু বিহনে নিশি রাত কান্দে রে।”
আজও তিতাস এই গানখানি লালন করে মনে, হৃদয়ে। দূরের বন্ধুর জন্য মন কেমন। ওর তোলপাড় করা হৃদয়ের কথা পৌঁছে দিতে চায় কর্ণফূলীর কাছে।
— ভালো আছ তুমি? কতকাল ছুঁয়ে দেখা হয়নি তোমার জল! সে যে মা গাইতো,”ও গো নদী আপন বেগে পাগল পারা”। কোথায় লুকিয়ে রাখো তুমি এতো স্মৃতির ডালি! কত গভীরে! এ বার্তা কি নদীর কাছে পৌঁছায়!
কবে শেষ দেখেছে সে কর্ণফুলীর রূপ! মনে রাখেনি। আসলে, সময়ের দূরত্ব যে অনেকখানি। তিতাস আজ বয়সের ভারে পরিপূর্ণ। কিন্তু সময় যে কেড়ে নিয়েছে অনেকখানি। তার শৈশব, কৈশোর, যৌবনের মায়া ছেড়ে চলমান জীবন গড়িয়েছে গঙ্গার কাছাকাছি। এ দেশে মা গঙ্গা পুণ্যধারা রূপে বহমান। আর নদীমাতৃক দেশের কন্যা কর্ণফুলীকে দেখে প্রেয়সী রূপে। যেন বয়ে চলতে গিয়ে দিকে দিকে সে ডাক পাঠায়! নদীর অববাহিকার জনপদ প্রাচীন থেকে প্রাচীনতর হয়। নগরায়নের জৌলুষ মেখে আলোকিত শহর অচেনা হয়ে যায় কোন এক কালের কিশোরীর কাছে। কোথায় সে নদী? যার বুকে নৌকা বিহার করে শীতল হোত মন প্রাণ! সেই সদরঘাট! কোন পিতার হাত ধরে দুটি শিশু পৌঁছে যেতো নদীর কাছাকাছি। তিতাস জানে, ওর চেনা শহরের অনেক খানি অচেনার মাঝে ও কর্ণফুলী বয়ে যায় নিরবে। গঞ্জে, ঘাটে কোলাহল মুখর হয়ে রয়। কেবল নদী জানে, অন্তরে সে আজও তেমনি শীতল, গভীর। শ্রদ্ধেয় মান্না দে ‘র গাওয়া গানখানি দুকুল ছাপিয়ে নয়ন ভাসায়।
–“এ নদী এমন নদী, জল চায় একটু যদি,
দু’হাত ভরে শুকনো বালু দেয় আমারে”।
কি চাইব তোমার কাছে? কর্ণফুলীর আগের রূপ? না কি চলে যাওয়া সময়। সবটাই যে স্রোতের সাথে টেনে নিয়েছ! আর তো ফেরার নয়। তবে কেন পরবাসী জীবনে তোমার মায়ার টান!
তিতাসের মনে বাজে দেশের চেনা সুর। সে সুরে মাটির টান, তরঙ্গায়িত নদী। চির চেনা সম্পর্কের সূতো! দীর্ঘায়িত হতে হতে অ-নে—ক দূরে কোন রেখার মতো। কর্ণফুলী কি ভেসে ভেসে সে রেখায় পৌঁছে যায়!
কবেকার কথা! ভুলতে পারে না তিতাস। চির চেনাদের ছেড়ে নতুন পরিবেশে। মন টেঁকে না। তবুও জানতো এখানেই মানিয়ে নিতে হবে। মানিয়ে চলার অভ্যেস টুকু যেন পুরো মানুষটাকেই বদলে দিয়েছে! নির্বোধের ভাবনা গভীর হয়েছে, বুঝতে শিখেছে। বেহিসাবি মন মেপে বুঝে সংযত হয়েছে। সময় যে অনেক খানি বুঝিয়ে দেয়! আবেগ দিয়ে সবটুকু ছোঁয়া যায় না। সময়ের রকমফের অনেক টা নদীর স্রোতের মতো। জোয়ার এলে যা পরিপূর্ণ, ভাটার টানে অনেকটা ফিরে যায়।
সম্পর্কের সমীকরণ কি সময়ের হের ফেরে বদলে যায় না! যায় তো।
তিতাস মনের গভীরে ডুব দিয়ে খোঁজে। কিছু জনের দূরে সরিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা! বৈঠা বিহীন নৌকার ভার কে নিতে চায়!একলা তরী খোঁজে কান্ডারী। সে তরীও গতি পায়, এলেন বুঝি ঈশ্বরী পাটনী! দিশেহারা তরী মাঝ নদীতে অবলম্বন পায় ঈশ্বর সম। তিনি বৈঠা তুলে দ্যান। সে তরী খানি ভেসে চলে আপন খেয়ালে। অ-নে—ক-টা পথ ফেলে এসে বৈঠা হাতে তিতাস খোঁজে কর্ণফূলী। গঙ্গার বুকে ভেসে কি পৌঁছতে পারবে তিতাস কর্ণফূলীর কাছে! তিতাসের গল্প ফুরোয় না। ও তো ছিন্নমূল, বাস্তুহারাদের মতো দেশান্তরী নয়। ও যেন কোন অজানা গন্তব্যের যাত্রী হয়ে তরীখানি ভাসিয়েছিল! অদৃষ্টের খেয়ালে জীবন তরী পৌঁছে যায় সাজানো গন্তব্যে। ভাবনার তরী খানি আজও পথ হারায় কর্ণফূলীর বাঁকে। তরী নিয়ে ভাসতে ভাসতে তিতাস দেখে কিছু পুরনো স্মৃতি সাজানো নদীর তীরে, তীরে। মন কাঁদে, প্রাণ কাঁদে। বিরহী মন খোঁজে প্রেম। সে প্রেম নদীর অন্তরে লুকিয়ে থাকে। সময়ের স্রোতে হারিয়ে যায় না।
হরিমন দাদা [Bengali Story]
পুরনো বাড়িখানার শ্যাওলা ধরা আলসেতে গজিয়ে ওঠা এলোমেলো পরগাছা গুলো এদিক সেদিক নেতিয়ে থাকে। সকালের এক টুকরো রোদের আমেজে লালী খেলা করে। বছর ছয়ের কোঠায় ছোট্ট খুকীটি।তাদের দোতলার বারান্দায় দেয়ালে পেন্সিলের আঁকিবুঁকি চলে। পুরনো মরচে ধরা রেলিং গুলো তার অবোধ ছাত্র। আনমনে শেখায় অ, আ, ই, এ, বি, সি, ডি। মা আর কাকিমণির পাশে পাশে ঘুরে, নানান প্রশ্নের ঝড় তোলে অস্থির মেয়েটা। লালীদের জমিতে একধারে টালির ঘরে হরিমন দাদা থাকে। ঘোষ বাড়ির আশ্রিত হরিমন গলা টেনে সুর চড়ায়।”হরি হে এ এ এ এ….দয়াল আমা আ আ আ আর”। লালী কখনো সখনো লুকিয়ে চলে যায় হরিমন দাদার ঘরের সামনে। হরিমন গদের আঠা লাগিয়ে পুরনো খবরের কাগজ দিয়ে ঠোঙা বানায়। দোকানে ফেরি করে। বড় থলি ভরে নিয়ে যায়।
লালীকে দেখে হরিমন শুধোয়, “কি গো খুকী?মায়ে রে কয়ে এসিছ? মায়ে বকবে নে”।
— না, বলিনি। তুমি কি গান গাও গো?
— আমি?ঠাওরের গাওন গাই। তোমার ভালা লাগে?
— হুম্
পাশেই কেরোসিনের স্টোভে ভাত ফুটছে। কেমন একটা গন্ধ! লালী অবাক হয়ে দেখে। কই বাবা, কাকুমণি তো ভাত রাঁধে না!সে শুধোয়,
— তোমার বাড়িতে আর কে আছে?
— ইহানে কেউ থাহে না গো। গেরামে আছে। ছ্যালে, মাইয়া আর তুমার দিদা মানে আমার বউ আছ।
ওপর থেকে মায়ের ডাক শোনা যায়।
— আবার না বলে নিচে নেমেছ লালী! শিগগিরই ওপরে এসো। আজ বাবাকে বলব।
— তুমি যাও গো খুকী। মা রাগ হইছে।
লালী ছুটে চলে যায়।
সন্ধ্যে নামার কালে ঘোষ বাড়িতে লালীর মাস্টার কাকু আসেন। ওপরে পড়ার ঘর থেকে ও হরিমন দাদার গান শোনা যায়। কেরোসিনের কূপির আলোতে ঠোঙা বানায় সে। টাক মাথার তিন ধারে কুঞ্চিত কেশরাজি। কৃশকায় মাঝারি গড়ন। ধূতিকে লুঙির মতো পড়ে থাকে। লালী ওপর থেকে দেখতে পায়, মাঝে মাঝে ঘরে তালা দিয়ে হরিমন দাদা কোথায় যেন যায়! হাতে একটা বড় থলে।
— কোথায় যাও দাদা?
— দুকান যাই গো খুকী। ঠোঙা গুলান বেচতি হবে তো।
— এসো গো।
লালী একটু একটু করে বাড়তে বাড়তে শাসন বারণে কতটা গুটিয়ে যায়। হরিমন দাদার ঘরের কাছে আর যায় না। বারান্দায় দাঁড়িয়ে কোনদিন কুশল বিনিময় হয়। একবার প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে টালির ঘর ভেঙে পড়ল।
হরিমন দাদা আশ্রয় পায় লালীদের সিঁড়ির নিচে। চৌকি পেতে কূপি জ্বালিয়ে বসে গুন গুন গাইতে গাইতে ঠোঙা বানায়। মাঝেমধ্যেই খুক খুক কাশে। হপ্তা শেষে দ্যাশের বাড়ি যায়, নারাণপুর গাঁয়ে। একদিন এসে বলে , মাইয়ার বিয়া।যদি কিছু সাহায্য পাওন যায়। লালীর বাবা আর কাকুমণি সাধ্যমতো দিয়েছেন। মেয়ের বিয়ে দিয়ে এসে হরিমন দাদা খুশি মনে সবার জন্য মিষ্টি আনে।
— কাওরে কতি পারলাম না বিয়াতে। সামান্য মিষ্টি খাইলি পরে আমার ভালা লাগবো নে।
— আবার ওসব কেন? লালীর মা বলেন।
লালী এখন কলেজ যায়। বাড়ি ফিরে নিজের পড়াশুনোর ব্যস্ততা। হরিমন দাদার শরীরটা খুব একটা ভালো নয়। খুব কাশি হয়। মাঝে মাঝে কাপড়ে মুখ মোছে। সিঁড়ির নিচে কেউ অত লক্ষ্য করে না। শরীর খারাপ নিয়ে বাড়ি গেল। দু’হপ্তাহ বাদে সাদা ধূতি জড়িয়ে তার ছেলে এলো দুঃসংবাদ নিয়ে।
এক ছুটির দিনে লোক দিয়ে সিঁড়ির নিচটা পরিষ্কার করাতে গিয়ে শুকিয়ে যাওয়া রক্ত মাখা টুকরো কাপড় গুলি দেখে লালীর বাবা চমকে ওঠেন। ব্যাপারটা লালী ও জানতে পারে। রাতে ঘুম না আসা চোখ ছেলেবেলাকার স্মৃতি গুলো খুঁজে ফেরে। সেই টালির ছাওয়া ঘর, সুর টেনে গান গাওয়া মানুষটা। বড় হওয়ার পর খুব একটা কথা হোত না। ছেলেবেলাকার “খুকী”ডাকা স্বরটা অনেক দূরের পথে পাড়ি দিয়েছে। আসা যাওয়ার পথে সিঁড়ির নিচটা ফাঁকা লাগে।তাদের সম্পর্কের কেউ তো নয়। কিন্তু তবুও…
গন্তব্যের শেষ [Bengali Story]
ক’দিন ধরে রথীন দেব একা একাই লেকের ধারে পার্কের বেঞ্চিতে এসে বসেন। মন ভালো নেই একদম।অমিয়টা চলে গেল। শীতের পাতা ঝরা এই দিনে দুই বন্ধুতে চাদর জড়িয়ে এসে বসতো। কত গল্প জমে উঠতো দুজনের! আগেকার চেনা তাঁরা নন। লেক ভিউ পার্কে ইভনিং ওয়াকে এসে দুজনার আলাপচারিতা চেনা জানা হয়। সত্তরের ওপর বয়স দুজনার। রথীন দেব অবসর প্রাপ্ত ব্যাংক কর্মী। অমিয় সান্যাল ছিলেন এক কলেজের ক্লার্ক সেকশনে। অবসর যাপনের কিছু মুহূর্ত পরস্পরের সান্নিধ্যে বাঙ্ময় হয়ে ওঠে। অমিয় বাবুর স্ত্রী অনেককাল আগেই সংসার মায়া ত্যাগ করে পরলোকবাসিনী। একমাত্র ছেলে প্রীতম তখন কলেজ পাশ দিয়ে চাকরীতে জয়েন করেছে। গ্যাস, অম্বলের ব্যথায় খুব ভুগতো লীনা। হঠাৎই বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করতে হোল। দু’দিনের পরিষেবা নিয়েই মায়া কাটিয়ে চলে গেল। লক্ষ্মীছাড়া সংসার। বাপ, ছেলেতে কোনভাবে চালিয়ে নিচ্ছিল। দু’বছরের মধ্যেই ছেলের পছন্দে পুত্রবধূ হয়ে এলো বিদিশা। অমিয় বাবু খুশিই হয়েছিলেন। আবার বুঝি সংসার তাদের জমে উঠবে। সব ভালোই চলছিল। বিদিশা অত গুছিয়ে করে উঠতে পারতো না দশটা পাঁচটার অফিস সামলে। ছোট্ট দিদিভাই এসে হাসি কান্নায় ঘর ভরিয়ে দিল। বিদিশাকে কাজে ফিরতে হোল। তাই বাচ্চার দেখাশোনার ভার মানুর মায়ের হাতে দিতে হোল। কাছাকাছি বস্তিতে থাকে সে। বিনি দিদিভাইয়ের যত্ন করতো মানুর মা। কিন্তু তার হাতটানের স্বভাব ছিল। অমিয় বাবু কিছুদিন পরই টের পেয়েছিলেন। বিদিশাকে জানাতে খুব একটা আমল দেয়নি। মানুর মাকে ছাড়ালে লোক কোথায় পাবে? তাছাড়া আপিস কামাই করা ও সম্ভব নয়। কিছুদিন পর থেকে মানুর মা বিদিশার কান ভারী করতে থাকল। ঘরের ছোট খাটো ব্যাপারে অমিয় বাবু ছেলে বৌমার বিরক্তি টের পেতে লাগলেন। বিনিকে দোলনায় একা রেখে মানুর মা দুধ গরম করতে গিয়েছিল। অমিয় বাবু জানতেন না। উনি পাশের ঘরে খবরের কাগজ পড়ছিলেন। ছটফটে বাচ্চা, কখন ঘুম থেকে জেগে উঠে দোলনা থেকে পড়ে গিয়েছিল। চিৎকার আর কান্না শুনে ছুটে গিয়ে দেখেন, বিনি দিদিভাই মেঝেতে পড়ে,ছটফট করে কাঁদছে। মানুর মা ও ছুটে আসে। অমিয় বাবু রেগে যান।
— এভাবে একা ফেলে কেউ যায়!আমায় তো বলতে পারতে!
— আপনারে তো কই গেলাম।
— কখন তুমি আমায় বললে?দিদি ভাইকে দ্যাখো আগে। কোথায় লেগেছে। ঠান্ডা জল দিতে হবে।
— আপনারে কইছি। সে আপনে প্যাফার পড়তি ছিলেন, তার জন্যি হোনেন নাই। আমি দ্যাখি নিবো। আপনেরে ভাবতি হবে না।
রাগে গজ গজ করতে করতে অমিয় বাবু পাশের ঘরে গেলেন। কিন্তু মনে একটা অসোয়াস্তি নিয়ে বার বার এসে দেখে যান। দিদিভাইয়ের শরীর কেমন? উতলা হয় মন। মানুর মা ওনাকে কাছে দেখলে অদ্ভুত আচরণ করতে থাকে। বড্ড বিরক্তিকর!
বিকেলে প্রীতম আর বিদিশা ফিরলে, এই ঘটনা জানালে বিদিশার কোন ভাবান্তর নেই। মানুর মা নিজের মতো বলে যায়। অমিয় বাবু লক্ষ্য করেন, ব্যাপার খানার সত্যতা যাচাই করার কোন ইচ্ছেই যেন এদের নেই। বিদিশা ফ্রেশ হয়ে মেয়েকে কোলে নিয়ে দোর দিয়েছিল। প্রীতম শুধু বলল, “বাবা, তোমার বয়স হয়েছে। অনেক কিছুই মনে রাখতে পারো না”।
নাহ্!শেষ সময়টা অমিয় সান্যালের পাশে কেউ ছিলনা।ছোট্ট বিনিকে নিয়ে প্রীতম বিদিশা তার মায়ের কাছে বাপের বাড়িতে পাকা পোক্ত ভাবে থাকতে শুরু করেছিল। এবাড়িতে বাচ্চার দেখাশোনার অসুবিধে। একা মানুষটার কাছে সকাল বিকেল রান্না ও যাবতীয় কাজ করার এক ঠিকে পরিচারিকা আসত। বাকি সময়টা নিজের সাথে সময় কাটানো। আগে বিকেলে পার্কে রথীন বাবুর সাথে গল্প করে সময় কাটতো। এখন তো বাড়ির বাইরে আর যান না। কিছুদিন খোঁজ না পেয়ে রথীন বাবু এসেছিলেন। মানসিকভাবে বিধ্বস্ত মানুষটি যেন ঝড়ের সাথে লড়ে চলেছেন! বন্ধুর কাছে কোন অভিযোগ করেননি। শুধু বলেছিলেন,
— সংসার সামলে বউমার আপিস যাতায়াতের অসুবিধে হচ্ছিল।
বেশিদিন অমিয় সান্যালকে একাকীত্বের সাথে সময় কাটাতে হয়নি। একদিন ঘুমের ঘোরেই চিরঘুমের দেশে পাড়ি দিয়েছেন।
পাতা ঝরা এক শীতের বিকেলে রথীন বাবু পার্কের বেঞ্চে একা বসে ভেবে চলেন, কে জানে পরিজন পরিবেষ্ঠিত দিনগুলো তাঁর শেষ যাত্রাকাল অবধি সাথে থাকবে তো?
ভালোবাসার একাল সেকাল [Bengali Story]
— কি রে বাবু? আজ এতো চুপচাপ কেন?
— আজ মা মনটা খুব খারাপ, কৃষ এর কথা ভাবছিলাম।
— কেন রে? কি হয়েছে ওর?
— না, না কিছু হয়নি। সেদিন হঠাৎ ওর ব্রেক আপ হওয়ার কথা বলতে গিয়ে ইমোশনাল হয়ে পড়েছিল। চার বছরের সম্পর্ক ওদের।
— তোরা এখনকার ছেলে মেয়েরা না!কি বলি বল তো!এখনকার সম্পর্ক গুলো বড্ড পলকা। ঝামেলার
শেষ নেই। এই হোল তো, ওড়াও ফানুস। দুদিন বাদেই কাঁচ ভাঙার মতো চির ধরে।
— তুমি বুঝবে না মা। বিপাশার বাড়ির লোকজন ওদের ফ্যামিলি ফ্রেন্ড হয়ে গিয়েছিল। নিজেদের
ইগোর জন্য সম্পর্কটাই টিকলো না।
— থাক। এসব ভেবে তুই আর কি করবি! সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার দায় তো পরস্পরের ওপর বর্তায়।
— তুমি ভাবতে পারবে না,কৃশ বিপাশার জন্য কত কি গিফট কিনত! অনেক গুলো টাকা খরচ করেছে ওর জন্য। কিন্তু ওরা এসবকে শো অফ করা ভাবতো। কৃশ তো ভালোবেসে দিতো এসব।
— কি আর করা! কেউ যদি না বোঝে? তবে কি জানিস তো, ভালোবাসা অর্থের মাপকাঠিতে বিচার হয়না।
— কিন্তু রিলেশন মেনটেইন করতে গিয়ে তো খরচ হয়েই যায়। বাবা ও তো তোমায় কত গিফট করে!
— ওরে বোকা ছেলে! এতো একটা সুদূর প্রসারিত সম্পর্কের মাঝে। কিন্তু শুরুতেই কি সবটুকু দেয়া নেয়ার
মাঝে বেঁধে নিতে হয়!
— তুমি বুঝবে না।
স্বাতী ভাবে, প্রান্তকে বেশি কিছু বোঝাতে যাওয়া কি ঠিক হবে! জেনারেশন গ্যাপ। ছোট পরিবার গুলোতে একটি কি দুটি সন্তান। অর্থ কষ্ট বা সাংসারিক চাপ অনেকেরই থাকে না। স্বাবলম্বী হয়ে, কেবল স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে চলা। মায়ার সম্পর্ক গুলো কি এদের পিছুটান হয়!
স্বাতী আজও মনে মনে সেই সব দিন গুলোকে ভাবে,যখন সারাদিনের কর্মব্যস্ত ক্লান্ত মানুষটি একগুচ্ছ গোলাপ হাতে বাড়ি ফিরত। ফুলদানিতে সাজিয়ে রাখতো। বলতো-
— এতো কি কাজ কর সারাদিন! একটু সেজে , ফিটফাট হয়ে থাকতে পার তো! আমি এমনটা দেখতে চাই।
বড় জা মজা করে বলতো –
— কি গো ঠাকুরপো! রোজই কি ফুলশয্যার আয়োজন কর?
ঠাকুরপো টি ও কম যান না।
— দেখছইতো বউটা দিন দিন পুরনো হচ্ছে। তাই নতুন করে পাওয়ার চেষ্টা আর কি!
— ওরি ব্বাস ! আর পারি না। আর যে কত কি !
দিদিভাইয়ের কথায়, লজ্জা পেয়ে সরে যেত স্বাতী।
এই সবের মাঝেই মানুষটার অনাবিল ভালোবাসার ঘ্রাণ খুঁজে পেতে সে। বড় সংসারের কর্তব্য কর্ম সেরে প্রিয় মানুষটির জন্য সময় খুঁজে নেয়া। কখনো তার মনে হয়নি, দেবেশের ভালোবাসায় কিছু কমতি ছিল। আজকাল এরা উপহারের মূল্যে ভালোবাসা যাচাই করে। কে জানে! এই প্রজন্মের ভাবনা গুলোই কেমন ধোঁয়াশা লাগে তার।
কলেজে পড়ার সময় তাদের ও ভালো লাগা, লুকিয়ে প্রেমপত্র পড়া, বন্ধুদের মাঝে এসব নিয়ে খুনসুটি, কত কি মজা চলতো!কোথায় তখন অত্যাধুনিক গেজেটস্ ! বেশিদিন এগুতে না পারা সম্পর্ক গুলো মনের কোণে ,স্মৃতির অতলে একসময় হারিয়ে যেতো।
স্বাতী ভাবে, হয়তো এরা অনেক বেশি প্র্যাকটিকাল। তাদের ফেলে আসা দিনের সম্পর্কে আবেগ প্রবলভাবে ছিল। স্বাতী আড়চোখে একবার ছেলেকে দেখে নেয়। এখনও তো বলে, প্রেম টেম হয়নি।
যাক গে,ওসব নিয়ে ভেবে আর কি করবে ? এরা তো সম্পর্ক মেনটেইন করতে জানে! বেকার চিন্তা করে কি লাভ! জেনারেশন ওয়াইস ভালোবাসার মানে এক রকম নয়, এটাই মানতে হবে।
অতল গহীনে [Bengali Story]
একটা নদীর বহমানতাকে রঙ, তূলি আর ক্যানভাসে বন্দি করবে বলে অর্পণ পাড়ি দিয়েছিল এক প্রত্যন্ত গাঁয়ে। জলিল চাচার বাড়ি নূরপুর। তাদের পুরনো ড্রাইভার জলিল চাচা। চারুকলা কলেজের ছাত্র অর্পণের এই খামখেয়ালিপনায় মা বাবা অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। হঠাৎ খেয়ালে হারিয়ে যাওয়ার ভাবনা থেকে ছেলেটা বেরোতেই পারে না।
জলিল চাচার গাঁ খানি যেন শিল্পীর আঁকা ছবি! শ্যামলিমা আর পাখির কূজনে মুখরিত। নদী বয়ে যায় ধার ঘেঁষে। বাঁধানো বটতলা আর নদীকে ঘিরে জনপদ। ভোরের সতেজ হাওয়া আবার উদাসী সাঁঝবেলায় নদীর বুকে ঢেউ তোলা মৃদুমন্দ হাওয়া মনের এপার ওপার ছাপিয়ে কত কি ভাবনাকে উদ্বেল করে তোলে!এই গ্রাম্য প্রকৃতির অনাবিল ভালোবাসাকে তূলির টানে বেঁধে ফেলতে চাইলেও সবটা যেন ধরা দিতে চায় না।এই বয়ে চলা নদী, হাওয়ার লুটোপুটি সবটা অনুভূতিকে ছাপিয়ে স্থির চিত্রে কতটা প্রকট হতে পারে! তবুও শিল্পীর তূলি সৃষ্টির আনন্দ হতে বঞ্চিত হতে চায় না।
রঙের আঁকিবুঁকিতে ফ্রেম বন্দি করার নেশায় ব্যস্ত নদীর ধারে তরুণ শিল্পী অর্পণ বটের ছায়ায় নিবিড় মনোযোগে চিত্রপট সাজায়।একটু দূরে শান বাঁধানো ঘাট। শিল্পীর একাগ্রতায় চলমান নদী রঙের বাঁধনে বাঁধা পড়তে চলেছে। হঠাৎ নারী কন্ঠের কলকল মুখরতা কানে আসতে চোখ পড়ে বাঁধানো ঘাটে। একদল গাঁয়ের বধূ কলসী, জামাকাপড় নিয়ে নদীর ঘাটে। নদীর কাছে বসে তাদের মন প্রাণ উজাড় করা কথা স্রোতের টানে ভেসে চলে। দূর থেকে শিল্পীর দৃষ্টি নিবদ্ধ হয় রমণীকুলের ব্যস্ততার মাঝে। কাচাকুচি, স্নান সেরে কেউ এগিয়ে চলে মেঠো পথ ধরে। এক শ্যামাঙ্গীর দিকে দৃষ্টি যেতেই তরুণ শিল্পীর ভাবনার নদীতে এলোমেলো স্রোত আসে। সকলের মাঝে সে নারী অনন্যা। অনবদ্য তার ভঙ্গিমা, চলন। হঠাৎই নির্ঝরিণীর মতো নদীর বুকে ঝাঁপিয়ে জলক্রীড়াতে মেতে সিক্ত হয় সে। এক ঘড়া জল কাঁখে এগিয়ে চলে। খানিকটা এগিয়ে আচমকা পেছন ফিরে চায়। চার চোখের অকস্মাৎ মিলনে প্রকৃতি যেন নির্বাক হয়ে রয়! কাজললতার মতো ঘন কালো টানা টানা আঁখি পল্লবের মাঝে গভীর দৃষ্টি যেন অতল স্পর্শী নদী। এক ঝলকেই মায়াবী নদী শিল্পীর হৃদয় পিঞ্জরে ঘাই মেরে যায়। ফিরে যায় শ্যামাঙ্গী।
দিন রাত এক করে শিল্পীর তূলির ছোঁয়ায় যখন ছবিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হোল, অবাক হয়েছিল অর্পণ নিজেই। বটতলা, বহতা নদী সব ছাপিয়ে প্রকট হয়ে ওঠে সেই তন্বী শ্যামাঙ্গীর ফিরে তাকানো গভীর দৃষ্টি। এ নারী যেন নদী গর্ভ হতে উত্থিতা! শিল্পীর দৃষ্টিতে নদী ও নারী একাকার। চলার ছন্দে ঢেউ জাগে, ললিত ভঙ্গিমা,চপল ভীরু চাহনি যেন উচ্ছ্বলা স্রোতস্বিনী! কলসী কাঁখে সিক্ত বসনার ফিরে তাকানো কোন পথের বাঁকে। দূরে ধিকি ধিকি করে বয়ে চলা নদী।
জলিল চাচার মেয়ে শাকিলা দেখে বলেছিল,
— এ তুমি কারে আঁকছ ভাইজান? কালু শ্যাখের পেরথম পক্ষের বউ গো,
সুজলা। এক্কেরে অ্যামন ধারা দ্যাখতে।
— তাই? নদীর ধারে এক ঝলক দেখেছিলাম।অর্পণ বলে।
— এ ছবি আর কাওরে দেখাইবানি। কালুর বউটা বাঁজা মাইয়ামানুষ। তার জন্যে সোয়ামী আবার নিকাহ্ করছে। তবে গেরামের জোয়ান মরদ গুলান সুজলার পিছে পড়ি থাকে। এই নিয়া কালু সন্দো করে আর পিটান দ্যায়।
দুঃখিত মনে অর্পণ ভাবে, কত কষ্ট চাপা ছিল ওই গভীর চাহনির অন্তরে! এক পলকের দেখা মুগ্ধ করে দিয়েছিল তাকে।
ছবি আর মুগ্ধতা নিয়ে বাড়ি ফিরেছিল অর্পণ।
এ ছবি শিল্পীর ঘরের দেয়াল আলোকিত করে রাখে। বাবা মায়ের কাঙ্খিত পাত্রীর সাথে পরিণয়ে আবদ্ধ হয় অর্পণ। শুভরাত্রিতে নববধূ লাবনী এসে দাঁড়িয়েছে সেই মোহময়ী ছবির সামনে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে,
— তোমার আঁকা?
— হুম্।
— অপূর্ব! যেন ছোঁয়া যায়, এমনই প্রাণবন্ত!
নব পরিণীতাকে বলতে পারে না অর্পণ, “এ আমার প্রথম প্রেম। ওই দৃষ্টিকে হারাতে চাইনি, তাই তূলির টানে বেঁধেছি।”
অর্পণ এগিয়ে আসে লাবনীর কাছে। চোখে চোখ রেখে খোঁজে, কোথায় সেই বহমান স্রোতধারা! যার গভীরে কেবল হারাতে ইচ্ছে করে।
এসো হে প্রাণে [Bengali Story]
২৫শে বৈশাখের এক সকাল। মেঘলা দিন। মাঝে মাঝে টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ছে। জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে ছুঁই। প্রতিটি ফোঁটা যেন হীরের টুকরো। জ্বলজ্বল করছে। এফ-এম-এ রবীন্দ্র সঙ্গীত বাজছে।বড় রাস্তায় সাঁই সাঁই করে যান চলাচল। উল্টো দিকের রাস্তার ফুটপাতে হঠাৎ যেন খুব চেনা কাউকে দেখতে পাই!লম্বা আলখাল্লা পরে, পেছনে হাত দিয়ে ধীরে ধীরে চলেছেন। আরে! উনি তো গুরুদেব! ভুল দেখছি না তো! হ্যালুসিনেশন! চিমটি কেটে নিই গায়ে। নাহ্! ব্যথা তো পেলাম। তাড়াতাড়ি ছুট্টে বেড়িয়ে সিঁড়ি দিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ি আরকি! বিরস বদনে কর্তার হাঁক পাড়েন,
— কই ছুটলে? এতো কিসের তাড়া? হাত পা ভাঙার ইচ্ছে হয়েছে?
নো কমেন্টস। কথা বলতে গিয়ে ওনাকে না আবার হারিয়ে ফেলি! দৌড়ে বড় রাস্তায় এসে দেখি, উনি কিছুটা এগিয়ে গেছেন।হন হন করে এগিয়ে গিয়ে সামনে দাঁড়াই। পায়ে হাত দিতেই, কাঁপা কাঁপা সরু গলায় জিজ্ঞাসা,
— কে রে মা তুই? আমায় চিনলি কি ভাবে ?
— গুরুদেব, আপনাকে তো ছেলেবেলা থেকেই চিনি। ছড়া ,কবিতা, গল্প, গানে আপনাকে চেনা জানার মাঝেই তো বেড়ে উঠলাম। আমি তো ভাবতেই পারছি না! এতো কাছে আপনাকে দেখতে পাব!
— হয়,হয়, এমনই হঠাৎ করেই হয়। দৃষ্টি থাকা চাই। মনে মনে হয়তো আমার কথা ভাবছিলি!
ওনার কথায় ভাবতে থাকি,সত্যিই তো!আমরা কথা বলছি,অথচ পথচারীদের কাউকে তো ঘুরে তাকানো বা থমকে দাঁড়াতে দেখছি না! কেউ কি ওনাকে দেখতে পাচ্ছে না!
টুপ্ টাপ্ বৃষ্টির ফোঁটা কখন থেমে গিয়েছিল, টের পাইনি। আমরা এইটুকু সময়ে ভিজে যাইনি, এটা বুঝলাম।
— চলুন ,কোথাও বসি। কাছেই আমার বাড়ি। চলুন। কখনও ভাবিনি, আপনার সাথে কথা বলার সুযোগ আসবে।তাছাড়া, বিশ্ব বরেণ্য আপনি। হেঁটে চলেছেন কলকাতার রাস্তায়, ভাবা যায়!কেউ জানতে পারেনি তাই। নাহলে, আপনাকে কত ভিড়ের মাঝে খুঁজতে হত!
— এই তো না! আবার ভুল ভাবলি। আমি জোড়া সাঁকো হয়ে আসছি। সেখানে ভিড়ের মাঝে আমার সৃষ্টির আরাধনা, জয় জয়কার। চারদিকে আজ আমার ছবি ফুলের মালা ভার বইছে। এত ভীড় এখন আর ভালো লাগে না। এই কলকাতা কি আমার কাছে নতুন!তবে হ্যাঁ, অনেক পরিবর্তন। নিজে ঘুরে দেখার আনন্দই আলাদা।
— তবে চলুন আমার বাড়ি। এই কাছেই বাগবাজারে। আপনার একটু সেবা করার সুযোগ যদি পেতাম!
— তুই কি আমায় ধর্ম গুরু পেয়েছিস! আমি হলাম মুক্ত। খোলামেলা বিচরণই ভালো। আবদ্ধ স্থানে যেতে ইচ্ছে করে না।
কাছেই রাস্তার পাশে একটা কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বাঁধানো দেখে বললাম, তবে এখানে বসা যেতে পারে।
উনি মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে বসলেন। আমি একটু দূরত্ব রেখে বসলাম। খুব ইচ্ছে করছিল পায়ের কাছে বসার । রাস্তার ধুলো ময়লাতে তো আর বসা যায় না!আবার বলি,
— এখনো ভাবলে অবাক হই, সেই সময়ে আপনি যুগের চেয়েও চিন্তাধারায় কত এগিয়ে ছিলেন!মানুষের মনের সবরকম ভাবাবেগ, নিত্য, অনিত্য সব কিছুকে আপনার সৃষ্টি কর্মের মাঝে বেঁধে ফেলেছিলেন।
–মনটাকে মেলে ধরতে হয় রে। এই যেমন পাখিরা ডানা মেলে উড়ে চলে। খোলা মনে যতদূর ভাবা যায়।সংকীর্ণতা সীমাবদ্ধ করে রাখে।ভাবনা হোল মুক্ত। এই যে তুই আমায় দেখছিস, মনের দৃষ্টি দিয়ে। খালি চোখে সব কি আর ধরা দেয়!
হঠাৎই কানের পাশে যেন বাজ পড়ল!
— আজ কি আপিস যাওয়া হবে না আমার! কখন থেকে ডাকছি ! কোন সাড়া নেই। ঘুমের মধ্যে বিড়বিড় করে চলেছে। বলি, চা জল খাবারটা পাব তো!
ধড়মড় করে উঠে ঘড়িতে দেখি সাড়ে সাতটা বাজে। আর দেরী করা যাবে না। ফ্রেশ হয়ে চায়ের জল চাপিয়ে ভাবছিলাম, স্বপ্ন কি আর সত্যি হয়!
পাশের বাড়ির রেকর্ডারে রবীন্দ্র সঙ্গীত বাজছে। আজ গুরুদেবের জন্মদিন। প্রণাম কবি।মনে মনে স্মরণ করি।
কুহেলী দাশগুপ্ত | Kuheli Dasgupta
New Bengali Story 2023 | ভালো লাগে | শওকত নূর
New Bengali Story 2023 | খোঁজ | কুহেলী দাশগুপ্ত
New Bengali Story 2023| লোকের কথা | মনসুর আলি
Bengali Story 2023 | পরিচারিকা পাপিয়া | প্রবোধ কুমার মৃধা
bengali story new | indian poems about death | bengali story | bengali story books for child pdf | bengali story books for adults | bengali story books | bengali story books for child | bengali story books pdf | bengali story for kids | bengali story reading | short story | short story analysis | short story characteristics | short story competition | short bengali story definition | short story english | short story for kids | short bengali story generator | bengali story 2023 | short story ideas | short story length | long story short | long story short meaning | long bengali story | long story | long story instagram | story writing competition | story writing competition topics | story writing competition for students | story writing competition malayalam | story writing competition india | story competition | poetry competition | poetry competitions australia 2022 | poetry competitions uk | poetry competitions for students | poetry competitions ireland | poetry competition crossword | writing competition | writing competition malaysia | writing competition london | bengali story writing | bengali story dictation | writing competitions nz | writing competitions ireland | writing competitions in africa 2022 | writing competitions for high school students | writing competitions for teens | writing competitions australia 2022 | writing competitions 2022 | writing competitions uk | bengali article writing | bangla news article | bengali story news| article writing on global warming | article writing pdf | article writing practice | article writing topics | trending topics for article writing 2022 | what is article writing | content writing trends 2022 | content writing topics 2022 | Bangla Prabandha | Probondho | Definite Article | Article Writer | Short Article | Long Article | Bangla kobita | Kabitaguccha 2022 | Galpoguccha | Galpo | Bangla Galpo | Bengali Story | Bengali Article | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | Shabdodweep Founder | Shabdodweep Bengali Story | Bangladesh Bengali Story | Indian Bengali Story | Top Hit Bengali Story | Trending Bengali Story | Recent Bengali Story | All new Bengali Story | Book fair bengali story | adventure bengali story | google top bengali story | top 10 bengali story | attractive bengali story | world demand bengali story | memorable bengali story