বিপাশা চক্রবর্তী – সূচিপত্র [Bengali Story]
নিষিদ্ধ আনন্দ [Bengali Story]
জানিস নন্দিতা আমরা যখন ছোটো ছিলাম তখনের যে দুষ্টু-মিষ্টি আনন্দগুলো ছিল সেই আনন্দগুলো আজ আর খুঁজে পাই না কারও মধ্যে। কেন যে এমন হলো পুরোনো দিনগুলো ভালোই ছিল। খেতে পাই না পাই হাসি আর আনন্দে বেশ দিন কাটত। ঠিক বলেছিস চিত্রা। এখন আনন্দ এই শব্দটা যেন অত্যন্ত মজার। শুধু মজা বলাও চলেনা তার থেকে যদি বলা যায় ভীষণ দামী! তাহলে বোধহয় খুব একটা ভুল বলা হবে না। কারণ আজকের পৃথিবীতে আনন্দ জিনিসটা নেই বললেই চলে। ডিজিটাল যুগে প্রতিটি মানুষই খুব ব্যস্ত। তা সে ছোট বাচ্চাই হোক বা বড়ো ব্যক্তি হোক। আগেকার দিনের মতো হইহুল্লোড় নেই। নেই ডাংগুলি ছোঁড়া। নেই দলবেঁধে পুকুর ঘাটে কিংবা নদীর ঘাটে নাইতে যাওয়া। বা চুপিসারে সব বন্ধুরা মিলে কারোর গাছের ফল পেড়ে খাওয়া ও ধরা পড়ার ভয়ে আনন্দে ছুটে পালানো। যদিও এই কাজগুলো নিষিদ্ধ আনন্দের মধ্যেই পড়ে তবুও বারণ শোনার ইচ্ছা থাকেনা এই দুষ্টুমি ভরা আনন্দের মাঝে। লোকের গাছের ফল পেড়ে সকলের সাথে ভাগ করে খাওয়া মজাটাই আলাদা। কিন্তু আজকের বাচ্চারা এই মজা উপভোগ করতে পারেনি এই কারণে যে তাদের হাতে কোনো সময়ও নেই বা বাবা মায়ের তীব্র দৃষ্টির ফলে সন্তানরা একদম বাঁধাধরা নিয়মে বন্দী জীবনে আবদ্ধ হয়ে আছে। নেই আজ থেকে কুড়ি বছর আগের সেই গাছের ডালের ওপর উঠে পুকুর বা নদীতে ঝাঁপ দেওয়া। আগেকার দিনের দুষ্টুমি করা ছেলে মেয়েরা যে আজকের দিনের বাবা মা। তারা এতদিনে ঐ দুষ্টুমিগুলোর ফল বুঝতে পেরেছে বলেই আজকে সচেতন হয়ে নিজের বাচ্চাকে প্রতিক্ষণে সাবধানে রাখছে। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা শিখিয়ে তাদেরকে চাকরি করানোর জন্য জীবনের যতো রোজগার এবং জমি জায়গা বিক্রি করে ঘুষ দিয়ে যে আনন্দ কিনেছিল আজ তাও অনুপযুক্ত হিসেবে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে শেষ হয়ে গেল। এই আনন্দটাও আজ যেন নিষিদ্ধ আনন্দের সমান হয়ে গেল। যে আনন্দের ঝড় সারাজীবন ধরে বয়ে নিয়ে যাবে বলে চাকরিজীবিরা ভেবেছিলেন এবং সংসার জীবন শুরু করেছিলেন আজ সেই আনন্দ তাসের ঘরের মতো ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা চিত্রা তোর কি মনে হয় যারা মদ পান করে মাতলামি করে নিচ্ছে।। কোথাও পড়ে গিয়ে হাত পা ভাঙে বা রাস্তায় পড়ে থাকে তখন তাদের ঘরের লোকের মান সম্মান ধূলায় ধূসরিত হয়ে গেলেও তাদের হুঁশ থাকে না। সে শিক্ষিত মাতালই হোক বা অশিক্ষিত হোক তাদের হাজার বারণ করলেও তারা শোনে না। ঐ মদ-ই নাকি তাদের সব দুঃখ ঘুচিয়ে আনন্দের জোয়ারে ভাসিয়ে নিয়ে যায় তাইতো নেশার টাইম হয়ে গেলে তাদের ঘরে বেঁধে রাখা দায় হয়ে যায়। বৃত্তিমুলক বা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে গেলে দেখা যায় ছেলে মেয়েরা মানুষ হতে গিয়ে অমানুষ হয়ে বাড়ি ফিরছে। হাজার বারণ করলেও তারা বারণ শুনবে না কেননা বন্ধুদের সঙ্গ লাভ করা তাদের কাছে ভীষণ আনন্দের কিন্তু এই আনন্দগুলোতে যে ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি তা তারা বুঝতে পারেনা। আবার জানিসতো একদিন শুনলাম সামান্য আনন্দ পেতে গিয়ে ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকে মিতালি। ফোনে বন্ধুত্বের সংখ্যা বেড়েই চলে তার। একদিন হঠাৎ তার ফোনে ম্যাসেজ আসে মিতালি কোথায় আছো তুমি। তোমার কথা ভেবে ভেবে আমি অস্থির হয়ে উঠছি। তোমার সাথে অনেক কথা আছে। ওহঃ ম্যাসেজ করছি দেখছো না কেন মিতু? এইসব কি কথা বার্তা কে আপনি। আপনার সাহস হয় কি করে? কে আপনি? এরকম ম্যাসেজ করার কারণ কি জানতে পারি? ওপাশ থেকে প্রশ্ন ছুঁড়ে আপনি কে? এপাশ থেকে উত্তরে জানায় যে সে আর কেউ নয় মিতালির স্বামী। কিঃ বিস্মিত হয় মিতালির বন্ধু। সে জানতই না যে মিতালি বিবাহিত। সে কোনোদিনও মিতালিকে দেখেনি। জানতেও চাইনি সে বিবাহিত না অবিবাহিত। মিতালির বয়স জানো? ছেলেটি শান্ত সুরে বলল না। আমি কখনও জিজ্ঞাসা করিনি। আপনি যদি বলেন। একথা জানতে চাওয়ায় সে শোনে পঁয়তাল্লিশ বছর। মিতালির স্বামী যখন বন্ধুটির বয়স জিজ্ঞাসা করে তখন ছেলেটি বলে Sorry. I am very sorry. আমাকে ক্ষমা করে দিন স্যার। আমি সবে গ্র্যাজুয়েশন করছি। আমি বন্ধু মনে করে ওনার কাছে মনের কথা, দুখের কথা আনন্দের কথা বলে শান্তি পাই। তাই অস্থির হয়ে উঠেছিলাম আমার রেজাল্ট ভালো হয়েছে এই কথাটা জানাবো বলে। ওনাকে আপনি ভুল বুঝবেন না স্যার। এইসব নানান কথা হওয়ার পর ম্যাসেজ করা বন্ধ হলো। আর মিতালির স্বামী মিতালিকে অবিশ্বাসের কাঠগড়ায় দাঁড় করালো। বুঝল না বেঁচে থাকার রসদ পেতে গেলে দুটো মিষ্টি কথা কিছু মনের কথা বা প্রাণভরে নিশ্বাস নেবার মতো বন্ধুর প্রয়োজন। বিয়ে হয়ে গেলে মেয়েরা যেন পরাধীন।
নন্দিতা শুনে বলল নারে সব মেয়েরা পরাধীন নয়। অনেকেই স্বামীর সোহাগের সাথে সাথে স্বাধীনতা পেয়ে থাকে। রিয়াকে দেখিসনি? ওতো ইচ্ছা খুশি ঘুরে বেড়াচ্ছে। ওর কাছে আনন্দের সীমা নাই। থুর কে বলল ও ইচ্ছে খুশি ঘুরে বেড়াচ্ছে। ওতো প্রথম প্রথম স্বামী নির্যাতনের ভয়ে প্রায় মরেই যাচ্ছিল। ওতো মানসিক রুগীতে পরিণত হয়ে গিসল। ওকেতো ডাক্তার দেখাতে হলো। তারপর ও নিজে বধূ নির্যাতন ও মানসিক টর্চারের অভিযোগ আনল স্বামীর প্রতি। পুলিশ এসে বাড়িতে ধমকা ধমকি করতে রিয়ার স্বামী ভয় পেয়ে রিয়াকে আর কিছু বলেনা। তবে মেয়েদের মুখ বুঝে না থেকে প্রতিবাদী হওয়া উচিত। তাতে কিছু না হোক স্বাধীনতাটুকু লাভ করা যায়। মুচকি হাসি হেসে উত্তর দিল নন্দিতা। দীপিকা সব বান্ধবীদের সব কথা মন দিয়ে শুনছিল। তার এই আলোচনা ভীষণ ভালো লাগছিল। সে সব শুনে বলল এইযে ছোট্ট ছোট্ট আনন্দগুলো মাঝে মধ্যে নিরানন্দে পরিণত হচ্ছে দেখছি। এই জিনিসটা ভালো না। যদি সর্বত্র আনন্দ বিরাজ করত খুব ভালো লাগত। তাই বলা যায় যে আনন্দে সুখ নাই সেই আনন্দে আসক্ত না হওয়াই ভালো। আজ সবকিছুর মূল্যায়ন করতে গিয়ে আনন্দ নামক জিনিসটাই যেন জীবন থেকে চিরবিদায় নিচ্ছে।।
অবিশ্বাসের পরিণাম [Bengali Story]
সৌমি ভীষণ ভীষণ ভালোবাসে অগ্নিকে। কিন্তু সে পরিস্থিতির শিকার। তাই ভালোবাসাকে অন্তরালে রেখেই তার বাবার পছন্দ করা পাত্রকে বিয়ে করার ইচ্ছা প্রকাশ করল। কারণ সৌমি জানতে পেরেছিল অগ্নি পড়াশোনার জন্য কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছে। সেখানে সে নাকি কোনো এক মেয়েকে ভালোবাসে তাই সে বাড়ি আসতে চায়না এমনকি সৌমি কেমন আছে তাও জানতে চায়না।
তাই তার অভিমানী মন ধীরে ধীরে অগ্নির প্রতি বিদ্বেষ ও ঘৃণায় ভরে গিয়েছিল। সে তার প্রিয়তমকে বোঝাতে চেয়েছিল কষ্ট দিলে কষ্ট পেতে হয়। তাই সৌমি নিজের হাতে অগ্নিকে তার বিয়ের কার্ড দিয়ে নেমন্তন্ন করে এসেছিল।আর অগ্নি হতবাক হয়ে তার চোখের পানে চেয়ে চেয়ে অশ্রু বিগলিত করছিল। তাই দেখে সৌমি প্রশ্ন করেছিল তোমার চোখে জল কেন? তোমার তো খুশি হওয়ার কথা। তোমার চলার পথে পথের কাঁটা সরে যাচ্ছে। অগ্নি শুনে বলেছিল তোমার কথা বুঝতে পারলাম না। তবুও বলছি আমার জন্য কি কষ্ট করে আর কিছু দিন অপেক্ষা করা যেতো না? আমি তো তোমার জন্য এতদূর এসেছি। তোমায় নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি।সুখে সংসার করবো-কতোকিছু মনে মনে ভেবেছি। সব ভেঙে চুরমার করে দিয়ে তুমি অন্যের ঘরণী হতে চলেছো? আমার কি দোষ ছিল বলতে পারো? সৌমি হতবাক হয়ে তার কথা শুনতে শুনতে বলে উঠলো আমার থেকেও অনেকগুনে সুন্দরী গুণবতী মেয়ে পেয়েছো তুমি। তাকে তুমি আমার থেকেও বেশি ভালোবাসো তাহলে কেন তুমি আমাকে এসব কথা বলছো। আমার মনকে কেন দুর্বল করে দিচ্ছ? ভালোবাসি! আমি! কাকে? অগ্নি প্রশ্ন করলো। সৌমি সব জানি বলে কাঁদতে কাঁদতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা বাণীটি বলতে শুরু করলো—-
অগ্নি জানো তো “সব সহ্য করা যায়, কিন্তু প্রিয় মানুষের অবহেলা সহ্য করা যায় না”। বলে সৌমি এক ছুটে অগ্নির ঘর হতে বেরিয়ে গেল।
পরের কথা শুনে সৌমি ভুল বুঝে অগ্নিকে ছেড়ে অনত্র বিয়ে করে চলে গেল। সৌমির স্মৃতি বুকে নিয়ে অগ্নি সারাজীবন কাটিয়ে দেবে বলে সিদ্ধান্ত নিল।সে পড়াশোনা শেষ করে চাকরিও পেল। কিন্তু বিয়ে করলো না। ঘূর্ণায়মান পৃথিবীতে সবাইকে একদিন না একদিন মিলতে হয়। ঠিক সেইরকম ভাবেই সৌমির সাথে দেখা হয়ে গেল অগ্নির। অগ্নি মুখ ঘুরিয়ে চলে যেতে চাইলে সৌমি পিছন থেকে ছুটে এসে অগ্নির হাত চেপে ধরলো দাঁড়াও অগ্নি দাঁড়াও । আমার চোখের দিকে তাকাও দুটো কথা বলে যাও। আমি বিবাহিত হলেও আজও তোমায় ভীষণ ভালোবাসি। তোমার জন্য প্রতিমুহূর্তে আমার নয়নাশ্রু ঝরে পড়ে। আমি অন্যের কথা বিশ্বাস করে খুব ভুল করেছি তাই তোমাকেও কষ্ট দিয়েছি আর নিজেও কষ্ট পেয়েছি। আমি আমার স্বামীর সাথে ভালোবাসার অভিনয় করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।আমার এই মন শুধু তোমায় ঘিরে রয়েছে আমি আর পারছি না অগ্নি নিজের মনের সাথে লড়াই করতে।
অগ্নি হাত ছাড়িয়ে চলে যেতে চায় কিন্তু সৌমি কিছুতেই তার হাত ছাড়তে চায়না। আরও বেশি করে তাকে বোঝাতে চায় সবার মাঝে থাকলেও আজ সে একা। ভীষণ একা। মন যদি থাকে অগ্নির কাছে সেই মনাগ্নীকে নেভাবার ক্ষমতা কার আছে বলতে পারো অগ্নি? সৌমি অনবরত কেঁদে চলে আর বলে সংসারে কোনো অভাব নেই আমার । স্বামী আমার বিডিও সাহেব। যা চাই তাই এনে দেন। কিন্তু আমার অস্থির মন শুধু তোমার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকে। তোমায় আমি ভুল বুঝে কষ্ট দিয়েছি। তুমি একা একা জীবন নির্বাহ করছো অগ্নি এটা আমি কোনোভাবেই মানতে পারছিনা। কেন তুমি বিয়ে করলে না অগ্নি?
অগ্নি সব শুনে বলল আমি তোমাকে ছাড়া কাউকে কোনোদিনও মন দিতে পারিনি আর পারতাম না। তাই বেশ আছি। বিন্দাস আছি। আজ স্বামী বিবেকানন্দের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে জানতো তিনি বলেছিলেন–
“তুমি যদি সঠিক হও তাহলে তা প্রমাণ করার চেষ্টা করো না চুপচাপ অপেক্ষা করো সময় সব জবাব দিয়ে দেবে”। আজ আমার জীবনের সাথে এই কথাগুলো ভীষণ ভীষণ মিলে গেল। আমায় প্রমাণ করতে হলো না আমার ভালোবাসা কতোখাঁটি।
কিন্তু তোমার এই কষ্ট আমার মনকে ভীষণ নাড়া দিচ্ছে মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে তোমায় নিয়ে অনেক দূর চলে যাই যেখানে কেউ আমাদের কোনোদিনও খুঁজে পাবে না। পারবে যেতে? জানি পারবে না। কারণ তুমি অন্যের সহধর্মিণী। তুমি সন্তানের জননী। যদি পারো চলে এসো প্রিয়া আমার কাছে। সৌমি বলে উঠলো যাবো প্রিয় আমি যাবো।আমার মন যে শুধু তোমার কাছে পড়ে আছে। হাজার মণিমাণিক্য থাকলেও মনে শান্তি নেই তাই তোমার কাছে চলে যেতে চাই। কিন্তু কি পরিচয়ে যাবো? আমার তো বিয়ে হয়ে গেছে। নিজের মান-সম্মান কীভাবে বিসর্জন দেবো? বলে দাও অগ্নি।
অগ্নি উত্তরে বলল সৌমি নিজের মনকে শান্ত করো। আমরা যেকোনো বিষয় কে খুব সহজ ভাবি কিন্তু তাতো কখনও সহজ হয়না সোনা। তাই যে কাজ করতে অনেক অসুবিধায় পড়তে হয় সেই কাজ করার দরকার নেই। তাছাড়া তুমি আমায় ভুল বুঝে আমার থেকে দূরে চলে গেছ।আমি নিজেকে অনেক কষ্টে তোমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলাম। মদের নেশায় মাতাল হয়েছিলাম। কিন্তু নিজের চেষ্টাতেই আবার স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে শুরু করলাম ভাবলাম মনের কষ্ট মনে থাকাই ভালো। তাকে আর জ্বালাবো না। কিন্তু তুমি আজ সেই মনে আবারও আগুন জ্বালিয়ে দিলে। সেই আগুনে আমি বারবার পুড়তে থাকবো। কেন আমার কাছে এলে সৌমি? কেন আমাকে তোমার মনের কথা শোনালে?আমি তোমার ছবি বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে রাত্রি যাপন করি। সেই রাত তোমায় ছাড়া কেমনে কাটবে বলতে পারো? সৌমি কোনো উত্তর না দিয়ে হাপুস নয়নে কাঁদতে থাকে এই দেখে অগ্নি বলে তুমি আমার ফোন নাম্বার নাও যখন তোমার খুব মন খারাপ হবে আমায় ফোন করবে কিন্তু দেখা করতে চেও না। আমি তোমার পাশে সারাজীবন বন্ধু হয়েই থাকবো। দূর থেকে ভালোবেসে তোমায় বেঁচে থাকার রসদ জোগাবো।এখন বাড়ি ফিরে যাও সৌমি, আর দেরি করোনা। আমি সারাজীবন তোমার পাশে আছি আর থাকবো।শুধু এটুকু মনে রেখো কখনও কাউকে অবিশ্বাস করোনা। প্রয়োজনে যাচাই করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হও। দেখবে ঠকবে না। অবিশ্বাসী মন কখনও কাউকে ভালোবাসতে পারে না। জীবনে সন্দেহের জাল বুনে চলে তাই মনে বিশ্বাস রাখার চেষ্টা করো আর নিজ মনকে শান্ত রাখো। জানবে আমি যেমন তোমায় আগে ভালোবাসতাম আজও তেমন ভাবেই ভালোবাসি। সব ভালোবাসা পরিণয় পায় না গো। ভালো থেকো সুখে থাকার চেষ্টা করো। তাহলে আমিও সুখী হবো। আর এটাই তোমার কাছে আমার চাওয়া। টাটা।
বিশ্বাসের পরিণাম [Bengali Story]
একজন গরিব সৎ ব্রাহ্মণ মানুষ একদিন দোকান যাচ্ছিল। হঠাৎই রাস্তায় দুজন ভদ্র লোকের সাথে তার দেখা হলো। তারা তার সাথে আলাপ জমালো ও Surya Crystal কোম্পানির তিন মুখো গ্যাস ওভেন দেখালো আর তার সাথেএকটা ফ্রি – রুটিমেকারের লোভ দেখালো। আর ব্রাহ্মণ ঠাকুর লোভ সামলাতে না পেরে তাদেরকে বাড়িতে নিয়ে এলো। তারপর সে তার স্ত্রী এবং মেয়েকে তাদের সাথে আলাপ করিয়ে দিল আর তার সাথে জিনিসটা দেখাতে বলল। তারা তার স্ত্রী ও মেয়কে ওভেনটা দেখালো এবং স্মার্ট ফোনে রুটিমেকারটা দেখিয়ে কীভাবে রুটি তৈরি করা যায় তার পদ্ধতি বলতে রইল। ব্রাহ্মণের মেয়ে ও ব্রাহ্মণীর তিনমুখো গ্যাস ওভেনের থেকেও ফ্রি-রুটিমেকারটা বেশি পছন্দ হলো। তাই তারা কিনতে রাজি হলো। তাদের রাজি হওয়া দেখে লোক দুটো আরও বেশি করে ভাব জমাতে শুরু করল। তাদের কথাবার্তায় টাকার অংক দাঁড়ালো পাঁচহাজার নয়শ নিরানব্বই টাকা। ব্রাহ্মণ মশাই তাতে রাজি হয়ে টাকার ব্যবস্থা করতে ছুটলো লোকের কাছে। এদিকে ডলফিন কোম্পানির প্রচারের জন্য লোক দুটো বেরিয়েছেন তারা প্রচার করবেন এবং তাদের ঐ কোম্পানির ম্যাডাম বিকেলে আসবেন তারপর তিনি এসে ওভেন গ্যাসের সাথে ফিট করবেন। তারপর বললেন পুরোনো ওভেনের বদলে নতুন ওভেন তারা দেবেন তাতে কিছুটা টাকা কমবে।
আর আপনাদের জন্য যদি এইটুকু করতে না পারি তাহলে আপনারা আমাদের বিশ্বাস করবেন কি করে? আর ব্রাহ্মণের মেয়েকে বলল “বোন তোমাকে দেখলে বা তোমার কথা শুনলে মনে হয় না তুমি গ্রামের মেয়ে, তাই রচনা ব্যানার্জী যখন ডলফিন কোম্পানি উদ্বোধন করতে আসবেন তখন কিন্তু তোমাকে অবশ্যই যেতে হবে আর অনুষ্ঠান হবে কেশপুরে”। একথা শুনে ব্রাহ্মণের মেয়ে তাদেরকে বলেছিল “আপনারা ঠক নন তো যে আমার বাবাকে লোভ দেখিয়ে মিথ্যে কথা বলে চলে যাচ্ছেন”? তার উত্তরে লোক দুটো বলল বোন এতো অবিশ্বাস করোনা আমাদের। আমরা কোম্পানিকে দাঁড় করানোর জন্য এতো পরিশ্রম করছি। আমরা কখনও লোক ঠকাতে পারি? ছিঃ একথা আমাদের মুখেও আনতে নেই। বরঞ্চ ম্যাডাম যদি ফোন করেন তাহলে আপনারা আমাদেরকে চার হাজার দুশো টাকা দিয়েছেন সেটা জানিয়ে দেবেন”। আর আমাদের দুজনের মধ্যে যেকেউ একজন ম্যাডামের সাথে আসবেন।এবং রুটি মেকার ও তার সাথে আরও কিছু গিফট অফার করবেন আপনাদের। আপনারা নতুন ওভেন ও পুরোনো ওভেনটা রাখুন। ম্যাডাম বিকেলে এসে ওভেন সেট করে দিয়ে যাবেন। আপনারা আমাদের পুরো টাকাটা দিয়ে দেন”। ব্রাহ্মণের বাড়িতে কেউ এলে চা বিস্কুট না খাইয়ে ব্রাহ্মণ ছাড়ে না।তাই তাদের বসিয়ে চা-বিস্কুট খাওয়ালেন। তারপর ব্রাহ্মণ তার ভগ্নীপতি ও নিজের জামাইকে ডেকে এনে জিনিসটা দেখালো তারপর তাদেরকে টাকাটা দেবার সময় যখন রুটি-মেকারটা চাইল তখন তারা বলল বিকেলে “ম্যাডাম সব কিছু নিয়ে আসবেন। আপনি শুধু টাকাটা পেইড করে দিন। নাহলে আমরা যে এই ওভেন টা সেল করতে পেরেছি সেই প্রমাণটা করতে পারবো না”। ব্রাহ্মণ মশায় টাকাটা দিয়ে দিলেন। তার মেয়ের বারণ শুনলেন না। তখন তার মেয়ে বুদ্ধি করে তাদের নাম ও ফোন নাম্বারটা চেয়ে নিল। তারা তাদের নাম বলল “অশোক দাস ও বাপন জানা”। ফোন নাম্বারও দিল। তাদের ফোনে রিং করে দেখল ফোন লাগছে কিনা। দেখল ফোনে রিং হচ্ছে। ব্রাহ্মণ পরিবার নিশ্চিন্ত হলো এই ভেবে নিশ্চয়ই যোগাযোগ করা যাবে। তারপর বিকেলে আসছি বলে তারা চলে গেল। বিকেল গড়িয়ে গিয়ে সন্ধ্যা নামল তাদের পাত্তা পাওয়া গেল না আর রুটিমেকারও পাওয়া গেল না । ঠিক সন্ধ্যা সাতটার সময় তাদের ফোন করা হলো জানার জন্য কেন তারা আসবেন বলে এলেন না? তার উত্তরে তারা বললেন ১১ই জানুয়ারি ম্যাডাম যাবেন বলছেন আপনারা ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করুন। মনে যদি আপনাদের সন্দেহ হয় তাহলে ফোন করবেন। কথা শেষ হওয়ার পর বিশ্বাস আর ধৈর্য্য ধরা ছাড়া ব্রাহ্মণ পরিবারের হাতে আর কিছুই রইল না। তাই ব্রাহ্মণ তিন মুখো গ্যাস ওভেনের দাম গ্যাস দোকানে জানতে গিয়ে জানতে পারলেন মাত্র দুই হাজার টাকা।তারা রুটি মেকার ফ্রি হিসাবে দেবেন বলে তারও দাম ধরে নিয়ে গেছেন। কিন্তু রুটি মেকার তারা আর দিতে আসলেন না। তাই ধৈর্য্য ধরা ছাড়া ব্রাহ্মণের উপায় রইল না।কারণ টাকা তাদের হাতে আর জিনিসটাও তাদের হাতে। তবুও মাঝে মাঝে ফোন করে কিন্তু কোনো উত্তর বা কোনোভাবে ফোনটাও তারা আর ধরে না। বিভিন্ন নাম্বার থেকেও ফোন করলেও তারা ফোন ধরেন না। ১১ই জানুয়ারি পেরিয়ে গেল কিন্তু তারা বা তাদের ম্যাডামের কোনোরকম পাত্তা পাওয়া গেল না। তখন ঐ পরিবারের মে হোয়াটসআ্যপে তাদের পুলিশের ভয় দেখালো কিন্তু কিছু লাভ হলো না। যারা ঠক যোচ্চর হয় তাদের কোনো কিছুতেই ভয় থাকে না। আর এরাতো সেই প্রকৃতির। তাই ব্রাহ্মণের ঠকে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় রইল না। শেষে তার মেয়ের কথাই ঠিক হলো ভেবে আপশোষ করতে রইল ব্রাহ্মণ । আর তাদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করতে লাগল। এবং নিজে নিজে বলতে রইল টাকাটা বোধ হয় এইভাবে যাওয়ার ছিল তাই চলে গেল। তার মেয়ে তাদের ম্যাসেজ করে জানাল জীবনে তারা কখনও ঐ টাকা ভোগ করতে পারবে না। কিন্তু যারা ঠক যোচ্চোর হয় তাদের কাছে কোনো অভিশাপে কিছু যায় আসে না। তারা হোয়াটসআ্যপ দেখে কিন্তু কোনো উত্তর দেয় না। আর দেবেইবা কি করে সেই মুখতো আর তাদের নেই। আর লজ্জাশরম বলেও কিছু নেই। যাক ব্রাহ্মণ নিজের ভুল ভেবে তাদের ক্ষমা করলেও ঈশ্বর তাদের কোনোদিন ক্ষমা করবেন না। এইরকম যোচ্চর লোকেদের মিষ্টি কথার আর প্রলোভনের স্বীকার হওয়ার আগে যাচাই করে তবেই মানুষকে বিশ্বাস করা উচিত নইলে ব্রাহ্মণের মতোই ঠকতে হবে।
সময় কথা বলে [Bengali Story]
সুস্মিতা: এই তোর দেখা পাইনা কেন রে? এখন কোথায় থাকিস তুই? তোর ছেলের খবর কি? তোর স্কুল কেমন চলছে? তোর বর কি তোকে চোখে হারায়? যে একবারও ছাড়তে চায় না!
অনিন্দিতা: উঃ তুমিও না পারো দিদি। হাহাহাহা (করে হেসে ওঠে অনিন্দিতা)।
সুস্মিতা : বাঃবাঃ যেন হাসির ফোয়ারা ছড়াচ্ছিস। এতো হাসির কি হলো রে? কতোদিন পর তোকে দেখলাম; তা না হয় মনের আবেগে কিছু প্রশ্ন করেই ফেলেছি, তার জন্য হাসতে হবে? ঝকমারি বাঃবাঃ।
অনিন্দিতা: আহাঃ চটছ কেন দিদি ভাই। আমি তো এইরকমই। হাসিটাকে বজায় রাখি নিজেকে ভালো রাখার জন্য। তুমি একসাথে কতোগুলো প্রশ্ন করলে বলোতো? আমাকে তো সময় নিতে হবে উত্তর দেওয়ার জন্য।
সুস্মিতা : না ভাবলাম তুই বোধহয় আমাকে ব্যাঙ্গ করছিস।তাই একটু রেগে গিয়েছিলাম আরকি।
অনিন্দিতা: জানিতো আমার মিষ্টি দিদিভাই একটুতেই কেমন রেগে যায়। যদিও আমার হাসি ঠিক হয় নি! আচ্ছা তুমি কি আমায় বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখবে? নাকি ভিতরে আসতে বলবে? কিগো? (আবার হাসতে থাকে হাহাহা)।
সুস্মিতা : সত্যিতো তোকে বাইরেই দাঁড় করিয়ে রেখেছি। সরি সরি। আই আ্যম ভেরি সরি মাই ডিয়ার। আয় আয় ভেতরে আয় অনি। মিতু এই মিতু এই সোম দেখে যা কে এসেছে….।
মিতু : কে এসেছে মম?
সুস্মিতা : আরে আয় এসে দেখে যা। তোদের অনি আন্টি এসেছে…..।
মিতু: আচ্ছা মম ঠিক আছে।বসতে বলো।আমি একটা কাজ করছি এখন যেতে পারবো না পরে যাচ্ছি….। সাউন্ড রেকর্ডারটা আরও জোরে বাড়িয়ে দিয়ে সে পপ ড্যান্সে মেতে ওঠে।
অনিন্দিতা: থাক না দিদি ভাই। ও হয়তো ব্যস্ত আছে। বলো তুমি কেমন আছো। কতোদিন পর তোমায় দেখলাম। ভীষণ ভালো লাগছে গো।
সুস্মিতা : আমি! আমি খুব ভালো আছি রে। সারাদিন এটা সেটা কাজকর্ম নিয়ে থাকি।তোর জামাইবাবু নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। তার শুধু টাকা চাই টাকা। কীভাবে ইনকাম করলে আরও টাকা আসবে এই ধান্দায় ব্যস্ত। আমি কেমন আছি,খাওয়াদাওয়া ঠিকঠাক করছি কিনা এসব খোঁজ নেবার সময় তার নেই রে। এখন যন্ত্রের যুগ। ব্যস্ত জীবন। তাই জীবনটাকে সবাই যন্ত্র বানিয়ে ফেলেছেরে। আগের মতো হাসি,ঠাট্টা, মজা করা কোনো কিছুই নেই। সব থেকে বড়ো কথা প্রাণখোলা হাসিটানা কোথায় হারিয়ে গেছে। এখন মুঠো ফোনে সবাই ব্যস্ত। ঘরে সবাই হয়তো যখন এক টেবিলে বসে চা বা কফি খাচ্ছি তখন সেখানে বসে যে গল্প হবে তাও হবার নয়। ছেলে মোবাইল নিয়ে গেম খেলছে মেয়ে সে তার চ্যাট করছে আর তোর জামাইবাবু কলিগদের সাথে ফোন নিয়ে ব্যস্ত। আর তার মাঝে আমার জীবনটা যেন চরা পড়ে যাওয়া নদীর মতো থেমে গেছে। কখনো সূর্যের প্রখর তাপে তাপিত হচ্ছে। আবার কখনও জ্যোৎস্না রাতে ঠাণ্ডা হাওয়ায় শীতল হচ্ছে। সত্যি কথা বলতে এই জীবন আর ভালো লাগে নারে আর ভালো লাগে না। বল তোর খবর কি বল। মানির মা একটু এদিকে এসো না……।
অনিন্দিতা: না না আমি কিছু খাবো না। আমার পুজো সারা হয় নি। তুমি ব্যস্ত হয়েও না দিদি ভাই। এই পথ দিয়ে যাচ্ছিলাম তাই ভাবলাম অনেকদিন তোমার সাথে দেখা হয়নি তাই দেখা করে যাই।
সোম: সে কথা বললে চলবে নাতো আন্টি দেখো আমি তোমার জন্য গরম গরম জিলাপি আর চিকেন পকোড়া এনেছি। তোমায়তো খেতেই হবে।
অনিন্দিতা: ওমা সোম তুই সেই ছোট্ট সোমই রয়ে গেলি যে। আমি ভাবলাম তুই বদলে গেছিস। বাঃ খুব ভালো লাগল রে। তবে তুই হাতে করে যখন এতো কিছু এনেছিস তখন না খেয়ে থাকতে পারি। তাই শুধু জিলাপি খাবোরে অন্য কিছু খাবো না। আমার যে পুজো হয়নি সোনা।
সোম : ওকে আন্টি। ভালো আছো তো? মায়ের সাথে গল্প করো আমায় কলেজ যেতে হবে আমি আসি।
অনিন্দিতা : ঠিক আছে সোনা। তুমি রেডি হয়ে নাও।
সুস্মিতা : আমাদের কথা অনেক হলো এবার তোর কথা বল।
অনিন্দিতা : আমার কথা আর কি বলব; চলছে কোনোরকমে। ছেলে বাইরে পড়াশোনা করছে। আর আমি স্কুল টিউশন এইসব নিয়ে ব্যস্ত আছি। তার সাথে রোগ তো পিছু ছাড়ার নয় তাই সবাইকে নিয়ে আমি বেশ সুখী।
সুস্মিতা : তোর কত্তা মশায়ের খবর কি?
অনিন্দিতা : তার কথা আর বলো না। সে আগেও যেমন ছিল এখনও তেমনি আছে। চব্বিশ ঘন্টা নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আমার সাথে তার সম্পর্ক শুধু স্বার্থের। ভালোবাসা বলে কোনোদিনও কিছু ছিল বলে মনে হয়না। ‘সময়’ এমন একটা জিনিস জানোতো দিদি ভাই যে আসে শুধু মানুষজন কেমন তা চিনিয়ে দিতে। সে মানুষ যতো আপনই হোক আর যতো পর হোক। আমি তো মনে করি যে ভালোবাসা আত্মকেন্দ্রিক স্বার্থান্বেষী ও সন্দেহবাতিক সেই ভালোবাসা কিন্তু ভালোবাসা নয়। সেটা শুধু কামলোলুপতা ক্রোধ আর মোহ। সেই ভালোবাসায় কোনোদিনও শান্তি আসতে পারে না। সেতো শুধু অশান্তি আর দুঃখের পূজারী। ওখান থেকে মুক্তি পাওয়া যতোটা কঠিন ততটাই কষ্টের।
সুস্মিতা : ঠিক বলেছিস রে অনি। যাক তুই এসেছিলি বলে অনেক সুখ দুঃখের গল্প হলো। আজ কতোদিন পর একটু প্রাণখোলা কথাবার্তা হলো। ভীষণ ভালো লাগল রে ভীষণ ভালো লাগল।
অনিন্দিতা: দিদি ভাই অনেকক্ষণ হলো এসেছি। আজ উঠিগো। যে কথা বলার জন্য এসেছিলাম দেখলে তো সেটাই বলতে ভুলে গেছি। আমাদের বাড়িতে অন্নমহৎসব হবে তোমরা কিন্তু সবাই যাবে। তোমার কত্তার তো দেখা পেলাম না তাকেও বলবে গরীবের দোরে যেন পায়ের ধুলো দেন। টাটা। আজ আসি অন্যদিন আসব।
সুস্মিতা : ঠিক আছে সবাইকে যাবার জন্য বলব। তবে কেউ যদি না যায় তাহলে রাগ করিস না। তবে আমি অবশ্যই যাবো। ঠাকুরের প্রসাদ কতোদিন খাইনি। তবে আমাদের বাড়িতে এখন পুজো টুজো হলেও ঠাকুর ভোগ হয় না। পাটি হয় পাটি। ককটেল পাটি থেকে শুরু করে কতোরকমের পাটি। আমিতো এসবে অভ্যস্ত নই।তাই আমি ব্যাকডেটেড। তবে চেষ্টা করি মানিয়ে নেবার। ঠিক আছে তুই চলে যেতে চাইছিস যখন তখন আর দেরী করাবো না তুই আয়। আবার আসবি কিন্তু। টাটা।
আমার প্রিয় অজন্তা [Bengali Story]
কিছু বলব বলেইতো এসেছি। কিন্তু কিছু বলা হলো না। দুই নয়ন ভরে শুধু দেখেই চলেছি। যা শুনেছিলাম তাকে দেখেছিলাম কল্পনার নয়নভরে। যে স্বপ্ন দেখে প্রতিমুহূর্তে তোমাকে নিয়ে নতুন পৃথিবী গড়তে চেয়েছিলাম মনের অনুভূতি দিয়ে, সে যেন গন্ধ ধূপের ন্যায় তিলেতিলে ধোঁয়াময় আকাশ গড়ে তুলল আমার মধ্যে। কিন্তু আজকের এই সুন্দর পৃথিবীতে তোমাকে দেখতে ধ্বংসস্তূপের ন্যায় এক ভগ্ন প্রাচীরের মতো লাগলেও আমি তোমাকে দেখব বলেই ভালোবেসে ছুটে এসেছি। আর আজও ছুটে চলেছে কতো মানুষ উপার্জনের কিছু অংশ বাঁচিয়ে। কতো কষ্ট করে বাসে ট্রেনে চেপে টিকিট কেটে লাইন দিয়ে এগিয়ে চলেছে তোমার পানে। নয়নে নয়নে ভেসে চলেছে কতো শোনা, কতো জানা অজানা গল্পের ভাবনা।
আচ্ছা, অজন্তা এতদিন পরেও তোমার এতো সৌন্দর্য এতো জৌলুস এখনও মন কেড়ে নেয় সবার। কিন্তু যখন তোমার প্রথম সৃষ্টি হয় তখন তুমি কেমন ছিলে গো? নিশ্চয়ই আরও উজ্জ্বল আরও সৌন্দর্যময়। বৌদ্ধ দেবের মূর্তি সুন্দর ভাবে খচিত হয়ে আছে তোমার বুকের মাঝে। আচ্ছা তুমি তো এক সময় ইন্দ্রিয়াদি নামক অর্ধচন্দ্রাকৃতির পাহাড় ছিলে। আর তোমার ঐ অর্ধচন্দ্রাকৃতির রূপটাকেই কাজে লাগিয়ে দিল মানুষ। আর তাই বৌদ্ধ শিল্পী মহাশয়গণ তোমাকে আঘাত করে করে কোনো কোনো গুহা নির্মাণ করেছে যাদের দৈর্ঘ্য প্রায় ছয়শ ফুট আবার কোনো কোনো গুহার পরিধি তিন হাজার বর্গফুটেরও বেশি আচ্ছা অজন্তা তুমি কি জানো তোমার অবস্থান? শোনো তাহলে – মহারাষ্ট্রের ঔরাঙ্গবাদ থেকে সাতষট্টি মাইল দূরে বাগোডা নদীর তীরে বিভিন্ন ভাগে চল্লিশ থেকে একশ পাঁচ ফুট উচ্চতায় পূর্ব থেকে পশ্চিমে তোমার গুহাগুলি বিস্তৃত আছে। তোমার মোট গুহার সংখ্যা কতো জানো তুমি? ঊনত্রিশটা। তোমার প্রতিটা গুহার প্রাচীরের গায়ে বুদ্ধের জীবন চিত্রাকারে সুশোভিত হয়ে আছে।
জানো, অজন্তা তোমার চারপাশে কেমন যেন একটা ধ্যান গম্ভীরভাব সবসময় বিরাজ করে যা কিনা ধ্যান – ধারণার পক্ষে উপযোগী। আর আমি চঞ্চলমনা হয়েও সেইভাব উপভোগ করলাম। খানিকক্ষণের জন্য। আমি তোমার বুকের ওপর নির্মিত মন্দিরে যেই বসে গেলাম আমার যেন উঠতেই ইচ্ছে হচ্ছিল না, মনে হচ্ছিল চুপচাপ চোখ বুজে বসে থাকি ঐ স্থানে। আচ্ছা এর কারণ কি? শুনেছি স্বয়ং বুদ্ধদেবের কৃপাদৃষ্টি পড়ে তোমার স্থানে আগত যাত্রীদের উপর। আর তাঁর আকর্ষণেই সবাই মোহিত হয়ে যায় ঐ স্থানে গেলে। তাই বোধহয় স্বয়ং বুদ্ধদেবের আশীর্বাদ আমি পেয়েছিগো। যাই হোক শুধু প্রাচীরের চিত্রই নয়, স্তম্ভের পরিকল্পনা, অলংকরণ ও চিত্র এতো অধিক মাত্রায় কারুকার্য করা হয়েছে যা দেখে মানুষের মন অনায়াসেই ভরে যাবে। কিন্তু আমি যখন তোমাকে দেখতে এলাম তখন এতো জৌলুসের মধ্যে মলিনতার ছাপ পড়লেও তার যে ভালো লাগা সেটা কিন্তু নষ্ট হয়নি।তোমার দেওয়ালগুলিতে মানুষের শোভাযাত্রা, হাতি, ঘোড়া, রাজসভাসদ থেকে শুরু করে ভিক্ষুদের ছবি পর্যন্ত সুন্দরভাবে অঙ্কিত। সবথেকে বড়ো কথা তোমার কাষ্ঠ নির্মিত ছাদের ভাবনায় নির্মিত প্রস্তর ছাদের কড়িবর্গাগুলিও বেশ উঁচু করে খোদাই করা আছে। তোমায় ঘিরে শিল্পের ত্রিধারা স্থাপত্য ভাস্কর্য ও চিত্রকলা যে অপূর্ব সুন্দর সমন্বয় সৃষ্টি করেছেন শিল্পীগণ তা দেখে মনে হয় বিশ্বের কোথায় এমন দৃশ্য দেখা যাবে কিনা সন্দেহ। তোমার ঊনত্রিশটি গুহার মধ্যে পাঁচটি ছিল মন্দির আর চব্বিশটা ছিল মঠ। আরও শুনেছিলাম তোমার ঐ মঠে দু’শো বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ও শিল্পীরা বাস করতেন। যদিও তাদের পরিশ্রমের ফসল হলে তুমি। তারপর তারাও ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে গেল আর তুমিও পরিত্যক্ত অবস্থায় বন -জঙ্গলে চাপা পড়ে গেলে ভগ্নস্তূপের ন্যায়। ১৮১৯ সালে কিছু ইংরেজ যারা নিজের খেয়াল খুশি মতো বাঘ শিকার করে বেড়াত সেই শিকারির দল বাঘ শিকার করতে গিয়ে তোমাকে আবিষ্কার করে ফেলল এবং নতুনভাবে তোমাকে তারা সাজিয়ে তুলল। আর আজ তুমি বিশ্বের দরবারে খ্যাতনামা এক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত। জানো অজন্তা তোমায় নিয়ে অনেক গল্প শুনেছিলাম আর তোমার বিষয়ে পড়েওছিলাম আর তখন থেকেই মনের মধ্যে তোমাকে দেখার বাসনা জেগেছিল আমার।তাই তোমাকে দেখব বলেই টুরিস্ট বাসে করে আঠাশ দিনের টুরে বেরিয়ে পড়লাম সকলে মিলে। অনেক জায়গা ঘুরে ঘুরে দেখছি আর মনে মনে ভাবছি কখন তোমার কাছে আসব আর তোমাকে দেখব। যাক তোমার কাছে এসে আমার মনোবাসনা পূর্ণ হলো। সবথেকে বড়ো কথা তোমার সাথে আমার বন্ধুত্ব তৈরি হয়ে গেল। আর যার মাধ্যমে তোমার কাছে এলাম তাকে জানাই অনেক অনেক প্রণাম। তিনি যদি না আনতেন আমার মনোবাসনা পূর্ণ হতো না। তোমার সাথে বন্ধুত্ব গড়ে উঠত না। তুমি ভালো থেকো অজন্তা। যদি কোনোদিনও সম্ভব হয় তবে আবার ফিরে আসব তোমার টানে তোমার কাছে। আজ চলি বন্ধু।
বিপাশা চক্রবর্তী | Bipasha Chakraborty
New Bengali Story 2023| এসো করুণা ধারায় | কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা
Bengali Story 2022 | নকুল পাগলা | প্রবোধ কুমার মৃধা
Bengali Story 2022 | বন্ধুর বিয়েতে গিয়ে | প্রবোধ কুমার মৃধা
Bengali Story | কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা | গল্পগুচ্ছ | 2022
bengali story new | indian poems about death | bengali story | bengali story books for child pdf | bengali story books for adults | bengali story books | bengali story books for child | bengali story books pdf | bengali story for kids | bengali story reading | short story | short story analysis | short story characteristics | short story competition | short bengali story definition | short story english | short story for kids | short bengali story generator | bengali story 2023 | short story ideas | short story length | long story short | long story short meaning | long bengali story | long story | long story instagram | story writing competition | story writing competition topics | story writing competition for students | story writing competition malayalam | story writing competition india | story competition | poetry competition | poetry competitions australia 2022 | poetry competitions uk | poetry competitions for students | poetry competitions ireland | poetry competition crossword | writing competition | writing competition malaysia | writing competition london | bengali story writing | bengali story dictation | writing competitions nz | writing competitions ireland | writing competitions in africa 2022 | writing competitions for high school students | writing competitions for teens | writing competitions australia 2022 | writing competitions 2022 | writing competitions uk | bengali article writing | bangla news article | bengali story news| article writing on global warming | article writing pdf | article writing practice | article writing topics | trending topics for article writing 2022 | what is article writing | content writing trends 2022 | content writing topics 2022 | Bangla Prabandha | Probondho | Definite Article | Article Writer | Short Article | Long Article | Bangla kobita | Kabitaguccha 2022 | Galpoguccha | Galpo | Bangla Galpo | Bengali Story | Bengali Article | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | Shabdodweep Founder | Shabdodweep Bengali Story | Bangladesh Bengali Story | Indian Bengali Story | Top Hit Bengali Story | Trending Bengali Story | Recent Bengali Story | All new Bengali Story | Book fair bengali story | adventure bengali story | google top bengali story | top 10 bengali story | attractive bengali story | world demand bengali story | memorable bengali story