শওকত নূর – সূচিপত্র [Bengali Story]
কিছু নই – শওকত নূর [Bengali Story]
আলোর তির্যকতা পর্যাপ্ত ছিল। অধিকন্তু তা গাছপালার ফোকর গলিয়ে আসায় হয়তো তীক্ষ্ণভাবেই আঘাত হানছিল বিজ্ঞানীর চোখে, যদিও সময়টি ছিল একেবারে পড়ন্ত বেলা। উৎসুক চোখে দেখলাম দীর্ঘ এলোরেশমি চুলের বিলিকাটায় ধরে রাখা চোখ দুটি একেবারে শান্ত নিরীহ। ভাবলাম, বিজ্ঞানী অথচ ধারেকাছে কোন যন্ত্রপাতি নেই। বেলার দিকে চেয়ে আছেন কেমন একদৃষ্টে। বেলার দিকে অপলক চেয়ে থাকাই যদি জরুরি কাজ হয় তো গাছপালার ফাঁক দিয়ে না তাকিয়ে বাইরের খোলা মাঠে গিয়ে সরাসরি তাকালেই হয়। কী দেখছেন তিনি?কিছু বলব ভেবে মিনিট বিশেক ধরে প্রস্তুতি নিলাম। কিন্তু তা শুধু নিসপিস আর চাপা গলাখাঁকারিতেই সীমাবদ্ধ রইল। বলা আর হল না। ভাবলাম,বিজ্ঞানী মানুষ, কী বলতে কী হয়ে যায়? তারচে বরং ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করা শ্রেয়। চেয়ারের হেলনায় মাথা ঠেকিয়ে তাই নির্জীবের মতো লেপ্টে রইলাম। সারাদিনের দীর্ঘ ভ্রমণের ক্লান্তি থেকেই চোখে তন্দ্রা নামে। যখন হুড়মুড় জেগে সোজা হয়ে বসি তখন রীতিমতো সন্ধ্যা। আবছায়া কেটে খানিক আগেই বোধ করি অন্ধকার ঘনাতে শুরু করেছে । স্পষ্টত অনুভব করছি আমার তন্দ্রা কাটা আপনা থেকে ঘটেনি। বাইরে যারা প্রবল উল্লাস কি শোকেতাপে হুয়া হুয়া করেছে, তারাই নির্ঘাত এর হোতা।
ক সেকেন্ড ধরে ভাবছিলাম বিজ্ঞানী বুঝি তন্দ্রায় আছেন। কিন্তু আকস্মিক শব্দ প্রয়োগে আমার ভুল ভাঙালেন তিনি। হাই তুলে বললেন, এরা আছে এখানে। হার সুখকর। বললাম, স্যার, কারা? কিসের হার?
তিনি আমার কথায় কোন উচ্চবাচ্য না করে বলে চললেন, এখানে যেসব কারণে এরা আছে ওইসব কার্যকারণসমূহ এদের বিলুপ্তির স্থানাদিতে উদঘাটন পূর্বক প্রয়োজনীয় নিয়ামকসমূহ উপস্থাপনের বলিষ্ঠ উদ্যোগ নেয়া হলে বিলুপ্তরা কি ফিরে আসবে?গত হয়ে যাওয়ারা ফিরবে না নিশ্চয়ই। তবে এখানকার এদের অংশ বিশেষকে সেখানে নিয়ে প্রতিস্থাপন করা গেলে বিলুপ্তির ব্যাপারটি মোটামুটি হলেও রহিত হতে পারে।ত-ই সম্ভাব্য!
আমি গলা ঝেরে বললাম, স্যার, কাদের কথা বলছেন? কাদের প্রতিস্থাপন? কী নিয়ামক? কারা বিলুপ্ত? স্যার!
বিজ্ঞানী এবারও আমার কথায় কোন সাড়াশব্দ করলেন না। ভাবটা এমন যেন তিনি ছাড়া অন্য কেউ নেই-ই এখানে। চাবি ঠেলে ইজিচেয়ারটা আরো বেশি হেলনা করে তার সাথে একেবারে মিইয়ে গেলেন। এবারে হতাশার প্রথম দীর্ঘশ্বাসটি ফোঁস করে বেরিয়ে গেল আমার নাসারন্ধ্র পথে। এদিকে বাগানের ঘন গাছপালায় অন্ধকার গাঢ়তর হয়ে রীতিমতো ভৌতিক আবহ নেমেছে। অদূরের অন্ধকার বাংলোটির অস্তিত্ব খুব বেশি আবিষ্কার করা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে বাংলো চত্বরের বেষ্টনীর চারধারে শুরু হয়েছে নানা প্রকার বুনো শব্দপাত। পূর্বে যারা হুয়া হুয়া দিয়ে তার সূত্রপাত ঘটিয়েছিল, কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর তারা আবারো উল্লাস কিংবা শোকাফসোস ধরেছে রীতিমতো বর্ধিত কলেবরে। ভাবলাম, এ কী ভুল আমি করলাম? অনেক দিন পর বিজ্ঞানী এখানে এসেছেন শুনে এতদিনের গলদঘর্ম যোগসাজশে যে এ্যাপয়েনমেন্টটি করে নিজেকে ধন্য মনে করে বিগত রাত থেকে রোমাঞ্চিত হয়ে আসছিলাম, তার এই বুঝি শেষ প্রতিফল? মনে মনে দোষারোপ করতে লাগলাম বিজ্ঞানীর সহকারী ডা. মেহমুদ কিরগিজ আলী আয়মানকে। এতদিন ধরে টেলিফোনে কথা বার্তা- বিজ্ঞানীর এহেন আচার-আচরণ সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা যদি তিনি দিতেন তবে এতটা গলদ ঘর্ম হয়ে এতোটা পথ অতিক্রম করে কে আসত এমন কুস্থানে, এমন নীরস ব্যক্তির সান্নিধ্যে? ভদ্রলোক দীর্ঘক্ষণ চত্বরের বাইরে আছেন। বললেন বাইরে নামায আদায় করতে যাচ্ছেন। কিন্তু তার বেশভূষা, চুলের স্টাইল, কথাবার্তার ধরন প্রভৃতিতে মনেই হল না তিনি আন্তরিক একজন নামাযী। সেই যে গেলেন আর ফেরার নাম নেই। মাগরিব পেরিয়ে এশার আযান গেছে সেই কোন কালে! পরমুহূর্তে আবার খোদাভীতি বহমান ভাবনায় খানিকটা শীতল পানি ঢালে। মানুষের ইমান আমান একান্তই তার ভেতরের। বাহ্যিক বেশভূষায় তার আন্দাজে যাওয়া ভুলও হতে পারে- এই উল্টো চিন্তায় তাই ক্ষমা প্রার্থনায় অস্ফুট খোদাকে ডাকি। তখনই আকস্মিক আলোর বিস্কোরণে আপাদমস্তক লাফিয়ে উঠি। দেখি বিজ্ঞানী সামনের টি টেবিলটিতে রীতিমতো মাথা ঝুঁকেছেন। হাতে খোলা বই। টেবিলল্যাম্পটি ইজিচেয়ারের পাশের সুইচ টিপে তিনিই জ্বেলেছেন। ভাবলাম, এবারে জিজ্ঞাসা করি এত গভীর মনোযোগে তিনি কী পড়ছেন। কিন্তু এহেন উৎসাহ দেখাবার পূর্ববর্তী ফলটির পুনরাবৃত্তি না ঘটাতে নিশ্চুপ থাকি।
বিজ্ঞানী বইয়ের পাতায় ক্রমশ মাথা ঝুঁকছেন, পাতা উল্টে সামনে যাচ্ছেন, মুহূর্তে পেছন পাতায় ফিরে আসছেন-যেন এই নিভৃত জগৎ শুধুই তার, একান্তই নিজের ।
ভাবলাম এভাবে আর আহাম্মুকের মতো বসে থাকা নয়? বাংলোর দিকে বরং একটু ঢুঁ দেয়া যাক। বাংলোতে আলোর অনুপস্থিতি সহকারীর না ফেরার বিষয়টিই নিশ্চিত করছে। তবু একঘেয়েমী কাটাতে ওদিকে যাওয়াটাকেই একান্ত কর্তব্য গণ্য করি।
বাংলোর বারান্দায় অন্ধকারে বসে রইলাম আধো ঘন্টার মতো। যে সোফাটাতে বসেছি তা ধূলিমলিন, পরিত্যক্তের মতোই। দিনে এখানে ওঠার সময়ই তা দেখেছি। পাশেই পত্রিকা ম্যাগাজিনের স্তূপ। কিন্তু সুইচ টিপে আলো জ্বালতে সাহস না হওয়ায় ওগুলোর দিকে চেয়ে উসখুস করতে লাগলাম। হঠাৎই গলা খাঁকারির শব্দে চমকে উঠি। এই তো ডা. মেহমুদ কিরগিজ আলী সাহেব এসে গেছেন। বাংলোয় পা তুলেই বললেন, এখানে বসে আছেন? এই অন্ধকারে?
জি, কতক্ষণ আর ওখানে থাকব? ভাবলাম, দেখি আপনি ফিরলেন কী-না।
তা ভালই করেছেন। কথা না বলে কতক্ষণ কোন জীবন্ত মানুষের সান্নিধ্যে থাকা যায়? চলুন, ভেতরে চলুন। এখানে আলো না জ্বেলে বসে ভাল করেছেন। আপনি আলো জ্বাললে আপনাকে অবহিত না করার জবাবদিহিতাটি আমাকেই করতে হত। তালা খোলার ফাঁকে তিনি বলছিলেন কথাগুলো।
দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকেই আলো জ্বাললেন তিনি। বললেন, দ্রুত প্রবেশ করুন। ভেতরে ঢোকামাত্র দরজা বন্ধ করলেন তিনি। চারপাশে নজর বুলিয়ে বললেন, তা কেমন দেখলেন বিজ্ঞানী আহমাদ নগিব নাওশির আলীকে?
ভাল। কথা না বাড়াতে ঝটপট বললাম।
ভাল,তবে বুঝলেন নিশ্চয়ই যে এই জাতের মানুষের সাথে কোন আলাপ পরিচয় করা চলে না। করা না করা সমান। চলুন ওপাশটাতে ছোট্ট যাদুঘর আছে। একজন জীববিজ্ঞানীর সংগ্রহে যা থাকে তাই নিয়ে যাদুঘর। ভাল লাগবে আশা করি।
জি চলুন।
যাদুঘরে গিয়ে ডোডো ডায়নোসর সহ বেশ কিছু বিলুপ্ত প্রাণীর ফসিল, কংকাল, চামড়া হাঁড়গোড় প্রভৃতি ঘুরে ঘুরে দেখলাম। কিছু বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর প্রতিকৃতি সহ তাদের নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও দেখলাম। হল ঘরের একেবারে শেষ দিকটায় এসে দাঁড়ালেন আয়মান সাহেব। বললেন, এবারে চাইলে আপনি বিজ্ঞানীর কথা শুনতে পারেন। বললাম, মানে?
ওই দেখুন।
ডানে চেয়ে দেখলাম মাঝারি এক টেবিলের ওপর ধারাবাহিকভাবে কতগুলো সাউন্ডবক্স দাঁড়ানো আছে। ওগুলোতে পর্যায়ক্রমে সাঁটানো আছে আলবার্ট আইনস্টাইন, আইজ্যাক নিউটন, টমাস আলভা এডিসন এবং উইলবার রাইট ও অরভিল রাইট তথা রাইট ব্রাদারস এর ছবি। সব শেষে এক ফাঁকায় দাঁড়ানো সাউন্ডবক্সের গায়ে সাঁটানো আছে যার কাছে এতটা কৌতূহল, উচ্ছ্বাস আগ্রহ নিয়ে এসেছি, সেই বিজ্ঞানী ড. আহমাদ নগিব নাওশির আলীর ছবি। ডা. মেহমুদ কিরগিজ আলী সাহেব বললেন, কার কথা আগে শুনবেন, বলুন।
যার কাছে এসেছি!অকপটে বললাম।
ওকে। অডিও সুইচে তৎক্ষণাৎ টিপ দিলেন তিনি।
এক্ষুণি অডিও যন্ত্রে বিজ্ঞানী ড. আহমাদ নগিব নাওশির আলীর কথা শুনতে যাচ্ছি। এতক্ষণে মনের ক্ষেদ রীতিমত ঘুচে গেছে। বেশ রোমাঞ্চিত হচ্ছিলাম এই ভেবে যে শেষ পর্যন্ত সরাসরি না হলেও রেকর্ড যন্ত্রে প্রিয় বিজ্ঞানীর কথা শুনে যাবতীয় কৌতূহল মেটাবার অভাবনীয় সুযোগটা হয়ে যাচ্ছে। গভীর মনোযোগে কান পাতি। খানিকক্ষণ খুঁটখাট শব্দের পর শুরু হল তার বক্তব্য।
আমি আসলে কিছুই নই। জ্ঞানত আপনাকতৃক আমাকে শোনার জানার অথবা আপনাকে শোনাবার জানাবার আমার কিছুই নেই। আপনাকে ধন্যবাদ দিতে পারছি না। কারণ, অহেতুক এতটা দূর থেকে এতটা কষ্ট স্বীকার করে, নিজের মূল্যবান সময় নষ্ট করে আপনি আমার মতো এক মূল্যহীনের কাছে এসেছেন। এতটা ঔৎসুক্য ব্যয় করলেন,অথচ আমি কিছু্ই নই। বিদায়!
গুরুগম্ভীর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষে আবারো সেই খুঁটখাট শব্দ শুরু হলে ডা. মেহমুদ কিরগিজ আলী আয়মান সাহেব দ্রুত সুইচ টিপে অডিওযন্ত্রটি বন্ধ করেন। আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললেন, এবার নিশ্চয়ই সন্তুষ্ট হলেন?
জি, আসলে-আমি- আসলে–।
বলুন, কী আসলে।
উনি এত বড় একজন বিজ্ঞানী -এতগুলো আবিষ্কার, আন্তর্জাতিক কত স্বীকৃতি ওনার! কতটা আগ্রহ নিয়ে দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় এ্যাপয়েনমেন্ট করে ওনার কাছে এলাম, অথচ উনি বলছেন– ।
উনি কিছুই নন। ঠিক আছে, তবে অন্যদের কথা শুনুন।
জি, তাই শোনান।
ধারাবাহিক সব শুনতে পাবেন।
আইনস্টাহন থেকে শুরু। শুরু হল, কেমন?
জি।
বিজ্ঞানী ড. আহমাদ নগিব নাওশির আলী ঠিকই বলেছেন। এর থেকে ভিন্ন কিছু আমিও ভাবতে পারি না। বলতেও পারি না ভিন্নতর কিছু। আসলে আমিও কিছু নই। হয়তো ভাবছেন আমার E=mc2 এর মাহাত্ম্যের কথা। এটিই সম্ভাব্য, হাঃ হাঃ হাঃ! অনেকের কাছে এটা ভীতিপ্রদ। তাদের মতে না থাকলেই ভাল ছিল। আবার যারা এটাকে মারা কিংবা ভয় দেখাবার কাজে ব্যবহার করেন তাদের কাছে মহামূল্যবান, পরম পূজনীয়। যারা ভয় দেখাচ্ছেন, কিংবা যারা ভয় পাচ্ছেন তারাই প্রকৃত প্রস্তাবে সবকিছু। জগৎ জুড়ে তাদেরকেই সর্বস্তরের মানুষ চেনে এবং জানে। আমাকে কজন চেনে জানে কিংবা মনে রাখে? আবিষ্কারটা কবে, সত্যিকার কী মর্মে হল -তা-ই বা শতকরা কজনের জানা? অতএব, আমি কিছুই নই, হাঃ হাঃ হাঃ।
দুই
আমি নিউটন । যুবকাবস্থায় উদাসচুলো একটা ছবি আমার দেখলেও দেখে থাকতে পারেন। যাহোক, আমার পূর্ববর্তী বক্তা ভুল কিছু বলেননি। তার সাথে সুর মিলিয়ে বলতেই হয়, আমিও কিছু নই। বৃক্ষফল অনেকের মাথার ওপরেই পতিত হয়। ঘাতে প্রতিঘাত, সেও অনেকে দেখায়। তাদের অনেককেই জগৎব্যাপী অনেকে ভাল চেনে এবং জানে। আমাকে শতকরা কজন চেনে জানে? অতএব, আমি কিছুই নই, হাঃ হাঃ হা!
তিন
আমি এডিসন। আমার পূর্ববর্তী বক্তাদের সাথে কিছুতে দ্বিমত পোষণ করতে পারছি না। তাদের মতো আমিও কিছু নই। এই যে ঘরে ঘরে এতো আলো, সভ্যতার এই বর্ণিল বিচ্ছুরণ, অথচ আমি একেবারে অন্ধকারে। আমাকে ব্যবহার কারীদের অনেককেই অনেকে ভাল চেনে ও জানে? আমাকে কজন চেনে?বইপত্র বরাতে যারাও বা আমাকে বিশদ জানে তাদের অনেকে আমার কাজের চেয়ে বরং ছেলেবেলায় আমার সেই অকর্মা অকেজো দশার কথা শুনেই বরং অনেক বেশি পুলক বোধ করে । চাইলে আপনি আপনার আলোঝলমলে আধুনিক গাঁয়ের ঘরে ঘরে গিয়ে আমার বিষয়ে সরেজমিন সমীক্ষা নিতে পারেন। দেখবেন, আমার নাম শুনে এই বর্ণিল আলোতেও তাদের চোখ দুটো কেমন ঘোলাটে হয়ে যায়। অতএব, আমি কিছু নই।
চার
আমরা হতভাগা রাইট ভাতৃদ্বয়। আমাদের সংক্রান্ত ব্যাপার আসলে তেমন কিছুই নয়। ওই পাখিদের ওড়াউড়ি দেখেই মূলত দুভাইয়ের মাথায় মানুষ ওড়াবার উদ্ভট ভাবনাটা আসে। যেমন ভাবনা, তেমন কাজ!হয়ে গেল, ব্যস!শেষ পর্যন্ত উড়ে উড়ে কতজন কত দূরেই তো গেল। কত কিছুই কতজন হল। ওড়াটাকে কতশত কাজেই তো লাগানো হল। তা থেকে কেউ কেউ জগৎময় এমন পরিচিতি পেয়েছেন যে জগৎ যতদিন আছে আবালবৃদ্ধবনিতা যত্রতত্র তাদের নাম স্মরণ রাখবে। আমাদের তেমন কেউ স্মরে না। চেনে জানেই বা শতকরা কজন? এই মুহূর্তেও যারা শূন্যে উড়ন্ত অবস্থায় আছেন তাদের ও অনেকেই জানেন না আমরা কারা, কিংবা ওড়াউড়ির কাণ্ডটাই বা আমরা কবে থেকে চালু করেছিলাম। নিজেরা ওড়েন,অথচ ওড়ার ব্যবস্থাটা কার দ্বারা সাধিত হল, কবে থেকে হল, তা জানেন না। অতএব, আমরা কিছু নই, হাঃ হাঃ হাঃ!
শেষ বক্তব্যের শেষে ভারাক্রান্ত মনে উঠে দাঁড়াই। ক্ষীণ কণ্ঠে বলি, এ কেমন কথা হল? এত মহান সব বিজ্ঞানী, যাদের মহান আবিষ্কারগুলো না হলে কোথায় কোন তিমিরে পড়ে থাকত এ পৃথিবী, অথচ তারাই কি না বলছেন তারা কিছু নন, যা কিছু সবই অন্যরা। এমন অসম্ভব কথা কী করে মেনে নেয়া চলে? না না, কিছুতেই একমত হতে পারছি না এসবে। আমি অবোধ অবুঝ মানুষ, কিছুতে মাথায় ধরছে না কিছু। সত্যি করে বলুন তো ওনারা নিজেরা কি বলেছেন এমন সব নিষ্ঠুর আত্মঘাতী কথাগুলো?
না না, ওনারা তো মরে গেছেন সেই কবেই। মরে মাটি হয়ে আছেন আমূল! তাহলে?
আহা, আজ ওনারা ওপার জগৎ থেকে কথা বলতে সক্ষম হলে তো আমরা এমন সব কথাই কান পেতে শুনতে পেতাম। ভেবে দেখুন একটু গভীর করে।
তা কে ভাবল এমন কল্পিত সব কথা?
কেন, আমাদের প্রিয় বিজ্ঞানী ড. আহমাদ নগিব নাওশির আলী সাহেব!
ও –তাই বলুন।
ওনার আরো একটা গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার আছে। এ যাবৎকালের সর্বশেষ আবিষ্কার সেটি।
কী তা, বলুন জলদি।
সেটা এখান থেকে বেরিয়ে যাবার পথে শুনতে পাবেন। আপনার তো যাবার সময় প্রায় হয়ে হলো।
জি হ্যাঁ, তাই তো। রাত দশটা দশ বাজে। ঠিক সাড়ে দশটায় এখান থেকে বেরিয়ে যাবার কথা আছে।
সমস্যা নেই! যাবার পথটা একেবারেই নিরাপদ সংরক্ষিত এলাকাভুক্ত। তা যাবার আগে আরও কোনও কৗতূহল?
স্যার, থাক আজকের মতো। শরীরটা মোটেও ভাল লাগছে না। সময়ও চূড়ান্ত পর্যায়ে। চলি এবার,বিদায়।
বিদায়!
বাংলোর আঙিনা পেরিয়ে অটোলক বহিঃগেটটির বাইরে গিয়ে বার থেকে তা ভেজিয়ে দিতেই বাংলোর দিক থেকে বিস্ময়কর ধরনের শব্দপাত ভেসে আসে। থমকে দাঁড়িয়ে কান পাতি। মনে হচ্ছে সম্মিলিত কণ্ঠের এক অডিও বাজছে। মিষ্টি রোমাঞ্চকর ভৌতিক আবহের ভিন্ন কোনও অডিও: আমি/আমরা কিছুই নই, কিছুই নই, হোঃ হাঃ হাঃ হাঃ! হোঃ হাঃ হাঃ হাঃ!আমরা কেউ কিছুই নই। ইট ম্যাটারস নাথিং। উই আ(র) অল হ্যাপি, এভা(র) হ্যাপি ফেলোস! ডু উ্য রিমেম্বার দ্যা হালুই করস অব ইওর ভিলেইজ মার্কেট হু হার্ডলি হ্যাভ দ্যা উইলিংনেস টু টেস্ট দ্যা সুইটস দে প্রিপেয়ার?হাঃ হাঃ হাঃ!
উই হার্ডলি থট এ্যান্ড থিংক হোয়েদার দ্যা হিউম্যানস রিমেম্বারড অর রিমেম্বার আওয়া(র) নেমস এ্যান্ড ডিডস। ইটস বিকজ উই আর এভা(র)ওয়েল উইশারস টু দ্যা হিউম্যানস! হোঃ হাঃ হাঃ হাঃ! হোঃ হাঃ হাঃ হাঃ!থ্যাংকস টু ভিজিট এ্যান্ড হিয়ার আস,স্ট্রেঞ্জার! মেনি মেনি থ্যাংকস!বা–ই,বা—ই,বা—-ই!
ভারাক্রান্ত পা চালাবার ফাঁকে মনে মনে ভাবলাম, এই তাহলে বিজ্ঞানী ড. আহমাদ নগীব নাওশির আলী সাহেবের সর্বশেষ আবিষ্কার? মহান অথচ মমার্থ দাঁড়ায় – ‘কিছু নই’।
শওকত নূর | Shawkat Noor
Bengali Story 2023 | ভবতোষ মাস্টার | গল্পগুচ্ছ ২০২৩
Bengali Story 2023 | রূপান্তরের পথে | ডরাইয়া মরে
Bengali Story 2023 | কর্ণফূলী | গল্পগুচ্ছ ২০২৩
Bengali Story 2023 | নিষিদ্ধ আনন্দ | গল্পগুচ্ছ ২০২৩
bengali story | short bengali story analysis | short bengali story characteristics | short bengali story competition | short bengali story definition | Best Bengali Story | Top Bengali Story | World Bengali Story | International Bengali Story | short bengali story english | writing competitions ireland | bengali story writing practice | bengali story writing topics | trending topics for article writing 2022 | bengali story trends 2022 | content writing topics 2022 | Bangla Prabandha | Probondho | Definite Article | Article Writer | Shabdodweep bengali story | Galpoguccha | Galpo | Bangla Galpo | Bengali Story | Bengali Article | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | Shabdodweep Founder | bengali story pdf download | bengali story audio book | bengali story audio download