
Table of Contents
আমি দ্রৌপদী – সুমিতা চৌধুরী [Bengali Poetry]
আমি দ্রুপদ রাজার কন্যা দ্রৌপদী,
আমি এক অনন্যা সুন্দরী,
সবার মুখে শুনি, আমার মতো সুন্দরী নেই কোনো নারী।
তবু কেন বলতে পারো,
আমার প্রেম বারংবার আমায় ছেড়ে বহুগামী?
আমি যাজ্ঞসেনী,
যজ্ঞের আগুনে জন্ম আমার,
তাই বুঝি এতো তেজস্বিনী, প্রতিবাদীনী, স্পষ্টবাদিনী।
কিন্তু, যবে আমার প্রেমিক পুরুষ স্বয়ম্বরসভায় লক্ষ্যভেদে জয় করলো আমায়,
বরণ করার আগেই শ্বশ্রুমাতা বাঁটলো যখন তাঁর সকল পুত্রের ভিতর,
তখন কই প্রতিবাদ করলাম আমি?
কোথায় হারালাম নিজের সেই তেজস্বীতা রূপ?
কোথায় হারালাম আপন স্পষ্টবাদী স্বরের কাঠিন্য?
হয়ে গেলাম পরবশতার স্বীকার সেই ক্ষণ থেকে আজীবনের!
সবাই বলে আমায় অসহিষ্ণু, তেজস্বিনী,
যেদিন দ্যূতক্রীড়ার ভরা সভায় হচ্ছিল আমার নারীত্বের চরমতম অপমান,
সেদিন আমার থেকে সহ্যশক্তি ধারণ করতে পেরেছিল কি এ ধরিত্রী মাও?
সবাই বলে আমায় এই অখণ্ড ভারতভূমির সম্রাজ্ঞী,
সম্রাট যুধিষ্ঠিরের পার্শ্বে উপবেশন করেছিলাম রাজসূয় যজ্ঞে।
কিন্তু আমার মনের খবর কে রাখে?
হতে চাইনি আমি সম্রাজ্ঞী,
হতে চেয়েছিলাম আমি শুধুই তৃতীয় পাণ্ডবের প্রেয়সী, এক সুখী ঘরণী।
যে রাজা নিজেই আপনাকে রক্ষার ক্ষমতাধিকারী নন,
যে রাজা সামান্য দ্যূতক্রীড়ার পরবশ পদানত হয়ে আপন সমগ্র রাজত্ব হারিয়ে হন কপর্দকহীন,
তারপরও তাঁর নেশার অনল বাঁধ মানে না,
একে একে বাজি রাখেন আপন ভাইদেরও,
এবং সর্বোপরি আপন স্ত্রীয়ের মান-মর্যাদার কথা সম্পূর্ণরূপে বিস্মৃত হয়ে আমাকেও করেন সেই দ্যূতক্রীড়ায় সামিল, বাজির বোড়ে করে,
তাঁর গর্বে অহংকারী হওয়ার সত্যিই কি কিছু রয় অবশিষ্ট?
আমার নাকি পঞ্চস্বামী,
তাই বহুপতিত্বে স্মরণ করা হয় আমায় আজও!
কেউ কি জানতে চেয়েছে কখনো,
একটি নারীর এমন জীবন আদৌ তার কাঙ্ক্ষিত কিনা?
কি বিভীষিকাময় হয় তার এই নরক জীবন।
যে প্রতিমাসে এক এক জনের শুধুই ভোগ্যা,
তার ভালো- মন্দ, সুখ- অসুখের নেই কোনো দাম কারো কাছেই!
আমি ধর্মপরায়ণা,
হায়রে ধর্ম, সে তো আমার প্রতি পদের শৃঙ্খল শুধুই।
যা আষ্টেপৃষ্টে করেছে আমায় চিরবন্দিনী, আমারই অবাঞ্ছিত জীবনে।
আমাকে ভোগের লালসায় মত্ত হয়ে হয়েছিল সেই বিধ্বংসী কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ,
সবাই বলে, আমার প্রতিশোধের অনলে ছারখার হয়েছিল কৌরবকূল।
সত্যিই কি তাই?
বলো সখা কৃষ্ণ, বারেক সত্যবাণী।
সবাই আমাকে শিখণ্ডী করে খেলে নি কি দাবা,
আপন আপন স্বার্থ চরিতার্থে?
তাই তো শূন্য হলো আমার কোল,
উজাড় হলাম আমি, আপন পঞ্চপুত্র শোকে।
তবুও ছত্রিশ বছর করতে হলো আমায় এ ধরায় বাস,
রিক্ত শূন্য হয়েও সম্রাজ্ঞী রূপে!
আমার সতীত্বের করা হয় বড়াই,
লোকে করে ধন্য ধন্য।
হে পুরুষ সমাজ, আর কতদিন দ্রৌপদীর আড়ালে সব নারীকেই করবে তোমাদের ভোগের সামগ্রী?
তাদের শিখণ্ডী করে সাজাবে আপন স্বার্থের পাশার দান?
তাই তো, মহাপ্রস্থানের পথে রইলাম পড়ে আমি একাকী, হিমালয়ের কোলে চরম অবহেলে।
আমার প্রিয়ও ক্ষণিকের তরে থামলো না, চাইলো না ফিরে,
আমি দ্রৌপদী, চির অসহায়, চির অভাগিনী, এক নারীর প্রতিমূর্তি।।
বেতাজ “তাজমহল” – সুমিতা চৌধুরী [Bengali Poetry]
শ্বেতশুভ্র মর্মর তাজমহল,
সৃষ্টি থেকে শোনায় আপন প্রেমগাথা।
এক পরমাসুন্দরী নারীর প্রেমে অন্ধ
এক মুঘল সম্রাটের মনের আকুতি।
যমুনা দিয়ে বইতে পারেনি যদিও খুব বেশী কালপ্রবাহ,
মাত্র উনিশটি বসন্ত দেখেছিল সেই প্রেম।
অতি সত্ত্বর চোদ্দতম সন্তান প্রসবের সময়ই,
মরণ লিখে যায় আপন সাক্ষর।
প্রিয়া বিহনে সপ্তাহকাল উপবাসী সম্রাট,
বহির্জগতে যখন এলেন তখন যেন বৃদ্ধ দেহে, মনে।
হঠাৎই পেলেন খবর এক ভাস্কর বানিয়েছে অপরূপ ভাস্কর্য,
আপন স্ত্রীকে প্রেমের উপহার স্বরূপ।
তৎক্ষণাৎ জরুরি তলবে ডেকে পাঠিয়ে দেখলেন তা মুগ্ধ নয়নে,
মনে হলো, এই রচনা হবে শুধুই তাঁর প্রিয়ার স্মৃতিসৌধের রূপ।
ফেরা হলো না সে ভাস্করের আর,
তাঁরই তত্ত্বাবধানে নিযুক্ত হলো বিশ হাজার শ্রমিক,
রচিত হলো পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম এক নজির তাজমহল,
তাঁরই দেওয়া প্রেমের উপহার স্বরূপ আপন স্ত্রী তথা মুমতাজ মহলের স্মৃতিতে।
চির অদ্বিতীয় থাকতে বলি গেল সেই বিশ হাজার শ্রমিকের হাত,
বলি গেল সেই ঈশা মোহাম্মদ নামক ভাস্করের চোখ।
লেখা রইল অনুচ্চারে তাজমহলের প্রতি প্রস্তরে প্রেমের বেতাজ বাদশা শাহজাহানের অমর কীর্তি,
তাঁর প্রিয়ার স্মৃতিতে রচিত আপন মনের অঞ্জলিতে।
তবু কি কোথাও ধ্বনিত হয় না কিছু গুমড়ে ওঠা ক্রন্দন?
কিছু বুকফাটা আর্তনাদ?
তাজমহল চাঁদনি রাতে কখনো কি গলায় না আপন ব্যথা, রূপালী লাভায়?
কখনো কি জানায় না আর্তি, স্মৃতি হয়ে নয়, আরজুমান্দ বেগম বাঁচতে চেয়েছিল প্রেমে- অপ্রেমে, খুররমের চিরসাথী হয়ে।।
উজ্জ্বল রাত কথা – সুমিতা চৌধুরী [Bengali Poetry]
কিছু রাত দিনের থেকেও উজ্জ্বল হয়,
আপন গরিমায়, আপন মহিমায়।
কিছু রাত স্বপ্নের আকাশে পাড়ি জমায়,
এক নব সূচনার গল্প শোনায়।
মঞ্চ ভাসে পাদপ্রদীপের আলোয়,
মুহুর্মুহু করতালিতে মুখরিত হয় সভা।
কেউ অতি সাধারণ থেকে উঠে আসে উচ্চতায়,
তার চোখে- মুখে ছড়িয়ে পড়ে হীরক দ্যুতির প্রভা।
কোথাও যেন বেসুরো আলাপে সুর জমে ওঠে,
ক্ষণিকেই তাতে সাতসুরের মূর্ছনা ধরা দেয়।
শূন্য আসনে কত- শত শ্রোতা এসে জোটে,
ভরে দেয় তাদের আবেগে, উচ্ছ্বাসে, ভালোবাসায়।
শেষ বলে কিছু শেষ নেই জেনো,
শেষের সে পথ হদিশ দেয় আগামীর।
প্রাণের স্পন্দন হারায় না কখনো,
ছন্দ পতনের ধাপ পেরিয়ে ছন্দে ফেরাই যে সবচেয়ে দামি।
এমনই কিছু রাতের গল্প লেখা থাকে কালের জমিতে,
ইতিহাস বহন করে তা সদর্পে, স্বর্ণাক্ষরে।
সেইসব রাত হাসে আপন জ্যোৎস্নালোকে, বিজয় গীতে,
কালজয়ী সেইসব রাত কথা লেখা থাকে অনুভূতির আখরে।।
মেঘের পরে চাঁদের উঁকি – সুমিতা চৌধুরী [Bengali Poetry]
মনের আকাশে পাড়ি জমিয়েছে কিছু অভিমানী মেঘ,
বাষ্পাচ্ছন্ন স্যাঁতসেঁতে তাই মনঘর।
কোথায় যেন গিয়েছে চুরি খুশির পালকগুলো,
ভীষণ আপন কেউ হয়েছে বুঝি পর।
টুপটাপ ঝরছে কিছু নীল ব্যথার বৃষ্টি,
চুপচাপ স্মৃতি হাতড়ে আলগোছে।
কিছু অক্ষর যাচ্ছে মিটে গল্প কথার,
কে যেন অদৃশ্য হাতে জীবনের রং মোছে।
তবু অপেক্ষা একফালি চাঁদের,
মেঘের ফাঁক গলে একটু পেলব জ্যোৎস্নার,
সুখ সারির ডানায় ফুটে ওঠা কল্পকথার,
চোখের ঝিলে ভাসমান প্রতিকৃতি সুখী ঘরকন্নার।
তাই কি, মেঘের পরে চাঁদের উঁকি,
চোখের কোলে বন্যা?
বুক ছাপানো বাণের তোড়ে,
বইবে কি ফের খুশির ঝর্ণা?
নির্বাসনে যাবে কি ঐ সব
অভিমানী মেঘের দল?
উঠবে কি ফের সোহাগী রোদের
আহ্লাদী হাসি ঝলমল?
মন মাঝি গুনছে অপেক্ষার প্রহর,
উজানে বাইতে নাও, এক সুখ দরিয়ায়।
ময়ূরপঙ্খী ভিড়িয়ে দেবে রূপকথারই দেশে,
ভেজাতে মনজমিটার দুকূল, সফেন জ্যোৎস্নায়।।
“পুরুষ”- “পুরুষ?” – সুমিতা চৌধুরী [Bengali Poetry]
একলা রাতে হায়না বেশে
একটা পুরুষ শিকার করে,
একটা পুরুষ বুকের ওমে
আগলে সেসব ক্ষত ভরে।
একটা পুরুষ তিন তালাকে
নারীকে বেচে খোলা হাটে,
একটা পুরুষ শক্ত মুঠোয়
হাতটা নিয়ে সমান্তরাল পথটা হাঁটে।
একটা পুরুষ অহংকারে
যে নারীদের পণ্য ভাবে,
একটা পুরুষ তাদের নিয়েই
স্বপ্নে পাড়ি দেয় এই ভবে।
এক পুরুষের নীরবতায়
দহন আঁচে জ্বলে সীতা,
আরেক পুরুষের মনের মাঝে
সকল কন্যাই যে তাঁর রাজদুহিতা।
কোনো পুরুষ বেআব্রু করে
নারীকে যখন ভরা সভায়,
তখনই কোনো পুরুষ সসম্ভ্রমে
লাজ রেখে তার বচন নেভায়।
পুরুষ শব্দে হয় না বিভেদ,
মানুষ তারাও লিঙ্গভেদী।
মন- মননের শিক্ষা নিয়ে,
ঋজু মেরুদণ্ডে দাঁড়ায় যদি।
আদম ইভের সময় থেকেই
প্রকৃতি নারী, প্রেম যে পুরুষ।
বর্বরতার দুর্বিপাকে ঘোরে যারা
তাদের মাঝে বাঁচে কি পুরুষ?
পুরুষ চেনো চওড়া কাঁধে,
স্নেহে, প্রেমে, বলিষ্ঠতায়।
সমানাধিকার, দিবস পালন,
আছে, রবে, হিসেবের খাতায়।
নিত্য দিনের রোজনামচায়
তোমায় আমায় মিলেই যে ঘর,
বিশ্বাস- ভরসার নিঃশ্বাসেতে,
এসো মানবিকতায় রাখি ভর।।
সুমিতা চৌধুরী | Sumita Choudhury
Teachers day in honor of teachers | শিক্ষকদের সম্মানে শিক্ষক দিবস
Traditional Seth Family Durga Puja | চন্দননগরের ঐতিহ্যবাহী হরিহর শেঠ পরিবারের দুর্গাপূজা
Tebhaga Movement | বাংলায় “তেভাগা আন্দোলন” এবং সলিল চৌধুরীর গণসঙ্গী
History of Bengali Poetry | কবিতা কি ও কেন এবং তার ইতিহাস
bee poem | poem about self love | story poem | poetry angel | narrative poetry examples | poetry reading near me | prose poetry examples | elegy poem | poetry reading | the tradition jericho brown | poetry websites | protest poetry | prayer poem | emotional poetry | spoken word poetry | poem about god | percy shelley poems | jane hirshfield | spiritual poems | graveyard poets | chapbook | poems about life | poems to read | found poem examples | poems about life and love | elizabeth bishop poems | poems about women | sister poems that make you cry | famous quotes from literature and poetry | mothers day poems from daughter | poem about community | 8 line poem | inspirational poetry quotes | poem about life journey | positive poems | short poem about life struggles | toni morrison poems | good bones poem | google poem | funny poems for adults | inspirational poems about life | friendship poem in english | paul laurence dunbar poems | freedom poem | sad poetry about life | Shabdoweep Founder | New updated bengali Poetry | Trending bengali poetry | Long bengali poetry 2023 | old bengali poetry pdf book