New Bengali Poetry 2023 | সুমিতা চৌধুরী | কবিতাগুচ্ছ

Sharing Is Caring:

বিসর্জন থেকে বিজয়ায় – সুমিতা চৌধুরী

মায়ের হয় না বিসর্জন কখনোই,
তিনি থাকেন জড়িয়ে দৈনন্দিন যাপনে আমাদের অন্তরাত্মায়।
তবু প্রথাগত ভাবে নিরঞ্জন করি প্রতিমাকে,
আবার মিলনমেলার উৎসবের আবাহনের অপেক্ষায়।

এসো এই বিসর্জনের প্রথায় করি বিসর্জন চিরতরে সকল কালিমার,
বিসর্জিত হোক মনের দম্ভ, অহমিকা, আমিত্বের বিজ্ঞাপন।
বিসর্জন হোক সমাজের যতো কুপ্রথা, অনাচার, দুরাচার, পাপাচার,
চিরতরে বিভেদ-বিদ্বেষ-দ্বন্দ্ব-ঘৃণা ভেদাভেদের হোক বিসর্জন।

বিজয়ার ডালিতে থাকুক সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য, প্রেম, সাম্যতা,
বিজয়ায় আশীষধন্য হোক মন-মননের শিক্ষা, বিকাশ, প্রগতি, সৃষ্টি-সৃজন।
বিজয়ায় বিজিত হোক যতো শুভবুদ্ধি, সকল শুভশক্তি, আপন মহিমায়,
শ্রীবৃদ্ধি হোক প্রতি ঘরে, প্রতি স্তরে, মানব সভ্যতার পরিকাঠামোয়, এই বিজয়ায় অনুক্ষণ।

দিই হিংসা, হানাহানি, সকল ব্যভিচারকে আজ বলি দশহরার বেদিতে,
দহন করি মনের অসুরের কলুষতাকে, আপন লক্ষ্যভেদী তীরের ফলায়।
এভাবেই বারবার, প্রতিবার, বিসর্জন দিই ধর্মের নামে কলুষিত সকল অধর্মকে,
বিজয়ায় বরি, মানবিকতায় উর্বর মান-হুঁশের মানব জীবনকে, মনের অভ্যর্থনায়।।

দীপাবলি – সুমিতা চৌধুরী

অন্ধকারকে নাশো মা,
আলোয় ভুবন ভরো।
মনের কালিমা মুছে দিয়ে,
প্রেমালোকে জীবন গড়ো।
রাতের আঁধারও সুন্দর হয়,
তোমার দীপালোকে।
যেমন তুমি সুন্দর মা-গো
তোমার মনালোকে।
পাপের দনুজ দলন করো,
তোমার রুদ্র সংহারে।
অমানিশাও দূর হয় যেমন,
ভোরের উজ্জ্বল রবি করে।
কলির যতো পাপাচার,
বিভেদ, বিদ্বেষ, দহন, নাশ,
তোমার দীপের উজ্জ্বল শিখায়,
তাদের তুমি করো বিনাশ।
ভালোবাসার সুতোর ডোরে
সকলকে রাখো বেঁধে,
সবার মাঝে মানবতা বোধ
উঠুক আবার জেগে।
তোমরা দীপের শিখায় যেন
দূর হয় সকল অন্ধকার,
দীপাবলি তখনই সার্থক হবে,
দূর হবে যবে মনের সকল আঁধার।।

মনের প্রদীপ জ্বালো – সুমিতা চৌধুরী

আলোর সাজে ভাসছে আজ সারা শহর,
তবু ইটের পাঁজরে শোনা যায় কান্নার রব!
যা কিছু জৌলুস তবে সবই কি ফানুস?
আলোক মালায় সেজেছে কি নগরের শরীরী শব!
সবটা জুড়ে যেন নেমেছে এক নিশ্ছিদ্র নীরবতা,
ঢাকের বাদ্যিতেও যার ঘোচে না এতোটুকু রেশ!
কাদের যেন বুকফাটা আর্তনাদ মিশেছে বাতাসে,
উৎসবের মাঝেও যেন প্রাণের নেইকো লেশ!
প্রদীপের নীচের আঁধারটা আজ বাড়িয়েছে তার পরিধি,
আলোর ব্যাপ্তিও করতে পারছে না তাকে পার!
আসলে কি তবে এ সকল মনের আঁধারেরই মিছিল?
যা সকল সৃষ্টি, মননশীলতাকে করছে আজ ছারখার?
পার হোক এ নিকষ কালো আঁধার,
পার হোক এই বিভীষিকাময় রাত,
জেগে উঠুক ফের সবাকার মনের প্রদীপ,
কাটিয়ে আপন অমানবতার অভিসম্পাত।।

রংমশালের জ্যোতি – সুমিতা চৌধুরী

রংমশালের আলোর ছটায়,
হয় যেন দিগন্ত আলোকিত।
আলোর এই ঝর্ণা ধারায়,
সব কালো হোক আলোয় উদ্ভাসিত।

পথের ধারের ঝুপড়িগুলো,
পাক একটু আলোর উষ্ণতা।
শ্যাওলা ধরা মনের দেওয়ালে,
আলোর ঝর্ণা আনুক সজীবতা।

লোনা জলের চোখের কোলে,
আলোর বন্যা ছড়াক খুশির দ্যুতি।
নিকষ কালো আঁধার সরাক,
হাজার রঙের রংমশালের জ্যোতি।

রং দিয়ে তার মশাল জ্বালুক,
আগামীকে লক্ষ্য পথে করতে আগুয়ান।
বলিষ্ঠ প্রত্যয়েরই প্রতিজ্ঞাতে,
সকল হৃদয়ে গড়ুক আলোর অধিষ্ঠান।

চেতনায় দিক আলোর পরশ,
রং ছড়িয়ে মননের আকাশে।
জীর্ণ জরা ঘুচিয়ে দিয়ে,
সৃজনের আলো প্রতিফলিত হোক মন-ক্যানভাসে।

দীপাবলির আলোকমালায়
সাজবে যখন পল্লী শহর গাঁ,
রংমশালও আপন দ্যুতিতে,
সমাজ মাঝে ফেরাক আলোর চেতনা।।

শুভেচ্ছা বার্তা – সুমিতা চৌধুরী

শুভেচ্ছার আলোয় উদ্ভাসিত হোক জীবনের চলার পথ,
দিন-ক্ষণের গণ্ডি ছেড়ে সে আলোক বর্ষিত হোক সদাই।
সে আলোতে যাক মুছে যা কিছু অশুভ আঁধার,
সে আলোক ধারায় বানভাসি হোক সকল হৃদয়।
এসো শুভেচ্ছা কুড়াই মোদের চলার পথে,
বাড়ুক হার্দিক উষ্ণতা সাক্ষাতে-অসাক্ষাতে।
জ্বলে উঠুক একে একে মনের প্রদীপগুলি,
আলোকিত হোক তমসার ঘনঘোরে ঢাকা মনের অলিগলি।
মনের ঘরে উদযাপিত হোক না সদাই দীপাবলি,
প্রতিটি মনের তার বাঁধা থাকুক একই সূত্রে।
সেই সূত্র ধরেই সাজুক এক অখণ্ডিত দীপমালা,
যাতে অখণ্ড দিয়া জ্বলুক শুধুই মনুষ্যত্বের শর্তে।
প্রতিটি দিনের প্রতি মুহূর্তের শুভেচ্ছা বার্তায় চলো এই কথাই বলি,
আপন অন্তরে যেন মোরা মানবিকতার দীপ জ্বালি।
এক দীপ থেকে আরেক দীপে ছড়িয়ে পড়ুক আলো, ভালোবাসার তাপ,
এভাবেই যেন রেখে যেতে পারি এ ধরায়, মানব হিসেবে জীব-শ্রেষ্ঠ হওয়ার ছাপ।।

মনঘরের মেঘ-বৃষ্টি – সুমিতা চৌধুরী

মনের মাঝে জমা মেঘের চাদর,
স্তরে স্তরে ব্যথার বাষ্প ধরে।
যখন বাঁধ ভেঙে দুকূল ছাপায়,
তখনই তো বৃষ্টি হয়ে ঝরে।

গুমড়ে মরা বোবা কথাগুলো,
নোনা জলের সাথেই বয়ে যায়।
ভাঙা হালে একাকী বৈঠা বাওয়া,
ঝড়ের রাতে সত্যিই বড়ো দায়।

তবু চোখের জলে মনের জমি সিঁচে,
আলগা ওঠা রোদকে মাখি ঠোঁটে।
সবাই খোঁজে রামধনু রঙের ছটা,
উজানে সওয়ার জীবন নদীর তটে।

আমার ফুটো ডিঙিটাই করি নোঙর,
সবার অলক্ষ্যে একাকী নিরালা ঘাটে।
নীল ব্যথার যতো উষ্ণ প্রসবণ,
বিকিয়ে ফিরি নীল নদীর জলের হাটে।।

জীবনমুখী গান – সুমিতা চৌধুরী

দিন পরিক্রমা সেরে সূর্য যাচ্ছে পাটে,
শেষ বেলার সোনা রঙ ছড়িয়ে।
আশ্বাস দিচ্ছে তার পুনরাগমনের,
এ ধরাকে আপন ভালোবাসার আলিঙ্গনে জড়িয়ে।

দিনান্তে পথিক ফিরতি পথে,
থেমেছে ক্ষণিকের তরে।
দেখছে অস্তরাগের ছবি,
নিরালায় একাকী প্রাণভরে।

জাগতে তাকেও হবে, ফিরতে হবে পথে,
নতুন দিনকে সাথে নিয়ে।
বাঁচার আশ্বাসে, জীবন সংগ্রামে,
এগোতে হবে সকল বাধা পেরিয়ে।

এভাবেই কালচক্র ঘুরছে অবিরত,
উদয়-অস্ত,গমনাগমনের হাত ধরে।
রবি, শশী সবই পথিক এই জগতের,
কর্মজীবন করছে পালন জীবনমুখী গান করে।।

আজকের নিখিলেশরা – সুমিতা চৌধুরী

কত শত নিখিলেশ খুঁজে চলে
জীবনের ঠিকানা,
কোলাহলহীন একাকী রাস্তায়
ক্লান্ত দেহ- মনে।

মধুরাতের জ্যোৎস্না স্নান শেষে
ফিরে যায় সঙ্গী সকলই,
পড়ে থাকে নিকষ কালো রাত,
রুক্ষ পাথুরে জমির পায়ে পায়ে।

কুয়াশার পুরু চাদর ঘিরে ধরে
ভোরের অরুণ আভা,
শীতার্ত মন হাতড়ে বেড়ায়
একটু আলো, একটু উষ্ণতা, সকালের কাছে।

কুয়াশার আবরণ ভেদে
মিষ্টি সকাল আসে না রোদের আলিঙ্গনে!
হঠাৎই খর তাপ নিয়ে এসে দাঁড়ায় চাতক দুপুর,
সবটুকু হাহাকারের তৃষ্ণায় আকণ্ঠ ডুবিয়ে।

সৃষ্টি করে মরীচিকার ভ্রম,
যেখানে খোয়া যায় চোখের তারার সব স্বপ্ন।
শুধু মন জুড়ে পড়ে থাকে
অগুনতি প্রশ্ন তীক্ষ্ণ ফলার মতো।

আপন প্রশ্নবাণে আপনি বিদ্ধ হয়
নিখিলেশরা আজ অহরহ,
এভাবেই ডুবে যায় কালের প্রহরে ক্রমান্বয়ে,
পড়ে থাকে এক জীবন্ত লাশ, আপন শব বওয়ার জন্য জীবনের রাস্তায়।।

নীরবতা – সুমিতা চৌধুরী

নিশ্ছিদ্র অন্ধকারে নিস্তব্ধতার মাঝে
আজ নীরবতা বড্ড জোরালো ।
তার হাজার অভিমান- অভিযোগের
হিসাব-নিকাশ নিয়ে এসেছে সে।
কিছুতেই থামাতে পারছি না আজ তাকে,
হাজার মিথ্যে স্তুতি, মন ভোলানো প্রতিশ্রুতিতেও
ভুলছে না সে আজ।
না সে কাঁদছে না,কথার হাতুড়ি পিটছে।
সারা জীবনের সব বোঝাপড়া যেন আজই করবে সে।
এতো কাটাছেঁড়া, এতো খননের মাঝে
দগদগে ঘা বেরিয়ে পড়ছে ।
কোনো কাপড়েই ঢাকছে না তা।
একদিকে ক্ষত ঢাকার চেষ্টায়,আরেকদিক উলঙ্গ হয়ে যাচ্ছে ।
নীরবতা যে এতো জোরালো চাবুক কষায়
বুঝিনি আগে ।
আজ মনে হচ্ছে এর থেকে কোলাহল ভালো ।
বা আর্তনাদ, হ্যাঁ, তাও ভালো ।
চোখের জল,হ্যাঁ, তাও। তারাও সঙ্গ দেয়।
কিন্তু নীরবতা শুধু মুহুর্মুহু চাবুক কষায় ।
সঙ্গ সেও দেয় যদিও,
তবে দগদগে ক্ষত থেকে রক্তক্ষরণের পর
সেই ক্ষতটা চিন্তিত করে বলে,” এটাই তুই “
” ওপরের খোলোসটা নয়”।।

বিমুখ পাঠককুল – সুমিতা চৌধুরী

লেখা ভরা পাতা পড়ে থাকে অবহেলে,
ধুলোর পরত জমে স্তরে স্তরে,
তবু কারো মন টানে না অক্ষরগুলো,
ইচ্ছে বা অবকাশ নেই কোনোটাই যেন, বিমুখী পাঠককুলের!

বইমেলায় অগুনতি মানুষের ভিড়ে,
খাদ্য বিলাসী, গল্প বিলাসীদেরই পোয়াবারো আজ।
কিছু রঙিন মলাটের ছবি উলটে পালটে দেখে কতক জনা,
ভিতরের শব্দমালার কথার অনুভূতিগুলো পড়ে থাকে বোবা হয়েই!

তবু কিছু বই হয় হাতবদল,
যার বেশিরভাগই শোভা বর্ধন করে কারো আভিজাত্য বোধের আলমিরায়।
মনঘর পায় না তার নাগাল,
মাতে না নতুন বইয়ের গন্ধতে!

তারই মধ্যে কিছু বই, কিছু শব্দবন্ধ, নেশা ধরায়,
লালায়িত করে বরিষ্ঠ সংখ্যক পাঠককে নিষিদ্ধতার হাতছানিতে।
সত্য- মিথ্যা বাছবিচারের অবকাশহীন, অসুস্থতার টানে।
মুনাফা লোটে কিছু সাহিত্য ব্যবসায়ী!

তাই কি সাহিত্য আজ পণ্য?
লেখককেই পড়তে হয় আপন লেখা, আপন কড়ির বিনিময়ে!
নেই কদর, নেই সম্মান, নেই সম্মাননা প্রকৃত স্বীকৃতির!
আজ কাগজ- কলম বিকায় রদ্দির দরে!

তবুও তোমার আমার মতো কিছু কলমপ্রেমী লিখে চলে অবিরত,
মনের কোণে আশার বাতি জ্বেলে।
একদিন পাঠকসমাজ ধুলো ঝেড়ে তুলে নেবে হাতে তাঁদের সৃষ্টিকে,
বুক ভরে শ্বাস নেবে নতুন বইয়ের ঘ্রাণ, অক্ষরগুলো পাবে প্রাণ আবার তাঁদের স্পর্শে।।

BENGALI POETRY

আমি দ্রৌপদী – সুমিতা চৌধুরী [Bengali Poetry]

আমি দ্রুপদ রাজার কন্যা দ্রৌপদী,
আমি এক অনন্যা সুন্দরী,
সবার মুখে শুনি, আমার মতো সুন্দরী নেই কোনো নারী।
তবু কেন বলতে পারো,
আমার প্রেম বারংবার আমায় ছেড়ে বহুগামী?
আমি যাজ্ঞসেনী,
যজ্ঞের আগুনে জন্ম আমার,
তাই বুঝি এতো তেজস্বিনী, প্রতিবাদীনী, স্পষ্টবাদিনী।
কিন্তু, যবে আমার প্রেমিক পুরুষ স্বয়ম্বরসভায় লক্ষ্যভেদে জয় করলো আমায়,
বরণ করার আগেই শ্বশ্রুমাতা বাঁটলো যখন তাঁর সকল পুত্রের ভিতর,
তখন কই প্রতিবাদ করলাম আমি?
কোথায় হারালাম নিজের সেই তেজস্বীতা রূপ?
কোথায় হারালাম আপন স্পষ্টবাদী স্বরের কাঠিন্য?
হয়ে গেলাম পরবশতার স্বীকার সেই ক্ষণ থেকে আজীবনের!
সবাই বলে আমায় অসহিষ্ণু, তেজস্বিনী,
যেদিন দ্যূতক্রীড়ার ভরা সভায় হচ্ছিল আমার নারীত্বের চরমতম অপমান,
সেদিন আমার থেকে সহ্যশক্তি ধারণ করতে পেরেছিল কি এ ধরিত্রী মাও?
সবাই বলে আমায় এই অখণ্ড ভারতভূমির সম্রাজ্ঞী,
সম্রাট যুধিষ্ঠিরের পার্শ্বে উপবেশন করেছিলাম রাজসূয় যজ্ঞে।
কিন্তু আমার মনের খবর কে রাখে?
হতে চাইনি আমি সম্রাজ্ঞী,
হতে চেয়েছিলাম আমি শুধুই তৃতীয় পাণ্ডবের প্রেয়সী, এক সুখী ঘরণী।
যে রাজা নিজেই আপনাকে রক্ষার ক্ষমতাধিকারী নন,
যে রাজা সামান্য দ্যূতক্রীড়ার পরবশ পদানত হয়ে আপন সমগ্র রাজত্ব হারিয়ে হন কপর্দকহীন,
তারপরও তাঁর নেশার অনল বাঁধ মানে না,
একে একে বাজি রাখেন আপন ভাইদেরও,
এবং সর্বোপরি আপন স্ত্রীয়ের মান-মর্যাদার কথা সম্পূর্ণরূপে বিস্মৃত হয়ে আমাকেও করেন সেই দ্যূতক্রীড়ায় সামিল, বাজির বোড়ে করে,
তাঁর গর্বে অহংকারী হওয়ার সত্যিই কি কিছু রয় অবশিষ্ট?
আমার নাকি পঞ্চস্বামী,
তাই বহুপতিত্বে স্মরণ করা হয় আমায় আজও!
কেউ কি জানতে চেয়েছে কখনো,
একটি নারীর এমন জীবন আদৌ তার কাঙ্ক্ষিত কিনা?
কি বিভীষিকাময় হয় তার এই নরক জীবন।
যে প্রতিমাসে এক এক জনের শুধুই ভোগ্যা,
তার ভালো- মন্দ, সুখ- অসুখের নেই কোনো দাম কারো কাছেই!
আমি ধর্মপরায়ণা,
হায়রে ধর্ম, সে তো আমার প্রতি পদের শৃঙ্খল শুধুই।
যা আষ্টেপৃষ্টে করেছে আমায় চিরবন্দিনী, আমারই অবাঞ্ছিত জীবনে।
আমাকে ভোগের লালসায় মত্ত হয়ে হয়েছিল সেই বিধ্বংসী কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ,
সবাই বলে, আমার প্রতিশোধের অনলে ছারখার হয়েছিল কৌরবকূল।
সত্যিই কি তাই?
বলো সখা কৃষ্ণ, বারেক সত্যবাণী।
সবাই আমাকে শিখণ্ডী করে খেলে নি কি দাবা,
আপন আপন স্বার্থ চরিতার্থে?
তাই তো শূন্য হলো আমার কোল,
উজাড় হলাম আমি, আপন পঞ্চপুত্র শোকে।
তবুও ছত্রিশ বছর করতে হলো আমায় এ ধরায় বাস,
রিক্ত শূন্য হয়েও সম্রাজ্ঞী রূপে!
আমার সতীত্বের করা হয় বড়াই,
লোকে করে ধন্য ধন্য।
হে পুরুষ সমাজ, আর কতদিন দ্রৌপদীর আড়ালে সব নারীকেই করবে তোমাদের ভোগের সামগ্রী?
তাদের শিখণ্ডী করে সাজাবে আপন স্বার্থের পাশার দান?
তাই তো, মহাপ্রস্থানের পথে রইলাম পড়ে আমি একাকী, হিমালয়ের কোলে চরম অবহেলে।
আমার প্রিয়ও ক্ষণিকের তরে থামলো না, চাইলো না ফিরে,
আমি দ্রৌপদী, চির অসহায়, চির অভাগিনী, এক নারীর প্রতিমূর্তি।।

বেতাজ “তাজমহল” – সুমিতা চৌধুরী

শ্বেতশুভ্র মর্মর তাজমহল,
সৃষ্টি থেকে শোনায় আপন প্রেমগাথা।
এক পরমাসুন্দরী নারীর প্রেমে অন্ধ
এক মুঘল সম্রাটের মনের আকুতি।
যমুনা দিয়ে বইতে পারেনি যদিও খুব বেশী কালপ্রবাহ,
মাত্র উনিশটি বসন্ত দেখেছিল সেই প্রেম।
অতি সত্ত্বর চোদ্দতম সন্তান প্রসবের সময়ই,
মরণ লিখে যায় আপন সাক্ষর।
প্রিয়া বিহনে সপ্তাহকাল উপবাসী সম্রাট,
বহির্জগতে যখন এলেন তখন যেন বৃদ্ধ দেহে, মনে।
হঠাৎই পেলেন খবর এক ভাস্কর বানিয়েছে অপরূপ ভাস্কর্য,
আপন স্ত্রীকে প্রেমের উপহার স্বরূপ।
তৎক্ষণাৎ জরুরি তলবে ডেকে পাঠিয়ে দেখলেন তা মুগ্ধ নয়নে,
মনে হলো, এই রচনা হবে শুধুই তাঁর প্রিয়ার স্মৃতিসৌধের রূপ।
ফেরা হলো না সে ভাস্করের আর,
তাঁরই তত্ত্বাবধানে নিযুক্ত হলো বিশ হাজার শ্রমিক,
রচিত হলো পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম এক নজির তাজমহল,
তাঁরই দেওয়া প্রেমের উপহার স্বরূপ আপন স্ত্রী তথা মুমতাজ মহলের স্মৃতিতে।
চির অদ্বিতীয় থাকতে বলি গেল সেই বিশ হাজার শ্রমিকের হাত,
বলি গেল সেই ঈশা মোহাম্মদ নামক ভাস্করের চোখ।
লেখা রইল অনুচ্চারে তাজমহলের প্রতি প্রস্তরে প্রেমের বেতাজ বাদশা শাহজাহানের অমর কীর্তি,
তাঁর প্রিয়ার স্মৃতিতে রচিত আপন মনের অঞ্জলিতে।
তবু কি কোথাও ধ্বনিত হয় না কিছু গুমড়ে ওঠা ক্রন্দন?
কিছু বুকফাটা আর্তনাদ?
তাজমহল চাঁদনি রাতে কখনো কি গলায় না আপন ব্যথা, রূপালী লাভায়?
কখনো কি জানায় না আর্তি, স্মৃতি হয়ে নয়, আরজুমান্দ বেগম বাঁচতে চেয়েছিল প্রেমে- অপ্রেমে, খুররমের চিরসাথী হয়ে।।

উজ্জ্বল রাত কথা – সুমিতা চৌধুরী

কিছু রাত দিনের থেকেও উজ্জ্বল হয়,
আপন গরিমায়, আপন মহিমায়।
কিছু রাত স্বপ্নের আকাশে পাড়ি জমায়,
এক নব সূচনার গল্প শোনায়।

মঞ্চ ভাসে পাদপ্রদীপের আলোয়,
মুহুর্মুহু করতালিতে মুখরিত হয় সভা।
কেউ অতি সাধারণ থেকে উঠে আসে উচ্চতায়,
তার চোখে- মুখে ছড়িয়ে পড়ে হীরক দ্যুতির প্রভা।

কোথাও যেন বেসুরো আলাপে সুর জমে ওঠে,
ক্ষণিকেই তাতে সাতসুরের মূর্ছনা ধরা দেয়।
শূন্য আসনে কত- শত শ্রোতা এসে জোটে,
ভরে দেয় তাদের আবেগে, উচ্ছ্বাসে, ভালোবাসায়।

শেষ বলে কিছু শেষ নেই জেনো,
শেষের সে পথ হদিশ দেয় আগামীর।
প্রাণের স্পন্দন হারায় না কখনো,
ছন্দ পতনের ধাপ পেরিয়ে ছন্দে ফেরাই যে সবচেয়ে দামি।

এমনই কিছু রাতের গল্প লেখা থাকে কালের জমিতে,
ইতিহাস বহন করে তা সদর্পে, স্বর্ণাক্ষরে।
সেইসব রাত হাসে আপন জ্যোৎস্নালোকে, বিজয় গীতে,
কালজয়ী সেইসব রাত কথা লেখা থাকে অনুভূতির আখরে।।

মেঘের পরে চাঁদের উঁকি – সুমিতা চৌধুরী

মনের আকাশে পাড়ি জমিয়েছে কিছু অভিমানী মেঘ,
বাষ্পাচ্ছন্ন স্যাঁতসেঁতে তাই মনঘর।
কোথায় যেন গিয়েছে চুরি খুশির পালকগুলো,
ভীষণ আপন কেউ হয়েছে বুঝি পর।

টুপটাপ ঝরছে কিছু নীল ব্যথার বৃষ্টি,
চুপচাপ স্মৃতি হাতড়ে আলগোছে।
কিছু অক্ষর যাচ্ছে মিটে গল্প কথার,
কে যেন অদৃশ্য হাতে জীবনের রং মোছে।

তবু অপেক্ষা একফালি চাঁদের,
মেঘের ফাঁক গলে একটু পেলব জ্যোৎস্নার,
সুখ সারির ডানায় ফুটে ওঠা কল্পকথার,
চোখের ঝিলে ভাসমান প্রতিকৃতি সুখী ঘরকন্নার।

তাই কি, মেঘের পরে চাঁদের উঁকি,
চোখের কোলে বন্যা?
বুক ছাপানো বাণের তোড়ে,
বইবে কি ফের খুশির ঝর্ণা?

নির্বাসনে যাবে কি ঐ সব
অভিমানী মেঘের দল?
উঠবে কি ফের সোহাগী রোদের
আহ্লাদী হাসি ঝলমল?

মন মাঝি গুনছে অপেক্ষার প্রহর,
উজানে বাইতে নাও, এক সুখ দরিয়ায়।
ময়ূরপঙ্খী ভিড়িয়ে দেবে রূপকথারই দেশে,
ভেজাতে মনজমিটার দুকূল, সফেন জ্যোৎস্নায়।।

“পুরুষ”- “পুরুষ?” – সুমিতা চৌধুরী

একলা রাতে হায়না বেশে
একটা পুরুষ শিকার করে,
একটা পুরুষ বুকের ওমে
আগলে সেসব ক্ষত ভরে।

একটা পুরুষ তিন তালাকে
নারীকে বেচে খোলা হাটে,
একটা পুরুষ শক্ত মুঠোয়
হাতটা নিয়ে সমান্তরাল পথটা হাঁটে।

একটা পুরুষ অহংকারে
যে নারীদের পণ্য ভাবে,
একটা পুরুষ তাদের নিয়েই
স্বপ্নে পাড়ি দেয় এই ভবে।

এক পুরুষের নীরবতায়
দহন আঁচে জ্বলে সীতা,
আরেক পুরুষের মনের মাঝে
সকল কন্যাই যে তাঁর রাজদুহিতা।

কোনো পুরুষ বেআব্রু করে
নারীকে যখন ভরা সভায়,
তখনই কোনো পুরুষ সসম্ভ্রমে
লাজ রেখে তার বচন নেভায়।

পুরুষ শব্দে হয় না বিভেদ,
মানুষ তারাও লিঙ্গভেদী।
মন- মননের শিক্ষা নিয়ে,
ঋজু মেরুদণ্ডে দাঁড়ায় যদি।

আদম ইভের সময় থেকেই
প্রকৃতি নারী, প্রেম যে পুরুষ।
বর্বরতার দুর্বিপাকে ঘোরে যারা
তাদের মাঝে বাঁচে কি পুরুষ?

পুরুষ চেনো চওড়া কাঁধে,
স্নেহে, প্রেমে, বলিষ্ঠতায়।
সমানাধিকার, দিবস পালন,
আছে, রবে, হিসেবের খাতায়।

নিত্য দিনের রোজনামচায়
তোমায় আমায় মিলেই যে ঘর,
বিশ্বাস- ভরসার নিঃশ্বাসেতে,
এসো মানবিকতায় রাখি ভর।।

সুমিতা চৌধুরী | Sumita Choudhury

Teachers day in honor of teachers | শিক্ষকদের সম্মানে শিক্ষক দিবস

Traditional Seth Family Durga Puja | চন্দননগরের ঐতিহ্যবাহী হরিহর শেঠ পরিবারের দুর্গাপূজা

Tebhaga Movement | বাংলায় “তেভাগা আন্দোলন” এবং সলিল চৌধুরীর গণসঙ্গী

History of Bengali Poetry | কবিতা কি ও কেন এবং তার ইতিহাস

bee poem | poem about self love | story poem | bengali poetry angel | narrative bengali poetry examples | poetry reading near me | prose poetry examples | elegy poem | bengali poetry reading | the tradition jericho brown | bengali poetry websites | protest poetry | prayer poem | emotional bengali poetry | spoken word bengali poetry | poem about god | percy shelley poems | jane hirshfield | spiritual poems | graveyard poets | chapbook | poems about life | poems to read | found poem examples | poems about life and love | elizabeth bishop poems | poems about women | sister poems that make you cry | famous quotes from literature and poetry | mothers day poems from daughter | poem about community | 8 line poem | inspirational poetry quotes | poem about life journey | positive poems | short poem about life struggles | toni morrison poems | good bones poem | google poem | funny poems for adults | inspirational poems about life | friendship poem in english | paul laurence dunbar poems | freedom poem | sad poetry about life | Shabdoweep Founder | New updated bengali Poetry | Trending bengali poetry | Long bengali poetry 2023 | old bengali poetry pdf book | New Bengali Poetry Collection | Bengali Poetry 2023 | Bengali Poetry in pdf | Full collection Bengali Poetry | Audio Bengali Poetry | Bengali Poetry Library |

Leave a Comment