New Bengali Poetry 2023 | কবিতাগুচ্ছ | যুবক অনার্য

Sharing Is Caring:
BENGALI POETRY

রাষ্ট্র – যুবক অনার্য [Bengali Poetry]

এসো মাতাল হয়ে খুব হাসি খুব মাতলামি করি
বাতাবি নেবুর গন্ধে আসে না ঘুম – আমি কি সেই কবি!
আমি যে কিনা আত্মহত্যা করতে গিয়ে
ফিরে এসেছিলাম খুব জলতেষ্টা পেয়েছিলো বোলে
যে কিনা আত্মহত্যা করতে গিয়ে ফিরে এসেছিলাম
প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেবো বোলে
যে কিনা নারীকে ভালোবাসতে গিয়ে
দেখতে পেয়েছিলো আজকাল নারীরা
খুব বেশি রমণীয় নয়
যে কিনা অকবিকে কবি করে তুলতে গিয়ে
বুঝে গিয়েছিলো মূর্খকে ভালোবাসা অপরাধ
যে কিনা অমুক তমুক- আদতে কিছু নয়
আমি এমন বোলেই আমি এমন নই বোলেই
কবিতাকে নারীর চেয়ে বেশি ভালোবেসে দেখি
কবিতা বা নারী কেউই আমাকে গ্রহণ করতে পারেনি-
পারে নি কারণ আমি আসলে দাহ্য পদার্থের মতো জ্বলতে পারি বরাবর নিজেকে বিনয়ী রকমের কেউ
ক’রে রেখে দিয়েছি আত্ম অহম ঘৃণা করি বোলে
আমি আসলে বুঝতেই পারি নি কবিতা ও নারী
দুটি প্রসঙ্গই অহমকেন্দ্রিক আরাধনা
এসব এখন আর প্রাসঙ্গিক নয়
যেহেতু কবি হওয়া হলো না আমার
এখন তাই বাতাবি নেবুর গন্ধে আমার
ঘুম এসে পড়ে খুব আর বোলে রাখা ভালো
কবিতার সংগে মদ্যপানের কোনো সম্পর্ক নেই
আমি কোনোদিন মাতাল হতে পারিনি বোলে
একসময় যে হতাশা ছিলো আজ সেটাও নেই
নেই বোলেই কি আমি কবি নই!
নাইবা হলাম কিইবা এসে যায়
এসে যায় না কিছুই তো যায় না এসে
যায় না যেহেতু আমার ও আমাদের কোনো কিছুতেই এই রাষ্ট্রের কিছুই এসে যায় না
এসে যায় না আমরা যদি হয়ে যাই পুনরায় রাষ্ট্রবিহীন
তবু্ও এ রাষ্ট্রের কিছুই তো যায় না এসে!

হে রাষ্ট্র একজন দান্তেকে তুমি বড়োজোর নির্বাসন দিতে পেরেছো, পারোনি জন্ম দিতে।

অনন্ত অন্তহীনতা – যুবক অনার্য [Bengali Poetry]

মাভৈ মাভৈ রবে কেউ কি আসে
যে আসে সে কি জানে ঈশ্বরের পা নেই তবু সে হাঁটে আর যে আসে তার ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই কিন্তু সেই
পা-কে অনস্বীকার্য ভাবে
এ কেমন গণিত
হে অই লোক যে আগাম গিয়েছে জেনে -তাবৎ রহস্যের মধ্যেও এক রহস্যহীনতা আছে
তবে এই বেলা সহজ কথার মাঝে যাই
আমি যাই আমার সংগে হেঁটে চলে পূর্বজন্ম আমার
যা প্রমাণসাপেক্ষ এক পুরনো বিতর্কের অবসান
না ঘটিয়ে অহি-নকুল সম্পর্কের মধ্যে বেঁচে থাকে
আরো একবার ভাবনাহীন মানুষের কথা জেনে
ভাবনা তো খুব বেজে ওঠে
পঞ্চগাঁয়ের সেই মাঝি, তারও এক নিজস্ব ঈশ্বর
সাথে নিয়ে এলো – যে ঈশ্বরের চোখ নেই তবু সে দেখতে পারে
তবে ঈশ্বর এবং শরীর ও অশরীরী অনুধ্যান কবিতায়
প্রাচীন হয়ে গেছে
তাই নিমগ্ন থেকে ধ্যান হলো না আজ বরং
পদ্মাপারমিতার মুখ ভেসে ওঠে
ঈশ্বর শরীর অশরীর সব গুলিয়ে গিয়ে
হ- য- ব- র- ল হয়ে আছে
দ্যাখো না হে আদিম যন্ত্রণা
মানুষে মানুষে কতো কলরব
সাদা কালো আর কতো কিছু
যে জন ঈশ্বরে ভর করে আছে মনে হলো
যেহেতু মনে করালো সে
তার কাঁধে শয়তান ভর করে আছে- কাজকামে
এইরূপ প্রদর্শিত হলো
হলো, যেহেতু মাভৈ মাভৈ করে আসে যারা
তাহাদের জানা নেই
ঈশ্বরের কাছে এক অনন্ত অন্তহীনতা আছে
যে মানুষ ঈশ্বরে বিশ্বাসী সে ঈশ্বর নয়, মানুষ নিয়ে বাঁচে

আমার বন্ধু সূর্যকান্ত – যুবক অনার্য [Bengali Poetry]

সূর্যকান্ত এখন সিজোফ্রেনিক প্রধান সড়ক অলিগলি হেঁটে বেড়ায় অদৃশ্য কারো সংগে কথা বলে গালি দেয় খিস্তি করে। ওর প্রিয় গালির একটি হলো- ‘শালা বাঞ্চোত গভমেন্ট’। সূর্য জড়িত ছিলো না রাজনৈতিক কোনো দলে রাষ্ট্র চিন্তাও তার মধ্যে কখনো যায়নি দেখা
তবু সে রাষ্ট্র নিয়ে চিন্তিত খুব। সূর্য প্রকৃতিস্থ নয় বলেই যে তার চিন্তা অমুলক তা কিন্তু নয়। প্রায়শ তার প্রকাশ ভঙিমা বাক্য কাঠামো ঋজু ও গঠনমূলক। মস্তিষ্কে তার যুগপৎ দুইটি ধারা প্রবহমান- সুশৃঙ্খল ও বিশৃঙ্খল। সূর্যর একটা প্রেম ছিলো খুব চোস্ত প্রেম ছিলো সূর্যকান্তর। প্রেমিকার বিয়ে হয়ে গেছে অন্য কোথাও ওর অসুস্থতা ঠিক প্রেমঘটিত নয় কেননা জরি
মানে ওর প্রেমিকার বিয়ে হয়েছিলো সূর্য অসুস্থ হবারও অনেক দিন পর।আসলে এ প্রকার অসুস্থতার কারণ প্রায়শ অজ্ঞাত থেকে যায় সূর্যের বেলায়ও তাই।
সূর্য এ সমাজের উল্লেখযোগ্য কেউ নয় সাধারণ সাদামাটা এক তরুণ বর্তমানে সিজোফ্রেনিক এবং স্বাধীন যেহেতু সে বাক্ স্বাধীনতা যাপন করতে পারে পুরোদমে কিন্তু তার এই স্বাধীনতা এ রাষ্ট্র দেয়নি তাকে দিয়েছে সিজোফ্রেনিয়া।সম্প্রতি তার অনবরত
কথা বলার অভ্যাস কমে গেছে প্রমানপরিমাণ।
এরকম নতুন তো নয়।বছরে দু’একবার হয়েই থাকে।আজ সকালে টিটুর স্টলে দেখা হলে চা খেতে খেতে
সে বলে- আমায় তুই প্রচন্ড আঘাত করে মেরে ফেল।ভয় নেই। আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিস।
রাষ্ট্র নিজেই এ প্রথার প্রবর্তক। ভয় পাসনে অবিনাশ, তুই না আমার বুজাম ফ্রেন্ড!

‘হত্যাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিস’- সূর্যের
এমন কথায় কেউ কিছুই মনে করে না।
সবাই কাষ্ঠ হেসে বলে – সূর্য সিজোফ্রেনিক।

নকল ঈশ্বরের কবিতা – যুবক অনার্য [Bengali Poetry]

বহুদিন ধরেই ভাবছি আমি কবি হবো
কিন্তু হবো কীভাবে
সময় কোথায়! আমি যে পদে আছি
সংগত কারণেই অনুল্লেখ থেকে গেলো
তবে কথাবার্তার মোচর দেখে বুঝে নেয়া সহজ হবে আমি কে বলছি
আমি সে-ই বলছি যার উপরে কেউ
কথা বলে না
রাষ্ট্রের সকল কাজের ক্ষেত্রেই যিনি লাইয়াবল
যাকে সবাই জ্বী হুজুর জ্বী হুজুর বোলে
ফেনা তুলে ফেলে
যার কাছে সকলেই নতজানু হয়ে
বড্ড প্রীত অনুভব করে
যাকে এক শ্রেণির লোক বানিয়ে রেখেছেন
তাদের ঈশ্বর!
হায় পোড়া কপাল আমার
হায় মিথ্যে অহংকার আমার
হায় মিথ্যে ক্ষমতা আমার
কী বলতে কী বলি আমি যা বলি তাইতো আইন
আমার উপরে কে আছে আর যে
বোলবে কোনো কথা!
সে-ই আমি একবার কীভাবে যেন
লিখে ফেললাম কবিতার মতো একটা কিছু
আর যায় কোথায়
সকলেই হামলে পড়লো প্রশংসায়
মনে হচ্ছে জীবন বাবুও লিখতে পারে নি কবিতা এমন যেমন লিখেছি আমি
মানুষের এসব মিথ্যে প্রশংসা আর
নতজানু হওয়া দেখে আমি মনে মনে
মিটিমিটি হাসি
আমি ক্ষমতাকে ঘৃণা করি
কারণ ক্ষমতা আমাকে লিখতে দিলো না
কবিতা কোনোদিন
আমি ক্ষমতাকে ভালোবাসি কারণ ক্ষমতা ছাড়া
আমার অন্য কিছুই আমাকে এভাবে
বানিয়ে রাখতে পারবে না মানুষের বানানো ঈশ্বর
কী অদ্ভুত! অদ্ভুত এই যে – মানুষের বানানো
সকল ঈশ্বরই খুব ভালো করেই জানেন যে
তারা কোনো ঈশ্বর নয়, যে কথা আমিও জানি
এবং অদ্ভুত যে, জেনেশুনেই আমি নকল ঈশ্বর হতে রাজি হয়ে যাই প্রতিবার!

দাদাদের গল্প – যুবক অনার্য [Bengali Poetry]

সেবার দাঙ্গা বেধে গেলো খুব।আমি তখন ষোড়শী। আমরা থাকতাম হিন্দু পাড়ায়।আশেপাশের অধিকাংশই মুসলমান পাড়া।আমি দেখতে ছিলাম যাকে বলে অপরূপা সুন্দরী। আমাদের পাড়ার দাদারা তো বটেই, মুসলমান পাড়ার দাদারাও আমাকে আদর করতো খুব।দেখা হলেই হাসি দিয়ে বোলতো – কেমন আছিস রে বুড়ি।তারপর কোলে করে নিয়ে মোড়ের দোকান থেকে কতো কিছু যে কিনে দিতো! দুর্গাপূজোর সময়ও মুসলমান দাদারা আমাদের বাড়িতে আসতো পুজো দেখতে।আমাদের বাড়ির দুর্গা মা- ই নাকি সারাটা মহকুমায় সবচেয়ে সুন্দর হতো। যেমন চোখ তেমন নাক তেমন গ্রীবা – কী যে স্বর্গীয়….।

যা বলছিলাম- দাঙ্গা তো বেধেই গেলো।হিন্দু মুসলমান তুমুল মারামারি! কিছুদিন আগেই যারা একই দোকানে একসঙ্গে বসে চা খেতো আজ তারাই দাউ লাঠি চাপাতি নিয়ে শুরু করেছে খুন খারাবি!
এরই মধ্যে মুসলমান পাড়ার কয়েকজন দাদার সঙ্গে আমার দেখা।বলল: চলরে বুড়ি একটু বেরিয়ে আসি। বললাম: কোথায়?
: তুই তো আগে এভাবে প্রশ্ন করতিস না! আজ করছিস যে?
: না,মানে চারদিকে তো শুধু মারামারি! দিনকাল খুব সুবিধের নয় গো।
: আমাদের বুড়ি দেখি সত্যিই পেকে গেছে! চল চল,তোর দাদারা থাকতে ভয় কী! কোন শালা কী করবে,একদম পেড়ে ফেলবো,দেখিস।
অগত্যা আমাকে যেতেই হলো যদিও সেদিন যেতে কেন যেন আমার মন টানছিলো না।

দাদাদের সঙ্গে হেঁটে চলেছি।কোথায় যাচ্ছি তাও বলছে না।হাঁটতে হাঁটতে একদম নির্জন একটা চকের ধারে- চারদিক জনশূন্য যেন এক বিরামহীন আর বুকঝিম নৈঃশব্দ্য!- নিস্তব্ধতার কুয়াশা ছেয়ে আছে সমস্ত এলাকা জুড়ে।
হঠাৎ এক দাদা আমাকে পাঁজা কোল করে তুলেই মাটিতে শুইয়ে দিলো।আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না – ওরকম করবার মানে কী! যে দাদারা সেই ছেলেবেলা থেকেই আমাকে এতো ভালোবাসে,তাদের মাথায় কোনো গোলমাল হলো নাকি! না তো – একদমই গোলমাল নয়।যা বুঝার আমি বুঝে গেলাম অচিরেই।ওরা কাজ সেরে চলে যাবার পর রক্তমাখা শায়া নিয়ে অনেক কষ্ট করে খুড়িয়ে খুড়িয়ে সেদিন বাড়িতে ফিরতে পেরেছিলাম।বুঝলাম- একেই বুঝি বলে দাঙ্গা যখন দাদারা আর দাদা নয়,হয়ে ওঠে হিংস্র আর ধর্মীয় জানোয়ার!

আজ এই বুড়ো বয়সে এসেও নির্ভুল বুঝতে পারি- প্রাচীন পৃথিবীটা বদলে যায় নি কিছুতেই।এখনো দাঙ্গা বেধে গেলে- ভিন্ন ধর্মের হলেই হলো- দাদারা ঠিক ঠিক তুলে নিয়ে যাবে নির্জন কোনো বিরানয়।আর তারপর রক্তমাখা শায়া খুড়িয়ে খুড়িয়ে বাড়িতে ফেরা কিংবা ফিরতে না পারা।

এবং বুঝতে পারি – যদি আমি
মুসলমান পাড়ায় থাকতাম আর আশেপাশে থাকতো হিন্দু পাড়া,সেইসব দাদারাও আমাকে নিয়ে যেতো বিরানয় আর তারপর পাঁজা কোল রক্তাক্ত শায়া খুড়িয়ে হাঁটা, ফিরতে এবং ফিরতে না পারা।এর ব্যতিক্রম হতো না কিছুতেই।

এই তো আমাদের চিরায়ত পৃথিবী যেখানে শুধু ধর্মই আছে- দাদা বোন বা মানুষ বোলে কিছুই নেই!

সুন্দরের বিরুদ্ধে হুলিয়া – যুবক অনার্য [Bengali Poetry]

এ-ই ভালো এই তবে ভালো
অচেনা লোকের মতো হেঁটে যাই
মানুষেরা ভিখিরি ভেবে পাউরুটি,
ধরিয়ে দেয় আধা পচা কলা!

বিষণ্ণ কারাগারে উদ্ধত বেশে
রমণীর মাটির কলস খুলে
পাড়াগাঁর পারুলের চাঁদের অমন মনোলোভা কল্পনায় খুলেমেলে বলি:
হে আকাশ পৃথিবী প্রিয়তম মাটি
আজ এই কারাগারে
বুনো বাঘিনীর মতো মমত্ব নিয়ে বুকে
পুরনো অন্ধকারে আমি খুনি!

যারা খুন ক’রে অকারণ রক্ত পিপাসায় তাহাদের কাছে আমি রঘু ডাকাত কিংবা বাল্মিকী রত্নাকর!
কোথাও নেই বিশ্বস্ত বাঁশঝাড়- লুকিয়ে রাখা যেতো অশক্ত অন্ধকার ;
তাই প্রাচীন পৃথিবীর ডোমঘরে
রক্তমাখা প্রেমিকের আর অপেক্ষমাণ প্রেমিকার কাছে
আজ আমি পরাজিত
তুমুল সংজ্ঞাহীন ফেরারি ছায়া
রাষ্ট্রযন্ত্রের পাতানো জনপদ ছেড়ে হুলিয়াদগ্ধ, তবু
মানুষকে ভালোবেসে সংস্কার বিরোধী
সন্তুর মতো পাপকে ফুলের কাছে
সঁপে দিয়ে এতোটা পথ একা একা;
তোমরা আমাকে তবে কি বলবে
ফিরে যেতে যেখানে ফুল নেই অস্ত্র শুধু ভাড়াটে কুকুর, যেখানে সুগন্ধি -নিবেদন নেই।
কেবলই কুৎসিত কায়েমি আরাধনা
লম্পট পুরোহিত প্রতি রাতে
অনিচ্ছুক কুমারী
ঈশ্বরেরর নামে নগ্ন করে সাঁতরে বেড়ায় শঙ্কিত ভাঁজ।
তবে কি বলবে ফিরে যেতে
যেখানে কৃত্রিম নমষ্কার – বিনিময়ে টেন্ডার হাঁকিয়ে নিয়ে যারা মাতাল, কোমর জড়িয়ে ধরে বন্ধুর নিজস্ব রমণীর অবলীলাক্রমে।
যারা জাতিসংঘের কাছে অ্যাপলিকেশন দিয়েছে রেখে বিশ্ব হত্যা দিবস পালনের
বলবে কি যেতে তাহাদের কাছে
যারা রেখেছে লুট করে পৃথিবীর সৌগন্ধ আর সুন্দরের কাঁপানো উৎসব!
পদ্মার পলিদ্বীপ ক্ষয়ে যায় কেবলই
যাদের নষ্ট পিপাসায় –
সেইখানে আমি
কেন তবে চর দখলের বাসনায় বল্লম বিধৌত আততায়ী হয়ে উঠবো রাতারাতি!

এই ভালো এ-ই তবে ভালো
অনাহারী উদর – হেঁটে বেড়াই
আটপৌরে রাতের ব্যালকনি – মানুষেরা
বেওয়ারিশ পাগল ভেবে ধরিয়ে দেয় পাউরুটি আধা পচা কলা।
শুল্কহীন জোছনার নিচে
হৃদয়ের ক্ষতে বিষ ঢেলে
নিঃসঙ্গ সড়কের সঙ্গী হয়েছি আজ
আমি ঘুমহীন ভয়হীন গুপ্ত ঘাতকের মতো!

এর চেয়ে বেশি কিছু-
মিথ্যে হুলিয়া নিয়ে ফেরারি আমার কাছে-
পৃথিবীর প্রত্যাশা খুব বেশি ক্ষীণ,
আমি তাই চিরচেনা
পরাজিত পাপীর মতন।

এ-ই তবে ভালো- এর চেয়ে বেশি হলে
নিভে যাবে পাপের অহং!

একটি মগডালের ভেঙে পড়বার কবিতা – যুবক অনার্য [Bengali Poetry]

কতবার বলেছি ওখান থেকে সরে আয়। তুই সরলি না।এই যে উঁচু উঁচু পাহাড় ঝোপঝাড় এখানে সাপের ভয় আছে ডাল কুত্তা সঙ্গে ডাল কুত্তি
যেকোনো সময় কামড়ে দিতে পারে।
তুই শুনলি না। মনে নেই এর আগেও তুই সেবার একবার পাহাড়ের ঢাল বেয়ে
আর একটু হলেই পা পিছলে পড়ে যেতে নিয়েছিলি!
কতো যে বিপদ- দুই পাহাড়ের মাঝখানে খাঁজ যা আসলে কাজম- এসব বলা সত্ত্বেও তুই কথা কানেই নিলি না।
বললি তুই অই উঁচু চুড়ায় সর্ব্বোচ্চ শিখরে উঠে তারপর ভাববি অন্য কিছু ভাবা যায় কিনা।
বললি- অই জায়গাটা নাকি
শুধুই তোর,অন্য কারো কিছুতেই নয়।এরপর বলার কি আর থাকতে পারে!

কিন্তু আমি ভাবছিলাম ওখানে এমন
কী আছে মধু যে ওখানে যেতেই হবে
জয় করতেই হবে আর ভাবছিলাম
অই জায়গাটা শুধুই ওর- ও এরকম ভাবছে কেন?
মনে পড়ল পৃথিবীতে এক শ্রেণির
মানুষ আছে যারা মগ ডালটাকে সবসময় শুধু নিজের অধিকৃত করে রাখতে চায়। কেউ গাছে উঠতে গেলেই লাথি মেরে সজোরে ফেলে দেয়।আমার মনে হল ওরও এরকম কোনো ঘোড়া রোগ হয়েছে।আমি জানি মগ ডালটা যে-কোনো সময় ফট্টাস করে ভেঙে পড়তে পারে-
এই কথা ওর জানা নেই।
আর ওর এ কথাও জানা নেই-
একটি বনের মগ ডাল
কারো একার সম্পত্তি নয়।
আমি জানি আমার কথা সে শুনবে না তবু বললাম-এমন কোথাও
আরোহণ করিস না যে পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যায়।

আমার কথা শুনে সে আমার দিকে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি ছুঁড়ে দিলো।

আমি একটুও রাগ না করে শুধু কল্পনায় দেখতে পেলাম:

সমগ্র বন কাঁপিয়ে চুরমার করে ভেঙে পড়ছে একমাত্র মগ ডালখানি
কিন্তু তার আওয়াজ ওর কানে
পৌঁছাচ্ছে না কিছুতেই;
আমি চলে এসেছিলাম।
বহুবছর পর আজ একটি কথাই ভাবছি- মগ ডালের সঙ্গে এক সঙ্গে ভেঙে পড়বার পর আমার কথা কি ওর একবারও মনে পড়েছিল!

গণতন্ত্রের কাঁচুলি – যুবক অনার্য [Bengali Poetry]

ব্যক্তিগত বিছানার গন্ধ শুঁকে শুঁকে
এখন সময় নয় কবিতা লিখবার
আকাশে উড়িয়ে চুল
এখন সময় নয় গান গাইবার

পোড়া মানুষের লাশ আমাকেই
তুলে নিতে হবে কাঁধে
আমাকে পৌঁছে যেতেই হবে
শ্মশানে গোরস্থানে
আমাকে জানি সইতে হবে
ঘাতকের কালাকানুন
আমাকে জানি বয়ে যেতে হবে
পদ্মার মতো
স্রোতের প্রতিকুলে
প্রতিটি ঘটনা নিয়ে যাবে আজ
আমাকে কয়েদখানায়
কাঁধে তুলে নিয়ে হুলিয়া আমাকে
ফেরারি আসামি হ’য়ে
পারি দিতে হবে
মায়ের অশ্রু
বোনের কান্না
পেছনে তুচ্ছ ক’রে
পারি দিতে হবে দিনরাত্রির
তুমুল অন্ধকারে
তোমার হাতে রাষ্ট্রযন্ত্র
তোমার হাতেই সব
আমার হাতে শোকের পাথর
জনতার কলরব
তোমার হাতে গণতন্ত্র হত্যার হাতিয়ার
আমার হাতে রক্তে লেখা
মানুষের হাহাকার
যাবজ্জীবন রাজপথে আমি
মিছিলের মুঠোহাত
তোমার মৃত্যু দেখবো বোলেই
মরণের ঠোঁটে চুমু এঁকে আমি
জেগে থাকি সারা রাত

ব্যক্তিগত বিছানার গন্ধ শুঁকে শুঁকে
এখন সময় নয় কবিতা লিখবার
আকাশে উড়িয়ে চুল
এখন সময় নয় গান গাইবার
সময় এসেছে
নষ্ট শেমিজ ছিঁড়ে ফেলে
লুন্ঠিত গণতন্ত্র- তার কাঁচুলি ছুঁয়ে দেবার

বরুণাদি, তোমাকে মনে পড়ে – যুবক অনার্য [Bengali Poetry]

এই সুকুমার বৃত্ত ছেড়ে যদি চলে যাই
কেউ কি দাঁড়িয়ে রবে
ধুলো কাদা জলমাখা পথের আঁচলে!
এই ঘর এই মধুমিতা সঙ্গীদের
বিমূর্ত আচরণ ছেড়ে একদিন এই আমি কথক কিংবদন্তি হতে চেয়ে
বিশারা নদী তীরে ঢেউ নয়,
গুনে নেবো সময়ের ব্যাধি বহতা রাষ্ট্রের
পোয়াতি পাপের পরিসীমা
টারবাইনে পড়ন্ত আওয়াজ
পলিমাতৃক কবির কাছে নেমে আসা
ঘাম শ্রমচর্চিত লাঙলের ফলা
এই তো আমার নীরন্ধ্র কথকতা
তবু ব্যথা উপশমকারী
বরুণাদিদির কাছে
ফিরে আসতে চেয়েছি
প্রাক আর্য মাটির মতো ক’রে
তবু কি বরুণাদি – বাতাবি নেবুর ঘ্রাণ- পাঁজরে মুদ্রিত- যেতে যেতে ক্ষয়ে
আমাকে নিয়েছিলো জেনে
বুকের শূন্যতা চিরে!

না, এসব হয়তো বিস্মৃত গর্ভে
ডুবে যাওয়া ঝিনুক প্রহর।

না, হয়তো আমি তুমি সে এবং
হয়তো অপহৃত আমাদের নিয়মসিদ্ধ অনিয়ম বিপন্ন করতে চেয়ে…

এই প্রেম এই মুগ্ধ রমণীর রিরংসা রজঃস্বর অবহেলা ক’রে
আজ বড়ো সাধ জাগে- বিবাগী হই,
হয়ে রই না হয় অই কয়েদি কুমারী
যেভাবে কারাগার বন্দী করেছে সে;
না হয় হয়ে রই মূর্ছনা- হে আমার
গুপ্ত ঘাতিনী – তোমার নষ্ট শরীরে।

এই সুকুমার বৃত্ত ছেড়ে না হয়
হয়ে রই মিছিলে থেঁতলে যাওয়া মুখ-
যখন তোমাকে পড়ে মনে,
বরুণাদি
তুমি সুখ
আর আমি বাসি পচা
কেবলই ব্যর্থ বাসরের মতো দুঃখ।

রাণীমা ও আমাদের গল্প – যুবক অনার্য [Bengali Poetry]

মনটা ভালো নেই- এ কথা বলা যাবে এমন আমার কেউ নেই,
বললেই জানতে চাইবে- কী হয়েছে, মন ভালো নেই কেন।’
আমার কী হয়েছে তা কাউকে বোলে কিছুই হবে না’ – এই কথা কি কাউকে
বলা যায়!
বললেই বোলবে : আমাকে
আপন ভাবিস না, কাছের ভাবলে
নিশ্চয়ই বলতিস।
আপন ভাবার সঙ্গে যে এই কথা বলবার কোনো সম্পর্ক নেই তা কেউ বুঝতে চাইবে না।
অথবা এমনও হতে পারে মন ভালো
না থাকার কারণসমূহ শুনেই বোলবে: এইসব বাতিল ভাববাদ
অচল সেন্টিমেন্ট,ওসব ভেবে টেবে
লাভ নেই,এবার একটু বদলাতে
চেষ্টা কর- শুনিয়ে দেবে বৈষয়িক প্রবচন,আলু আর পেঁয়াজের সুরম্য প্রহসন।
আসলে আমার মন কখনোই
ভালো থাকে না; কবে কোন আমলে
মন ভালো ছিলো সে আমার মনে নেই।আমি হয়তো মানসিক রুগী- এরকম
যদি কেউ ভেবে নেয় তবে কি তাকে
দোষ দেয়া যায়!
মানসিক রুগী হলে মন ভালো না থাকবার কোনো কারণ থাকবে না।
অকারণেও বিষন্ন থেকে যাবে মন।
আমার মন ভাল না থাকবার আছে খুব গভীরতম কিছু কারণ।
এই কারণগুলি কখনো ফুরিয়ে যাবে না।আজীবন আমার ছায়ার সঙ্গে
লেগেই থাকবে।
যেখানেই যাই আমার সঙ্গে এক সঙ্গে থেকে যাবে,
আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকবে বোলে
এই কারণগুলি থেকে আমার
মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়।
মৃত্যুর পর আমার হাড় মাংসে
মন ভালো না থাকা আর তার কারণগুলি মিশে থাকবে গোপন ষড়যন্ত্রের মতো জন্মান্তরের ঘ্রাণে।
হাড় মাংস গলে পচে যে- মাটির সঙ্গে একাকার হয়ে যাবে সেই মাটির মধ্যে থেকে যাবে ঐসব কারণ সমূহের অস্তিত্ব;
একদিন অই মাটি থেকে ইট হবে,
ইট দিয়ে বানানো হবে একটি রাণী প্রাসাদ।
মন ভালো না থাকা ইটের প্রাসাদে
থাকবে এক আশ্চর্য রাণী
যার মন ভালো না থাকার কোনো কারণই থাকবে না, বরং সে থাকবে ফুরফুরে চনমনে মেজাজে।
রাণী হলে কি মন্দ থাকা সম্ভব!
কখনোই নয়।
রাণীমা’র চারপাশ ঘিরে থাকবে
মন ভালো না থাকা অজস্র ইট,
ইটের দেয়াল,দেয়ালের ভগ্ন অধিবাস- রাণীমা তা কখনো জানতেও পারবে না।

আমার ক্ষুধার্ত কারাগারের বিপন্ন চুল্লিতে রাণীমা ঝলসে নেবে দেবীর প্রসাদ।

যুবক অনার্য | Jubak Anarjo

History of Bengali Poetry | কবিতা কি ও কেন এবং তার ইতিহাস

New Bengali Poetry 2023 | বন্দনা পাত্র | কবিতাগুচ্ছ

New Bengali Poetry 2023 | শ্রাবনী দত্ত | কবিতাগুচ্ছ

New Bengali Poetry 2023 | সামসুন্নাহার ফারুক | কবিতাগুচ্ছ

bengali poetry | bengali poetry books | bengali poetry books pdf | bengali poetry on love | bangla kobita | poetry collection books | poetry collections for beginners | poetry collection online | poetry collection in urdu | poetry collection submissions | poetry collection clothing | new poetry | new poetry 2022 | new poetry in hindi | new poetry in english | new poetry books | new poetry sad | new poems | new poems in english | new poems in hindi | new poems rilke | new poems in urdu | bangla poets | indian poetry | indian poetry in english | indian poetry in urdu | indian poems | indian poems about life | indian poems about love | indian poems about death | Bangla kobita | Kabitaguccha 2022 | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | power poetry | master class poetry | sweet poems | found poem | poetry night near me | poem about myself | best poets of the 21st century | christian poems | prose poetry | poetry international | poetry pdf | free poem | a poem that tells a story | beat poetry | poetry publishers | poem and poetry | def poetry | heart touching poetry | poetry near me | prose and poetry | poem on women empowerment | identity poem | quotes by famous authors and poets | bee poem | poem about self love | story poem | poetry angel | narrative poetry examples | poetry reading near me | prose poetry examples | elegy poem | poetry reading | the tradition jericho brown | poetry websites | protest poetry | prayer poem | emotional poetry | spoken word poetry | poem about god | percy shelley poems | jane hirshfield | spiritual poems | graveyard poets | chapbook | poems about life | poems to read | found poem examples | poems about life and love | elizabeth bishop poems | poems about women | sister poems that make you cry | famous quotes from literature and poetry | mothers day poems from daughter | poem about community | 8 line poem | inspirational poetry quotes | poem about life journey | positive poems | short poem about life struggles | toni morrison poems | good bones poem | google poem | funny poems for adults | inspirational poems about life | friendship poem in english | paul laurence dunbar poems | freedom poem | sad poetry about life | Shabdoweep Founder

Leave a Comment