Bengali Online Short Story – Tanushri Giri
পাহাড়ের গায়ে – তনুশ্রী গিরি
বাইরে যাওয়ার ইচ্ছে অনেকদিন থাকলেও নানান কারণে হয়ে উঠছিল না।দেখতে দেখতে তিন – চার মাস পর একটা সুযোগ আসতেই খপাৎ করে নিয়ে নিলাম। যাওয়ার জায়গা হল পাহাড় – হিমাচল।
খুব আনন্দের সাথে সমস্ত শপিং কমপ্লিট করে ট্রেন ও ফ্লাইট এর টিকিট আগে থেকে কেটে রাখলাম। যাওয়ার দিন সকাল থেকে উঠে হালকা টিফিন করে বেরিয়ে পড়লাম একাই। একা একা ঘুরতে যাওয়ার অভ্যাস আগে থেকেই আমার ছিল যদিও। প্রথমে অটো, তারপর বাস , তারপর দমদম এয়ারপোর্ট। সময়ের আগেই পৌঁছে গেছিলাম। চেকিংয়ের সব প্রোটোকল সম্পন্ন করে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে ফ্লাইটে উঠলাম। পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী সেটি রওনা দিল। কি অসাধারণ দৃশ্য… যেতে যেতে দেখতে পেলাম।মেঘের চাদর গায়ে মেখে ফ্লাইট সামনে এগোতে থাকল। কখনো দেখলাম মস্ত বড় পাহাড়খানা সাদা মুকুট পরে বসে আছে। কখনো আবার মেঘের ভেলা পেঁজা তুলোর মত উড়ে উড়ে যাচ্ছে। মনকে আর সামলে না রেখে
খুব দ্রতগতিতে ছবি ও ভিডিও ফোন বন্দী করে ফেললাম।
ফ্লাইট নামল কিছু সময় দেরিতে। যাইহোক অবতরণের পর যে যার লাগেজ গুছিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে চলল। আমি ক্যাব নেব যেই ভাবলাম অমনি নতুন অতিথি দেখে লোকজন দাম দ্বিগুণ করে বলল, আমিও ছাড়ার পাত্রী নই। অগত্যা আমার এরূপ আচরণ দেখে বাধ্য হয়ে শেয়ারে ক্যাব করলাম। নির্দিষ্ট বাস ডিপো থেকে আবারও ঘণ্টা পাঁচেকের বাস জার্নি ভেবেই ঘুম পেয়ে যাচ্ছিল। আর অপরদিক থেকে বান্ধবীর অনবরত ফোন কল যে আমি ঠিক ভাবে বাসে উঠলাম কিনা। রাস্তার দুপাশে প্রচুর গাছ দেখতে দেখতে, নতুন নতুন জায়গার নাম উচ্চারণ করতে করতে আর প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে নিতে পৌঁছলাম রাত ১১ টায়। পাহাড়ি রাস্তার চড়াই উতরাই আমাকে মুগ্ধ করল, আমি শুধু উপভোগ করতে লাগলাম।
পরের দিন ঘুম থেকে দেরিতেই উঠলাম। দেখি ব্রেকফাস্ট রেডি।জলযোগ সারতে সারতে বান্ধবীর বাড়ির সবার সাথে পরিচয় হল।ভাষার আদান প্রদান করার সময় দেখলাম বিস্তর ফারাক। যাইহোক নতুন জায়গায় খাবার দাবার, সংস্কৃতি অনেকটা আলাদা হলেও পোশাক পরিচ্ছদে মিল পেলাম কিছুটা। সমস্ত কিছু শুনতে লাগলাম মন দিয়ে যে কিভাবে জলের অভাব থাকে পাহাড়ি এলাকায়, চাষাবাদ ইত্যাদি ইত্যাদি। পরের দিন প্ল্যান ছিল মানালি যাওয়ার। সেই মতো গোছগাছ সেরে রাতের বাস ধরলাম।
শুরু হল পাহাড়ি ঘুরপাক। রাস্তায় যানবাহন চালাতে গিয়ে যে কত দক্ষতা লাগে তা স্পষ্ট অনুভব করতে পারছিলাম। ঘুরে ঘুরে মাথা ঘুরে যাওয়ার জোগাড় হলেও মুখে চোখে প্রশান্তির ছায়া ছিল আমার। মাঝে মাঝে দেখতে লাগলাম প্রকাণ্ড পাথরের একদম গা ঘেঁষে বাস চলছে দুলকি চালে, আবার কোথাও সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে ছুটছে। টানেল তৈরি হচ্ছে নতুন ভাবে, পাহাড়ের একেবারে ভেতর দিয়ে। এগুলোর নির্মাণ যে কতটা কষ্টকর এবং ব্যয় বহুল তা বুঝলাম।
পরের দিন ভোর ৪ টেতে পৌঁছলাম মানালি। স্বপ্নের জায়গা। গিয়েই গরম গরম পরোটা আর আলুর তরকারি খেয়ে বেরোতে যাবো যেই ভেবেছি অমনি দেখলাম বৃষ্টি শুরু। পাহাড়ে নাকি হঠাৎ করেই বৃষ্টি আর রোদ হতে শুরু করে। তা দেখে সবারই খুব মনখারাপ হলেও ঠাণ্ডা খুব জাঁকিয়ে পড়েছিল। আমরা সবে-মিলে আগুন জ্বালিয়ে সেঁক নিলাম গায়ে, পায়ে। নেক্সট দিন সক্কাল সক্কাল একটুও সময় নষ্ট না করে পাহাড়ে বেরিয়ে পড়লাম। দেখলাম অটল টানেল, শিষু waterfalls, বরফ যেন সাদা চাদর দিয়ে মোড়া। সুন্দর সুন্দর সেলফি তুলে ব্যাক করলাম। ফটো নিলাম পাহাড়ি মন্দিরের তার সাথে জংলী গাই, খরগোশ। এইবার ফিরে আসার আগে কিছু খেয়ে ফিরে এলাম বাসায়।
পরের দিন গন্তব্য ছিল মনি করণ। যেখানে গরম জল ন্যাচারালি প্রডিউস হচ্ছে এবং সবাই স্নান করে পুণ্যের জন্য।রাম মন্দির ছিল সেখানেই পাহাড়ের গা ঘেঁষে। গুরু দ্বারে প্রণাম করে, প্রসাদ নিয়ে তারপর বাড়ি ফিরলাম। ফিরে আসার আগে লোকাল মেলা ঘুরে কিচ্ছু জিনিস কিনে আবার ৯ ঘণ্টার জার্নি করে মানালি থেকে হিমাচল এলাম।
সমস্ত জার্নিতে ছিল আমার বান্ধবী, তাঁর মা, ছোট্ট কৃষু মানে বান্ধবীর দিদির মেয়ে। খুব মজা ও হৈচৈ করে কেটে গেল ৫দিন। আসার ট্রেন রাজধানী করে কলকাতা পৌঁছলাম। এসেই ওয়েদারের বিস্তর ফারাক বুঝতে শুরু করলাম। থেকে গেল শুধু পাহাড়ি লোক আর মস্ত পাহাড় আমার মনে।
অভিশপ্ত কাল – তনুশ্রী গিরি
মেঘনা মেয়েটি ভারি মিষ্টি। ছোট্ট মেয়েটি কখন যে বড় হয়ে গেল বুঝতে পারে না দাদু।জঙ্গলের ধারে নদীর তীরে গরু, ছাগল চরায় সারাদিন সে। বিকেলে ফেরে। দাদু তার নাতনির জন্য গাছের পাতা রান্না করে রাখে। রাখে গরুর দুধ। এমনি করে দিন প্রতিদিন বেশ কাটছিল।
এবছরের প্রচণ্ড গরমে সব গাছের পাতা পুড়ে খাক হয়ে যায়। জঙ্গলের অধিকাংশ গাছ নষ্ট হয়ে যায়। দাবানল জ্বলতে থাকে জায়গায় জায়গায়। খেতে না পেয়ে দাদু ঠিক করল মেঘনাকে নিয়ে শহরে চলে যাবে, ভিক্ষা করে খাবে। রওনা দিল পায়ে হেঁটেই, সাথে গরু ও ছাগল কেও নিলো।
মেঘনা যেতে যেতে দেখতে থাকে শিশুশিক্ষার স্কুলে বাচ্চারা পড়াশোনা করছে। তারও ইচ্ছে হয় পড়তে, দাদুকে বলে স্কুলের দিদিমণিকে জানাতে যে সে পড়তে চায়। দিদিমণি জায়গা করে দেয় তাদের। পাশের একটা পড়ে থাকা বাড়িতে তারা আশ্রয় নেয়। এমনি করে ক্লাস টেন পাস করে মেঘনা।
মেয়ের পড়ার অদম্য ইচ্ছা। পরের স্কুল কিছু দূরেই। দাদু একটা সাইকেল কিনে দেয় তাকে। রোজ সে স্কুলে যায়, আবার টাইম মত ফিরে আসে। বেশ কিছুদিন সে লক্ষ্য করল একটা বাইক তাকে রোজ ফলো করে। শিস দেয়, চোখ মারে। ব্যাপারটা কিরকম মনে হতে তার বান্ধবীদের জানায় সে। তারাও তাকে সাবধানে থাকতে বলে।
এমনি করে বারোটা ক্লাস পার হতেই ইচ্ছে হল নিজে উপার্জন করে দাদুকে খাওয়াবে। নানান ধরনের হাতের কাজ করতে শুরু করল পড়ার পাশাপাশি। এই যেমন সেলাই, ফুলের কাজ ইত্যাদি। দেখতে দেখতে কলেজ পাস করে গেল সে। দাদু তো এদিকে পাত্র দেখতে ব্যস্ত নাতনির জন্য। মেঘনা রূপে যেমন, গুনেও তেমন। বাড়ী ও বাইরের সব কাজে পটু। গাঁয়ের এক মোড়লের ছেলের সাথে মেঘনার সম্বন্ধ হল। বিয়ে ফাইনাল। শর্ত একটাই মেয়েকে ঘরেই থাকতে হবে, বাইরে বেরোনো চলবে না। দাদু রাজী হলেও মেঘনা মন থেকে মেনে নিতে পারল না। সে বিবাহতে সম্মতি দিল না। গাঁয়ের মোড়লের এক কথা, এই বিয়ে দিতেই হবে। বলাই বাহুল্য একপ্রকার জোর করেই মেঘনাকে বিয়েতে বসালো।
বিয়ের ঠিক নয় মাসের শেষে তাকে হসপিটালে ভর্তি করা হল। বাড়ির সবাই খুশি এই ভেবে যে নতুন অতিথি আসছে। ঐ অবস্থায় ইমারজেন্সি অপারেশনের পর জানা গেল যে পেটে ছিল বিশাল আকারের টিউমার। কোনও বেবি নেই। বাড়ির লোক হতাশ হয়ে দোষারোপ করতে লাগল তাকে। বাড়ির অলক্ষ্মী বলে তাড়িয়ে দেয়। আর কোনোদিন বেবি হতে পারবে না এই ভেবে বাড়ির লোক একঘরে করে রাখে তাকে। খেতে দেয় না ঠিক করে। প্রায় আধমরা করে রেখেছে। এদিকে মোড়লের ছেলের জন্য বিয়ের ব্যবস্থা হল আবার।
বিয়ের ঠিক আগের দিন মেঘনা গলায় দড়ি দেয়। সব আশা, সব আকাঙ্ক্ষা চিরতরে চুপ হয়ে গেল। পুলিশ এসে বিয়ে বন্ধ করে। বাড়ির লোকদের থানায় নিয়ে যায়। গাঁয়ের লোকেরা একজোট হয়ে মোড়লকে বাড়ি ছাড়া করল।
এই রকম কতশত মেঘনা তলিয়ে যাচ্ছে দিন দিন। হাজার চেষ্টা করেও বাঁচতে পারছে না তারা নিজের মত।
আর কিছু দিন – তনুশ্রী গিরি
ছাত্রদেরকে ক্লাসে পড়া দিয়ে বীণা বলল “তোমরা এই হোমওয়ার্কটা পরের দিন করে এনো, আজ আমার শরীরটা একটু খারাপ লাগছে, তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে “। ছাত্ররা বড্ড অমায়িক। সবাই ঘাড় নেড়ে সায় দিল। ছুটির ঘন্টা বাজতে পেটটা টেনে টেনে কোনমতে বাড়ি ফিরলো সে। ‘পেটে যে কে আসছে কে জানে!’এইসব চিন্তা ভাবনা করতে করতে ঘরের কাজে মন দিতে পারে না কারণ তার তিনটি কন্যা সন্তান রয়েছে। শাশুড়ি মা অনেকরকম টোটকা করে এবার বলেছেন “বংশের প্রদীপ আসছে”। অতএব তিনি আনন্দেতে সারা পাড়া বলে বেড়িয়েছেন যে নাতি আসছে ঘরে। তাও বীনার মন “কু”ডেকেই চলেছে।
সন্ধ্যে হতেই শঙ্খ চলে যেত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে। আড্ডায় তাস, জুয়া খেলার সাথে সাথে চলত ‘ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো’ প্রতিযোগিতা। এক এক জন করে সবাই বলতে শুরু করল “কি রে শঙ্খ, তোর বউ এবার ও কি তোকে মেয়ে সন্তান দেবে”? সে চুপটি করে থাকে। ফিরে আসে বাড়ি।
চতুর্থ সন্তান হওয়ার পর শঙ্খ বুঝল না তার কপালে ছেলে নেই, মেয়েদেরকে মানুষ করতে হবে, অতএব পড়শীর গঞ্জনা, লাঞ্ছনাতে কান দিলে চলবে না। সেইমত বড়, মেজ, সেজ, শান সবাইকেই পড়াশোনা শেখাতে শুরু করল। মেয়েরাও খুব উৎসাহ নিয়ে স্কুলে যেতে লাগল। বছর চারেক খানেক খুব ভালোই চলছিল দিনগুলি। এর মধ্যে ঘটল এক অনর্থ। হঠাৎ করেই কোন এক অজ্ঞাত কারণে এক প্রতিবেশীর সাথে বেজায় ঝামেলা বাঁধে। ঘটনা গড়াল জীবন মরণ লড়াই নিয়ে। বীণা একা হাতে স্কুলের, মেয়েদের, সংসারের, স্বামীর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিল। সে ভাবতে লাগল এই দুর্দিনে তাকে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে, ভেঙে পড়লে চলবে না।
বারো বছর পর, শঙ্খের অনেক পরিবর্তন দেখা দিল তা শারীরিক ও মানসিক দুই ভাবেই। কারণ এখন তার রক্তে চিনির পরিমাণ অত্যধিক বেশি, তার সাথে বড় মেয়ের বিয়ে বাড়ির বিপক্ষে গিয়ে। ক্রমশই শরীর ভাঙতে শুর করল। হাইপার্টেনশন আর ডায়াবেটিস গ্রাস করল ধীরে ধীরে। বীনা প্রার্থনা করতে থাকে ঠাকুরের কাছে ‘কবে সমস্তটা ঠিক হবে!’
লীলা বাড়ির মেজ মেয়ে। তার পড়াশোনা তখনও শেষ হয়নি পুরোপুরি। মায়ের কথা ভাবতে থাকে, ভাবে বাবাকে কিভাবে বাঁচাবে, কিভাবে বোনদের কথা রাখবে। পরপর বেশ কয়েক বছর কেটেছে লীলার হসপিটালের রুমে বাবাকে দেখাশোনার জন্য। এখন হসপিটাল তার কাছে মন্দিরের মত। যাওয়ার আগে ও পরে প্রণাম করে সে। বাড়ীতে লীলাকে দেখে শঙ্খ বলত ” কি রে আমার জন্য cream caker এনেছিস তো”! লীলা হাসিমুখে জবাব দিত ‘এনেছি তার সাথে পেটা পরোটা ‘। লীলা জানত তার বাবার ইচ্ছেগুলো দিন দিন শেষ হয়ে আসছে। CKD, glaucoma, CVA চারদিক থেকে ঘিরে ধরেছে তার বাবাকে।
শয্যাশায়ী হয়েও শঙ্খের জ্ঞান ছিল অটুট। প্রায়শই কাঁদতে থাকতো আর বলত আর কিছু দিন কি বাঁচা যায় না! লীলা কে বলত ডায়ালাইসিসের জন্য, যদি কিডনি ঠিক করা যায়। কিন্তু ওজন কম থাকায় তা সম্ভব ছিল না। শেষের দিনগুলো লীলা বাবার ইচ্ছেগুলো পূরণ করতে লাগল। যাওয়ার আগে বলে গেল “তোদের আর কটা দিন দেখে যেতে পারলাম না মা, ভালো থাকিস সবাই, মা আর ছোটদের দেখিস আর বিয়েটা করে নিস”। লীলা কান্নায় ভেঙে পড়ল, বলল”বাবা তুমি যেও না আমাদের ছেড়ে “।
মাইল স্টোন – তনুশ্রী গিরি
বাবার সাথে সাইকেলে করে প্রথম ক্লাস ফাইভে অ্যাডমিশন নিতে যাচ্ছি , এমন সময় বাবার এক বন্ধুর সাথে পথে সাক্ষাৎ। তিনি বলছেন ‘ কি মুখাজ্জী দা মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যাচ্ছেন বুঝি?’ আমি রাস্তা,ঘাট দেখতে দেখতে যাচ্ছি আর অ্যাডমিশন টেস্টের জন্য যা যা বলেছিলেন আমার প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক সেই সমস্ত কিছু আওড়াচ্ছি। স্কুলের সামনে আসতেই মস্ত বড় গেট দেখে মনে রাখার বিষয়গুলি ভুলে যাচ্ছি। ভাবছি, এত বড় বড় পড়াশোনা কি আমার দ্বারা সম্ভব!
তিন দিন পরেই রেজাল্ট। সবাই দেখলাম হা করে বাইরে টাঙানো লিস্টের দিকে তাকিয়ে আছে।এত ভিড়ের মধ্যে না যেতে পেরে দূরে দাঁড়িয়ে দেখতে রইলাম সকলের ঠেলাঠেলি। আমার মা গেছেন সঙ্গে, হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হঠাৎ বলে উঠলেন, “তনুশ্রী কে আছে”? আমার নাম শুনে মা ছুটলেন অফিস রুমের দিকে। আমি কিছু বুঝতে না পেরে ভাবলাম, লিস্টে আমার নাম কি বাদ পড়ল! ভিড় একটু ফাঁকা হতেই লিস্টের দিকে চোখ গেল, দেখলাম আমার নাম প্রথম লাইনে। মা হাসি মুখে আমাকে ডেকে নিয়ে অফিস রুমে ঢুকল। প্রধান শিক্ষক ছাড়াও চার,পাঁচ জন মাস্টারমশাই ছিলেন, সবাই বলে উঠলেন একসাথে “এই যে আমাদের ফার্স্ট গার্ল”।
আমাকে অনেক বই দেওয়া হল। না, শুধু মাত্র পাঠ্য বই নয়, গল্পের বইও ছিল যেমন শরৎ রচনাবলী, গোয়েন্দা রহস্য। ক্লাস ফাইভের শ্রেণীতে দুটো ভাগ হল গ্রুপ এ এবং গ্রুপ বি । আমি রইলাম গ্রুপ এ তে। প্রথম দিন, চুপটি করে বসে আছি এমন সময় একজন রোগাটে মেয়ে এসে বলল, ‘ ফার্স্ট হয়েছ!’ আমি ঘাড় নেড়ে সায় দিলাম। দেখলাম মেয়েটির আমার প্রতি অনেক জিজ্ঞাসা এই যেমন কি লিখেছিলাম ওই প্রশ্নের উত্তরে, কোন প্রাইমারি স্কুল থেকে এসেছি ইত্যাদি। আমিও ভাও দিতে লাগলাম একটু। মনে মনে ভাবলাম এত বড় স্কুলে ফার্স্ট হয়েছি একটু তো ভাও নিতেই হবে।
এমনি ভাবে ভাও নিতে নিতে ক্লাস ফাইভের শেষ দিন। পরীক্ষার ফল প্রকাশ হতেই আমার মুখ একেবারে শুকিয়ে আমচুর। কারণ আমি তখন আর ফার্স্ট ছিলাম না। বাড়ীতে এসে গর্বের সাথে মা কে কথা দিলাম যে সপ্তম শ্রেণীতে আমার নাম আগে থাকবে। কিন্তু সেই একই ভুল করলাম আবারও। এবার আর ভাও নেওয়ার কিছুই বাকি থাকল না। মনে মনে শপথ নিলাম,”কিছু আলাদা করতে হবে”। আমি বরাবরই লেটুস। স্কুলের ঘণ্টা প্রার্থনার জন্য বেজে শেষ হতে হতে আমার সঙ্গে রোজ দেখা হত অর্পিতার। অর্পিতা বড্ড ভালো মেয়ে, সৎ, সাহসী ও পরিশ্রমী। হাসতে হাসতে দুজনে গেট পার করতেই দেখলাম একজন শিক্ষক ও প্রবেশ করছেন। এই দেখে দুজনে হাসি মুখে মনে মনে ভাবলাম আমরা একা লেটুস নই, স্যারও আছেন সঙ্গে। দুজনে একসাথে আসতে, একসাথে হাসতে ভাব জমে উঠল ধীরে ধীরে। পড়ার প্রতি ভালোবাসা বাড়তে লাগল অর্পিতার সংস্পর্শে। দুজনে মনের কথা ভাগ করলাম। ভাগ করলাম ভবিষ্যতে গিয়ে বাবা, মা কে ভুলে না যাওয়ার কথা। স্কুল শেষে থাকত কুল গাছের নীচে এক্সট্রা টাইম। না, কুল পাড়ার জন্য নয়, পড়া রিভিশন করার জন্য।
এরপর সেই দিন এল যা আমার মনের কথা রাখার। ক্লাস নাইনে লিস্টে প্রথম হওয়ার দরুন, টিচারদের ও এক্সপেক্টেশন বেড়ে গেল। এর মধ্যেই আমার এক সহপাঠীর পাশের বাড়ির দাদার সহিত পলায়ন কিছুতেই বরদাস্ত হল না। ওর মায়ের সেই স্নেহ-মাখা হাতে রান্না আর খাওয়া হল না আমাদের। আমি একটু নিয়ম অনুযায়ী চলতে পছন্দ করতাম। আর ফার্স্ট গার্ল হওয়ার দরুন ছেলেরা ভয়েতে কথা বলতে আসে না। স্কুল লাইফে প্রেম করার দিক থেকে তাই আমি রইলাম একমাইল দূরে। প্রেম নিয়ে অনেক কৌতূহল থাকলেও তা বুকে চেপে বায়োলজির ছবি আঁকতে আর জিওগ্রাফির ম্যাপ মুখস্থ করতে থাকলাম।
এমনি করেই দিন, সপ্তাহ,বছর কাটতে লাগল। টিচাররা বললেন “এনজয় করে নাও পরে এই লাইফ আর ফিরে পাবে না”। ক্রমেই জীবনের প্রথম সিরিয়াস এক্সাম ঘনিয়ে আসতে লাগল। দিন রাত এক করতে লাগলাম বইয়ের পাতায়। বর্ষায় বৈদ্যুতিক সংযোগ না থাকায় হারিকেনের আলোতে রাত জাগতে হত। পরীক্ষার দিন কপালে দইয়ের ফোঁটা নিয়ে, জয় মা শীতলার নাম নিয়ে পরীক্ষা কমপ্লিট করলাম। আর এক মজার ব্যাপার লক্ষ্য করলাম, অঙ্ক পরীক্ষার ঠিক আগেই সবাই কি যেন মুখস্থ করছে মন দিয়ে, আমি চুপ করে ভয়ে ভয়ে বইয়ের পাতা বন্ধ করে দিলাম। অঙ্ক পরীক্ষা ঠিক শেষের দিকে এমন সময় একজন শিক্ষক যিনি পাহারা দিচ্ছেন বলে উঠলেন,”এই রুমে একমাত্র তনুশ্রী ভালো পরীক্ষা দিয়েছে”। পরীক্ষা শেষ। হাসি মুখে বাড়ি ফিরলাম।
কিছু দিন বাদে যখন প্রফেশনাল কোর্সে ভর্তি হলাম, বুঝলাম মাস্টার মশাইরা যা বলেছিলেন সব কথাই মিলে যাচ্ছে। জীবনের মূল্যবান মাইল স্টোন হল স্কুল লাইফ।অনেক কষ্টে গ্র্যাজুয়েশন ও মাস্টার ডিগ্রী করলাম। কিন্তু সেই মাইল স্টোন থেকে গেল মনের মণিকোঠায়।
১৩ বছর বাদে আজ কর্মস্থলে যাওয়ার গাড়িতে ওঠার ঠিক আগেই হঠাৎ দেখা অর্পিতার। রুগ্ন, শুষ্ক চেহারা,ম্লান হাসি আর এক অসহায় চশমা চোখে আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল ‘অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছিস’। হাসতে হাসতে বললাম, ‘কেন ভালো লাগছে না দেখতে!” কাঁদো কাঁদো গলায় বলে উঠল,”আমার গ্লুকোমা ধরা পড়েছে “। আমি ভয়ে বললাম কি বলিস এত কম বয়সে কি করে এটা সম্ভব! কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ। আজ গন্তব্যস্থল দুজনের আলাদা, কেউ আর বলবে না লেট হয়েছে আসতে। থেকে যায় শুধু বন্ধুত্ব আর সেই মাইল স্টোন।
তনুশ্রী গিরি | Tanushri Giri
Driving Experience Canada 2023 | ড্রাইভিংয়ের যত কেচ্ছা (কানাডা পর্ব – ৯ এবং ১০)
Param Gyan O Sadhan Tathya | পরমজ্ঞান ও সাধন তত্ত্ব | New Article 2023
Valentine Day Speciality | ভালোবাসা দিবস | Top New Bengali Article 2023
Mokkhada Pishi | মোক্ষদাপিসী | শিখা কর্মকার | New Bengali Story 2023
Anandabazar Bengali Short Story | Bengali Short Story | Pratilipi Horror Stories in Bengali | Lifestyle Web Stories in Bangla | Trending online bangla golpo pdf free download | Short bengali story | Bengali story pdf | pratilipi bengali story | Short Stories for Children | English Stories for Kids | Moral Stories for Kids | story in english | story hindi | story book | story for kids | short story | story for girls | short story in english | short story for kids | Bengali Online Short Story pdf | Bangla golpo pdf | Bangla golpo story | bangla romantic golpo | choto golpo bangla | bengali story | Sunday suspense golpo | sunday suspense mp3 download | suspense story in hindi | suspense story in english 200 words | Bengali Online Short Story in english | Trending online bangla golpo pdf download
suspense story in english 300 words | Suspense story examples | suspense story in english 100 words | suspense story writing | very short suspense stories for students | Bengali Online Short Story | Top Bangla Golpo Online Reading | New Read Online Bengali Story | Top Best Story Blogs | Best Story Blogs in pdf | Sabuj Basinda | High Challenger | Famous Bangla Golpo Online Reading | Shabdodweep Read Online Bengali Story | Shabdodweep Writer | Bangla Golpo Online Reading pdf | Famous Story – Trending Bengali Online Short Story | Pdf Bengali Online Short Story | Bengali Online Short Story App | Full Bengali Online Short Story Reading | Bangla Golpo Online Reading Blogs | Trending online bangla golpo pdf
Best Story Blogs in Bengali | Live Bengali Story in English | Bangla Golpo Online Reading Ebook | Full Bangla Galpo online | Bengali Online Short Story 2024 | New Bengali Online Short Story – Episode | Golpo Dot Com Series | Bengali Online Short Story Video | Story – Bengali Online Short Story | New Bengali Web Story Audio | New Bengali Web Story Video | Bengali Online Short Story Netflix | Audio Story – Bengali Online Short Story | Video Story – Bengali Online Short Story | Shabdodweep Competition | Story Writing Competition | Bengali Writer | Bengali Writer 2024 | Trending Bangla Golpo Online Reading | Top Bengali Story Viewer | Bengali Online Short Story Web Story | Best Read Online Bengali Story | Read Online Bengali Story 2024 | Trending online bangla golpo book pdf
Shabdodweep Bangla Golpo Online Reading | New Bengali Story Viewer | Bengali Famous Story in pdf | Modern Online Bangla Galpo Download | Bangla Golpo Online Reading mp3 | Horror Adult Story | Read Online Bengali Story Collection | Modern Online Bangla Galpo mp4 | Modern Online Bangla Galpo Library | New Bengali Web Story Download | Full Live Bengali Story | Bengali Famous Story 2023 | Shabdodweep Bengali Famous Story | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Bengali Famous Story – video | Bengali Famous Story mp3 | Full Bengali Famous Story | Bengali Literature | Shabdodweep Magazine | Shabdodweep Web Magazine | Live Bengali Story Writer | Shabdodweep Writer | Trending online bangla golpo free download