শওকত নূর – সূচিপত্র [Bengali Novel]
স্টেশন কান্তার (১ম পর্ব) [Bengali Novel]
রাতের গভীরতা কিংবা গভীর রাতের নিস্তব্ধতার অভিজ্ঞতা কম বেশি সব মানুষের থাকে। রাতে হঠাৎ ঘুম ভাঙার পর যদি উপলব্ধিতে আসে আশেপাশে কেউ জেগে নেই, তাই শব্দ নেই; চাঁদ কিংবা কৃত্রিমপ্রহরি আলো বাদে আলো নেই, তবে বুঝতে হবে রাত গভীর। স্বেচ্ছাপছন্দকৃত একাকীত্বও এমন সময় অপছন্দের হয়ে উঠতে পারে। ভাবনাচ্ছন্ন হয় মন; অজানা আশংকায় দোলে। লোকালয়হীন নির্জন জায়গা হলে তো কথাই নেই। রেলস্টেশন কান্তার এমনই এক নির্জন স্থানের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। দিকবিস্তারী মাঠের মাঝখানে ছোট্ট একটা ঘর, ক’টা অনুচ্চ বার, ঝোলানো ঘণ্টা, ফলাকার নিয়নবাতি-এই হল স্টেশন। সংযোগ সড়কের ও মাথায় মাইল খানেক দূরের থানা সদরের লোকেরা দীর্ঘ-দাবির মুখে এটাকে প্রতিষ্ঠিত করে নিয়েছে। যাহোক, এ স্টেশনেরই স্টেশনমাস্টার মধ্যবয়সী আফলাতুন সাহেব। বিপত্নীক, নিঃসন্তান-তাই একাকী।
আফলাতুন সাহেব স্টেশন থেকে অল্প দূরের কোয়ার্টারে একা থাকেন। মাঝরাতে অবশ্যম্ভাবীভাবে নিয়মিত তার ঘুম ভাঙে। সহজে আর ঘুম নামে না চোখে। বিছানায় উসখুস করেন ; কখনো বা খাট থেকে নেমে মেঝেতে পায়চারি করেন; আবার খাটে ফিরে ঘুমাবার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে শিয়রের কাছের জানালা খুলে বসেন। সুদূরে বিস্তৃত মাঠ দুর্ভেদ্য অন্ধকারে মিশে থাকে, নিকটের শালবনের আকাশচুম্বী চূড়া তাকে যথারীতি নিজ ক্ষুদ্রতা স্মরণ করায়। আর অদূরের স্টেশনঘর, ঘোলা বাতি, টিমটিম আলো জ্বলা সর্পিল ট্রেনের মৃদু শব্দ প্রস্থান তার একাকীত্বকে আরো বেশি প্রকট করে তোলে। চোখ ফিরিয়ে তিনি জানালার কপাট টেপেন। বিছানায় চিৎ কাৎ উপুড় হয়ে ঘুম নামানোর কাজে সংগ্রামী হন। কখনো কিঞ্চিৎ সফল হন ; কখনো বা পূর্ণ ব্যর্থ হয়ে একসময় ভোরের আজান শোনেন। ভোরবেলা ঢুলুঢুলু চোখে স্টেশনে ছোটেন। এভাবে পার হয়েছে বছর কয়েক। কর্ম-জগতের ওপর তলায় তার কোনো খুঁটি নেই, জোর নেই। তাই এভাবে থাকা; অদৃষ্ট বলে সব মেনে নেয়া।
সেদিন মাঝরাতে ঘুম ভাঙার পর ঢি’ মেরে কী যেন ভাবছিলেন আফলাতুন সাহেব। আচমকা চমকালেন তিনি। ওপাশের শালবনের দিক থেকে কিশোরী মতো কেউ যেন আর্তস্বরে ডেকে উঠলো : রিংকু, ভাই আমার ! আফলাতুন সাহেব সচকিত কান পাতেন। কিন্তু এখন কোনো সাড়াশব্দ নেই। একেবারে নিস্তব্ধ। ধড়মড় বিছানায় উঠে বসলেন তিনি। এপাশটা সংরক্ষিত এলাকার মধ্যে। জনমানব প্রবেশের সুযোগ সম্ভাবনা নেই। তাছাড়া সাধারণ লোকালয় দূরে। একমাত্র বৃদ্ধ পাহারাদার রজত তেওয়ারি ওদিকের পাহারাছাউনিতে পাহারায় থাকে। তাহলে ওদিকে চিৎকার করে কে ? আবারো ভালোমতো কান পাতেন তিনি। কিন্তু কোন সাড়াশব্দ শুনতে পান না। একেবারে সুনসান নীরবতা। আফলাতুন সাহেব ভীষণ কৌতূহল বোধ করলেন। তিনি যে ভুল শোনেননি সে বিষয়ে তার তিলমাত্র সংশয় নেই। এবারে তিনি বিছানায় হামাগুড়ি দিয়ে শিয়রের কাছের জানালা খুলে দৃষ্টি দিলেন বাইরে। অমাবস্যার গভীর অন্ধকারের সাথে শীতের কুয়াশা মিশে দুর্ভেদ্যতায় নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে ফাঁকা ফসলের মাঠকে। ওপাশের বিশালাবয়ব শালগাছগুলো এই প্রথম তার নজরে এলো একেবারে ভিন্নরূপে। বিশালদেহী কতগুলো দানব যেন কোনও কৌতূহলে তীক্ষ্ণ চোখে মাথা ঝুঁকে আছে ভূমিতে। গা ছমছম করে ওঠায় দ্রুত জানালার পাল্লা চাপিয়ে কপাট ধাক্কালেন তিনি। ঠিক তখনই ওপাশ থেকেই আবারো ভেসে এলো সেই আর্তচিৎকার, রিংকু , ভাই আমার !
আফলাতুন সাহেব দ্রুত বিছানায় গা এলিয়ে আপাদমস্তক লেপে ঢেকে দিলেন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেন শব্দটি শুনতে। না শুনতে পেয়ে চোখ বুজলেন ঘুমাতে। সেকেন্ড কয়েক গেছে; এরই মধ্যে আবারো ধ্বনিত হল সেই শব্দ। এবারে আরো বেশি করুণ, আরো বেশি ভয়ার্ত : রিংকু-উ-উ-উ, ভা- ই – ই—- আমার!
আফলাতুন সাহেবের মনে হলো গুঁমড়ে কাঁদছে যেন কেউ। তিনি টের পেলেন তার সারা গায়ে কাঁপন ধরেছে। ওদিকে একটা আকস্মিক ঝড় যেন উঠলো বাইরে। শালবন থেকে শুরু হয়ে শো-শো শব্দে তা ঘরের ওপর দিয়ে যেন বয়ে গেলো স্টেশনের দিকে। ঘরের চালে ঝুরঝুর করে অসংখ্য কী পড়ার শব্দ হবার পর একযোগে সব নিশ্চুপ নিস্তব্ধ হয়ে গেলো। এখন একেবারে পিনপতন নীরবতা। সাতপাঁচ ভাবনার ঘোরে এক সময় ঘুমে আচ্ছন্ন হন আফলাতুন সাহেব।
সকালে দরজায় জোর করাঘাতের শব্দে ঘুম ভাঙে তার । কে এভাবে কড়া নাড়ছে? ধড়মড় বিছানায় উঠে বসেন তিনি। তখনই বাইরে থেকে পাহারাদার রজত তেওয়ারির গলা ভেসে আসে : ছাহাব, উঠিয়ে? খুন হোয়া হ্যায় ছাহাব, খুন। আপকা দরওয়াজামে কিশোরীকা লাশ পাড়কে হ্যায়, ছাহাব। ছাহাব, জলদি উঠিয়ে, ছাহাব।
আফলাতুন সাহেব ভীষণ হকচকিয়ে যান। বিছানা থেকে লাফিয়ে নেমে আসেন। দরজায় মুখ ঠেকিয়ে বলেন, কিছকা খুন হ্যায় ? এ আপ কিয়া বোলতা হ্যায় ? কিছনে কিয়া খুন ?
ম্যায় সাচ্চা বোলতাহু, ছাহাব। আপকা দরওয়াজামে খুন। এক কিশোরীকা লাশ উপার হোকে পাড়া।
আফলাতুন সাহেব দরজা খুলে আঁতকে ওঠেন। ঠিক তার চোখের সামনেই পড়ে আছে এক নিথর দেহ। বয়সে কিশোরী। গায়ের ফ্রক উল্টে হাফপ্যান্ট বেরিয়ে আছে। রক্তের স্রোতধারা রাস্তা পর্যন্ত বয়ে গেছে। লাল পিঁপড়া সারিবেঁধে হামলে পড়েছে যতদূর চোখ যায়। খুনী কিংবা খুনীরা সম্ভবত জুতায় বা পায়ে আটকানো রক্তের ছাপ ফেলে গেছে রাস্তা জুড়ে। আফলাতুন সাহেব কোন উচ্চবাচ্য করতে পারলেন না। পাহারাদার বলে চললো, এ কিয়া ইনছাফ হ্যায় ছাহাব, এ কিয়া ইনছাফ? ইতনা কিশোরীকা খুন ! খোদাকে আরস নড় উঠিয়ে, ছাহাব ! খোদাকে আরস নড় উঠিয়ে!
আফলাতুন সাহেব লাশটিকে উল্টে দিতে মাথা ঝুঁকলেন। কিন্তু পাহারাদার রজত তেওয়ারি জাপটে ধরলো তাকে। চেঁচিয়ে বললো, এ আপ নেহি করিয়ে, ছাহাব! এ নেহি করিয়ে! এ খুনকা কেস, বহুত আচ্ছা জটিলমে! এ লাশ আপ নেহি ছুঁইয়ে ছাহাব, নেহি ছুঁইয়ে!
আফলাতুন সাহেব ঘড়িতে দৃষ্টি দিয়ে দেখলেন তার অফিসে যাওয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে। রেলওয়ে অফিসের সময়; অন্যরকম সময়। এখানে শত ঝড়-ঝঞ্জা, বাধা-বিপত্তিকে তুচ্ছজ্ঞান করে সময়ের মূল্য দিয়ে চলতে হয়। তিনি অসহায় চোখে রজত তেওয়ারির দিকে চেয়ে বললেন, কারা করল এমন কাজ? রজত তেওয়ারি মাথা নিচু বললো, মুঝে মালুম নেহি, ছাহাব।
বিধ্বস্ত মনে ঘরে ঢুকে গোসল খাওয়া না সেরেই অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লেন আফলাতুন সাহেব। রজত তেওয়ারি তখনও মাথা নিচু করে আছে। আফলাতুন সাহেব যাওয়ার সময় অস্ফুট বললেন, আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত এখানেই থাকুন। তিনি পথ হাঁটার ফাঁকে ভাবছেন, অফিসে গিয়েই ফোন দেবেন থানায়। এ লাশ পুলিশের হাতে তুলে দেওয়াই এখন একমাত্র কাজ।
থানায় বেশ ক’বার ফোন দিয়েও লাইন পাননি আফলাতুন সাহেব। যতবার নম্বর টেপেন, ততবারই সমসম শব্দ ভেসে আসে। থানার ফোন বিকল হল ? কী ব্যাপার ? এরই মধ্যে উৎসুক কর্মচারীরা ঘিরে ধরেছে তাকে। সবার একই প্রশ্ন-কী করে খুন হল, কারা করল খুন, ভেতরে ঢুকল কিভাবে প্রভৃতি। আফলাতুন সাহেব কারোরই প্রশ্নের জবাব দিতে উৎসাহী হলেন না। বার বার থানার উদ্দেশ্যেই ফোনে চেষ্টা চালাতে লাগলেন। এক সময় চিন্তিত হয়ে ভাবছিলেন একটা চিরকুট লিখে কাউকে থানায় পাঠাবেন।
থানার ওসির উদ্দেশ্যে প্যাডের পাতায় কলম ধরেছেন আফলাতুন সাহেব; এরই মধ্যে অবাক হয়ে দেখলেন ক’জন কনস্টেবল নিয়ে থানার দারোগা নিজেই তার অফিসের দরজায় হাজির। তিনি কিছু বুঝে ওঠার আগেই দারোগা ঘোষণা দিলেন, মাস্টার ছাহাব, ইউ আর আন্ডার এ্যারেস্ট! ডোন্ট ট্রাই টু-মুভ। হাবিলদার, হ্যান্ডকাফ লাগাইয়ে।
হতবিহবল আফলাতুন সাহেব আত্মসমর্পণ ভঙ্গিমায় হাত তুলে দেখলেন পাহারাদার রজত তেওয়ারিকেও পুলিশ -দল এ্যারেস্ট করেছে। সে চিৎকার করে তার পায়ে পড়তে উদ্যত হতেই হাবিলদার তার কোমরে লাথি কষে হাঁক দিলো, হারামজাদে নচ্ছার। দুয়ে মিলে রাতভর মেয়েটাকে রেপ করেছিস। কুকর্ম ধামাচাপা দিতে মেয়েটাকে খুন করলি! এখন আবার মায়াকান্না মারাচ্ছিস। বিশ্বাসঘাতক বানচোত!
ইয়ে সাচ্চা নেহি হ্যায় ছাহাব, সব ঝুট হ্যায়। ইয়ে সাচ্চা নেহি হ্যায়। রজত তেওয়ারি কান্নায় ভেঙে পড়ে।
চোপ, কুত্তেকো বাচ্চে, কুত্তে ! ইবলিশ কাহাপে ! তেরে ঘারপে মেয়েছেলে নেহি হ্যায় ! ইয়ে তো বুড্ডে ব্যাচেলার হো। বুড্ডে ব্যাচেলারমে মতি নেহি ঠিক থাকতা হ্যায়। মতি নেহি ঠিক। ইয়ে বাঘ তো নরমাংসমে মজা লুটতা হ্যায়। ঝুটিঅলা ও কবি ঠাকুর ঝুট নেহি বোলা যাতা হ্যায়। ঝুট নেহি বোলা। হ্যান্ডকাফ লো মাস্টার, ইবার জেলখানাকা মজা সামঝোগে ।
শওকত নূর | Shawkat Noor
Bengali Poetry 2023 | শিশির দাশগুপ্ত | কবিতাগুচ্ছ ২০২৩
Bengali Poetry 2023 | কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা | কবিতাগুচ্ছ ২০২৩
Bengali Poetry 2023 | গোবিন্দ মোদক | কবিতাগুচ্ছ ২০২৩
Bengali Poetry 2023 | বারিদ বরন গুপ্ত | কবিতাগুচ্ছ ২০২৩
bengali novel | indian poetry | indian poetry in english | indian poetry in urdu | indian poems | indian poems about life | indian poems about love | indian poems about death | bengali story | bengali story books for child pdf | bengali novel for adults | bengali story books | bengali story books for child | bengali novel pdf | bengali story for kids | bengali novel reading | short story | bengali novel analysis | bengali novel characteristics | bengali novel competition | short story definition | short story english | short story for kids | short story generator | short story ideas | bengali novel length | long story short | bengali novel meaning | long story | long story instagram | story writing competition | story writing competition topics | story writing competition for students | story writing competition malayalam | bengali novel competition india | story competition | writing competition | writing competition malaysia | writing competition london | writing competition hong kong | writing competition game | writing competition essay | writing competition australia | writing competition prizes | writing competition for students | writing competition 2022 | writing competitions nz | writing competitions ireland | writing competitions in africa 2022 | writing competitions for high school students | writing competitions for teens | writing competitions australia 2022 | writing competitions 2022 | writing competitions uk | bengali novel writing | bangla news article | bangla article rewriter | article writing | bengali novel ai | bengali novel app | article writing book | bengali novel bot | bengali novel description | bengali novel example | article writing examples for students | article writing for class 8 | article writing for class 9 | bengali novel format | bengali novel generator | article writing global warming | article writing igcse | article writing in english | article writing jobs | article writing jobs for students | article writing jobs work from home | article writing lesson plan | bengali novel on child labour | article writing on global warming | article writing pdf | bengali novel practice | article writing topics | trending topics for article writing 2022 | what is article writing | bengali novel trends 2023 | bengali novel topics 2023 | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | Shabdodweep Founder