Bengali Novel 2023 | খুঁজে ফিরি বিশল্যকরণী (পর্ব ৭) | উপন্যাস

Sharing Is Caring:

খুঁজে ফিরি বিশল্যকরণী (পর্ব ৭) [Bengali Novel]

সকালে শঙ্খ যখন ব্যাগ কাঁধে বাড়ি ঢুকলো, স্বাতী কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, – কোথায় ছিলে তুমি ? কাল সকালে বের হলে, আজ সকালে ফিরছো। কিছু বলে গেলে না।

– শয়তানটাকে শায়েস্তা করতে গিয়েছিলাম। অবজ্ঞার স্বরে শঙ্খর জবাব।

– তার মানে ? অবাক কিছুটা স্বাতী। কাকে শায়েস্তা করতে গিয়েছিলে ?

– তোমার রাতের আশ্রয়দাতা কে ।

– কি বলছো তুমি ? এ তুমি কি করেছো ? কি শায়েস্তা করেছো তাকে? উদ্বিগ্ন স্বাতীর প্রশ্ন।

– থানার গারদে ঢুকিয়েছি।

– কেন, কি দোষ করেছে মানুষটা ? আমাকে আশ্রয় দিয়ে উপকার করাটা দোষের ?

– ফুর্তি করার সাজা পেতে হবে না ? সেটাই পেতে চলেছে।

– তোমার লজ্জা করলো না কথাটা বলতে‌ ? ঝাঁঝিয়ে ওঠে স্বাতী।

মুহূর্তে বলিষ্ঠ একটা হাতের চড় স্বাতীর গালে আওয়াজ হয়ে উঠলো। এক প্রকার কঁকিয়ে উঠলো স্বাতী। আরো কয়েকটা কিল, চড় উপহার পেলো স্বাতীর শরীর । হিংস্রতার রূপ মানুষের শরীরী ভাষায় খুঁজে পাওয়া যে যায়, এই মুহূর্তে শঙ্খ কে দেখলে চেনা যায়। বোঝা যায়। ঈশ্বরের কি নিষ্ঠুর পরিহাস। স্বাতীর এই ছোট্ট পরিসরের জীবনে এতো ঘাত- প্রতিঘাত, এতো চড়াই- উৎরাই ,ভালোবাসা- বিদ্রূপ, চাওয়া -পাওয়া কতো সহজেই ঘটে যাচ্ছিলো। আবার নতুন নতুন সমস্যাগুলো কোথাও কোথাও ঝটে আটকে পড়ছিলো। তবুও সময়- ঘন্টা, দিন, মাস, বছর এগিয়ে চলছিলো। জীবনযাত্রা কতো রহস্যময়। নরম নেতিয়ে পড়া একটা দড়ি পাক খেতে খেতে শক্ত চাবুক হয়ে উঠতে পারে। অনেকের ধারণা থাকলেও স্বাতী ভাবেনি এমনটা কখনো। আজ স্বাতী শক্ত হবার চেষ্টা করলে নিজেকে। প্রতিবাদে গর্জে উঠলো।

– অনেক সহ্য করেছি, আর নয়। অন্যায় না করা একজন মানুষকে সাজা দিতে পারো না তুমি। এর দ্বিগুণ সাজা তোমাকে পেতে হবে।

– যাও পারলে শাস্তির বদলে শান্তি দাও গে। চিৎকার শঙ্খর।

– অবশ্যই যাবো। এতো পাপ তোমাকে কোনদিন ক্ষমা করবে না।

– যাও – তবে গেলে আর কোনদিন এ বাড়িতে পা রাখতে পারবে না, সেটাও শুনে যাও।

স্বাতী এক মুহূর্তের জন্য ভাবলো। ঘরে ঢুকে নিজের গচ্ছিত ছোট্ট পার্সখানা সকলের অজান্তে বুকের মধ্যে গুঁজে নিলে। এক কাপড়ে নিঃশব্দে রাস্তায় পা রাখলো। সকালের ভিড় ঠাসা বাস। মিনিবাস। অফিস টাইম ।কোনক্রমে উঠে পড়ল স্বাতী একটা বাসে। তাকে যে কোন প্রকারে তার গন্তব্যে পৌঁছতে হবে। শিয়ালদহ স্টেশনে যখন পৌঁছল দশটা বেজে পাঁচ। কাউন্টারে লাইনে দাঁড়িয়ে লালগোলা প্যাসেঞ্জার টিকিট নিলো। গাড়ি দশটা পঁয়ত্রিশ। কেমন যেন একটা চাপা বেদনা মনের মধ্যে। এই দুঃসাহসিক অভিযানে কতটা সাফল্য আসবে। কাজ সমাপ্ত হবে তারপর কি করবে। কিছুটা অস্থির লাগছিলো তাকে। স্বাতীর বাবা বলতো, – কোন সমস্যা হলে অযথা চিন্তা করে কোন লাভ নেই। সময় বলে দেবে তোমাকে কি করতে হবে। এটাই এখন স্বাতীর জীবনের মূল মন্ত্র।

একটা ফাঁকা সিট দেখে বসল স্বাতী। আশপাশ ভরে উঠলো অচেনা মানুষ জনে। এই প্রথম চেনা পথে যাত্রী হলেও, কোন ব্যাগপত্র ছাড়াই সওয়ারি স্বাতী। কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছিলো তাকে। অন্য সময়ের যাতায়াতে সঙ্গে থাকতো ছেলে-মেয়ে যে কেউ। শঙ্খ থেকেছে কতবার। আজ সম্পূর্ণ একা। অন্য বারে যাওয়ার সঙ্গে আজকের যাওয়া ভিন্ন কাজের। ভিন্ন মতের। অন্য বারের যাওয়ার সঙ্গে ফিরে আসার সময় সীমা বাধা থাকতো। আজ কেমন যেন বন্ধনহীন যাত্রা। উদ্দেশ্য থাকলেও যেন উদ্দেশ্যহীন যাত্রা। শুধু যাওয়ার তাগিদ তৈরি হয়েছে কিন্তু ফেরার কোন নিশ্চয়তা তৈরি করতে পারেনি, তৈরি হবেও না।

ট্রেনের গতি বেগে স্বাতীর হঠাৎ সম্বিত ফেরে। ট্রেন যে কখন ছেড়েছে খেয়াল করেনি সে। খেয়াল না করলেও কিছু যায় আসে না। ঘন্টা ছয়েকের যাত্রা। সুতরাং নিশ্চিন্তে একটা ঘুম হয়ে যাবে। কেনা জলের বোতল থেকে একটু জল খেলো স্বাতী। খোলা জানালায় চোখ রাখলো। আকাশের ভাসা ভাসা মেঘ, মেঘের কোলে ডানা মেলা চিল। সবুজ গাছগাছালির দৃশ্যপট থেকে সরেসরে যাচ্ছে দৃশ্য। হঠাৎ ঐ মনটা কেমন যেন চঞ্চল হয়ে ওঠে। যে উদ্দেশ্য নিয়ে যাচ্ছে স্বাতী। কোথায় কিভাবে শুরু হবে ? এখন সে প্রথম কোথায় যাবে ? থানা- পুলিশ, কোর্ট -কাছারি, এসবের তো সে কিছুই বোঝে না। অথচ এখন সেই উদ্দেশ্যেই যেতে হচ্ছে। একটা সৎ- ভালো মানুষকে তার স্বামী অন্যায় ভাবে সাজা দিতে চলেছে। হয়তোবা সাজা পাচ্ছে ও। যার কারণ আবার স্বাতী নিজেই। অথচ স্বাতীর কোনো ভূমিকাই নেই এ কাজের। কার্য-কারণ সম্পর্কযুক্ত। একটা ব্যতি রেখে অন্যটা নয়। এটাই নিয়ম- এটাই সূত্র। কারণ ছাড়া কোন কার্য নয়, কার্য ছাড়া কোন কারণ ও হয় না। কিন্তু আজ যে কারণে স্বাতীর এতো উদ্বিগ্নতা- তার কারণ সে নিজে হলেও প্রকৃত কারণ তার স্বামী। অন্যায় ভাবে তার নাম ব্যবহার করে যে কাজ সে করেছে তার পরিণাম যে কতো ভয়ংকর, সে কিছুই বুঝলো না। অথচ প্রকৃত কারণ ছাড়া একটা নিরীহ মানুষ। একটা গো-বেচারা ভদ্র মানুষ। অন্যায় কাজ না করেও অন্যায় তকমা গলায় নিয়ে হয়তো বা গরাদের আড়ালে আটকে আছে। শাপ শাপান্ত না করলেও মনের মধ্যে ঘৃণা তো আসছেই। একজন অসহায় মহিলাকে নিজের ঘরে আশ্রয় দিয়ে, নিজেদের খাবারের ভাগ দিয়ে, যার রাতের জীবনটা হয়তো কোথাও হারিয়ে যেতে পারতো। শিয়াল- কুকুরে ছিঁড়ে খেতে পারতো। তাকে সম্মানের সঙ্গে রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা করে দেওয়ার এই পুরস্কার। যে নারী জাতিকে ভক্তি সম্মান দিয়ে কথা বলা মানুষটা। নিজের কৃতকর্মের ফল সেই নারীর কাছ থেকেই হাতে হাতে পেয়ে গেলো। আগামী জীবনে আর কখনো কি এমন উপকার করতে চাইবে। করতে পারবে। অশিক্ষিত খেটে খাওয়া গরিব মানুষ। তার জীবনসঙ্গিনী সেও যে স্বামীর গরবে গরবিনী। স্বচ্ছতায় একই রকম। মনুষ্যত্বের খাঁটি সোনা। অশিক্ষা এদের জীবনে অভিশাপ হলেও- ঈশ্বরের লক্ষ কোটি আশীর্বাদ এদের জন্য। শুধু এরা সৎ ওর। ন্যায়পরায়ণ। নিষ্ঠাবান বলে। এদের সুখ মানুষের উপকার করে। এরা খুশি অপরের কাজে লাগতে পারে। একটা বস্তির ঝুপড়ি ঘর। দর্মা ঘেরা টালির ছাউনি। গা ঘেঁষা- ঘেঁষি বাস। মুসলিম পরিবার। সূর্যের আলো যেখানে কষ্ট করে আসে। শিক্ষার আলো পৌঁছবে ভাবার অবকাশই নেই। ভাবনা ভাবার লোক ছিলো না কোন কালে।

দুপুরের ঝাঁ ঝাঁ রোদ্দুর ফুঁড়ে ঝমাঝম শব্দে ট্রেনখানা ছুটে চলেছে। অন্যান্য যাত্রীদের মধ্যে কিছুটা ব্যস্ততা- দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য। যাদের কাছে খাবার নেই তারা হকারের অপেক্ষায়। অল্পক্ষণের মধ্যে একটা স্টেশনে ট্রেন থামলো। হকারদের চেঁচামেচিতে কামরা সর গরম। যে যার মতো খাবারের জোগাড়ে ব্যস্ত। স্বাতী হালকা খাবার নিলো। সকাল থেকেই প্রায় অভুক্ত। বাড়িতে খাবার কোন সময় বা মানসিকতাটুকু ছিলো না। এমন অন্যায়ের প্রতিবাদ স্বাতী জীবন বিসর্জন দিয়েও করতে পারে। সে মনোবল তৈরি করেছে। তৈরি হয়েছে। আজ তার হারাবার কিছু নেই। নতুন করে খুঁজে পাবার লক্ষ্যেই সে পথে পা মেলেছে। যে মনুষ্যত্ব- তার স্বামী নামক মানুষটা হারিয়ে দিয়ে গেছে। এই অন্ধকারাচ্ছন্ন পথে তাকে পা ফেলতেই হচ্ছে, একটা আলোর সন্ধান করতে।

আলো তাকে খুঁজে বের করতেই হবে। এটাই এখন স্বাতীর মূলমন্ত্র। যে পাপ তৈরি করে গেছে তার স্বামী – তার দায় তো স্বাতীরই। তারই নামে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে, ” আশ্রয় দেওয়ার প্রলোভনে যেভাবে তার শ্লীলতাহানি করা হয়েছে। তাতে ওই মহিলা যার উপর নাই মানসিক অবসাদে ভুগছেন, এমনকি ওই মহিলা লজ্জায়- ঘৃণায় আত্মহত্যা ও করতে পারেন যার দায় অবশ্যই ওই লম্পট ব্যক্তিকে নিতে হবে।”

হায়রে- বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে ।কার সঠিক বিচার পাওয়া উচিত ? এ বিচারের আসামী কে ? কেইবা ফরিয়াদি ? আসামি না হয়ে যে আসামি হিসাবে গরাদে যে মাথা কুটছে। আবার ফরিয়াদি হিসেবে যে বিচার চেয়েছে, সেই এখন আসামি হিসাবে ছুটে চলেছে। অন্যায় টাকে ন্যায় হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে। ছুটে চলা গাড়ির গতির সঙ্গে স্বাতীর উদ্বিগ্নতা ক্রমশ বাড়তে থাকে। মনটা অস্থির হয়ে পড়ে। সন্ধ্যার আগে পৌঁছে গেলেও কোথায় প্রথম যাবে ? কার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে !কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। সেই বস্তির কোন রাস্তাও চেনে না। একমাত্র ভরসা বয়স্ক স্টেশন মাস্টার। যোগাযোগের সেতু ওই লোকটাই। কিন্তু তারপর আজকের রাতের আশ্রয় কোথা হবে? কোন সভ্য- ভদ্র মানুষ আজকের যা ঘটে যাওয়া ঘটনার চরিত্র বিশ্লেষণ করে। নতুন করে তাকে রাত্রি বাসের জন্য ঘরে থাকতে দেবে।

ট্রেন থেকে নেমে গুটিসুটি পায়ে স্টেশন মাস্টারের দরজায় পা রাখল স্বাতী। কর্তব্যরত মাস্টারমশাই খাতা থেকে মুখটা ঈষৎ উঁচু করে বললেন, – কি চাই ?
– স্যর, আমি স্বাতী। আমাকে কদিন আগে রাতের আশ্রয় করে দিয়েছিলেন যাঁর বাড়িতে। আজ আমার জন্য মিথ্যে সাজানো কেসে তাকে না কি গরাদে আটকে রাখা হয়েছে।
– ঠিক তাই, কিন্তু এমন আচরণ কিভাবে তৈরি হলো ?
– আমি সেই প্রায়শ্চিত্ত করতেই কলকাতা থেকে ছুটে এসেছি। আমাকে আপনি সাহায্য করুন।

এক মুহূর্তের জন্য হতবাক প্রৌঢ় স্টেশন মাস্টার। এমন ঘটনার বিহ্বলতায় চোখ-কান যেন কিছু সময়ের ফারাকে অকেজো হয়ে যায়। ঘোর কাটলে ধীর পায়ে বাইরে আসে। এক কর্মীকে দিয়ে ডেকে পাঠায় রিকশা ইউনিয়নের লোকেদের। অল্পক্ষণেই কজন লোক টেবিল ঘিরে দাঁড়ালো। কারো পরনে ঢোলা হাঁটু পর্যন্ত প্যান্ট গায়ে গেঞ্জি। কেউ লুঙ্গি- হাফ হাতা শার্ট। মাথায় অবিন্য‌স্থ চুল।
– মাষ্টার মশাই, আমাদের থেকেছেন ?
– হ্যাঁ, শোনো বাপু। আরশাদ এখনো থানার লকআপে আছে। যাকে সবথেকে বেশি দরকার তিনি নিজেই এসেছেন। চেয়ারে গুটিসুটি করে বসে থাকা মহিলাকে দেখিয়ে বললেন, – ইনি স্বাতী। সেদিন রাতে এদের মা- মেয়েকে আশ্রয় দেওয়ার ঘটনা থেকেই আজকের বিপর্যয়। যাই হোক এনাকে নিয়ে তোমরা থানায় যাও ।নেতাদেরও খবর দাও। এর মুখ জবানিতেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে । আরশাদ ছাড়াও পাবে।

লোক গুলোর মুখে কেমন প্রাক যুদ্ধজয়ের হাসি। স্বাতী কে নিয়ে বের হলো অফিস থেকে ।রিকশা স্ট্যান্ডে খবর হতেই হৈচৈ বেধে গেলো চারিদিক। স্বাতীকে দেখার ভিড় বাড়লো ।একজন বললে, – দুজন চলে যা কাশীদাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে আয়। আমরাও ম্যাডামকে নিয়ে সকলে থানায় যাচ্ছি। আজকে একটা ফয়সালা চাই। বাতাসে খবরটা ভেসে বেড়ালো। আজাদ কলোনির আনাচে-কানাচে আওয়াজ পৌঁছে গেলো, যে মেয়ের জন্য ঘটনা সে নিজে এসেছে সাক্ষী দিতে। রিজিয়া আনন্দে- দুঃখে ঝরঝরিয়ে কেঁদে ফেললো। মনে মনে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলে, আল্লাহ – তাই যেন হয়। সত্যিটা লোকে জানুক। আমার মরদটা দোষের দোষী নয় । মিথ্যে বদনাম দেওয়া হয়েছে। দলবেঁধে স্বাতীকে নিয়ে থানার সামনে দাঁড়ালো রিক্সা গুলো। অল্পক্ষণের মধ্যেই যেন আজাদ কলোনি আছড়ে পড়লো। দলবল সহ কাশী বাবু এসে স্বাতীকে নিয়ে থানায় ঢুকলে।

বড়বাবু বললেন, – আপনি যে স্বাতী মিত্র তার কোন প্রমাণ আপনার কাছে আছে কি ?
কাশী বাবু বললেন, – এভাবে আইডেন্টিটি নিয়ে কি আমরা কেউ ঘুরি।
– তা নয় ঠিকই। কিন্তু এরকম ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়।
স্বাতী বললে, – আমার নাম করে যখন কেস ডাইরি করা হয়েছিলো। তখন কি কোন প্রুফ দেয়া হয়েছিলো।
– না , তা প্রয়োজন ছিলো না ডাইরির ক্ষেত্রে ।আপনার স্বামীর আই কার্ড সঙ্গে ছিলো। বড়বাবুর ধমকের জবাব।
-ওটাই যে স্বাতী মিত্রর স্বামী তার কি প্রমাণ ছিলো। দেখুন স্যার, থানা জীবনে দেখেনি। দেখলাম। পুলিশ দেখলাম। আমার উপকার করে তার বিনিময় কেউ সাজা পাবে, সেটা মেনে নিতে পারেনি। সেজন্যে শুনেই কলকাতা থেকে ছুটে এসেছি। মানুষ টাকে ছেড়ে দিন । সত্যের জয় হোক।
– গ্রেপ্তার করা কোন আসামীকে বললেই তো এভাবে ছাড়া যায় না।
– স্যার আসামি বলতে আপনি কাকে- কিভাবে বোঝাচ্ছেন ? যে কোন অপরাধ করলো না, সে আসামি। আর যে মিথ্যে নালিশ করে একজন ভালো মানুষকে লকআপে ঢুকালো সে তাহলে কে ? স্বাতী যেন আরশাদের পক্ষের শওয়াল রত উকিল।

কয়েক মুহূর্তের নিস্তব্ধতা ভেঙে কাশিনাথ বাবু বড় বাবুকে বললেন, – আপনি কি চাইছেন আরশাদ কে ছাড়বেন না। নিরপরাধ প্রমাণের পরেও ।আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, আজ এখনই আরশাদকে ছাড়তে হবে।‌ না হলে জড়ো হওয়া জনতা ছাড়িয়ে নিয়ে যাবে। আর যদি কোন অঘটন ঘটে তার দায় কিন্তু আপনার থাকবে।
একটু কথা কাটাকাটি। একটু ধমক- ধামক।একটু হুংকার। থানার চরিত্র মাফিক সবকিছুই হতে থাকলো। শেষ অধ্যায়ে শুকনো মুখে গাল ভর্তি কাঁচা-পাকা, খোঁচা -খোঁচা দাড়ি নিয়ে, আরশাদ যখন বড় বাবুর ঘরের সামনে এসে দাঁড়ালো। স্বাতীকে দেখে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললে বললে, – আমি কি দোষ করেছিলাম ম্যাডাম ? এভাবে আমাকে শাস্তি দিলেন ?
কাশিনাথ বললেন, – তুই বিনা দোষে শাস্তি পাচ্ছিলি বলেই ,মেয়েটা কলকাতা থেকে শুনেই ছুটে এসেছে । স্বামীর পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে।
– কিন্তু আমি যে পাপ না করে এমন শাস্তি পেলাম। আমার গায়ে যে কালি লাগলো। তা কি দিয়ে ধুয়ে দেবেন ? আরশাদের আকুতি।

স্বাতীর চোখে জল অন্যরাও এমন প্রশ্নে কিছুটা অপ্রস্তুত সাথী বললে আমার জীবন বাজি রেখেই সেজন্য এসেছি। আমার জীবনকে যে কলঙ্কিত করেনি তাকে কলঙ্কের বোঝা বইতে হবে মেনে নিতে পারেনি বলেই একপ্রকার ঘর ছেড়ে চলে এসেছি। আরশাদ তদ্রূপ কাতর কণ্ঠে বলে উঠল ম্যাডাম আপনি আমাকে বোঝালেন গো আমি কি সকল মানুষকে বোঝাতে পারবো আমাকে কি কেউ বিশ্বাস করবে।
কাশী বাবুর হাঁকে আক্ষেপের কথা কাটাকাটি বন্ধ হলো। থানার যাবতীয় কাজ সেরে সকলকে নিয়ে আজাদ কলোনিতে যখন সকলে ফিরলো। তখন অনেকটা সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত্রি। তবে আজাদ কলোনির চরিত্রগত সময়ে সন্ধ্যা বলা যায়। চারিদিকে শোরগোল। আরশাদ ফিরে এসেছে। যাকে নিয়ে এতো বড় ঘটনা। সেই মেয়ে নিজে এসেছে। চারিদিকে একটা হৈ-চৈ ।কানাকানি। মহিলাকে স্বচক্ষে দেখার চেষ্টা। ক্ষেত্র-বিশেষে কটূক্তি। শ্লেষ মাখা বিদ্রূপ।

রিজিয়া আজ এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। শত প্রশ্নের জাল তাকে ঘিরে ধরেছে।যা কে সেদিন ‘ দিদি ‘ সম্বোধন করে সাধ্যমতো যত্ন- আত্তি করে রাতের আশ্রয় দিয়েছিলো। যে মেয়ে মিথ্যে বদনাম দিয়ে, তার স্বামী কে অসৎ বানিয়ে থানায় ঢুকিয়েছে। সেই নিজেই আবার ছুটেছে তাকে রেহাই করতে।আজ ও সে আমার ঘরে অতিথি হয়েই থাকবে। অস্বাভাবিক ভাবনার একটা প্রতিফলন- স্বাভাবিক হয়েই বাস্তব জগতে দাঁড়িয়ে। মুখোমুখি তার একটা আনপড় মহিলা। অশিক্ষিত মহিলা।স্বামী বাচ্চা-কাচ্ছা নিয়ে সংসার করা এক মহিলা।গরীব, হা-ভাতে বস্তির গৃহবধূ মহিলা। অন্যজনেদের কটূক্তির শব্দ কানে এলেও এই মুহূর্তে কেমন ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব-বিহ্বল রিজিয়া। হিসাব মেলাতে পারেনি। হিসাব জানেনা সে। দিন আনি- দিন খাই, একটা সংসারে স্বামী বাচ্চাদের নিয়ে কোন রকমে খেয়ে পরে বেঁচে আছে। স্বামীর সততা- ভালোবাসা। স্বামীর ইচ্ছা- অনিচ্ছার বিরুদ্ধচারণ করতে হয় কিনা সেটাও কোনদিন ভেবে দেখেনি। এমন ভাবনা তার মনেও আসেনি কোনদিন। স্বামীর সুখ- তার সুখ। চাহিদা- যোগানের হিসাব করে না। পাওয়া না পাওয়ার কোন আক্ষেপও নেই। রিজিয়া জীবনে যেন হার মানতে শেখেনি বলেই- তার জেতার আনন্দ বলেও কিছু নেই। জীবনটা তার বিশাল খুশিতে ভরা না হলেও, সে যে সুখী তার শরীরী ভাষাই বলে দেয়। তার আতিথেয়তা বলে দেয়।

সেদিনের অতিথি বিশেষ কিছুই ভাবায়নি রিজিয়াকে। কিন্তু আজ সেই একই অতিথি নতুন কতো ভাবনার জন্ম দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। যে মানুষটা হিংসে করে, উপকার করার বদলা হিসেবে ষড়যন্ত্র করে মিথ্যে বদনাম দিয়ে তার সরল- সাদাসিধে স্বামীকে জেলে পুরলে। মানুষ টার মুখ পোড়ালে। আজ সেই কিনা সংসার, বাচ্চা- স্বামীকে রেখে এক মূলক থেকে ছুটে এসেছে মানুষটাকে অন্যায়ের হাত থেকে রক্ষা করতে ? কেমন যেন গোলমেলে হয়ে যাচ্ছে হিসেবখানা। কোন অদৃশ্য তাহলে সাজা দিলে তার স্বামীকে। আর কেনই বা তাদের অতিথিকে এমন অন্যায় কাজের দোষ নিতে হলো।

জয়নাল আবেদিন | Joynal Abedin

শ্রমিক আন্দোলনে সুভাষচন্দ্র বসু | প্রবন্ধ ২০২৩ | Bengali Article 2023

“স্তন কর” বিরোধী নারী আন্দোলন ও নাঙ্গেলির (Nangeli) আত্মত্যাগ | Bengali Article 2023

সুশান্ত সেন | কবিতাগুচ্ছ ২০২৩ | Bengali Poetry 2023

প্রবীর রঞ্জন মণ্ডল | কবিতাগুচ্ছ ২০২৩ | Bengali Poetry 2023

খুঁজে ফিরি বিশল্যকরণী | বিশল্যকরণী | বিশল্যকরণী | রামায়নের বিশল্যকরনী | বিশল্যকরণী গাছের উপকারিতা | লাল বিশল্যকরণী | মৃতসঞ্জীবনী গাছ | বিশল্যকরণী গাছের গুনাগুন | মৃত সঞ্জীবনী গাছের উপকারিতা | বিশল্যকরণী গাছের বিজ্ঞানসম্মত নাম | বিশল্যকরণী কী | বাঁচানো হোক বিশল্যকরণী | শব্দদ্বীপের লেখক | শব্দদ্বীপ | সেরা বাংলা গল্প | গল্প ও গল্পকার | সেরা সাহিত্যিক | সেরা গল্পকার ২০২২ | বাংলা বিশ্ব গল্প | বাংলা গল্প ২০২২ | বাংলা ম্যাগাজিন | ম্যাগাজিন পত্রিকা | শব্দদ্বীপ ম্যাগাজিন

Bisholyokoroni | bengali novel | indian poetry | indian poetry in english | indian poetry in urdu | indian poems | indian poems about life | indian poems about love | indian poems about death | bengali story | bengali story books for child pdf | bengali novel for adults | bengali story books | bengali story books for child | bengali novel pdf | bengali story for kids | bengali novel reading | short story | bengali novel analysis | bengali novel characteristics | bengali novel competition | short story definition | short story english | short story for kids | short story generator | short story ideas | bengali novel length | long story short | bengali novel meaning | long story | long story instagram | story writing competition | story writing competition topics | story writing competition for students | story writing competition malayalam | bengali novel competition india | story competition | writing competition | writing competition malaysia | writing competition london | writing competition hong kong | writing competition game | writing competition essay | writing competition australia | writing competition prizes | writing competition for students | writing competition 2022 | writing competitions nz | writing competitions ireland | writing competitions in africa 2022 | writing competitions for high school students | writing competitions for teens | writing competitions australia 2022 | writing competitions 2022 | writing competitions uk | bengali novel writing | bangla news article | bangla article rewriter | article writing | bengali novel ai | bengali novel app | article writing book | bengali novel bot | bengali novel description | bengali novel example | article writing examples for students | article writing for class 8 | article writing for class 9 | bengali novel format | bengali novel generator | article writing global warming | article writing igcse | article writing in english | article writing jobs | article writing jobs for students | article writing jobs work from home | article writing lesson plan | bengali novel on child labour | article writing on global warming | article writing pdf | bengali novel practice | article writing topics | trending topics for article writing 2022 | what is article writing | bengali novel trends 2023 | bengali novel topics 2023 | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | Shabdodweep Founder

1 thought on “Bengali Novel 2023 | খুঁজে ফিরি বিশল্যকরণী (পর্ব ৭) | উপন্যাস”

  1. লেখা পড়ে খুব ভালো লাগছে! মনে হচ্ছে ঘটনাগুলো চাক্ষুষ দেখতে পাচ্ছি!!

    Reply

Leave a Comment