কুহেলী দাশগুপ্ত – সূচিপত্র [Bengali Story]
বাহিরে নও অন্তরে (মুক্ত গদ্য) – কুহেলী দাশগুপ্ত [Bengali Mukta Godya Collection]
ঠাকুর সেবার ভোগে রোজ পিঁপড়ের সারি। লাইন দিয়ে কখন লেগে পড়ে আহরণে! কিছু সময় পর বোঝা যায়। একটা ছোট্ট টিকটিকি মা লক্ষ্মীর ছবির পেছনে লুকিয়ে পড়ে। কখনো দেখি, সে ও ঠাকুরের থালা এঁটো করছে! আসলে আজকাল আমি আর ঠাকুরের থালা গ্লাস ভোগ নিবেদনের পরে সরিয়ে রাখি না। তিনি নিমিত্ত হয়ে আসনে উপবিষ্ট আর আমি উপযাজক হয়ে তাড়িয়ে বেড়াই, কে ওনাকে ছুঁয়ে দিলো, কে ওনার বাসন এঁটো করল। বাগানে কাজ করতে করতে সূরয মালি এসে যখন এক ঘটি জল চায়, তখন জলের সাথে চারটে বিস্কুট এগিয়ে দিতে দিতে ভাবি, ক্ষিধেও পেয়েছে নিশ্চয়।
— আবার এসব কেন মা!
মুখের বারণ থাকলেও চোখে মুখের উজ্জ্বলতা বলে দেয়, সে খুশি হয়েছে। এই পেটের যোগান দিতেই তো এতো পরিশ্রম। বৈকালিক ভ্রমণকালে যখন দেখি কোন ভালোবাসার পরিবেশনে পথের সারমেয়কুলের উদরের উপায় হচ্ছে, কেন জানি মনে হয় এ ঈশ্বরের দান। সৃষ্টির কোন কিছু তার অলক্ষ্যে নয়। ধীরে ধীরে বাহ্যিক আচারে বিমুখ হতে হতে আমি সংসারের সকল কর্তব্য কর্ম সেরে, নিজের স্নান, খাওয়া সেরে শেষ বেলাতে যখন ঠাকুর সেবায় লাগি, তখন গৃহ পরিচারিকা বলে ওঠে,
–এতো বেলাতে, খেয়ে দেয়ে কেউ ঠাকুর দেয়!
আমার ভেতরের আমি বলে ওঠে,
— কে বললে! সেই সকাল থেকেই তাঁর সেবা করে চলেছি। এই আসন কেবল উপলক্ষ মাত্র। এই যে ঘরের উপার্জনশীল মানুষগুলো এই হাতের খাবার খেয়ে কাজে যাচ্ছে, ফিরে আবার তৈরি সেবা পাবে, সবই তো তাঁর জন্যে। কাজ করতে করতে পেটের ক্ষিধে বলে দেয়, শরীরের প্রয়োজন কি। সিংহাসনে যিনি নির্বিকার থাকেন, কীট পতঙ্গের উৎপাতকে যিনি আমল দেন না, তিনি অতি যত্নের সীমিত আসনে সীমাবদ্ধ নন।টবের মর্নিং গ্লোরির পাতার ফাঁকে যে ছোট্ট পাখিটি এসে শিষ দিয়ে ডাকে, যাকে ক্যামেরার লেন্স এর ফাঁদে বন্দি করা যায় না, তার মাঝে ও তোমার প্রকাশ। হ্যাঁ, তুমি যদি সত্য হও, তবে চলমানতার মাঝে তোমার প্রকাশ। এই জগত, সংসার ক্ষুধার জালে বন্দি। মনের ক্ষিধে, পেটের ক্ষিধে, শরীরের ক্ষিধে। এই ক্ষুধার জ্বালায় আগ্রাসী মনোভাব যত। ধনী জনের অর্থের আকাঙ্ক্ষা মেটে না, গরীবের ঘরে অন্ন সংকুলান হয়না। পৃথিবীর যত জীব জন্তু কোন না কোন ভাবে ক্ষুধা নিবৃত্ত করছে। তবে কোন কারণে আমার ছোট্ট সিংহাসনে তুমি বন্দি থাকবে! প্রণামী ছাড়া পুজো অসম্পূর্ণ, উপরি পাওনা ছাড়া কাজ থাকে অসম্পূর্ণ। তবে পরিপূর্ণতা কিসে! তোমার উপলব্ধি বলে দেয়, আমার স্নেহ, মায়া, রাগ, ঘৃণা, ক্ষুধা সবের মাঝেই তুমি। তুমি সদয় হলে, চিত্ত জাগরণ হয়, মন শান্ত হয় আর অল্পের মাঝেই সন্তুষ্টি আসে। আকারে কেবল নয় ,অন্তরে তোমায় দর্শন করি। আমার ভুলের মাঝে অনুতাপ হয়ে তুমি বোধ জাগাও, ধূর্ততা ও চাতুর্য দেখলে যখন পিছু হটি -তখন অন্তরের তুমি সাবধান কর। তোমার অনুভবেই বুঝতে শিখেছি, প্রাচুর্য নয় ভালোবাসা আঁকড়ে বাঁচার মানে খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিদিন টবের গাছগুলো, জানালার গ্রিলে বসা পাখিগুলো, আমার চারপাশের বন্ধু পরিজনেরা তুমি হয়েই বিরাজ করে। শুধু সেবার নামে ক্ষণিকের আচার থেকে তোমায় মুক্তি দিয়ে বৃহৎ পরিসরে তোমায় উপলব্ধি করতে চাই।
দশভূজা (মুক্ত গদ্য) – কুহেলী দাশগুপ্ত [Bengali Mukta Godya Collection]
বছর ভর অপেক্ষার অবসানে চিন্ময়ী আবির্ভূতা হন মৃন্ময়ী রূপে। সারা বছর দ্বিভূজা রূপে শক্তিময়ী দশ দিক সামলে সংসার রক্ষা করে চলেন। শরৎকালে শারদা আসেন বরাভয় প্রদানে—তিনি যে সর্বকালে বিরাজিতা কন্যা, জায়া, জননী রূপে।
১
কাক ডাকা ভোর হওয়ার আগে শয্যা ত্যাগ করেন বীণা। অ্যাজমা রোগী স্বামীর সারাটি রাত ঘুম হয়না। রাত জেগে বুকে কালোজিরে রসুনের গরম সরষের তেল মালিশ দিয়ে কখনো চোখ লেগে আসে। সেই টুকু বিশ্রাম সম্বল নিয়ে আবার কাজে লেগে পড়া। মাটির উনুনে কাঠের আঁচ তুলে গরম চা পরিবেশন দিয়ে শুরু। তারপর, একে একে রান্না পর্ব, পাঁচ সন্তানের কলেজ, স্কুলের টিফিন, অসুস্থ শাশুড়ীর দেখভাল পরপর চলতে থাকে। নিজ হাতে গাই গরু, বাগান, হাঁস মুরগীর পরিচর্যা করে নিজের কথা ভাবার সময় কই? পুরুষতান্ত্রিক সমাজে স্বামীর কথার অন্যথা হওয়ার জো টি ছিলনা। তবুও হাসিমুখে নিজ কর্তব্য কর্ম সামলে চলেছেন।
২
ভোরের আযানের ধ্বনিতে ঘুম ভাঙে বানীর। একান্নবর্তী পরিবারে আঁশ, নিরামিষের ঝক্কি সামলে নিতে স্নান পর্ব সারতে হয় কাক ভোরে। কত্তা মশাইয়ের রকমারী রান্নার বায়নাক্কা। তার ওপর ছেলে মেয়েদের স্কুলে আনা নেয়া করার দায়িত্ব ও তার। কাজের অবসরে ছেলে মেয়ের পড়াশুনোর তদারকি, নোটস্ তৈরি। পান থেকে চুন খসলে বদরাগী স্বামীর তিরস্কার হজম করে নিরবে রাতে বালিশ ভিজে ওঠে। চোখের কোনে গভীর কালো ছোপ রেখে যায় ক্লান্ত দেহ মনের চিহ্ন। এত সহ্যগুণ শক্তির আধারেই সম্ভব।
৩
দুই সন্তান নিয়ে প্রবাস জীবনে মিতার লড়াই কর্কট রোগের সাথে। জীবিকার দায়ে দেশ ছাড়া সম্ভব হয়নি তার স্বামীর। ওপার বাংলায় স্কুল শিক্ষিকার চাকরী ছেড়ে দশদিক সামলে ছেলেদের এগিয়ে নিয়ে চলেছে। পরিজনেরা দেখভাল করলেও মনের জোর নিয়ে বাঁচার লড়াই চলে। কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন – চিকিৎসার কোন ত্রুটি নেই। জন্ম মৃত্যুর মাঝে দুটি বাহু বাড়িয়ে সংসার বাঁচানোর অদম্য চেষ্টা।
8
চিকিৎসক স্বামীর অকালে মৃত্যুতে থেমে থাকেনি শুভ্রার জীবন। দু’চোখে পিছিয়ে পড়া শ্রেনীকে এগিয়ে নেয়ার স্বপ্ন জাগিয়ে শুভ্রার হাত ধরেছিলেন তিনি। সেই স্বপ্নের পথে চলা থমকে যেতে দেবেনা এই প্রজ্ঞা নিয়ে পথ চলা। অসহায় পরিজনদের পাশে থাকা,সন্তানদের যথার্থ প্রতিপালনের সাথে কলেজের শিক্ষকতার দায়িত্ব ভার সামলে কখনো হতাশা জাগে মনে। ভালোবাসার মানুষটির স্বপ্ন সত্যি করার প্রয়াস জাগিয়ে মনকে শক্ত করে সে। সর্বংসহা মাতৃ রূপে শক্তি বিরাজিতা।
৫
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দেব, মা সারদা আর স্বামীজির ভাবধারায় বিশ্বাসী রমার জীবন পথ ছিল গদ্য, কবিতার ছন্দে ভরপুর। মায়াময় জীবনে চুপিসারে কঠিন রোগের হানা। প্রাণের সম্পদ নিরাপদ কাঁখে গচ্ছিত রেখে আপ্রাণ লড়াই চালিয়ে যাওয়া কন্যেটি যে তখন জায়া ও জননী। কঠিন সংগ্রাম জারি থাকে জীবন পথে। প্রাণ প্রাচুর্যে জীবন ভরিয়ে তোলে শিক্ষিকা রমার সাহচর্যে আসা কচি মুখ গুলো। অভাবী সংসারের ক্ষিদে চেপে মিড ডে মিলের ভরসায় থাকা চাতক সম দৃষ্টিগুলি বাঁচার স্বপ্ন জাগায়।ঘরকন্নার দশদিক সামলে তাই অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে ছুটে স্কুল যাওয়া।
৬
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ স্বামী হৃদরোগাক্রান্ত হওয়ার পর আলোকপর্ণার জীবনে প্রবল ঝড় ওঠে। একমাত্র কন্যেটি তখন শিশু। দু’হাতে সংসার আগলে অসুস্থ স্বামীর সেবা, পাশাপাশি বাড়ি সংলগ্ন স্কুল পরিচালনার দায়িত্ব সামলে পরিবারের পাশে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে তিনি বিজয়িনী।
৭
চৌধুরী বাড়িতে স্থাপিত দেবী মা মহামায়া। প্রতিবছর নতুন মূর্তি এনে পুরনোটি নিমজ্জিত হয়। এই সময় বাড়ির বধূ মাতাদের উপস্থিতি ,উলুধ্বনি ও শঙ্খ নিনাদে পুরো বাড়ি গমগম করে। সকলের মেজমা টির ফুরসত নেই একটুও। পুজো উপলক্ষ্যে বাড়িতে আত্মীয় সমাগম। ভোর সকালেই চা পর্ব, রান্না শুরু হয়ে যায়। পালা করে চা পর্ব চলে। এরই মাঝে কোন এক ফাঁকতালে মাতৃ দর্শন হয়। দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়, রাত বাড়ে, মেজ মা অতিথি সেবা পর্ব মিটিয়ে বিশ্রাম নিতে ঘরে যান। পুজোর সাজ আর অঙ্গে ওঠেনা।
৮
রঞ্জনা দেবীর রুটির দোকানটি রাস্তার এক ধারে। স্বামী স্ত্রীতে মিলে কঠিন শ্রম দিয়ে এগিয়ে নিয়ে চলেন এই ব্যবসা। ধীরে ধীরে রুটি তরকারি কেনার প্রচুর খদ্দের মেলে। মেধাবী কন্যা দুটি মা বাবার চোখের মণি।অভাবের সংসারে আনন্দের কমতি ছিল না। তবুও ভাগ্যের ফেরে ক্যানসার আক্রান্ত স্বামীকে নিয়ে ছুটেছেন চিকিৎসা করাতে। শেষ রক্ষা হয়নি। কিন্তু জীবন যুদ্ধে রঞ্জনা হেরে যাননি। একা দোকান সামলে পিতৃহীনা কন্যা দুটিকে সুশিক্ষিতা করেছেন। কন্যাদের সুপাত্রস্থ করে আজ তিনি জয়ী।
৯
পাঁচ বছর বয়সের ছেলেকে রেখে বিজয়ার স্বামী সংসার মায়া কাটিয়ে যান। ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক। সামনে দিশাহীন জীবন পথ। বুকে আগলে ছেলেকে নতুন ভাবে নিজেকে গড়ে তোলার প্রেরণা নিয়ে এগিয়ে যায় সে। বয়স্ক বাবা মায়ের দেখভাল করা থেকে ও বিরত থাকেনি । এক মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে কর্মরতা বিজয়া একজন সফল নারী।
১০
শিক্ষিকা অপর্নার জীবনে ছন্দ পতন ঘটে অ্যাকসিডেন্ট এ স্বামীর অকাল মৃত্যুতে। ছেলে মেয়ে দুটিকে আগলে নিয়ে কোচিং সেন্টার চালায় সে। ভালোবাসার মানুষটি পাশে নেই ,তাই অসহায় পরিস্থিতি তে মানিয়ে নেয়ার পণ নিয়ে তারএগিয়ে চলা। সন্তানদের সুশিক্ষায় এগিয়ে নেবে, এই স্বপ্ন তার মায়া ভরা চোখ জুড়ে।
মহামায়া শক্তি রূপে নারী দেহেই বিরাজিতা। তাই জঠরে সৃষ্টিকে ধারণ, প্রসব যাতনা সয়ে জন্ম দিয়ে লালন পালন -মাতৃ রূপে তিনিই পূজনীয়া। ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরের মিলিত শক্তি নিয়ে শারদা দশভূজা দ্বিভূজা রূপে বিশ্ব সংসার প্রতিপালন করে চলেছেন। প্রতি নারী আত্মাই জগজ্জননীর অংশ।
অসময়ের গল্প কথা (মুক্ত গদ্য) – কুহেলী দাশগুপ্ত [Bengali Mukta Godya Collection]
অতিমারী, লক ডাউন, ঘরবন্দি দশা থেকে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে ঘুরে তাকাই বিগত দিনের স্মৃতিতে। জীবাণুর আতঙ্ক এক লহমায় মনের আয়নার বাষ্প মুছে দিয়ে স্বচ্ছ হয়ে উঠেছে। স্বজন হারানোদের পৃথিবী টলেছে। আতঙ্কের শিহরণ উপেক্ষা করেও সেবা দিয়েছেন অনেকে। সেই কর্মযজ্ঞে সামিল হয়েছিল আমার এক তুতো দাদা। ও উডল্যান্ড হসপিটালের এমপ্লয়ি কি না । প্রতিনিয়ত মৃত্যু মিছিল দেখেও ঘরে বসে থাকার উপায় ছিল না। আমার কত্তাটি এক ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থার প্রোডাকশন হাউসে কর্মরত। তাকে ও প্রতিনিয়ত জীবনদায়ী ওষুধের যোগানে শ্রম, সাধ্য মিশিয়ে তৎপর থাকতে হয়েছে। যথাসাধ্য নিয়ম মেনে ও ভয় ছিল মনে -ওর সুগার, কিডনির সমস্যা রয়েছে। যদি কোন ভাবে আক্রান্ত হয়! অতি মন্দ কিছু ভাবনা মনে আলোড়ন ফেলে দিতো। তবুও দৃঢ় মানসিকতা রাখার চেষ্টা ছিল। এই অসময়ের দিন কোন ক্ষেত্রে মানুষের দূরত্ব বাড়িয়েছে। কোথাও সামান্য হাঁচি কাশিতে ও সন্দেহের বীজ অঙ্কুরিত হয়েছে। সম্পর্কের সামান্য ফাটল বড় হা করে শান্তি গিলেছে। ঘুরে ফিরে উপলক্ষ সেই করোনা। চেনাজানা এক পরিবারে বিরাট ধ্বস। প্রথমে বাবা, মা বিছানা হতে হাসপাতাল হয়ে প্যাকেট বন্দি শেষ যাত্রা। একমাত্র কন্যা তাদের চিত্রগুপ্তের খাতায় নাম উঠলো বুঝি! নাহ্, ভালোবাসার মানুষগুলোর টানে তাকে ফিরতে হোল। অক্লান্ত পরিশ্রম করে কাকা, কাকিমা, স্বামী তাকে ফেরাতে পেরেছেন পাঁচ বছরের কন্যা সন্তানের কাছে। ভাগ্য দেবতা সদয় ছিলেন হয়তো! করোনা ত্রাসকে উপেক্ষা করে যাদের জীবন যুদ্ধ জারি থাকে,তারা নিম্ন বিত্তের ও নিচে। ক্ষুধা তাদের জীবনের একমাত্র প্রহসন। পাড়ার সব্জির দোকানে আধ পঁচা সব্জি, ভাঙা ডিমের কদর তারা জানে। ফ্রি রেশন বিলি, পাড়ায় পাড়ায় ত্রাণ বিলি, কমিউনিটি কিচেন কতদিনের, ক’জনার নিশ্চয়তা দিয়েছিল আমার জানা নেই। সময়টা ইতিহাস হয়ে থাকল।
আমার ব্যক্তিগত জীবন হারিয়ে নতুন করে পাওয়া। ছেলেবেলায় মা বাবা হারিয়ে পিসি, পিসেমশাইয়ের ভালোবাসায় জীবন গড়েছি। কঠিন পরিস্থিতির মুখে ও সম্পর্ক গুলো আমার কাছে ভীষণ দামি। কঠিন সময়ে পাশে থাকার মানুষ যেমন পেয়েছিলাম, তেমনি দূর থেকে মজা দেখার জন ও ছিলেন। নিজের সন্তানের দোষ ত্রুটি আড়াল করা যায়, পরেরটা নয়। তবুও সুদিনে কাছে আসা মানুষদের করুণা হয়। কোন কালেই সাবধানী ছিলাম না। তাই অপদস্থ হওয়া অনিবার্য, মেনে নিয়েছিলাম। অতিমারী কালে সাবধান হয়েও কঠোর হতে পারিনি। কোভিড মোকাবিলায় টীকাকরণ হোল। এক, দুই তিন। অতি সাবধানীর ঘরেও করোনা ঘন্টা বাজিয়ে চলেছে। আমরা কেবল প্রতিরোধ গড়তে পারি। দৃশ্যমান শত্রু ঘাত প্রতিঘাতে জর্জরিত করে। প্রত্যাঘাত ফিরে যায়। অদৃশ্য, অবয়বহীনের যত্রতত্র অবাধ বিচরণ। কায়াহীনের আতঙ্কে সাবধান হয়েও মানবতা বেঁচে থাক। পরিবেশের জীবাণু নিধন সম্ভব হলেও মনের জীবাণু সারাজীবন কুড়ে কুড়ে খাবে।নিজের টুকু সব সময়ই আদরের, কাছের। আমরা যথাসাধ্য আগলে রাখতে চেষ্টা করি। পরেরটা আপন ভেবে যত্নে রাখা ! প্রশস্ত, খোলা মন না হলে এমনটা হয় না। জীবন থেকে জেনেছি, শিক্ষা নিয়েছি। সময় ভালো বা খারাপ সব পরিস্থিতি ই চলমান । সারাটি জীবন একভাবে কেটে যায় কি ! কি জানি, হয়তো আমার অভিজ্ঞতায় নেই! এটুকুই ভাবতে জানি, মন্দ সময় জীবনের পরীক্ষা। সবার ভালো ফল হবে, এমনটা নয়। তবুও ঠান্ডা মাথায় উত্তীর্ণ হওয়ার আশা নিয়ে এগোতে হবে। সুদিন এলেও অসময়ের বন্ধুদের যেন না ভুলি, এমন মানসিক স্থিতি অক্ষয় হোক।
অনর্থক (মুক্ত গদ্য) – কুহেলী দাশগুপ্ত [Bengali Mukta Godya Collection]
নতুন কড়কড়ে টাকার গন্ধ কার না ভালো লাগে!আমার তো ভীষণ ভাল লাগে। একতাড়া কড়কড়ে নতুন নোটের বান্ডিল। দেখেছি অনেক দিন হয়ে গেল। আজকাল পুরনো টাকা আর কয়েন দিয়েই বিনিময় সারতে হচ্ছে। আমার কণা পিসেমশাই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এমপ্লয়ি ছিলেন। সেই সুবাদে নতুন টাকা দেখে দেখে পুরনো গুলো মনে ধরে না। আগে ওনার কাছ থেকেই পুরনো দিয়ে নতুন নোট নিতাম।কতবার ছেঁড়া টাকা উনি পাল্টে দিয়েছেন! মাসের পহেলা খুচরো চাই তো পিসেমশাইয়ের কাছে যেতাম।ওনার অনুপস্থিতিতে পিসি খুচরো করে দিয়েছে। আমার বক্তব্য অর্থ বা পিসেমশাই নন। আমি সম্পর্কের মূল্যায়নকে প্রাধান্য দিতে পছন্দ করি। আমার পিসেমশাইয়ের হাত ধরে কলকাতার নতুন ,পুরনো কে জানতে বা চিনতে চেষ্টা করেছি। কতবার রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গিয়েছি ওনার সাথে! যেখানে জনসাধারণের প্রবেশ অবাধ নয়। অর্থের নিরিখে মূল্যায়ন করা বা অর্থ আঁকড়ে থাকা ওনার স্বভাব বিরুদ্ধ ছিল। দু’হাতে খরচ করে বাজার করতেন। নিজে খেতেন মেপে। খাওয়াতে ভালোবাসতেন। আসলে এই পৃথিবীর সবটুকু অর্থের বিনিময়ে ধরা দেয় না, এটাই বলার। তবুও মানুষ অর্থ, স্ট্যান্ডার্ড এসবকে প্রাধান্য দিয়েই কাছে টানে বা দূরে ঠ্যালে। কত সাধারণ জীবন যাপনে উনি অভ্যস্ত ছিলেন!ভালো চা পানের নেশা ছিল। দোকানীও ভালো চা পাতা এলে ওনাকে জানাতেন। উনি কখনো অর্থের মাপকাঠিতে বিচার করতেন না। প্রতিদিন ভিক্ষে চাইতে আসা কোন বৃদ্ধা, রিক্সাওলা সবার সাথেই কথা বলা চাই। -“কি গো ভালো তো?” ওনার সাথে বাজার যেতে গিয়ে মাঝে মাঝে বিরক্ত হতাম। এতো গপ্পো হলে,বাজারের কত দেরী হয়ে যাবে! সেই মানুষটি অকারণেই অপরের বিরাগভাজন হয়েছিলেন। কারো দায়িত্ব নিজের করে নিয়েছিলেন কিনা! খুব ভুল করেছিলেন। অপরের বোঝা উনি বইবেন কেন?হয়তো ওনার এই আন্তরিক সক্রিয়তা অনেকের চেয়ে ওনাকে এগিয়ে রেখেছিল! সমাজে , পরিবারে নিট রেজাল্ট -আ বিগ জিরো। আন্তরিকতা অন্তর ছুঁয়ে বেঁচে থাকে চিরকাল।
আমার এক কাছের জন, যাকে প্রথম জীবনে কঠোর লড়াইয়ের মাঝে বলতে শুনেছি,”একদিন অর্থ আমার পেছনে ছুটবে, আমি নই”। সেই মানুষটিও কষ্টার্জিত অর্থ অবলীলায় দান করেন। কনসাল্ট করার জন্য টাকা নিয়ে কেউ ছুটলেও ওনার সময় নেই।
আমাদের অতি প্রয়োজনের অর্থ একটি বিনিময় মাধ্যম। যার বিনিময়ে যাবতীয় স্বাচ্ছন্দ্য হাতের নাগালে ধরা চাই। সব কিছু মেলে কি? অর্থের বিনিময়ে প্রাণ ফিরে আসে কি মরদেহে? অবারিত শান্তি মেলে কি? নির্ভীক পাহাড়ের নিস্তব্ধতার কাছে যে শান্তি রয়েছে, উচ্ছ্বল নদীর বুকে ভেসে গিয়ে, সমুদ্রের ফেনিল সৈকতে বসে তার গর্জন শুনতে শুনতে তাকে সবটুকু উজাড় করে বলাতে যে প্রাণ জুড়ানো বাতাবরণ তৈরি হয়, শুধু অর্থের কচকচানিতে তা মেলে কি! সাজানো পরিপাটি প্রাসাদে সবাই ব্যস্ত। কারও একে অপরকে দেয়ার মতো এতটুকুও সময় নেই। হাম কিসিসে কম নেহি -একেক জনের ভাবখানা তাই।
অনেককাল আগে এক ভাই তার বোনের নতুন সংসারে বেড়াতে এসে বলেছিল,
— একসেট সোফা করতে পারিসনি? বললে, দিয়ে দিতাম।
বোনের মুখে কথা সরে না। কত্তাটি যে একগুঁয়ে! সবাই তো শ্বশুরবাড়ির অর্থের জন্য লালায়িত নয়। সেদিন ভাইয়ের আচরণে বোনটি বুঝে নিয়েছিল, পিতার উপার্জনের অর্থের দেমাকে তার পদযুগল মাটি স্পর্শ করতে পারে না। পরিবারের সকল কর্তব্য পালন করেই একদিন বোনের ঘরটিও সুসজ্জিত ও পরিপূর্ণ হয় যাবতীয় আসবাবে। কিন্তু ভাই বোনের মনের দূরত্ব দীর্ঘ হতে হতে আর পথের খোঁজ মেলে না। যে পথে হয়তো দুটি ভিন্ন মানসিকতার জন আর একসাথে চলতে পারবে না।
এক বিয়ে বাড়ির রিসেপশনের ঘটনা জেনেছিলাম। কনেযাত্রী তাড়াতাড়ি আসবে জেনে বরপক্ষ রান্নার আয়োজন জলদি সেরে রেখেছিলেন। শীতের সন্ধ্যে । খাবার ঠান্ডা হোল। কনেযাত্রী এলো দেরীতে। খাবার গরম করার কোন ব্যবস্থা ও ছিল না। খেতে বসে কনে পক্ষের নানা মন্তব্যে নববধূর শ্বশুর কূলের কান উত্তপ্ত যারপরনাই।
— ইশ, বেগনী ঠান্ডা খাওয়া যায়!
— ওরে ইট নিয়ে আয়, রসগোল্লা ভাঙতে হবে।
বরের দাদা, বৌদি, দিদি সকলে এসে,
— আপনারা কিন্তু ভালো করে খাবেন। সঙ্কোচ করবেন না।
— কি আর খাব? সবই তো ঠান্ডা!
বরের দিদিভাই রেগেমেগে এসে বলেন,
–মা, কোন বাড়ির মেয়ে এনেছ? ভদ্রতা জানে না।
আসরে বসে বধূমাতা ছলছল চোখের জল লুকোতে চেষ্টা করে। সত্যিই, পরিজনদের আচরণ তাকে কুন্ঠিত করে গেল। নতুন পরিবেশে তাকে নিজের মতো করে জায়গা করে নিতে হবে। খাবার ঠান্ডা কি গরম, এসব উপলক্ষ্য মাত্র। মানুষের ভেতরের আমিটা অনেক সময় পোশাক পরতে ভুলে যায়। তখনই নির্লজ্জ নগ্নতা পষ্ট হয়। একটি দিনের জন্যও ভদ্রতার মুখোশটি ধারণ করা গেল না। কতশত অনর্থক বকে গেলুম। কি জানি ! হয়তো সবটাই জলাঞ্জলিতে গেল। দিন, মাস, বছর কতখানি কালের উদরস্থ হোল। মানুষের মূল্য, সম্পর্কের মূল্য তলানিতে। আর অর্থ এগিয়ে চলেছে সদর্পে। যার ঝুলিতে ঘাঁটি গেড়েছে, তারই রমরমা। আমার আবোল তাবোল হরিবোল শুনে কেউ ভাবতেই পারেন, অর্থ কষ্টে আছে। তাই প্রলাপ বকছে। আবার কেউ এ ও ভাবতে পারেন, অনেক আছে বোধ হয়! তাই এতো ফুটুনি বাত, গরম দিচ্ছে। আমি বলি , এর কোনটি হলেও সম্পর্কের মূল্যায়নেই অগ্রণী হব। অর্থের ঝুলি কাপড়ের কোচরে বাঁধা থাক।
কুহেলী দাশগুপ্ত | Kuheli Dasgupta
New Bengali Story 2023 | গল্পগুচ্ছ | বদরুদ্দোজা শেখু
Bibarna 2023 | New Bengali Story | বিবর্ণ | শওকত নূর
2023 New Bengali Article | বাংলায় মুসলিম বিজয় ও বাংলা সাহিত্য
Anabasarakalina besha of Jagannath | অনবসরকালীন বেশ | অভিজিৎ পাল
Read Online Bangla Golpo | New Read Online Bengali Story | Top Best Story Blogs | Best Story Blogs in pdf | Sabuj Basinda | High Challenger | Best Live Bengali Story Blogs 2023 | Shabdodweep Read Online Bengali Story | Shabdodweep Writer | Best Story Blogs in India | World’s Best Live Bengali Story Blogs | Best Live Bengali Story in Online | Online Interesting Bangla Golpo | Full Read Online Bangla Golpo | Online Best Story Blogs | Best Story Blogs in Bengali | Live Bengali Story in English | Live Bengali Story pdf | Full Bangla Galpo online | New Bengali Mukta Godya Collection | Live Bengali Story – Episode | Golpo Dot Com Series | Horror Adult Story Video | Horror Live Bengali Story | Full Bangla Galpo Audio | Read Bengali Mukta Godya Collection | Live Bengali Story Netflix | Full Bangla Galpo Read | Read Online Bengali Story Download | Shabdodweep Competition | Story Writing Competition | Bengali Writer | Bengali Writer 2023 | Trend Bengali Mukta Godya Collection | Recent Live Bengali Story | Top Live Bengali Story | Popular Full Bangla Galpo | Best Read Online Bengali Story | Read Online Bengali Story 2023 | Shabdodweep Bengali Mukta Godya Collection | New Bengali Famous Story | Bengali Mukta Godya Collection in pdf | Bengali Mukta Godya Collection Download | Bengali Famous Story – audio | Horror Adult Story | Read Online Bengali Story Collection | Live Bengali Story – video | Live Bengali Story APK | Read Live Bengali Story Download | Live Bengali Story mp3 | Full Live Bengali Story | Bengali Famous Story 2023 | Shabdodweep Bengali Famous Story | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Live Bengali Story – audio | Top Read Online Bangla Golpo | Bengali Famous Story – video | Bengali Famous Story mp3 | Full Bengali Famous Story | Bengali Literature | Shabdodweep Magazine | Shabdodweep Web Magazine | Live Bengali Story Writer | Shabdodweep Writer
অসময়ের গল্প কথা | পাঁচটি অসময়ের গল্প | অসময়ের বৃষ্টি | সময় অসময়ের কথা | অসময়ের সাথী | অসম্ভব কথা | অসময়ে পড়ল ছুটি | অসময়ের বসন্ত | বাংলা বাগধারার তালিকা | ভালোবাসার অসময় সুন্দর একটি গল্প | অন্য রকম ভালবাসা | আমার ভিতরে বাহিরে অন্তরে অন্তরে | আমার ভিতরো বাহিরে অন্তরে অন্তরে স্বরলিপি | জানি বাহিরে আমার তুমি অন্তরে নও | আমার ভিতরে বাহিরে শুধু তুমি | আমার ভিতরে বাহিরে লিরিক্স | তুমি কি কেবল ছবি | বাংলার দশভূজা দুর্গা | দশভূজা নারী | দশভূজা অর্থ | দশভূজা বানান | শব্দদ্বীপের লেখক | শব্দদ্বীপ | সেরা বাংলা গল্প | গল্প ও গল্পকার | সেরা সাহিত্যিক | বাংলা ম্যাগাজিন | ম্যাগাজিন পত্রিকা | শব্দদ্বীপ ম্যাগাজিন