Best Bengali Golper Apps 2023 | Subrata Roy Sharma

Post Views: 1,007

রায় শর্মা – সূচিপত্র [Bengali Story]

ইন্দ্রাণী – রায় শর্মা [Bengali Golper Apps]

ইন্দ্রাণী যে দিনকে দিন কেমন হয়ে যাচ্ছে মা হয়ে পারমিতা বুঝে উঠতে পারে না, সবে ক্লাস এইট থেকে নাইনে উঠেছে মেয়েটা এই প্রথম শাড়ি পরে স্কুল যাওয়া ধরেছে এখনো ভালোভাবে সড়গড় হয়নি। রোজ কিছু না কিছু হাঙ্গামা করেই চলেছে আজ টিফিনে চারটে পরটা বেশি দেওয়ার জন্য বায়না, এইতো সেদিন অঙ্কের বইটা হারিয়ে আসল, সপ্তাহে যেখানে আগে একটা খাতায় হয়ে যেত এখন দুটো কি তিনটে লাগে কিছু বললে বলে এখন উঁচু ক্লাস তাই লাগে। হঠাৎ একদিন কাউকে কিছু না বলে পিঠ অবধি লম্বা চুল কেটে নেড়া হয়ে আসল, ঘরে ঢুকতেই পারমিতা রে রে করে তেড়ে গেল আর মেয়ে দৌড়ে বাবার কাছে গিয়ে দরজা বন্ধ করে, পারমিতা চিৎকার করতে থাকে এই মেয়েকে নিয়ে আমি যে কি করি, যত রাগ গিয়ে পড়ে স্বামী সুব্রতর উপর তার আশকারা পেয়েই মেয়েটা বিগড়ে যাচ্ছে।

মেয়ের জন্য পারমিতার চিন্তা বেড়েই চলেছে প্রতি বছর মেয়ে ক্লাসে প্রথম হয় এ বছর এইট থেকে নাইনে উঠার সময় দ্বিতীয় হয়েছে তাতে মেয়ের কোন হেলদোল নেই কিন্তু পারমিতার চিন্তা বেড়ে গেছে কি যে হয়েছে মেয়েটার বাংলা পরীক্ষায় একটা জানা প্রশ্নের উত্তর না লিখে চলে এসেছে। আর আজ মেয়ের কাণ্ড দেখে পারমিতার রাগে মাথায় রক্ত উঠে গেল মেয়ে স্কুল থেকে ফিরেছে পরনের শাড়ির আঁচল আর পায়ের কাছে ছেড়া পারমিতা রাগে চিৎকার করে উঠে তুই ভেবেছিস কি রোজ রোজ কিছু না কিছু কাণ্ড বাঁধিয়ে আসবি গতকাল তোর স্কুলে পরার জন্য দুটো নতুন শাড়ি কিনে আনা হয়েছে বলে আজ পরনের শাড়িটা এ ভাবে ছিঁড়ে আনবি, মেয়েকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পারমিতার রাগ আরো বেড়ে যায় দু-হাতে মেয়ের কাঁধ ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে হঠাৎ চোখে পড়ে সকালবেলা মেয়ে যে শাড়িটা স্কুল পরে গিয়েছিল সে শাড়ি তো এটা নয় শাড়ির অনেক জায়গায় সেলাই করা।

এবার পারমিতা শান্ত কন্ঠে মেয়ের চোখে চোখ রেখে বলে ইন্দু আমি তোর মা সত্যি করে বল তোর কি হয়েছে তোর ভিতর কার পরিবর্তন আমি বুঝতে পারি তোকে আজ সবকিছু বলতেই হবে, হঠাৎ সেদিন কাউকে না বলে মাথা নেড়া হয়ে আসলি, প্রায়ই বই খাতা হারিয়ে ফেলছিস আর আজ তো নিজের পরনের নতুন শাড়ি কাউকে দিয়ে তার পরনের ছেড়া শাড়ি পরে এসেছিস। ইন্দ্রাণী আর নিজেকে সামলে রাখতে পারে না মাকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। এবার ইন্দ্রাণী শুরু করে তার জীবনের কিছু পরিবর্তনের গল্প প্রথম যেদিন ইন্দ্রাণী দেখে তার ক্লাসের এক বন্ধু কেমো নেওয়াতে সমস্ত চুল ঝরে যায় আর এই ক‍্যানসার আক্রান্ত মেয়েকে নিয়ে সবাই হাসি মজা করছে তাই সে নিজের চুল কেটে নেড়া হয়ে তার সাথ দেয় যাতে এবার আর কেউ কিছু বলার সাহস না পায়।

পারমিতা প্রশ্ন করে আর তোর পরীক্ষায় দ্বিতীয় হওয়া ইন্দ্রাণী এবার নিজেকে সামলে নিয়েছে বলে আমি যদি পরীক্ষায় প্রথম হই তাহলে আমার প্রিয় বন্ধু মমতা যে আর স্কুল থেকে লেখাপড়া করার জন্য টাকা পাবে না ওরা যে ভীষণ গরীব তাইতো আমি ইচ্ছা করে বাংলা পরীক্ষায় একটা প্রশ্নের উত্তর জানা স্বত্বেও না লিখে চলে এসেছি যাতে মমতা প্রথম হতে পাড়ে, আর বই আমি হারাইনি মা আমি বইটা মমতাকে দিয়েছি ওর যে বই কেনার মতো ক্ষমতা নেই, রোজ আমার টিফিন থেকে ওকে ভাগ করে খেতে দি,আর আজ ও এই ছেড়া শাড়িটা পরে ক্লাসে এসেছে – আমার ওকে দেখে খুব কষ্ট হচ্ছিল মা, তাই জোর করে আমার শাড়িটা ওকে দিয়ে ওর পুরনো শাড়ি আমি পরে এসেছি আমার তো আরো দুটো নতুন শাড়ি আছ কিন্তু মমতার এই একটাই শাড়ি রোজ ধুয়ে কেঁচে পরে আসে তাতে কতো যায়গায় সেলাই করা। এবার তুমিই বল মা আমি কি কিছু ভুল করেছি। পারমিতার চোখ আনন্দে জল ভরে আসে, দুহাতে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে তুই কিচ্ছু ভুল করিস নি তুই যা করেছিস ঠিক করেছিস, শুধু লেখাপড়া করলেই মানুষ হওয়া যায় না প্রকৃত মানুষ সেই হয় যে পরের দুঃখ বোঝে। ইন্দ্রাণী সোহাগ করে বলে তাহলে কাল থেকে আর দুটো পরটা টিফিনে বেশি করে দেবে কিন্তু মা। পারমিতার নিজের মেয়ের জন্য গর্বে বুক ভরে আসে।।

এ কেমন ভালোবাসা – রায় শর্মা [Bengali Golper Apps]

বছরের তিনশ পৈষট্টি পঁয়ষট্টি দিনের মধ‍্যে এই দিনটাতে বিয়ের পিড়িতে দ্বিতীয় বার বসতে চলছে পরমা, চারিদিকে আলোর রোশনাই, সানাই বেজে চলেছে এতো আলো সানাইয়ের আওয়াজের মাঝেও কোথায় যেন এক অশরীরী আত্মা কাকে যেন খুঁজে চলেছে। বছরের এই দিনেই নেমে এসেছিল এক অন্ধকার শোকের কালো রাত। এক দুর্ঘটনায় সবাইকে ছেড়ে চলে যায় পরমার এক সময়ের প্রেমিক স্বামী সত‍্যদেব। সত‍্যদেব আর পরমার ভালোবাসার খবর দুই পরিবারের কাছে অজানা ছিল না তাই একদিন এক শুভ মুহূর্তে দুজনে গাঁট ছড়া বন্ধনে এক হয়ে ছিল। সত‍্যদেবের ভালবাসায় কোনো খাদ ছিল না পরমাকে নিজের করতে পেরে সত‍্যদেবের মনে পরম শান্তি বিরাজ করত আর পরমার ভালোবাসায় কিছু খাদ ছিল, সত‍্যদেবকে পেয়ে পরমা খুশি হলেও পাওয়ার অঙ্কটা যেন আকাশ ছোঁয়া ছিল। সত‍্যদেব অল্পতেই সন্তুষ্ট হয়ে যেত তার কাছে অর্থের চেয়ে ভালোবাসা বড়ো ছিল তাই সবাইকে ছেড়ে অর্থের পেছনে ছুটতে চাইতো না কিন্তু পরিস্থিতির চাপে পড়ে অর্থের জন্য তাকে সাত সমুদ্র পাড়ি দিতে হলো। সত‍্যদেবের মন কাঁদত দূরে থাকা পরিবারের জন্য। পরমার সুখ ছিল দুহাত ভরে পাওয়ায় আর ছিল পরনে ভালোবাসার মুখোশ। সত‍্যদেবের ভালোবাসার দাম কোনদিন পরমা দিতে পারেনি পরমার ভালোবাসার অভিনয়কে সত‍্যদেব ভাবত সত্যি কারের ভালোবাসা, সত‍্যদেবের সরল মনে কোথাও কোনদিন সন্দেহ জাগেনি। বিধাতা পুরুষ হেসেছিল সত‍্যদেবের সরল ভালোবাসা দেখে তাই এক বিশ্বাস ঘাতিনী পরমা নামের মেয়ের কাছ থেকে সত‍্যদেবকে কাছে টেনে নিল। সবার নজরে সত‍্যদেব হারিয়ে গেল বিশেষ করে পরমার কাছে।

সত‍্যদেব রেখে গেল তার কষ্টের রোজগার করা প্রচুর অর্থ যা পরমার জীবনের প্রথম ভালোবাসা। সত‍্যদেবের পরিবারের আর সকলের চোখের জল শুকানোর আগেই পরমা সত‍্যদেবের পরিবার ছেড়ে চলে গেল সাথে নিয়ে গেল সত‍্যদেবের রোজগারের প্রচুর অর্থ। কিছুদিনের মধ‍্যেই পরমা সত‍্যদেকে ভুলে গেল কারণ পরমা কোনদিনই সত‍্যদেবকে ভালোবাসেনি শুধু ভালোবাসার অভিনয় করেছে। আজ পরমা তার নতুন প্রেমিকের সাথে নতুন করে জীবন শুরু করতে চলেছে, পরমা কি ভুলে গেছে আজকের তারিখে সত‍্যদেবের মৃত্যু হয়েছিল। এ কেমন ভালোবাসা এক স্বামীর মৃত্যু দিনে পরমা আর একজনকে নতুন করে স্বামী হিসাবে শিকার করে নিতে চলেছে। সানাইয়ের সুরে কোথায় যেন দুঃখের সুর বেজে চলেছে, সত‍্যদেবের কালো ছায়া আজও ঘুরে বেড়ায় পরমাকে ঘিরে, পরমা কি শান্তি পাবে সব ভুলে থাকতে পারবে তার নতুন জীবন নিয়ে।