Bengali Famous Story | গল্পগুচ্ছ | তনুশ্রী গিরি | 2023

Sharing Is Caring:
Bengali Famous Story

আর কিছু দিন – তনুশ্রী গিরি [Bengali Famous Story]

ছাত্রদেরকে ক্লাসে পড়া দিয়ে বীণা বলল “তোমরা এই হোমওয়ার্কটা পরের দিন করে এনো, আজ আমার শরীরটা একটু খারাপ লাগছে, তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে “। ছাত্ররা বড্ড অমায়িক। সবাই ঘাড় নেড়ে সায় দিল। ছুটির ঘন্টা বাজতে পেটটা টেনে টেনে কোনমতে বাড়ি ফিরলো সে। ‘পেটে যে কে আসছে কে জানে!’এইসব চিন্তা ভাবনা করতে করতে ঘরের কাজে মন দিতে পারে না কারণ তার তিনটি কন্যা সন্তান রয়েছে। শাশুড়ি মা অনেকরকম টোটকা করে এবার বলেছেন “বংশের প্রদীপ আসছে”। অতএব তিনি আনন্দেতে সারা পাড়া বলে বেড়িয়েছেন যে নাতি আসছে ঘরে। তাও বীনার মন “কু”ডেকেই চলেছে।

সন্ধ্যে হতেই শঙ্খ চলে যেত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে। আড্ডায় তাস, জুয়া খেলার সাথে সাথে চলত ‘ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো’ প্রতিযোগিতা। এক এক জন করে সবাই বলতে শুরু করল “কি রে শঙ্খ, তোর বউ এবার ও কি তোকে মেয়ে সন্তান দেবে”? সে চুপটি করে থাকে। ফিরে আসে বাড়ি।

চতুর্থ সন্তান হওয়ার পর শঙ্খ বুঝল না তার কপালে ছেলে নেই, মেয়েদেরকে মানুষ করতে হবে, অতএব পড়শীর গঞ্জনা, লাঞ্ছনাতে কান দিলে চলবে না। সেইমত বড়, মেজ, সেজ, শান সবাইকেই পড়াশোনা শেখাতে শুরু করল। মেয়েরাও খুব উৎসাহ নিয়ে স্কুলে যেতে লাগল। বছর চারেক খানেক খুব ভালোই চলছিল দিনগুলি। এর মধ্যে ঘটল এক অনর্থ। হঠাৎ করেই কোন এক অজ্ঞাত কারণে এক প্রতিবেশীর সাথে বেজায় ঝামেলা বাঁধে। ঘটনা গড়াল জীবন মরণ লড়াই নিয়ে। বীণা একা হাতে স্কুলের, মেয়েদের, সংসারের, স্বামীর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিল। সে ভাবতে লাগল এই দুর্দিনে তাকে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে, ভেঙে পড়লে চলবে না।

বারো বছর পর, শঙ্খের অনেক পরিবর্তন দেখা দিল তা শারীরিক ও মানসিক দুই ভাবেই। কারণ এখন তার রক্তে চিনির পরিমাণ অত্যধিক বেশি, তার সাথে বড় মেয়ের বিয়ে বাড়ির বিপক্ষে গিয়ে। ক্রমশই শরীর ভাঙতে শুর করল। হাইপার্টেনশন আর ডায়াবেটিস গ্রাস করল ধীরে ধীরে। বীনা প্রার্থনা করতে থাকে ঠাকুরের কাছে ‘কবে সমস্তটা ঠিক হবে!’

লীলা বাড়ির মেজ মেয়ে। তার পড়াশোনা তখনও শেষ হয়নি পুরোপুরি। মায়ের কথা ভাবতে থাকে, ভাবে বাবাকে কিভাবে বাঁচাবে, কিভাবে বোনদের কথা রাখবে। পরপর বেশ কয়েক বছর কেটেছে লীলার হসপিটালের রুমে বাবাকে দেখাশোনার জন্য। এখন হসপিটাল তার কাছে মন্দিরের মত। যাওয়ার আগে ও পরে প্রণাম করে সে। বাড়ীতে লীলাকে দেখে শঙ্খ বলত ” কি রে আমার জন্য cream caker এনেছিস তো”! লীলা হাসিমুখে জবাব দিত ‘এনেছি তার সাথে পেটা পরোটা ‘। লীলা জানত তার বাবার ইচ্ছেগুলো দিন দিন শেষ হয়ে আসছে। CKD, glaucoma, CVA চারদিক থেকে ঘিরে ধরেছে তার বাবাকে।

শয্যাশায়ী হয়েও শঙ্খের জ্ঞান ছিল অটুট। প্রায়শই কাঁদতে থাকতো আর বলত আর কিছু দিন কি বাঁচা যায় না! লীলা কে বলত ডায়ালাইসিসের জন্য, যদি কিডনি ঠিক করা যায়। কিন্তু ওজন কম থাকায় তা সম্ভব ছিল না। শেষের দিনগুলো লীলা বাবার ইচ্ছেগুলো পূরণ করতে লাগল। যাওয়ার আগে বলে গেল “তোদের আর কটা দিন দেখে যেতে পারলাম না মা, ভালো থাকিস সবাই, মা আর ছোটদের দেখিস আর বিয়েটা করে নিস”। লীলা কান্নায় ভেঙে পড়ল, বলল”বাবা তুমি যেও না আমাদের ছেড়ে “।

মাইল স্টোন – তনুশ্রী গিরি [Bengali Famous Story]

বাবার সাথে সাইকেলে করে প্রথম ক্লাস ফাইভে অ্যাডমিশন নিতে যাচ্ছি , এমন সময় বাবার এক বন্ধুর সাথে পথে সাক্ষাৎ। তিনি বলছেন ‘ কি মুখাজ্জী দা মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যাচ্ছেন বুঝি?’ আমি রাস্তা,ঘাট দেখতে দেখতে যাচ্ছি আর অ্যাডমিশন টেস্টের জন্য যা যা বলেছিলেন আমার প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক সেই সমস্ত কিছু আওড়াচ্ছি। স্কুলের সামনে আসতেই মস্ত বড় গেট দেখে মনে রাখার বিষয়গুলি ভুলে যাচ্ছি। ভাবছি, এত বড় বড় পড়াশোনা কি আমার দ্বারা সম্ভব!

তিন দিন পরেই রেজাল্ট। সবাই দেখলাম হা করে বাইরে টাঙানো লিস্টের দিকে তাকিয়ে আছে।এত ভিড়ের মধ্যে না যেতে পেরে দূরে দাঁড়িয়ে দেখতে রইলাম সকলের ঠেলাঠেলি। আমার মা গেছেন সঙ্গে, হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হঠাৎ বলে উঠলেন, “তনুশ্রী কে আছে”? আমার নাম শুনে মা ছুটলেন অফিস রুমের দিকে। আমি কিছু বুঝতে না পেরে ভাবলাম, লিস্টে আমার নাম কি বাদ পড়ল! ভিড় একটু ফাঁকা হতেই লিস্টের দিকে চোখ গেল, দেখলাম আমার নাম প্রথম লাইনে। মা হাসি মুখে আমাকে ডেকে নিয়ে অফিস রুমে ঢুকল। প্রধান শিক্ষক ছাড়াও চার,পাঁচ জন মাস্টারমশাই ছিলেন, সবাই বলে উঠলেন একসাথে “এই যে আমাদের ফার্স্ট গার্ল”।

আমাকে অনেক বই দেওয়া হল। না, শুধু মাত্র পাঠ্য বই নয়, গল্পের বইও ছিল যেমন শরৎ রচনাবলী, গোয়েন্দা রহস্য। ক্লাস ফাইভের শ্রেণীতে দুটো ভাগ হল গ্রুপ এ এবং গ্রুপ বি । আমি রইলাম গ্রুপ এ তে। প্রথম দিন, চুপটি করে বসে আছি এমন সময় একজন রোগাটে মেয়ে এসে বলল, ‘ ফার্স্ট হয়েছ!’ আমি ঘাড় নেড়ে সায় দিলাম। দেখলাম মেয়েটির আমার প্রতি অনেক জিজ্ঞাসা এই যেমন কি লিখেছিলাম ওই প্রশ্নের উত্তরে, কোন প্রাইমারি স্কুল থেকে এসেছি ইত্যাদি। আমিও ভাও দিতে লাগলাম একটু। মনে মনে ভাবলাম এত বড় স্কুলে ফার্স্ট হয়েছি একটু তো ভাও নিতেই হবে।

এমনি ভাবে ভাও নিতে নিতে ক্লাস ফাইভের শেষ দিন। পরীক্ষার ফল প্রকাশ হতেই আমার মুখ একেবারে শুকিয়ে আমচুর। কারণ আমি তখন আর ফার্স্ট ছিলাম না। বাড়ীতে এসে গর্বের সাথে মা কে কথা দিলাম যে সপ্তম শ্রেণীতে আমার নাম আগে থাকবে। কিন্তু সেই একই ভুল করলাম আবারও। এবার আর ভাও নেওয়ার কিছুই বাকি থাকল না। মনে মনে শপথ নিলাম,”কিছু আলাদা করতে হবে”। আমি বরাবরই লেটুস। স্কুলের ঘণ্টা প্রার্থনার জন্য বেজে শেষ হতে হতে আমার সঙ্গে রোজ দেখা হত অর্পিতার। অর্পিতা বড্ড ভালো মেয়ে, সৎ, সাহসী ও পরিশ্রমী। হাসতে হাসতে দুজনে গেট পার করতেই দেখলাম একজন শিক্ষক ও প্রবেশ করছেন। এই দেখে দুজনে হাসি মুখে মনে মনে ভাবলাম আমরা একা লেটুস নই, স্যারও আছেন সঙ্গে। দুজনে একসাথে আসতে, একসাথে হাসতে ভাব জমে উঠল ধীরে ধীরে। পড়ার প্রতি ভালোবাসা বাড়তে লাগল অর্পিতার সংস্পর্শে। দুজনে মনের কথা ভাগ করলাম। ভাগ করলাম ভবিষ্যতে গিয়ে বাবা, মা কে ভুলে না যাওয়ার কথা। স্কুল শেষে থাকত কুল গাছের নীচে এক্সট্রা টাইম। না, কুল পাড়ার জন্য নয়, পড়া রিভিশন করার জন্য।

এরপর সেই দিন এল যা আমার মনের কথা রাখার। ক্লাস নাইনে লিস্টে প্রথম হওয়ার দরুন, টিচারদের ও এক্সপেক্টেশন বেড়ে গেল। এর মধ্যেই আমার এক সহপাঠীর পাশের বাড়ির দাদার সহিত পলায়ন কিছুতেই বরদাস্ত হল না। ওর মায়ের সেই স্নেহ-মাখা হাতে রান্না আর খাওয়া হল না আমাদের। আমি একটু নিয়ম অনুযায়ী চলতে পছন্দ করতাম। আর ফার্স্ট গার্ল হওয়ার দরুন ছেলেরা ভয়েতে কথা বলতে আসে না। স্কুল লাইফে প্রেম করার দিক থেকে তাই আমি রইলাম একমাইল দূরে। প্রেম নিয়ে অনেক কৌতূহল থাকলেও তা বুকে চেপে বায়োলজির ছবি আঁকতে আর জিওগ্রাফির ম্যাপ মুখস্থ করতে থাকলাম।

এমনি করেই দিন, সপ্তাহ,বছর কাটতে লাগল। টিচাররা বললেন “এনজয় করে নাও পরে এই লাইফ আর ফিরে পাবে না”। ক্রমেই জীবনের প্রথম সিরিয়াস এক্সাম ঘনিয়ে আসতে লাগল। দিন রাত এক করতে লাগলাম বইয়ের পাতায়। বর্ষায় বৈদ্যুতিক সংযোগ না থাকায় হারিকেনের আলোতে রাত জাগতে হত। পরীক্ষার দিন কপালে দইয়ের ফোঁটা নিয়ে, জয় মা শীতলার নাম নিয়ে পরীক্ষা কমপ্লিট করলাম। আর এক মজার ব্যাপার লক্ষ্য করলাম, অঙ্ক পরীক্ষার ঠিক আগেই সবাই কি যেন মুখস্থ করছে মন দিয়ে, আমি চুপ করে ভয়ে ভয়ে বইয়ের পাতা বন্ধ করে দিলাম। অঙ্ক পরীক্ষা ঠিক শেষের দিকে এমন সময় একজন শিক্ষক যিনি পাহারা দিচ্ছেন বলে উঠলেন,”এই রুমে একমাত্র তনুশ্রী ভালো পরীক্ষা দিয়েছে”। পরীক্ষা শেষ। হাসি মুখে বাড়ি ফিরলাম।

কিছু দিন বাদে যখন প্রফেশনাল কোর্সে ভর্তি হলাম, বুঝলাম মাস্টার মশাইরা যা বলেছিলেন সব কথাই মিলে যাচ্ছে। জীবনের মূল্যবান মাইল স্টোন হল স্কুল লাইফ।অনেক কষ্টে গ্র্যাজুয়েশন ও মাস্টার ডিগ্রী করলাম। কিন্তু সেই মাইল স্টোন থেকে গেল মনের মণিকোঠায়।

১৩ বছর বাদে আজ কর্মস্থলে যাওয়ার গাড়িতে ওঠার ঠিক আগেই হঠাৎ দেখা অর্পিতার। রুগ্ন, শুষ্ক চেহারা,ম্লান হাসি আর এক অসহায় চশমা চোখে আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল ‘অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছিস’। হাসতে হাসতে বললাম, ‘কেন ভালো লাগছে না দেখতে!” কাঁদো কাঁদো গলায় বলে উঠল,”আমার গ্লুকোমা ধরা পড়েছে “। আমি ভয়ে বললাম কি বলিস এত কম বয়সে কি করে এটা সম্ভব! কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ। আজ গন্তব্যস্থল দুজনের আলাদা, কেউ আর বলবে না লেট হয়েছে আসতে। থেকে যায় শুধু বন্ধুত্ব আর সেই মাইল স্টোন।

তনুশ্রী গিরি | Tanushri Giri

Driving Experience Canada 2023 | ড্রাইভিংয়ের যত কেচ্ছা (কানাডা পর্ব – ৯ এবং ১০)

Param Gyan O Sadhan Tathya | পরমজ্ঞান ও সাধন তত্ত্ব | New Article 2023

Valentine Day Speciality | ভালোবাসা দিবস | Top New Bengali Article 2023

Mokkhada Pishi | মোক্ষদাপিসী | শিখা কর্মকার | New Bengali Story 2023

Bengali Famous Story | Sabuj Basinda | High Challenger | Bengali Famous Story 2023 | Shabdodweep Bengali Famous Story | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Bengali Famous Story – audio | Bengali Famous Story – video | Bengali Famous Story mp3 | Full Bengali Famous Story | Bengali Famous Story – Tanushri Giri

Leave a Comment