অনির্বাণ সাহা – সূচিপত্র [Bengali Article]
পতিতাবৃত্তি ও চন্দননগর – অনির্বাণ সাহা [Bengali Article]
ফরাসী সাম্রাজ্যবাদের সময় তৎকালীন শাসকরা চন্দননগরের সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা, অনুশাসনগত দিক থেকে প্রভূত উন্নতিসাধন করে মূলত নিজেদের স্বার্থে। স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল গড়ে তোলা হয় মূলত তৎকালীন ফরাসি শাসকদের সুবিধার্থে বা স্বার্থে। নগর সৌন্দর্যায়নেও বিশেষ গুরুত্ব দেয় ফরাসীরা। এই শহরের গঙ্গার ঘাটকে বাঁধিয়ে ও বৃক্ষরোপণ করে বিশেষভাবে সৌন্দর্যায়িত করা হয়। ফলস্বরূপ এই শহরের গরিমা ও সমৃদ্ধি এতটাই বৃদ্ধি পায় যে, কিছু কিছু বিষয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও তৎকালীন ভারতীয় ঔপনিবেশের রাজধানী কলকাতাকেও টেক্কা দেয়। যা ব্রিটিশদের কাছে ঈর্ষার কারণ হয়ে ওঠে।
১৮৬৮ সালে ভারতের ব্রিটিশ প্রশাসন একটা আইন প্রণয়ন করে। এই আইনটাকে দেশীয়রা বলত “চোদ্দ আইন” (Contagious Diseases Act/ Act XIV)। এই আইন অনুযায়ী, যৌন অসুখের সংক্রমণ রুখতে পুরুষদের (ব্রিটিশ সৈন্য ও সাহেবদের) শারীরিক পরীক্ষা না করে সকল বারবনিতাকে নথিভুক্ত করা শুরু হল এবং তাদের এমন পুলিশি পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হত যা খুবই অপমানজনক ও বর্বরোচিত। শোনা যায় তখন অনেক বারবনিতা এই আইনের হাত থেকে বাঁচতে কলকাতা থেকে চন্দননগরে পালিয়ে এসে এখানে তাদের ব্যবসা শুরু করে। কারণ তৎকালীন ফরাসী চন্দননগরে এরকম কোন আইন ছিল না। এছাড়াও বাঈজী বা পতিতাদের চন্দননগরে আসার আরও একটি উল্লেখযোগ্য কারণ ছিল। সেটি হল চন্দননগর তৎকালীন যুগে কলকাতার পরে একটি বৃহৎ বন্দর ও ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে ছিল। আর বন্দর ও ব্যবসায়িকক্ষেত্রে এই বাঈজী বা পতিতাদের আনাগোনা তৎকালীন যুগে লেগেই থাকত। তখনকার দিনে যেসব বই ছাপা হত সেই বইতে তৎকালীন সমাজের প্রতিচ্ছবি ধরা পড়ত। বারবনিতাদের এই চন্দননগরে পলায়নের ছবি পাওয়া যায় “বেশ্যাবিবরণ নাটক” (১৮৬৯) নামক সেরকমই একটি বইতে। (সূত্র- A tale of two cities under colonial rule: Chandernagore and Calcutta by Sumanta Banerjee)।
এছাড়াও এই শহরের তৎকালীন ফরাসীরা শুধুমাত্র নিজেদের মনোরঞ্জনের জন্য দেশের অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া বিভিন্ন স্থান থেকে বাঈজীদের অর্থের বিনিময়ে নিয়ে এসে এখানে বাঈজীবাড়ি বা নাট্যশালা তৈরি করে। প্রথমদিকে মহিলারা শুধুমাত্র গান ও নাচের মাধ্যমে এখানকার তৎকালীন ফরাসী সাহেবদের মনোরঞ্জন করে অর্থ উপার্জন করলেও পরবর্তী সময়ে তা শরীর বিক্রিতে পরিণত হয়। অর্থাৎ জন্ম হয় পতিতাবৃত্তি বা বেশ্যাবৃত্তির। শুধুমাত্র ফরাসি সাহেবরাই নয় স্থানীয় বেশকিছু অর্থশালী জমিদার সম্প্রদায়ের মানুষেরাও বাঈজীবাড়ি বা পতিতালয়ে ধীরে ধীরে তাদের যাতায়াত শুরু করে। প্রাথমিকভাবে এই বাঈজী বা পতিতাবৃত্তির সাথে এই অঞ্চলের কোনো মহিলারাই যুক্ত ছিলেন না। পরে শহরের অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়লে (বারে বারে এই শহরের অধিকার ফরাসিদের থেকে ব্রিটিশদের হাতে এবং ব্রিটিশদের থেকে ফরাসিদের হাতে আসার ফলে) তারাও জীবনযাপনের জন্য বাঈজী বা পতিতাবৃত্তির সাথে যোগদানে বাধ্য হন। চন্দননগরের পতিতালয়ে তৎকালীন ফরাসী সাহেবরা নিজেদের মানসিক ও শারীরিক চাহিদা মেটাতে যেত নিয়মিতভাবে। পরবর্তী সময়ে কিছু অর্থশালী জমিদাররাও ফরাসি সাহেবদের পাশাপাশি পতিতালয়ে যাতায়াত শুরু করে। ধীরে ধীরে শহরের পতিতালয় চারিদিকে বেশ নাম অর্জন করে ও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পতিতারা এখানে বেশী অর্থ উপার্জনের জন্য আসতে শুরু করে। ফলে এখানকার পতিতা ব্যবসা বেশ খ্যাতিলাভ করে ও সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে।
চন্দননগরের পতিতালয়ে তৎকালীন যুগে দেশীয়, বিদেশী ও স্থানীয় সব রকমের বাঈজী বা পতিতাদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যেত। তৎকালীন ফরাসি চন্দননগরে ইউরোপিয়ান ও অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান বাঈজী বা পতিতারা আসত ব্রিটিশ কলকাতা থেকে। এছাড়াও তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের অন্যান্য স্থান থেকেও অনেক বাঈজী বা পতিতারা এই শহরে আসত। তারা মূলত বিভিন্ন হোটেল, পানশালা, সাহেবদের বাড়িতে থাকত সাহেবদের মনোরঞ্জনের মাধ্যমে বেশকিছু অর্থ উপার্জনের আশায়। আর দেশীয় বাঈজী বা পতিতাদের পাওয়া যেত শহরের বিভিন্ন রাস্তার ধারে বা বাজার এলাকায়। দেশীয় বাঈজী বা পতিতাদের প্রধানত পাওয়া যেত লক্ষ্মীগঞ্জ, খেজুরতলা, গঙ্গার ধারে চাউলপট্টি, হাটখোলা, বেশোহাটা এলাকায়। এছাড়া এদেশিরা কিছু বাগানবাড়িতে প্রভাবশালী জমিদারদের উপপত্নী হিসাবেও থাকত।
বর্তমানের লক্ষ্মীগঞ্জ, সরিষাপাড়া, চাউলপট্টি ও তৎসংলগ্ন এলাকার রাস্তার দুধারে ছিল দেশীয় বাঈজী বা পতিতাদের বসবাস ও কাজের জায়গা। এখানকার ছোট্ট কুঠুরির মতো ঘরে কোন এক মালকীনের (পতিতালয়ের মালকীনকে মাসি বলা হতো) অধীনে থাকতে হতো তৎকালীন বাঈজী বা পতিতাদের। আর সেখানেই প্রতিনিয়ত আসা জমিদার ও অন্যান্য খদ্দেরদের শারীরিক চাহিদা মিটিয়ে অর্থ উপার্জন করতো। কখনো কখনো নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়েও। কিন্তু এই অর্থের একটা বড় অংশ দিতে হত তাদের মালকীনকে বা মাসিকে। চন্দননগরের আরও একটি স্থানে পতিতাদের বিশেষ আনাগোনা ছিল। লোকমুখে প্রচলিত আছে এখানে নাকি দূর-দূরান্ত থেকে আগত দেশী-বিদেশী পতিতা বা বেশ্যাদের বাজার বা হাট বসত। যেখান থেকে তৎকালীন ফরাসি সাহেবরা এবং স্থানীয় জমিদাররা, যারা ব্যাক্তিগত বাঈজী রাখতে পছন্দ করতেন তারা এদের অর্থের বিনিময়ে ক্রয় করতেন। এই স্থানে নিয়মিত পতিতা বা বেশ্যাদের কেনা-বেচার হাট বসত। সেই কারণে স্থানটি তৎকালীন যুগে “বেশ্যাহাটা” বা “বেশ্যার হাট” বলে পরিচিত ছিল। লোকমুখে বর্তমানে স্থানটির নাম “বেশোহাটা”।
জমিদারী প্রথা ও পতিতাবৃত্তির যুগ্ম প্রভাবে বাজারে সোনা ও রুপার গহনার চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। কারণ জমিদাররা তাদের প্রভাব প্রতিপত্তি বৃদ্ধির জন্য সোনা ও রূপার বিভিন্ন অলংকার সংগ্রহ ও ক্রয় করতেন। সময়ে সময়ে তাদের নিজস্ব বাঈজী বা পতিতাদের কাজে খুশি হলে সেগুলি দিয়ে তাদের পুরস্কৃত করতেন। আর বাঈজী বা পতিতাদের কাছে সোনা-রুপার অলংকার হলো শ্রেষ্ঠ পুরষ্কারের সমান। তৎকালীন “বেশ্যাহাটা” বা অধুনা “বেশোহাটা”-এর পার্শ্ববর্তী হাটখোলা অঞ্চলে বসবাস করত বণিক শ্রেণীর মানুষেরা। তৎকালীন সময়ে ফরাসিদের ব্যবসায়িক স্বার্থ এবং তার সাথে স্থানীয় জমিদার শ্রেণীর সোনা-রুপার অলংকার সংগ্রহের চাহিদার ফলে সোনা-রুপার অলংকারের এই ব্যাপক চাহিদার জন্য হাটখোলা অঞ্চলে বসবাসরত বনিক শ্রেণীর লোকেরা (তারা মূলত শহরের বাইরে সোনা ও রুপার ব্যবসা করে জীবনযাপন করতো) ধীরে ধীরে হাটখোলা অঞ্চলেই তাদের সোনা-রুপার কারবার শুরু করে। গড়ে ওঠে অনেক ছোট বড় সোনা ও রুপার অলংকারের দোকান। ফলে সমৃদ্ধ হতে শুরু করে শহরের একটি বিশেষ শ্রেণী বা সম্প্রদায়। যার কিছুটা প্রভাব তৎকালীন চন্দননগরের সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর পড়েছিল বলে মনে করা হয়।
পরে সময়ের সাথে সাথে এই শহরেরও প্রভূত উন্নতি ঘটে। পরবর্তী সময়ে শহরের অধিকার স্থায়ীভাবে ফরাসিদের অধীনে আসার ফলে আর্থিক শক্তিরও বৃদ্ধি ঘটে এই শহরের। তখন ফরাসি প্রশাসন থেকে উদ্যোগ নিয়ে চন্দননগরের পতিতাবৃত্তি বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। পতিতালয়গুলি ভেঙ্গে দেওয়া হয়। অবসান হয় চন্দননগরের পতিতাবৃত্তির। চন্দননগরের লক্ষ্মীগঞ্জে পতিতাদের বেশ কিছু ঘরবাড়ি ছিল যা ভেঙে দেওয়া হয় অনেক পরে। যদিও তারপরেও বিক্ষিপ্তভাবে কিছু স্থানে পতিতাবৃত্তি চালু থাকার নিদর্শন লোকমুখে পাওয়া যায়, তবে ব্যাপকভাবে এই ব্যবসা বা এই জীবিকা এই শহরে বন্ধ হয়ে যায়। এই শহরের পতিতারা ছড়িয়ে পরে রাজ্যের তথা দেশের অন্যান্য শহরের পতিতালয়ে।
তথ্যসূত্র :
সংক্ষিপ্ত চন্দননগর-পরিচয় – হরিহর শেঠ
চন্দননগর সেকাল ও একাল – শুভ্রাংশু কুমার রায়
চন্দননগরের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস – অধ্যাপক বিশ্বনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
ফেসবুকের “The Chandannagore-দি চন্দননগর” পেজের একটি প্রতিবেদন
“চন্দননগর হেরিটেজের” ডিরেক্টর শ্রীযুক্ত কল্যাণ চক্রবর্তী মহাশয়ের সাথে আলাপচারিতার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যাবলী
অধ্যাপক ড: বিশ্বনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে আলাপচারিতার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য
শান্তিনিকেতনের আদলে “রাঙিয়ে দিয়ে যাও” শীর্ষক চন্দননগরের প্রথম বসন্ত উৎসবের প্রণেতা তথা ক্ষেত্রসমীক্ষক শ্রীযুক্ত অজিত মুখোপাধ্যায়ের সাথে আলাপচারিতার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য
অনির্বাণ সাহা | Anirban Saha
Bengali Article 2023 | এক নিভৃত কবির উচ্চারণ : সপ্রসঙ্গ কবি দীপক হালদার
Bengali Article 2023 | কবিগুরুর মানবতার ভাবরূপ
Bengali Article 2023 | সুভাষচন্দ্রের আত্মজীবনীঃ বিভিন্ন মনীষী প্রসঙ্গ
Bengali Article 2023 | ভৃগুর শক্তিপীঠ ও বড়োমা :: বিল্লপত্তন থেকে বড়বেলুন
পতিতাবৃত্তি ও চন্দননগর | চন্দননগরের নামকরণের ইতিহাস | চন্দননগরে ১৪৪ ধারা | ভারতে পতিতাবৃত্তি | চন্দননগর স্ট্যান্ড | চন্দননগর কবে স্বাধীন হয় | চন্দননগর কি জন্য বিখ্যাত | চন্দননগর ভ্রমণ | ফরাসডাঙ্গা | চন্দননগর চার্চ | চন্দননগরের ইতিহাস | কোন শহর ফরাসডাঙ্গা নামে পরিচিত ছিল | ইতিহাসের বিভিন্ন তথ্য | সোনাগাছি | পতিতাবৃত্তির জন্ম ও বিবর্তন | পতিতাবৃত্তির উৎস সন্ধানে | অবৈধ পতিতাবৃত্তি রোধে আইন | পতিতাবৃত্তি ও দেশে প্রচলিত আইন | পতিতাবৃত্তি কাকে বলে | পতিতাবৃত্তি | পতিতা কি | সোনাগাছি যাওয়ার নিয়ম | পতিতা কোথায় পাওয়া যাবে | বাংলাদেশের কোন কোন জেলায় পতিতালয় আছে | গনিকাবৃত্তি | পতিতাবৃত্তি বৈধ যেসব দেশে | পতিতা আইন | পতিতাবৃত্তি বৈধ পেশা ভারতে | বেশ্যাবৃত্তি কেনা(পতিতাবৃত্তি) | পাকিস্তানে পতিতাবৃত্তি | বাংলাদেশে পতিতাবৃত্তি | চীনে পতিতাবৃত্তি | চীনে পতিতাবৃত্তি | পতিতাবৃত্তি পৃথিবীর প্রাচীনতম পেশা | দৌলতদিয়ার যৌনপল্লি | বাংলা প্রবন্ধ | বাংলার লেখক | প্রবন্ধ ও প্রাবন্ধিক | সেরা প্রবন্ধ ২০২২ | শব্দদ্বীপ | শব্দদ্বীপের লেখক | বাংলা ম্যাগাজিন | ম্যাগাজিন পত্রিকা | শব্দদ্বীপ ম্যাগাজিন
bengali article writing competition | writing competition malaysia | writing competition london | writing competition hong kong | writing competition game | writing competition essay | writing competition australia | writing competition prizes | writing competition for students | writing competition 2022 | writing competitions nz | writing competitions ireland | writing competitions in africa 2022 | writing competitions for high school students | writing competitions for teens | writing competitions australia 2022 | writing competitions 2022 | writing competitions uk | bengali article writing | bangla news article | bengali article rewriter | article writing | bengali article writing ai | bengali article writing app | bengali article writing book | bengali article writing bot | bengali article writing description | bengali article writing example | article writing examples for students | article writing for class 8 | article writing for class 9 | bengali article writing format | article writing gcse | bengali article writing generator | article writing global warming | article writing igcse | article writing in english | bengali article writing jobs | article writing jobs for students | article writing jobs work from home | article writing lesson plan | article writing on child labour | article writing on global warming | article writing pdf | article writing practice | article writing topics | trending topics for article writing 2022 | what is article writing | content writing trends 2022 | content writing topics 2022 | Bangla Prabandha | Probondho | Definite Article | Article Writer | Short Article | Long Article | Bangla kobita | Kabitaguccha 2022 | Galpoguccha | Galpo | Bangla Galpo | Bengali Story | Bengali Article | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | Shabdodweep Founder