New Bangla Upanyas Online 2023 | খুঁজে ফিরি বিশল্যকরণী (পর্ব ১৪) | Joynal Abedin

Sharing Is Caring:

খুঁজে ফিরি বিশল্যকরণী (পর্ব ১৪) – জয়নাল আবেদিন [Bangla Upanyas Online]

ধান কাটা-তোলা শেষ হয়েছে। ধানের ফলনে সত্যেন মাস্টার বেশ খুশি। মাটির রস থাকতে থাকতে জমি কে চষে নিতে হবে। খরিফ মরশুমের মুগ-পাট বুনতে হবে সময় থাকতে। চাষ দেখা-শোনার আসগার ভাই বড় ভালো মানুষ। সত্যেন বাবুর বারো মাসের লোক। জমি চাষ, পুকুর-ডাঙ্গা সব দেখভালের দায়িত্ব আসগর ভাইয়ের। মাসোহারা টাকা নেয়। নিজের মতো কাজ করে।

— আসগার, মুগ, পাটবীজ সব ঠিক আছে তো ?ফেলনের সময় তো এসে গেল ? সত্যেন মাষ্টার জিজ্ঞেস করে।
— হ্যাঁ বাবু, সোনা মুগের বীজ রাখা আছে তেরো কেজি, চার বিঘে হবে। পাটবীজ ঠিক আছে তিন বিঘের জন্য খাল পারে। আর সোনা বিলের পাশের দেড় বিঘের জন্য।
— মাটির জো এসে গেছে মনে হয়, দেখে ট্রাক্টর দিয়ে চষে নে । তারপর বীজ বুনে ফেল। নিশ্চিন্ত আসগারের উপর।
— সে আপনারে ভাবতে হবে নে গো। সব কাজ ঠিক- ঠিক হয়ে যাবে। আসগারের হালকা জবাব।
— আসলে কি জানিস, সামনের মাসে আমি তোর বৌদি কেউই বাড়িতে থাকবো না ।কলকাতায় যাব। কিছুদিন থাকতেও হবে ওখানে। তাই চিন্তা হয়। তোকে বাড়ি ও সামলাতে হবে। চাষ বাস সামলাতে হবে। একা লোক তোর অসুবিধা হবে কত।
— আসগারের ধড়ে জেবন থাকলে, কোন কাজের সমস্যা হবে না গো মাস্টার। তোমরা নিশ্চিন্তে যাও। থাকো কোন অসুবিধা নেই।

চা-জল খাবার খেয়ে আসগার সন্ধে পেরিয়ে বাড়িমুখো হয়। সত্যেন মাস্টার কত কি ভাবতে থাকেন এলোমেলো। মেয়েটা বছর পেরিয়ে গেল প্রায়, কোন খোঁজ নেই। কোথায় আছে, কেমন আছে? কিংবা আদৌ বেঁচে আছে কিনা কেউ জানে না। কেউ খোঁজ খবর করে না। যার খোঁজ নেওয়া বিশেষ জরুরি ছিল, সেই মানুষ সব থেকে উদাসীন। যেন কোন দায় নেই। চাষটা বসিয়ে যেতে পারলে অনেকটা সুবিধে পাওয়া যাবে। মাস খানেক না থাকলেও আসগার সামলে নেবে। কিন্তু তারপর খাবার দেওয়ার সময় আসবে। সেচ দিতে হবে। তখন ওর একার পক্ষে এত কিছু সম্ভব হবে না। শঙ্খ সেদিন রাতে ফোন করেছিল, কলকাতায় এই বাড়িতে এসে আপাতত থাকতে বলছে। শুভ্র-অভ্রর হাফ ইয়ারলি পরীক্ষা সামনে। পরীক্ষার পর, দিন পনেরো ছুটি থাকবে স্কুলে। ওই সময় বাড়িতে আসবে। ছেলেদের পৌঁছে দিয়েই পরক্ষণে ফিরে যাবে। কটা দিন আমাদের কাছেই থাকবে।

সেদিন সকালে আসগার বলেছিল, – পুকুরে জেলে জাল লাগাতে হবে গো মাস্টার। মাছের গায়ে লালা হয়েছে, না কাটালে মাছ বাড়বে না।
মাষ্টার বললে, -জাল দিয়ে কিছু মাছ তুলে দে না হয়।
— এখন মাছ তোলার সময় নয়। বর্ষার জল একটু গায়ে পড়ুক, তারপর তুলে দেব। শুক্রবার জমি চষবো ট্রাক্টরে। দুদিন লাগবে। সোমবার বীজ বপন। তুমি মুগটা ফেলবে। আমি পাট বুনবো। একসঙ্গে অনেক গুলো কথা বলে ফেলে আসগার।

মাষ্টার বললে, – একটু রোদ্দুরে বীজগুলো মেলে নিলি না।
আসগারের তুরন্ত জবাব, – সবকিছু ঝাড়াই-বাছাই রোদ খাওয়ানো হয়ে গেছে। মেপে সব রেডি করা আছে। শুধু বুনে দেবার অপেক্ষায়। মাটিতে সুন্দর জো রয়েছে। আর হ্যাঁ গো, মাষ্টার। বেলে জমি দু’বিঘেতে এ বছর ধোনচে ফেলতে হবে। জমিটা একটু মরা হয়ে গেছে। ধোনচে পাতায় মাটির ভালো খাবার পেয়ে যাবে। এবারে ওই জমিটায় ধান বেশ কম হয়েছে।

সত্যেন মাষ্টার বললে, – যা করার করবি, এভাবে বলার কি আছে ? আমাদের তো ধোনচের বীজ নেই ? মাস্টার জানতে চায়।
আসগারের হালকা জবাব। না নেই। জবির চাচার ভালো বীজ আছে। চার কিলো বলে রেখেছি। এটা শেষ হলে, এনে বুনে দেবো।
কথাটা মাস্টার গিন্নির কানে আসাতে এগিয়ে এলো রান্নাঘর থেকে বারান্দায়। আসগারকে বললে, – খুব ভালো হবে ঠাকুরপো। ধঞ্চের জ্বালানি খুব ভালো। ধান সেদ্ধ করতে খুব ভালো। তোমাদের পাটকাঠি বিক্রি করে যে ভাঙাচোরা থাকে, তাতে আমার কাজ হয় না।
— দেখলে আসগার, গরু এলো না- দুধের দই বসানো হয়ে গেল।
হেসে উঠল দুজনে। মৃদু রাগে হেঁসেলে গেল বৌদিমনি।

খরিফ মরশুমের বীজ বপনের কাজ শেষ করেই, আসগারের জিম্মায় সবকিছু রেখে স্বামী- স্ত্রী, নাতনিকে নিয়ে কলকাতা রওনা হলো। রাতে ট্রেনে উঠে সকাল সকাল পৌঁছে যাবে কলকাতা। বন্ধ ঘর- দুয়ারে কদিনে ধুলো ময়লায় পা বাড়ানো দায়। সাফসুতরো করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল মাস্টার গিন্নি। সত্যেন মাস্টার জলখাবারের জোগাড়ে রাস্তায় মোড়ের দোকানের দিকে রওনা হল। সকালের কলকাতা শুনশান রাস্তা। দুই একটা বাস খালি খালি স্ট্যান্ডের দিকে রওনা হচ্ছে। সামান্য কটা প্যাসেঞ্জার নিয়ে ট্রামখানা ঘটাং- ঘটাং করে টালিগঞ্জের দিকে চলে গেল। এই সকালে গ্রাম কত নিস্তব্ধ থাকে। পাখির ডাক। মৃদু বাতাস ।সকাল থেকে কেমন মন ভালো করা স্বাচ্ছন্দ্য এনে দেয়। অথচ শহর শব্দের টুং-টাং শুরু হতে হতে ক্রমশ শব্দের ঝংকার হয়ে যায়। সারাদিন। মধ্যরাত্রি পর্যন্ত। জলখাবার নিয়ে বাড়ি ফিরতে, ঘরদোর প্রায় সাফসুতরো হয়ে গেছে, রান্নাঘরের টুংটাং আওয়াজ। কল ঘরের মটোর চলার শব্দ।ছড়-ছড় জল পড়া- হাঁড়ি থালা ধোয়ার বেসুরো আওয়াজ। বন্ধ ঘরে দোরে আজ প্রাণ প্রতিষ্ঠা হল যেন। চা-জল খাবার খেয়ে টুকটাক কথা হচ্ছিল দুজনের। শুভ্র- অভ্র আজ রাতেই আসছে। শঙ্খ ছেলেদের পৌঁছে দিয়েই রাতের গাড়িতেই ফিরে যাবে। লিস্ট করে বাজারের ব্যাগ হাতে মাস্টার বেরিয়ে গেল যদু বাবুর বাজারে। এ তল্লাটের বিখ্যাত বাজার। বহুদিনের পুরানো সব দোকান। টাটকা সবজি, মাছ, তরি- তরকারি, মুরগি থেকে খাসির মাংস। ভরপুর বাজার। বাজার ঘুরে-ঘুরে বাছাই- বাছাই জিনিসে ব্যাগ ভরালে মাস্টার। সৌখিন মনের মানুষ। নাতি-নাতনির পছন্দের মাছ- মুরগির মাংস। আলু, পেঁয়াজ, কাঁচা সবজি আরও কত কি।

Bangla Upanyas Online

বাড়ি ফিরে বেশ ক্লান্ত সত্যেন বাবু। দুহাতে ঝোলানো ভারী ওজনের ব্যাগ, বয়ে আনতে বেশ কষ্টকর‌ পাখার তলায় বসে ঘাম শুকালো। জল খেয়ে খবরের কাগজটা খুললো একটু। দুপুরের খাবার খেয়ে বিছানায় পিঠ পাতলো সত্যেন মাস্টার। সারারাতের ঘুম না হওয়া শরীর। অনভ্যাস্ত বাজার ঘুরে ব্যাগ ভরানো। বয়ে আনার ক্লান্তি। কিছুক্ষণের মধ্যেই চোখ বুজিয়ে দিলে। সন্ধ্যা ছুঁই-ছুঁই বিকেল, চোখে মুখে জল দিয়ে তিন জনা চা-বিস্কুট নিয়ে বসলো।
— দাদারা কখন আসবে দিম্মা? সন্ধ্যে হয়ে যাবে? নাতনির প্রশ্ন।
— দূরের রাস্তায় একটু দেরি তো হবেই। এসে যাবে, দাদুর উত্তর।
— মা’ও দাদাদের সঙ্গে আসবে দাদু? ছোট্ট মুখের বড় প্রশ্ন নাতনির।
— বলতে পারবোনা। আসলে আসতেও পারে ।অসহায় উত্তর দাদুর।
–চলো, ছাদ থেকে কাপড় আনতে হবে। নাতনিকে ডেকে নিয়ে দিম্মা এ যাত্রা প্রশ্নবাণ থেকে রেহাই দিলে।

ঘড়িতে তখন আটটা বেজে দশ। শঙ্খ দুই ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরলো। দাদু- দিদাকে দেখে শুভ্র- অভ্র একটু চনমনে হল। হাতে- মুখে জল দিয়ে একটু চা খেলো শঙ্খ। বেরিয়ে যাবার তাগিদ দেখে সত্যেন বাবু জামাইকে জিজ্ঞেস করল, – আর কোন খোঁজ খবর করেছিলে ?
— হ্যাঁ, বাবা। প্রায়ই তো ফোন করে কথা বলি থানায়। ওরা এখনো তেমন কোন হদিস করতে পারেনি। চেষ্টা চলছে, কোন রকমে বোঝায় শঙ্খ।
— বছরের পর বছর এভাবে খোঁজই চলবে? সুরাহা কিছু হবে না ? প্রশ্ন সত্যেন বাবুর।
— না- তা কেন, কিন্তু কি বা করার আছে বলুন। আমরা নিজেরা তো খুঁজতে পারবো না। পুলিশের উপর ভরসা করতেই হবে। শঙ্খ বোঝায়। বাবা আমাকে এখনই বেরিয়ে যেতে হবে, তবে ট্রেনটা পাবো। এটা মিস হলে খুব সমস্যায় পড়ে যেতে হবে।
— হ্যাঁ, যেতে যখন হবে যাও। তবে বাড়ির কথা ভাবো। এভাবে কতদিন চলবে ? তুমি বাইরে থাকবে, ছেলেগুলো ভাসাকাঠ হবে। মেয়েটা না হয় আমি দায়িত্ব নেব। আমার কাছেই রেখে দেব। কিন্তু ছেলেরা কিভাবে মানুষ হবে। হাঁপিয়ে ওঠে সত্যেন মাস্টার।
শঙ্খ বললে, – আমি তো দিন কুড়ি পর আসছি। সাত দিন ছুটি পাবো। তখন আলোচনা করবো।
শঙ্খ কিছুটা দায় এড়িয়ে যেমন এসেছিল – তেমনি চলে গেল।

সত্যেন মাস্টার কেমন অসহায় এখন। কতো কথাই মনে আসে। ছবির মতো ভেসে ভেসে যায় কতো কথা। একমাত্র মেয়ে কতো শখ করে শহরে বিয়ে দিয়েছিল। সরকারি চাকরি। নিজেদের বাড়ি। আসলে মানুষ যা যা চায় তার জীবনে ।সবগুলো মিলে না। কিছু হয়তো মিলে যায় ।আবার উল্টোটাও হয়ে যায়।
“যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই- যাহা পাই তাহা চাই না “। না এমন কথা সবখানেতে খাটে না ।সন্তানের ভালো থাকা। সন্তানকে ভালোভাবে মানুষ করা। সকল বাবা-মাই চায় । চেষ্টা করে তাদের জীবন গড়ে দেবার। সেই সন্তান যদি ভুল পথে পা বাড়ায়, বাবা-মার করার কিছুই থাকে না।
— দাদু খাবে এসো । নাতনির ডাকে সম্বিত ফেরে সত্যেন মাস্টারের।

খাওয়া সেরে বিছানায় পিঠ পাতলো সকলে। শুভ্র-অভ্র শুয়েই ঘুমিয়ে পড়ল। সারাদিনের গাড়ি চড়া। শরীরের ক্লান্তি থাকায়- দেরি হয়নি ঘুম আসতে। দিদিমার সঙ্গে নাতনিও ঘুমের কোলে। ঘুম আসেনি সত্যেন মাস্টারের চোখে। চিন্তার আবর্তে ডুবে থাকা মন চোখের পাতাকে বুজতে দেয়নি। ঢং- ঢং করে- করে একটা ট্রাম কোন দিকটায় চলে গেল। শহরের রাস্তা মধ্যরাত্রিতেও কিছুটা ব্যস্ত থাকে। অথচ তাদের গ্রামে এই সময়ে চুপচাপ। নিস্তব্ধ। দু-একটা কুকুরের শব্দ ছাড়া কোন ডাক থাকে না।

জয়নাল আবেদিন | Joynal Abedin

From the Myanmar Diaries | অ-শরীরী | মায়ানমারের ডায়েরীর পাতা থেকে | 2023

Doob De Re Mon Kali Bole | ডুব দে রে মন কালী বলে | অভিজিৎ পাল | New 2023

Adrishya Alor Poth | অদৃশ্য আলোর পথ | কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা | Top New 2023

Natun Bangla Kobita Lekha | কবিতাগুচ্ছ | শ্রাবনী দত্ত | Top New 2023

Bangla Upanyas Online | Bangla Upanyas Online 2023 | New Bangla Upanyas Online | Bangla Upanyas Online Read | Read Bangla Upanyas Online | Bangla Upanyas Online pdf | Download Bangla Upanyas Online | Bangla Upanyas Online Series | Shabdodweep | Sabuj Basinda | High Challenger | Shabdodweep – Bangla Upanyas Online | Bangla Upanyas Online – Joynal Abedin | Bangla Upanyas Online Show | Shabdodweep Writer | Shabdodweep Novel Writer | New Bengali Novel | Full Novel in PDF | Free Novel Download | Top Bengali Novel | Famous Bengali Writer | Best Selling Bengali Story | Pratilipi Story | StoryMirror Story | Bangla Upanyas Online Book | Sabuj Basinda Website | Top Bengali Writer | High Challenger Motivational Blog | Full Story in Bengali | Bengali Story Reader | New Bengali Story 2023 | Bangla Galpo | Natun Bangla Galpo | Natun Bangla Galpo 2023 | Story Writing Competition | Bengali Story Writing Competition 2023 | Writing Competiton 2023 | Shabdodweep Story Writing Competition | Full Web Stories | Bangla Galper Series | Netflix Bangla | Download Bangla Galpo | Bengali Story in USA | Bengali Story in Bangladesh | Indian Bengali Story | Google Bangla Story | Search Bangla Galpo | Sera Bangla Galpo | 18+ Bangla Galpo | Adult English Story | Adult Bengali Story | Adult Bangla Galpo | Bangla Upanyas 2023 | Natun Bangla Upanyas | Shabdodweep Upanyas | Shabdodweep New Novel | Attractive Bangla Galpo | Attractive Bengali Story | Bangla Galpo Samagra | Bengali Story Collection | Story in Bangla | Bangla Galper Episode | Bangla Upanyas Online Episode | Shabdodweep Forum | Shabdodweep Story Collection

Leave a Comment