Bangla Story Generator – Pintu Sardar (Padak)
দিনের শেষে – পাদক (পিন্টু সরদার)
বুড়ো…? ও বুড়ো … ঘুমিয়ে পড়লে নাকি! সন্ধ্যে যে হয়ে গেল .. এবার ওঠো … কি গো কথা বলছো না কেন? কী হলো তোমার? বুকে কী খুব ব্যথা করছে?
ও রতন..? এই দিকে একবার আয় তো বাবা … দেখ তোর বাবা আর কথা বলছে না …।
তড়িঘড়ি করে পাশের ঘর থেকে রতন ছুটে এসে বাবার বুকে মুখে হাত দিয়ে দেখলো যে তাদের বাবা আর এ পৃথিবীতে নেই।
— কী হয়েছে বাবার?
— বাবা আর নেই মা। বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন…
— না… না.. আমাকে ছেড়ে যেতে পারে না।যাবে যদি তবে…
— এই ভাঙা শরীর নিয়ে কেন আসতে গেলে বলতো! তাতে আবার এই গরমের দুপুরে। এখনো কি তোমার সেই বয়স আছে?
— আসবো না বললে হয় বিজন!এই পঞ্চান্ন বছরের এমন একটা বছর গেছে এই দিন তোমার কাছে থাকিনি?
— সে তো জানি।এবার যে তোমার শরীরটা বেশি ভেঙে পড়ছে।
— পড়েছে তো পড়েছে।মনটা তো সেই বাইশ বছরের কলেজ পড়ুয়া যুবকের…বিবাহ বার্ষিকীতে তোমার কোলে মাথা দিয়ে একটু আদর নেবো না তা কি হয়?
— একটু আস্তে.. পাশের ঘরে ছেলে বৌমা আছে তো নাকি? এ বয়সে লাজ লজ্জা সব খাবে দেখছি..
— কতদিন পরে পরে তোমাকে একটু দেখি বলতো বিজন?
— জানি বাবা .. জানি …। কী দিন না ছিল তোমার।
— তোমার বুঝি ছিল না?
— ছিল! তবে তোমার মতো পাগলপনা নয়। আমি কলেজে না পৌঁছানো পর্যন্ত ঠায় রোদে জলে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা …. ক্লাসে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা … আর কলেজ ছুটি হলে মুখ ভার করে দাঁড়িয়ে থাকা…
— আর আমি একদিন কলেজে না গেলে তুমি পাগলীপনা হয়ে মাথার চুল ছিঁড়তে সে খবর আমি জানতাম না বুঝি?
— ছিঁড়লে কী এই সাদা-পাকা চুল গুলো এখনো থাকতো?
— এই চুলেও আজ তোমাকে ভারি সুন্দর লাগে বিজন। তাই তো এখনো মনে ছবি আঁকি।
— ছবি আমিও যে আঁকি বুড়ো। বিরহের যন্ত্রণা নিয়ে এখানে ঘুমরে মরি। ছেলেদের মানুষ করার পুরস্কার দিয়েছেন ভগবান..
— পুরস্কার! তা ভাবতে পারো … এবার চোখটা বন্ধ করো তো ..।
— কেন?
— বন্ধ করো তো।তার পর বলছি ..।
— বেশ এই চোখ বন্ধ করলাম …
— চোখ খুলবে না আমি না বলা পর্যন্ত ..
— আচ্ছা। তবে কী করছো বলোতো? আমার তো লাগছে ..
— আর একটু .. আমি যখন চোখ খুলতে বলবো তখন খুলবে …
— কি হলো ..এবার কি হয়েছে ..?
— হ্যাঁ। এবার চোখ খোলা…।
বিজনদেবী চোখ খুলে দেখলেন মুখের সামনে একটি আয়না। সেই আয়নার প্রতিবিম্বে তার কুঁচকানো চামড়ার মুখের কানে সেই চাঁদবালি দুল …
— না .. না .. বিজন। এটা তুমি নিতে বলো না। টাকার কোনো না কোন উপায় হয়ে যাবে।
— আমার এই দুল জোড়া থাকতে কেন লোকের কাছে ধার-দেনা করতে যাবে? তাছাড়া আমাদের মানিক যখন চাকরি করবে তখন কী আমাদের এমন দিন থাকবে? তখন না হয় আমার এমন দুল জোড়া তৈরি করে দিও। নাও .. নাও … ধরো ..
— তাই বলে তোমার এই দুল বেঁচে…
— বেঁচে তো কী শুনি? আমাদের ছেলের চাকরির পরীক্ষা আগে,না আমার দুল পরে পটেরবিবি সাজা আগে?
— তা ঠিক বিজন। কিন্তু এই দুল পরিয়ে যে বাসর রাতে তোমার মুখ দেখেছিলাম।দুল ছোড়া পেয়ে তুমি কতো খুশি হয়েছিলে।
— তাছাড়া তুমি তো বলো এই দুল ছোড়া তোমার খুব প্রিয়।
— বলি। তাই বলে সন্তানের ভবিষ্যৎ না ভেবে দুল পরে ঘুরবো! এসব ভেবো নাতো।সামান্য এই দুল নিয়ে এতো ভাবনা চিন্তা করে নাকি। নাও … নাও …ধরো। এটা বেঁচে ছেলের পরীক্ষার ব্যবস্থা কর।
— নিচ্ছি। তবে বিজন এমন দুল ছোড়া আমি তোমাকে আবার পরিয়ে দেবই।
— আচ্ছা বেশ তাই দিও…
বিজনবালা ও সন্তোষ মল্লিক দাম্পত্য জীবনের সব সুখ শান্তি বিসর্জন দিয়ে তাদের দুই ছেলেকে মানুষ করেছে। বড়ো ছেলে মানিক, কলেজের প্রোফেসর। চাকরির পরে বৌ বাচ্চার সাথে বাবাকে নিয়ে উঠেছে কলকাতা কোন দামি ফ্লাটে। ছোট ছেলে রতন,বড় ব্যবসায়ী। সে পৈতৃক সম্পত্তিতে পড়ে আছে বৌ বাচ্চা আর মাকে নিয়ে। টাকা পয়সা গাড়ি বাড়ি আর প্রতিপত্তির ভারে বাবা-মা নামক বোঝা বইতে পারার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিল। মা বাবাকে দুজন ভাগাভাগি করে নিয়ে সমাজে নিজেদের একটা উজ্জ্বল ভাবমূর্তি তৈরি করেছিল যে আজকালকার ছেলে হলেও মা বাবাকে তারা ফেলেনি।
— তোমাকে সেই বাসর রাতের মিষ্টি লাজুক মুখে যেমন দেখাচ্ছিল ঠিক তেমনই আজ লাগছে।
— এসব এখন কেন করতে গেলে বলোতো?
— কেন করবো না! এই দিনটাই যে আমাদের জীবনের একটা সুখের দিন। সব সুখ শান্তি বিসর্জন দিয়ে ছেলেদের মানুষ করেছি। তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা ভেবে দিনরাত এক করে খেটেছি। কতো রাত আধপেটা খেয়ে কাটিয়েছি। আর আজ! আমাদের ছেলেরা ধনী।তাদের পরিবার হয়েছে। গাড়ি বাড়ি টাকা পয়সা কী নেই..
— ওরা আমাদের একটু একসঙ্গে থাকতে দিলো না গো। জীবনের শেষ কটাদিন এক সঙ্গে থেকে যেতে পারলাম না। তোমাকে আমার শুধু মনে পড়ে। ভাবি কি করছে মানুষটা। খাওয়া দাওয়া ঠিকঠাক করছে কিনা। শরীরটা ভালো আছে কিনা। বুকের ভীতর যন্ত্রণাটার বাড়াবাড়ি হয় কিনা-এই সব ভেবে বুকটা আমার ফেটে যায় গো..
— আমিও যে তোমাকে নিয়ে চিন্তায় থাকি বিজন। তোমার কোমরের ব্যথাটা এখন বাড়াবাড়ি কিনা। সারাদিন খাটাখাটনির পর রাতে কিছু খেয়ে ঘুমাও কিনা..
— থাক … থাক … হয়েছে। এবার বলো তো এই দুলের টাকা কোথায় পেলে?
— কেন যে টাকাটা জমিয়ে রেখেছিলাম…
— গহনা পরিয়ে ছোট বৌমার মুখ দেখবে বলে…। সে আর হলো না বলে শেষে সেই টাকায় দুল কিনে আমাকেই দিলে?নিজের জন্য আর কিছু রাখলে না?
— রেখেছি তো?
— কী?
— জান না!
— না!
— আমার বিজনকে। সেই তো আমার জীবনের স্পন্দন। তাই এই বুকে আগলে রেখেছি।
— সে তো আমি জানি গো…
— বিজন?
— বল? তোমার কোলে একটু মাথা দেব? আমার যে ভীষণ ঘুম পাচ্ছে। কতদিন যে ঘুমাই না…
— এসো। আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
পথভোলা – পাদক (পিন্টু সরদার)
এটা কি করে হলো বাবা! ও বাবা বলো না, কি করে হলো? বলো না আমাকে…?আমার বাবা যে এমন করতে পারে না! আমার বাবা যে পৃথিবীর সব থেকে ভালো বাবা…উঁ..য়ু…উঁ..য়ু….।
বাবা মেয়ে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে খানিকটা কান্নাকাটি করে মনের যন্ত্রণার ভার একটু কমানোর চেষ্টা করতে থাকে।রতন ভুলে গিয়েছিল তার মেয়েকে যে আজ কাঁদতে নেই।চোখের জল মুছে রতন নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে।মেয়ের হাতটা কোমর থেকে জোর করে সরিয়ে মুখটা দুহাত দিয়ে চেপে ধরে বলে…
— কেঁদো না মা, কেঁদো না…আজকের দিনে এমন করে কেউ কাঁদে…!বোকা মেয়ে আমার..। এই তো আমি এসেছি…।
— আমি তোমাকে কথা দিয়েছিলাম-তোমার বিয়েতে আমি নাচবো। এই তো আমি নাচতে এসেছি। নাও..নাও..এসো…
রতন মেয়ের হাত ধরে ঘুরে ঘুরে নাচতে থাকে ছোট্ট একটা স্টেজে।যেটা বিয়ে বাড়ির একপাশে মাটিতে তৈরি হয়েছে।কোন তাল কোন ছন্দ জানা নেই। মুষ্টিবদ্ধ দু হাত উপরে তুলে যেন ঈশ্বরের কাছে শক্তির প্রার্থনা।আবার শক্ত মাটিতে পায়ের আঘাতে মুখোশে ঢেকে থাকা ঘুণধারা সমাজে যেন পদাঘাত।বাবা মেয়ের দুজনের চোখে জল যেন ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধ স্তূপে গঙ্গার প্লাবন ধারা।
হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া এই দৃশ্যে বিয়ে বাড়ির উপস্থিত বরযাত্রীর লোকজন হতভম্ব হয়ে পড়ে। কি ঘটেছে ঠিক বুঝতে না পেরে সবাই নীরব দর্শকে অনুসন্ধিৎসু হয়ে থাকে। বাকিরা কানাঘুষা করে কিছু বলতে থাকে…। হয়তো এই কথাগুলো…
— ঠিক আছে বড়দা। তুমি এতবার যখন বলছ। তবে এবার কিন্তু শেষ। আর এসব কাজ করবো না।এবার টাকাটা যে আমার এখনি লাগবে।বুঝতে তো পারছো..। ঠিক আছে কাল আমি সময় মতো চলে যাব। আচ্ছা…আচ্ছা…। রাখছি তাহলে..।
রতন ফোন রাখতেই তার স্ত্রী বাসন্তীদেবী একটু রাগ আর অসন্তুষ্টি মিশিয়ে বলে…
— না…না..আর তোমাকে যেতে দেব না।এই তো কাল বাড়ি আসলে এতো দিন পর।রাতে ভালো করে ঘুমাতেও পারনি। শরীরটা ভেঙে পড়েছে।এটা মানুষের জীবন তো..।আর আজ সকালে আবার ফোন!না..না.. তুমি বারণ করে দাও ।বল তুমি যেতে পারবে না।বেশি রাতে এসেছ।মেয়েটার সাথেও ভালো করে কথাও বলতে পারোনি।ওর কথাটাও ভাবো। না …না..তুমি আর যেওনা। আমার কথা শোন গো…।
— এবার শেষ। বড়দা জোর করলো বলে কথাও দিয়েছি। দাদা বলেছে এবার আমায় টাকা বেশি দেবে। এবার গেলে আর যেতে হবে না। তাছাড়া সামনে তো আমাদের মেয়ের বিয়ে। এই টাকাটা পেলে মেয়ের সখটা তো আমি পূরণ করতে পারবো। তুমি আর না বলো না..। কটা দিনের তো ব্যাপার। এবারটা শুধু..।
— এ কাজ আমার মনে মোটেই ভালো লাগে না। তোমাকে ঐভাবে দিনের পর দিন থাকতে দেখে আমাদের ভালো লাগে গো…। মা মেয়ে যে কষ্টে মরে থাকি। তাছাড়া লোকে জানলেও তো…
— হ্যাঁ, বাবা। একাজ তুমি আর করো না। ওদের টাকা আছে বলে তোমাকে দিয়ে এসব কাজ করিয়ে নেয়। মা তো ঠিক বলেছে লোক জন জানলে তো লোকে বলবে তুমি এমন করে টাকা রোজগার কর। তাছাড়া একদিন দেখবে …
— আমারও কি ভালো লাগে মা..! কি করবো বল! অভাবের সংসার। তোমাকে যদি মানুষ করতে পারি সেই ভেবে..
— ভেবে গেলে..। শুধু আমাদের নিয়ে ভেবে গেলে..। নিজের কথা কি এবার ভাববে ভাববে না?
— ভাববো….ভাববো… মেয়ের বিয়েটা হয়ে যাক…
— আর ভেবেছ..। তা কখন যাবে?
— এখনি। বড়দা বললো আজ একটু সকাল সকাল যেতে..গাড়ি পাঠিয়ে দেবে..।
বাসন্তীদেবী আর একটা কালো পাথরের চাঁই বুকে ধরার মানসিক শক্তি নিয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে বলে..
— ভাগ্যের পরিহাসে গরিব হয়েছি।একটু সুখে থাকা আমাদের বিলাসিতা। দুঃখ কষ্ট নিয়েই বাঁচা।তুমি স্নান করে গুছিয়ে নাও।আমি দুটো ভাত ফুটিয়ে দেই তাড়াতাড়ি..।
— কি বলতে হবে মনে আছে তো রতন?
— হ্যাঁ..হ্যাঁ..বড়দা।একই কথা বলে বলে সব মুখস্থ।
— এবার একটু অন্য রকম বলতে হবে যে।
— বলবো।বলে দাও কি বলবো।
— সে আমি সময় মতো বলে দেব।
— আচ্ছা.. আচ্ছা..। তা বড়দা, তোমার আজ একটু বেশি চিন্তিত মনে হচ্ছে কেন? চিন্তা করো না। আমি তো আছি..
— না..না..কিসের চিন্তা। তুই তো আছিস..। তা রতন সকালে কি যেন বলছিলি…ও হ্যাঁ।তোর মেয়ের বিয়ে। তা কোথায় দিচ্ছিস? ছেলে কি করে?
— বিষ্ণুপুর। ছেলে স্কুল মাষ্টার।
ভালো..ভালো..। কলেজে পাশ করেছে।আবার সুন্দরী মেয়ে তোর।মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করেছ।সব বাবা তো তাদের সন্তানকে মানুষ করতে পারে না।যেমন আমি…
— একি বলছ বড়দা! তোমার ছেলে তো বাইরে থেকে পড়াশুনা করে সবে গ্রামে ফিরেছে। চাকরি-বাকরি খুঁজছে নিশ্চয়।তোমার যা জানাশুনা একটা কিছু পেয়ে যাবে।। আর চাকরি না পেলেও কি! তোমার এই গাড়ির ব্যবসা। তার উপর অগাধ সম্পত্তি।দেখে শুনে খেলে চলে যাবে..
— এখানে থামলে কেন বড়দা?
— এখানে নামতে হবে। এটা আমাদের উকিল বাবু রুম। ওই যে বললাম না আজ একটু অন্য রকম বলতে হবে। তাই এখানে বসে তোকে শিখিয়ে পড়িয়ে দেই কি কি বলবি আর করবি।
— ও,আচ্ছা।চল…।
বড়দা, বিপিন সাহা। বাবার পৈতৃক সম্পত্তির সুবাদে ধনী ব্যক্তি। বর্তমানে গাড়ির ব্যবসা। রাজনীতিটা ভালো বোঝে।আর করেও।সমাজে প্রভাবশালী বলা যায়।এক ছেলে।বাইরে পড়াশুনা করেছে।বাবার টাকার ভারে বাবু কালচারের বুঁদ হয়ে আছে। চাকরির তেমন তাগিদ নেই।
পাশের গ্রামের রতন,রতন বেরা।সহজ সরল মানুষ।লেখাপড়া বেশি করেনি বলে জীবনের জটিল রাস্তায় এসে পথ হারিয়ে ফেলে।বিশ্বাস করা এক ধর্ম।তাই চোখ বুজে সে ধর্ম পালন করে রতন।।বউ মেয়ে নিয়ে সংসার।একরকম জন-মজুরি খেটে সংসার চলে।বড় স্বপ্ন মেয়েটাকে মানুষের মতো মানুষ করা।
বিপিন সাহার গাড়ির ব্যবসা।গাড়িতে কখনো এক্সিডেন্ট হলে মালিকের দুই একমাস জেল হয়।মালিক জেল না খেটে কাওকে প্রক্সি হিসাবে জেলে পাঠানো হয় বড় টাটার বিনিময়ে। রতন সেই কাজ করে মাঝে মধ্যে বিপিন সাহার হয়ে। সেই টাকায় সংসার খরচ,মেয়ের পড়াশোনা সবই চলে। এমন প্রক্সি কয়েদি সেজে রতন অনেক বার জেল খেটেছে। এই তো তিন মাসের জেল খেটে কাল গভীর রাতে বাড়ি ফিরে এসেছে।আজ আবার এসেছে তেমন প্রক্সি কয়েদি সাজতে…
— বড়দা একাজ তুমি করতে বলো না। এ কাজ যে অন্যায়। একাজ আমি পারবো না।
— তুমি ভাবছ কেন?বড়জোর আগের মতো দুতিন মাস জেল হবে। আর আমি তো আছি। তোমাকে তার আগে জেল থেকে ছাড়িয়ে আনবো।
— একাজ আমাকে করতে বলো না। এটা পাপ। একথা লোকজন জানলে আমি যে লজ্জায় ঘৃণায় মুখ দেখাতে পারবো না। আর আমার মেয়ের সামনে দাঁড়াবো কি করে এই মুখ নিয়ে! না..না..বড়দা আমাকে এবার মুক্তি দাও।
— দেখ রতন।আমার, আমার পরিবারের মান সম্মান ব্যাপার। তাছাড়া সামনে ভোট। এবার টিকিট পেয়েছি ভোটে লড়ার। তাই কোন মতে চাই না জনগণের কাছে আমার ভাবমূর্তি নষ্ট হোক। বলো কত টাকা নেবে? আমি তাই দেব। বলো কত..
— না..না..বড়দা। তুমি কোটি টাকা দিলেও না। যে এই ঘৃণ্য কাজ করেছে তার শাস্তি পাওয়া উচিত। তাই সে যেই হোক।আমি একাজ করতে পারবো না। চললাম বড়দা..
— দাঁড়া রতন। তোর কাছে যেমন তোমার মেয়ে সব।তেমনি আমার কাছে আমার ছেলে। তুই তোর মেয়ের জন্য সব কিছু করতে পারিস। আমিও তেমন আমার ছেলের জন্য সব পারি। শুনলাম আগামী সপ্তাহে তোর মেয়ের বিয়ে। যদি সেটা কোন কারণে আর না হয়। সেটা কি ঠিক হবে? কিংবা তার থেকে ভয়ংকর কিছু হয় তোর মেয়ের সাথে।ভেবে দেখ কি করবি…।
এই কথায় রতনের বুকের ভিতরে পাড় ভাঙা ঢেউ এর মতো উথাল-পাথাল শুরু হয়ে যায়।এমন কথা তো সে কখন শুনিনি। মেয়ের মুখ চেয়ে পৃথিবীর সব দুঃখ কষ্ট সে সহ্য করতে পারে। কিন্তু এ কাজ? ঘৃণ্য থেকে ঘৃণ্য। নিজের মৃত্যু বিনিময়েও তো এ কাজ থেকে রেহাই নেই। মাকড়সার জালে জড়িয়ে পতঙ্গ যেমন ছটফট করে। রতন তেমন ছটফট করতে থাকে আর বার ভাবতে থাকে মেয়ের কথা…
— ও বাবা..বাবা।
— বল মা বলো…এমন করে গলা জড়িয়ে এতো আদর কেন মা?
— এসো না আমার সাথে একটু নাচ করবে।
— দুর বোকা। আমি কি পারি…না তোর মতো নাচ শিখি! এমন করে না
— আমি শিখিয়ে দেব।এসো না…।কত দিন থেকে বলছি তোমায় সাথে নাচবো..তুমি বল আজ না.. আর আজ না..। আজ ছাড়বো না।
— এই বয়সে নাচলে আমার আর রক্ষে থাকবে না।আমি তো বলছি তোমার বিয়েতে স্টেজ করে সারারাত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করবো। সেই অনুষ্ঠানে আমি তোমার হাত ধরে নাচবো।
— কথা দিলে তো বাবা?
— কথা দিলাম। তুমি বিয়ের কনে…
— কি ভাবলি রতন?আর সময় নেই।
— চলো..
— কি বলতে করতে হবে মনে আছে তো?
— হুম।
— বল্ কতো টাকা নিবি এবারের কাজে?
— এক টাকাও না।
— বল্ ..বল্..কতো নিবি?
— বললাম তো এক টাকাও না।
— সামনের সপ্তাহে তোর মেয়ের বিয়ে..
— মেয়ের বিয়েতে আমি বাড়ি যেতে পারবো তো?
— হ্যাঁ..হ্যাঁ..সে ব্যবস্থা আমি করে দেব। তা ছাড়া কেউ জানবেও না তুই কোথায় থাকিস কি করেছিস।ঠিক আগের মতো। চল্..চল্.. কোর্টের সময় হয়ে যাচ্ছে।
ফল যা হবার তাই হল।মামলা বিচারাধীন। রতন জেলবন্দী। জামিন হয়নি। তাই কোর্টের অনুমতিতে রতন পুলিশের গাড়িতে চলেছে বাড়ির দিকে। এমন সময় কোন এক জনসভার মাইক থেকে বিপিন সাহার কথা কানে ভেসে আসে…
“বন্ধু গন.. বিরোধী পক্ষ ষড়যন্ত্র করে আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু পারেনি।আসল সত্য আপনারা কাগজে পড়েছেন।আমার ছেলে উপর মিথ্যা ধর্ষণের অভিযোগ করা হয়েছে।ভাঙা স্কুল ঘরে মেয়েটির চিৎকারে আমার ছেলে মেয়েটির ওখানে পৌঁছাতে রতন পালিয়ে যায়।কিছু লোকজন আমার ছেলেকে সেখানে দেখে ফেলে।আসল অপরাধী কোর্টে স্যারেন্ডার করেছে। কোর্টে সে নিজের মেয়ের বান্ধবী কে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে। বিচার চলছে।ধর্ষণের পর কি নির্মম ভাবে খুন করার চেষ্টা করেছে বলুন তো।মেয়েটি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে।এই ধর্ষণকারী কে জানেন?রতন বেরা।আমার বাড়িতেই কাজ করতো।আমি ওকে নিজের ভাইয়ের মতো দেখতাম।আমি দুধ কলা দিয়ে কালসাপ পুষেছি।আপনারা আমাকে ক্ষমা করবেন…”।
— রতনবাবু এবার চলুন। আপনার সময় অতিবাহিত হয়েছে।
— হ্যাঁ স্যার…চলুন।
রতন কাঠের পুতুলের মতো ধীর পায়ে পুলিশ গাড়ীতে উঠতেই গাড়ি ছুটে চলে তার গন্তব্যে। বউ মেয়ে চোখের জলে সেই দিকে তাকিয়ে থাকে…। বিয়ে বাড়িতে তখনও বেজে চলছে সানাইয়ের করুন সুর…।
পাদক (পিন্টু সরদার) | Pintu Sardar (Padak)
Best Andaman Travel Story | Full Andaman Journey
Best Bengali Story Generator | Shabdodweep Galper Diary
Best Online Bangla Hasir Golpo | Bengali Story
High Trend Bangla Kobita | Shabdodweep Bengali Poetry
Anandabazar Bengali Short Story | Bengali Short Story | Pratilipi Horror Stories in Bengali | Lifestyle Web Stories in Bangla | Trending online bangla golpo pdf free download | Short bengali story | Bengali story pdf | pratilipi bengali story | Short Stories for Children | English Stories for Kids | Moral Stories for Kids | story in english | story hindi | story book | story for kids | short story | story for girls | short story in english | short story for kids | Bangla Story Generator pdf | Bangla golpo pdf | Bangla golpo story | bangla romantic golpo | choto golpo bangla | bengali story | Sunday suspense golpo | sunday suspense mp3 download | suspense story in hindi | suspense story in english 200 words | Bangla Story Generator in english | Trending online bangla golpo pdf download
suspense story in english 300 words | Suspense story examples | suspense story in english 100 words | suspense story writing | very short suspense stories for students | Bangla Story Generator | Top Bangla Golpo Online Reading | New Read Online Bengali Story | Top Best Story Blogs | Best Story Blogs in pdf | Sabuj Basinda | High Challenger | Famous Bangla Golpo Online Reading | Shabdodweep Read Online Bengali Story | Shabdodweep Writer | Bangla Golpo Online Reading pdf | Famous Story – Trending Bangla Story Generator | Pdf Bangla Story Generator | Bangla Story Generator App | Full Bangla Story Generator Reading | Bangla Golpo Online Reading Blogs | Trending online bangla golpo pdf
Best Story Blogs in Bengali | Live Bengali Story in English | Bangla Golpo Online Reading Ebook | Full Bangla Galpo online | Bangla Story Generator 2024 | New Bangla Story Generator – Episode | Golpo Dot Com Series | Bangla Story Generator Video | Story – Bangla Story Generator | New Bengali Web Story Audio | New Bengali Web Story Video | Bangla Story Generator Netflix | Audio Story – Bangla Story Generator | Video Story – Bangla Story Generator | Shabdodweep Competition | Story Writing Competition | Bengali Writer | Bengali Writer 2024 | Trending Bangla Golpo Online Reading | Top Bangla Story Generator | Bangla Story Generator Web Story | Best Read Online Bengali Story | Read Online Bengali Story 2024 | Trending online bangla golpo book pdf
Shabdodweep Bangla Golpo Online Reading | New Bangla Story Generator | Bengali Famous Story in pdf | Modern Online Bangla Galpo Download | Bangla Golpo Online Reading mp3 | Horror Adult Story | Read Online Bengali Story Collection | Modern Online Bangla Galpo mp4 | Modern Online Bangla Galpo Library | New Bengali Web Story Download | Full Live Bengali Story | Bengali Famous Story 2023 | Shabdodweep Bengali Famous Story | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Bengali Famous Story – video | Bengali Famous Story mp3 | Full Bengali Famous Story | Bengali Literature | Shabdodweep Magazine | Shabdodweep Web Magazine | Live Bengali Story Writer | Shabdodweep Writer | Trending online bangla golpo free download