Best Bangla Kobitar Duniya 2023 | Sanjit Kumar Mandal

Sharing Is Caring:

Bangla Kobitar Duniya – সঞ্জিত মণ্ডল – সূচিপত্র

মায়া – সঞ্জিত মণ্ডল

গভীর রাতের আকাশে তাকাই, শুকতারাদের দেশে,
হারিয়ে গিয়েও ফিরে আসবোই আশা নিয়ে ভালোবেসে।

আকাশে তারারা আমাদেরই কেউ হয়ত হারিয়ে গেছে,
আমাদের এই পৃথিবীর থেকে, জীবনের অবশেষে ।
যত তারা দেখি অসীম আকাশে গ্রহ হতে ছায়াপথে,
ছিল বুঝি তারা হয়তো কখনো আমাদেরই এক সাথে।

আমাদেরই কেউ শুকতারা কেউ সন্ধ্যাতারার বেশে,
কেউ তারা হলো সপ্তঋষি ও অরুন্ধতী নির্মল নীলাকাশে।
তারা কেউ আজও ধ্রুবতারা আর কালপুরুষের বেশে,
ঝলমল করে তাকিয়ে রয়েছে যুগযুগান্ত শেষে।

এতো মায়া আছে, এতো আশা আছে, এতো ভাষা আছে মনে,
এতো গান আছে, এতো প্রাণ আছে এতো সুর আছে চেতনার অভিমানে!
দূরে গিয়ে তাই মায়াভরা চোখে চেয়ে থাকে আসমানে।
যেন চেয়ে থাকে আমাদেরই পানে মহা মিলনের টানে।
বড়ো আশা করে দেখে নেয় কবে ফিরবে মাটির টানে।
প্রাণে গান নিয়ে বুকে আশা নিয়ে বসে আছে আজও আকাশের মাঝখানে ।

তুমি আমি যবে আমরা সকলে, এমনি বিলীন হবো,
আমরাও বুঝি দূরের আকাশে তারা হয়ে চেয়ে রবো!
জীবন-মরণ সীমানা পেরিয়ে যেদিন বিদায় নেবো,
হে আকাশ তুমি দয়া করে সেথা আমাদেরও ঠাঁই দিও।
তোমারই কোলেতে অপার স্নেহেতে আমরাও চেয়ে রবো,
যুগযুগান্ত আশা করে শেষে আমরাও ঘুরে যাবো।

আবার ফেরার বুকভরা সেই আশার দিনটি গুনে,
চেয়ে রবো ঠিক তারাদের মতো চেয়ে রবো আনমনে।
বিধাতার কাছে সকরুণ লাজে এই বর মেগে নেবো,
হে প্রভু আমায় জগত সভায় ফেরবার বর দিও।
পৃথিবীর মায়া মহা মায়াময় সুখে দুখে লাজে ভয়ে,
আসবার তরে বড় আশা করে বসে থাকি পথ পরে।

বসুন্ধরায় শান্ত ছায়ায় ফিরি তব করুণায়,
অমল বিমল শোভন মায়ায় তোমারই এ আঙিনায়।
আশায় আশায় দিন চলে যায় থাকি আকাশের গায়।
পুণ্য প্রভাত দেখি সেথা হতে অস্ত রবির ছায়।

আবার আসবো ফিরে মাগো সেই তোমারই আঁচল তলে,
এই বাংলায়,তোমারই মায়ায় ছায়া বিটপীর তলে।
পদ্মা মেঘনা গঙ্গা যমুনা সুবর্ণরেখার তীরে,
হিমালয় বুকে চরণ চিহ্ন রেখে যাবো স্নেহ ভরে।
এই মায়াতেই জীবন কাটাই সুখে দুখে হাসি গানে,
নির্মল মনে নয়নে নয়ন মিলাবো প্রাণের টানে।।

বর্ণ ইন গাজা – সঞ্জিত মণ্ডল

মানবধর্ম কৃতকর্ম ভুলে গেছে ওরা আজ
গাজায় জন্ম গাজায় কর্ম আজকে সর্বনাশ।
বিস্মিত ও ক্ষুধার্ত সব ভয়ে ত্রাসে বাঁচে আজ
জঙ্গি সৈন্য মুখোমুখি লড়ে দেহে যুদ্ধের সাজ।

ধর্মস্থানে হাসপাতালে মিশাইল আর বোমাও ফেলে,
শিক্ষালয়ে বৃদ্ধাবাসে সবাই আছে ভয়ে ও ত্রাসে।
নির্লজ্জ সেই হানাদারদের কে বাধা দেয় আজ,
কে কার আগে চিমটি কাটে হাসে যুদ্ধবাজ।

গাজায় জন্ম গাজায় কর্ম গাজায় বসবাস,
যুদ্ধবাজের দাপাদাপি ধ্বংসের অভিশাপ।
দুধের বোতল পায় না শিশু মিশাইল তার মুখে,
হাসপাতালে বৃদ্ধাবাসে কেউ কি আছে সুখে?

স্বদেশ ছেড়ে পালায় জোরে যুদ্ধের ঝাঁজ লাশে
ধূলিসাৎ অকস্মাৎ মারণ যজ্ঞ দেশে।
জন্মভূমি স্বর্গভূমি চরণ চুমি তার
স্বদেশ ছেড়ে বিদেশ ঘুরে অস্থায়ী সংসার।

কি নিষ্পাপ শিশুরা আজ থরথরিয়ে কাঁপে
আর্ত নারী বৃদ্ধ জোয়ান সবাই ভয়ে ত্রাসে।
কার দয়াতে যুদ্ধ বাধে কে কলকাঠি নাড়ে,
অস্ত্র বিক্রি চালাও ডিক্রি কোপটা পড়ে ঘাড়ে।

কেউ ভালো কেউ মন্দ সে সব আমরা কি আর জানি
যুদ্ধবাজের দৌলতে আজ হচ্ছে কি হয়রানি।
সদ্যোজাত শিশুর চোখে বিষন্ন চাহনি,
জন্মভূমি গাজায় চলে ধ্বংসের কাহিনী।।

বাতাসে বিষ – সঞ্জিত মণ্ডল

বাতাসে রয়েছে ভাইরাস বিষ, বিষ ছড়িও না আর,
বাজি ও বারুদ প্রাণ নিয়ে নেবে নিরীহ এ জনতার।
কালবেলা চলে কতো হেলেদুলে প্রতিকার নেই তার,
জীবাশ্ম জ্বালানি দহনের জ্বালা সইতে পারিনা আর।

আবহাওয়া দূষিত হয় হররোজ বাতাস বিষাক্ত সাপ,
ফুসফুস জানে বিপরীত টানে, উচ্চ রক্তচাপ।
মোটা হয়ে যাওয়া ডায়াবেটিস কি করোনারি য়্যাটাকে সে,
বাতাসেতে ভাসে বিষ ধূলিকণা এজমাটাও যে আসে।

শ্বাসপ্রশ্বাস কঠিন হয়ে যায় শিশু ও বৃদ্ধ দের,
খাবি খেতে খেতে দম আটকে যায় বদ গুণ সে বিষের।
সি-ও-পি-ডি, ব্রঙ্কাইটিস আর সাইনা সাইটিস সাথে,
এমফেসেইমা, নিউমোনিয়ার প্রকোপ বাড়ছে তাতে।

ভাইরাস বিষ রয়েছে বাতাসে সেটা সকলেই জানে,
বারুদের বিষ তার সাথে মিশে মারণ আঘাত হানে।
পটাশিয়াম নাইট্রেট সালফার কার্বন সব ধরে,
ডাই অক্সাইড শ্বাসতন্ত্রের ট্রাকিয়া ধ্বংস করে।

মানব শরীরে সমূহ ক্ষতির কারণ বাতাসে বিষ,
শুধু রোগী নয় সুস্থ মানুষ ও হাঁপায় অহর্নিশ।
অমাবস্যায় যে ভূত তাড়াতে বাজি ও তুবড়ি কেন,
বাজি ফাটিয়েই নিজে ভূত হবে সেটা ভালো করে জানো।

কুসংস্কারটা গেড়ে বসে আছে হাড়ে মাসে মজ্জায়,
দায় নিতে কেউ এগিয়ে আসেনা শেখায় না জনতায়।
আইন করে কি আটকানো যাবে মরণ বাঁচন খেলা,
মনের ভূতটা তাড়াতে সবার মনেতে আগুন জ্বালা।

বাড়িতে পোষ্য থাকলে না জানি সে কতো ভয়েতে কাঁপে,
অসহায় ওরা বাজির শব্দে নিরাপদ কোণ খোঁজে।
বাজির শব্দ বাজির আলো বাজিই ধোঁয়ায় ভরা
টাকার গরমে কানে লাগে তালা টাকা পোড়াবার খেলা।
বিবেক জাগুক জ্ঞানের আলোয় শিক্ষিত মন বলে,
ভূত প্রেত খোঁজ মনের ভিতরে শিক্ষার আলো জ্বেলে।।

হঠাৎ দেখা – সঞ্জিত মণ্ডল

সে এক সোনালী দিনে মায়াময় সূর্যকে সাক্ষী মেনে
তোমার সাথে দেখা হল সে এক শুভক্ষণে।
ফাল্গুনে এক ফুলের দিনে কুহু কেকা ডাকলো মনে,
কবি গুরুর বন্দিত সেই শান্তিনিকেতনে।
কি হল কে জানে, দেখেও তুমি চিনলে নাকো মোটে।
আমি তখন অবাক বনেছি বটে।
কি আর করি, বোকার মতন, সেই ভাঙা মন নিয়ে,
ঘরে ফিরে পদ্য লিখি সেই না চেনার দিনে।

সেদিন তুমি চিনতে পারনিতো!
লিখছি আমি উল্টো কথাই, কতই না চিনেছো।
যা লিখেছি মনের খাতায় অবাক হবে শুনে।
লিখছি এখন সেই কথাটাই এই নব ফাল্গুনে।

হয়ত শুনবো কোনো একদিন তুমি গেছ সে বাগানে,
রবি কবির যত্নে লালিত শান্তির নিকেতনে।
আমিও গেছি ওদিক পানে কি জানি কি মনে
হয়ত তোমায় খুঁজছি তখন অলস অন্যমনে।
তুমি আছো তোমার মনে দোদুল দোলায় দুলছো বনে,
পলাশ ফুলের ভ্রমর সনে কইছো কথা কানে।

পরনেতে ঢাকাই শাড়ি, উড়ছে ভারি, দুলছে কতো সেই পবনে।
মাথায় সিঁদুর রংবাহারি, মরি মরি, অবাক করি,
আছো চেয়ে আপন মনে, সেই ভরা ফাল্গুনের দিনে।
আমি হঠাৎ স্বপন মেনে, সেদিন গিয়ে সেদিক পানে,
হঠাৎ দেখা তোমার সনে শান্তিনিকেতনে।

অবাক চোখে তাকিয়ে তুমি অবাক চোখে আমি
চালতা তলায় প্রভাত বেলায় মিষ্টি মধুর বকুল মেলায়
অবাক হয়ে মৌমাছিদের গুনগুনানি শুনি।
ওদের দেখে তুমি আমি গেয়েছি সব গান,
ভুলে গিয়ে সব অভিমান,
ভোমরা এসে পথ ভুলে সে শুনিয়েছিল গুঞ্জন তান।
প্রজাপতি রঙিন পাখায়, ফুলের রেণু মেখে দু-পায়
পলাশফুলে মউল বনে রামধনু রঙ ছড়িয়ে দে যায়।
তোমার আমার মিলন মেলার বাসর শয্যা হবে এবার
গাছের তলে মাটির কোলে,ফুল কলিদের সনে।
তোমার আমার মিলন মেলার বাসর জাগাই গানে।

স্বপ্ন কি আর সত্যি হবে ফুলের মালা শুকিয়ে যাবে
ফাগুন আরও আগুন হবে শিমুল পলাশ দিনে।
চিনতে যদি হতো কথা মধুর হতো মনের ব্যথা
ফাগুন এমন আগুন হয়ে ঝরতো না সেই দিনে।
ভুলে গেছি ভুলেই যাবো এ ভুবনে সব হারাবো
রিণরিণে সেই ব্যথার বীণা বাজুক মনে মনে।।

শেষ স্টেশন – সঞ্জিত মণ্ডল

জিতবো বলেই খেলি শুধু জিততে হবে জানি
জিতলে পরি মাথায় মুকুট হারলে তো হয়রানি।
স্বপ্নের শেষ স্টেশন ছিলো সাবরমতীর পারে
খোয়াবনামা শেষ হয়েছে তরী ডোবে তীরে।

দশ-টা ম্যাচে জয়জয়কার ধাক্কা এগারোতে
দেশের সেরা দশের সেরা ডুবলো মাঝরাতে।
জয়ের কোনো রহস্য নেই সেরার সেরা জয়
মারি অরি যে কৌশলে তার নামই বিজয়।

ব্যাপারটা খুব সহজ নয়কো কঠিনও নয় মোটে
বিপক্ষকে পড়তে পারলে কপালে জয় জোটে।
নিজের দেশের পিচ চিনতে এতোটা ভুল হয়
অধরা তাই রয়েই গেলো কাঙ্ক্ষিত বিজয়।

বিদেশীরা কেমন করে পড়তে পারলো পিচ
দেশের ছেলে মাথা দোলায় সব কিছু বেঠিক।
যেমন তেমন নয়কো খেলা ক্রিকেট বিশ্বকাপ
হালহকিকত না জানলে তার ফলটা অভিশাপ।

স্বপ্নের শেষ স্টেশন ভাসে সাবরমতীর জলে
দশটা বিজয় সেরে শেষে হার ছিলো কপালে।
বিজয় লক্ষ্মী মালা নিয়ে তাকেই বরণ করে
ধারে ভারে সেরাটা যে উগরে দিতে পারে।

স্বপ্নভঙ্গ দেড়শো কোটির ভাসে অশ্রু জলে
হায় হতোস্মি শেষ ম্যাচেতে এ কি খেলা চলে।
দেড়শো কোটির স্বপ্নের শেষ আমেদাবাদে হলো
নতুন স্টেডিয়ামের সাথে ভারতও ডুবিলো।।

মানসী ১ম পর্যায় – সঞ্জিত মণ্ডল

কাল সারারাত অজস্র কলহ সেরে
তোমার বুকের মাঝে মুখ গুঁজে দিয়েছি আবার।
প্রত্যাখ্যান অবহেলা শুনিনি তোমার,
দুবাহুর নিষ্পেষণে সারারাত প্রাণপণে
বুকে টেনে নিয়েছি তোমায়।
আমার প্রেয়সী তুমি যুগে যুগে জীবনে জীবনে,
হার মেনে গেয়েছিলে গান শুভক্ষণে,
কি ভীষণ শীত ছিলো সেদিনের অন্ধকার রাতে
কোয়েলের কাছাকাছি জঙ্গলে নেতার হাটে।
সে যেন যুদ্ধ শেষে তুমি বিজয়িনী বেশে
কাজল দীঘল চোখে জয় করে নিয়েছ আমায়।
তোমার মৃণাল বাহু স্পর্শসুখ দিলো নির্দ্বিধায়।
সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে দিলে হৃদয়ের গোপন কোণেতে
অন্তরের অন্তঃস্থলে যতটুকু জমা ছিলো প্রেম মধুময়।

সেই রাতে প্রচণ্ড শীতের কাঁপুনিতে
তোমার পরশে হলো উষ্ণতার সাথে পরিচয়।
মনে প্রাণে মিশে গিয়ে যতটুকু যা বোঝালে
উপেক্ষা করা আর যাবে না তোমায়।
হে মানসী, সত্যি করে বলো দেখি
আরও কবে কতো ভাবে বোঝাবে আমায়-
প্রেম আসে প্রেম যায় স্মৃতি খানি রেখে যায়
ভোলা তাই নাহি যায় পরম বিস্ময়।
তোমার বিমুগ্ধ প্রেমে হাত পেতে চেয়েছি তোমায়।

নব রবি সুপ্রভাতে লাজে রাঙা লালিমাতে
কপোলে আবীর ছটা দিয়েছে তোমায়-
তুমি আরও লাজ ভরে কোয়েল নদীর চরে
এঁকেছ চরণ চিহ্ন বালুকা বেলায়।
কোয়েলের কাছাকাছি অগণিত তরুরাজি
মর্মর ধ্বনি তুলে সারাদিন অফুরন্ত গায়।
তুমিও আপন ভুলে বনফুল দিলে চুলে
বনদেবী সেজেছিলে অরূপ শোভায়।
দেখি ব্যগ্র গর্বভরে বনদেবী খেলা করে
শাল পিয়ালের বনে পাইন ছায়ায়।
সেদিন মহুয়া বনে ঘুরে ফিরি আনমনে
আমার মানসী বনে নাচিয়া বেড়ায়।
হে মানসী, বসিয়াছি জীবনের কাছাকাছি
দেখিয়াছি সে সৌন্দর্য বসে নিরালায়।
পূর্ব রাগ অভিসার অভিমান সোহাগ মাথুর
জীবনের পেয়ালা হয় কানায় কানায় ভরপুর,
অবশেষে হয় এই জীবন মধুর,
প্রিয়তমা কাছে এলে সব ভোলা যায়।।

মানসী ২য় পর্যায় – সঞ্জিত মণ্ডল

মানসী, যেও না দাঁড়াও কথা আছে,
তোমার গাড়ির আছে অনেক দেরী-
ততোক্ষণে দুটো কথা বলে নেওয়া যাক।
যতই অবাক হও কাজে তাড়া থাক,
সংসার নিলয় আজ পড়ে থাকে থাক,
কষ্ট করে শুধু দুটো কথা বলে যাও
উৎসুক এ হৃদয়ের ডাকে সাড়া দাও-
যেওনা দাঁড়াও।
একবার শুধু দুটো চোখ তুলে চাও,
যদি কোনো ভাষা থাকে ওই দুটি চোখে
সে ভাষায় একবার কথা বলে যাও,
শান্ত, মৌন নম্র স্বরে ধীরে ধীরে অতি ধীরে
যে গোপন বাণী ভরে রেখেছ অন্তরে,
থাক তাতে ব্যথিত বিস্ময়!
যেওনা দাঁড়াও।
যেওনা দাঁড়াও হে মানসী কথা আছে,
বারবার ডেকে আমি বলেছি তোমায়।

পাহাড়ের ঘন নীল মৌন স্তব্ধতায়
প্রভাতে অরুণ রবি রঙ দিয়ে যায়।
তারই বামে ঝর্ণা নামে হুড্রু জনা ফলস নামে
তারই মাঝে অপরূপা দেখেছি তোমায়।
ভালোবাসি তাই সখি ডেকেছি তোমায়।
উত্তর দিলে না তো, গাড়ি কই আসেনি তো,
তাই বলি দেরি আছে যেওনা দাঁড়াও।
পৃথিবীর বুকের উপরে যে মায়া ছড়িয়ে আছে
দিকে দিগন্তরে
নারীর অন্তর শুধু খোঁজ রাখে তার।
প্রকৃতিতে প্রেম আসে, ফুল ফোটে ফল আসে ভালোবাসা আসে অধিবাসে, ভালো লেগে যায়।
মুহূর্তের ইশারায় অন্তরে ফল্গু নদী বয়
কুলুকুলু ধ্বনি তার বুক ভেসে যায়
পৃথিবীর সব কিছু ভালো লেগে যায়।
অকথিত কোনো প্রেম মুকুলিত হয়।
পৃথিবীর বসন্ত বিতানে, ফুল ফোটে নানা রঙে
রাঙা হয় মন, ভালো লাগে বসন্ত শ্রাবণ,
দোলে ফুল সুবাস বিলায় মন।
প্রেম বিকশিত হয়, বড়ো ভালো লাগে সেই মিলন মেলায়,
পৃথিবীর অদ্ভুত মায়ার খেলায়,
কাকে কার কখন যে ভালো লেগে যায়
বোঝা বড়ো দায়।
তোমাকেই ডেকে বলি তাই যেওনা দাঁড়াও।
যতক্ষণ গাড়ি আসে না কো, দিও শুধু সেটুকু সময়।
গাড়ি এলে চলে যেও, চলে যেতে হয়।
মায়ার বাঁধন ছিঁড়ে সকলেই চলে যায়
প্রেম ভালোবাসা আর সংসারের ধুলো খেলা শেষ হয়ে যায়,
পিছু ডাক ভালো নয় জানি,গাড়ি এলে চলে যেতে হয়,
কারো কোনো বাধা আর মানে না সময়।।

মানসী ৩য় পর্যায় – সঞ্জিত মণ্ডল

এবার নদীর বুকে শেষ সীমানায়, হৃদয়ের অতি কাছা কাছি
ভেসে চলা তরণীতে মুখোমুখি বসে আছি প্রাণভরে দেখিব তোমায়।
আকাশের অতি কাছাকাছি, মাঝের দিনের রবি
অপলকে তাই বুঝি চোখ মেলে চায়!
জল নিয়ে খেলা কর, খেলা করে যাও
ছোট ছোট ঢেউ ভাঙে ছায়ায় মায়ায়।
আনমনে উদাসী দুপুরে,
নৌকা বেয়ে মাঝি চলে যায় দরিয়ায়।
তথাপি প্রাণের মতো নিতান্ত কাছের মানুষের শরীরের ঘ্রাণে,
অনন্ত আকুল করা ভাষা মৌন থেকে যায়,
নিবেদিত প্রেম আনে গভীর বিস্ময়,
স্নিগ্ধময় সৌরভের অমলিন দানে।

যে প্রেম প্রকাশ পায় , প্রথম প্রেমের সেই
থরথর লাজে নত মুগ্ধ পরিচয়ে আজ ব্যাকুল হৃদয়।
প্রেম কত মধু, সে যে কত মধুময়
সে যেন সে শত জনমের অপার বিস্ময়!
নির্নিমিখে আছে মিশে অনন্ত এ বসুধারে আছে দ্যুতিময়,
এখানে ওখানে, মায়াময় প্রকৃতির প্রতি কোণে কোণে।

কতশত মানুষের জীবনে জীবনে প্রেম আসে,
পদচিহ্ন রেখে যায়, গভীর মায়ায়,
কেউ কেউ আশাহত হয়, গভীর ব্যথায়।
আজ শুধু মনে হয়,
যা কিছু এসেছি ফেলে, এতদিন অবহেলে,
হোক না অমোঘ তবু, ছিলো তাতে অপার বিস্ময় ।
আরো মনে হয়, যত ভালোবাসি তারে
সেও ভালোবাসে মোরে, একান্ত আপন করে
তাও জানি, সবটুকু সে আমার অধিকারে নয়।
নারী মন কখন কেমন, দেবতারা জানে না তা মানুষ কোথায়।

আবার যখন মেঘে, ক্লান্ত উদাসী চোখে,
আনমনে চেয়েছিলে নদী জল স্রোতে।
জল পিঁপিঁদের খেলা, পরম সোহাগ ভরে,
মৌন মুগ্ধ করে দেয়, দেখো প্রাণভরে
পৃথিবীর যত সুখ আদি ও অকৃত্রিম ভাবে
জড়িয়ে রয়েছে সব প্রাণের ভিতরে।
পরম বিস্ময়ে ভাবি, জলপিপিরাও প্রেমে পড়ে,
খেলা করে, প্রেম করে জলের উপরে!
এতোটা কি তুমি ওগো বেসেছিলে ভালো,
ভালো করে ভেবে বলো,
তোমার প্রেমের সেই দুরন্ত উড়ান কবে যেন মাঝপথে থেমে গিয়েছিল,
মাঝ গাঙে থমকানো পিঁপিঁদের মতো,
প্রেম ভেসে গিয়েছিল জলে,
নদী স্রোতে ভেসে যাওয়া খড়কুটো মতো।

না জানি সে কতদিন, কতদিন পরে,
প্রথম প্রেমের মতো, সাগরের চরে
আকাশের নীল নীলিমায়,স্বচ্ছ চারিধারে,
সাগরের অতি কাছাকাছি
দুরন্ত সে গঙ্গার ধু ধু মোহনায়
আবার নতুন করে দেখেছি তোমায়, একান্ত আপন করে,
দেখেছি তোমায় সেই প্রভাত বেলায়।
ভ্রমরের মৃদু গুঞ্জনে,আর ফুলের মায়ায়
শুনেছি অনন্ত গান,পাখিদের কলতান,
তোমার গানের সাথে মিশে যায় সেথাকার নদী কলতান,
সেদিনের সে প্রমত্ত নির্ঝর হাওয়ায়।
ভালো থাকো ভালোবাসি বলেছি তোমায়।

প্রথম মাঘের, আমের মুকুল সাথে
বাতাসের মধুরঙ মাখামাখি হয়।
দোয়েলের কোকিলের সেই আঙিনায়,
তোমাকে পেয়েছি আমি দূর ঠিকানায়,
ঘর ছাড়া বিবাগীর রিক্ত ঝুলিটায়।
নিভৃত মনের কোনে,
সন্ধ্যাদীপ জ্বালিয়েছ অযুত সন্ধ্যায়,
অসীম ব্রহ্মাণ্ড মাঝে আকাশের তারাদের গায়!
প্রত্যন্ত গ্রামের কোনে,
ছায়াঘেরা মায়াময় কুটিরের পানে,
সন্ধ্যাদীপ হাতে নিয়ে তুলসী আঙিনায়।।

যে জীবন নিতান্ত ভাটির টানে
অবহেলা অনাদরে একাকী উজান টানে,
বঞ্চনার দীর্ঘশ্বাসে নিপীড়িত হয়,
ভেসে চলে যায় সে যে কোন ঠিকানায়,
ভালোবাসা বারে বারে মাথা কুটে মরে।
প্রেম চলে যায়, নগ্নদেহে হানা দেয় বিরহ আবার
অন্ধকার নেমে আসে জীবনে সবার।

কবেকার অন্ধকার সুদীর্ঘ বঞ্চনার,বেদনা বিধুর গান মনে পড়ে যায়,
শ্রাবস্তীর নীল সন্ধ্যা পারে, পথিকের আনাগোনা চলে
আম্রপালির সেই নিভৃত কুঞ্জদারে,
অশ্বারোহী এক, জয় করে ফিরে যায়, পূর্ণ অভিসারে।
আকাশে বাতাসে থামে অস্ত্রের ঝনঝনি।
যুদ্ধ থেমে যায় একেবারে।
আজও প্রেম জিতে যায় বস্তারের আঙিনায়
শঙ্করের মৃত্যু দণ্ড রদ হয়ে যায় একেবারে।

যে প্রেম বিরহের বেদনার তীব্র হলাহলে
দিশাহারা হয়—রিক্ত হয় মন প্রাণ,
আপনার মুক্তি চেয়ে নীল হয়ে যায় বেদনায়,
রিক্ত সে প্রেম ব্যথিত বিজন বনে মর্মর ধ্বনি তোলে অরণ্য মায়ায়।
শ্রীরাধিকা আজও কাঁদে বিরহ ব্যথায়।
কর্তব্য সাধনে কৃষ্ণ যায় মথুরায়।
রাধিকার জীবনের ব্যথিত সে ব্যাকুলতা প্রেমের মায়ায়
পাগলের মতো প্রায়, কদম তলায়,
তমালকে কৃষ্ণ বলে নিমেষে জড়ায়, মৃণাল বাহুতে।
তোমাকে দেখেছি সেই বকুল ছায়ায়,
কি ভেবে কেমন করে জড়ালে আমায়
আবার নতুন করে প্রেম যেন প্রাণ ফিরে পায়।
আবার নতুন প্রেম স্নিগ্ধ মহিমায়, মধুময় সে বসন্ত বায়,
মধুর পরশ দিয়ে, অঞ্চল ছায়ায়
এনে দিয়েছিলে বুঝি সে অমৃতময়
আনন্দ জীবন এক কত বর্ণময়!
জীবনের যেন এক মায়া অভিসারে, দেখেছি তোমারে,
কখনো নদীর কূলে, কখনো বা পথ ভুলে,
কখনো বা পর্বতের প্রাচীন গুহায়, কভু বনছায়ে,
প্রথম ফুলের মতো বাসর শয্যায়, সুগভীর শ্বাস,
নিতে দিয়েছিলে তোমার বুকেতে,
পরম পুলকভরে বুকে টেনে নিয়েছি তোমায়, গভীর শ্রদ্ধায়।

তাই আজও, আবেগ সঞ্চিত ব্যথা গভীর প্রেমেতে
জমিয়ে রেখেছি কত দীন-ভালোবাসা
ছায়ায়,মায়ায়, বসন্তে, শ্রাবণে আর চাঁদিনী সন্ধ্যায়
প্রভাত শিশির স্নাত পূরবী ঊষার পূর্ণ মমতায়।
কৃপণের মতো তাই, জমিয়ে রেখেছি সেই পূর্ণ ভালোবাসা
একান্ত আমার করে,
পুষ্প বিল্বপত্র দিয়ে, পূজিব তোমায়
পুজার সে বেদী মূলে শান্ত আঙিনায়।
সে প্রবল ভালোবাসা আজ সবই দিয়ে যেতে চাই
এ নদীর এ প্রমত্ত বুকে, একবার ভালোবেসে যাই,
একবার আবেগে জোয়ারে, উজানে ভাটির টানে
একবার নদী স্রোতে, নিজেকে হারাই,
তোমাকে হৃদয়ে নিয়ে, ভেসে যেতে চাই,
জীবনের মহাশূন্য পারে, এই শেষ বারে
হে মানসী, এইবার চলে যেতে চাই।।

মানসী ৪র্থ পর্যায় – সঞ্জিত মণ্ডল

যেদিন চেয়েছ তুমি গান
যতটুকু আছে মোর ক্ষুদ্র লেখনীতে
তা সবই উজাড় করে, করে যাই দান
যতটুকু যা আছে এই কবির অন্তরে।
সে গান যেদিন হতে প্রাণ-রসে উদ্ভাসিয়া ওঠে,
ওঠে মোর অন্তরের উৎস স্থল হতে,
ওঠে কভু নির্ঝরের নির্বারিত স্রোতে,
সেই গান একদিন ভালোবেসে ছিলে।
সেই স্রোতে তুমি ভেসেছিলে, সেই কাব্যগীতে
তুমি ছিলে সেই নব সুরেলা সংগীতে,
মনে প্রাণে হৃদয়েতে হৃদয় মেলাতে।

যে রবির প্রথম আলোতে আমি দেখেছি তোমাকে ,
সেই মুগ্ধ প্রাতে, তৃষিত অন্তরে, একান্ত আপন করে,
মহুয়া ও বকুলের মাতাল সুবাসে, কোনো এক পূর্ণিমা রাতে,
নয় কোনো চাঁপা জুঁই মালতীর হাসে,
অলিখিত কবিতার স্নেহ সুধা রসে বিবশ হয়েছি তব আসঙ্গলিপ্সাতে।
সোনার বরণী হয়ে,আধো ছায়া আধো মায়াডোরে,
ডাক দিয়েছিলে যবে প্রদোষের মায়াময় ভোরে,
অদ্ভুত মায়াবী সুরে, সুরেলা অন্তরে।

সদ্য ঘুম ভেঙে যাওয়া বিহগের কলকাকলিতে,
সে অরণ্য ছায়ে, পদধ্বনি কার যেন রিনিরিনি বাজে।
সেই ফুলবাসে, সেই ফুল কুমারীর সাজে
কে যেন গো হেঁটে চলে আসে, যেন প্রেম যমুনার পারে।
এ কবির হৃদয় দুয়ারে।

তারপর সারাদিন সারারাত,
তোমারি সে মায়াময় সুনিবিড় নয়ন তারায়
দেখেছি মেদুর ছায়া, টলোমল মায়া,
একবিন্দু বারিসম সে চোখের জল আনন্দাশ্রু হয়ে
ভাসে যেন ভোরের শিশিরে , আনন্দ ছায়ায়।
সে আঁখির পল্লবে প্রচ্ছায় মৃগনাভি সম এক
সুগন্ধী মায়ায়, মুগ্ধ হয়েছ তুমি,সে নবীন প্রাতে
মুগ্ধ হয়েছি আমি বিমুগ্ধ তোমাতে।

দুজনের তৃষিত হৃদয় যত উষ্ণ শ্বাসে,
মিলনের নব উচ্ছ্বাসে, হৃদয়ের সুগোপন বাণী,
মর্মরিত হয় যেন আকুল নিঃশ্বাসে।
তুমি যেন দেবলোক হতে এইমাত্র নেমে এলে এই বনমাঝে,
তৃষিতেরে একবিন্দু নবধারা পাতে ধন্য করিয়া দিতে হয়েছ উন্মনা।
সান্ত্বনা পেয়েছি তাই সে জল সিঞ্চনে, স্নিগ্ধ বারিপাতে,
তব স্নিগ্ধ মমতায়, মধুর সান্নিধ্য তব করেছি বন্দনা
অন্তরের যত শ্রদ্ধা অর্ঘ দিয়ে,সে পূজা অর্চনা
তবু জেনো কোনোদিন কিছুতেই সাঙ্গ হবেনা
জীবনের কোনো সন্ধ্যারাতে।
যে গান বেজেছে সেই মিলন সভাতে,সে গানেই ঢেলেছি পরাণ।
তাই কভু গেয়ে যাব গান, যত দিন তব স্নিগ্ধ প্রাণ,
তব প্রাণ করে নেবে স্থান এই তৃষিত অন্তরে।
নিতে মোর আরাধনা কৃতাঞ্জলিপুটে
মানস প্রেমের সেই সুধা সংগীতে।

যত আছে কাজ এই সংসারের মাঝে
সকলি ফুরাবে যবে, রাত্রিদিন শ্রমক্লান্তি মাঝে
তুমি এসো স্নিগ্ধচিতে, একখানি নম্র ভালোবাসা নিয়ে সাথে।
দিনান্তের বেলা শেষে, ফিরিব আপন দেশে ধূলিমাখা গায়,
তুমি দিও জল সুশীতল, স্নিগ্ধ মমতায়,
স্মিত মুখে চেয়ে,একটুকু ভালোবাসা মেখে।
তোমার স্বপ্নের মাঝে ডুবে যাব আমি,
সন্ধ্যার কামান ধ্বনি শুনিব আশ্লেষে,নিবিড় সন্ধ্যায়,
দুজনেই কাছাকাছি পাশাপাশি বসে
করিব বিজয় গান গুধু ভালোবেসে।

সে প্রমত্ত প্রেমে আকাশ উঠিবে দুলে, চাঁদ তারা সনে
সাগরের কুলে, বাতাসের মধুর বিজনে
কারা যেন গেয়ে যাবে মল্লার গান, বৃষ্টি নামবে শেষে ।
দুজনেতে সেই সন্ধ্যাকালে, সেই সুধাসাগরের কুলে,
সেই মায়া শবরীর গানে,ব্যাকুলিত হৃদয়ে ও প্রাণে,
মগ্ন হয়ে রবো।
হাতে হাত মুখে মুখ হৃদয়েতে হৃদয় মিলাবো।
তব ওষ্ঠপুট হতে আসিবে অমৃত উঠে
মায়ার মন্থনে টানে ব্যাপ্ত হয়ে নিশিমানে
করিব প্রমত্ত খেলা জীবনের মধুময় গানে।
হৃদয়েতে হৃদয় মিলিয়ে যবে অপেক্ষায় কাল যাবে,
পৃথিবীর সব সুখ মনে হবে অপেক্ষা করিয়া আছে অন্তরের মাঝে।
মনে হবে এ যেন সে কবেকার সেই স্রষ্টা বিধাতার অপার্থিব করুণার স্নেহময় দান।
পুলকে পুলকে দুলে উঠিবে পরাণ, সেই প্রেম যমুনার কূলে।
চাঁদ লাজে সরে যাবে দূরে,
মেঘেদের সুদূর কিনারে, আমাদের প্রণয় প্রভাসে,
আকাশের তারা বুঝি মিটিমিটি হাসিবে আকাশে।
শুকতারা নিজে তার বিস্ময়ের ঘোরে
চমকিবে আমাদের প্রণয় জোয়ারে।
যেন শ্যাম রাই সেই যমুনার পারে
পরিব্যাপ্ত হয়ে রবে সেই মহামিলনের দ্বারে,
আমাদের দুজনের অন্তরে অন্তরে।

তুমি সখি চেয়ে রবে বিমুগ্ধ নয়নে
মিলনের সে পুণ্য লগনে, সেই পদ্ম পলাশ লোচনে।
সেই তব সুগভীর নাভি পদ্মপাতে
সুগভীর চুম্বনের ব্যাপ্ত শিহরণে, মলয় পবনে,
মলয় চন্দনের সুমধুরবাসে দশদিক হবে আমোদিত।
সে যমুনা পারে দুজনেই দুজনার সুতৃপ্ত অন্তরে
আকণ্ঠ করিব পান সুধাময় প্রেম।
সখি, কভু যদি সাধ জাগে তৃষিত অন্তরে,
চন্দনের পত্রলেখা বৃন্ত পয়োধরে,
আকণ্ঠ করিতে পান অমৃতের মহাসিন্ধুপারে,
যুগ যুগ ধরে মহানন্দভরে।
নিষেধের বেড়াজালে, জটিলা কুটিলা চালে
স্তব্ধ হয়ে যাবে নাকো সে প্রেম প্রণয়, সে মাধবীরাতে।

হে মাতা বীণাপাণি, কবির অন্তরে দিও কবিত্বের বাণী,
সেই ধন্য মানিব আপনি। কবিকে পরাবে তুমি,
যে মালিকা খানি, বিকচ কুসুমে গাঁথি জয়গৌরবে,
সে মালা দুলিবে গলে তব গৌরবে বরমাল্য মানি।
ভালোবাসা নয় শুধু মিলনের গান, সে যে বিধাতার দান,
সগৌরবে তুলে রাখি প্রেম ভালো বাসা তাই জীবনে জীবনে।
হে মানসী, তুমি শুধু মনে রেখো, নিরন্তর মনে রেখো অকৃপণ তব প্রেমদান,
ধন্য করিবে যারে জীবনে জীবনে সেই মহা ভাগ্যবান এ তিন ভুবনে।

যুদ্ধ চাই না আর – সঞ্জিত মণ্ডল

যুদ্ধ যুদ্ধ বাণিজ্য আজ সারা পৃথিবী জুড়ে
এ ওকে চোখ রাঙায় আর গা জোয়ারী করে।
অস্ত্র ভাঁড়ার উপচে পড়ে কে লড়বি আয় ওরে
তোর দেশটা করবো দখল দাদাগিরির জোরে।
শক্তির ভারসাম্য টলে রাশিয়ার পতনে
বামপন্থার সব জনতা মারণ উচাটনে।
ধনতান্ত্রিক দেশের জানি কতোই ছলাকলা
ভোগবাদী তার সমাজ দেখায় নিত্যনতুন খেলা।

ধনতন্ত্রের বিপদ বাড়ে বিক্রি বাটা কই
মন্ত্রণা দেয় যুদ্ধ লাগাও পাকা ধানে মই।
অস্ত্র বেচে ভরবো ভাঁড়ার নইলে দেউলে হবো
যুদ্ধ লাগাও যুদ্ধ লাগাও অস্ত্র বেচে খাবো।
সমাজবাদী রাষ্ট্র জানি কল্যাণকর হয়
দেশের মধ্যে সব জনতার রাষ্ট্রই দায় নেয়।
সাম্যবাদী চিন্তাধারা সবাই সমান হয়
সমাজবাদী দেশে কেউ আর উঁচু নীচু নয়।

ধনতান্ত্রিক দেশের নীতি ভোগবাদী বর্বর
ঋণ করে ঘি খেয়ে ওড়ায় দেনাতে জর্জর।
কিছু মানুষ আজও আছে বিশ্বশান্তি চায়
যুদ্ধ চাই না যুদ্ধ থামাও অনর্গল চেঁচায়।
যুদ্ধ থামাও শান্তি করো মানুষ মেরো না আর
মানুষ মারা বন্ধ করো হানাদার হুঁশিয়ার।
শান্তিতে করে কম্মে খাক পৃথিবীর সবাই
এই পৃথিবীতে সবার বাঁচার অধিকারটা চাই।।

ঝরা পাতা – সঞ্জিত মণ্ডল

শুকনো পাতা প্রান্তরে নয় পড়ে আছে অন্তরে
হাওয়ায় সে পাতা নড়াচড়া করে যায় নাকো উড়ে দূরে।
যেমনটা সেই অতি পুরাতন বিশ্বাসী ভৃত্যরে
তাড়ালেও দেখি যায় নাকো দূরে সরে যায় অন্দরে।

শুকনো পাতা শুকনো শরীর ডালপালা ছাঁটা দেহ
যে যার জগতে ব্যস্ত সকলে খোঁজ করে না তো কেহ।
কেউ চলে গেছে দূরে কোন দেশে কেউ বিদেশিনী সিক্ত,
কেউ স্বদেশেই বউ ছেলে নিয়ে ফ্ল্যাট কিনে অন্যত্র।

এ দেহ এখন জীর্ণশীর্ণ পাতা খসে বারবার
হাওয়া দোলা দেয় ঝড়ে ফেলে দেয় উঠে দাঁড়ায় সে আরবার।
গ্রীষ্ম বর্ষা এ দেহেই যায় শীত বসন্ত আসে
প্রতিবার ভাবি নতুন পাতারা এইবার বুঝি আসে।

নাতি নাতনি রা কেউ আসে নাকো কেউ চেনে নাকো জানি
আসলেও তারা কি বলবে এসে সেই কথা মনে টানি।
এই বুড়ো তুই এলি কোথা থেকে বাড়িটা তো বেশ দামী
তাড়াতাড়ি মর নয় লিখে দে প্রমোটার হবো আমি।

শেখায়নি কেউ সহবত জ্ঞান শেখায়নি সম্মান
শুধু নিতে জানে দিতে শেখে নাই আস্ত নেমকহারাম।
বৃদ্ধ বৃদ্ধা দুঃস্থকে নিয়ে ওরা করে উপহাস
জানে নাকো ওরা কোথা থেকে এলো এ বুড়ো গাছেরই নির্যাস।

দুঃখ নয় এ ঝরা পাতা গো আমিও তোমারই দলে
বিদায় মন্ত্র আঁকা এ কপালে জনমের সেই কালে।
সবাই তো মরে, মরে ঝরে যায়, তারুণ্যে সকলে হাসে
ঝরা পাতাদের ঔরসে তবু কচি কিশলয় আসে।

কেন চোখের জলে ভিজিয়ে দিলেম না – সঞ্জিত মণ্ডল

চোখের লবণ ধুয়ে যে জল মুখেতে এসে পড়ে
যার জন্যে পড়ে সে জল সে কি বুঝতে পারে?
হৃদয়হীন তো তাকেই বলে যেজন কাঁদিয়ে ছাড়ে
প্রেমের বিহনে সারাটা জীবন সেই তো দগ্ধে মরে।
ভালো যদি নাই বাসিলে কেন যে আসলে কাছে
মই কেড়ে যে কি সুখ পেলে তুলে দিয়ে প্রেম গাছে।
প্রেমিকা যে হয় নরম মনের একটু আঘাত পেলে
চোখের জলেতে ভাসায় সে বুক উথাল পাথাল দোলে।

নরম মনের ভালো মানুষ হয় ফুলের মতো মেয়ে
আদর সোহাগ সবটুকু চায় ফুলের সুবাস নিয়ে।
প্রেমিকরা হয় ভ্রমর প্রজাতি এক ফুল মধু নিলে
আর এক ফুলে উড়ে যায় চলে পূর্ব প্রণয় ভুলে।
প্রেমিক সুজন করে গুঞ্জন শুধু মধু খেতে জানে
নতুন নতুন প্রেমিকা জোটায় ভালোবাসা নেই মনে।
প্রেমিকা স্তব্ধ উন্মাদ হয়ে কেউ কাঁদে মনে মনে
তাদের নতুন প্রেমী জোটে নাকো অজানা কি এক কারণে।
মধু খাওয়া হলে প্রেমিক প্রবর অন্য ফুলেতে যায়
চোখের জলের লবণ ধুয়ে প্রিয়ার মুখে যায়।
কাঁদা হাসা ভুলে তবুও যে জন প্রেম বারোমাস চায়
সত্যিকারের প্রেমী সে ভুবনে জীবন জ্যোৎস্না ময়।।

রাত নিঝুম – সঞ্জিত মণ্ডল

রাত মানে সারারাত আঁধারের মেলা
রাত মানে সারারাত তেনাদের খেলা।
রাত আসে কখনো সে হাড় হিম করা
আঁধারেই তেনাদের ধুপধাপ খেলা।
কখনো সে ওঠে হেসে কাঁদে নাকি সুরে
আঁধারে জোনাক পোকা নাচে কাছে দূরে।
ভাবি পাশে বিছানাতে কারা যেন আসে
চোখেতে আগুন জ্বলে হাঁটু মুড়ে বসে।

হাড় হিম করা সেই আঁধারের রাতে
ভয়ে মরি কারা যেন ফিসফাসে কাশে।
ভয়ে গলা বন্ধ নাকে নেই শ্বাস
শুকিয়ে কন্ঠ তালু ভাবি আমি লাশ।
রাবণের চিতা জ্বলে কানও যে বন্ধ
শনশন শব্দেই লাগে মনে ধন্ধ।
মড়া ঘাড় নাড়ে বুঝি ঘাড়ে হাত দেই
সহসা চমকে দেখি আমি আমাতেই।

কারা ছিলো ওইগুলো শুধু রাতে আসে
মা বললো চিন্তারা আধো ঘুমে ভাসে।
আমি বলি কেন মা গো ভয়েতে মরি
তুমি আসলেই কেন ওরা যায় সরি?
মা র সাড়া পেয়ে ওরা ভয়েতে পালায়
গালে হাত দিয়ে ভাবি মাকে ভয় পায়।
দিনে ওরা ঝোপেঝাড়ে কোথা যে লুকায়
মা র কাছে না শুলেই রাতে হানা দেয়।।

সম্পর্ক – সঞ্জিত মণ্ডল

সম্পর্ক গড়তে লাগে সুদীর্ঘ সময়
ভেঙে যায় মূহুর্তের ভুল ভাবনায়-
প্রেম চিরকালই বড়ো মায়াময় হয়,
রাত কাটে ভোর হয়, প্রেম আসে প্রেম চলে যায়।

নানাজনে নানাভাবে নানা কথা বলে
মূহুর্তের ভুলে সব ভেঙে চুরে যায়-
কেউ দায়ী হয় আবার কেউ দায়ী নয়,
পৃথিবীতে সব কিছু একই থেকে যায়।

যার প্রেম ভাঙে শুধু সেই বুঝে যায়
এ জীবনে ভালোবাসা তার হবার নয়-
মন ভাঙে, ভাঙা মন, দুঃসহ জীবন,
ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে বেঁচে থাকা দায়।

নিঃশ্বাসে বিশ্বাস এতো মিছে নয়
প্রেমিক প্রেমিকা তবু উতলা ই হয়-
এ ওকে আপন করে আরও পেতে চায়,
ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি সংসার ভেঙে যায়।

কেউ আগে ভুল করে বিচ্ছেদে জড়ায়
গুজবেতে কান দেওয়া ক্ষতি করে দেয়
প্রেম ভাঙে, ভেঙে যায় রাগের মাথায়
ভাঙা কাচ জুড়লেও দাগ তোলা দায়।।

উপেক্ষিতা উর্মিলা – সঞ্জিত মণ্ডল

কত দিন, বলো কত দিন পথপ্রান্তে চেয়েছিলে তুমি নির্নিমেষ চোখে তৃষাতুরা, হে উর্মিলা! কত শত দীর্ঘশ্বাস বয়ে নিয়ে গেল কোথা উদাসী পবন , হিসাব আছে কি তার! নিদাঘের রৌদ্রতপ্ত ক্লান্ত দীর্ঘ দগ্ধ দিনে, নয়তো বা ঝিঁঝিঁ ডাকা বিষন্ন শ্রাবণে, হওনি কি কভু তুমি নিতান্ত উতলা? হওনি কি নিতান্ত উদাসী, কোনো এক ডাহুকের উচ্চকিত স্বরে? প্রিয়ার সঙ্গম তরে যে ডাকে কাতর স্বরে নিশি দিন ধরে! দিবসের শেষ যামে, গোধূলির রঙ যবে দিগন্তে আপনমনে অতি সযতনে রেখা টানে আকাশের গায়, সন্ধ্যার আগমনে ব্যাপ্ত হয় সবখানে সে ছবির শেষ আলিম্পন,অথবা প্রভাত কালে, শুচি স্নিগ্ধ স্নান সেরে, মনে মনে ডেকেছিলে লক্ষণ, লক্ষণ!

মৃদু স্বরে, সকলের শ্রুতি অগোচরে, সেই বাণী শুনেছিল শুধুমাত্র মলয় পবন? তোমার সে দীর্ঘশ্বাস ভেসে গিয়েছিল বুঝি দূর বৃন্দাবন। যেমন মেঘের দূত বাতাসে বাহিয়া, নিয়ে চলে যায় যত প্রিয়ার বারতা, গোপনে মেঘের কোনে, কোনো এক নিরুদ্দেশ পানে। তেমনি তোমারও কোনো হৃদয় বারতা, আকাশে বাতাসে বুঝি যায় শিহরিয়া, সচকিয়া কভু সেই দণ্ডক বনে, সরযূর পানে, যেখানে রয়েছে সীতা রাম আর লক্ষণের সনে, ইতস্তত, পরিশ্রান্ত, রাজ্য হতে নির্বাসিত, বিমাতার মন্ত্রণার গুনে, অরণ্য প্রবাসী তিনজনে।

যায় গ্রীষ্ম, আসে বর্ষা ঋতু, নিদাঘের তৃষাক্লান্ত দীর্ঘ দগ্ধ দিন হয় অবসান। আকাশে বাতাসে ওঠে ধুন্ধুমার ঝড়, শুষ্ক তপ্ত দৈত্যপুরে ভেঙে পড়ে ঘর। এমনই ক্লান্তি হরা বেদনার মায়া, মোহময় করে ছায়া ফেলেছিল বুঝি, অনিদ্রায় ক্লান্ত তব স্নিগ্ধ চোখ দুটি দু’ফোটা অশ্রু তার ফেলেছিল মুছি সেই বিষন্ন সন্ধ্যায়!
হে ঊর্মিলা,আজ বুঝি ভেসে আসে দূর বনবাস হতে ফুলের সুবাস! তৃষিত অন্তর বুঝি করে তোলে আরো তৃষাতুরা! তপস্বিনী হে সাধিকা, লক্ষণ প্রেমিকা, কার পথ চেয়ে থাকো নিবিড় সন্ধ্যায়, কখনো প্রভাতে কভু দীপজ্বালা আকাশের তারাদের গায়।

যখন অযোধ্যা পারে আমাদের আদরের মাতা বসুন্ধরা শ্যামল সুন্দর সাজে নব পরিণীতা, অমৃতের বারি পাতে ওঠে শিহরিয়া, বিরহিণী হে উর্মিলা, কার সঙ্গ সুধা লোভে অনিমেষ চেয়েছিলে ব্যথিত হৃদয়ে, সজল সে পৃথিবীর কোমল ছায়ায়। নব যৌবনা, নববধূ হয়ে তবু কার দোষে কোন অভিশাপে তুমি বিরহ বিধুরা!

তুমি ভেবেছিলে বুঝি, শুধু দুটি দিন পরে আবার আসিবে ফিরে অনুজ লক্ষণ। তোমার প্রাণের প্রিয়, সীতার দেবর, রাম অনুগত প্রাণ সুধীর লক্ষণ, শুধুমাত্র বনপ্রান্তে অগ্রজে ছাড়িয়া। হায় তৃষাতুরা, কোথা তব প্রাণের দেবতা! ওগো পঞ্চদশী, তুমিও তো সীতা সম পূর্ণিমার শশী। তাই বুঝি শরতের বিহ্বল রাতে, আষাঢ়ের কেতকী সৌরভে, থরোথরো বক্ষে তুমি উঠেছিলে জাগি, বেদনায় ক্লান্ত তব সুবর্ণ শয়ানে।

কার লাগি গাঁথ মালা,কোথা রাখ সেই মালা দীর্ঘশ্বাস সাথে! ঝরা মালতীর ফুলে অলক বিন্যাস সেরে কেন ছিঁড়ে ফেলে দিলে বেদনার অশ্রু পারাবারে। কোন শেফালিকা বনে ময়ূর ময়ূরী সনে মনের কামনা ঝরে প্রভাত শিশিরে! ম্লান হয়ে ঝরে পড়ে কার দীর্ঘশ্বাস সাথে বেদনার সপ্তসিন্ধু পারে। হে উর্মিলা, চৌদ্দ বছর ধরে, এ বিরহ জ্বালা সয়েছ কেমন করে প্রতীক্ষার কটা রাত কাটিয়েছ জেগে রাজগৃহে অযোধ্যার সুবর্ণ শয্যায়।

অশ্রু ছিল, ছিল ভালোবাসা,ছিল প্রাণ, কতশত আশা,অযোধ্যার প্রদীপ্ত দেউলে। কেবলই রাম- সীতার দুঃখে ম্লান হয়ে নিভে গেল শত শত প্রদীপের আলো! তোমারও কি তপ্ত দীর্ঘশ্বাসে বেদনার বারি মিশে দিশাহারা হয়নিকো আকাশের তারা! সোনার শ্রীলঙ্কা সহ সসাগরা বসুন্ধরা শুধুই সীতার দুঃখে হল দিশাহারা! তোমার নয়ন নীর ম্লান হয়ে গেল তাই পুরো ক্যব্য হতে! আদি কবি বাল্মীকির বারি ভরা কমুণ্ডল পারিল না দিতে তবু এক বিন্দু জল অভাগিনী উর্মিলার চোখে!

বিরহী – সঞ্জিত মণ্ডল

মাঝে মাঝে শুনি কে যেন শুধায় দ্বারে-
খোলা জানালায় বসে কি ভাবছো কবি,
আমি বলি তারে বর্ষা বিরহে প্রিয়া কাঁদে অন্তরে
শ্রাবণের মেঘে দেখেছি প্রিয়ার ছবি।
জানতে চাইছ কার পথ চেয়ে আমি
বর্ষা বিরহে মন যে বিদেশ ভূমি
মেঘদূত আজও দেয়নি সে চিঠি খানি
প্রিয়ার বিরহে শূন্য হৃদয় জানি।

জানো কবে থেকে নিজেকে বিরহী মানি
যবে থেকে মেঘ আকাশ বাতাস ছায়
পৃথিবীর আদি জন্ম লগন পারে
আমার বিরহ বর্ষার মেঘে ধায়।
আগুন জ্বেলেছে দীপক রাগিণী গ্রীষ্ম গরম আনে
সে আগুন নেভে আষাঢ় শ্রাবণে মেঘমল্লার গানে
বর্ষার মেঘে দুরন্ত বেগে প্রেম আনে প্রেমী মনে
আমার মানসী বাতায়নে বসি বর্ষার দিন গোনে।

মানসীকে তাই মনে মনে ভাবি একা
স্বপ্ন পূরণ হবে কি না তা জানিনা,
বর্ষার মেঘ যে বিরহ মনে আনে
এমন দিনেই তাকে ডেকে বলে যায়।
বর্ষা বাদলে মেঘের মাদল বাজে
কুহু-কেকা নাচে কলাপে কলাপ ছায়
নবধারা জলে স্নান সারা হলে পরে
সৃষ্টি সুখের উল্লাসে ভেসে যায়।।

সস্তার মজদুর – সঞ্জিত মণ্ডল

সস্তার মজদুর আবার হাতের সুখও হয়
গরীব ঘরের ছেলে কি আর করবে বিশ্বজয়!
গ্রাম গঞ্জেতে থাকে সবাই, খাবার দিলেই হয়
প্রাপ্তবয়স্ক মজুর রাখলে অনেক পয়সা যায়।
পড়াশোনা হাতেখড়ি ওদের কি আর হয়
ঠেলে ঠুলে ইস্কুলে পাঠালে পড়তে কি আর চায়।
সস্তার মজদুরি করলে পেটের ভাতও হয়
চাইকি ছেঁড়া জামা জুতো প্যান্টও মিলে যায়।

আইন আছে বলে যারা চোখ রাঙিয়েই যায়
তারা কি আর বলে সোনা আয়রে খাবি আয়?
অমন অনেক কুম্ভীরাশ্রু কতোই দেখা যায়
সত্যিকারের দরদী মন লাখে একটা নয়।
দলে দলে ছোট ছেলেমেয়েরা রোজ রোজ কাজে যায়
ক্ষেত খামারে ও রাস্তার কাজে ওরাই যোগান দেয়।
পড়াশোনা বড়োলোকি বিলাসিতা ওদের জন্য নয়
গরীবের ঘরে জন্মেছে তাই খেটে খুঁটে খেতে হয়।

জানিস রে বাছা আকাশের চাঁদ তোদের জন্য নয়
ঘুমপাড়ানি মাসী পিসি সব বড়োলোক বাড়ি যায়।
কাজ করবি তবু মারও খাবি এটাই পরিচয়
হায় হায় পোড়া কপাল রে তোর কেডা ইস্কুলে পাঠায়!!

এমনি হাজার লাখো ছেলেদের শৈশব চুরি যায়
কেউ মরে রোগে ভুগে আর জ্বরে কারো পেটে পিলে হয়।
সমাজের যত আস্তাকুড়েই ওদের জন্ম হয়
দারিদ্র্য আর শত বঞ্চনা ওদেরই সইতে হয়।
ওদের জন্য আশীর্বাদের হাতটা কে আর বাড়ায়।
দুবেলা দুমুঠো খাওয়া পরা দিয়ে শৈশবটাকে বাঁচায়।
শিশু দিবসে সকলের কাছে আকুল এ প্রার্থনা
শৈশব বাঁচালে সুনাগরিক পাবে এ নয় জল্পনা।।

আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে – সঞ্জিত মণ্ডল

১লা আষাঢ় ডাক দিয়ে যায় কালিদাস আসে মনে
মেঘ বালিকারা সিনানে মেতেছে আষাঢ়ে বাদল দিনে।
জ্যৈষ্ঠের তেজে শুকায়েছে গলা দরবিগলিত ঘামে পথ চলা,
সারা মন জুড়ে তৃষ্ণার জ্বালা আষাঢ়ের মেঘ গগনে।
এসো হে আষাঢ় তৃপ্তি শ্রাবণ সুধা বারিধারা করো বরিষণ,
শুষ্ক ধরণী করে ক্রন্দন তোমার পরশে তোলো শিহরণ দাও নব বারিধারা।
কচি ধানগাছ বাতাসে দুলিবে সোনার ফসলে ক্ষেত ভরে যাবে,
প্রেমেতে বিভোর কপোত-কপোতী আনন্দে করে খেলা।
নিরলস আঁখি শুধু চেয়ে থাকি বাতায়নে বসে একা,
হংস বলাকা উড়ে চলে কোথা মেঘপথে সারি বাঁকা।
প্রিয় তার আছে বহু দূর দেশে মেঘদূত কাজে লাগে,
প্রিয়া তার ঘরে একা শয্যায় বিনিদ্র রাত জাগে।
জীবন এমন ঋতুর মতন ক্ষণেক্ষণে রূপে রসে,
বর্ষার গানে কি পুলক প্রাণে বিরহ বেদনা আসে।
এসো তুমি প্রিয়া নাচিয়া নাচিয়া সে মধুর শোভা দেখি
বর্ষার গানে সুমধুর তানে দুচোখে স্বপ্ন আঁকি।
আষাঢ় শ্রাবণে কি মায়া গগনে বরিষণে মন ভাসে
কি গান গেয়েছে কি পাখি ডেকেছে বুঝি প্রিয়তম আসে।
এতো সুর আছে এতো আশা আছে এতো ভাষা আছে গানে
এতো প্রাণ আছে এতো গান আছে এতো সুধা আছে প্রাণে।।

Ananta Bikeler Rupkathara

ইচ্ছের খুনসুটি – সঞ্জিত মণ্ডল

আজ রবিবার অঘোরে ঘুমাবো রাতে,কিছু ছুটি দেওয়া ইচ্ছে গুলোর সাথে।
ভেবেছি আজকে খুনসুটি করে যাই, বড়ো ক্লান্তিতে কেটেছে সপ্তাটাই।
ঘুমাতে কি আর পারবো জানি না, রয়েছি কত না কাজে
কাজের চাপেই ঘর-সংসার এইবার বুঝি ভাসে
সময় দিতে না পারাটা কি কারো সাজে
আমার স্ত্রী তো আতঙ্কে ভোগে কাজ-সতীনের ত্রাসে।

ইচ্ছে তো হয় আজকে ছুটির দিন, বান্ধবী নয় স্ত্রীকে নিয়ে মলে যাই
একটা ই দিন সপ্তাহান্তে পাই, ইচ্ছেগুলোর খুনসুটি ভয় পাই।
আজকে দুপুরে ঝাঁ ঝাঁ রোদ্দুর এরেস্ট হয়েছে ভাই
মেঘলা বেলার বৃষ্টি আমেজে মন ফুরফুরে তাই
মনে করে খেলা ভাবনার গোলা চুটিয়ে আজ ঘুমাই
বশ ডাকছে স্ত্রী চেঁচাচ্ছে মনে হয় ছুটে পালাই।

আধোঘুমে আধো জাগরণে দেবো স্বপ্নের দেশে পাড়ি
ইচ্ছে গুলোর গলা টিপে ধরি অনিচ্ছে লেজ ধরি।
কিছু ছুটি দেওয়া ইচ্ছে গুলোর সাথে কে যে ছল করে
অনিচ্ছে গুলো রং বদলিয়ে ইচ্ছের রূপ ধরে।
আজকে ঘুমাবো বাধা মানবো না ইচ্ছের খুনসুটি
একটাই রবি আসে সপ্তাহে আর সবই ছুটোছুটি।
ইচ্ছে আমার ইচ্ছে তোমার ইচ্ছের হুটোপুটি
খাই বা না খাই আজকে ঘুমাই আজ রবিবার ছুটি।।

মানিয়ে গেছে – সঞ্জিত মণ্ডল

কেমন করে সব কিছু যে মানিয়ে গেছে এই সমাজে
খুন জখম আর রাহাজানি দিন দুপুরে সকাল সাঁঝে।
ধর্ষণ আর টানাটানি কে আটকাবে হানাহানি
গা জোয়ারী কি মস্তানি মানিয়ে গেছে সব হয়রানি!
বন্দুকবাজ দিন দুপুরে গুলি চালায় লোকও মারে
লুঠ করে আর ভাঙে চোরে কেউ বেঁচে যায় বরাত জোরে!
সোনার দোকান এ টি এমে আগে থেকেই খবর জানে
নেশার টানে লুঠ করে সব ফুর্তি ওড়ায় সঙ্গী এনে।

চুরি করা মোবাইলে ফেক আইডির অজামিলে
বন্ধু পাতায় গোঁজামিলে মিষ্টি কথায় প্রিয়া ভোলে।
একটা লোকের পাঁচটা বিয়ে আবার বিয়ে লোক ঠকিয়ে
ফন্দীবাজরা যে ফাঁদ পাতে হিং টিং ছট তাতেই মাতে।
এই বাজারে টিকতে হলে মাথায় চাপের বোঝা দোলে
সহমর্মির বড়োই অভাব প্রকৃত বন্ধু সে যায় চলে।
টিকে থাকার চাপ সয়নি অকাল ঘুমে ঘুম পাড়ানি
গ্ল্যামার জগৎ কি হাতছানি তিন কন্যার কান্না শুনি।

আম পাতা জোড়া জোড়া চাঁদির জুতোয় ছুটবে ঘোড়া
তবক দেওয়া রূপের তোড়া ছোঁ মারে চিল শকুনেরা।
নকল বন্ধু সুখ সন্ধান সব খোয়াবে জীবন ও মান
খেই হারালে যে চিৎপটাং এপাং ওপাং এপাং ওপাং ধপাং।।

সঞ্জিত মণ্ডল | Sanjit Kumar Mandal

New Bengali Story 2023 | করিমের একদিন | তালাল উদ্দিন

New Bengali Story 2023 | তুতানের পৃথিবী | গল্পগুচ্ছ

দেবতা ৩৩ কোটি | 33 Crore Gods | প্রবোধ কুমার মৃধা

New Bengali Article 2023 | কৃষিভিত্তিক সমাজ ও মুঠ উৎসব

Shabdodweep Web Magazine | High Challenger | Shabdodweep Founder | Sabuj Basinda | Bengali Poetry | Bangla kobita | Kabitaguccha 2022 | Poetry Collection | Book Fair 2022 | bengali poetry | bengali poetry books | bengali poetry books pdf | bengali poetry on love | bangla kobita | poetry collection books | poetry collections for beginners | poetry collection online | poetry collection in urdu | poetry collection submissions | poetry collection clothing | new poetry | new poetry 2022 | new poetry in hindi | new poetry in english | new poetry books | new poetry sad | new poems | new poems in english | new poems in hindi | Bangla Kobitar Duniya in pdf | new poems in urdu | bangla poets | indian poetry | indian poetry in english | indian poetry in urdu | indian poems | indian poems about life | indian poems about love | indian poems about death | Bangla Online Kobita | Bangla Online Kobita 2023 | story writing competition india | story competition | poetry competition | poetry competitions australia 2022 | poetry competitions uk | poetry competitions for students | poetry competitions ireland | poetry competition crossword | writing competition | writing competition malaysia | Kobita Bangla Collection in mp3 | writing competition hong kong | writing competition game | Bangla Online Kobita pdf | Bangla Online Kobita pdf book | Bangla Online Kobita – video | Shabdodweep Writer | bee poem | poem about self love | story poem | poetry angel | narrative poetry examples | poetry reading near me | prose poetry examples | elegy poem | poetry reading | poetry websites | protest poetry | prayer poem | emotional poetry | spoken word poetry | poem about god | percy shelley poems | jane hirshfield | spiritual poems | graveyard poets | chapbook | poems about life | poems to read | found poem examples | poems about life and love | elizabeth bishop poems | poems about women | sister poems that make you cry | famous quotes from literature and poetry | mothers day poems from daughter | poem about community | 8 line poem | inspirational poetry quotes | poem about life journey | positive poems | short poem about life struggles | toni morrison poems | good bones poem | google poem | funny poems for adults | inspirational poems about life | friendship poem in english | paul laurence dunbar poems | freedom poem | sad poetry about life | freedom poem | sad poetry about life | Natun Bangla Kabita 2023 | Kobita Bangla Lyrics 2023 book | Natun Bangla Kabita 2023 pdf book | Writer – Kobita Bangla Lyrics 2023 | Top Writer – Natun Bangla Kabita 2023 | Top poet – Natun Bangla Kabita 2023 | Poet list – Kobita Bangla Lyrics 2023 | Top poetry – Natun Bangla Kabita 2023 | Bangla Full Kobita | Online Full Kobita Bangla 2023 | Full Bangla Kobita PDF | New Bangla Kabita Collection | Shabdodweep Online Poetry Story | Poetry Video Collection | Audio Poetry Collection | Bangla Kobitar Collection in mp3 | Bangla Kobitar collection in pdf | Indian Bengali poetry store | Bangla Kobita Archive | All best bengali poetry | Indian Bengali Poem | Best poem in Bengali Forever | Best Collection of Bengali Poetry in pdf | Bengali Poetry Libray in pdf | Autograph of Bengali Poetry | India’s Best Bengali Writer | Shabdodweep Full Bengali Poetry Book | Bengali Poetry Book in Google Bookstore | Google Bengali Poetry Book | Shabdodweep World Web Magazine | Shabdodweep International Magazine | Top newest Bengali Poetry | Bangla Kobita in Live | Live collection Bengali Poetry | Bengali Poetry Recitation Studio | Sabuj Basinda Studio for Bengali Poetry | Bangla Kobita Sankalan 2023 | Shabdodweep Kabita Sankalan | New Bengali Poetry Memory | History of Bengali Poetry | History of Bangla Kobita | Documentary film of Bengali Poetry

1 thought on “Best Bangla Kobitar Duniya 2023 | Sanjit Kumar Mandal”

  1. আন্তরিক ধন্যবাদ আর অন্তহীন শুভেচ্ছা জানাই প্রিয় বন্ধুরা প্রিয় শব্দদীপ অন লাইন ম্যাগাজিনের অক্টোবর সংখ্যা হাতে পেয়ে যারপরনাই আনন্দিত হলাম। শব্দদীপ অন লাইন দীর্ঘজীবী হোক।

    Reply

Leave a Comment