Bangla Golpo Lekha – Rana Zaman
এক প্রাণের কত গুলি – রানা জামান
আটাশ বছর চলছে শিহাবের পুলিশের চাকরিতে। সিপাই পদে ঢুকেছিলো, এখন সাব-ইন্সপেক্টর। সিপাই থেকে এসিস্ট্যাণ্ট সাব-ইন্সপেক্টর এবং এসিস্ট্যাণ্ট সাব-ইন্সপেক্টর থেকে সাব-ইন্সপেক্টর পদে পদোন্নতি অনেক টাকা দিয়ে ওকে বাগাতে হয়েছে। পুলিশের নন-ক্যাডার সার্ভিসে পদোন্নতি চাহিদা মতো টাকা খরচ করে বাগিয়ে নিতে হয়! শিহাবুর রহমান অবশিষ্ট পাঁচ বছরে ইন্সপেক্টর পদে পদোন্নতি পেতে পারে। এর জন্য প্রচুর বিনিয়োগ করতে হবে। প্র-চু-র! পঞ্চাশ লাখে হলে সাত কপালের ভাগ্য! একটা থানা পেয়ে গেলে আসল-সুদে আদায় করে ফেলতে পারবে! তাছাড়া অবসর গ্রহণের সময় কোটি টাকার কাছাকাছি গ্রাচুইটি পেয়ে যাবে। ও প্রস্তুত যে পরিমাণ টাকা প্রয়োজন, সেই পরিমাণ টাকা ব্যয় করতে। একটা আফসোস রয়ে গেছে ওর মনে: মানুষের পাছায় ইচ্ছে মতো ব্যাটনের আঘাত করতে পারলো না! এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে ঢাকায় বহুবার; কিন্তু ওর ঢাকায় পোস্টিং না হওয়ায় সে সেই সুযোগ পায় নি। এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর হতে ঢাকায় কেবল গোপালগঞ্জের বাসিন্দারাই পোস্টিং পেয়ে আসছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন সারা বাংলায় চলতে থাকলেও মারধর বা লাঠিপেটা চলছে বড় বড় শহরগুলোতে। এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলো শিহাব।
শিহাবের পোস্টিং এখন কিশোগঞ্জের মিটামইন থানায়। সাবেক মহামান্য রাষ্ট্রপতির ইচ্ছানুসারে ওর পদায়ন হয়েছে। ওর বাড়ি নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলায়। মিঠামইন থানায় সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই বেশি। টাকা-পয়সা যা সব মহামান্য রাষ্ট্রপতির আত্মীয়-স্বজনেরা খেয়ে নেয়, ও নিবে কী! এখানকার হর্তাকর্তা সব ওরাই। ভাটি এলাকায় অথৈ পানির মধ্যে পরিবার থাকবে কেন? ওরা ঢাকায় থাকে। ওদের ভরণপোষণ জুগাতে কী না করতে হচ্ছে ওকে। বড় কাজ করার সুযোগ না থাকায় ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এক ছেলে এক মেয়ে ও স্ত্রী মাঝে-মধ্যে বেড়াতে আসে এখানে। রাখতে হয় প্রেসিডেণ্ট রিসোর্টে। ভাড়া ও খাওয়ার টাকা দিতে হয় না বলে রক্ষে।
এক ভোরে ডাক পড়লো শিহাবের নতুন কর্তব্যের। কয়েক দিন যাবৎ ঢাকাস্থ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা কোটা সংস্কারের আন্দোলন করে আসছে। ক্ষমতাসীন দলের দৃঢ় বিশ্বাস ছিলো: ওদের পেটোয়া ছাত্র সংগঠন ছাত্র লীগ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মারপিট করে ভাগিয়ে দিবে; কারণ এতদিন তা-ই করতে দেখে এসেছে। এক মন্ত্রীর ইশারা পেয়ে গতকাল সেই কাজটি-ই করেছিলো ছাত্র সংগঠনটি। কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারে নি ওরা- আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ঘুরে দাঁড়ালে পিছু হটে পালিয়েছে; এমনকি বিভিন্ন হল থেকে ঐ ছাত্র সংগঠনের নেতা-নেত্রীদের বিভিন্নভাবে অপমান করে বের করে দিয়েছে। এর প্রতিশোধ নেয়া সহ কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আজ ভোর থেকে সারা বাংলায় সান্ধ্য আইন জারি করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে দেখামাত্র গুলির নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
ওকে ভোর ছ’টার মধ্যে কিশোরগঞ্জ পুলিশ লাইনে রিপোর্ট করতে হবে। সেখান থেকে ওদের নিয়ে যাওয়া হবে ঢাকায় ছাত্র-জনতার আন্দোলন মোকাবেলার জন্য। এই অপারেশনে অংশ নিতে পারছে ভেবে শিহাব খুব খুশি। হাত খুলে গুলি করবে সরাসরি আন্দোলনকারীদের বুকে! হিসাব রাখবে কয়টা দুষ্কৃতকারীকে শোয়াতে পেরেছে! আন্দোলনকারীদের পাছায় ব্যাটনের আঘাত দেয়ার চেয়ে এটা অনেক বেশি পাওয়া হবে ওর জন্য! ওসব ভাবতে ভাবতে শিহাবুর রহমান স্পিডবোটে করে চলে এলো কিশোরগঞ্জ। বিভিন্ন থানা থেকে পুলিশ জড়ো হয়েছে পুলিশ লাইনে। মোট পঞ্চাশ জন যাচ্ছে ঢাকায় অপারেশনে। বিআরটিসি’র একটা এসি বাসে সকাল আটটার মধ্যে চলে এলো ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইনে।
রাজারবাগ পুলিশ লাইনে যুদ্ধে যাবার সাজ সাজ রব। সবাইকে বেশ খুশি লাগছে। সবার সাথে শিহাব বুলেটপ্রুফ ভেস্ট ও মাথায় হেলমট, কোমরে পিস্তল, পিঠে ঝুলালো রাবার বুলেট ছোঁড়া বন্দুক এবং হাতে একটি শটগান। এক প্লাটুন পুলিশের সদস্য হয়ে উঠে বসলো শিহাব একটা বাসে। ওদের নামিয়ে দেয়া হলো ধানমণ্ডির মিরপুর রোডে। তিন বাহিনী, প্যারামিলিটারি ও পুলিশের বিভিন্ন ধরনের সাজোয়া যান ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি চলছে না রাজপথে। সামনে শত্রুপক্ষ মানে ছাত্র-জনতার ঢল, ওদের হাতে অস্ত্র বলতে ছোট ছোট লাটি ও ইটপাটকেল। ওরা পায়ে পায়ে এগিয়ে আসছে এদিকে বৈষম্য বিরোধী শ্লোগান দিতে দিতে; ওদের পায়ে কোনো জড়তা নেই; ওরা অকুতোভয়।
‘ফায়ার!’ শব্দ শোনার অপেক্ষায় সাব-ইন্সপেক্টর শিহাব। টানটান উত্তেজনায় আছে ও, শুধু ও না সবাই। নিয়মনীতি যা-ই থাকুক, গুলি সরাসরি বুকেই করবে ও। তাছাড়া আজ ওদের তা-ই করতে বলা হয়েছে। কেউ ছুঁড়বে রাবার বুলটে, কেউ বা শটগান ও পিস্তলের গুলি। শিহাব মনে মনে বললো: আমি রাবার বুলেট ছুঁড়বো না; প্রথমে ছুঁড়বো শটগান, এরপরে গুলি ফুরিয়ে গেলে পিস্তল! অবশেষে উচ্চারিত হলো সেই অতি আকাঙ্ক্ষিত শব্দ: ফায়ার!
শুরু হলো ফায়ার! কেউ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ছে, কেউ ছুড়ছে রাবার বুলেট; শিহাব সামনের সারির একজনকে লক্ষ্য করে ছুড়ে দিলো শটগান থেকে একটা গুলি। গুলিটা বুকে লাগলেও শিহাবের ভাষায় দুষ্কৃতকারীটা কাত হলেও পড়ে গেলো না। ও ফের ছুড়লো আরেকটা গুলি। এবার বানচোতটা পড়ে গেলো রাস্তায়! কী আনন্দ আকাশে-বাতাসে! শিহাব মনে মনে বললো: এবার কিছু রাবার বুলেট ছোঁড়া যাক। ও শটগানটা কাঁধে ঝুলিয়ে রাবার বুলেট ছোঁড়ার গানটা হাতে নিয়ে রাবার বুলেটের শুরু করলো ব্রাশ ফায়ার।
আন্দোলনকারীরা ইটপাটকেল ছুঁড়তে ছুঁড়তে পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছে। গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে পুলিশের দল এগিয়ে যাচ্ছে সামনে। বেশ কয়েকটা লাশ পড়ে আছে রাস্তায়। আহত কয়েকজন রাস্তায় পড়ে কাতরাচ্ছে। সাউন্ড গ্রেনেডের বিকট শব্দ এবং বৃষ্টির মতো গুলি বর্ষণ হতে থাকায় আহত ও নিহত সতীর্থদের ফেলে রেখেই ওরা পিছু হটতে বাধ্য হলো।
কাছে গিয়ে শিহাব দেখতে পেলো: শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি লাগলেও আন্দোলনকারীদের কেউ তখনো নিহত হয় নি। সবাই কাতরাছে, সবার চোখে ব্যথার অশ্রু; কিন্তু কেউ পুলিশের কোনো সদস্যের কাছে জীবন রক্ষা করার জন্য কাকুতি মিনতি জানাচ্ছে না। সামনের আহত এক আন্দোলনকারীকে কষে কয়েকটা লাথি মারলো শিহাব। তারপর হোলস্টার থেকে পিস্তলটা বের করে গুলি করে দিলো বুকে। একইভাবে মেরে ফেললো সবাইকে। মোট পাঁচজন। সামনে তাকিয়ে দেখলো: আন্দোলনকারীরা বেশ দূরে চলে গেলেও সরকার বিরোধী বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিয়ে যাচ্ছে। এতো আহত ও মৃত্যু দেখেও কী ওরা ফের এদিকে এগিয়ে আসবে? ওদের এতো সাহস আছে? পুলিশের সবাই অস্ত্র বাগিয়ে ধরে আছে ওদিকে।
তখন শিহাবের মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলো। গিন্নীর কল। মোবাইল ফোনটা কানে ঠেকাতেই কান্নায় ভেঙে পড়লো রাশেদা আক্তার। কাঁদতে কাঁদতে রাশেদা আক্তার যা বললো, তা এরকম: নিষেধ না মেনে বড় ছেলে শিপলু আন্দোলনে যোগ দিতে রাস্তায় গিয়েছিলো। অনেকবার কল করেও শিপলুকে পাচ্ছিলো না। কিছুক্ষণ আগে শিপলুর এক বন্ধু ফোনে জানিয়েছে, চারটা গুলি লেগেছে শিপলুর বুকে, পুলিশ ওর লাশ নিয়ে গেছে।
সাব-ইন্সপেক্টর অব পুলিশ শিহাবুর রহমান হয়ে গেলো হতভম্ব। শিহাবের গা কাঁপছে; ওর খুব কান্না পাচ্ছে। ও কাঁপা হাতে ডেপুটি কমিশনার অব পুলিশ জিতেন্দ্রকে মোবাইল ফোনে বললো, আমি সাব-ইন্সপেক্টর শিহাব বলছি, স্যার। আমার বড় ছেলেটা পুলিশের গুলিতে উত্তরায় মারা গেছে, স্যার! আমি কি ওর লাশটা আনার জন্য যেতে পারবো স্যার?
কার মৃত্যু কে মরে – রানা জামান
অনেক হিসেব কষে চাকরিটা নিয়েছে জুবায়ের। জীবনবীমার মাঠ কর্মকর্তা। ওর স্থির বিশ্বাস ছিলো ভাই বোন আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব সকলেই একটা করে পলিসি কিনে নেবে। কিন্তু বন্ধুরা ওকে দেখলে চলে যায় আড়ালে; স্বজনরা ঘরে থেকেও জানায় ঘরে নেই। এমনকি আপন বড়ভাই আজ করবো না, কাল করবো বলে কাল ক্ষেপণ করছে! একমাত্র মা বিনা বাক্য ব্যয়ে পাঁচ হাজার টাকা প্রিমিয়ামে একটি জীবনবীমা পলিসি নিয়েছেন।
এই অকর্মণ্য জুবায়েরের একটা প্রেম আছে। ও-ও একটা বিয়ে বীমা করে ফেলেছে তিন বছর মেয়াদে! ওদিকে অফিস থেকে ওকে চাপ দেয়া হচ্ছে একটা মৃত্যুবীমা করার জন্য। মৃত্যুবীমার এককালীন প্রিমিয়াম পাঁচ লাখ টাকা। এই পলিসি নেবার ছয় মাসের মধ্যে মারা গেলে কোনো মুনাফা ছাড়া মূল টাকা ফেরৎ পাবে বীমা গ্রহণকারীর নমিনি। ছয়মাস পরে আত্মহত্যা ছাড়া যে কোনো দূর্ঘটনায় বা অসুস্থতায় মারা গেলে নমিনি পাবে কুড়ি লাখ টাকা! এক বছরের মধ্যে মারা না গেলে ফের পাঁচ লাখ টাকার প্রিমিয়াম দিতে হবে। মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত এভাবে বার্ষিক প্রিমিয়াম দিয়ে যেতে হবে। কে করবে এমন বীমা?
ফের এগিয়ে এলেন মা। কিন্তু সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়ালো ভাই-বোনেরা। এই বীমা করা মানে মায়ের মৃত্যু কামনা করা। কথাটা শোনে চমকে উঠে জুবায়ের কোনো প্রতিবাদ করতে পারলো না। মাও কেমন যেন নিশ্চুপ হয়ে গেলেন। বাড়ির পরিবেশ হয়ে গেলো থমথমে। যে যার কক্ষে চলে গেলেও জুবায়ের বসে রইলো ড্রয়িংরুমে। একটু পরে ও বাসা থেকে বেরিয়ে উঠে এলো ছাদে। আকাশে চাঁদ না থাকলেও তারা ভরা থাকায় বেশ আলো চারিদিকে। ছাদে বেশ বড় এক পাকা ছাতার নিচে পাকা চেয়ার পাতা আছে মাঝখানে একটা টেবিল ঘিরে। জুবায়ের একটা চেয়ারে বসে টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে বসে রইলো। কিছুক্ষণ পরে পিঠে হাত পড়ায় তাকিয়ে দেখলো মা।
মা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, মনে কষ্ট পেয়েছিস ওদের কথায়? আমি তো মানা করি নাই! আজ মারা না গেলেও দুই দিন পরে মারা যাবো। মানুষের মৃত্যু নিশ্চিত। তোর বাবা চলে যাবার পর হতে এমনিতেই আমার আর বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে না। আত্মহত্যা মহাপাপ না হলে কবেই চলে যেতাম! শোন! আমি চুপিচুপি তোকে টাকাটা দেবো। তুই পলিসিটা কর্।
জুবায়ের মাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ কেঁদে দিলো। মা’র চোখ থেকেও ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু পড়তে থাকলো ছেলের মাথায়।
নায়লা বললো, এ কেমন বীমা? ছয় মাস পরে মরতে হবে! এই বীমা করতে বলো না আমাকে! আমার দুনিয়া দেখার অনেক বাকি। বাবা তোমার সাথে বিয়ে দিতে রাজি না হলে মা-বাবার পছন্দের পাত্রকে বিয়ে করে সংসারী হবো! কমপক্ষে দুই সন্তানের মা হবোই! দাদা নানি হওয়ারও ইচ্ছে আছে!
কী বলবে জুবায়ের? বুঝতে পারলো আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধবদের দিয়ে এই বীমা পলিসি করানো যাবে না। এমন লোক খুঁজতে হবে যার টাকার খুব দরকার এবং মরণের পরোয়া করে না। কোথায় পাবে এমন বকরি? তখন ওর কথাটা মনে পড়লো: অন্তর লাগিয়ে খুঁজলে বাঘের চোখও পাওয়া যায়। হাঁটতে থাকলো জুবায়ের। হাঁটতে হাঁটতে সন্ধ্যার সন্ধিক্ষণে রেলস্টেশনে উঠে এলো। গ্রাম এলাকার স্টেশনে এসময় কোনো ট্রেন আসার সময় না থাকায় কোনো লোকও থাকে না। স্টেশনের দুই প্রান্তে দুটো কম ভোল্টের বাল্ব জ্বলছে। ঘ্রাণটা নাকে লাগায় একবার নাক টেনে জুবায়ের মনে মনে বললো: এখানে গাঁজা টানছে কে? গাঁজা তামাক আর মদ কেউ না খেলেও গন্ধ শুঁকেই যে কেউ বুঝতে পারে জিনিসটা কী। ও ঘ্রাণ শুঁকতে শুঁকতে চলে এলো এক ঝোপের কাছে। ঝোপের আড়ালে কে যেন বসে গাঁজা টানছে। ওকে দেখে লোকটা চমকে বা ভয় না পেয়ে টেনে যেতে থাকলো গাঁজা।
জুবায়ের লোকটার পাশে বসে বললো: আমারও মনটা খুব খারাপ। কিন্তু গাঁজা টানছে ইচ্ছে করছে না। গাঁজা খুব বাজে জিনিস।
লোকটা নাকেমুখে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বললো, গাঁজা সহজলভ্য এবং দাম কম।
কী কষ্ট আপনার?
কী হবে আপনাকে বলে?
শুনেছি কষ্টের কথা কাউকে বললে মনটা হাল্কা হয়। আপনারটা বললে আমারটাও বলতাম আপনাকে।
কিছুক্ষণ চুপচাপ। লোকটা ঘনঘন গাঁজা টেনে চারদিক অন্ধকার করে ফেলছে। তীব্র গন্ধ সইতে না পেরে জুবায়ের বাম হাতে নাক চেপে ধরলো।
জুবায়ের অপেক্ষা করছে। ওর বিশ্বাস: লোকটা কথা বলবে।
কিছুক্ষণ পরে কল্কিটা মাটিতে উপুড় করে রেখে লোকটা বললো, প্রেম করে বিয়ে করেছি। অনেক ভালোবাসি রিনিকে। আমার তিন কূলে কেউ নেই। কাজেই বউকে মন লাগিয়ে ভালোবাসায় কোনো সমস্যা ছিলো না। ছয় মাস পর রিনির ঘন ঘন জ্বর আসতে থাকায় নিয়ে গেলাম ওকে হাসপাতালে। প্যারাসিটামলে জ্বর সারলেও দুই/তিন দিন পরে ফের জ্বর চলে আসে। একজন মেডিসিন স্পেশালিষ্টের কাছে নিয়ে গেলে বেশ কিছু টেস্ট করতে দিলেন। টেস্টে লিউকেমিয়া ধরা পড়লো। থার্ড স্টেজ হলেও ট্রিটমেণ্ট সম্ভব। অফিসের কলিগরা সাজেস্ট করলো বিলম্ব না করে ইন্ডিয়া নিয়ে যেতে। খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারলাম কমপক্ষে কুড়ি লাখ টাকা নিয়ে যেতে হবে হাতে করে। পরে আরো খরচ আছে। কোথায় পাবো এতো টাকা আমি। বাবা-মা একমাত্র সন্তানের জন্য কিছু রেখে যেতে পারেন নি। আমার কোনো সঞ্চয়ও নেই। আমার অক্ষমতা এবং রিনিকে হারাচ্ছি, এই কষ্ট সাময়িক ভুলে থাকার জন্য গাঁজা টানি।
জুবায়ের খানিকটা হর্ষোৎফুল্ল কণ্ঠে বললো, আপনার সমস্যার সমাধান আছে আমার কাছে! কিন্তু এর আগে আপনার নামটা জানা দরকার।
লোকটি বললো, আমার নাম হাবীব, হাবীব হায়দার।
আপনার একটা ডেথ ইন্সুইরেন্স পলিসি নিতে হবে। পাঁচ লাখ টাকা প্রিমিয়াম। পেয়ে যাবেন কুড়ি লাখ টাকা!
ঝট করে হাবীব জুবায়েরের দিকে তাকিয়ে বললো, রিনির নামে?
না! মরতে পারে এমন রোগে আক্রান্ত রোগীর নামে ডেথ ইন্সুইরেন্স পলিসি কেনা যায় না!
তাহলে কার নামে?
আপনার নামে কিনতে হবে হাবীব ভাই।
তারপর?
ছয়মাস পরে আপনি মারা গেলে আপনার স্ত্রী চিকিৎসার জন্য পেয়ে যাবে কুড়ি লাখ টাকা।
কিভাবে মারা যাবো আমি? সুইসাইড করে?
উহু! সুইসাইড করলে কোনো ইন্সুইরেন্স ক্লেইম করা যাবে না! মৃত্যু হতে হবে এক্সিডেণ্টে অথবা রোগাক্রান্ত হয়ে।
তাহলে রিনির নামে পলিসি নিতে সমস্যা কোথায় ভাই? আপনার নামটা কী? আপনার সাথে ইন্সুইরেন্স পলিসি নিয়ে আলোচনা করছি কেন?
আমার নাম জুবায়ের আলম। ইন্সুইরেন্স ফিল্ড অফিসার।
ও! আপনি আমাকে বলির বকরি বানাতে চাচ্ছেন! কোত্থেকে যে আসে এমন লোক!
বলতে বলতে কল্কি হাতে চলে গেলো হাবীব।
বেকুব বনে জুবায়ের তাকিয়ে রইলো অপসৃয়মান হাবীবের দিকে। মশার কামড় বেড়ে গেলো জুবায়ের চলে এলো বাড়িতে। ওর মাঝের উচ্ছলতা কেমন যেন মিইয়ে যাচ্ছে। নিজ কক্ষে ঢুকে শুয়ে পড়লো বিছানায়।
মা এসে কপালে হাত দিয়ে চমকে উঠে বললেন, জ্বরে তোর গা পুড়ে যাচ্ছে! কোথায় ছিলে এতক্ষণ?
জুবায়ের ক্লান্ত কণ্ঠে বললো, বেশ কদিন ধরে একটু একটু গলা ব্যথা করছিলো আজ ব্যথাটা বেশ বেশিই করছে। একটু কুসুম গরম পানি দাও গরগরা করি। আর একটা প্যারাসিটামল দাও। ব্যথা ও জ্বর সেরে যাবে।
মা বললেন, নায়লা এসে বেশ কান্নাকাটি করে গেলো। তুই নাকি ফোন ধরছিস না? মেয়েটা তোকে পাগলের মতো ভালোবাসে। ওকে কষ্ট দিস না!
মা বেরিয়ে গেলেন কক্ষ থেকে। একটু পরে গরম পানি ও প্যারাসিটামল ট্যাবলেট নিয়ে এলেন। জুবায়ের গরম পানি দিয়ে কয়েকবার গরগরা করে প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খেয়ে কল দিলো নায়লাকে। অনেক ভালোবাসার কথা বলে ওকে শান্ত করে বললো আগামীকাল সকাল দশটায় সার্কিট হাউজের সামনে স্বাধীনতা চত্বরে আসতে।
পরদিন সকাল দশটা। স্বাধীনতা চত্বর। দু’জন কনক্রিটের ছাতার নিচে একটা বেঞ্চিতে বসে কথা বলছে।
নায়লা: তুমি এই চাকরি ছেড়ে দাও! এ চাকরি তোমাকে দিয়ে হবে না!
জুবায়ের: আমিও তাই ভাবছি। ভাবছি ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে রড-সিমেণ্টের দোকান দেবো।
তখন একটা লোক এসে ওদের সামনে দাঁড়ালে দু’জনেই ওর দিকে তাকালে লোকটি বললো, আপনাকে খুঁজে পেতে বেশ কষ্ট করতে হয়েছে আমাকে। উনি নিশ্চয়ই আপনার রিনি?
ও রিনি হতে যাবে কেন!
বলেই থেমে গেলো জুবায়ের। ওর গতকাল সন্ধ্যায় হাবীব হায়দারের সঙ্গে কথাবার্তা মনে পড়ে যাওয়ায় বললো, আপনি হাবীব হায়দার! গতরাতে অন্ধকারে আপনার চেহারা দেখতে না পাওয়ায় চিনতে পারি নি। গতকাল আমাকে আজেবাজে বলে চলে গিয়েছিলেন; এখন এলেন কেন? কিভাবে আমাকে খুঁজে পেলেন?
আপনার অফিসে গিয়েছিলাম। পলিসিটা করার জন্য আমি অফিস থেকে লোন নেবার ব্যবস্থা করেছি।
খুশির আতিশয্যে জুবায়ের হাবীবকে জড়িয়ে ধরলো।
বিস্মিত হয়ে নায়লা বললো, তোমার রড-সিমেণ্টের ব্যবসার কী হবে?
ওটা পরে হবে!
নায়লা গাল ফুলিয়ে ধুপধাপ পা ফেলে বেরিয়ে গেলো স্বাধীনতা চত্বর থেকে। জুবায়ের মুচকি হেসে হাবীব হায়দারকে নিয়ে চলে এলো বীমা অফিসে। পাঁচ লাখ টাকা প্রিমিয়ামে হাবীব হায়দারের নামে হয়ে গেলো একটি ডেথ ইন্সুইরেন্স। নমিনি রিনি, রিনি হায়দার।
এই ইন্সুইরেন্স পলিসিটা করে হাবীব হায়দারের দুশ্চিন্তা অনেকটাই কমে এসেছে। ও হাসপাতালে রিনির বেডের পাশে বসে রিনির হাত মুঠোয় ধরে আশ্বস্ত করে যে ছয় মাস পরে টাকাটা পেয়ে গেলেই ওকে ইন্ডিয়া নিয়ে যাওয়া হবে সুচিকিৎসার জন্য। কিন্তু ওর মৃত্যু কিভাবে হবে তা এখনো স্থির হয়নি। জুবায়ের কয়েকটা পদ্ধতির কথা বলেছিলো; কিন্তু ওর পছন্দ হয়নি। এই ছ’টা মাস রিনিকে খুব বেশি বেশি সময় দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাবীব। তাই এক সপ্তাহ পরে জুবায়েরের সাথে আলোচনা করে পদ্ধতিটা স্থির করে ফেলতে হবে।
এক সপ্তাহ পরে সকাল দশটায় স্বাধীনতা চত্বরে বসে দু’জনে অনেক তর্ক-বিতর্ক আলোচনা করে একটা পদ্ধতি স্থির করতে পারলো। হাবীব ট্রেনে চড়ে জুবায়েরের পকেট মারলে ওকে হাতেনাতে ধরে যাত্রীদের হাতে পিটুনি খাবার এক পর্যায়ে ধাক্কা দিয়ে ট্রেন থেকে ফেলে দিলেই কেল্লাফতে!
আজ ছ’মাস শেষ হচ্ছে। আগামীকাল জুবায়েরের সাথে আলোচনা করে ট্রেন ও সময় নির্ধারণ করতে হবে। এটা ভেবে মনটা খারাপ হয়ে যায়। অকালে ওকে চলে যেতে হবে! রিনির সাথে আজীবন ঘর-সংসারের অতৃপ্তি থেকে যাবে। কিন্তু রিনি বেঁচে যাবে। ওর জীবনের বিনিময়ে রিনির জীবন!
পরদিন। স্বাধীনতা চত্বরে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও জুবায়ের না আসায় ফোন করে জানতে পারলো জুবায়ের হাসপাতালে, ভীষণ অসুস্থ। হাসপাতালে এসে জানতে পারলো জুবায়েরের থ্রট ক্যান্সার হয়েছে; লাস্ট স্টেজ।
হাবীব হায়দারের কান্না পেলো খুব। ও জুবায়েরের হাত ধরে বললো, তুমি কি ডেথ ইন্সুইরেন্স পলিসি নিয়েছিলে?
জুবায়েরের মুখে অক্সিজেনের নল, চোখে অশ্রু। ও নেতিবাচক মাথা সামান্য নাড়লে হাবীব হায়দার ফের বললো, পলিসিটা নেয়া থাকলে তোমার ফ্যামিলি টাকাটা পেতো। কিন্তু আমার কী হবে এখন? ট্রেন থেকে এখন আমাকে ধাক্কা দেবে কে?
রানা জামান | Rana Zaman
Natun Bangla Kobita Lekha | কবিতাগুচ্ছ | আরতি সেন | Top New 2023
Bangla Prabandha Rachana | মনের কুলুঙ্গিতে আমার ভিক্ষে মায়ের স্মৃতি | New 2023
100 questions and answers about Ramakrishna Mission | রামকৃষ্ণ মিশন সম্পর্কে প্রশ্ন ও উত্তর
Pralambasura badha besha of Jagannath | প্রলম্বাসুর বধ বেশ | অভিজিৎ পাল
Anandabazar Bengali Short Story | Bengali Short Story | Pratilipi Horror Stories in Bengali | Lifestyle Web Stories in Bangla | Trending online bangla golpo pdf free download | Short bengali story | Bengali story pdf | pratilipi bengali story | Short Stories for Children | English Stories for Kids | Moral Stories for Kids | story in english | story hindi | story book | story for kids | short story | story for girls | short story in english | short story for kids | Bangla Golpo Lekha pdf | Bangla golpo pdf | Bangla golpo story | bangla romantic golpo | choto golpo bangla | bengali story | Sunday suspense golpo | sunday suspense mp3 download | suspense story in hindi | suspense story in english 200 words | Bangla Golpo Lekha in english | Trending online bangla golpo pdf download
suspense story in english 300 words | Suspense story examples | suspense story in english 100 words | suspense story writing | very short suspense stories for students | Bangla Golpo Lekha | Top Bangla Golpo Online Reading | New Read Online Bengali Story | Top Best Story Blogs | Best Story Blogs in pdf | Sabuj Basinda | High Challenger | Famous Bangla Golpo Online Reading | Shabdodweep Read Online Bengali Story | Shabdodweep Writer | Bangla Golpo Online Reading pdf | Famous Story – Trending Bangla Golpo Lekha | Pdf Bangla Golpo Lekha | Bangla Golpo Lekha App | Full Bangla Golpo Lekha Reading | Bangla Golpo Online Reading Blogs | Trending online bangla golpo pdf
Best Story Blogs in Bengali | Live Bengali Story in English | Bangla Golpo Online Reading Ebook | Full Bangla Galpo online | Bangla Golpo Lekha 2024 | New Bangla Golpo Lekha – Episode | Golpo Dot Com Series | Bangla Golpo Lekha Video | Story – Bangla Golpo Lekha | New Bengali Web Story Audio | New Bengali Web Story Video | Bangla Golpo Lekha Netflix | Audio Story – Bangla Golpo Lekha | Video Story – Bangla Golpo Lekha | Shabdodweep Competition | Story Writing Competition | Bengali Writer | Bengali Writer 2024 | Trending Bangla Golpo Online Reading | Top Bangla Golpo Lekha | Bangla Golpo Lekha Web Story | Best Read Online Bengali Story | Read Online Bengali Story 2024 | Trending online bangla golpo book pdf
Shabdodweep Bangla Golpo Online Reading | New Bangla Golpo Lekha | Bengali Famous Story in pdf | Modern Online Bangla Galpo Download | Bangla Golpo Online Reading mp3 | Horror Adult Story | Read Online Bengali Story Collection | Modern Online Bangla Galpo mp4 | Modern Online Bangla Galpo Library | New Bengali Web Story Download | Full Live Bengali Story | Bengali Famous Story 2023 | Shabdodweep Bengali Famous Story | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Bengali Famous Story – video | Bengali Famous Story mp3 | Full Bengali Famous Story | Bengali Literature | Shabdodweep Magazine | Shabdodweep Web Magazine | Live Bengali Story Writer | Shabdodweep Writer | Trending online bangla golpo free download