কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা – সূচিপত্র [Bengali Story]
পলাতকা ঢেউ – কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা [Amader Bangla Golpo]
কল্পনায় নয় বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রকৃতিকে দেখতে চায় মিনতি। রোজ চেনাজানা প্রকৃতিও কম আকর্ষণের নয়, চোখ থাকলে। তবে সে অসীমের সামনে দৃষ্টিসীমার ওপারে ঝাপসা পৃথিবীর খবর রাখবে নিজের জীবনের আলো ছায়ার বেড়া ডিঙিয়ে। একঘেয়ে ক্লান্ত তার জীবনের অবসন্নতা গ্রাস করে যখন, সাধ্যের সীমা পার করে অজানার অসীম পুরে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়।
মিনতির বাবা বলতো, সমুদ্রের কাছে বসে থাকলে কিভাবে যে সময় পার হয়ে যায় ! শুধু জল আর ঢেউ ভিন্ন কিছু নেই, অথচ উভয়ের এক চুম্বকের মত আকর্ষণ টেনে রাখে। তার বাবা মা শেষ বয়সে যায় সমুদ্র দর্শনে আটপৌরে জীবনের ঘেরাটোপ পেরিয়ে। দাদার ব্যবস্থাপনায় সুযোগটা এসে গেল। ছেলে সুমাল্য, মেয়ে সুলতার কী আনন্দ। পড়াশুনো আর স্কুল স্কুল করে কিশোর বয়সে ওরা থাকে ব্যস্ত। ওদের বাবাও ছুটি নিল অগত্যা।
দীঘার সৈকতে পৌঁছে গেল। দীর্ঘ বেলাভূমির নির্জনতা ভেঙে হাজার হাজার মানুষ। মিনতি ভাবে তারা মানুষ দেখবে, না সমুদ্র, উভয়েই তো কোলাহলে মেতে। বাচ্চা দুজন এভাবে মুক্ত জীবনের স্বাদ পায়নি অনেকদিন ! ওদের হাসি, আনন্দ, উচ্ছলতা সমুদ্র দেখার চেয়ে বেশি যেন খুশি করে। বাবার হাত ধরে অন্যদের সঙ্গে ওরা দৌড়ে নেমে পড়ে, যায় জলের কাছাকাছি। এক প্রাণ ভরা রোদ্দুরের দেশে ওরা খেলায় মেতে ওঠে । কত মানুষ ছেলে মেয়েদের নিয়ে বর্ণময় পোশাকে , কেউ জলে, সৈকতে আনন্দের যজ্ঞে মেতেছে। সকলের উন্মাদনা দেখে সমুদ্রও তার ঢেউ আর গর্জন প্রকাশ করে। সে বার বার করে সাবধান।
সমুদ্রের গর্জন নিরন্তর। ঘন্টার পর ঘন্টা বসে দেখে মানুষ ওই সমুদ্রের অসীমতাকে। দূর থেকে বিশাল আকৃতির ঢেউ ছন্দের তালে তালে এগিয়ে আসে বেলাভূমির দিকে ভয়ঙ্কর সুন্দর মূর্তি নিয়ে। গভীর থেকে যত অগভীরতায় সে ঢেউ আসে , মৃদু লয়ে আছড়ে পড়ে সৈকতে। এ এক আত্ম সমর্পণ। আঁকিবুঁকি জলছবির সেই ফেনিল জলতরঙ্গ ভিজিয়ে দেয় পা, মানুষ সব শিহরিত হয় অসীম সমুদ্রের ছোঁয়া পেয়ে।
প্রথম দিন ছিল দীঘা। পরের দিন তালসারি থেকে শুরু । সেই সমুদ্র । জলে ডাঙায় অদ্ভুত বিনোদন। তারই মাঝে কিছু খেটে খাওয়া মহিলার ছাঁকনি জাল দিয়ে ছোট মাছ আর ঝিনুক সংগ্রহ, এক বৈপরীত্যের ছবি। মিনতি দেখে তারই মেয়ের বয়সী কিশোরীরা মায়েদের সঙ্গী। ঢেউয়ের তালে তালে ওরা জাল বেয়ে আনে ডাঙায় । বাচ্চা গুলো আবর্জনা ঘেঁটে কুড়িয়ে নেয় ঝিনুক ইত্যাদি। জীবিকার উপকরণ গরীবের ঘরে। কৌতূহলী হয়ে মিনতি যায় এক কিশোরীর কাছে। লাজুক দৃষ্টিতে সে দেখে মিনতিকে। নাম বলে, বলে তার বাবা ছিল নুলিয়া। এক বছর আগে কোন এক বাবুকে বাঁচাতে গিয়ে জলে ডুবে মারা যায়। কাছাকাছি ঝুপড়িতে ওদের বাড়ি। মা, দুই দাদা আর ও, এক গরীবের সংসার। ‘সমুদ্র তোদের ভালো লাগে ?’ ‘সমুদ্র আমাদের ঘরবাড়ি, সারা রাত দিন ও আমাদের ডাকে। কিন্তু বাবা চলে যাওয়ার পর খুব ভয় করে সমুদ্রকে দেখে। ভয়ে ভয়ে আসি, খাবো কী!’
এমন সময় ছেলে মেয়ে দুজনে দৌড়ে মায়ের কাছে আসে। ‘মা চলো সবাই খেতে ডাকছে।’ ‘চলো’ বলে মিনতি এগিয়ে চলে শীতার্ত রোদ্দুরের ওম নিয়ে। চলতে চলতে সে দেখে, কে যেন কিসের আঁচড়ে সৈকতে লিখেছে, – শ্রাবণী, আমি তোমাকে ভালোবাসি’ – কমল। হঠাৎ একটা দমকা ঢেউ এসে মুছে দিয়ে যায় সে লিখন । মিনতি গোড়ালি ডোবা পলাতকা ঢেউ মাড়িয়ে এগিয়ে যায় । ওরা সবাই ডাকে।
কলম-পেন্সিল – কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা [Amader Bangla Golpo]
‘শুনছো, মানুর পরীক্ষা সামনের সপ্তায়, ভালো কলম আর একটা ভালো পিচ বোর্ড আনবে । ‘ অফিসে বেরোবার সময় নীতা অর্থাৎ মানুর মার কথাগুলো শুনবে কী, নটা পাঁচের আপ ডায়মন্ড ধরার জন্য বীরেন তখন ভীষণ ভাবে ব্যস্ত। অফিস যাওয়ার আগে রোজ সে বলে, জরুরি কোন কিছু আনতে হবে ! তো এই আজকে বলার আগেই ‘নির্দেশ’ । দরজার বাইরে পা দেবার আগে ভালো করে জেনে নেয়, – ‘ কলম আর কি বললে ?’ – ‘পিচ বোর্ড ।’
মিনিট দশেক হেঁটে অটো ধরে আরো মিনিট পাঁচ। অটো থেকে নেমে দৌড়ে প্ল্যাটফর্মে উঠে দেখে ট্রেন অর্ধেক ঢুকে গেছে। অফিসে পৌঁছে কাজের মধ্যে ঢুকে গেলেও মাঝে মাঝে পিচ বোর্ড শব্দটা মাথার মধ্যে পাক খায়। সারা দিনের শেষে কথাটা মনে থাকে কী না, তাই একটা চিরকুটে লিখে নেয়, (১) একটা কলম, ভালো, (২) একটা পিচ বোর্ড ভালো। পকেটে রেখে সেটা আবার কাজের মধ্যে ঢোকে।
অফিস ফেরত বালিগঞ্জ এসে একটা বই খাতার দোকানের সামনে দাঁড়ায়। দোকানি কে চিরকুট ধরায়। কাগজ আর পিচবোর্ড নিয়ে সে পয়সা দেওয়ার সময় জিজ্ঞেস করে , – ‘দাদা পিচ বোর্ড কী কাজে লাগে ?’ আপনাদের সময় এসব ছিল না , এখন স্কুলে বলে ,পিচ বোর্ডে রেখে পরীক্ষার সময় ভালো লেখা যায়।’ বীরেনের মাথার মধ্যেকার জট কাটলো। অফিসে কাউকে বলেনি, কারণ ওরা হাসবে আর পিছনে বলবে ‘ গাঁইয়া ‘।
ট্রেনে উঠে জানালার কাছে দুই প্যাসেজের মধ্যে বসে থাকা সহযাত্রীদের হাঁটুর ফাঁকে দাঁড়ায় । তাদের হাঁটুতে নিজের হাঁটু ঠোকাঠুকি করে রোজ, ওসব ভাবলে কী চলে! এসময় ওর ভাবনা অনেক পিছনের দিনে হেঁটে যায়। এই তো সেদিন মনে হয়, তালপাতার পাততাড়ি, পুরনো দোয়াতে কাঠ কয়লার কালি ভরে গলায় তার একটা সরু দড়ি, কঞ্চির কলম নিয়ে সে গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে গেল। চৌকো করে কাটা চটের আসন যাতে পাততাড়ি গুলো জড়িয়ে রাখা হয়, সেটি স্কুলের মেঝেতে পেতে সবাই পর পর বসে লেখা শুরু। সারা স্কুল গম গম করতো। তারপর উদয় বাবুর এক হাঁকে সব চুপ।
বাসায় ফিরে দেখে, ছেলে তার পড়ার ঘরে বসে বই পড়ে। তার মা অন্য ঘরে টিভির সামনে বসে মোবাইল এ ব্যস্ত। পিচ বোর্ড আর কলম পেয়ে ছেলে বলে, – ‘মা, আমার কলম – পেন্সিল, পেন্সিল কাটার আর ইরেজার তো লাগবে !’ সকালের কাগজে চোখ বোলাতে বোলাতে বীরেন বলে, – ‘বাবু একটা কাগজে লিখে দে, কালকে অফিস থেকে ফেরার পথে নিয়ে আসবো। ‘একটু পরে ছেলের ফর্দ নিয়ে বীরেন ডিকশনারি খোলে। পেন্সিল – কলম কী, তা পেল না,কাটার তো জানে, ইরেজার যে সে কালের রাবার সেটা বুঝলো। শেষে ছেলের কাছে জানতে চায়, পেন্সিল – কলম কথা। ছেলে খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে দেয়। ‘পেন্সিল – কলম ঠিক কলমের মত দেখতে, তার মধ্যে পেন্সিলের খুব সরু শিস ঢোকানো থাকে। বিজ্ঞানের ছবি, ভূগোলের ছবি আঁকা যায় ভালো। উড পেন্সিল তাড়াতাড়ি ভোঁতা হয়ে যায়। তাই এটা লাগে। আর এই কলম পেন্সিলের শিস কমে এলে ওই কলমের পিছনে চাপলে নতুন শিস বেরিয়ে আসে।’ – মানুষের কী বুদ্ধি, বীরেন মনে মনে ভাবে। ভাবতে ভাবতে ভাবনার মোড় ঘোরে।
অফিসে, ট্রেনে, বাসে সর্বত্র ওই সন্তানদের পড়াশুনো নিয়ে অনর্গল কথা হয়। তার সহকর্মী নিতাইদা শহুরে মানুষ। দুই ছেলের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। বিশাল খরচ। গল্প শুনে বীরেন আঁতকে ওঠে। সে বাংলা মিডিয়াম পড়াতে কী যে নাজেহাল! এক কালের গ্রামের মানুষ বীরেন অফিসের দৌলতে কত কি যে শিখছে, আর কত কি যে শিখবে ! কারো ভাইপো লন্ডন, কারো ছেলে কানাডা, সব ইংলিশ মিডিয়ামের ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র। ছেলে মানুর জন্য তার চিন্তা হয় খুব। শহরতলির বাংলা মিডিয়াম স্কুলে পড়ে কত আর এগোবে! ওর যা বুদ্ধি শুদ্ধি হয়তো ইংলিশ মিডিয়াম টানতে পারতো। কিন্তু আর্থিক দিক ভেবে সে পিছিয়ে যায়। তার মনে হয়, সমাজ ব্যবস্থায় বৈষম্য বৈষম্য বলে কত কথা ,কত বড় বড় বই লেখা হল। শিক্ষা নিয়ে যদি এই বৈষম্য গোড়াতেই শুরু হয়, বৈষম্য কী কোনকালে ঘুচবে ! পরবর্তী নয়, অনেক অনেক আগে থেকে শিক্ষা নিয়ে বৈষম্য চলে আসছে, আমরা বুঝে না বোঝার ভান করি । শিক্ষা থেকে শুরু, তারপর সার্বিক বৈষম্যের জন্ম। এর থেকে মুক্তি কোনকালে হবে না।
সেদিন ছিল তার শনিবারের ছুটি। নীতা বলে, – ‘আজকে তুমি মানুকে স্কুলে নিয়ে যাও, আমি বড় ঠাকুরের পুজো দিতে যাবো।’ – অগত্যা বীরেন আজ ছেলের অভিভাবক। বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। এখনও তিনটে বাকি। ছেলে স্কুলে ঢুকে গেলে সে বাইরে একটু বসার জায়গা খোঁজে । কাছাকাছি সব শূন্য জায়গাগুলো ছাত্র ছাত্রীর মা বাবারা বসে পূর্ণ করে। সারা রাজ্যের আর প্রতিবেশীর হাঁড়ির গল্প, কান পাতলেই শোনা যায়। বীরেন চেনে না কাউকে। সে তো ছেলের সঙ্গে আসার সুযোগ পায় না। তাই সে আশপাশে ঘোরা ঘুরি করে সময় কাটায়। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ভাবে তার স্কুল জীবনের সব কথা কাহিনী। দূরের গ্রামের স্কুল, খেলার মাঠ, বিশাল দীঘি, ফুলের বাগান, স্কুলে থেকে দল বেঁধে সাঁকোতে খাল পার হওয়া ।সব যেন ছবির মত চোখে ভেসে ওঠে।
এমন সময় ঘণ্টা পড়লো পরীক্ষা শেষের। স্কুল গেটে অভিভাবকদের প্রচন্ড ভিড় নিমেষে। যে যার সন্তানের মুখ দেখার জন্য উদগ্রীব ! এক ঝাঁক উজ্জ্বল পোশাকের ছাত্র ছাত্রী বেরিয়ে আসে । কারোর মুখে হাসি, কেউ বা মনমরা । কেউ বা দৌড়ে মায়ের কাছে আসে, কেউবা এসে মুখ নিচু করে। আস্তে আস্তে নির্জন হয় কোলাহল মুখর বিদ্যালয়। বীরেন ছেলের সঙ্গে হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফেরে। সুবিধার মধ্যে স্কুলটা বেশ কাছে। বাড়িতে এসে তারা শোনে, খবরে বলছে অতিমারীর কারণে আগামীকাল থেকে সারা দেশে লকডাউন । মধ্য রাত থেকে রেল চলাচল এক মাসের জন্য বন্ধ।
কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা | Krishna Kishore Middya
Natun Bangla Kobita Lekha | কবিতাগুচ্ছ | বৃন্দাবন ঘোষ | Top New 2023
100 questions and answers about Ramakrishna Mission | রামকৃষ্ণ মিশন সম্পর্কে প্রশ্ন ও উত্তর
Pralambasura badha besha of Jagannath | প্রলম্বাসুর বধ বেশ | অভিজিৎ পাল
Driving Experience Canada 2023 | ড্রাইভিংয়ের যত কেচ্ছা (কানাডা পর্ব – ১১ এবং শেষ)
Best Amader Bangla Golpo | New Best Story Blogs | Top Best Story Blogs | Best Story Blogs in pdf | Sabuj Basinda | High Challenger | Best Story Blogs 2023 | Shabdodweep Best Story Blogs | Shabdodweep Writer | Best Story Blogs in India | World’s Best Story Blogs | Best Story Blogs in Online | Online Bangla Hasir Golpo | Free Best Story Blogs | Best Story Blogs in Bengali | Best Story Blogs in English | Online Bangla Hasir Golpo 2023 pdf | Full Online Bangla Hasir Golpo | New Amader Bangla Golpo | Online Amader Bangla Golpo – Episode | Online Amader Bangla Golpo Series | Horror Adult Story Video | Horror Adult Story Audio | Full Bangla Galpo Audio | Full Bangla Galpo Video | Amader Bangla Golpo Netflix | Full Bangla Galpo Read | Full Bangla Galpo Download | Shabdodweep Competition | Story Writing Competition | Bengali Writer | Bengali Writer 2023 | Trend Full Bangla Galpo | Recent Full Bangla Galpo | Top Full Bangla Galpo | Popular Full Bangla Galpo | Best Full Bangla Galpo | Amader Bangla Golpo 2023 | Shabdodweep Online Bangla Hasir Golpo | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Amader Bangla Golpo Download | Online Bangla Hasir Golpo – audio | Horror Adult Story | Horror Adult Story Collection | Bengali Famous Story – video | Bengali Famous Story mp3 | Full Bengali Famous Story | Bengali Famous Story 2023 | Shabdodweep Bengali Famous Story | Amader Bangla Golpo in pdf | Audio Amader Bangla Golpo | Video Amader Bangla Golpo | Amader Bangla Golpo – Krishna Kishore Middya | Amader Bangla Golpo Collection