প্রকৃতির রোষ
- দেবমঞ্জরী ঘোষ
দীর্ঘ অনন্ত বর্ষ ধরে প্রকৃতি সহ্য;
করছে তোমার তাণ্ডব মানুষ;
প্রকৃতি তাই আজ উপড়ে দিল তারই রোষ!
আজ খেলছে সে মৃত্যুরই খেলা মানুষের সাথে,
মানুষ আজ অতি দুর্বল প্রকৃতিরই কাছে।
প্রকৃতির ধ্বংসলীলা দেখে মানুষ হল কীট,
কিন্তু দুর্বল ক্ষীণ হয়েও সে;
হার মানতে নারাজ প্রকৃতির কাছে;
প্রকৃতিও তাই হানছে আঘাত বারে বারে।
প্রকৃতি তাই, গর্জে উঠে বলে আজ;
'ওরে মানুষ, এতো স্পর্ধা তোর?
তবে দেখ্ আজ তোর্ মৃত্যুতেই;
আমার আনন্দ, তোর্ কান্নাতেই আমার অট্টহাসি!
ওরে মূঢ় আমায় তুই ধ্বংস করিস কি স্পর্ধায়?
জানিস না কি আমিই তোদের বাঁচাতে পারি?
তবে এতো অহংকার কিসের তোর্?
কিসের অহংকারে করিস তুই অবহেলা আমাকে?'
মানুষ স্তব্ধ হয়ে থাকে, কিন্তু,
গাছ কাটতে তারা ভুল করে না;
মানুষ আসলে যার খায় তাকেই আঘাত করে;
বাইরে প্রকৃতি তাই আজ হাসছে,
আর, আমরা কীটের মতন বেঁচে আছি ভয়ে ভয়ে।।
সর্পিল
- দেবমঞ্জরী ঘোষ
নাচ যেন ফণা তোলে তার হাতেই ;
ঘুগুর যেন কথা পায় তার পায়েই;
বাঁকা পায়ের ভঙ্গিতে ঝলকে ঝলকে ঠুমকি পড়ে;
সুর দেয় তাল তার নাচের ছন্দে ছন্দে।
বাঁকিয়ে দিয়ে হাত যখন সে নীল প্রান্তরের দিকে ধায় ;
যেন মনে হয় তখন হাজার সর্পের ফণা উড়ে যায়।
নাচিয়ে শরীর যখন সে সাঁতার দেয় ;
মন যেন বলে সোনার সুন্দর সর্প জলে ভেসে যায়।
ফুলের মালা নাচের সময় যখন তাকে জড়িয়ে রয় ,
মন বলে "দেখো", "দেখো" সর্পের প্রেম কি অপূর্ব না হয়।
ভঙ্গিতে ভঙ্গিতে রেখে যেতে চায় সে প্রমাণ ;
শত সহস্র বার মানুষ দেয় তারে তাদের প্রণাম।
যদি আজ ও জন্মাতো বিলেতে, ছুঁতো তবে আকাশ ;
পেত তবে বিশ্ব তার দেখা;
নামের ' পরে উঠত তবে সর্পের রেখা।
রেগে যখন উঠত সে ফণা তুলে ;
হয়ত একটা সর্পিল ভিডিও হতো তা হলে।
দেশে সে পেল না তার প্রতিভার দাম।
তাই সর্পিল হল "সাপের সন্তান",
ঘুচলো তার নাম।
গ্রামে কেন জন্মিল সর্পিল, শহরে কেন নয়?
হয়ত শহরে হলে মূল্য পেত সত্যি করে!
বোকা বুদ্ধিতে প্রতিভার নেই স্থান ;
চলো "শিল্পী" এ জীবন করো দান।।
অর্ধশিক্ষা
- দেবমঞ্জরী ঘোষ
পড়াশুনা কি কেউ করে নাকি?
ছাই পাশের খেলা যত সব।
কেবল মঞ্চে উঠে দুটো বক্তৃতা দিতে পারলেই;
বেঁচে যাই এই বেলা।
এতো জ্ঞানে কাজ কি? কচু!
কিন্তু, হ্যাঁ, জ্ঞান দেওয়াটা ভীষণ দরকারি।।
ওসব শিক্ষের দীক্ষে না নিয়ে;
এখন চাই রঙ্গের দীক্ষে, নেশার দিক্ষে,
বেশি শিক্ষায় হয় এক একটা বলদ;
চালাকি নেই যাদের ঘটেতে!!
না না, আমার ঠিক চালাক চাই না;
বড়ো বড়ো আস্ত গরধপ্ চাই।
আরে এখন হচ্ছে 'মুখেই কাঁপাও!'
অল্প শিক্ষা চাই ; অল্প অল্প শিক্ষেই দ্যি গ্রেট!
সেই তো চলবে এর, ওর;
তাঁবেদারি করে ছেলে মেয়ে মানুষ করা;
আর নয়তো বড়ো কিছু চুরি করে;
নামি মাস্তান হওয়া।
শিক্ষা দিয়ে কাজ নেই কোনো;
নায়ক, গায়ক, লেখক, কিছুই;
তো না, এমনকি, চাকুরী জীবীও না।
শুধু বিছানায় শুয়ে পূর্ণিমার চাঁদ;
দেখা, আর ওকে সোনার থালা ভাবা।।
ছোটোর জন্য অল্প ভালো;
বড়োর জন্যে তা হীন;
অল্পে যদি যাও মিশে;
হবে তবে বিলীন।
ওরে শিক্ষা নেই যার;
এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার;
তার নেই কোনো অধিকার।।
কন্যে
- দেবমঞ্জরী ঘোষ
ও কন্যে কলসি কাঁখে কোথায় তুই চললি রে?
ওই চেয়ে দেখ্ কেউ বুঝি তোর্ পিছু নিলো রে।
তোর্ খোঁপায় যে রাঙা পলাশ;
দোলে, সে আজ কোথায় পেলি রে?
দেখ্ ওই বৃষ্টি এলো রে!
ওই পায়ের নূপুর কি আজ ময়ূরী হয়ে বাজবে রে?
বুঝি তোর্ রাঙা কুসুম ফোঁটা;
জলে ধুয়ে গেল রে!
তোর্ খোঁপার পলাশ বুঝি লুটালো মাটিতে,
মন বাঁধবি নাকি রে এই লগনে?
ওই শোন্ বাঁশি বুঝি বাজল আজ গগনে;
হৃদয়ের সব বাঁধ বুঝি ভাঙলো এই শ্রাবণে।
ছেলেটি বুঝি এলো কাছে তোর্;
দেখ্ না চেয়ে!
ভয় কি কন্যে? ডানা দুটি মেল না আকাশে!
ওড়ে যা মধ্য গগনে।
নাচ আজ ময়ূরীর মতো;
সূচি হোক না মাটি আজ।
তোর্ ঠোঁটের ওই গাঢ় লালে;
লালের সুরে মাতুক না বাতাস,
তোর্ চোখের কাজলে না হয়;
মাতল ছেলেটা, তোর্ মাদলের তালে;
নাহয় নাচালি ওর মন।
ভয় কিরে আজ কন্যে, তোর্??
অন্দর
- দেবমঞ্জরী ঘোষ
আজ কি অন্দরের কথা শোনাব তোমাদের;
সে তো বুঝে নাহি পাই।
যে অন্দরের কথা শুনিয়াছ তোমরা,
সে অন্দরের কথা বলিতে নাহি চাই।।
কিছু অন্য অন্দরের কথা বলবো বলে;
খুললাম আজ পৃষ্ঠা।
যে অন্দরেতে কেবলই বাস করে;
এক অনন্যা পুষ্প রূপিণী।
দেখতে যদি চাও তারে,
খোল তবে জ্ঞান চক্ষু;
যদি চাও মনের মাঝেতে,
দিবে ঠাঁই তাঁরে;
তবে বুঝে নিও প্রেমের প্রথম পৃষ্ঠা।
যে পৃষ্ঠাতে আছে চিত্রিত সেই অন্দর।।
বুঝে নিও যে সত্য ধরা পড়বে;
সে সত্য চায় অত্যন্ত যত্নের ছোঁওয়া,
রেখো তারে গোপনে,
হতে দিও না নষ্ট।
জীবনের সব কিছু উজাড় করে দিও তারে;
কোরো নাকো কোনো দ্বিধা,
জেনো, সেই তোমার জীবন ভরিয়ে দেবে;
রাখবে না ক্লেশের লেশটা।।
জেনো, তার জীবনের সমস্ত ক্লেশকেও আপন করিতে হবে;
আনন্দ যে সকলেই আপন করে, কিন্তু, দুঃখকে নাহি করে,
নিজের জীবনের সাথে যখন মিলাবে তাঁরে;
হবে তাই পূর্ণ অন্দর।।
No comments:
Post a Comment