যুদ্ধ ভূমি
- রামপ্রসাদ দাস
কর্ণ কুহরে বাজে যুদ্ধের উল্লাস, বিকট দামামা..
জেগেছে শব্দাসুর, মৃত্যু দূত বিপন্ন সভ্যতার।
যুদ্ধের গৌরব গাথা ছড়ায় বিশ্বজুড়ে মত্ত ঘাতক
বিপন্ন মানুষের ভয়ার্ত চোয়াল জুড়ে বিপন্নতা
কাঠিন্য মৃত্যু ভয় আর ভয় ঘর সংসার হারাবার
বিষণ্ণ উটের মুখের ন্যায় ম্লান ছায়া নিরীহ মানুষের, নিঃস্ব মানুষ খোঁজে শিবিরের আশ্রয়
রাত্রি নিশীথে খোঁজে লাশ - ঝলসানো যুদ্ধভূমে-
যেন স্বেচ্ছা-অন্ধ গান্ধারী খোঁজে নিজস্ব শত পুত্র।
নিকষ কালো কুণ্ডলীর রাক্ষুসে থাবা ঢাকে নীলাকাশ। এখন যুদ্ধ খেলা এখন রকেট খেলা
বিধ্বস্ত অলিন্দে ঝোলে কবন্ধ কিশোরীর লাশ,
তার মাঝে অগ্নি স্রোত, ধ্বংসপুরী ভাঙা মিসাইল
তার মাঝে হামা গুঁড়ি জীবন্ত মানুষের অর্ধ দগ্ধ মানুষের, উবু হয়ে খোঁজবার নেশা পাগলামি।
হতাশার টেবিল জুড়ে একরত্তি কলম সম্ভ্রমে নত
এখন আর কলম কৃপাণ নয়, কৃপাণই বারুদ দিয়ে শান্তির ঘুম কাড়ে রোজ তামাম বিশ্বের।
কসাই এর হাতে কৃপাণ কলম এই সভ্যতার -
তাই হৃদয়ের খুব কাছে দাবাগ্নি জ্বালা যুদ্ধভূমি।
হারিয়েছি জল স্থল সবুজ আর আকাশের অধিকার হারিয়েছি সবার ভবিষ্যৎ...,
প্রকৃতির অঙ্গনে তাই শঙ্কার বারুদ ঘ্রাণ
ঘাড়ের উপর শুধু ছায়া ফেলে অশ্রু সিক্ত উষ্ট্র মুখ
নিরীহ মানুষের মুখে মানুষ ই ছুঁড়ে দেয় দুর্ভিক্ষের কালবেলা...।
দীপ্তিহীন নয়ন জুড়ে নাচে রক্ত ত্রিশূল- নাচে মৃত্যু দূত।
এখন বুঝে নাও এই কোমলতা এই সবুজ প্রান্তর সবই যুদ্ধ ভূমি যুদ্ধ বাজ পিশাচের ...।
হাত মেলে ধরো হাত, হাত খোঁজবার ছলে
বুকের উপরে ধরো শান্তি র সাদাখাম।
ইন্দ্রজাল ভূমি
- রামপ্রসাদ দাস
কেন অনন্তবার বয়ে আনছো আমায়
তোমার মিথ্যে জৌলুষের যাদু মঞ্চে, জাদুকর।
সাজিয়েছো কপোট রঙে অলৌকিক ভূমি
ঘিরেছো চারিপাশ মিথ্যে মায়াময় ছলনায়।
আমাকে ক্লাউনের মত মঞ্চজুড়ে বীভৎস সাজে
সপাটে ছুঁড়ে দিচ্ছ শূন্যতার পেঁজা তূলার মত
সৃষ্টি করছো বিস্ময় টানতে দর্শক তুষ্টি-খেলা -
যাদু বাক্সে ফেলে বিঁধে দিচ্ছ তলোয়ার ইচ্ছেমত
করে তুলছো অলৌকিক অশরীরী।
চারিপাশে ছড়ানো শুধু ইন্দ্রজাল দুর্লঙ্ঘ্য মায়া
আটখান তলোয়ার তার উপর গড়েছে শয্যা
উল্লাসে নাচাও যাদু দণ্ড মোহন হাসিতে।
আমাকে মানুষের মত মানুষ-খেলা খেলাও
কোনো দিন বাস্তব ধরণী তলে দেবেনা দাঁড়াতে
দেবেনা সোহাগ, মায়াহীন জীবনের সত্য বার্তা?
জাদুকর, তোমার মোহিনী জাদুদণ্ড সরিয়ে নাও
বার বার সম্মুখে চাইনা এ ভন্ড সম্মোহন
ঢুকিওনা চাতুর্যে ভরা জাদুবাক্সে, নয় মিথ্যাচার
তোমার জাদুক্ষেত্রে সবই অবাস্তব স্তোকবাক্য..
বাক্যমায়ায় করো ইন্দ্রজাল মস্তিষ্কে পাথর চাপাও করো বোধ হীন, বাক্যহীন জড় বস্তু।
আমাকে নিয়ে আসো দেয়ালে ঠেকানো পিঠ
অসংখ্য চপার ছুঁড়ে ছুঁড়ে গেঁথে দাও
ঘিরে ফেলো চারপাশ, কম্পিত হৃদয় আমার-
আমায় মুক্তি দাও ফিরে যাই স্বচ্ছতার সবুজ ছুঁতে - অবাস্তব যাদু মঞ্চে আর নয় জাদুকর।
পড়ে এলো বেলা
- রামপ্রসাদ দাস
বাহারি শাড়ি খানি গুটিয়ে নাও পড়ে এলো বেলা...
সুন্দরী সুদেষ্ণা, তোমার কার্নিশে বৈচিত্র্য ফুটেছে
প্রৌঢ় আলোয় দেখি পড়ন্ত বেলার বিষণ্ণতা।
তোমার শাড়ি জুড়ে বিচিত্র রামধনু রংবাহার
চটুল শাড়ি খানি গুটিয়ে নাও বিষাদের মেঘলায়
দেখি কার্নিশে র অনন্ত জুড়ে অফুরন্ত আকাশ
মেঘমালা, তৃষিত চাতকের বৃষ্টির প্রার্থনা
শুঁকি ঝিঙা ফুলের মাদকীয় সৌরভ হলুদে মেদুর।
অবসন্ন হয়ে যায় দ্বিপ্রহর অপরাহ্ন বেলা
কার্নিশে শাড়ি র জৌলুষে তুফানী ঢেউদোল
চাতুর্যে ভরা শরীর লুকিয়ে রাখা সুদেষ্ণা
আমার বেয়াকুব বাসনা কূল কিনারা হীন
ঝিঙার হলুদ চাঁটে শেষ বেলার পতঙ্গ দল
বিষাদের সুষমায় গলিয়েছি দেহ ভঙ্গুর মন
কি নিবিড় নগ্নতায় নিমেষে নিমগ্ন এখন নিরালে
সুদেষ্ণা, কেন রহস্য বুনে বিরল শাড়ি তে
আটকে রাখো বৃষ্টি র স্বপ্ন সুধা কেন এ বিকেলে
করো ম্লানতর আঁখিরদৃষ্টি মায়া?
এমনিতেই মন খারাপের মেঘ জুটেছে আকাশে
বুকে বুলডোজার সদর্পীর বীভৎস হুঙ্কার
নেই অগ্রসর আছে পশ্চাদপসরণ শুধু..।
কি জ্বালায় জ্বলছি বধূ তুমি তো জানো না।
শাড়ির স্বপ্নে এখন নিশ্চিন্ত নিরালায় তুমি
বুনেছো কি সবুজ কিছু অন্তরে শ্রাবণে?
রেখেছে কি আশালতা আলোক লতার মেলা?
তবে আজ সাঁঝে তারার রঙ সাজাও কার্নিশে
জানান দাও তোমার অনন্ত রঙ মনের হৃদয়ের।
এখন দেখছি সুদেষ্ণা শাড়ি তেও স্বপ্ন থাকে
দুঃখ সুখের নামাবলী আঁকা হয় তারও শরীরে
তার ই ঢেউ দেখি আজ তোমার সুদৃশ্য কার্নিশে।
মায়াবী আঁধার
- রামপ্রসাদ দাস
প্রকৃতির রহস্য পুরে চলে আসি....
বিষণ্ণ অন্তরাত্মা আবিষ্ট ধোঁয়াশা নয়নে...
একদিন চলে আসি মায়াবী বাসন্তীরাতে।
শুধু উদগ্রীব হয়ে দেখা দেখে যাওয়া -
আকাশে গ্রস্ত চাঁদের হ্রাস বৃদ্ধি মেঘমুক্তি।
প্রকৃতির প্রভু চাঁদ সূর্য গ্রহ উপগ্রহ বিপুল নক্ষত্র
সব মায়াবী রাতে ডাক দিয়ে যায়--
কোনো নিলাজ পূর্ণিমায় সাজায় বাউলের সাজে
গ্রস্ত গ্রস্ত করে খেলা - নীলাম্বর জুড়ে মায়াবী চাঁদ
হৃদয়ের ঠিক মাঝখানে পরিপূর্ণ দীপ্ততায়
ঝাউবন জেগে ওঠে দোলানী হাওয়ায়
ছায়া ফেলে ভঙ্গিল নদী তটে আদিভৌতিক।
অদূরে বাঁশপাতা কেঁপে কেঁপে ওঠে
মলিন আলোয় কি অলৌকিক শিহরন,
ওপারে নদীচরে ডাক দেয় সারমেয়
হাঁটে হেঁটমুন্ড পাগল নির্লিপ্ত যুধিষ্ঠির
যেন পৌঁছাবে নরক ছুঁয়ে স্বর্গদ্বারে।
তার ভাবনায় নেই কোনো দ্যূতক্রীড়া হস্তিনাপুর
পথপ্রান্তে ফেলে - আসা লাঞ্ছিতা যাজ্ঞশ্রেনী ভ্রাতাকুল ।
গাঙ - জলে ভাসমান শূন্য কলস দোলে -
মায়াবী জোছনায় ভাসে বিষাদের চাঁদনী মুখ,
তার পাশেই নিষ্পলক বিষণ্ণ দু নয়ন।
শূন্যতার ধোঁয়া ওঠে ওপাশে চিতায়।
গ্রস্ত শশাঙ্ক ছায়ায় শুধু মায়া আর মায়ার বিচ্ছুরণ.....।
মৃত্যু রহস্য ময় এখন নদী চরে ঝাউবনে।
চিতার আগুনে এখন দীপ্যমান শববাহকেরা।
হঠাৎই আঁধারে ডেকে ওঠে সারমেয়
রাতের রহস্য পাখি করে ভয়ের আর্তনাদ।
সম্বিত ফিরে আসে, ত্রিযামার রহস্য লিপি
এই অনন্ত নদী জলে চিরদিন চিরবহমান।
এখন কি উপেক্ষণীয় আসক্তি তৃষাগ্নী জ্বালা
হৃদয়ের মাঝখানে অথবা নদীচরে জেগে থাকা ঝাউবনে?
জীবনকে ভালোবাসা
- রামপ্রসাদ দাস
এত মিথ্যা স্বপ্নে টেনে ভুলে জীবনের গান
ভুল ছন্দে বেঁধে সব তার তরঙ্গ জীবন বীণার
ভুলে স্নেহ উদ্বেল মাতৃ হৃদয় পিতৃবক্ষপট---
ডুবো জাহাজের মত খুঁজিস কালো মৃত্যুর তলদেশ.....
একরত্তি বুকে জমাস কালকূট অন্ধকার,
বিষাদের ভুষো কালি মাখিস মুখচন্দায়।
কপোট চিন্তায় জ্বেলে নিস চিতার উল্লাস
কেন বারবার প্রতিবার বীভৎস মৃত্যু দিয়ে
লুটপাট করে নিস সব?
কেন লুকাস এত অশ্রু জল গোপন গহ্বরে
বিশাল বিমুখ করিস স্নিগ্ধ ধরাতল?
আয় উজ্জ্বল অমল আয় আঠারোর কুঁড়ি...
তোর জন্য পেতেছি বিস্তীর্ণ স্নিগ্ধ বক্ষতল--
খুলেছি আকাশ মুক্ত স্বপ্নতলে মুক্ত চেতনার
জীবন মাধুর্যে ঘেরা অতলান্ত আকাশ।
বুঝে নে--কিছু নয় সামান্য বিফলতা কিছু নয়
প্রেম হীন নয় শব্দময় কাব্যময় বিপুলা ধরণী
দোপাটি ফুলের মত সাফল্য ফুটে ওঠে রৌদ্রময়।
বিশ্বের স্বর্ণ কপাট তুমিও খুলতে পারো অনায়াসে....
জীবনের উল্টোপথ ভুলে এসো ঋজু পথে
হতাশার সিঁড়ি ভেঙে এসো কীর্তি মান হতে
জীবন প্রত্যুষের ফুরিয়ে যাবার বীভৎসতা
সুনামীর মত শূন্যতার নাভিশ্বাস দিয়ে যায় রোজ।
জীবনের পানে জীবনের পথে চেয়ে থাকা।
No comments:
Post a Comment