ফিরে দেখা – বিষ্ণুপুর মেলা (১৯৮৮-২০২১)
- জয়ন্ত কুমার সরকার
বিষ্ণুপুর ঐতিহাসিক প্রাচীন শহর। এখানকার আঞ্চলিক মল্ল-রাজতন্ত্রের আনুকূল্যে এ শহর গড়ে ওঠার কারণে বিষ্ণুপুরে জনসাধারণ ও রাজাদের সম্পর্ক ভিন্ন ধরণের ছিল। দিল্লীর সম্রাটের আনুকূল্যে বিষ্ণুপুরের শাসনপর্ব চলত। রাজতন্ত্রের প্রভাবে সঙ্গীত সাংস্কৃতি, কাঁসা-পিতল-শঙ্খ-রেশম—লণ্ঠন প্রভৃতি কুটিরশিল্পের বিকাশ ঘটে। চৈতন্য শিষ্য শ্রীনিবাস আচার্যের আবির্ভাবে রাজতন্ত্রের শাসন, নির্যাতন, শোষণ, ব্রাম্ভন্য ধর্মের কর্কশতা থেকে মানুষকে মুক্ত করেছিল। বৈষ্ণব ধর্মের প্রভাবে মল্লরাজাদের আনুকূল্যে গড়ে ওঠে অসংখ্য মন্দির। বিষ্ণুপুরে বর্গী আক্রমণকে প্রতিহত করা, রাজবাড়ী রক্ষা, কর্মকারদের দিয়ে কামান, বন্দুক তৈরী করানো, রাজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ বিষ্ণুপুরের প্রভাব ও প্রচার ক্রমশ: বেড়ে চলে। ইতিমধ্যে ইংরেজদের চাপানো অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের প্রতিবাদে বিদ্রোহ হয়। লুঠ হয় বিষ্ণুপুরের সম্পদ ও সংস্কৃতি খান-খান হয়। বিষ্ণুপুরের এসব ঘটনাবলী পর্যটকদের কাছে, সাধারণ মানুষের আগ্রহ ও কৌতূহলের বিষয়। এ পরিবেশ এখনো বর্তমান। পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয় বামফ্রন্ট সরকারের আমলে বিষ্ণুপুরের ইতিহাস-হস্তশিল্প-বিষ্ণুপুর ঘরানার সঙ্গীত-সংস্কৃতির ইতিবৃত্তকে পটভূমি করে জানা অজানা মানুষের কাছে বহমান রোমাঞ্চকে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে রাজদরবার-পাথরদরজা-রাধালালজিউ-জোড়বাংলার উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে বিষ্ণুপুর মেলা শুরু হয় ১৯৮৮ সালে। বিষ্ণুপুর মেলার উত্তাপ নিতে মেলার দিনগুলিতে এখানকার মানুষের মধ্যে যে উন্মাদনার ঢেউ দেখা যায়, তা অভাবনীয় । কিছু লোকের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ও পশ্চাদপদতা স্বত্বেও বিষ্ণুপুর মেলা সংকীর্ণতার দৃষ্টিকে মানুষের মিলন ক্ষেত্রে পরিণত করে যা এখনকার দিনে অপরিহার্য। বিষ্ণুপুর মেলাটা মানুষের জাগরণ ও প্রগতির বিচরণভূমি। ১৯৮৮ তে শুরু হয়ে দীর্ঘ ৩৩ বছর পার হয়ে ২০২১ সালে ৩৪ বছরে পদার্পণ করেছে বিষ্ণুপুর মেলা। পার হয়ে যাওয়া ৩৩ বছরের বিষ্ণুপর মেলাকে ফিরে দেখতে চেষ্টা করছি, স্মৃতির সরণী বেয়ে তুলে আনতে চেষ্টা করছি ভাল লাগা সেইসব স্মরণীয় মুহূর্তগুলোকে।
১৯৮৮ সাল প্রথম বিষ্ণুপুর মেলা শুরু হয় বিষ্ণুপুর উৎসব নামে, রাজদরবার-রাধালালজীউ-জোড়বাংলা মন্দির প্রাঙ্গণকে ঘিরে ২৩-২৭শে ডিসেম্বর ৫ দিন ব্যাপী। তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের ক্ষুদ্র-কুটির শিল্প দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও অধ্যাপক অচিন্ত্যকৃষ্ণ রায়ের পৃষ্ঠপোষকতায়, তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক, জেনারেল ম্যানেজার, ডি.আই.সি., বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর ও সোনামুখীর চেয়ারম্যান, অধ্যাপক পার্থ দে, ড: সলিল ঘোষ, মিহির রায়, উৎপল চক্রবর্তী, চিত্তরঞ্জন দাশগুপ্ত সহ বিষ্ণুপুরের বিদগ্ধ ও প্রাজ্ঞ ব্যক্তি, সঙ্গীত-সাহিত্য-সংস্কৃতি জগতের অগ্রণী কিছু মানুষজন কে সঙ্গে করে বাঁকুড়া জেলা সভাধিপতিকে সভাপতি, জেলা শাসক,বাঁকুড়াকে কার্যকরী সভাপতি এবং বিষ্ণুপুরের মহকুমা শাসককে সদস্য সচিব নির্বাচিত করে প্রথম বিষ্ণুপুর উৎসব কমিটি গঠিত হয়। শুরু হয় দফায়-দফায় সভা, প্রস্তুতি শুরু হয় মহকুমা শাসকের অফিসে। আলোড়ন পড়ে যায় গোটা বিষ্ণুপুর তথা সারা বাঁকুড়া জেলায়। ১৯৮৮ সালে, প্রথম বিষ্ণুপুর উৎসব শুরুর বছরেই মহকুমা শাসকের অফিস ট্রেজারি ভবন থেকে নবনির্মিত প্রশাসনিক ভবনে স্থানান্তরিত হয় তৎকালীন মহকুমা শাসক অরুণ মিশ্র, আই.এ.এস. মহোদয়ের তত্ত্বাবধানে। প্রথম বিষ্ণুপুর মেলার অর্থ আনুকূল্য পাওয়ার জন্য ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দপ্তর ও পর্যটন বিভাগ সহ কয়েকটি সরকারী দপ্তরে যোগাযোগ করা হয়। স্থানীয়ভাবেও চাঁদা তোলার ব্যবস্থা হয়। গঠিত হয় অনেকগুলি উপসমিতি। দায়িত্বে থাকেন বিভিন্ন ব্যক্তি ও সরকারী আধিকারিকগণ। দুটি সাংস্কৃতিক মঞ্চ, যদুভট্ট ও রামানন্দ মঞ্চ। অস্থায়ী কাঠামো যদুভট্ট মঞ্চ নির্মিত হয় রাধালালজিউ মন্দিরের পিছনের মাঠে, রামানন্দ মঞ্চ নির্মিত হয় জোড়বাংলা মন্দির চত্বরে। সাংস্কৃতির মঞ্চে বিষ্ণুপুর ঘরানার শিল্পীবৃন্দ, স্থানীয় শিল্পী ও কলকাতার নামকরা শিল্পীদের দিয়ে জমকালো অনুষ্ঠান হয়।
১৯৮৯ সাল, দ্বিতীয় বর্ষ বিষ্ণুপুর উৎসব, ২৩-২৭ শে ডিসেম্বর, রাজদরবার-জোড়বাংলা মন্দির চত্বরে। শুরু থেকে থেকেই উন্মাদনা। উৎসবে সহযোগিতায় ছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন বিভাগ, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প বিভাগ,তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, পূর্বাঞ্চলীয় সংস্কৃতি কেন্দ্র। বিষ্ণুপুর ঘরানার শিল্পী ড: দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় সহ বিভিন্ন শিল্পী, কলকাতার নামকরা শিল্পী,আসাম, মনিপুরের আঞ্চলিক লোকনৃত্য পরিবেশিত হয় উৎসবের সাংস্কৃতিক মঞ্চে।
১৯৯০ সাল, তৃতীয় বর্ষ বিষ্ণুপুর উৎসব ছিল ২৩-২৮শে ডিসেম্বর ছয় দিনের। রাজদরবার-জোড়বাংলা মন্দির প্রাঙ্গণে উৎসব উদ্বোধন করেন ড: পবিত্র সরকার, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উৎসব কমিটির সভাপতি ছিলেন সুভাস চক্রবর্তী, মন্ত্রী, যুবকল্যাণ ও ক্রীড়া দপ্তর, কার্যকরী সভাপতি বাঁকুড়ার জেলাশাসক শুভ্রাংশু ঘোষ, সদস্য সচিব ভবানীপ্রসাদ বরাট, মহকুমা শাসক মহোদয়। সাংস্কৃতিক মঞ্চে বিষ্ণুপুর ঘরানার শিল্পী গৌরী বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবব্রত সিংহঠাকুর প্রমুখ; ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্নেহধন্যা সুচিত্রা মিত্র, ড: ভূপেন হাজারিকা, অমর পাল, দ্বিজেন বসু, সুরসম্রাট বি. বালসারা, ওস্তাদ আমজাদ আলি খাঁ, সহ কলকাতার নামী শিল্পীবৃন্দ ও নানান জেলার নামী লোকশিল্পীবৃন্দ ।
১৯৯১ সাল, চতুর্থ বর্ষ ২৩-২৭শে ডিসেম্বর,বিষ্ণুপুর উৎসবের উদ্বোধক ছিলেন তৎকালীন ভূমি ও ভূমি রাজস্ব মন্ত্রী বিনয় কৃষ্ণ চৌধুরী মহোদয়, সভাপতি জ্ঞানশংকর মিত্র মহোদয়, সভাধিপতি,বাঁকুড়া জেলা পরিষদ, কার্যকরী সভাপতি জেলাশাসক শুভ্রাংশু ঘোষ মহোদয়, সদস্য সচিব ভবানীপ্রসাদ বরাট, মহকুমা শাসক মহোদয়। উৎসব প্রাঙ্গণ সঙ্গীত ও নৃত্যে মুখরিত করেছিলেন চারণকবি মুকুন্দদাস, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, অধীর বাগচী, হৈমন্তী শুক্লা, উৎপলেন্দু চৌধুরী, গীতা চৌধুরী, ড: অনুপ ঘোষাল, সৈকত মিত্র, ইন্দ্রানী সেন, বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী যামিনী কৃষ্ণমূর্তি, ক্যালকাটা কয়ার নিয়ে অনুষ্ঠান করেছেন রুমা গুহঠাকুরতা প্রমুখ।
১৯৯২ সাল, পঞ্চম বর্ষ বিষ্ণুপুর উৎসব উদ্বোধন করেছিলেন যুবকল্যাণ ও ক্রীড়ামন্ত্রী সুভাস চক্রবর্তী। সভাপতিত্ব করেছিলেন সভাধিপতি জ্ঞানশংকর মিত্র, কার্যকরী সভাপতি ছিলেন জেলাশাসক শ্রী তপন কুমার বর্মণ,আই.এ.এস., সদস্য সচিব ছিলেন মহকুমা শাসক দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় মহোদয়। ২৫শে ডিসেম্বর উৎসব পরিদর্শনে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। সাংস্কৃতিক মঞ্চ আলোকিত করেছিলেন মাধুরী চট্টোপাধ্যায়,ড: ভূপেন হাজারিকা, ভাওয়াইয়া সুখবিলাষ ভার্মা, সৈকত মিত্র, নাগাল্যাণ্ডের লোকনৃত্য, কুচবিহারের লোকনৃত্য, ওড়িশি নৃত্য।
১৯৯৩ সাল, ষষ্ঠ বর্ষ বিষ্ণুপুর মেলার উদ্বোধক ছিলেন তৎকালীন বিধানসভার অধ্যক্ষ হাসিম আবদুল হালিম, সভাপতিত্ব করেছিলেন সভাধিপতি জ্ঞানশংকর মিত্র, কার্যকরী সভাপতি জেলাশাসক তপন কুমার বর্মণ, আই.এ.এস. সদস্য সচিব ছিলেন মহকুমা শাসক দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় মহোদয়। মেলার সাংস্কৃতিক মঞ্চ আলোকিত করেছিলেন পন্ডিত অজয় চক্রবর্তী, ধীরেন বসু, রামকুমার চট্টোপাধ্যায়, ড: শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়, স্বাগতালক্ষী দাশগুপ্ত,ক্যালকাটা কয়ারের রুমা গুহঠাকুরতা, ছিল পুরুলিয়া ছন্দম, ছৌনৃত্য সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তের লোকশিল্পীবৃন্দ।
১৯৯৪ সাল, সপ্তম বর্ষ বিষ্ণুপুর মেলার উদ্বোধক ছিলেন কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র প্রশান্ত চট্টোপাধ্যায়, সভাপতিত্ব করেছিলেন জ্ঞানশংকর মিত্র, সভাধিপতি, কার্যকরী সভাপতি জেলা শাসক রীণা বেঙ্কটরমন, আই.এ.এস.মহোদয়া, সদস্যসচিব মহকুমা শাসক অশোক কুমার মাইতি মহোদয়। এ বছর থেকে জেলা শাসক রীণা বেঙ্কটরমণের উদ্যোগে সমগ্র মেলা প্রাঙ্গণ করোগেট গিয়ে ঘিরে ফেলা হয়, শুরু হয় ২ টাকা টিকিটের প্রবেশ মূল্য। এ বছর সাংস্কৃতিক মঞ্চে মাতিয়েছিলেন বনশ্রী সেনগুপ্ত, শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়, শম্পা কুণ্ডু, আবৃত্তিতে বানী ঠাকুর, লোকশিল্পী অমর পাল সহ পূর্বাঞ্চলীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হতে আসামের বিহু সহ বিভিন্ন বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান।
১৯৯৫ সাল, অষ্টম বর্ষ বিষ্ণুপুর মেলার উদ্বোধক ছিলেন মন্ত্রী কান্তি বিশ্বাস, সভাপতিত্ব করেছিলেন সভাধিপতি জ্ঞানশংকর মিত্র, কার্যকরী সভাপতি জেলাশাসক পাহাড়ী সান্যাল, সদস্যসচিব মহকুমা শাসক অশোক কুমার মাইতি মহোদয়। সাংস্কৃতিক মঞ্চ আলোকিত করেছিলেন শিলাজিৎ, পৌষালী মুখোপাধ্যায়, সুবীর সেন, শ্রুতি নাটকে জগন্নাথ বসু-উর্মিমালা বসু, ছিল ওড়িশি-কত্থক-কথাকলি সহ ভিন্ন নানা অনুষ্ঠান।
১৯৯৬ সালের নবম বর্ষ বিষ্ণুপুর মেলার উদ্বোধক ছিলেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত শঙ্খশিল্পী অশ্বিনী নন্দী, সভাপতিত্ব করেছিলেন জ্ঞানশংকর মিত্র, কার্যকরী সভাপতি জেলাশাসক রিনচেন টেম্পো, সদস্যসচিব মহকুমা শাসক নন্দিনী চক্রবর্তী,আই.এ.এস. মহোদয়া। সাংস্কৃতিক মঞ্চে এসেছিলেন সাহিত্যিক শক্তিপদ রাজগুরু, সঙ্গীতানুষ্ঠান করেছিলেন আরতি মুখোপাধ্যায়, ওস্তাদ আশীষ খান, সৈকত মিত্র, লোপামুদ্রা মিত্র, উৎপলেন্দু চৌধুরী-উত্তরা চৌধুরী, ছিল মমতা শংকরের ব্যালে ট্রুপ, ছিল পুতুল নাচ, ছৌনৃত্য প্রভৃতি মনোমুগ্ধকর অনুষ্ঠান।
১৯৯৭ সালে দশম বর্ষ বিষ্ণুপুর মেলার উদ্বোধক ছিলেন পর্যটন মন্ত্রী মানবেন্দ্র মুখার্জী, সভাপতি জ্ঞানশংকর মিত্র, কার্যকরী সভাপতি জেলাশাসক রিনচেন টেম্পো, সদস্য সচিব মহকুমা শাসক আবু আখতার সিদ্দিকী মহোদয়। সাংস্কৃতিক মঞ্চে এসেছিলেন সুখবিলাস ভার্মা, সোনাল মান সিং, শিবাজী চট্টোপাধ্যায়, জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, প্রহ্লাদ ব্রহ্মচারী, জগন্নাথ বসু-উর্মিমালা বসু প্রমুখ । ছিল ইণ্ডিয়ান পাপেট থিয়েটারের পুতুলনাচ,ইণ্ডিয়ান ব্যালে ও মাইম ট্রুপ, যাত্রানুষ্ঠান সহ বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান।
১৯৯৮ সালের একাদশ বর্ষ বিষ্ণুপুর মেলার উদ্বোধক ছিলেন সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্যা বিষ্ণুপুর ঘরাণার শিল্পী শ্রীমতী বিন্ধ্যবাসিনী দেবী, সভাপতি জ্ঞানশংকর মিত্র, কার্যকরী সভাপতি জেলাশাসক রিনচেন টেম্পো, সদস্য সচিব মহকুমা শাসক আবু আখতার সিদ্দিকী মহোদয়। সাংস্কৃতিক মঞ্চে এসেছিলেন আবৃত্তিকার পার্থ ঘোষ-গৌরী ঘোষ, সঙ্গীতশিল্পী শম্পা কুণ্ডু, ধীরেণ বসু, স্বপন বসু, লোপামুদ্রা মিত্র, অগ্নিভ বন্দ্যোপাধ্যায়, পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী, ছিল লোকরঞ্জন শাখা কর্তৃক নাটক দিল্লী চলো, মালদহের পুতুলনাচ সহ নানান বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান।
১৯৯৯ সালের দ্বাদশ বর্ষ বিষ্ণুপুর মেলার উদ্বোধক ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন লোকশিল্পী সনাতনদাস বাউল,সভাপতি শ্রীমতী তরুবালা বিশ্বাস, কার্যকরী সভাপতি জেলাশাসক দিলীপ চৌধুরী,সদস্য সচিব মহকুমা শাসক আবু আখতার সিদ্দিকী মহোদয় । সাংস্কৃতিক মঞ্চে এসেছিলেন বনশ্রী সেনগুপ্ত, অজিত পাণ্ডে, সুভাষ চক্রবর্তী, বাংলাদেশের আবৃত্তিকার সাহাজাত হোসেন, ছিল ঝুমুর, কাঠিনাচ, ঝাপান সহ সুদুর বালুরঘাটের নাট্যানুষ্ঠান।
২০০০ সালের ত্রয়োদশ বর্ষ বিষ্ণুপুর মেলার সভাপতি শ্রীমতী তরুবালা বিশ্বাস, কার্যকরী সভাপতি জেলাশাসক দিলীপ চৌধুরী, সদস্য সচিব মহকুমা শাসক কানাইলাল মাইতি মহোদয়। সাংস্কৃতিক মঞ্চে আসর পূর্বাঞ্চলীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র থেকে আসা আসামের বিহু, মনিপুরী নৃত্য ও কলকাতার এক ঝাঁক খ্যাতনামা শিল্পী।
২০০১ সালের চতুর্দশ বর্ষ বিষ্ণুপুর মেলার আয়োজন হয়েছিল নির্ধারিত রাজদরবার-জোড়বাংলা মন্দির প্রাঙ্গণে । সভাপতি শ্রীমতী তরুবালা বিশ্বাস, সভাধিপতি, কার্যকরী সভাপতি জেলাশাসক জয়দেব দাশগুপ্ত ,সদস্য সচিব মহকুমা শাসক কানাইলাল মাইতি মহোদয়।
২০০২ সালের পঞ্চদশ বর্ষ বিষ্ণুপুর মেলার উদ্বোধক ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা: সূযকান্ত মিশ্র, সভাপতি শ্রীমতী তরুবালা বিশ্বাস,সভাধিপতি, কার্যকরী সভাপতি জেলাশাসক জি.এ.খান, সদস্য সচিব মহকুমা শাসক কৌশিক হালদার মহোদয়। মেলার মঞ্চ ছিল চারটি, যদুভট্ট, রামানন্দ, গোপেশ্বর ও লোকমঞ্চ। মঞ্চ মাতিয়েছিলেন পল্লব কীর্তনিয়া, মৈত্রেয়ী মজুমদার, হৈমন্তী শুক্লা, ছিল বর্ধমানের রায়বেঁশে, উত্তর ২৪-পরগনার বাঘনাচ, অভিনেত্রী শতাব্দী রায়ের ডান্সট্রুপ, মুর্শিদাবাদের রণপা, বীণা দাশগুপ্তের যাত্রাপালা সহ বিভিন্ন মনোমুগ্ধকর অনুষ্ঠান।
২০০৩ সালের ষোড়শ বর্ষ বিষ্ণুপুর মেলার উদ্বোধক ছিলেন কিংবদন্তী অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সভাপতি শ্রীমতী পূর্ণিমা বাগ্দী, সভাধিপতি, কার্যকরী সভাপতি জেলাশাসক জি.এ.খান, সদস্য সচিব মহকুমা শাসক কৌশিক হালদার মহোদয়। মেলার মঞ্চ আলোকিত করেছিলেন কলকাতার খ্যাতনামা সঙ্গীত ও নৃত্যশিল্পীবৃন্দ, ছিল পূ্র্বাঞ্চলীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মনমাতানো বিহু, মনিপুরী নৃত্যশৈলী সহ বিভিন্ন জেলার মনমাতানো অনুষ্ঠান ।
২০০৪ সালের সপ্তদশ বর্ষ বিষ্ণুপুর মেলার সভাপতি শ্রীমতী পূর্ণিমা বাগ্দী, সভাধিপতি, কার্যকরী সভাপতি জেলাশাসক শ্রী প্রভাত কুমার মিশ্র ,সদস্য সচিব মহকুমা শাসক শ্রীমতী ইন্দ্রানী সাহা মহোদয়া। মেলার মঞ্চ আলোকিত করেছিলেন কলকাতার খ্যাতনামা সঙ্গীত ও নৃত্যশিল্পীবৃন্দ, ছিল পূ্র্বাঞ্চলীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মনমাতানো বিহু,মনিপুরী নৃত্যশৈলী সহ বিভিন্ন জেলার মনমাতানো অনুষ্ঠান।
২০০৫ সালের অষ্টাদশ বর্ষ বিষ্ণুপুর মেলার উদ্বোধক ছিলেন মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য্য, সভাপতি শ্রীমতী পূর্ণিমা বাগ্দী, সভাধিপতি, কার্যকরী সভাপতি জেলাশাসক শ্রী প্রভাত কুমার মিশ্র,আই.এ.এস, সদস্য সচিব মহকুমা শাসক সমর চন্দ্র ঘোষ মহোদয়। মেলার সাংস্কৃতিক মঞ্চে সঙ্গীতে ছিলেন শুভমিতা, রূপঙ্কর বাগচী, বাঁশীতে চেতন যোশী নৃত্যে ক্যালকাটা কয়ার, ছিল পূ্র্বাঞ্চলীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মনমাতানো আসামের বিহু,মনিপুরী নৃত্য সহ বিভিন্ন জেলার বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান।
২০০৬ সালের উনবিংশ বর্ষ বিষ্ণুপুর মেলার সভাপতি শ্রীমতী পূর্ণিমা বাগ্দী, সভাধিপতি, কার্যকরী সভাপতি জেলাশাসক শ্রী সুরেন্দ্র গুপ্তা ,সদস্য সচিব মহকুমা শাসক অজয় কুমার ঘোষ মহোদয়। মেলার মঞ্চ আলোকিত করেছিলেন কলকাতার খ্যাতনামা সঙ্গীত ও নৃত্যশিল্পীবৃন্দ, ছিল পূ্র্বাঞ্চলীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মনমাতানো বিহু,মনিপুরী নৃত্য ও বিহারের লোকনৃত্য সহ বিভিন্ন জেলার বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান।
২০০৭ সালের বিংশতি বিষ্ণুপুর মেলার বিষ্ণুপুর বাইপাস রাস্তার পাশে শ্রীনিবাস আচার্য মন্দির সংলগ্ন প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। উদ্বোধক ছিলেন লালন পুরস্কার প্রাপ্ত ঝুমুর শিল্পী শলাবৎ মাহাতো, সভাপতি শ্রীমতী পূর্ণিমা বাগ্দী, সভাধিপতি, কার্যকরী সভাপতি জেলাশাসক শ্রী সুরেন্দ্র গুপ্তা ,সদস্য সচিব মহকুমা শাসক অজয় কুমার ঘোষ মহোদয়। মেলার মঞ্চ আলোকিত করেছিলেন কলকাতার খ্যাতনামা সঙ্গীত ও নৃত্যশিল্পীবৃন্দ, ছিল পূ্র্বাঞ্চলীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মনমাতানো বিহু,মনিপুরী নৃত্য ও বিহারের লোকনৃত্য সহ বিভিন্ন জেলার বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান।
২০০৮ সালের ২১-তম বিষ্ণুপুর মেলার আয়োজন হয়েছিল ২৩-২৭ শে ডিসেম্বর, বাইপাস রাস্তার পাশে শ্রীনিবাস আচার্য মন্দির সংলগ্ন প্রাঙ্গণে। সভাপতিত্ব করেন পার্থসারথী মজুমদার, সভাধিপতি, কার্যকরী সভাপতি জেলাশাসক সুন্দর মজুমদার, সদস্য সচিব মহকুমা শাসক দীপঙ্কর মণ্ডল মহোদয়। মেলার মঞ্চ আলোকিত করেছিলেন কলকাতা সহ পূ্র্বাঞ্চলীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মনমাতানো বিহু, মনিপুরী নৃত্য ও বিহারের লোকনৃত্য সহ বিভিন্ন জেলার বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান। ছিল ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সুসজ্জিত ফটো গ্যালারী ও স্টল।
২০০৯ সালের ২২-তম বিষ্ণুপুর মেলার আয়োজন তুড়কী আশ্রম সংলগ্ন প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের উন্মুক্ত প্রান্তরে। সভাপতিত্ব করেন পার্থসারথী মজুমদার, সভাধিপতি, কার্যকরী সভাপতি জেলাশাসক মহ: গোলাম আলি আনসারি, সদস্য সচিব মহকুমা শাসক দীপঙ্কর মণ্ডল মহোদয়। এবছরই মেলা কমিটি নিবন্ধীকৃত করেন মহকুমা শাসক দীপঙ্কর মণ্ডল। কলকাতার খ্যাতনামা সঙ্গীত ও নৃত্যশিল্পীবৃন্দ, পূ্র্বাঞ্চলীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মনমাতানো বিহু, মনিপুরী নৃত্য, কত্থক সহ বিভিন্ন জেলার বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান মেলার মঞ্চ মাতিয়ে রেখেছিল। এবছরের ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সুসজ্জিত ও বর্নাঢ্য ফটো গ্যালারী দর্শকদের বিস্মিত করেছিল।
২০১০ সালের ২৩-তম বিষ্ণুপুর মেলার আয়োজন একই জায়গা, তুড়কী আশ্রম সংলগ্ন প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের উন্মুক্ত প্রান্তরে। উদ্বোধক ছিলেন তথ্য ও সংস্কৃতির দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী সৌমেন্দ্রনাথ বেরা মহোদয়। সভাপতি ছিলেন পার্থসারথী মজুমদার, সভাধিপতি, কার্যকরী সভাপতি ছিলেন জেলাশাসক মহ: গোলাম আলি আনসারি ও সদস্য সচিব মহকুমা শাসক সুশান্ত চক্রবর্তী মহোদয়। কলকাতার খ্যাতনামা সঙ্গীত ও নৃত্যশিল্পীবৃন্দ,পূ্র্বাঞ্চলীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মনমাতানো বিহু, মনিপুরী নৃত্য সহ বিভিন্ন জেলার বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান মেলার মঞ্চ আলোকিত করেছিল। মঞ্চের সঞ্চালক ছিলেন আকাশবানীর ঘোষক তরুণ চক্রবর্তী।
২০১১ সালের ২৪-তম বিষ্ণুপুর মেলা পুনরায় স্থানান্তরিত হয়। এবছরই পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হন। নতুন করে মেলা কমিটি গঠিত হয়। বিষ্ণুপুরের মানুষের বহুদিনের স্বপ্ন, শহরের মাঝে বিষ্ণুপুর হাইস্কুল ও কে.জি. কলেজের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলা উদ্বোধন করেন মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। কার্যকরী সভাপতি জেলাশাসক বিজয় ভারতী,আই.এ.এস. মহোদয়, সদস্য সচিব মহকুমা শাসক অদীপ কুমার রায় মহোদয়। মুম্বাই হিন্দী চলচ্চিত্র অভিনেতা গোবিন্দা সহ কলকাতার খ্যাতনামা সঙ্গীত ও নৃত্যশিল্পীবৃন্দ ও বিভিন্ন জেলার বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান মেলার মঞ্চে অনুষ্ঠান করেন ।
২০১২ সালের ২৫ তম বিষ্ণুপুর মেলার মঞ্চে যৌথভাবে প্রদীপ প্রজ্বলিত করে মেলা উদ্বোধন করেন মন্ত্রী নুরে আলম চৌধুরী, মন্ত্রী রচপাল সিং, মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। কার্যকরী সভাপতি জেলাশাসক বিজয় ভারতী ,সদস্য সচিব মহকুমা শাসক অদীপ কুমার রায় মহোদয়। সাংস্কৃতিক মঞ্চ আলোকিত করেন প্রখ্যাত সুরকার ও সঙ্গীত শিল্পী বাপী লাহিড়ী, বিনোদ রাঠোর, অভিনেত্রী রবিনা ট্যাণ্ডন, পল্লব কীর্তনীয়া, শিবাজী চট্টোপাধ্যায়, হাসির রাজা উত্তম দাস, ড: অনুপ ঘোষাল, অমিতকুমার, লোপামুদ্রা মিত্র, রিমঝিম গুপ্ত,ছিল শ্রুতিনাটক,পুতুলনাচ সহ আরও জমকালো অনুষ্ঠান।
২০১৩ সালের ২৬-তম বিষ্ণুপুর মেলা উদ্বোধন করেন মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়,মন্ত্রী নুরে আলম চৌধুরী, মন্ত্রী রচপাল সিং প্রমুখ। কার্যকরী সভাপতি ছিলেন জেলাশাসক বিজয় ভারতী,আই.এ.এস.মহোদয় ,সদস্য সচিব ছিলেন মহকুমা শাসক পলাশ সেনগুপ্ত মহোদয়। সাংস্কৃতিক মঞ্চ আলোকিত করেন কলকাতা ও মুম্বাইয়ের এক ঝাঁক শিল্পী।
২০১৪ সালের ২৭-তম বিষ্ণুপুর মেলা যৌথভাবে উদ্বোধন করেছিলেন মন্ত্রী শংকর চক্রবর্তী, মন্ত্রী রচপাল সিং ও মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো, সভাপতিত্ব করেন বস্ত্র বিভাগের মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, কার্যকরী সভাপতি ছিলেন জেলাশাসক বিজয় ভারতী, আই.এ.এস. মহোদয়, সদস্য সচিব ছিলেন মহকুমা শাসক পলাশ সেনগুপ্ত মহোদয়। মেলার মঞ্চ আলোকিত করেছিলেন কলকাতার খ্যাতনামা সঙ্গীত ও নৃত্যশিল্পীবৃন্দ, ছিল পূ্র্বাঞ্চলীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মনমাতানো বিহু, মনিপুরী নৃত্য ও বিহারের লোকনৃত্য সহ বিভিন্ন জেলার বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান।
২০১৫ সালের ২৮-তম বিষ্ণুপুর মেলার উদ্বোধন করেছিলেন পূর্তমন্ত্রী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, ড: সুকুমার হাঁসদা, শংকর চক্রবর্তী, ড: সৌমেন মহাপাত্র, শান্তিরাম মাহাতো। সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, কার্যকরী সভাপতি ছিলেন জেলাশাসক শ্রীমতী মৌমিতা গোদারা, আই.এ.এস. মহোদয়া, সদস্য সচিব ছিলেন মহকুমা শাসক পার্থ আচার্য মহোদয়। সাংস্কৃতিক মঞ্চ আলোকিত করেছিলেন বাংলা সিনেমার নায়ক প্রসেনজিৎ, দিদি নং-১ খ্যাত রচনা ব্যানার্জী, সুদূর মুম্বাই থেকে সঙ্গীত শিল্পী উদিত নারায়ন, জুবিন গর্গ ও কলকাতার খ্যাতনামা শিল্পীবৃন্দ ও যাত্রাপালা-তরণীসেন বধ।
২০১৬ সালের ২৯-তম বিষ্ণুপুর মেলার সভাপতিত্ব করেন শ্রী অরূপ চক্রবর্তী, সভাধিপতি, কার্যকরী সভাপতি ছিলেন জেলাশাসক শ্রীমতী মৌমিতা গোদারা, আই.এ.এস. মহোদয়া, সদস্য সচিব ছিলেন মহকুমা শাসক মিস ময়ুরী ভাসু, আই.এ.এস. মহোদয়া। মেলার মঞ্চ আলোকিত করেছিলেন সুদূর মুম্বাই থেকে সঙ্গীত শিল্পী কুমার শানু, শান, অনুরাধা পাড়োয়াল, বাংলার সৌম্য চক্রবর্তী, অন্বেষা, লোকশিল্পী সুভাস চক্রবর্তী, অভিনেত্রী শতাব্দী রায়, রাইমা সেন, বিয়া সেন, মুনমুন সেন, ছিল গৌড়ীয় নৃত্য প্রমুখ সঙ্গীত নৃত্যের অনুষ্ঠান।
২০১৭ সালের ৩০-তম বিষ্ণুপুর মেলার সভাপতিত্ব করেন শ্রী অরূপ চক্রবর্তী, সভাধিপতি, কার্যকরী সভাপতি ছিলেন জেলাশাসক শ্রীমতী মৌমিতা গোদারা,আই.এ.এস. মহোদয়া, সদস্য সচিব ছিলেন মহকুমা শাসক মিস ময়ুরী ভাসু, আই.এ.এস.মহোদয়া। সাংস্কৃতিক মঞ্চ আলোকিত করেন কলকাতার নামকরা সঙ্গীত ও নৃত্য শিল্পীবৃন্দ ও জেলার লোকসঙ্গীত ও মনোমুগ্ধকর অনুষ্ঠান।
২০১৮ সালের ৩১-তম বিষ্ণুপুর মেলার উদ্বোধন করেন পুরাতত্ত্ববিদ চিত্তরঞ্জন দাশগুপ্ত, সভাপতিত্ব করেন শ্রী মুত্যুঞ্জয় মুর্মু, সভাধিপতি, কার্যকরী সভাপতি ছিলেন জেলাশাসক ডা: উমাশংকর এস,আই.এ.এস. মহোদয়, সদস্য সচিব ছিলেন মহকুমা শাসক মানস মণ্ডল মহোদয়। সেবার মেলা স্থানান্তরিত হয় ছিন্নমস্তা মন্দির সংলগ্ন নন্দলাল মন্দির প্রাঙ্গণ ও জোড়শ্রেণীর মন্দির সংলগ্ন পোড়ামাটির হাটে। আংশিক মেলা থেকে যায় হাইস্কুল প্রাঙ্গণে। সাংস্কৃতিক মঞ্চে অনুষ্ঠান করেছেন সঙ্গীতশিল্পী পৌষালী ব্যানার্জী, অন্তরা চৌধুরী, সহজ মা, শোভন গাঙ্গুলী, মুম্বাইয়ের জাভেদ আলি, তালতন্ত্র ব্যাণ্ড, ছিল হুগলীর শ্রীখোল, মালদার মানব পুতুল, মুর্শিদাবাদ থেকে রায়বেঁশে, শিঞ্জিনী চক্রবর্তী প্রমুখ। অনুষ্ঠিত হয়েছিল বর্ণময় বালুচরী-স্বর্ণচরী শাড়ীর ফ্যাশান শো।
২০১৯ সালের ৩২-তম বিষ্ণুপুর মেলা পুনরায় বিষ্ণুপুর হাইস্কুল ও কে.জি.ই.আই প্রাঙ্গণে ফিরে আসে। উদ্বোধন করেন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, সভাপতিত্ব করেন শ্রী মুত্যুঞ্জয় মুর্মু, সভাধিপতি, কার্যকরী সভাপতি ছিলেন জেলাশাসক ডা: উমাশংকর এস,আই.এ.এস. মহোদয়, সদস্য সচিব ছিলেন মহকুমা শাসক মানস মণ্ডল মহোদয়। সাংস্কৃতিক মঞ্চে অনুষ্ঠান ছিল বালুচরী শাড়ীর ফ্যাশান শো। কলকাতা থেকে এসেছিলেন সিধু, লগ্নজিতা, অনিন্দ্য বোস, মুম্বাই থেকে পলক মুচ্ছল, বাজবর্মন, ছিলেন বাংলার তরুণ প্রজন্মের হাটধ্রব অনুপম রায়, ফসিলস ব্যাণ্ড, ফকিরা ব্যাণ্ড, ওড়িশি, ভরতনাট্যাম। বৃষ্টির তুমুল ধারাকে উপেক্ষা করে অনুপম রায়ের অনুষ্ঠান দেখেছেন, গলা মিলিয়েছেন হাজার হাজার তরুণ-তরুণী।
২০২০ সালের ৩৩-তম বিষ্ণুপুর মেলা যথারীতি অনুষ্ঠিত হয়েছে ২৩-২৭ ডিসেম্বর, বিষ্ণুপুর হাইস্কুল ও কে.জি.ই.আই. প্রাঙ্গণে । উদ্বোধন করেন জনস্বাস্থ্য কারিগরী বিভাগের রাষ্ট্রমন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা মহোদয়, সভাপতিত্ব করেন শ্রী মুত্যুঞ্জয় মুর্মু, সভাধিপতি, কার্যকরী সভাপতি ছিলেন জেলাশাসক এস.অরুণপ্রসাদ, আই.এ.এস. মহোদয়, সদস্য সচিব ছিলেন মহকুমা শাসক অনুপ কুমার দত্ত মহোদয়, সাংস্কৃতিক মঞ্চে অনুষ্ঠান ছিল বালুচরী শাড়ীর ফ্যাশান শো । কলকাতা থেকে এসছিলেন অদিতি মুন্সী, নচিকেতা চক্রবর্তী, ইমন চক্রবর্তী, সুরজিত ও বন্ধুরা, রুপঙ্কর বাগচী, শ্রীখোলে হরেকৃষ্ণ হালদার, ইন্দ্রানী দত্তের ডান্স ট্রুপ । গতবার বিষ্ণুপুর মেলার অন্যতম চমক ছিল লেসার শো । লেসার আলোর রামধনু রঙা তীক্ষ্ণ আলোকরেখা ধোঁয়ার কুণ্ডলী ভেদ করে কয়েক মাইল দূরে আকাশের বুক ছেদ করছিল, লেসারের ছবিতে বিষ্ণুপুরের প্রাচীন ইতিহাস তুলে ধরার রঙীন বর্ণমালা বিস্মিত করেছিল আপামর দর্শককে ।
২০২১ সালের ৩৪-তম বিষ্ণুপুর মেলার উদ্বোধন করেছিলেন সেচ ও জলপথ বিভাগের মাননীয় মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র, সভাপতিত্ব করছিলেন সভাধিপতি শ্রী মুত্যুঞ্জয় মুর্মু, কার্যকরী সভাপতি ছিলেন জেলাশাসক কে.রাধিকা আইয়ার,আই.এ.এস.মহোদয়া, সদস্য সচিব মহকুমা শাসক অনুপ কুমার দত্ত মহোদয়।
বিষ্ণুপুর শহরে সারাবছর ধরেই বহু মানুষ বেড়াতে আসেন, মন্দির ছাড়া পর্যটনের প্রসারে তেমন বড় সরকারী উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে কোভিড অতিমারীতে সময়টাই যেন থমকে ছিল। পরবর্তী সময়ে পর্যটক আনাগোনা বেড়েছে, পোড়ামাটির হাট, লালবাঁধ ফেরীঘাটেও আসছেন বহু পর্যটক। কলকাতা সহ বিভিন্ন জেলা থেকে পর্যটকদের আনাগোনা, মেলার ক্রেতা-বিক্রেতা, বাসিন্দাদের বাড়ীতে বাড়ীতে আত্মীয়স্বজন-কুটুম্বদের ভীড় জমেছিল। বিষ্ণুপুর মেলার পাঁচদিন শহর গমগম করে, এক অন্য রকমের ভাল লাগায় মন ভরে ওঠে বিষ্ণুপুরবাসীর। কোভিড সাবধানবানী মাথায় রেখেই দীর্ঘ শোভাযাত্রা না করে মহকুমা শাসক অনুপ কুমার দত্ত মহোদয় ৩৪ তম বিষ্ণুপুর মেলার মূল মঞ্চ যদুবট্ট মঞ্চের সামনে এক সুন্দর বর্ণাঢ্য নৃত্য প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করিয়েছিলেন। সঙ্গীত শিল্পী অরিজিৎ সিং-এর কণ্ঠে ‘দেখো আলোয় আলো আকাশ, দেখো আকাশ তারায় ভরা” এই গানটি বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী কৃষ্ণেন্দু রায়ের পরিচালনায় বিষ্ণুপুরের স্কুল ও কলেজের প্রায় দুই শতাধিক সুসজ্জিত ছাত্রীর নৃত্যশৈলী পরিবেশিত হয়েছিল; সঙ্গে ছিল পঞ্চাশ ঢাকের বাদ্যি, আদিবাসী রমণীদের নৃত্য সহ বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান । সাংস্কৃতিক মঞ্চে অনুষ্ঠান করেছেন বিষ্ণুপুর ঘরানার শিল্পীবৃন্দ, স্থানীয় সঙ্গীত ও নৃত্য শিল্পী । আসর মাতিয়েছিলেন সঙ্গীত শিল্পী লোপামুদ্রা মিত্র, শুভমিতা, রূপঙ্কর, শ্রীকান্ত আচায, অনুপম রায়, ছিলেন বাংলা ব্যাল্ড ক্যাকটাসের শিল্পীবৃন্দ। যদুভট্ট মঞ্চেই উদ্বোধিত হয়েছিল মেলার স্মরণিকা, বার্ডস্ অফ বাঁকুড়া নামিত একটি ছবি সম্বলিত পুস্তক ।
৩৪ তম বিষ্ণুপুর মেলার সঙ্গে একই সময়ে বাঁকুড়া জেলা সবলা মেলাও অনুষ্ঠিত হয়েছিল বিষ্ণুপুর হাইস্কুলের পিছনের একটি মাঠে । এই মাঠে রামানন্দ মঞ্চকে ঘিরে ছিল বিভিন্ন জেলার স্টল, ডি.আর.ডি.সি., বিভিন্ন জেলার স্টল বাংলার মুখ, তাঁতশিল্প, খাদি সহ শতাধিক স্টল। সবলা মেলা ছিল সাত দিনের অর্থাৎ পাঁচ দিন বিষ্ণুপুর মেলার পর আরও দুইদিন আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান। প্রতিদিনই ছিল কবিতা পাঠের আসর, ছিল কুইজ শো, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতা, প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা, তাৎক্ষণিক বক্তৃতা, বিষ্ণুপুর গ্যালারীতে প্রদর্শিত হয়েছিল ফটোগ্রাফি, ভাস্কর ও হস্তশিল্পের সম্ভার। কবিতা পাঠের আসরে এসেছিলেন ‘লালপাহাড়ীর দেশে যা’ খ্যাত কবি অরুণ চক্রবর্তী, সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন ‘মিঠাই’ ধারাবাহিক খ্যাত অদ্রিত রায়, ছিল দোহারের দল সহ বিভিন্ন লোকসঙ্গীতের দল, ছিল আদিবাসী ভাই-বোনেদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান,নৃত্য ও অন্যান্য আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান।
ডিসেম্বর মাস পড়লেই, আনচান করে মন, নানা কৌতূহল মেলাকে ঘিরে,গুঞ্জন চলে, হচ্ছে তো বিষ্ণুপুর মেলা।ওখানেই তো হচ্ছে নাকি অন্য জায়গায়, কে কে আসছেন এবারের মেলায়। মেলাকে ঘিরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়ে যায় ছবি-ভিডিও-কথার আদানপ্রদান। চলবে কথাবার্তা, হতে থাকবে ভাব-বিনিময়। নানান সমস্যার মাঝে একটু দম ফেলার সুযোগ, মেলার মজা পেতে উন্মুখ থাকেন বিষ্ণুপুরবাসী, অধীর অপেক্ষায় থাকব আমরাও।
No comments:
Post a Comment