[সেরা বাংলা প্রবন্ধ ২০২২]
[১ম সেরা]
[এপ্রিল ১ম সংখ্যা] [পঠন / দর্শন সংখ্যার ভিত্তিতে বিচার]
চারণভূমি
- রূপশঙ্কর আচার্য্য
"চারণ" কথার ব্যাকরণগত অর্থ হল স্তুতি পাঠ বা স্তুতি পাঠক। যারা এই স্তুতি বা গান হৃদয় দ্বারা রচনা করতেন দেশ মাতার জন্য তাঁদের চারণ কবি বলা হয়। কোনো কোনো মহান পণ্ডিতদের মতে চারণ কথার অর্থ হল তৃণক্ষেত্রে ঘুরে বেড়ানো, আবার কোনো কোনো মহান কবি বা মহান পুরুষ মনে করেন পবিত্র দূর্বা।
যে দূর্বা পবিত্র রূপ নিয়ে সমস্ত শুভ কাজে ব্যবহার করা হয়। সেই তৃণ ছোট্ট ছোট্ট তৃণ আমাদের অনুপ্রেরণা দেয় ধীরে ধীরে বড় হতে। হঠাৎ করেই আকস্মিকভাবে আমরা কখনো বড় হয়ে উঠতে পারিনা। তাই ধৈর্যশীলতার উপর ভিত্তি করে সহ্য ক্ষমতা কে নিজের হৃদয়ে রেখে ধীরে ধীরে ক্ষুদ্র তৃণ থেকে দুর্বার গতিতে শুভ মানসিকতাই কল্যাণকর, মঙ্গলময় জনক, উদ্দেশ্য মূলক মানসিকতায় সকলকে সঙ্গে নিয়ে সকলের মনকে একভাবে, এক সূত্রে গেঁথে নিয়ে বড় হয়ে উঠতে চাই।
ভূমি অর্থাৎ ক্ষেত্র যে ক্ষেত্র পবিত্র। যে ক্ষেত্র আমরা প্রত্যেকটি মানুষ মনুষ্যত্ব বোধকে জাগরিত করে, বিবেককে জাগরিত করে অগ্রসর হতে পারি। প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যে প্রত্যেকটি মানুষ যেন বেঁচে থাকে।
আমি নিজেকে ভালোবাসি। একইভাবে অপর মানুষও নিজেকে ভালোবাসে তাই যদি আমরা প্রত্যেকটি মানুষ প্রত্যেকটি মানুষের জন্য অগ্রসর হই, প্রত্যেকটি মানুষ প্রত্যেকটি মানুষের কাছে উপস্থিত হই, প্রত্যেকে প্রত্যেকের জন্য বাঁচি, প্রত্যেকে প্রত্যেকের জন্য সংঘর্ষ করি তাহলে আমরা কিন্তু মানুষ রূপে প্রতিফলিত হব।
কেবলমাত্র দৈহিক গঠনে দেখতে মানুষ হলেই তাকে মানুষ বলা হবে তা নয়, তার মধ্যে মনুষ্যত্ব বোধ থাকতে হবে। তবে সেই দৈহিক গঠনে দেখতে মানুষকে আমরা মানুষ বলবো। আমরা কখনও পশুদেরকে বলি না তুমি কি মানুষ?আমরা মানুষকেই বলি তুমি অমানুষের মতো আচরণ করছো কেন ? অর্থাৎ মানুষের মধ্যেই অমানবিক ভাবনাটা আসে। সেই ব্যক্তি দৈহিক গঠনে দেখতে মানুষ অথচ মনুষ্যত্ব বোধকে বিসর্জন দিয়ে অমানবিক চিন্তা ভাবনার উপর ভিত্তি করে নিজেদের মধ্যে অহংকার ভাবনাকে জাগ্রত করে অগ্রসর হয়। অহংকার মানুষের পতনের কারণ তাই এই যে চারণভূমি এই ভূমিতে আমরা দৃঢ় সংকল্প নিয়েছি, দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়েছি, একেবারে ক্ষুদ্র থেকে দূর্বা ঘাসের মতো শুভ লগ্ন তৈরি করে, শুভ কাজে, প্রতিটি মানুষের আশীর্বাদ কে পাথেয় করে সকলের দোরগোড়ায় সকলের হৃদয়ে যেন জাগরিত হতে পারি।
সকলের হৃদয়ের যেন শুভ ভাবনার, শুভ চিন্তা, কল্যাণ চিন্তার মঙ্গল চিন্তার দূর্বা ফুটে ওঠে। আমরা প্রত্যেকে তাই চাই এই ভূমিতে প্রত্যেকের সঙ্গে প্রত্যেকে একসঙ্গে সকলে আমরা সকলের তরে প্রত্যেকে আমরা পরের তরে বাঁচতে। আমাদের মধ্যে জাগরিত করতে হবে মনুষ্যত্বকে শুধু তাই নয় "একতা"ই হলো সব থেকে কঠিন শক্তি যে শক্তি কখনো কোনো মানুষকে দুর্বল করতে পারেনা। যেমন - ধৈর্য কোন মানুষকে সাফল্যের দোরগোড়া থেকে সরিয়ে দেয় না সাফল্য তাকে দিয়ে থাকে, সহনশীলতা যেমন করে মানুষকে দুর্বল করে ফেলে না। তেমন মনুষ্যত্ব বোধের উপর ভিত্তি করে আমরা প্রত্যেকে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার প্রেরণা রাখি ।
প্রকৃতির কঠিন খেলা অনুযায়ী উত্থান থাকলে পতন হয়। সৃষ্টি থাকলে ধ্বংস হয়। জন্ম থাকলে মৃত্যু হয়। আমরা জানি আমরা জন্মগ্রহণ করেছি কোন না কোন সময় আমরা মারা যাবো। আমাদের মতো সাধারণ মানুষের মারা যাওয়া টা তো আর ভীষ্ম -এর মতো স্বেচ্ছাকৃত নয়। আমরা অতি সাধারণ অতি ক্ষুদ্র মানুষ। আমাদের মধ্যে অজ্ঞাতসারে বা জ্ঞাতসারে কখন,কোন মুহূর্তে কি ধরনের ভুল কাজ হয়ে যায় আমরাও জানি না। আবার যদি জেনেও থাকি বেশিরভাগ মানুষই তা সংশোধন করতে চাইনা। এটা ঠিক নয়। আমাদের ভুলগুলোকে, ত্রুটিগুলোকে বিশেষ করে আমি আমার নিজের থেকে বলছি আমার ভুলগুলোকে ত্রুটিগুলোকে সংশোধন করতে চাই। যদি বুঝতে না পারি আমার ভুল আমার ত্রুটি তাহলে কোন মানুষ যদি আমাদের এটা বুঝিয়ে দেয় অবশ্যই সে ভুল ত্রুটি মাথা পেতে স্বীকার করে নিয়ে সেটা সংশোধন করতে হবে। নিজের চরিত্রকে সঠিকভাবে তুলে ধরতে হবে।আমাকে কেউ আমার ভুল ত্রুটি দেখিয়ে দিল তাকে আমি অপমান করলাম, তার কথা গুরুত্ব দিলাম না এটা সবচেয়ে অহংকার এবং পতনের মূল কারণ। তা কিন্তু ঠিক নয়। আমাকে সেটা গ্রহণ করা উচিত, সংশোধন করা উচিত। নিজেকে চরিত্রবান করে তোলা উচিত। "চারণভূমি" এক কঠিন স্বপ্নের পথ প্রদর্শক। আমরা যারা বাংলা সাহিত্যের চর্চা করি ,আমাদের সবচেয়ে কঠিন অস্ত্র হলো কলম এবং বাক-স্বাধীনতা । যদি বাক স্বাধীনতার মধ্যে দিয়ে উচ্চারিত ভাবে কোন কিছু প্রকাশ করতে বাধা আসে, লিখিত অবস্থায় তা প্রকাশ করে থাকি।
অতীতে বহু সংঘর্ষ করে আমরা ভারতবর্ষকে স্বাধীন করে তুলেছি। তখন আমরা জন্ম গ্রহণ করিনি। সেই সময় বহু বিপ্লবী, বহু সমাজসেবী মানুষ, বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী সংঘর্ষ করেছে প্রতিমুহূর্তে। রক্তঝরা অবস্থায় কত মানুষ মারা গেছে তাদের রক্তের উপর ভিত্তি করে আজ আমরা স্বাধীন দেশে জন্মগ্রহণ করেছি। হয় সহিংসা অথবা অহিংসা যে কোন পথে এই স্বাধীনতা এসেছে। তাই সর্বপ্রথম অস্ত্র হচ্ছে কাগজ এবং মনের ভাবনা। সাহিত্যের মাধ্যমে মনের ভাবনা দিয়ে, সাহিত্য দিয়ে কাগজ কলমের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তুলে ধরব, সমাজকে সুগঠিত করব--এই সংকল্পই আমাদের এই সাহিত্য পরিবারের। আমরা চাই প্রত্যেকে আসুন সকলের সঙ্গে সকলে বন্ধুত্ব করুন, প্রত্যেকে প্রত্যেকের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখুন, আমাদের স্বপ্নকে স্বপ্ন রূপে না রেখে রূপায়ন করার চেষ্টা করি আমরা। এই আশীর্বাদ টুকু করুন। আমি ভিক্ষা চাইছি এই ভিক্ষা যে ভিক্ষার ঝুলিতে থাকবে প্রত্যেকটি মানুষের কল্যাণের জন্য, মঙ্গলের জন্য, অগ্রসর হওয়ার প্রেরণা যা প্রত্যেকটি দুর্বল মানুষকে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার প্রেরণা, দুঃস্থকে দুঃস্থ রূপে বুঝতে না দেওয়া সেই দুঃস্থ মানুষ সবল মানুষ,সেই মানুষ পারে নিজেকে আদর্শ মানুষ রূপে প্রতিষ্ঠা করতে। এই প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যে অনুপ্রেরণার ভাষা সে ভাষায় পারবে একটি মানুষ কে সুস্থভাবে, সঠিকভাবে, স্বাভাবিক ভাবে মনুষ্যত্ব বোধ রূপে, বিবেকবান রূপে আদর্শ মানব তৈরি করতে। তাই ছোট্ট, সুন্দর, সবুজ তৃণ ক্ষেত্রকে আমরা তৈরি করি আমাদের সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্র। যে সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি মানুষকে মনুষ্যত্ব বোধ রূপী মানুষ রূপে তৈরি করবে, প্রত্যেকটি মানুষের হৃদয়কে আন্দোলিত করে ভুলকে ভুল রূপে ও সঠিক কে সঠিক রূপে জানতে সাহায্য করবে, প্রত্যেকে সজাগ হয়ে নম্র-ভদ্র, আদর্শ সমাজ তৈরি করার সৈনিক হবে। এই সৈনিক আমাদের জন্য না হলেও আমাদের পরের প্রজন্মের জন্য, পরের মানুষদের জন্য। এই অসুস্থ পরিবেশকে সুস্থ করে তোলার জন্য। যেন আমাদের পরবর্তী মানুষজন সাহিত্য চর্চার মধ্য দিয়ে তাদের নীতি বোধ এর শিক্ষাকে জাগরিত করতে পারে। পুঁথিগত বিদ্যায় শিক্ষা সে তো শিক্ষা। অনেক মানুষ বহু ডিগ্রি অর্জন করেও অমানবিক আচরণ করে কেন? প্রশ্ন এটাই মনে রাখতে হবে পুঁথিগত শিক্ষার চেয়েও প্রয়োজন নীতিগত শিক্ষা। যে নীতি বোধের শিক্ষা আমাদের এখনো সকলের সঠিকভাবে হয়নি। এটা কোন মঞ্চে উপস্থিত নেতা-নেত্রীর বিবৃতি নয়, এটা আমাদের প্রত্যেকের বিবেক জাগরিত রসালো পদার্থ। আমাদের প্রত্যেকের যাদের বিবেক জাগ্রত হয়েছে তারা অনুভব করতে পারছি এটাই সঠিক। ছোট্ট শিশুকে মা ধীরে ধীরে বড় করতে শুরু করেন। শিশুটির দুটো আঙ্গুল ধরে হাঁটানো শেখান, অনেকবার শিশু পড়ে যায় শরীরের অনেক অঙ্গে লেগে থাকে কিন্তু শেষ পর্যায়ে মা সাফল্য পান। শিশুটি হাঁটতে পারে। তিনিও একজন অশিক্ষিত ব্যক্তি হয়ে থাকলেও এই যে শিক্ষা প্রদান করেছেন তিনিও একজন শিক্ষাগুরু,আমাদের জীবনের প্রথম শিক্ষাগুরু।তাই মনে রাখতে হবে আমরা দৈহিক গঠনে মানুষ বলেই মানুষ তা নয়, প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যে নীতি বোধের শিক্ষা যেন জাগরিত হয়, অন্তরের ভাবনা যেন সব সময় পবিত্র হয়, এই পবিত্রতা নিয়ে অন্তরের ভাবনাকে মনুষ্যত্ব বোধ-এর মধ্য দিয়ে বিবেকী চিন্তা গ্রহণ করে কল্যাণকর উদ্দেশ্যমূলক ভাবনায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করি । দৈহিক গঠনে মানুষ হলেও মনুষ্যত্ব বোধ আমার জাগরিত হলে তবেই তো আমি মানুষ।এই মানুষ জীবনকে প্রগাঢ় শক্তিতে পরিণত করবে। সকলে একসঙ্গে আমরা বাঁচবো একই ভাবে বাঁচবো এই মানসিকতা নিয়েই আমরা প্রত্যেকে মনুষ্যত্ব বোধকে জাগরিত করে মনুষ্যত্ব বোধ-এর উপর ভিত্তি করে আদর্শ মানুষ হবো।
দাদা খুব ভালো
ReplyDeleteখুব সুন্দর বললে দাদা
ReplyDelete