হননের কালে
- যুবক অনার্য
চাইলেই কি কবিতা লেখা যায়!-
কবিতা নিয়ম না মানা এক আশ্চর্য ক্ষরণ
রোদনের কালে মানুষের সর্বনাশ আর ভরাডুবি হলে
কবিতা খুঁজে ফেরে শব্দচাষী এক
যে বিরুদ্ধ বাতাসে দাঁড়িয়ে বলে দিতে জানে-
'আমাদের মিছিলের নাম হোক ভালোবাসা, আমাদের দ্রোহ হোক প্রেম।'
রুগ্ন অবেলায় যদি বা সব গান থেমে যায় আর সব সুর,
কবিতা উঠোনে এসে বলে যায় -
আমি এক ঝাঁঝালো প্রেমিক চাই যে গড্ডালিকা প্রবাহের প্রতিকূলে দাঁড়িয়ে
বেশুমার বলে দিতে জানে - 'আমাদের চেতনা হোক মানুষধর্মী হৃদয়ের স্বরলেখা,
আমাদের কবিতা হোক বিধ্বংসী সময়ের বিরুদ্ধে বিরোধীতা।'
চাইলেই কি কবিতা লেখা যায়!-
কবিতা নিয়ম ভাঙা এক জাজ্বল্য যিশু যেন
নিজেরই স্কন্ধে তুলে নিয়ে মানুষের সব অবহেলা-
ক্রুশবিদ্ধ হতে হতে রেখে যায় প্রেমের প্লাবন।
পৃথিবীতে নেমে এলে হলুদ অসুখ
কবিতা খুঁজে নেয় শব্দখোড়ক যে পরাজিত হতে হতে লিখে রাখে
বিজয়ের গান- ' একদিন আমরাও দেখে নেবো নিহত সুর্যের পোড়া উত্থান।'
চাইলেই লেখা যায় না কবিতার মতো এক অবাধ্য সন্ত্রাস
দ্রোহের কসম নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে ক্ষয়ে গেলে
গোপন প্রিয়ার মতো কবিতা ধরা দেয় হননের কালে।
মানুষেরা ভুলে যায়
- যুবক অনার্য
মানুষেরা ভুলে যায়- যা কিছু মনে রাখে- তারচেয়ে বেশি
ভুলে যায় গতকাল আজকাল আগামীকালের চিরচেনা মুখ
ধূপছায়া গোধুলিবেলায় রমণীকে
কথা দেয় - একদিন
সমুদ্র পাড়ি দেবো- হবো সমুদ্রের
চেয়ে বেশি বড়ো-
সেই কথা ভুলে যায় - রমণ শেষে ভুলে যায়
রমণীর মুখ
নদী পার হলে মুহূর্তে ভুলে যায়
নৌকোর মাঝি
উপন্যাস পড়তে গিয়ে কবিতা ভুলে যায় কবিতা পড়তে গিয়ে ভুলে যায়
গল্পের প্লট
ভুলে যায় একদিন মানুষেরা পৃথিবীতে পড়েছিলো নগ্ন পরিধেয়
আজ সভ্যতার নামে পরে আছে কুচকাওয়াজ লেফট রাইট লেফট
নদীর মতো বহমান এ সময় কখনও
যাবে না থেমে
শুধু থেমে যাবে গন্তব্যবিহীন
সমস্ত লাশবাহী গাড়ি
ভুলে যায় পৃথিবীর প্রতিটি দালানই তো গাড়ি
- একেকটি লাশ বয়ে নিচ্ছে প্রতিটি সময়
তবু ব্যাংক ঘরে জমে থাকে কালো কালো কুৎসিত ডামাডোল
তবু হায়েনার চেয়ে অধিক জান্তব
এ মানুষ খেয়ে নেয় মানুষের লাশ
তবু কপালপোড়া জরিজনাকে
সংস্কারের নামে আগুনে পুড়িয়ে দেয় প্রতিবার
মানুষেরা ভুলে যায়
কেবলই ভুলে যেতে থাকে 'মানুষ' বোলে কিছু একটা ছিলো কিংবা ছিলো কি কোনোকালে!
ভুলে যেতে যেতে তারপরও ভুলে যায়
কিছুই থাকে না, পারে না থেকে যেতে;
থেকে যেতে পারে শুধু বিশুদ্ধ আত্মার ঘ্রাণ;
যে জীবন পায়নি তারে, জনম জন্ম ফুরাবে
তবু পাবে নাকো আর।
গেরিলা চংক্রমণ
- যুবক অনার্য
ভুবন চংক্রমিত হোক। নিয়তিসম সত্তা আমার
তবে কি চেয়েছিলো বোধের অধিক বোঝাপড়া!
চৌহদ্দি ব্যাপে বাঁশঝাড় বুনে দিয়ে অতিক্রান্ত হও ভিটেবাড়ি
মাথার উপরে তার থেকে যাক বুড়ো চাঁদ চড়কা বুড়ি নিয়ে।
ভবিষ্য এই ভাঙাগড়া প্রেমের প্রসিদ্ধ অনুযোগ তৃতীয়াংশ পরকীয়া
তাথৈ নারীগণ আমাকে বুনো মোষ ভেবে চোখের সমুখে ঝুলিয়ে রেখেছে রজঃবত লালরঙা ছোপ
আমি নিরস বিদারী সব্জিবত হেঁটে চলি
তবে কি জৈব আমি নই- কেবলই অনুর্বর বলিরেখা!
হতে পারে এইমতো। যে-মতোই হোক,
গাঙজলে না ডুবেই গভীরতা মেপে নেয় প্রকৃত প্রেমিক।
আমি তাই জোছনাকুমারীহীন রাতেও
রাজপথ ছেড়ে দিয়ে ধ্বংসস্তূপের কিনারে
উদ্বাস্তু এক- খুঁজে ফিরি
তৃতীয় বিশ্বের গেরিলা সড়ক।
শিউলি কুড়ানো ভোর
- যুবক অনার্য
রাত্রি
তুই বলেছিলি রাত জেগে জেগে
লিখতে কবিতা অথৈ।
বলেছিলি - আমি যেন কবিতায়
লিখি -ঈশ্বর বড়ো একা
অনির্বচনীয় নিঃসঙ্গতা
ঘিরে রেখেছে তাকে প্রতিক্ষণ প্রতিবার!
সমগ্র সৃষ্টি জগৎ
তাকে সঙ্গ দেবার জন্য নয়
যথেষ্ট মোটেই
যেহেতু সৃষ্টি জগৎ নয় সমকক্ষ তার।
ঈশ্বর তবে শেয়ার করবেন কার সঙ্গে
সুখ কিংবা দুঃখ তার!
রাত্রি
তুই ঈশ্বরে বিশ্বাসী নোস তবু কেন
লিখতে বলেছিলি কবিতা- নিয়ে তাকেই-
সে কথা তোকে আমার জিজ্ঞেস করা
হয়নি তো আর
কেননা ঈশ্বর ধর্ম রাজনীতি -
এসব নিয়ে আমার মাথাব্যথা
ছিল না কোনোকালে।
আমার বিষয়বস্তু -মানুষ কেবলই মানুষ।
কিন্তু অদ্ভুত হলো এই- মানুষ নিয়ে
লিখতে গিয়ে দেখি ঘুরে ফিরে
ঈশ্বর ধর্ম আর রাজনীতি হানা দিচ্ছে
যেন অনিবার্যভাবেই।
জন লেননের
'ইমাজিনেশন' গানটির কথা মনে পড়ে -
'কল্পনা করো পৃথিবী এক যেখানে নেই কোনো ঈশ্বর স্বর্গ নরক'।-
এখানেও তো তাই হলো -
ঈশ্বরহীন পৃথিবীর কথা বলতে গিয়ে
সেই ঈশ্বরই এলেন
মুখস্ত বিদ্যার মতো ক'রে!
আসলে ঈশ্বর ছাড়া কোনো পৃথিবী নেই।
যে -পৃথিবীতে মানুষ আছে
সেখানে ঈশ্বরও আছেন,
কারণ মানুষের একজন ঈশ্বর প্রয়োজন-
সেই ঈশ্বর যার আছে নরকের মতো এক আশ্চর্য জগৎ,
সেই ঈশ্বর যিনি বড়োই নিষ্ঠুর মমত্বহীন!
ঈশ্বর এরকম না হলে ধর্ম ব্যবসায়
উঠবে লাটে - এমন অব্যবস্থাপনা ধর্ম ব্যবসায়ীগণ মেনে নিতে
মোটেই সম্মত নন।
মানুষের পৃথিবীতে তাই ঈশ্বরের অস্তিত্ব
সুদীর্ঘ প্রয়োজন
আর ঈশ্বরের পৃথিবীতে
মানুষের কোনো প্রয়োজন নেই,
প্রয়োজন কেবল মোল্লাতন্ত্র
যাজক পাদ্রী পুরোহিত-
এ হলো তথাকথিত ঈশ্বর।
যিনি প্রকৃত ঈশ্বর তার সন্ধান পেতে হ'লে ফিরে যেতে হবে মানুষের কাছেই ,
সেই মানুষ যার কাছে দুইটি মানুষ
আলাদা কিছু নয়
যার কাছে মানুষ মাত্রই হোমো সেপিয়েন্স আর হোমো সেপিয়েন্স হতে হলে
ধর্মের কোনো প্রয়োজন নেই।
আর ঈশ্বর?
প্রতিটি মানুষই ঈশ্বর
কেননা মানুষ ছাড়া ঈশ্বরবাচক ডিসকোর্স নিতান্তই নিস্প্রয়োজন।
রাত্রি
রাত জেগে জেগে কবিতা লিখতে গিয়ে
ভোর হয়ে এলো
যে- ভোর কারো কাছে ঈশ্বরের আরাধনা কারো কাছে ভগবানের প্রতি নিবেদন
কারো কাছে যিশুর স্মরণ কারো কাছে, কিংবা শিউলি কুড়ানো মিষ্টি প্রহর।
রাত্রি
এক জীবনে শিউলি কুড়ানো
তোর সঙ্গে হলো না আমার!
যুদ্ধ
- যুবক অনার্য
ওরা এলো
শিশুদের খুন
পুরুষদের হত্যা
আর নারীদের ধর্ষণ করে চলে গেলো
এটা ওদের কাছে ঘুম থেকে উঠে
দাঁত মাজার মতো স্বাভাবিক
No comments:
Post a Comment