[সেরা বাংলা প্রবন্ধ ২০২২]
[১ম সেরা]
[মার্চ ১ম সংখ্যা] [পঠন / দর্শন সংখ্যার ভিত্তিতে বিচার]
[১ম সেরা]
[মার্চ ১ম সংখ্যা] [পঠন / দর্শন সংখ্যার ভিত্তিতে বিচার]
আমি সেই বসন্ত
- রূপশঙ্কর আচার্য্য
"বসন্ত মুখর আজি"
ধরিত্রীতে ছয়টি ঋতুর মধ্যে ঋতুরাজ হলো বসন্ত ঋতু... পুরোনোকে ভুলে নতুনের আগমন,নতুন করে জাগরিত হয় প্রকৃতির কোল এই ঋতুতেই । মূলত হয়তো সেজন্যই সমস্ত ঋতুর মধ্যে সেরা ঋতু এই বসন্ত ঋতু।
ফাল্গুন - চৈত্র মাস এর মিষ্টি হিমেল হাওয়া, কোকিলের মিঠে গলার সুরের স্পর্শে আগমন হয় বসন্তের... এইসময় শীত ও গরমের মধ্যে বেশ সখ্যতা ভাব বজায় থাকে, খুব বেশি না থাকে শীত, না থাকে গরম। যেন মনে হয় দুজন বেশ তাল মিলিয়ে চলতে পারে নতুনকে, নতুন ঋতুকে, নতুন বছর কে পলাশ ও কৃষ্ণচূড়া ফুলের সমারোহের মধ্যে বরণ করবে বলে..
আমরা সকলেই হয়তো এই ঋতুর আগমনের জন্য মুখিয়ে বসে থাকি। শিবরাত্রি শান্তিনিকেতন এর দোল, নীলষষ্ঠী, গাজন এবং সবশেষে বর্ষবরণ বা নববর্ষ--এই সমস্ত ব্রত পার্বণ দিয়ে ভরা থাকে দুটি মাস..
এই বসন্তে শুক্ল পঞ্চমীতে মা বীণাপাণি মা সরস্বতীর পূজা অর্চনা,ব্রত এবং সেই শুভ লগ্নে শিশুর শিক্ষা অর্জনের সূচনা শুরু হয় হাতে খড়ি-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে।
সেই সময় বিভিন্ন যাত্রা অনুষ্ঠান, বিচিত্রানুষ্ঠান, ক্রীড়ানুষ্ঠান এইসবের মধ্যদিয়ে প্রতিটি মানুষের মধ্যে যেন এই মেলবন্ধন ঘটে থাকে। এই সুযোগে অতীতের অশান্তি,ঝগড়া ভুলে মানুষের সঙ্গে মানুষের মন কে নতুন স্বপ্ন দেখার প্রেরণা দেয়।
"ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান "
"ওরে ভাই ফাগুন লেগেছে বনে বনে "--কবিগুরুর এইসব গান গেয়ে, হাতে আবির নিয়ে মেতে ওঠে সমস্ত মানুষ.. যা "বসন্ত পঞ্চমী ''
স্বামী,সন্তান দের মঙ্গলকামনায় ব্রতী হয়ে বাড়ির মা, মেয়ে ও ছেলেরাও মহাদেব শিবের মাথায় জল ঢালে..গাজনকে ঘিরে মেলা বসে কোনো কোনো গ্রামে...
সবশেষে নববর্ষের আগমন হয়। আসে আর এক নতুন বছর..হালখাতায় করতে মেতে ওঠে বাঙালিরা..
বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও উৎসবে মোড়া এই দুটি মাস যেন এক অমলিন বার্তা দেয় মানুষ দের..
পুরোনোকে ভুলে নতুনকে নিয়ে চলার।
যা কিছু হারিয়ে গেছে,তা হারিয়ে গেলেও আবার নতুন কিছু যে অপেক্ষা করছে মানুষের জন্য তার গোপন শক্তির যেন প্রকাশ ঘটে এই ঋতুতেই। তাই তো কবি লিখেছেন "যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে যাওয়া গীতি, যাক অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক। যাক যাক যাক, এসো এসো "
বসন্তের আনন্দমুখর পরিবেশে বিভিন্ন মেলা,বই মেলা , শিবরাত্রির মেলা বসে।
এই সময় রোজগারের ও মানুষকে আনন্দ দেওয়ার জন্য বহুরূপী সেজে শহর ঘুরে বেড়ায়। বাচ্চাদের মনে বসন্ত উৎসবের জন্য আবৃত্তি, নাচ, গান অভিনয় এর সূচনা ঘটে। এই ভাবেই ভবিষ্যতের প্রতিভাবান সূর্যের সৃষ্টি ঘটে।
প্রকৃতির দেওয়া পলাশ ও কৃষ্ণচূড়ার তীব্র রং এর সমাবর্তনে যেন মনে হয় প্রকৃতি বলতে চায় রঙিন হোক প্রতিটি মানব এর হৃদয়, ঋদ্ধ হোক মন.. তিক্ততা ভুলে আবিরের ছোঁয়ায় ভালোবাসা হোক নিবিড়....
No comments:
Post a Comment