[সেরা বাংলা কবিতা ২০২২]
[২য় সেরা]
[এপ্রিল ১ম সংখ্যা] [পঠন / দর্শন সংখ্যার ভিত্তিতে বিচার]
হলুদ সাংবাদিকতা
- শুভজিৎ দে
সত্যের বেদীতে স্থাপিত হয়েছে চটকদার গল্পকথা,
গল্পের রসে ভিজে মানুষ গ্রহণ করেছে হলুদ সাংবাদিকতা।
সৃজনশীলতা, বুদ্ধিমত্তা যেখানে আদপে ভোঁতা।
জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করতে সংবাদকে করা হয়েছে বিনোদনে ভর্তি,
খবর যা দেখি বা শুনি, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা অথবা কিছুটা সত্যি,
ইঁদুর দৌড়ে প্রথম হতে,
সাফল্যের শিখরে উঠতে,
সংবাদের দেহ থাকে,
আকর্ষণীয় পোশাক থাকে,
কিন্তু থাকেনা কোনো মাথা,
ধীরে ধীরে নষ্ট হয়েছে সংবাদমাধ্যমের স্বকীয়তা।
পেশাগত শত্রুকে দিতে উপযুক্ত টক্কর,
সঠিক তথ্যকে পেতে হয় সরাসরি ঠক্কর।
শ্রোতা,দর্শক,পাঠকবৃন্দকে-এই গোলোক ধাঁধা দিয়ে যায় রীতিমত চক্কর।
সত্যকে বিক্রি করে মিথ্যাকে করতে প্রতিষ্ঠা,
মেরুদণ্ডহীন সংবাদের ব্যবসায়ীদের অসম্ভব নিষ্ঠা,
সফলতা প্রাপ্ত হয় তাদের প্রচেষ্টা,
অর্ধসত্য সংবাদে তাই ভরে যায় সংবাদপত্রের পৃষ্ঠা।
উদ্দেশ্য যেখানে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ,
মূল্যবোধ ও আদর্শের সেখানে হয় বিসর্জন।
মানুষকে করতে চমকিত, শিহরিত
সংবাদকে করেন তারা সুনিপুনভাবে অলংকৃত।
তাতে থাকুক বা নাই থাকুক প্রাণ,
বজায় থাকুক বা নাই থাকুক ব্যক্তির সম্মান,
আগ্রহের পারদ চড়িয়ে উত্তেজনাটা থাকে যেন টান-টান।
অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণ বৃদ্ধি পায় আবেগে অথবা গভীর চিন্তায় করে ঘর্ম-স্নান।
স্বীকার করতে বাধ্য সবাই- 'হলুদ সাংবাদিকতা' হ্রাস করেছে সংবাদ মাধ্যমের ঐতিহ্য ও সম্মান।
কালিমালিপ্ত হয়ে চলেছে গণতন্ত্রের 'চতুর্থ স্তম্ভ,
যাকে কেন্দ্র করে গণতান্ত্রিক দেশের স্বাধীনতার দম্ভ।
শালীনতার মানদণ্ড
- শুভজিৎ দে
নিজের শ্লীলতা রক্ষা করে তুমি হয়েছ 'শালীন',
গ্রহণযোগ্যতার পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হলে হও 'অশালীন',
যাকে আচ্ছাদিত করে তুমি হও শালীন অথবা অশালীন, তা একদিন হয় পঞ্চভূতে বিলীন,
কিন্তু তোমার শালীনতা তোমাকে মৃত্যুতেও রাখে অমলিন।
তুমি মানুষ হিসাবে খুব পরিপাটি,
এটাই কি শালীনতার মাপকাঠি!
জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আমরা যে পথ হাঁটি,
ঠিক-ভুল বিচার করতে গিয়েই অজস্র আঁকিবুঁকি কাটি,
পূর্বনির্ধারিত রেখার বাইরে গেলেই দেখায় দাঁতকপাটি,
তাদের মানদণ্ডই নির্ধারণ করে তুমি মানুষটা কতো পরিপাটি।
ভদ্রতা, নম্রতা, লজ্জাশীলতা যা রক্ষা করে 'শালীনতা',
নিজেদের সুবিধা মতো তার সংজ্ঞা নির্ধারণ করেন যারা সমাজের হোতা,
হতে পারে তা গ্রহণযোগ্যতা ও যুক্তিতে সম্পূর্ণ ভোঁতা।
তোমার শালীনতা রক্ষা করবে প্যান্ট নাকি ধুতি,
পাঞ্জাবি অথবা জামাটা হবে খদ্দর নাকি সুতি,
তোমার শালীনতা রক্ষা করবে জিন্স নাকি শাড়ি,
তা নিয়েই নীতিশিক্ষকদের অসম্ভব বাড়াবাড়ি।
যেন তাদের হাতেই নির্ধারণের দায়িত্ব ন্যস্ত কোনদিকে ছুটবে সমাজের শালীনতা রক্ষার গাড়ি,
স্বঘোষিত নীতিবাগীশ নির্ধারণ করেন কারা চালাতে পারবেন গাড়ি,
আর সুরক্ষার দোহাই দিয়ে কাদের কর্মক্ষেত্র হবে শুধু বাড়ি।
অন্তর থেকে শালীন হয়ে পালটাবে যেদিন শালীনতার মানদণ্ড,
যুক্তিহীন আদেশ, উপদেশ হবে খন্ড-খন্ড,
সেদিন এই স্বঘোষিত নীতিবাগীশরা চিহ্নিত হবেন সমাজের জন্য গলগণ্ড।
দিব্য অঙ্গ
- শুভজিৎ দে
হাত, পা, কান, চোখ সব থাকলেই কি আমরা মানুষ হিসাবে পূর্নাঙ্গ?
আমরাই দেখি শতভাগ শারীরিক পরিপূর্ণতা নিয়েও মানুষ দিয়ে যায় রণে ভঙ্গ।
আবার হাত নেই, পা নেই কারো বা চোখ নেই, কারো বা কান নেই,
কারো বা পুরো শরীরটা থাকলেও কার্যকারিতা নেই, কিন্তু যা আছে তাকেই সে প্রমাণ করেছে দিব্য অঙ্গ।
স্টিফেন হকিন্স, মাসুদুর রহমান, অরুনিমা সিনহা্ এনাদের কাছে বাধা হয়নি শারীরিক প্রতিবন্ধকতা,
বরং এনারাই পূরণ করেছেন দেশের বা বিশ্বের শূন্যতা।
স্যার হকিন্স'কে কৃতজ্ঞ চিত্তে তাই স্মরণ করে বিশ্ব, যদিও তিনি ছিলেন স্নায়বিক পক্ষাঘাতে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত,
গবেষণার দুনিয়ায় নতুন দিশা প্রদান করেছে তাঁর 'জেনারেল রিলেটিভিটি ও কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটির তত্ত্ব'।
অসম্পূর্ণ দুটি পা নিয়েও মাসুদুর রহমান করেছিলেন ইংলিশ চ্যানেল পার,
আসলে তিনি করেছিলেন প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে জীবনের চ্যানেল পার।
ট্রেন দুর্ঘটনায় পা হারিয়েও তাই অরুনিমা সিনহা্র জীবনটা হয়নি সাঙ্গ,
তাইতো তাঁর দিব্য অঙ্গ সবাইকে আশ্চর্য করে, করেছে জয় 'এভারেষ্টের সুউচ্চ শৃঙ্গ'।
আজও লক্ষ-কোটি দিব্যাঙ্গ মানুষ ক্রীড়া, শিল্প- সংস্কৃতি,
গবেষণা ও শিক্ষার জগতে নিজেদের স্থাপন করা কীর্তির মাধ্যমে বার্তা দেন 'বন্ধু হাল ছেড়ো না',
তাঁরাই আজও দিয়ে চলেছেন লড়াই করার অসম্ভব অনুপ্রেরণা।
মানুষ চাইছে অন্য কিছু
- শুভজিৎ দে
মানুষ আসলে চাইছে অন্যকিছু---
যার পিছনে ছুটছে তারা, নিচ্ছে তার পিছু,
মানুষ আসলে চাইছে আরও বেশি কিছু--- চিত্তাকর্ষক কিছু,
হতে পারে তা চটুল কিছু,
মানুষ আসলে চাইছে নিজের যা কিছু চাহিদা; তার সবকিছু,
মানুষ চাইছে না বিনয়ী হয়ে কারও কাছে করতে নিজের মাথা নিচু,
মানুষ আসলেই কি চায়;
সেটা মাখে নাকি খায়,
তা সে নিজেও জানেনা,
তবে সেটা সে কোনো ভাবেই মানে না।
মানুষ সেটাই চাইছে; যেটা তার পছন্দ,
গুরুত্বহীন সেটা আদৌ ভাল নাকি মন্দ।
হতে পারে তার চাহিদা পূরণে হবে অন্য কারো দমবন্ধ।
তার অবলম্বন করা পথে থাকতে পারে অজস্র খানাখন্দ।
মানুষ তবু সেটাই চাইছে,
যাতে অন্য ধারার হাওয়া বইছে,
সরাসরি স্বীকার না করলেও সুশীল সমাজ-ও প্রচ্ছন্নভাবে মানছে,
হয়তো ব্যতিক্রমীভাবে কেউ-কেউ মৃদু সমালোচনা করছে পিঠ-পিছে,
তবু প্রকাশ্যে মুখ বুজে তা সইছে,
কারণ সংখ্যা-গরিষ্ঠ মানুষ আজকে তাই চাইছে।
আজকে সবাই সংগীত শিল্পী হয়ে সংগীত পরিবেশন করছে,
সবাই নৃত্য শিল্পী হয়ে নৃত্য পরিবেশন করছে,
সবাই অভিনেতা হয়ে অভিনয় করছে,
হয়ত নিজেও জানেনা যে, সে কি করছে,
শুধু এটা জানে যে, কিছু একটা সে করছে।
এই অন্যধারার অনুগামীর সংখ্যা দিনে-দিনে বাড়ছে,
যাকে উৎসাহ দিতে তার ভক্তবৃন্দের সংখ্যা ও সমাজ মাধ্যমে
পছন্দ ও ভালবাসার প্রতিক্রিয়া মিলিয়ন-বিলিয়ন ছাড়াচ্ছে।
সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষ হয়ত আজকে এটাই চাইছে-----
স্রোতের বিপরীতে তাই নৌকা বাইছে।
ভিটামিন-সি
- শুভজিৎ দে
আমলকি'তে আছো তুমি, আছো পেয়ারাতে
তোমার উপস্থিতি স্পষ্ট হয় মানুষের চেহারাতে,
লেবুজাতীয় টক ফল,
যা আনে জিভে জল,
তা হল 'ভিটামিন-সি'- এর চমৎকার উৎসস্থল।
রসালো ফলের অন্যতম- কমলা, আঙুর, পেঁপে,
যা আমরা খাই না কখনো হিসাব করে বা মেপে।
আনারস, জাম আসলে রসের ভান্ড,
'ভিটামিন-সি' তে সমৃদ্ধ হয়ে, হয়েছে তারা দোর্দন্ড।
সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম জাতীয় খনিজ,
যা শরীরের জন্য একান্ত অপরিহার্য।
যার অন্যতম উৎস কিউই, ব্রোকলি, স্ট্রবেরি,
যারা আবার 'ভিটামিন-সি' তে সমৃদ্ধ হয়ে করে বাহাদুরি।
টমেটো আর কাঁচা লঙ্কা,
সবজির শ্রেণীতে যারা 'ভিটামিন-সি' সমৃদ্ধ হয়ে বাজায় জয়ডঙ্কা।
লাল বাঁধাকপি আর সবার প্রিয় শাক- ক্ষুদ্রান্ত থেকে বৃহদান্ত্রে যা সহজেই হয় পরিপাক,
'ভিটামিন-সি' থাকায় তারও খুব নামডাক।
চাটনির স্বাদ বৃদ্ধি করে পুদিনা ও পার্সেল পাতা,
তার সঙ্গেও আছে 'ভিটামিন-সি' এর দারুণ সমঝোতা।
পুষ্টির তালিকায় ওপরেই থাকে দুধ-ঘি,
তার সঙ্গেও অল্প-স্বল্প সখ্যতা স্থাপন করেছে 'ভিটামিন-সি'।
অণুজীবের সঙ্গে যুদ্ধে দরকার নেই বন্দুক, তরোয়াল,
যদি পর্যাপ্ত থাকে 'ভিটামিন-সি, অণুজীব হবে নিশ্চিত বেসামাল।
No comments:
Post a Comment