আসমান
- দিশারী মুখোপাধ্যায়
আসমান-রঙের আকাশের মধ্যে আসন পেতে বসে আছেন
তিনি।বাড়িতে যখন তিনি ছিলেন, সকলের মতো তিনিও
ডাল-ভাত খেতেন।রেডিওর সঙ্গে গল্প করতেন।গালার রেকর্ডের
বুকে যে রবীন্দ্র-কণ্ঠ লুকানো আছে, ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সারা শরীরে
মাখতেন।সকলের মতো তাঁরও স্পর্শের ইচ্ছা ছিল হাতে।সেইসব
ইচ্ছা, স্পর্শ না পেয়ে পেয়ে, জমে পাথর হয়ে গিয়েছিল।তখন
লোকে তাকে ভয় পেত।শরবতের মধ্যে বেশি করে কেওড়া মিশিয়ে
পান করতে চাইতেন।তবু কেউ বিশ্বাস করত না তাঁকে ।
পুরনো দিনের নির্বাক চিত্রের মতো তিনি বার বার কেটে যেতেন
সুস্থ চোখগুলোর ভিউ পয়েন্টে।
বাড়ির দেওয়ালে এখনও তাঁর একটা পোট্রেট আঁকা আছে।
একটা আয়নার সাহায্য নিয়ে সেই ছবিতে তিনি নিজেই
দেখতেন নিজেকে।
প্রযুক্তি-পুষ্ট পৃথিবীতে তাঁর কোনো ইতিহাস নেই।গালার
রেকর্ড বা সিডিতেও তিনি নেই।ঢুকতে পারেননি ইউটিউবে ।
ইউটিউব
- দিশারী মুখোপাধ্যায়
ইউটিউব বাজিয়ে বাজিয়ে শোনে কোনো কোনো ঘর।
সেখানে কোথাও তুমি নেই।আমিতেই পরিপূর্ণ তার সব
দেওয়াল।পুরনো-তৃষ্ণার খোঁজে এখনও অনেক অতিথি
এখানে আসে।দেওয়ালে দেওয়ালে হাত রাখে।যেন তারা
টেরাকোটা নারীদের ছুঁয়ে ছুঁয়ে নিজের ভাষায় আনতে চায়।
এখনও প্রাচীন কিছু পাখি অকারণ খেয়াল বশে আশাবরী
শোনে।কান পেতে শুনতে চায় অতীতে যা অকথিত ছিল।
প্রেমের গল্পের মাঝে প্রেমিক ও প্রেমিকার উচ্চারণ ও
আচরণ ছাড়াও প্রেমের নিজস্ব কিছু কথা থাকে, যৌনতায়
চাপা পড়ে যায়, যুগে যুগে।
এবাড়ির উঠোনে একটা ঝাউগাছ আছে। রাত্রের অন্ধকারে,
শীতে ও বর্ষায়, সে একা একা, নিজের কবিতা নিজে পড়ে।
পাড়ার লোকেরা তার নাম প্রয়োজন হলে উন্মাদ বলে।
উন্মাদ
- দিশারী মুখোপাধ্যায়
উন্মাদের জীবনেও একবার প্রেম জুটেছিল।প্রেমিকা জোটেনি।
একতলায়, গ্যারেজ-ঘরের পাশে ,ঘরের মতো দেখতে, একটা
গরীব ঘর ছিল জানালাবিহীন।দরজার পাল্লাহীন ঘরে ,তার
নৈশ-প্রহরী ছিল রাত।সর্বোচ্চতলার এক পিংক কালারের ঘরে
পান্না রঙের এক রুবি ছিল।এক গ্রানাইট পাথরের স্তম্ভ
সেই রুবির জন্য উন্মাদ হয়ে যায়। এবং উন্মাদ পরিচয়ে সে
যাবতীয় রাজকীয় আহার ও বিহারের সুখকে হারিয়ে দেয়।
মাধবীলতা প্রায় সব মানুষকেই একটু করে উষ্ণতা দেয়।কিন্তু
উন্মাদটির জন্য তার পক্ষপাতিত্ব একটু বেশিই ছিল।
বছরে বছরে অনেক পাতা গাছ থেকে ঝরে পড়েছিল
বাগানের মাটিতে।আর অনেক পাখির পালক।সেখানে
সূর্য আসত, গাছের ডালপালা সরিয়ে, উন্মাদের কাছে
ভালোবাসা শিখতে।
তার মৃত্যুর পর রুবির হৃদয়ে অনেক নুন জমে উঠল।
চুপিচুপি সে সেই নুন নিয়ে গিয়ে রেখে আসে উন্মাদের সমাধিক্ষেত্রে।
সমাধিক্ষেত্র
- দিশারী মুখোপাধ্যায়
সমাধিক্ষেত্র থেকে উঠে বসেছেন সিরাজ।বাড়িতে আবার
যাকিছু ঘটছে, তাতে উমিচাঁদের গন্ধ পাচ্ছেন যেন।পাচ্ছেন
জগৎশেঠের অশরীরী গ্রাসের আভাস।
অন্যদিকে জব চার্নকও স্বস্তিতে ঘুমাতে পারছেন না। স্পষ্ট
টের পাচ্ছেন, আবার কারা যেন তাঁর মারিয়ার দিকে হাত
বাড়াচ্ছে।মেয়েরা সহ তাঁর সুতানুটির কুঠিবাড়িও যেন
কারা দখল নিতে চাইছে।
মীরজাফরের এগারোশো বংশধরও হওয়ার গতিবিধি ঠিক
বুঝতে পারছে না।
এখন যারা এবাড়িতে আছে তারা কেউ দেখতে পায় না।
দেখতে না পাওয়ার জন্য কোনো কষ্টও নেই। দেখতে
পাওয়া যে চোখের কাজ, যেন তারা জানে না।
বায়ুমণ্ডলে উষ্ণতার বৃদ্ধি, নতুন নতুন ভাইরাসের উদ্ভব,
ভিনগ্রহ থেকে আসা দুর্বোধ্য মহাজাগতিক সংকেত, আর
বাড়িতে প্রতিদিন একাধিক খুন ও ধর্ষণ- এইসব নিয়ে
একটা বুলেটিন, রোজ ছাপা হয়।
ছাপা হয়
- দিশারী মুখোপাধ্যায়
ছাপা হয় বর্ষার প্রতিটি দিন জল রঙে। তেল রঙে আঁকা হয়
প্রতিটি শীতের দুপুর।সেইসব ছবি ভেসে আছে সময়-তরঙ্গে।
অনেক গানের কণ্ঠ ছিল।নাচের নূপুর ছিল।মহড়া নাটক নিয়ে
ব্যস্ত থাকত প্রতিটি সন্ধ্যায়।গল্প ভরা গর্ভাশয় নিয়ে মেয়েরা
অন্দর থেকে জাগিয়ে রাখত বাইরের অন্তরমহল।একটি বড়
বকুল গাছের তলায় সকাল এসে নাম ধরে ধরে ডাকত সক্কলেকে।
সদর দরজার দুপাশে দুটো ঝাউগাছ।এক মিলিমিটার করে
বেড়ে উঠছে প্রতিদিন।ঝাউগাছ বলতেই কেউ যেন নির্জনতা বা
দগ্ধ বাতাসের হতাশা না বোঝেন।দুপাশ থেকে দুটি অপরাজিতার
লতা ওদের প্রেমের ছোঁয়া নেয়।এসব নিয়ে একদিন আরও কিছু
ঝকঝকে বাংলা কবিতা লেখা হবে।ছাপা হবে মাউসের ক্লিকে
নয়ানজুলির বড় বড় পানিফল ।
নীরবতার মধ্যে প্রতিদিন ছাপা হয় চালতাগাছের পাতা আর
চাপটগরের থোকা থোকা সাদা রঙের গান।এর প্রতিটি বর্ণ,
অক্ষর নিবিষ্ট মনে লিখে রাখছে দুদিকের দুটি ঝাউগাছ।
দারুন প্রয়োগ, বেশ ভালো লাগলো অভিনন্দন🎉🎊
ReplyDelete