পদ্মকুঁড়ি
- কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা
মধ্য শরতে কোলাঘাট স্টেশনে নামতেই নয়নলোভন কাশবন । বাতাসে ভেসে আসে সুর,- ' বাজলো তোমার আলোর বীণা.....' । মধুবালার চোখ দাদাকে খোঁজে। এইমাত্র ও নামলো মেচেদা থেকে এসে। মিনিট দশেক হাঁটলেই বাড়ি। মাঝ আশ্বিনের রোদ্দুরে কী তেজ ! সাদা মেঘের বিচ্ছিন্ন স্তূপ, নীল আকাশ।টিউশন ফেরত দশম শ্রেণির মধুবালা দাদার সঙ্গে হাঁটছে। পুজোর মরমী গন্ধ আর ব্যস্ততা।
চুপচাপ কেন রে ! দাদার প্রশ্নে মধু , - মাকে খুব মনে পড়ছে । .... দুটো বাক-হীন দেহ হাঁটে। স্পষ্ট মনে পড়ে তার,দুবছর আগের দুর্ঘটনা।
মা বাবা দুজনে ফুল ব্যবসা করতো। পুজোর সময় পদ্মকুঁড়ির আকাশচুম্বী চাহিদা । রেল- পথের দুপাশের জলাভূমি থেকে একজনে চড়া ডিঙিতে ভেসে সংগ্রহ হয়। বাবার সেদিন জ্বর । মা নির্মলা একাই গেল। ভাসমান ডিঙিতে বসে ফুল তুলতে তুলতে কখন যে গভীর জলের পদ্মবনে গেল! দ্রুত ফিরতে গিয়ে উল্টে যায় ,ভারসাম্য হারিয়ে। যতই প্রাণপণে ওঠার চেষ্টা করে জড়িয়ে যায় ঘন পদ্ম পাতায় ও গাছে। প্রাণপণ চিৎকারে অন্য ডিঙ্গির লোক আসার আগেই সব শেষ ! প্রত্যক্ষদর্শী পাড়ার ভুবন কাকা। দেবীপক্ষের আগে মায়ের বিসর্জন!
বাড়ি পৌঁছেই মধুবালা কান্নায় ভেঙে পড়ে।
No comments:
Post a Comment