"প" - এ প্রণয়, "প" -এ পপাৎ
- ডাঃ অমিতাভ শঙ্কর রায় চৌধুরী
"উরে বাবা!", ঊনসত্তরের কপিলকৃষ্ণ কাৎরে ওঠেন।
"মা, তুমি হাসছো?"ছেলে হিমাঙ্গ একটু গরম হয়েছে,"বাবা কোমরের ব্যথায় কাৎরাচ্ছে, আর তুমি তখন থেকে হাসছো শুধু?"
"তা আমি কি করবো বাবা? স্প্রে লাগিয়ে দিলাম। হট ওয়াটার ব্যাগের সেঁক দিচ্ছি, আর কি করতে পারি? আমি তো আর ডাক্তার নই।"
"এটা আবার কেমন করে বাধিয়ে বসলে?" ছেলে বাবার পিঠের ওপর ঝুঁকে পড়লো।
"ওহ, হাত দিসনা রে। দুম করে ব্যথাটা এমন হলো -!"কপিল কৃষ্ণ দিশেহারা, "কোন পাশ ফিরে শুলে যে ব্যথাটা একটু কম হবে? ওহ!"
শ্রীরাধার ঠোঁটে মুচকি হাসিটা ফেভিকুইক সাঁটা হয়ে ঝুলেই রইল,"যাই, দেখি চা হয়ে গিয়ে থাকলে নিয়ে আসি। অ - অঞ্জু -!"
"এই আসি মা।"রান্নাঘর থেকে ছেলের বৌ অঞ্জলি সাড়া দিল।
সকাল থেকে এই চলছে। হটাৎ দুম করে সাত সকালে কপিল কৃষ্ণ কাৎ। শ্রীরাধা ঘুম থেকে উঠে মুখ হাত ধুয়ে ঘরে ঢুকে স্বামীকে ডাক দিল,"কি হলো? কখন সকাল হয়ে গেছে, উঠছো না কেন?"
আর তখনই আবিষ্কৃত হলো কপিল কৃষ্ণ আপাতত উঠে দাঁড়াতে পাচ্ছেন না।কারণ -- কটিতে কষাঘাত! বিছানায় উঠে বসতে গিয়ে ককিয়ে উঠলেন,"উরে বাবা রে!"
চা পর্ব সমাপ্ত। হিমাঙ্গ ঘোষণা করলো,"বেলা হলে ডাঃ তুলির কাছে নিয়ে যাবো। এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রাখছি।"
রুগী দেখতে গিয়ে ডাঃ তুলি বেশ অবাক,"বলেন কি? এর আগে আপনার কখনো কোমরে ব্যথা হয়েইনি? লো ব্যাকএকের কোন হিস্ট্রিই নেই ?"
"না স্যার। কক্ষনো না। এই প্রথম।"
"স্ট্রেঞ্জ! তাহলে কি ঝুঁকে কোন ভারী বাল্টি টালটি তুলেছিলেন?"
আবার ফিক্। হিমাঙ্গ'র ব্রহ্মতালু জ্বলে উঠলো। চাপা গলায় বললো,"মা, এতে হাসবার কি হলো?"
ডাক্তার বলে দিলেন ব্যথা কমলে এক্সারসাইজ করতে হবে। বাড়ি ফিরে বাবাকে অন বেড করে হিমাঙ্গ দুর্বাশার মত রান্না ঘরে প্রবেশ করলো এবং মা কে না বলে ডায়লগটা অঞ্জলিকেই থ্রো করলো,"মায়ের কি হয়েছে? বাবা কোমরের ব্যথায় দাঁড়াতে পারছেনা আর মা সকাল থেকে ফিক ফিক করে হেসে যাচ্ছে ?"
ছেলে গেল বাথরুমে। পরক্ষণেই শাশুড়ির আবির্ভাব এবং পুত্রবধূর অনুসন্ধিৎসা,"সত্যি বল তো মা, ব্যাপার খানা কি? বাবার একটু সর্দি হলে তুমি নিজের হাতে তুলসী আদা গোলমরিচ দিয়ে "কাঢ়া করে দাও। আমাকেও করতে দাও না। আর আজ তখন থেকে হেসে যাচ্ছ ?"
"কে বললো হেসেছি?"
"ঐ তো তোমার ছেলে গরগর করতে করতে বলে গেল -- তুমি নাকি ডাক্তারের চেম্বারেও -"
"ধ্যাৎ!"
"বললেই হলো? আমি কি চোখের মাথা খেয়েছি নাকি?"
ইতিমধ্যে দরজায় টুঙ্ টাঙ্। নাতি ঢুকে ঠাকুমাকে জড়িয়ে ধরলো,"ডার্লিং, কাল ভ্যালেন্টাইনস ডে তে শৈবাল, শাহিদ, করমজিৎ সব্বাই মিলে ব্ল্যাক ফরেস্ট কেক সাঁটিয়েছিল। তুমি আমায় পাটালির পায়েস বা গোকুল পিঠে কোনটাই করে দিলে না।"
"আরে ওসবের জন্য তো যোগাড় চাই। তাছাড়া তোর মা তো প্রায়ই করে।"
"কর্মে ফাঁকি মারার চেষ্টা ভালো নয়, ডার্লিং। আচ্ছা, দাদু না হয় তোমার ভ্যালেন্টাইন। তা আমাদের জন্য আজকে পায়েসটাই বানিয়ে দাও না।"বলতে বলতে নাতি ঠাকুমার কোমর ধরে তুলে নেয়।
"ওরে ছাড়, ছাড়। নামা আমাকে।" পরক্ষণেই মুখ ফস্কে বেরিয়ে গেল,"কাল আমাকে তুলতে গিয়ে তো একজনের ওই হাল। আজ আবার তোর ....."
"কেন কাল কি হয়েছিল ?" নাতির উৎকণ্ঠা।
ঠাকুমা চুপ।
"কি হলো? কিছু বলছো না যে ?"অঞ্জলির জেরা।
কোন কান্ড কারখানার খোশবাই আসছে কি ?
"কাল কি হয়েছিল মা?" শাশুড়িকে বৌয়ের জেরা অব্যাহত।
অবশেষে .......
"লজ্জায় আমি মরি। বুড়ো বয়সের ভীমরতি আর কাকে বলে? কাল বসে বসে ভ্যালেন্টাইন ডে উপলক্ষে ছোঁড়া ছুঁড়িদের সব কান্ড দেখেছে। শুতে যাবার সময় শুনি তোদের ঘরে বাজছিল "ফুলে ফুলে দোলে দোলে ..."। তা আমি বললাম,"রবি ঠাকুর ইংরেজি সুরেও কি সুন্দর গান বেঁধেছেন।" শুনেই তোর বাবা তড়াক করে উঠে বসলো।
"জিজ্ঞেস করলাম, --- কি হলো?
"ও বললো,"ভ্যালেন্টাইন ডে তে শুধু ওই ছোঁড়ারাই নাচতে পারে? আমরাও পারি না?"বলে আমার হাত ধরে পাক খেতে লাগলো। তারপরে বলে কিনা,"ধর্মেন্দ্র যেভাবে হেমামালিনী কে তুলে নেয়, দেখি, সেভাবে আমি তোমায় তুলতে পারি কিনা।" বলতে বলতে আমাকে কোল পাঁজা করে তুলতে গিয়েই ---। ও মা সে কি কেলেঙ্কারি! পালঙে একেবারে কুপোকাত। আমি আর তাকে ধরে ওঠাতে পারি নাকি? তখনই জানতাম যে সকাল হতেই ছুটতে হবে ডাক্তারের কাছে।"
"ও মা! তাই নাকি ? এই হলো ইনসাইড স্টোরি!" অঞ্জু হাসিতে ফেটে পড়ে।
আর নাতি? তার চিৎকার,"থ্রী চিয়ার্স ফর আওয়ার বুড্ঢা রোমিও!"
ইতিমধ্যে মাথা মুছতে মুছতে হিমাঙ্গ হাজির। সে রেগে গেল,"তোমাদের আজ হয়েছেটা কি, বলতো? বাবা কোমরের ব্যথায় কাৎ আর তোমাদের যেন হাসির হাট বসেছে! ব্যাপারটা কি?"
No comments:
Post a Comment